পরিবারে একজন নারীর করনীয়

আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

পরিবার ও নারী বিষয়ে যাওয়ার পূর্বে আমাদের মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আগমনের ইতিহাস জানতে হবে, যদিও আমরা কম বেশী জানি তারপরেও এটা আমাদের রুটকে স্মরন করিয়ে দিবে ইন শা আল্লাহ।

মহান আল্লাহ যখন আদম আ কে সৃষ্টি করেছিলেন তিনি বলেছিলেন-(বাকারা-৩০)

এরপর আদম আ যখন জান্নাতে অবস্থান করছিলেন, একটা সময় পরে নিঃসংগতা অনুভব করছিলেন। এতো কিছু থেকেও কোন এক শূন্যতা বিরাজ করছিলো। আর এর সমাধান মহান আল্লাহ করে দেন মা হাওয়া আ কে সৃষ্টি করে।

পরিবারে একজন নারীর ভূমিকা

 

পৃথিবীতে মানুষ পাঠানোর হিকমাত কিঃ

আল্লাহ তাআলা “হিকমত” বা প্রজ্ঞার গুণে গুণান্বিত। তাঁর মহান নামের মধ্যে রয়েছে- “আল-হাকিম” বা প্রজ্ঞাবান। আল্লাহ তা’আলা বলেন-

তোমরা কি মনে করেছিলে আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি  এবং তোমাদের কখনো আমার দিকে ফিরে আসতে হবে না?’’ মুমিনূন ১১৫)

আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আসমান-জমিন এবং এ দুইটির মাঝে যা কিছু আছে সে সব আমি তামাশা করে সৃষ্টি করিনি।”[সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ১৬]

মহান আল্লাহ আরও বলেন:

“আমি আসমান-জমিন আর এ দুটির মাঝে যা আছে সে সব তামাশা করে সৃষ্টি করিনি। আমি ও দুটিকে যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।”[সূরা দুখান, আয়াত: ৩৮, ৩৯]

তিনি আরও বলেন: “হা-মীম। এই কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। নভোমন্ডল, ভূ-মন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু আমি যথাযথভাবেই এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্যেই সৃষ্টি করেছি। কাফেরদেরকে যে বিষয়ে সাবধান করা হয়েছে তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।”[সূরা আহকাফ, আয়াত: ১-৩]

৩টি উদ্দেশ্য জানা যায় আল কুর’আন থেকে-

১। মানুষের সৃষ্টিগত পরিচয় হলো সে মহান আল্লাহর খলিফা।

“আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা- প্রতিনিধি  নিযুক্ত করতে চাই ৷তারা বললো , “আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্থ করবে এবং রক্তপাত করবে?  আপনার প্রশংসা ও স্তুতিসহকারে তাসবীহ পাঠ এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা তো আমরাই করে যাচ্ছি৷ ”  আল্লাহ বললেন, “আমি যা জানি  তোমরা তা জানো না ৷ (বাক্বারাহ ২/৩০)।

২। তাওহীদ বা নিরংকুশভাবে এক আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ প্রদান করা। আল্লাহ নিজেই মানুষ সৃষ্টির এ উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন: “আমি জিন্ন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এ কারণে যে, তারা আমারই ‘ইবাদাত করবে।”[সূরা যারিয়াত, আয়াত: ৫৬]

৩। আমলের দিক দিয়ে কে সর্বোত্তম-যাচাই করা

“যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন যেনো তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন- আমলের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কোন্‌ ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি মহা শক্তিধর, অতি ক্ষমাশীল।”[সূরা আল-মুল্‌ক, আয়াত: ২]

নারীর ক্ষেত্রে বিশেষ অবস্থাঃ

এর সাথে  একজন নারীর সৃষ্টির পিছনে আরো একটি বিশেষত্ব দিয়েছেন মহান আল্লাহ, তা জেনে নেই-

সিজদা অনুষ্ঠানের পর আল্লাহ আদমের জুড়ি হিসাবে তার অবয়ব হ’তে একাংশ নিয়ে অর্থাৎ তার পাঁজর হ’তে তার স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করলেন। নিসা ৪/১; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩২৩৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায় ১০ম অনুচ্ছেদ।

আল্লাহ ইরশাদ করেছেন-

هو الذي خلقكم من نفس واحدة و جعل منها زوجها ليسكن إليها

তিনি ঐ সত্তা যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি ‘নফস’ থেকে এবং বানিয়েছেন তার থেকে তার জোড়া যেন সে তার কাছে স্বস্তি লাভ করে।

(সূরা আরাফ : ১৮৯)

অতঃপর তিনি তার (আদম) থেকে তার যুগল (হাওয়াকে) সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা যুমার: ৬)

وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖۤ اَنۡ خَلَقَ لَکُمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ اَزۡوَاجًا لِّتَسۡکُنُوۡۤا اِلَیۡہَا وَ جَعَلَ بَیۡنَکُمۡ مَّوَدَّۃً وَّ رَحۡمَۃً ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ

আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে , তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই জাতি থেকে সৃষ্টি করেছেন স্ত্রীগণকে,  যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করো   এবং তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন৷ অবশ্যই এর মধ্যে বহু নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা- ভাবনা করে৷

(সুরা রুম, আয়াত : ২১)

উদাহরনঃ মা হাওয়া আ সৃষ্টি করেছেন আদম আ এর নিঃসংগতা কাটাতে।

مَوَدَّة এর অর্থ হল স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সুমধুর ভালবাসা যা সাধারণত পরিলক্ষিত হয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যেরূপ ভালবাসা সৃষ্টি হয় অনুরূপ ভালবাসা পৃথিবীর অন্য কোন দুই ব্যক্তির মাঝে হয় না। আর رَحمَة (মায়া-মমতা) হল এই যে, স্বামী নিজ স্ত্রীকে সর্বপ্রকার সুখ-সুবিধা ও আরাম-আয়েশ দান করে থাকে। অনুরূপ স্ত্রীও নিজের সাধ্য ও ক্ষমতা অনুযায়ী স্বামীর সেবা করে থাকে। মহান আল্লাহ উভয়ের উপরেই সে দায়িত্ব ন্যস্ত করেছেন। বলা বাহুল্য, মানুষ এই শান্তি ও অগাধ প্রেম-ভালবাসা সেই দাম্পত্যের মাধ্যমেই লাভ করতে পারে যার সম্পর্কের ভিত্তি শরীয়তসম্মত বিবাহের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। পরন্তু ইসলাম একমাত্র বিবাহসূত্রের মাধ্যমেই সম্পৃক্ত দম্পতিকেই জোড়া বলে স্বীকার করে।

স্রষ্টা নিজেই পরিকল্পিতভাবে এ ব্যবস্থা করেছেন যার ফলে পুরুষ তাঁর প্রাকৃতিক দাবী নারীর কাছে এবং নারী তাঁর প্রাকৃতিক চাহিদা পুরুষের কাছে লাভ করবে এবং তারা উভয়ে পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত থেকেই প্রশান্তি ও সুখ লাভ করবে৷ এ বিজ্ঞানময় ব্যবস্থাপনাকে স্রষ্টা একদিকে মানব বংশধারা অব্যাহত থাকার এবং অন্যদিকে মানবিক সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে অস্তিত্ব দান করার মাধ্যমে পরিণত করেছেন।

