সূরা ইউনুসঃ ৬ষ্ঠ রুকু (আয়াত ৫৪-৬০নং)

সূরা ইউনুসঃ ৬ষ্ঠ রুকু (আয়াত ৫৪-৬০নং)

أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

১০:৫৪ وَ لَوۡ اَنَّ لِکُلِّ نَفۡسٍ ظَلَمَتۡ مَا فِی الۡاَرۡضِ لَافۡتَدَتۡ بِهٖ ؕ وَ اَسَرُّوا النَّدَامَۃَ لَمَّا رَاَوُا الۡعَذَابَ ۚ وَ قُضِیَ بَیۡنَهُمۡ بِالۡقِسۡطِ وَ هُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ

৫৪. আর যমীনে যা রয়েছে, তা যদি প্রত্যেক যুলুমকারী ব্যক্তির হয়ে যায়, তবে সে মুক্তির বিনিময়ে সেসব দিয়ে দেবে এবং অনুতাপ গোপন করবে যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। আর তাদের মীমাংসা ন্যায়ভিত্তিক করা হবে এবং তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।

এখানে যুলুম বলতে শির্ক ও কুফর বোঝানো হয়েছে। মুয়াসসার কারণ, শির্ক হচ্ছে সবচেয়ে বড় যুলম। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় শির্ক হচ্ছে বড় যুলুম। [সূরা লুকমান: ১৩]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেয়ামতের দিন কাফেরদেরকে উপস্থিত করে বলা হবেঃ যদি তোমার নিকট পৃথিবীর সমান পরিমান স্বর্ণ থাকে, তাহলে কি তুমি এর বিনিময়ে এ শাস্তি থেকে মুক্তি কামনা করবে? তখন তারা বলবেঃ হ্যাঁ, তাকে বলা হবে যে, তোমার নিকট এর চেয়েও সহজ জিনিস চাওয়া হয়েছিল… আমার সাথে আর কাউকে শরীক না করতে কিন্তু তুমি তা মানতে রাজি হওনি। [বুখারীঃ ৬৫৩৮]

নিশ্চয় যারা কুফর করেছে এবং কাফেররূপে মৃত্যু ঘটেছে তাদের কারো কাছ থেকে যমীনভরা সোনা বিনিময়স্বরূপ প্রদান করলেও তা কখনো কবুল করা হবে না। এরাই তারা, যাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে; আর তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। আলে ইমরান ৯১

আব্দুল্লাহ ইবনে জাদআন; যে বড়ই অতিথিপরায়ণ, গরীব-অভাবীদের প্রতি উদার এবং ক্রীতদাস স্বাধীনকারী ছিল তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, এই ভালকাজগুলো তার কোন উপকারে আসবে কি? নবী করীম (সাঃ) বললেন, ‘‘না। কারণ, সে একদিনও স্বীয় প্রতিপালকের কাছে নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। (মুসলিম)

আল্লাহ বলেন, [وَلا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلا تَنْفَعُهَا شَفَاعَةٌ]

‘‘কারোও কাছ থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না এবং কারোও সুপারিশ ফলপ্রদ হবে না। (সূরা বাক্বারাহ ১২৩)

[لاَ بَيْعٌ فِيْهِ وَلاَ خِلاَلٌ]

‘‘যেদিন না কোন বেচাকেনা হবে, আর না বন্ধুত্ব (উপকারে আসবে)। (সূরা ইবরাহীমঃ ৩১)

বিচারের দিনটি কি, তা কিসে আপনাকে জানাবে? আবার জিজ্ঞাসা করি, কিসে আপনাকে জানাবে বিচারের দিনটি কি? তাহা এমন একটি দিন, যে দিন কেউই নিজের রক্ষার জন্য কোনই সাহায্যকারী পাবে না, এবং সমগ্র ব্যাপার নিরঙ্কুশ ভাবে আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত হবে” [সূরা আল-ইনফিতার: ১৭-১৯]

১০:৫৫ اَلَاۤ اِنَّ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ وَعۡدَ اللّٰهِ حَقٌّ وَّ لٰکِنَّ اَکۡثَرَهُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ

৫৫. জেনে রাখ! আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই। জেনে রাখ! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।

আসমান ও যমীনের সত্ত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। তোমরা যা কর আল্লাহ্ তা বিশেষভাবে অবহিত। আলে ইমরানঃ ১৮০

৩৫:৫ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنَّ وَعۡدَ اللّٰهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّکُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا ٝ وَ لَا یَغُرَّنَّکُمۡ بِاللّٰهِ الۡغَرُوۡرُ

হে মানুষ! নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কাজেই দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সে প্রবঞ্চক (শয়তান) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ্‌র ব্যাপারে প্রবঞ্চিত না করে। সূরা ফাতিরঃ ৫

আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য যে, কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে এবং সৎ ও অসৎ লোকদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান ও প্রতিফল দেওয়া হবে।

আমি কাফিরদের ব্যাপারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তার কিছু অংশ যদি তোমাকে দেখাই কিংবা (তা সংঘটিত হওয়ার আগেই) তোমার কাল পূর্ণ করে দিই, (জেনে রেখো, আমার প্রতিশ্রুতি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে) তোমার কর্তব্য শুধু (আল্লাহর বাণী) প্রচার করা। হিসাব-নিকাশ তো আমার কাজ। (সুরা রাদ : ৪০)

৩০:৬০ فَاصۡبِرۡ اِنَّ وَعۡدَ اللّٰهِ حَقٌّ وَّ لَا یَسۡتَخِفَّنَّکَ الَّذِیۡنَ لَا یُوۡقِنُوۡنَ

অতএব আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, নিশ্চয় আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। আর যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয়। তারা যেন আপনাকে বিচলিত করতে না পারে।সূরা রুমঃ ৬০