সমগ্র প্রাণীজগতের বিপরীতে মানব জাতির মধ্যে এটিই হচ্ছে সভ্যতা ও সংস্কৃতির উন্মেষ ও বিকাশ লাভের মৌলিক কারণ৷ এ শান্তির অন্বেষায় তাদেরকে একত্রে ঘর বাঁধতে বাধ্য করে৷ এরি বদৌলতে পরিবার ও গোত্র অস্তিত্ব লাভ করে৷ এর ফলে মানুষের জীবনে সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটে৷ এ বিকাশে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা অবশ্যই সহায়ক হয়েছে৷কিন্তু তা তাঁর আসল উদ্যোক্তা নয়৷ আসল উদ্যোক্তা হচ্ছে এ অস্থিরতা, যাকে পুরুষ ও নারীর অস্তিত্বের মধ্যে সংস্থাপিত করে তাদেরকে ‘ঘর’ বাঁধতে বাধ্য করা হয়েছে

পরিবার কাকে বলে ও কাদের নিয়ে পরিবার গঠিতঃ (পরিবার ও পারিবারিক জীবন-মাওলানা আব্দুর রহীম)

স্বামী-স্ত্রী,সন্তান-সন্ততি,মাতা-পিতা, ভাই-বোন প্রভৃতি একান্নভুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে পরিবার।

কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে পরিবার বুঝাতে আল ও আহ্ল  এবং ইয়াল শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে।

আল-মুজামুল ওয়াসীত অভিধানে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তির ‘আল’ হচ্ছে তার পরিবার-পরিজন, আর আহ্ল হচ্ছে আত্মীয়-স্বজন ও স্ত্রী, ইয়াল অর্থ হচ্ছে কোন ব্যক্তির ঘরের ঐ সকল অধিবাসী যাদের দায়-দায়িত্ব ঐ ব্যক্তি বহন করে।

আরবীতে ‘আল-উসরাহ’বলতেও পরিবার বুঝায়।

ড. মাহমূদ আবদুর রহমান আব্দুল মুনঈম বলেন, ব্যক্তির পরিবার-পরিজন ও নিকটাত্মীয়দেরকে পরিবার বলে।

পরিবারের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে ‘আল-ফিকহুল মানহাজী’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে পারিভাষিক অর্থে পরিবার বলতে বুঝায় বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনীদের নিয়ে গঠিত জনসমষ্টিকে। [ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার ও পারিবারিক জীবন, লেখক: মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম]

পরিবার দুটি ভিত্তির উপর স্থাপিত হয়ে এসেছে।

একটি হচ্ছে মানুষের প্রকৃতি-নিহিত স্বভাবজাত প্রবণতা। এই প্রবণতার কারণেই মানুষ চিরকাল পরিবার গঠন করতে ও পারিবারিক জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়েছে

দ্বিতীয় ভিত্তি হচ্ছে সমসাময়িককালের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় পরিবার ছিল বিশাল বিস্তৃত ক্ষেত্র। সমাজ ও জাতি গঠনের জন্যে তা-ই ছিল একমাত্র উপায়।

আল কুর’আনে ইরশাদ হয়েছে-

পুরুষরা নারীদের কর্তা, কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এজন্য যে, পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, সূরা নিসা ৩৪(কিয়দংশ)

ইসলামে পরিবার ও পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব অপরিসীম। দেহের মধ্যে হার্ট বা কলবের স্থান যেমন, ইসলামে পরিবারের স্থান তেমন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শরীরের মধ্যে একটি গোশতপিন্ড রয়েছে। যদি তা সুস্থ-স্বাভাবিক থাকে তাহলে গোটা শরীর সুস্থ-স্বাভাবিক থাকে। আর যদি তা অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে সমস্ত শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঐ গোশতপিন্ডটি হচ্ছে কলব বা হৃদয়। সুতরাং পরিবার যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে সমাজ ঠিক হয়ে যাবে। আর সমাজ ঠিক হয়ে গেলে রাষ্ট্রও ঠিক হয়ে যাবে।

স্বাভাবিকভাবেই পরিবার নামের এই ছোট্ট সমাজের বিভিন্ন দিক পরিচালনার জন্যে একজন পরিচালক থাকা দরকার। তা-না হলে পরিবারে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য দেখা দেবে।

পবিত্র কোরআন নারী ও পুরুষ তথা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে স্বামীকে দু’টি কারণে পরিবারের পরিচালক বলে উল্লেখ করেছে।

প্রথমত : পুরুষরা মহিলাদের চেয়ে শারীরিক দিক থেকে বেশী শক্তিশালী। আর তাই পুরুষদের আয় উপার্জন ও পরিশ্রমের ক্ষমতা বেশী।

আর দ্বিতীয় যুক্তি হলো, জীবন যাপনের সমস্ত খরচ যেমন- খাদ্য, বাসস্থান, পোশাক ও জীবন যাপনের অন্যান্য সব খরচ যোগানোর দায়িত্ব স্বামীর।

মুমিন নর ও নারীর মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সা শিক্ষাকে উপেক্ষার কোন অধিকার দেয়া হয় নি। মুমিন মুমিনা সব সময়ই বলবে “আমরা সুনলাম ও মানলাম” যা শরীয়তে নির্দেশনা।

ইসলাম নারীকে মা হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বোন হিসেবে মর্যাদাবান করেছে।

মা হিসেবে নারীকে মর্যাদাবান করেছে। দলিল হচ্ছে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকার কার? তিনি বললেন: তোমার মায়ের। লোকটি বলল: এরপর কার? তিনি বললেন: তোমার মায়ের। লোকটি বলল: এরপর কার? তিনি বললেন: তোমার মায়ের। লোকটি বলল: এরপর কার? তিনি বললেন: তোমার পিতার।”[সহিহ বুখারী (৫৬২৬) ও সহিহ মুসলিম (২৫৪৮)]

ইসলাম মেয়ে হিসেবেও নারীকে সম্মানিত করেছে: আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তির তিনজন মেয়ে, কিংবা তিনজন বোন কিংবা দুইজন মেয়ে বা দুইজন বোন রয়েছে, সে যদি এদের সাথে ভাল ব্যবহার করে এবং এদের ব্যাপারে আল্লাহ্‌কে ভয় করে চলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”[সহিহ ইবনে হিব্বান (২/১৯০)]

ইসলাম স্ত্রী হিসেবেও নারীকে সম্মানিত করেছে: আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম।”[সুনানে তিরমিযি (৩৮৯৫), ইমাম তিরমিযি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “পুরো দুনিয়া ভোগের সামগ্রী, আর সবচে’ উপভোগ্য সম্পদ হল নেককার নারী।” সহিহ মুসলিম

ইসলাম পিতামাতার ওপর সন্তান লালনপালনের গুরু দায়িত্ব আরোপ করেছেন:

আব্দুল্লাহ্‌ বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, “তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শাসক দায়িত্বশীল; তাকে তার অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হবে। পুরুষ তার পরিবারে দায়িত্বশীল; তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের দায়িত্বশীল। তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কাজের লোক তার মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল। তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি আরও বলেন: আমি এ কথাগুলো রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি।[সহিহ বুখারী (৮৫৩) ও সহিহ মুসলিম (১৮২৯)]

সার্বিকভাবে কুর’আনে বলা হয়েছে-

হে মুমিনগন! তোমরা নিজদিগকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে রক্ষা কর আগুন থেকে যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সূরা আত তাহরীম: ৬

এখানে মনে রাখা দরকার, প্রথমে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার উপযুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টা থাকতে হবে এরপর খলিফা হিসেবে পরিবার, আত্মীয় ও অন্যদের প্রতি প্রচেষ্টা চালাবে।

আমাদের নারীরা যেনো নিজের কথা ভুলেই যায়, সন্তান স্বামীর জন্য দিন রাত পেরেশান থাকে।

মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল চলতে থাকে। সাদাকায়ে জারিয়া অথবা এমন ইলম যা দ্বারা কল্যান লাভ করা যায় অথবা নেককার সন্তান, যে তার জন্য দু’আ করে। মুসলিম শরীফ

তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের সন্তান তোমাদের জন্য পরীক্ষা স্বরুপ।–আত তাগাবুন(১৫)

সন্তান গঠনে মায়ের ভূমিকাঃ

মা সন্তানের প্রথম স্কুল।——-

মা সন্তানের প্রথম স্কুল | সন্তান গঠনে মায়ের ভূমিকা-১

ইমাম গাজালি রহ. বলেছেন: ‘সন্তান মাতা-পিতার কাছে আমানত। সন্তানের হৃদয় নকশা- ইমেইজমুক্ত এক সরল-স্বচ্ছ মুক্তা, যা যেকোনো নকশা- ইমেইজ ধারণ করতে প্রস্তুত। তাকে যে দিকেই হেলানো হবে সে সে দিকেই ঝুঁকে পড়বে। যা কিছু উত্তম ও ভালো তা যদি তাকে শেখানো হয়, তাকে যদি এগুলোর প্রতি অভ্যস্ত করে নেয়া হয় তবে সেভাবেই সে বড় হবে। ফলে তার মাতা-পিতা দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্যবান হবে। তার উস্তাদ ও আদব-কায়দার শিক্ষকগণও তৃপ্তি অনুভব করবে। এর বিপরীতে তাকে যদি খারাপ বিষয়ে অভ্যস্ত করা হয়, জন্তু জানোয়ারের মতো তাকে লাগামহীন করে দেওয়া হয়, তাহলে সে ভাগ্যবিড়ম্বিত হবে, অতঃপর নিক্ষিপ্ত হবে ধ্বংসের গহ্বরে। আর এর দায়ভার বর্তাবে তাদের ঘারে যারা ছিল তার কর্ণধার, যাদের দায়িত্ব ছিল তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার।

মনস্তাত্বিকবিদরা রিসার্চ করে বের করেছেন যে বাচ্চার মেধা ও মননের ভিত তৈ্রী হয় ২-৫ বছরের মধ্যে। এই সময় হলো প্রাথমিক বিকাশ ও লালনের।

সন্তান গঠনে যারা ভূমিকা রেখে থাকেন, যাদের দিয়ে প্রভাবাণ্বিত হয়–

পিতা মাতা

পরিবারের অন্য সদস্যরা-দাদা-দাদী, নানা-নানী, ভাই বোন

গৃহকর্মী, ড্রাইভার, দাড়োয়ান

শিক্ষক শিক্ষিকা (বাসা ও স্কুলের)

শিক্ষাংগনের পরিবেশ

প্রতিবেশী

শিশুর বন্ধু মহল

পারিপার্শ্বিক অবস্থা

একদা উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর কাছে এসে জনৈক ব্যক্তি নিজের সন্তানের অবাধ্যাচরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। ওমর অভিযুক্ত সন্তানকে পিতার সাথে অসদাচরণের কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। সন্তান তখন বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন, সন্তানের কি পিতার উপর কোনো হক আছে? উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। সে বলল, তাহলে তা কী? উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, পিতা তার জন্য সৎ আদর্শ নারীকে মাতা হিসেবে গ্রহণ করবে, তার জন্য একটা সুন্দর নাম রাখবে এবং তাকে কুরআন শিক্ষা দেবে। তখন সন্তান বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন, আমার পিতা ওগুলোতে একটিও করে নি। আমার মা হচ্ছেন ক্রীতদাসী। এক সময় মূর্তিপূজারী ছিলেন, আমার নাম রেখেছে জু‘লান (অর্থাৎ গোবরে পোকা) আর আমার বাবা আমাকে কুরআনের একটি বর্ণও শিক্ষা দেন নি। উমার তখন পিতার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এসেছ সন্তানের অসদাচরণের বিরুদ্ধে নালিশ করতে। আরে তুমি তো তার প্রতি আগেই অবিচার ও অসদাচরণ করেছ। আব্দুল্লাহ নাসির ওলওয়ান, তারবিয়াতুল আওলাদ ফিল ইসলাম, প্রথম খন্ড, পৃ. ৩১৮।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “চারটি বস্তু শুভ লক্ষণ। যথা :

নেককার নারী

প্রশস্ত ঘর

সৎ প্রতিবেশী

সহজ প্রকৃতির আনুগত্যশীল-পোষ্য বাহন

পক্ষান্তরে অপর চারটি বস্তু কুলক্ষণা। তার মধ্যে একজন বদকার নারী।”হাকেম, সহিহ আল-জামে : ৮৮৭

সেই ব্যক্তির চাইতে ভালো আর কার জীবনধারা হতে পারে , যে আল্লাহর সামনে আনুগত্যের শির নত করে দিয়েছে , সৎনীতি অবলম্বন করেছে এবং একনিষ্ট হয়ে ইবরাহীমের পদ্ধতি অনুসরণ করেছে ? সেই ইবরাহীমের পদ্ধতি যাকে আল্লাহ নিজের বন্ধু বানিয়ে নিয়েছিলেন ৷ -সূরা নিসা ১২৪-১২৫

আমি তোমাদের কারো কর্মকাণ্ড নষ্ট করবো না ৷ পুরুষ হও বা নারী, তোমরা সবাই একই জাতির অন্তরভুক্ত ৷ -সূরা আল ইমরান-১৯৫

আদর্শ মায়ের বৈশিষ্ট্য

আল্লাহর খাঁটি অনুগত বান্দাহ

আচরনে উদ্ধত বা অহংকার না থাকা

বেহুদা কাজ থেকে দূরে থাকা

সিদ্ধান্ত নেয়া ও সঠিক সিদ্ধান্তে অটল থাকা

পরোপকারী ও মিতব্যয়ী হওয়া

মেজাজের ভারসাম্য রাখা

উচচস্বরে কথা বা হাসা পরিহার করা

কথা ও কাজের বাস্তব মিল রেখে চলা

সন্তানের যত্ন নিজ হাতে করা

সময়ের মূল্যায়ন ও ভারসাম্য রেখে চলা।

প্রতিটি কাজে শিরক মুক্ত থাকা

মোনাফিকীর স্বভাব থেকে দূরে থাকা

নিজেকে আদর্শ হিসেবে উদাহরন রাখা

আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া ও আত্মউপলব্ধি থাকা

সচেতন, পরিশ্রমী ও ধৈর্য্যশীল হওয়া

প্রতিটা গুনকেই বিশ্লেষন করে নিজের বাস্তব জীবনের সাথে একাত্ম করতে হবে। এই দুনিয়াতে আমরা এসেছি কিছুদিন ও কিছু কাজের আঞ্জাম দেয়ার জন্য, সময় শেষ হলেই আবার ফিরে যেতে হবে স্থায়ী জীবনের ঘরে।

সন্তানের প্রাথমিক হক্বঃ

১। সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আল্লাহর প্রশংসা করা, তার শুকরিয়া আদায় করা ও সন্তানের জন্য দোয়া করা।

২। কানে আজান দেয়া ৩। তাহনীক করা ৪। বুকের দুধ খাওয়ানো ৫। চুল ফেলা

৬। আকিকা করা।৭। অর্থপূর্ণ নাম রাখাটা জরুরী। ৮।  খাৎনা করানো

মা সন্তানের সুখ দুঃখের সাথীঃ

১। সন্তানের কাছে অবস্থান করা, সাথে নিয়ে সালাত, কুর’আন শুনা, আযান শুনা ও দু’আ বলা