১০:৫৬ هُوَ یُحۡیٖ وَ یُمِیۡتُ وَ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ

৫৬. তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং তারই কাছে তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করানো হবে।

উক্ত আয়াতে আকাশ ও পৃথিবীর সকল বস্তুর উপর আল্লাহর পূর্ণ মালিকানা, আল্লাহর ওয়াদার সত্যতা, জীবন ও মরণ তাঁর ইচ্ছায় সংঘটন এবং তাঁর দরবারে সকলের উপস্থিতির বর্ণনা আছে। যার উদ্দেশ্য পূর্বোক্ত আলোচনাকে পরিষ্ফুটিত ও সমর্থন করা। আর তা এই যে, যে সত্তা এত বিশাল ক্ষমতার অধিকারী, তাঁর পাকড়াও থেকে রক্ষা পেয়ে মানুষ কোথায় যেতে পারে? এবং হিসাব-নিকাশ নেওয়ার জন্য তিনি যে একটি দিন নির্ধারিত করে রেখেছেন, সে দিন থেকে কে রেহাই পাবে? আল্লাহর ওয়াদা অবশ্যই সত্য, কিয়ামত অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে এবং সকল ভাল ও মন্দ লোকদেরকে তাদের নিজ নিজ কর্ম অনুযায়ী প্রতিদান ও প্রতিফল দেওয়া হবে।

১০:৫৭ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ قَدۡ جَآءَتۡکُمۡ مَّوۡعِظَۃٌ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَ شِفَآءٌ لِّمَا فِی الصُّدُوۡرِ ۬ۙ وَ هُدًی وَّ رَحۡمَۃٌ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ

৫৭. হে লোকসকল! তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের কাছ থেকে এসেছে উপদেশ ও অন্তরসমূহে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।

অন্তরের বড় রোগের কথা বলে এখন সেটার চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে।

অন্তরের রোগ দু’প্রকার: مَرَضُ شَهْوَةٍ বা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করার রোগ এবং ومرض شبهة বা দ্বীনের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ ও وأردؤها مَرَضُ الشُّبْهَةِ শির্ক-বিদআতে লিপ্ত হওয়ার রোগ।

অন্তর রোগাক্রান্ত হওয়ার আলামত হলো তা উপকারী খাদ্য বাদ দিয়ে ক্ষতিকর খাদ্য গ্রহণ করে এবং উপকারী ঔষধ বর্জন করে ক্ষতিকর ঔষধ সেবন করে। সুতরাং এখানে চারটি জিনিস রয়েছে।

(ক) উপকারী খাদ্য, (খ) শিফা দানকারী ঔষধ, (গ) ক্ষতিকর খাদ্য, (ঘ) ক্ষতিকর ঔষধ।

পরিশুদ্ধ অন্তর উপকারী খাদ্য ও শিফা দানকারী ঔষধ গ্রহণ করে এবং ক্ষতিকর খাদ্য ও ক্ষতিকর ঔষধ পরিহার করে। অসুস্থ অন্তর এর সম্পূর্ণ বিপরীত।অন্তরের জন্য ঈমানের খোরাকই সর্বোত্তম খোরাক, কুরআনের চিকিৎসাই সর্বোত্তম চিকিৎসা। ঈমান ও কুরআন -এ দু’টির মধ্যেই খাদ্য ও চিকিৎসা রয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি কুরআন ও সুন্নাহ বাদ দিয়ে অন্যত্র চিকিৎসা অনুসন্ধান করবে সে সর্বাধিক মুর্খ ও গোমরাহ বলে বিবেচিত হবে। ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী

(১) এখানে কুরআনুল কারীমের চারটি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করা হয়েছে

এক. (مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ) مَوْعِظَةٌ ও وَعْظٌ এর প্রকৃত অর্থ হলো উৎসাহ কিংবা ভীতিপ্রদর্শনের মাধ্যমে পরিণাম সম্পর্কে স্মরণ করে দেয়া। [ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ এমন বিষয় বর্ণনা করা, যা শুনে মানুষের অন্তর কোমল হয় এবং আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধাবনত হয়ে পড়ে। পার্থিব গাফলতীর পর্দা ছিন্ন হয়ে মনে আখেরাতের ভাবনা উদয় হয়। যাবতীয় অন্যায় ও অশ্লিলতা থেকে বিরত করে। [ইবন কাসীর] কুরআনুল কারীমের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই ‘মাওয়ায়েযে হাসানাহ’-এর অত্যন্ত সালঙ্কার প্রচারক। এর প্রতিটি জায়গায় ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির সাথে সাথে ভীতি-প্রদর্শন, সওয়াবের সাথে সাথে আযাব, পার্থিব জীবনের কল্যাণ ও কৃতকার্যতার সাথে সাথে ব্যর্থতা ও পথভ্রষ্টতা প্রভৃতির এমন সংমিশ্রিত আলোচনা করা হয়েছে, যা শোনার পর পাথরও পানি হয়ে যেতে পারে।

দুই. কুরআনুল কারীমের দ্বিতীয় গুণ

(وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ) বাক্যে বর্ণিত হয়েছে। شِفَاءٌ অর্থ রোগ নিরাময় হওয়া আর صُدُوْرٌ হলো صَدْرٌ এর বহুবচন, যার অর্থ বুক। আর এর মর্মার্থ অন্তর। সারার্থ হচ্ছে যে, কুরআনুল কারীম অন্তরের ব্যাধিসমূহ যেমন সন্দেহ, সংশয়, নিফাক, মতবিরোধ ও ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদির জন্য একান্ত সফল চিকিৎসা ও সুস্থতা এবং রোগ নিরাময়ের অব্যৰ্থ ব্যবস্থাপত্র। [কুরতুবী] অনুরূপভাবে অন্তরে যে সমস্ত পাপ পঙ্কিলতা রয়েছে সেগুলোর জন্যও মহৌষধ। [ইবন কাসীর] সঠিক আকীদা বিশ্বাস বিরোধী যাবতীয় সন্দেহ কুরআনের মাধ্যমে দূর হতে পারে। [ফাতহুল কাদীর]

আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। সূরা বনী ইসরাঈল:৮২

কুরআন যে অন্তরের ঔষধ এবং শির্ক, কুচরিত্র ও আত্মিক রোগসমূহ থেকে মনের মুক্তিদাতা, এটা সৰ্বজনস্বীকৃত সত্য। মুমিনরা এর দ্বারা উপকৃত হয় আর কাফেররা এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে না।

যারা এ কুরআনকে নিজেদের পথ প্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করে, তাদের জন্য তা নিরাময়। কিন্তু যেসব যালেম একে প্রত্যাখ্যান করে এবং এর পথ নির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, এ কুরআন তাদেরকে আরো বেশী ক্ষতির মধ্যে ঠেলে দেয়। একথাটিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি ছোট্ট তাৎপর্যবহ বাক্যের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ কুরআন হয় তোমার সপক্ষে প্রমাণ আর নয়তো তোমার বিপক্ষে প্রমাণ। [মুসলিমঃ ২২৩]

বলুন, এটি মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও আরোগ্য। হামীম আস সাজদাহঃ ৪৪

হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেন যে, কুরআনের এই বৈশিষ্ট্যের দ্বারা বোঝা যায় যে, এটি বিশেষতঃ অন্তরের রোগের শিফা; দৈহিক রোগের চিকিৎসা নয়। কিন্তু অন্যান্য মনীষীবৃন্দ বলেছেন যে, প্রকৃতপক্ষে কুরআন সর্ব রোগের নিরাময়, তা অন্তরের রোগই হোক কিংবা দেহেরই হোক। [আদ-দুররুল মানসূর]। তবে আত্মিক রোগের ধ্বংসকারিতা মানুষের দৈহিক রোগ অপেক্ষা বেশী মারাত্মক এবং এর চিকিৎসাও যে কারো সাধ্যের ব্যাপার নয়। সে কারণেই এখানে শুধু আন্তরিক ও আধ্যাত্মিক রোগের উল্লেখ করা হয়েছে। এতে একথা প্রতীয়মান হয় না যে, দৈহিক রোগের জন্য এটি চিকিৎসা নয়। হাদীসের বর্ণনা ও উম্মতের আলেম সম্প্রদায়ের অসংখ্য অভিজ্ঞতাই এর প্রমাণ যে, কুরআনুল কারীম যেমন আন্তরিক ব্যাধির জন্য অব্যর্থ মহৌষধ, তেমনি দৈহিক রোগ-ব্যাধির জন্যও উত্তম চিকিৎসা।

মহান আল্লাহতা’আলা কুর’আনে মনের রোগের উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন পটভূমিকায়। দুনিয়ার জীবনে ব্যক্তি এই ধরনের রোগে আক্রান্ত থাকেন অনেকেই। যেমন-

অন্তরের ব্যাধি বলতে কুর’আনে মহান আল্লাহ মুনাফেকী কে বুঝিয়েছেন যাদের কথা ও কাজের সাথে মিল থাকে না। এটা একটি সন্দেহের রোগ।

এবং যখন মুনাফিক ও যাদের অন্তরে রোগ ছিল তারা বলছিল, আমাদেরকে প্রদত্ত আল্লাহ ও রসূলের প্রতিশ্রুতি প্রতারণা বৈ নয়। সূরা আহযাব:১২

অন্য আয়াতে কুচিন্তা, খারাপ কামনা, ব্যভিচারের ইচ্ছা ও পাপের অভিলাষকে অন্তরের ব্যাধি বা মনের রোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই রোগ যুবক যুবতি সহ আবাল বৃদ্ধ-বনিতা সমাজের অনেকাংশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে দেখি সমাজে নেশা, ধর্ষন, খুন-খারাবী সহ আত্মহনন বেড়ে গিয়েছে।

হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। সূরা আহযাব: ৩২

মহান আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের উপর থেকে বিধি নিষেধের বোঝা লঘু করে(তোমাদের জীবনকে সহজ করে) দিতে চান, কারন, মানুষকে অত্যন্ত দূর্বল করেই সৃষ্টি করা হয়েছে। সূরা আন নিসা:২৮

মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে অত্যন্ত ভালোবেসেই তার কল্যানের জন্য এই দুনিয়াতে সুস্থ্য সুন্দর ও সুখে থাকার জন্য কিছু বিধি-নিষেধ দিয়েছেন। কারন তিনি জানেন মানুষ কত দূর্বল ও অক্ষম। মহান রবের নির্দেশিকা ছাড়া কোনভাবেই মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে না। আল্লাহ বল

আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। সূরা বনী ইসরাঈল:৮২

কিন্তু যখনই মানুষ মহান আল্লাহর দেয়া নির্দেশিকাকে দূরে ফেলে নিজেদের মনে যা চায় এবং শয়তানী শক্তি যেভাবে চায় সেদিকেই নিজেদের ঠেলে দিয়েছে তখনই নানাভাবে সমস্যায় জড়িয়ে ফেলেছে নিজেকে।

ব্যক্তিগতভাবে ও পারিবারিক জীবনে ইসলামের এই অনুশাসন পূর্ণাংগভাবে না মানার কারনে মানসিক অস্থিরতা জন্ম নেয়, যা থেকে মানসিক অশান্তি এরপর তা মানসিক রোগ এবং শেষ পর্যন্ত তা শারিরীক অসুস্থতায় রুপ নিয়ে থাকে।