২। সন্তানের সাথে খেলাধূলা, কথা বলা, খাওয়া গোসল যত্ন  নিজ হাতে করার চেষ্টা

৩। এমন সম্পর্ক যেনো সন্তান তার কথাগুলো বলতে দ্বিধা বা অস্বস্থি বোধ না করে

৪। আস্থার স্থান প্রস্তুত করা যেনো সে বিশ্বাস রাখতে পারে,সত্য কথা বলে। অংগিকার রক্ষা করে।

৫। আদর স্নেহ করা,সেটা মাথায় হাত বুলিয়ে, কপালে চুমু দিয়ে,কোলে বসিয়ে,গায়ের সাথে জড়ানো।

৬। সন্তানের কষ্টের সময় কষ্ট প্রকাশ করা ও আনন্দের সময় আনন্দ ভাগ করে নেয়া।

৭। সন্তানের পছন্দনীয় কাজগুলো গুরুত্ব দেয়া।

৮। ভুলগুলো সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়া, না বুঝলে সেদিক থেকে দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরানোর চেষ্টা করা।

মহান আল্লাহ দু’আ শিখিয়েছেন-رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন৷  সূরা বনী ইসরাইল   আয়াতঃ ২৪        এই দু’আর উপযুক্ত হতে হবে পিতা মাতাকে।

যা থেকে বিরত থাকতে হবেঃ

বাবা-মায়ের নিয়মিত ঝগড়া সন্তানদের মনে ভীষণভাবে রেখাপাত করে, যা বড় বয়সেও তারা ভুলতে পারে না৷ শুধু তাই নয়, যারা খুব বেশি ঝগড়া করেন, তাঁদের অকালমৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি৷ এই তথ্য পাওয়া গেছে ডেনমার্কের কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের করা এক গবেষণার ফল থেকে৷ তাছাড়া বাবা-মা সারাক্ষণ ঝগড়া করলে সন্তানরা বিষণ্ণতায় ভোগে, যা পরবর্তিতে তাদের ভেতরে থেকে যায়৷

রাসূল(সঃ) বলেছেন—

যে ব্যক্তি দু’টি কন্যা সন্তান লালন-পালন করবে, আমি এবং সে একত্রে এভাবে পাশাপাশি বেহেশতে প্রবেশ করব। এই বলে তিনি নিজের হাতের দু’টি আংগুল একত্র করে ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন।–তিরমিযী—আবওয়াবুল বিরর ওয়াস-সিলাহ-১৮৬৩

যে ব্যক্তি তার কন্যা সন্তানদের কারনে কোনরুপ পরীক্ষার সম্মুখীন হয় ( বিপদগ্রস্ত হয় ) , সে তাদের ব্যপারে ধৈর্য্য ধারন করলে তারা তার জন্য দোযখ থেকে আবরন ( প্রতিবন্ধক) হবে।–তিরমিযী—আবওয়াবুল বিরর ওয়াস-সিলাহ-১৮৬৩

এখানে লালন-পালন করাটা হতে হবে মহান আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী ও রাসূলের (সঃ) দেখানো পদ্ধতিতে।

আমরা অনেকেই মেয়ে সন্তান ছোট থাকা অবস্থায় তেমন একটা খেয়াল রাখি না। কিন্তু দেখা যায় অনেকের ছোটবেলার তিক্ত ঘটনা যা একটি মেয়েকে মানসিকভাবে যন্ত্রনা দিয়ে থাকে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মানসিক ভারসাম্য থাকে না।

তাই আজ কিছু দিক তুলে ধরলাম যা আপনার আমার প্রত্যেকের সাবধান হওয়া প্রয়োজন।

চারিত্রিক দিক আমরা অনেকের সম্পর্কে জানি না। তাই গাড়ীর চালকের সাথে একা কোথাও যেতে না দেয়া (যা ইসলামে শরিয়ত সম্মত নহে)।

বাসায় একা বড় কাজের ছেলের সাথে রেখে না যাওয়া।

গৃহ শিক্ষকের বা ধর্মীয় শিক্ষকের কাছে একা ঘরে পড়তে না দেয়া।

পুরুষ আত্মীয় (মাহরাম ছাড়া)বা অনাত্মীয়ের সাথে একা ঘরে বা বাইরে ছেড়ে না দেয়া।এমনকি নিজ চাচা, মামাদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকা ভালো।

ছুটিতে একা কোন আত্মিয়ের বাসায় রাত যাপন করতে না দেয়া (দায়িত্বশীল অভিভাবক ছাড়া)

নিজের বাবা-ভাইদের সামনেও সতর ও শালীনতা রক্ষার শিক্ষা দেয়া।

অনেক সময় মাহরাম আত্মীয় দ্বারাও অনেক অবুঝ মেয়ে সন্তান শারীরিক অপমানিত হয় যা অনেকসময় সেই মেয়েটি কাঊকে বলতেও পারে না আবার মানসিক কষ্টে ভুগতে থাকে-তাই এই ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার।

স্কুলে কোন পুরুষ শিক্ষকের রুমে বা বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হলে সাথে একজন বান্ধবী নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দেয়া।

আজকের আমাদের সমাজে যে নৈতিক অবক্ষয় চলছে তাতে সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই ইসলামের শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি আমল করার বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ছেলে শিশুদেরও তেমনি সাবধানে রাখতে হবে। কারন ছেলে শিশুরাও অনেক ধরনের সেক্সচুয়্যাল হয়রানীর স্বীকার হচ্ছে।

সন্তানের বিবেক বুদ্ধি গঠনঃ

বিবেক গঠ্ন হলো সন্তানকে শরীয়ত, সংস্কৃতি ও আধুনিক উপকারী জ্ঞানসহ চিন্তা ও সভ্যতার জ্ঞানে সজ্জিত করা, যেন সে চিন্তার ক্ষেত্রে পরিপক্ক ও জ্ঞানী হয়।

মূলত ঈমানী শিক্ষা (যা বুনিয়াদ), দৈহিক শিক্ষা (গঠন ও প্রস্তুতি), নৈ্তিক শিক্ষা (আত্মস্থ ও অভ্যস্ত করানো) এবং বিবেক-বুদ্ধির গঠন(সচেতনতা সৃষ্টি ও জ্ঞান শিক্ষা), মানসিক গঠন( ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব) ও সামাজিক গঠন(সমাজের উন্নত আদব-শিষ্টাচার ও মানবিক মৌ্লিক নীতিমালা শিক্ষা) –এই সবের সমণ্বয়ে একজন সন্তানকে উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে দিতে পারে আল্লাহতা’আলার অশেষ রহমতে।

সন্তানের বিবেক-বুদ্ধির গঠনে আমাদের কী করনীয় তার  কিছু দিক তুলে ধরবো ইন শা আ’ল্লাহ।

তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে  হবে।

১। জরুরী শিক্ষাদান করা

২। চিন্তা-চেতনা সৃষ্টি করা

৩। সুস্থ বিবেক বুদ্ধি বা মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা

জরুরী শিক্ষাদান করা

শৈশবের প্রথম স্তরেই শিক্ষা দিতে হবে কারন এসময় মন নরম ও পরিষ্কার থাকে ও স্মরন শক্তি বেশী থাকে এবং শিক্ষা তৎপরতা কার্যকর হয়।

ইবনে খালদুন বলেছেন–সমগ্র সিলেবাসে কোর’আন শিক্ষাকে মৌ্লিক স্থান দিতে হবে। কেননা এটা হচ্ছে দ্বীনের নিদর্শন ও পরিচিতি। এর মাধ্যমে অন্তরে ঈমান মজবুত হয়।

যে শিক্ষাটুকু ব্যক্তির নিজের আত্মা বিবেক শরীর ও চরিত্র গঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট ততটুকু শিক্ষা গ্রহন ফরজে আইন ।

খলীফা উমর(রা) গভর্ণরদের কাছে চিঠি দিয়ে নির্দেশ দেন-তারা যেন নিজ সন্তানদের সাঁতার ও ঘোড় দৌড় শিক্ষা দেন এবং তাদের কাছে উত্তম উপমা ও সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করান।

খলীফা হিশাম বিন আব্দুল মালেক নিজ সন্তানের শিক্ষককে বলেন-তিনি যেন সন্তানকে কোর’আন, ভালো কবিতা, বক্তৃতা, যুদ্ধের ইতিহাস, নৈ্তিক চরিত্র এবং লোকদের সাথে মেলা-মেশা শিক্ষা দেন।

আজ বড় বেশী অভাব একজন ভালো শিক্ষকের, মানগত শিক্ষার এবং শিক্ষার পরিবেশের, আমাদের সন্তানদের সিলেবাস এমনভাবে তৈ্রী হয়ে আছে যে তারা বইয়ের বাইরে যেতে পারে না আবার বই থেকেও জীবন গড়ার পথ পুরুটা পায় না। তাই আপনাকে আমাকে পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে আদর মাখা হাত নিয়ে সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে। তাদের গড়ে দিতে হবে নবীর(সঃ) উপযুক্ত ধারক করে। তাই নিজে একটা সিলেবাস তৈরী করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠা্নের পাশাপাশি রুটিন মাফিক সেই শিক্ষাকে আত্মস্থ করানোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে, তবে সবচেয়ে ভালো হতো যদি সেইরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুযোগ করা যা আদর্শবাদী হিসেবে গড়ে দিবে।

চিন্তার খোরাক এর জন্য প্রয়োজন—

শিশুকে শেখাতে হবে যে ইসলামে দ্বীন ও দুনিয়া উভয়টিই রয়েছে। কোর’আন ও হাদীস হলো জীবন ব্যবস্থা ও আইন। ইসলামের রয়েছে সম্মানজনক ইতিহাস। আত্মা ও চিন্তার খোরাকের জন্য রয়েছে সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা। ইসলামী দাওয়াত ও সংশোধনের জন্য রয়েছে সংঘবদ্ধ জীবন-যাপনের শিক্ষা।

১। চিন্তামূলক জ্ঞানদান করা—ইসলামই একমাত্র শাশ্বত ও চিরন্তন,এখানেই ইজ্জত-সম্মান, কোর’আনের শিক্ষা ছাড়া কোন সাহায্য নেই, নবী(সঃ) এর শরীয়ত ছাড়া কোন শক্তি অর্জন, সভ্যতাসৃষ্টি ও জাগরন সম্ভব নয়। ইসলামী সভ্যতার জ্ঞান সন্তানকে দিতে হবে।

২। দৃষ্টান্ত স্থাপন করা—বর্তমানে উপস্থিত আদর্শময়ী ব্যক্তিত্বকে সামনে আনা ও তাঁর সংস্পর্শে দেয়া।

৩। চিন্তামূলক অধ্যয়ন—ছোট হলেও বয়স অনুযায়ী ব্যক্তিগত লাইব্রেরী গড়ে দেয়া-যেখানে বই এর পাশাপাশি ইসলাম সম্পর্কিত ম্যাগাজিন ও পত্র-পত্রিকা রাখা। সেখানে সংবাদ, বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও আকর্ষনীয় বিষয়ভিত্তিক আলোচনার আয়োজন রাখা।

এছাড়া কম্পিউটারের মাধ্যমে কিভাবে ইসলামকে আরো সুন্দর ও বিজ্ঞান সম্মত দিক গুলো তুলে ধরা যায় তার একটা গাইডলাইন দেয়া।

৪। জ্ঞানী, নেক সাথী নির্বাচন করে দেয়া।

বন্ধু কেবল ভালো, বিনীত নামাজী শিক্ষিত ও প্রতিভাবান হলে চলবেনা একই সময় তার মধ্যে যোগ্যতা তাকওয়া এবং বিবেকের পরিপক্কতা থাকতে হবে। তাহলে আপনার সন্তানটিও গড়ে নেবে নিজেকে ইন শা’ আল্লাহ।

৩। সুস্থ বিবেক বুদ্ধি বা মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা

মানসিক গঠনের লক্ষ্য হলো সন্তানের বুদ্ধি-বিবেক সৃষ্টি্র পর তাকে সাহস, হিম্মত, বীরত্ব, পূর্ণতার অনুভূতি সৃষ্টি, অন্যের কল্যান কামনা, রাগের সময় সংযমসহ সকল মানসিক ও চারিত্রিক মর্যাদা বৈশিষ্ট্য শিক্ষা দেয়া, যেন তার ভারসাম্যপুর্ণ ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হলে অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্য উত্তম ও যথার্থ উপায়ে আঞ্জাম দিতে পারে।

সন্তান লালন-পালনকারী ও শিক্ষকের কাছে আল্লাহর দেয়া আমানত, তাই অভিভাবকের প্রয়োজন সম্মান ও মর্যাদা এবং ব্যক্তিত্ব বিধ্বংসী উপাদান থেকে সন্তানকে মুক্ত রাখা। যা থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন-

১। লজ্জার সংকোচ ২। ভয়-ভীতি ৩। ঘাটতির অনুভুতি ৪। হিংসা ৫। রাগ-ক্রোধ

সংকোচ ও লজ্জার মধ্যে পার্থক্য হলো-  সংকোচ হলো অনাগ্রহ ও পিছুটান ভাব। লজ্জা হলো মর্যাদা ও সম্মানের পদ্ধতি এবং ইসলামের আদব ও শিষ্টাচার। মন্দ-গুনাহর কাজে লজ্জা-শরম শেখাতে হবে।

রাসূল(সঃ) বলেছেন-লজ্জার অধিকার আদায় করে আল্লাহর কাছে যথার্থভাবে লজ্জিত হও। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর প্রতি আমাদের লজ্জাবোধ আছে। নবী (সঃ) বলেন, লজ্জা বলতে তা বুঝায়না। আল্লাহর কাছে লজ্জাবোধের মানে হলো “ মাথা-মস্তিষ্কের চিন্তা শক্তি এবং পেটকে হেফাজত করা, মৃত্যু ও ধ্বংসের কথা স্মরন করা এবং পরকালের প্রতি আগ্রহী ব্যক্তি দুনিয়ার সৌন্দর্যকে ত্যাগ করে আখেরাতকে ইহকালের উপর অগ্রাধিকারই আল্লাহর প্রতি যথার্থ লজ্জাবোধ (তিরমিযী)

খলীফা ওমার বিন আব্দুল আযীযের খেলাফতের প্রথম দিকে অনেক প্রতিনিধি দল আসতে থাকেন তাঁকে অভিনন্দন জানাতে। তখন হেজাজের প্রতিনিধি দলের ১২বছর বয়সের একটি ছেলে এগিয়ে আসলে তিনি বালকটিকে পিছনে যেতে বলেন এবং মুরুব্বীদের আগে আসতে দিতে বলেন। বালকটি জবাব দিলো-হে আমীরুল মোমেনীন আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করুন। ব্যক্তিতো দু’টো ছোট জিনিষের সমষ্টি। অন্তর ও জিহবা। আল্লাহ যদি কাউকে কথা বলার জন্য জিহবা এবং হেফাজতকারী অন্তর দেন, তাহলে সে কথা বলার অধিকারি হয়। যদি বয়সের বিষয়টাই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হতো তাহলে এই আসনে বসার জন্য উম্মাহর মধ্যে আপনার চাইতে অন্য যোগ্য লোক রয়েছে। ওমার (রা) তার কথায় আশ্চর্য হয়ে গেলেন।

ভয়-ভীতি

এটি সকলেরই একটি মানসিক অবস্থার নাম। স্বাভাবিক সীমা অতিক্রম না করলে শিশুদের জন্য উত্তম।