মানুষ যখন কল্পনার নিকট আত্মসমর্পন করে এবং তার মন যখন রোগ-ব্যাধি, ক্রোধ, বেদনাদায়ক কারণে বিশৃঙ্খলা, দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হওয়া ইত্যাদির প্রভাবে উত্তেজিত হয়ে উঠে, এসব তখন তাকে দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা, মানসিক ও শারীরিক রোগ এবং স্নায়ুবিক দুর্বলতার দিকে ঠেলে দেয়; তার এমন অনেক কুপ্রভাব রয়েছে, যার বহু ক্ষতিকারক দিক সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষ করে।

এবার চলুন, মহান আল্লাহ আমাদের জন্য কিভাবে সুস্থ্য থাকার পথ সুগম করে রেখেছেন, তা জানার চেষ্টা করি।

প্রথমেই মনকে বুঝিয়ে নিতে হবে যে, এই দুনিয়া কাজের জায়গা যেখানে সব ফল পাওয়া যাবে না, আখেরাতের জীবনে, দুনিয়ার জীবনে করে যাওয়া প্রতিটি কাজের ফল পাওয়া যাবে। এই দুনিয়া অল্প কয়েকদিনের জন্য অস্থায়ী জীবন। স্থায়ী জীবনে তারাই সুখ পাবে যারা সবরের সহিত মহান রবের পথে অটল থেকে কাজ করে যায়।

মহান আল্লাহ  বলেছেন,

মানুষের জন্য নারী, সন্তান, সোনা-রূপার স্তূপ, সেরা ঘোড়া, গবাদী পশু ও কৃষি ক্ষেতের প্রতি আসক্তিকে বড়ই সুসজ্জিত ও সুশোভিত করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সামগ্রী মাত্র। প্রকৃতপক্ষে উত্তম আবাস তো রয়েছে আল্লাহর কাছে।

বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো, ওগুলোর চাইতে ভালো জিনিস কি? যারা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে বাগান, তার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরন্তন জীবন লাভ করবে। পবিত্র স্ত্রীরা হবে তাদের সঙ্গিনী এবং তারা লাভ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহ তার বান্দাদের কর্মনীতির ওপর গভীর ও প্রখর দৃষ্টি রাখেন। সূরা আলে ইমরান:১৪-১৫

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরন দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। সূরা রা’দ: ২৮

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও এখন এই একই কথা বলছেন। ১৯৮২ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত ‘ নিউ ডাইরেকশন ইন হেলথ’ শীর্ষক এক কনফারেন্স-এ প্রফেসর বেনসন দীর্ঘদিন যাবৎ বোষ্টনের ‘বেথ ইজরেল হসপিটাল’-এ হার্টের রোগীদের উপর প্রার্থনাসহ শিথিলায়ন পদ্ধতির প্রভাব বিষয়ে পরিচালিত তার গবেষনার উপর ভিত্তি করে শ্রোতাদের অবাক করে বলেন, প্রত্যেহ সকাল বিকাল (খাবারের পূর্বে)একটা শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশে গড়ে ২০ মিনিট করে প্রার্থনার একটা পবিত্র বানী, শব্দ বা শব্দগুচ্ছ (যেমন আল্লাহ, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ইত্যাদি) নিঃশব্দে জপার অভ্যাস করলে তা টেনশন বা স্নায়ুবিক চাপের সময় সৃষ্ট অতিরিক্ত হরমোন (হরমন নরএড্রিনাল) কমিয়ে ফেলে। নরএড্রিনাল হচ্ছে আড্রিনাল মেডুল্লা কর্তৃক নিঃসৃত এক ধরনের হরমোন যা রক্তচাপ ও হার্টবিটের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। (তথ্যসুত্র: ঘুম অপেক্ষা প্রার্থনা শ্রেয়, প্রফেসর আবদুন নূর, লোকপ্রশাসন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)

অসুস্থ ব্যক্তি শুয়ে শুয়ে মহান রবের যিকির করা দিয়ে বা কুর’আনের বানী শুনে শুনেও অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারেন। এর দ্বারা একদিকে মানসিক প্রশান্তি, শক্তিলাভ হয়,অপরদিকে শয়তান দূরে সরে যায় এবং সর্বোপরি মহান রবের ভালোবাসা বেশী পাওয়া যায়,ফেরেশতারা দু’আ করতে থাকে। মানসিক ও শারীরিক রোগ চিকিৎসার অন্যতম উপায় হচ্ছে মনোবল বৃদ্ধি। কল্পনাপ্রসূত অস্বস্তি ও আবেগ-উত্তেজনা বর্জন করে মহান রবের উপর সন্তুষ্ট থাকা ও সম্পূর্ণ নির্ভর করা দিয়েই মনোবল লাভ সম্ভব।

“তোমরা তোমাদের চেয়ে নিম্নমানের ব্যক্তির দিকে তাকাও। আর তোমাদের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির দিকে তাকিও না। কারণ, সে উপযুক্ত ও যোগ্যব্যক্তি। আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতকে তুচ্ছ মনে করো না।” —(বুখারী ও মুসলিম)

আমাদের সমাজে নারীরা বেশী মানসিক অস্থিরতায় ভুগেন, যার একটি কারন অজ্ঞানতা ও পরিবেশ। পরিবার ও পরিবেশের অনেক কিছুই মনের মত বা চাওয়ার নাগালের মাঝে নাও আসতে পারে কিন্তু সব অবস্থায় ওহীর জ্ঞানের সাথে নিজের জ্ঞান মেধাকে কাজে লাগিয়ে, মহান রবের সাহায্য চেয়ে, নির্ভর করতে হবে আল্লাহর উপর। এরপর ফলাফল যা  হয় তা তাকদীরের অন্তর্ভূক্ত এই দৃঢ় ঈমানই তাকে মানসিক সুস্থ্যতা দান করবে। মুমিন বুঝে নেয় মহান রবের ফয়সালাতেই সকল কল্যান রয়েছে।