বেশী ভয় মানসিক উৎকণ্ঠা তৈ্রী করে। তখন তাকে মানসিক রোগ বিবেচনা করে চিকিৎসা করতে হয়।

শিশু মনোবিজ্ঞানীদের মতে-প্রথম বছরে আকষ্মিক শব্দ কিংবা হঠাৎ করে কিছু পড়ার শব্দের কারনে শিশুর মধ্যে ভয়-ভীতির লক্ষণ দেখা যায়। ছয় মাসে অপরিচিত দেখলে, তিন বছরে পশু-গাড়ী পানি ও ঢালু জায়গা দেখলে ভয় পায়। সাধারনত মেয়ে শিশু ছেলে শিশু থেকে বেশী ভয় পায়।

তবে বেশী ভয়ের কারন—

১। মা বা পরিবারের কেউ সন্তানকে মৃত ব্যক্তি, অন্ধকার কিংবা অপরিচিত সৃষ্টি সম্পর্কে ভয় দেখালে।

২। শিশুর প্রতি মায়ের অতিরিক্ত অনুভূতি ও উদ্বেগ।

৩। শিশুকে নিঃসঙ্গ লালন-পালন করা।

৪। জিন-ভূতের কল্পকাহিনী বলা বা বই পড়া ।

৫। ভয়ের মুভি দেখা বা দেখানো

এগুলো থেকে বাঁচার জন্য—

১। শিশুকে প্রথম থেকে আল্লাহর উপর ঈমান, ইবাদত এবং সকল ভীতিপ্রদ বিষয়ে আল্লাহর উপর নির্ভরতা শেখাতে হবে। আল্লাহ বলেছেন—

মানুষকে ছোট মনের অধিকারী করে সৃষ্টি করা হয়েছে ৷ বিপদ -মুসিবতে পড়লেই সে ঘাবড়ে যায়,আর যে -ই সচ্ছলতার মুখ দেখে অমনি সে কৃপণতা করতে শুরু করে ৷তবে যারা নামায পড়ে  (তারা এ দোষ থেকে মুক্ত) ৷ যারা নামায আদায়ের ব্যাপারে সবসময় নিষ্ঠাবান ৷সূরা মায়ারিজ ১৯-২৩

২। শিশুকে স্বাধীনতা দিতে হবে, দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে এবং বিকাশ ও উন্নয়নের পর্যায় মোতাবেক কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

রাসূল(সঃ) বলেছেন-তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্থদের ব্যপারে জবাবদিহী করতে হবে।

৩। ভয় ভীতি না দেখানো- কল্পনার জিনিষ বা অশরীরী জিনের ভয় দেখিয়ে কান্না বা বায়না বন্ধ করার চেষ্টা না করা। এমন বই যেন না পড়ে বা মুভি যেন না দেখে যা ভীতিমূলক এবং অমূলক।

৪। শিশুকে অন্যের সাথে মেলা-মেশা করতে দেয়া।

৫। যে জিনিষটা ভয় পায় সেই বিষয়ে বেশী শিক্ষা দেয়া। যেমন পানি ভয় পেলে একটি পাত্রে পানি দিয়ে খেলতে দেয়া, অন্ধকারকে ভয় পেলে বাতি নিভিয়ে তার সাথে একটু হাসি-তামাশা করা-তাহলে ভয় কেটে যাব।

৬। তার এই ভয় পাওয়াকে নিয়ে রাগ, ঠাট্টা বা উপহাস না করা। বরং যত্ন সহকারে বুঝানোর চেষ্টা করা।

ইতিহাসকে দেখুন—সাহাবা কেরামের সন্তানেরা সাহস, দূর্লভ বীরত্বে অসাধারন ছিলেন। নবুয়্যতের পাঠশালা, মুসলিম পরিবার এবং মোমিন সমাজ ও বীরোচিত সমাজ থেকে যোগ্য শিক্ষা লাভের কারনেই এই অসাধারন ফসল পরিবারে দেখা যায়।

ঘাটতির অনূভুতি

শিশুদের মাঝে ঘাটতি বা কমতির অনুভূতি বিভিন্ন কারনে সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে শিশুর মনে জটিলতা বিকৃ্তি কিংবা খারাপ ও অসৎ জীবন যাপন এবং অপরাধ প্রবনতা দেখা দিতে পারে। তাই পিতা-মাতাকে সন্তানের এই সমস্যা দূর করার জন্য প্রতিরক্ষা ও আরোগ্যমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

যে কারনে ঘাটতি বা কমতির অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে—

১।  অপমান ও উপেক্ষা

২।  সীমাতিরিক্ত আদর-সোহাগ ও সাহায্য

৩। সন্তানদের মধ্যে কাউকে অগ্রাধিকার দেয়া।

৪।  শারীরিক পংগুত্ব

৫।  ইয়াতীম অবস্থায় ভালো পরিবেশ না পাওয়া

৬।   অভাব-দারিদ্র

সন্তানের সংশোধনের যথার্থ উপায় হলো—

কোমল ও নরমভাবে তার দোষ ধরিয়ে দেয়া।

আল্লাহতা’আলা ও রাসূলের কথা উদাহরন হিসেবে বলা।

যুক্তি দিয়ে বুঝানো যে, তার এই ত্রুটিতে কেউ খুশি হবে না।

অব্যাহতভাবে অপমান ও কঠোরতা প্রদর্শন করা ঠিক নয়।

যদি তিরস্কার করতে হয় তবে কারো সামনে না করা।

এরপর প্রয়োজন হলে শাস্তির ব্যবস্থা করা।

রাসূল(সঃ) বলেছেন-নিশ্চয়ই আলাহ বিনম্র, তিনি সকল বিষয়ে নমনীয়তাকে ভালোবাসেন।–বোখারীও মুসলিম

রাসূল(সঃ) বলেছেন বলেছেন-যে ব্যক্তি নমনীয়তা থেকে বঞ্চিত, সে সকল কল্যান থেকে বঞ্চিত।–মুসলিম

তাই সন্তানের সংশোধনের সর্বোত্তম উপায় হলো কোমল ও নরমভাবে তাকে সংশোধন করা।

হিংসাঃ

বিভিন্ন কারনে হিংসা জাগ্রত হতে পারে শিশুর মনে। যেমন—

কোন কারনে শিশু আশংকা করে যে পরিবারে তার সুবিধা বা আবেগ লোপ পায় বিশেষ করে পরিবারে নতুন কোন সন্তান জন্মের পর।

সন্তানের মাঝে কাউকে মেধাবী ও কাউকে বোকা বললে।

এক সন্তানের তুলনায় অন্য সন্তানকে প্রাধান্য দিলে।

আদরের সন্তানকে অন্যায় করলে ক্ষমার নীতি দেখানো এবং অন্য সন্তানের বেলায় শাস্তি দেয়া

ধনী সমাজ বা পরিবেশে গরীব ও অভাবী সন্তানের অবস্থান …।

তাই হিংসা যেন সৃষ্টি না হয় সেজন্য ইসলাম সন্তানকে ভালোবাসা, আদর-স্নেহ,সহযোগীতা ও আবেগ-অনুভূতি দিয়ে গড়েতোলার উপর গুরুত্ব দিয়েছে। যেমন-

–সন্তানকে বুঝতে দিতে হবে যে সে আদরের সন্তান।

রাসূল(সঃ) হাসান, হোসাইনের সাথে হাস্যরস করতেন। তারা তাঁর হাত ও হাঁটুর মধ্যে হাটতো এবং তাঁর সাথে ছিলো তাদের নিবিড় সম্পর্ক। তিনি তাদের পিঠে আরোহন করিয়ে বলতেন-তোমাদের উটটি কতোইনা উত্তম এবং তোমাদের কতোইনা উত্তম সহোদর।–তিরমিযী