যখন বান্দার অন্তর আল্লাহ নির্ভরশীল হয়, সে নিজেও তার (আল্লাহর) উপর ভরসা করে, আন্দাজ-অনুমান ও কল্পনার নিকট আত্মসমর্পন না করে, দুশ্চিন্তা ও খারাপ কল্পনার অধিকারী না হয়, আল্লাহর প্রতি আস্থাশীল হয় এবং তার অনুগ্রহের আশা-আকাঙ্খা পোষণ করে, এসব দ্বারা তখন তার দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনাসমূহ প্রতিরোধ হবে এবং তার মানসিক ও শারীরিক রোগসমূহ দূর হয়ে যাবে। আর মানসিক শক্তি, উদারতা ও প্রফুল্লতা অর্জিত হবে।

অনেক হাসপাতাল ও পরিবারে দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনাগ্রস্ত মানসিক রোগীদের সংখ্যা। আর এসবের কারণে দুর্বল ব্যক্তি ছাড়াও অনেক শক্তিশালী লোকের মনের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে এবং তারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তার প্রভাব থেকে শুধু ঐ ব্যক্তিই বেঁচে গেছে, যাকে আল্লাহ ক্ষমা করেছেন এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধি ও মনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করার ফলপ্রসু উপায় অবলম্বনের যথাযথ চেষ্টা-প্রচেষ্টা করার তাওফিক দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

“যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট।” —(সূরা আত-তালাক: ৩)

সুতরাং আল্লাহর উপর ভরসাকারী ব্যক্তি মানসিকভাবে শক্তিশালী, যাকে কোন কুধারনা ও দুশ্চিন্তা- দুর্ভাবনা প্রভাবিত করতে পারে না। আর তাকে কোন ঘটনা-দুর্ঘটনা বিরক্ত করতে পারে না তার এই জ্ঞান থাকার কারণে যে, নিশ্চয় এটা মানসিক দুর্বলতা এবং অবাস্তব ভয়-ভীতির কারণে সংঘটিত হয়েছে। এতদসত্ত্বেও সে জানে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনি তার সকল দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফলে সে আল্লাহর প্রতি আস্থাশীল হয় এবং তাঁর প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে নিশ্চিত হয়। এতে তার দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা দূর হয়; দুঃখ সুখে পরিণত হয়; দুঃখ-কষ্ট আনন্দে রূপান্তর হয় এবং ভয়-ভীতি পরিণত হয় নিরাপত্তায়। সুতরাং আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট সুস্থতা কামনা করছি এবং আরও প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদের উপর অনুগ্রহ করেন মানসিক শক্তি ও তাঁর উপর পূর্ণ ভরসায় অটল থাকার দ্বারা, যে ভরসার কারণে আল্লাহ তার সকল কল্যাণের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং সকল অকল্যাণ ও ক্ষয়-ক্ষতির প্রতিরোধ করবেন।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, যখন দুঃখ-কষ্ট ও দুশ্চিন্তা নবী স.কে আক্রমন করতো অথবা কোন জটিল সমস্যায় পড়তেন, তখন তিনি মাথা আকাশের দিকে উত্তোলন করে বলতেন, সমস্ত গৌরব ও প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর, যিনি মহান ও অতীব পবিত্র। আত তিরমিযী: ৩৩৭০

আসমা বিনতে উমাইস রা. বর্ণনা করেন যে, রাসুল স.বলেছেন, আমি কি তোমাকে কিছু কালেমা বা এমন কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দেবো না, যখন তুমি দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা ও মর্মপীড়ায় পতিত হবে, তখন তা পাঠ করবে, আল্লাহু, আল্লাহু রাব্বী, লা উশরিকু বিহি শাঈয়ান। আল্লাহ, আল্লাহই আমার প্রভু, যাঁর সাথে আমি কাউকে বা কোন কিছুকে শরীক করিনা।  আবু দাউদ: ১৫২৫, আত তিরমিযী: ৩৮৮২

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করো। সূরা আল বাকারা: ৪৫

আমাদের প্রিয় নবী স.এর জীবনেও এই নির্দেশের বাস্তব নমুনা দেখতে পাই। হুযায়ফা রা. বর্ননা করেছেন, রাসূল স. যখন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতেন তখন সালাতে মশগুল হয়ে যেতেন। আবু দাউদ: ১৩১৯

হযরত ইবনে আব্বাস রা. বর্ননা করেন, কেউ যদি এসব রোগে তথা দুঃখ-কষ্ট, বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা উদ্বিগ্নতায় ভোগে, তাহলে তাকে নিয়মিত এ দু’আ পাঠ করতে হবে। ইবনুল কাইয়িম

লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম। কোন ক্ষমতা বা শক্তি নেই একমাত্র আল্লাহ ছাড়া, যিনি মহান ও সর্বশক্তিমান।

এছাড়া রাসূল স. প্রার্থনায় বলতেন,

يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغيثُ أَصْلِحْ لِي شَأْنِيَ كُلَّهُ وَلاَ تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ».

(ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু বিরহ্‌মাতিকা আস্তাগীসু, আসলিহ্‌ লী শা’নী কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন)।

“হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার কামনা করি, আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন, আর আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না।” আত তারগিব তারহিব ১/২৭৩

আলেমগণ বলেনঃ তিন শর্তে ঝাড়-ফুঁক করা জায়েয। (১) ঝাড়-ফুঁক কুরআন-সুন্নাহ অথবা আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে হতে হবে। (২) ঝাড়-ফুঁক আরবী ভাষায় হতে হবে। আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় হলে তার অর্থ বোধগম্য হতে হবে এবং শির্ক থেকে মুক্ত হতে হবে। (৩) ঝাড়-ফুঁক নিজস্ব ক্ষমতা বলেই উপকার করবে- এই বিশ্বাস পোষণ করা যাবে না। বরং ঝাড়-ফুঁককারী এবং যাকে ঝাড়-ফুঁক করা হবে, সে বিশ্বাস করবে যে আল্লাহর নির্ধারণ অনুযায়ীই এটি উপকার করে অথবা অকল্যাণ প্রতিহত করে থাকে। সুতরাং ঝাড়-ফুঁক করা জায়েয। সহীহ হাদীছে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেকে ঝাড়-ফুঁক করেছেন। তিনি অন্যকেও ঝাড়-ফুঁক করেছেন। তাকে ঝাড়-ফুঁক করা হয়েছে মর্মেও সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। জিবরীল ফেরেশতা তাকে ঝাড়-ফুঁক করেছেন। আয়েশা (রাঃ)ও তাঁকে ঝাড়-ফুক করেছেন। জিবরীল ফেরেশ্তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঝাড়-ফুঁক করার সময় বলেছেনঃ

«بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ»

‘আমি আপনাকে আল্লাহর নামে ঝাড়-ফুঁক করছি প্রতিটি এমন জিনিষ হতে, যা আপনাকে কষ্ট দেয় এবং প্রত্যেক জীবের অমঙ্গল হতে ও হিংসুকের বদ নজর হতে আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন। আমি আপনাকে আল্লাহর নামে ঝাড়-ফুঁক করছি’’। (সহীহ মুসলিম)

তিন. কুরআনুল কারীমের তৃতীয় গুণ হচ্ছেঃ

কুরআন হলো হেদায়াত। অর্থাৎ যে তার অনুসরণ করবে তার জন্য সঠিক পথের দিশা প্রদানকারী। [কুরতুবী] আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে কুরআনকে হেদায়াত বলে অভিহিত করেছেন। যেমন সূরা আল-বাকারার ২য় আয়াত,

اِنَّ هٰذَا الۡقُرۡاٰنَ یَهۡدِیۡ لِلَّتِیۡ هِیَ اَقۡوَمُ وَ یُبَشِّرُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ الَّذِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَهُمۡ اَجۡرًا کَبِیۡرًا ۙ

নিশ্চয় এ কুরআন এমন পথনির্দেশ করে, যা সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সৎকর্মপরায়ণ বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।সূরা আল ইসরাঃ ৯

সূরা আল-বাকারাহঃ ৯৭, ১৮৫, সূরা আলে-ইমরানঃ ১৩৮, সূরা আল-আনআমঃ ১৫৭, সূরা আল-আরাফঃ ৫২, ২০৩, সূরা ইউসুফঃ ১১১, সূরা আন-নাহলঃ ৬৪, ৮৯, ১০২, সূরা আয-যুমারঃ ২৩, সূরা ফুসসিলাতঃ ৪৪, সূরা আল-জাসিয়াহঃ ২০।

চার. কুরআনুল করীমের চতুর্থ গুণ হচ্ছেঃ কুরআন হলো রহমত।

যার এক অর্থ হচ্ছে নে’আমত। [কুরতুবী]

وَ نُنَزِّلُ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّ رَحۡمَۃٌ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۙ وَ لَا یَزِیۡدُ الظّٰلِمِیۡنَ اِلَّا خَسَارًا ﴿

আর আমরা নাযিল করি কুরআন, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। সূরা আল-ইসরার ৮২,

সুতরাং অবশ্যই তোমাদের কাছে তোমাদের রব-এর পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ, হিদায়াত ও রহমত এসেছে। সূরা আল-আনআমঃ ১৫৭,

এ কুরআন তোমাদের রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ। আর হিদায়াত ও রহমত এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা ঈমান আনে। আরাফঃ ২০৩,

এটা কোন বানানো রচনা নয় বরং এটা আগের গ্রন্থে যা আছে তার সত্যায়ন(২) ও সব কিছুর বিশদ বিবরণ, আর যারা ঈমান আনে এমন সম্প্রদায়ের জন্য হিদায়াত ও রহমত। সূরা ইউসুফঃ ১১১,

আর আমি তোমার প্রতি গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি প্রত্যেক বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা স্বরূপ এবং আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)দের জন্য, পথনির্দেশ, করুণা ও সুসংবাদ স্বরূপ।সূরা আন-নাহলঃ ৮৯,

সূরা আল-ইসরাঃ ৮২, সূরা আন-নামলঃ ৭৭, সুরা লুকমানঃ ৩, সূরা আল-জাসিয়াহঃ ২০, সূরা আল-কাসাসঃ ৮৬ নং আয়াতেও কুরআনকে রহমত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসবই কিন্তু মুমিনদের জন্য কারণ তারাই এর দ্বার উপকৃত হয়, কাফেররা এর দ্বারা উপকৃত হয় না, কারণ তারা এ ব্যাপারে অন্ধ। [মুয়াসসার]

১০:৫৮ قُلۡ بِفَضۡلِ اللّٰهِ وَ بِرَحۡمَتِهٖ فَبِذٰلِکَ فَلۡیَفۡرَحُوۡا ؕ هُوَ خَیۡرٌ مِّمَّا یَجۡمَعُوۡنَ ﴿

৫৮. বলুন, এটা আল্লাহর অনুগ্রহে ও তার দয়ায়; কাজেই এতে তারা যেন আনন্দিত হয়। তারা যা পুঞ্জীভূত করে তার চেয়ে এটা উত্তম।