—নবজাতকের আগমনে বড় সন্তানটির আদর একটুও কমেনি।

সন্তানের সাথে ইনসাফপূর্ণ আচরন করা।

সব সন্তানের মেধা একরকম হয় না। তাই মা-বাবার জিহবাকে সংযত রাখতে হবে যেন সন্তানকে কোন কটু কথা না বলা হয় অন্য সন্তানের তুলনায়।

সন্তানকে বুঝাতে হবে আদর দিয়ে ।

রাসুল(সঃ) বলেছেন- তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাকো। আগুন যেভাবে কাঠকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসা নেক আমলকে খেয়ে ফেলে। আবু দাউদ

আজকাল আরেকটি জিনিষ দেখা যায় –পড়া-শুনা নিয়ে অনেক পিতা-মাতাই সন্তানের মাঝে হিংসার বীজ বপন করে দেন। তাতে সন্তান এইভাবে বড় হলে বড় হয়েও এই স্বভাব থেকে বের হতে পারে না।

যেমন-স্কুলের খাতা বা নোট অন্য বন্ধু নিতে চাইলে সন্তানটি দিতে চাইলেও অভিভাবকরা শিখিয়ে দেন যে খাতা দিবে না তাতে ও ভালো নাম্বার পেয়ে যাবে।

অথচ এর মাধ্যমে নিজের সন্তানের জীবনের কত বড় ক্ষতি করছেন তা পিতা-মাতা বুঝতে পারছেন না। স্কুলের রেজাল্ট ভালো হওয়াটা যেমন প্রয়োজন তেমনি মনষ্যত্ববোধ জাগানো আরো বেশী জরুরী। প্রতিটা বছরেই দিনে দিনে সন্তান অনেক সামাজিকতা শিখে থাকে স্কুলের পরিবেশ থেকে, জীবনের ছোট ছোট কষ্ট ও জটিল অবস্থায় ধৈর্য্য ধারন করা, মেজাজের ভারসাম্য রক্ষা করা শেখান যায় যদি মা-বাবা বিশেষ করে মা এসব ব্যপারগুলো সেইভাবে উপস্থাপন করতে পারেন সন্তানের কাছে।

 

আরেকটি জিনিষ যা পিতা-মাতা সন্তানের মনে হিংসা আনায় তা হলো—দেখা যায় নিজেদের কোন আত্মীয় ধনী অবস্থা আছে, তখন বাবা-মা ই হিংসামূলক আচরন বা কথা বার্তা বলে সন্তানের মনে ঢুকিয়ে দেন, অথবা সন্তান যখন সেই আত্মিয়ের ব্যপারে হিংসামূলক কথা বলে বা আচরনে প্রকাশ পায় তখন বাবা-মা তাকে সংশোধন করে না বলে পরবর্তীতে তা মারাত্মক রুপ নেয়।

সন্তানদের মধ্যে কাউকে অগ্রাধিকার দেয়া।

নোমান বিন বাশীর থেকে বর্ণিত। বাশীর নিজ ছেলে নোমানকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ(সঃ)এর কাছে এসে বললেন-আমি আমার এই ছেলেকে দান করেছি। রাসূল(সঃ) বলেন-তুমি তোমার অন্য সকল সন্তানকে অনুরুপ দান করেছো? বাশীর বলেন, না। রাসূল(সঃ) বলেন, তাহলে এই দান প্রত্যাহার কর।—বোখারী ও মুসলিম

পবিত্র কোর’আনে সন্তানকে কি শিক্ষা দিবেন সুন্দর করে আল্লাহতা’আলা শিখিয়ে দিয়েছেন।

বিশেষ ব্যক্তিত্ব লোকমান(আঃ) যেভাবে শিখিয়ে ছিলেন তার সন্তানকে তার উল্লেখ করেই আল্লাহ বলেছেন।

স্মরণ করো যখন লুকমান নিজের ছেলেকে উপদেশ দিচ্ছিল, সে বললো,

১। হে পুত্র ! আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না  যথার্থই শিরক অনেক বড় জুলুম ৷

২। আর  প্রকৃতপক্ষে আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার হক চিনে নেবার জন্য নিজেই তাকিদ করেছি ৷ তার মা দুর্বলতা সহ্য করে তাকে নিজের গর্ভে ধারণ করে এবং দু’বছর লাগে তার দুধ ছাড়তে ৷ (এ জন্য আমি তাকে উপদেশ দিয়েছি) আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং নিজের পিতা-মাতার প্রতিও, আমার দিকেই তোমাকে ফিরে আসতে হবে ৷

কিন্তু যদি তারা তোমার প্রতি আমার সাথে এমন কাউকে শরীক করার জন্য চাপ দেয় যাকে তুমি জানো না, তাহলে তুমি তাদের কথা কখনোই মেনে নিয়ো না৷ দুনিয়ায় তাদের সাথে সদাচার করতে থাকো কিন্তু মেনে চলো সে ব্যক্তির পথ যে আমার দিকে ফিরে এসেছে ৷ তারপর তোমাদের সবাইকে ফিরে আসতে হবে আমারই দিকে ৷ সে সময় তোমরা কেমন কাজ করছিলে তা আমি তোমাদের জানিয়ে দেবো ৷

৩। (আর লুকমান বলেছিল ) “ হে পুত্র! কোন জিনিস যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা লুকিয়ে থাকে পাথরের মধ্যে , আকাশে বা পৃথিবীতে কোথাও, তাহলে আল্লাহ তা বের করে নিয়ে আসবেন ৷ তিনি সূক্ষ্মদর্শী এবং সবকিছু জানেন ৷

৪। হে পুত্র! নামায কায়েম করো,সৎকাজের হুকুম দাও, খারাপ কাজে নিষেধ করো এবংযা কিছু বিপদই আসুক সে জন্য সবর করো ৷ একথাগুলোর জন্য বড়ই তাকিদ করা হয়েছে ৷

৫।   আর মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথা বলো না,পৃথিবীর বুকে চলো না উদ্ধত ভঙ্গিতে, আল্লাহ পছন্দ করেন না আত্মম্ভরী ও অহংকারীকে ৷

৬।  নিজের চলনে ভারসাম্য আনো  এবং নিজের আওয়াজ নীচু করো ৷সব আওয়াজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে গাধার আওয়াজ ৷ সূরা লোকমান (১৩-১৯)

ক্যারিয়ার গঠনে ভূমিকাঃ

তোমাদের সন্তান সন্ততিদেরকে সক্ষম ও সাবলম্বি রেখে যাওয়া, তাদেরকে অভাবী ও মানুষের কাছে হাত পাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। [সহীহ বুখারী:১২৯৫]

তবে এই কাজটি নিয়ত সহিহ রেখে এবং মহান আল্লাহর স্মরন থেকে শরীয়তের সীমালংঘন না করে করা হলে ইন শা আল্লাহ ইবাদাত হিসেবে মহান আল্লাহ গ্রহন করবেন।

আর এই ক্যরীয়ার গঠনের পিছনে ছুটতে যেয়ে আবার অনেকে ভারসাম্যহীন হয়ে যায়, ফলে দেখা যায় অনেক সন্তান মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পিছনে বড় এক কারন পিতা মাতার অতিরিক্ত অভিলাস পূরনে সন্তানকে মানসিক চাপে রাখা। সামাজিক প্রেক্ষাপট প্রতিযোগীতামূলক হয়ে যাওয়ায় এর সাথে খাপ খেতে না পারাটা আরেকটি কারন।