অর্থাৎ মানুষের কর্তব্য হলো আল্লাহ তা’আলার রহমত ও অনুগ্রহকেই প্রকৃত আনন্দের বিষয় মনে করা এবং একমাত্র তাতেই আনন্দিত হওয়া দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী ধন-সম্পদ, আরাম-আয়েশ ও মান-সম্ভ্রম কোনটাই প্রকৃতপক্ষে আনন্দের বিষয় নয়। কারণ,

একে তো কেউ যত অধিক পরিমাণেই তা অর্জন করুক না কেন, সবই অসম্পূর্ণ হয়ে থাকে; পরিপূর্ণ হয় না।

দ্বিতীয়তঃ সর্বদাই তার পতনাশঙ্কা লেগেই থাকে। তাই আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে- (هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ) অর্থাৎ আল্লাহর করুণা-অনুগ্রহ সে সমস্ত ধন-সম্পদ ও সম্মান-সাম্রাজ্য অপেক্ষা উত্তম, যেগুলোকে মানুষ নিজেদের সমগ্র জীবনের ভরসা বিবেচনা করে সংগ্রহ করে। এ আয়াতে দুটি বিষয়কে আনন্দ-হর্ষের বিষয় সাব্যস্ত করা হয়েছে। একটি হলো فضل ফদল, অপরটি হলো رحمة রহমত।

আবু সাঈদ খুদরী ও ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাসহ অনেক মুফাসসির বলেছেন যে, ফদল অর্থ কুরআন; আর রহমত অর্থ ইসলাম। [কুরতুবী] অন্য বর্ণনায় ইবন আব্বাস বলেন, ফদল হচ্ছে, কুরআন, আর তার রহমত হচ্ছে এই যে, তিনি আমাদেরকে কুরআনের অনুসারী করেছেন। হাসান, দাহহাক, মুজাহিদ, কাতাদা বলেন, এখানে ফদল হচ্ছে ঈমান, আর তার রহমত হচ্ছে, কুরআন। [তাবারী; কুরতুবী]

বস্তুতঃ রহমতের মর্ম এই যে, আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে কুরআনের শিক্ষা দান করেছেন এবং এর উপর আমল করার সামর্থ্য দিয়েছেন। কারণ, ইসলামও এ তথ্যেরই শিরোনাম। যখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট ইরাকের খারাজ নিয়ে আসা হলো তখন তিনি তা গুনছিলেন এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছিলেন। তখন তার এক কর্মচারী বললঃ এগুলো আল্লাহর দান ও রহমত। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ তোমার উদ্দেশ্য সঠিক নয়। আল্লাহর কুরআনে যে কথা বলা হয়েছে যে, “বল তোমরা আল্লাহর দান ও রহমত পেয়ে খুশী হও যা তোমরা যা জমা করছ তার থেকে উত্তম” এ আয়াত দ্বারা দুনিয়ার কোন ধন-সম্পদ বুঝানো হয়নি। কারণ আল্লাহ তা’আলা জমা করা যায় এমন সম্পদ থেকে অন্য বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে তা উত্তম বলে ঘোষণা করেছেন। দুনিয়ার যাবতীয় সম্পদই জমা করা যায়। সুতরাং আয়াত দ্বারা দুনিয়ার সম্পদ বুঝানো উদ্দেশ্য নয়। [ইবনে আবী হাতিম]। বরং ঈমান, ইসলাম ও কুরআনই এখানে উদ্দেশ্য। আয়াতের পূর্বাপর সম্পর্ক দ্বারাও এ অর্থ স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।

সুতরাং এ জাতীয় দ্বীনী কোন সুসংবাদ যদি কারো হাসিল হয় তিনিও এ আয়াতের নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত হবেন। আব্দুর রহমান ইবনে আবযা তার পিতা থেকে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি উবাই ইবনে কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেনঃ “আমার উপর একটি সূরা নাযিল হয়েছে এবং আমাকে তা তোমাকে পড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” তিনি বললেন, আমি বললামঃ আমার নাম নেয়া হয়েছে? রাসূল বললেনঃ হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি আমার পিতা (উবাই রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে বললামঃ হে আবুল মুনযির! আপনি কি তাতে খুশী হয়েছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ আমাকে খুশী হতে কিসে নিষেধ করল অথচ আল্লাহ তা’আলা বলছেনঃ “বলুন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও তারই রহমতের উপর তোমরা খুশী হও”। [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ৩/৩০৪, আবু দাউদঃ ৩৯৮০]

১০:৫৯ قُلۡ اَرَءَیۡتُمۡ مَّاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ لَکُمۡ مِّنۡ رِّزۡقٍ فَجَعَلۡتُمۡ مِّنۡهُ حَرَامًا وَّ حَلٰلًا ؕ قُلۡ آٰللّٰهُ اَذِنَ لَکُمۡ اَمۡ عَلَی اللّٰهِ تَفۡتَرُوۡنَ ﴿

৫৯. বলুন, তোমরা আমাকে জানাও, আল্লাহ্‌ তোমাদের যে রিযক দিয়েছেন তারপর তোমরা তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ, বলুন, ‘আল্লাহ কি তোমাদেরকে এটার অনুমতি দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করছ?

আয়াত নাযিল হওয়া সম্পর্কে ইবন আব্বাস বলেন, জাহেলী যুগে তারা কিছু জিনিস-কাপড় ইত্যাদি নিজেদের উপর হারাম করে নিয়েছিল, সেটার সংবাদই আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতে প্রদান করেছেন। তারপর আল্লাহ অন্য আয়াতে সেটার ব্যাপারে বলেছেন, “বলুন, কে তোমাদের উপর সে সব বস্তু হারাম করেছেন যেগুলো আল্লাহ বান্দাদের জন্য বের করেছেন?” [সূরা আল-আরাফ: ৩২] [তাবারী]

মূলত: রিযিক শব্দটি নিছক খাদ্যের অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং রকমারি দান, অনুদানও এর আওতাভুক্ত রয়েছে। আল্লাহ দুনিয়ায় মানুষকে যা কিছু দিয়েছেন তা সবই তার রিযিক। এমনকি সন্তান-সন্ততিও রিযিক। হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহ প্রত্যেক গর্ভবতীর পেটে একজন ফেরেশতা পাঠান। তিনি শিশুর রিযিক এবং তার আয়ু ও কর্ম লিখে দেন। [দেখুন, বুখারীঃ ৩০৩৬] এখানে রিযিক মানে শুধু খাদ্য নয়, যা ভূমিষ্ঠ হবার পরে এ শিশু লাভ করবে। বরং এ দুনিয়ায় তাকে যা কিছু দেয়া হবে সবই রিযিকের অন্তর্ভুক্ত। কুরআনে বলা হয়েছেঃ “যা কিছু আমি তাদের রিযক দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে।” [সূরা আল-বাকারাহঃ ৩]

অর্থাৎ তোমরা যে এটা কতবড় মারাত্মক বিদ্রোহাত্মক অপরাধ করছে তার কোন অনুভূতিই তোমাদের নেই। রিযিকের মালিক আল্লাহ। তোমরা নিজেরাও আল্লাহর অধীন। এ অবস্থায় আল্লাহর সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ এবং তা ব্যবহার ও ভোগ করার জন্য তার মধ্যে বিধি-নিষেধ আরোপ করার অধিকার তোমরা কোথা থেকে পেলে? বিধি-নিষেধ তো তিনিই দেবেন। তিনিই হালাল বা হারামকারী, অন্য কেউ নয়। আর তা তাঁর রাসূলের মাধ্যমেই আসতে পারে। [ফাতহুল কাদীর]

আবুল আহওয়াছ আউফ ইবনে মালেক ইবনে নাদলাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট খুব অবিন্যস্ত অবস্থায় আসলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ “তোমার কি সম্পদ আছে? আমি বললামঃ হ্যাঁ, তিনি বললেনঃ কি সম্পদ? আমি বললামঃ সবধরণের সম্পদ, উট, দাস, ঘোড়া এবং ছাগল। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ যদি তোমাকে কোন সম্পদ দিয়ে থাকেন তবে তা তোমার নিকট দেখা যাওয়া উচিত।” এরপর আরো বললেনঃ “তোমার সম্প্রদায়ের উটের বাচ্চা সুস্থ কান সম্পন্ন হওয়ার পরে তুমি ক্ষুর নিয়ে সেগুলোর কান কেটে বল না যে, এগুলো বুহুর? এবং সেগুলো ফাটিয়ে দিয়ে বা সেগুলোর চামড়া ফাটিয়ে তুমি কি বলনা যে, এগুলোঃ ছুরম? আর এতে করে তুমি সেগুলোকে তোমার এবং তোমার পরিবারের জন্য হারাম বানিয়ে নাও না? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তা অবশ্যই তোমার জন্য হালাল। আল্লাহর বাহুর ক্ষমতা তোমার বাহুর ক্ষমতা থেকে নিঃসন্দেহে বেশী শক্তিশালী, আর আল্লাহর ক্ষুর তোমার ক্ষুরের চাইতে ধারালো”। [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/৪৭৩] সুতরাং কোন হালাল বস্তুকে হারাম করার ক্ষমতা মানুষকে আল্লাহ দেন নি। তারপর আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে আখেরাতের কঠিন ভয় দেখিয়ে এরূপ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন।

১০:৬০ وَ مَا ظَنُّ الَّذِیۡنَ یَفۡتَرُوۡنَ عَلَی اللّٰهِ الۡکَذِبَ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَذُوۡ فَضۡلٍ عَلَی النَّاسِ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَهُمۡ لَا یَشۡکُرُوۡنَ

৬০. আর যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে, কিয়ামতের দিন সম্পর্কে তাদের কি ধারণা? নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ, কিন্তু তাদের অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।

অর্থাৎ এ সমস্ত লোকদের সম্পর্কে তোমাদের কি ধারণা? তাদেরকে কি আল্লাহ এমনিই ছেড়ে দিবেন? কিয়ামতের দিন কি তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন না? [ইবন কাসীর] কিন্তু তিনি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। তাঁর অনুগ্রহের এক প্রকাশ হচ্ছে যে, তিনি তাদেরকে দুনিয়ার বুকে এর কারণে দ্রুত শাস্তি দেন না। [তাবারী] আরেক প্রকাশ হচ্ছে, তিনি ঐ সব বস্তুই হারাম করেছেন যা তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতিকর বিবেচিত। পক্ষান্তরে যা উপকারী তা অবশ্যই হালাল করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন না করে আল্লাহ তাদের জন্য যা হালাল করেছেন তা হারাম করছে, এতে করে তারা তাদের নিজেদের উপর দুনিয়াকে সংকীর্ণ করে নিচ্ছে। আর এ কাজটা মুশরিকরাই করে থাকে, তারা নিজেদের জন্য শরীআত প্রবর্তন করে নিয়েছে। অনুরূপভাবে আহলে কিতাবগণও এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ তারাও দ্বীনের মধ্যে বিদ’আতের প্রবর্তন করেছে। [ইবন কাসীর]

https://www.youtube.com/shorts/WBf5Ka4zjfo

 

সংগ্রহে

তাফসিরে জাকারিয়া, আহসানুল বায়ান, তাফহিমুল কুর’আন