তাই যা লক্ষ্যনীয় –সন্তানদের জন্য

কুর’আনের ও হাদীসের জ্ঞান অল্প হলেও প্রতিদিনের রুটিনে রাখা

ফরয সালাত যেনো কোনভাবেই বাদ না যায়।

অস্থির হয়ে আচরন খারাপ যেন না হয়।

অতিরিক্ত রাত জেগে শরীরের হক যেন নষ্ট না হয়।

মিথ্যা বা দুর্নীতিপরায়ন সম্পন্ন কোন কাজের চিন্তা যেনো না আসে।

মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে তাঁর সাহায্য চাইতে থাকতে হবে।

সব সময় মহান রবের নামে পড়া শুরু করবে।

কোন বন্ধু পরীক্ষার হলে সাহায্য করবে এই ধরনের অশুভ চিন্তা সরিয়ে নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর প্রস্তুতি নিতে হবে।

সমাজের অন্যদের কারচুপি করা দেখেও নিজেকে সত্যের পথে রাখতে হবে।

মনে রাখা প্রয়োজন মহান আল্লাহ তাকদীরে যা রেখেছেন তা অতিক্রম করা যাবে না।

নিজের প্রচেষ্টার পুরুটাই কাজে লাগিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে, এরপর যা ফলাফল আসে তা ই তাকদীর, সেটা আলহামদুলিল্লাহ বলে মেনে নেয়ার মানসিকতা রাখতে হবে। এখানেই কল্যান রয়েছে।

জীবনের এই পরীক্ষাই সব নয়, তাই অস্থির বা হতাশ হওয়ার কোন কারন নেই।

মহান আল্লাহর উপর যে ভরসা করে প্রচেষ্টা চালায়, আল্লাহ তার রিযিক(এখানে পরীক্ষায় ফল লাভ) বাড়িয়ে দেন। কাজটি সহজ করে দেন।

মনে রাখতে হবে রিযিক ও সম্মানের মালিক আল্লাহ, তিনি যাকে ইচ্ছা বাড়িয়ে দেন বা কমিয়ে দেন, তাই মহান আল্লাহর দিকে একান্তভাবে নির্ভর করে সত্য পথ ধরে পরিশ্রম করে যেতে হবে।

অভিভাবকদের জন্য— মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ভালোবাসেন বেশী, সেই তুলনায় মা বাবা সন্তানকে কতটুকু ভালোবাসেন তা আমরা হাদীস থেকে জানি। মহান আল্লাহ মাত্র একভাগ ভালোবাসা পুরু সৃষ্টির মাঝে দিয়েছেন। তাই মহান আল্লাহ আমাদের সন্তানদেরও সেইভাবে কল্যান দিবেন।

দুনিয়ার এই অস্থায়ী জীবনের ফলাফলের চেয়ে আখেরাতের স্থায়ী জীবনের ফলাফল এর প্রয়োজনীয়তা সব সময় মাথায় রাখা প্রয়োজন এবং তা সন্তানদের মাঝেও বিস্তার করাতে হবে।

তাই অন্যায় কোন পদ্ধতি যেনো অনুসরন না করে এখনি নৈ্তিকতার ও সত্যের প্রতিক হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। এই একটি পরীক্ষা নয়, দুনিয়ার জীবনে অসংখ্য পরীক্ষা দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে আপনার সন্তানকে।

ভবিষ্যত আমরা দেখিনা বা বলতে পারিনা, মহান আল্লাহ সব দেখেন ও জানেন, তাই প্রচেষ্টার পর যা ভাগ্যে আসে তা কল্যান বলে আস্থা রাখতে হবে এবং মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। সন্তানকেও বুঝতে দিতে হবে আল্লাহর উপর কিভাবে খুশি থাকতে হয়।

রাগের বশবর্তী হয়ে কখনো সন্তানকে বকা ঝকার পাশাপাশি অভিশাপ দিয়ে নিজে গুনাহগার ও সন্তানের জীবনে অকল্যান নিয়ে আসার সুযোগ করে দিবেন না। মানুষের বিশেষ করে পিতা মাতার দু’আ যেকোন সময় কবুল হয়ে যেতে পারে, তাই সময় থাকতেই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এই অভিশাপ দেয়ার অভ্যাস কখনো মুমিনের চরিত্রে থাকতে পারে না।

সন্তানকে আদর ও যত্ন দিয়ে কাছে টেনে বুঝিয়ে বলুন। তার শারিরীক ও মানসিক সুস্থ্যতার গুরুত্ব তুলে ধরুন। বুঝতে দিন আপনি তাকে কত ভালোবাসেন এবং জান্নাতেও একসাথে থাকতে চান, তাই এতো দিক নির্দেশনা দেয়া।

এই ধরনের অবস্থা দিয়েই সন্তানকে সবর ও আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা শেখানো যায়।

তাই পিতা মাতাকে আগে সবর ও তাওয়াক্কুলের আচরন দেখাতে হবে এবং তা সন্তানকে বুঝতে দিতে হবে।

প্রতিটি অভিভাবকের কর্তব্য পরীক্ষার ফলাফলের জন্য বকা ঝকা না করে, বুঝানো ও পরিশ্রম করার জন্য উত্সাহিত করা। এইভাবে বলা যে, তুমি আল্লাহর নামে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাও তারপর যা ফলাফল আসবে সেটাতেই আমরা খুশি আলহামদুলিল্লাহ। তবে সন্তান যেন ঠিকভাবে পরিশ্রম করে সেদিকে তদারকি করা অভিভাবকদের কর্তব্য।

মহান আল্লাহর দরবারে বেশি করে দু’আ করুন সন্তানের স্বার্থক জীবনের জন্য।

শাসন বা শাস্তি প্রদান করার ক্ষেত্রে

ইসলামী শরীয়ত মানুষের মৌ্লিক প্রয়োজনগুলোর হেফাজতের চেষ্টা করে। ইজতেহাদকারী ইমাম ও ফেকাহবিদদের মতে তা হলো-

১। দ্বীন ২। জান ৩।মাল ৪।ইজ্জত-সম্মান ৫। বিবেক-বুদ্ধির হেফাজত

ইসলামের শিক্ষাই হলো এইগুলোর হেফাজত করা। তাই এইগুলোর উপর কোন আঘাত আসলে তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।

এই শাস্তি দু প্রকার।

১। দণ্ডবিধি ও ২। অনির্ধারিত শাস্তি

অনির্ধারিত শাস্তি যা আল্লাহ কিংবা মানুষের হকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা তুলে ধরবো ইন শা’ আল্লাহ। এটা এমন সব গুনাহ বা অপরাধের শাস্তি যার বিপরীতে দণ্ড কিংবা কাফফারা নির্দিষ্ট নেই। যেমন ভয় তিরস্কার ও সংশোধনমূলক শাস্তি।

১। নম্র ও দয়ালু ব্যবহার—সন্তান স্নেহ ও যত্নের আধার। নবী(সঃ) সুন্দর উদাহরন দেখিয়েছেন।

নমনীয়তা গ্রহন কর এবং কঠোরতা ও অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাক।–বুখারী শরীফ

তোমরা সহজতর পদ্ধতি অবলম্বন কর। কঠোরতা নয়, শিক্ষা দাও, ভাগিয়ে দিও না।–মুসলিম শরীফ

২। শাস্তিদানের সময় ত্রুটিকারী শিশুর স্বভাব বিবেচনায় রাখতে হবে—বুদ্ধিমত্তা, নমনিয়তা ও সাড়াদানের ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মন-মেজাজও বিভিন্ন ধরনের হয়। এইগুলো অনেক সময় উত্তরাধিকার,পরিবেশ ও গঠন প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। ইবনে খালদুন তাঁর ‘আল মোকদ্দমা’ বইতে লিখেছেন –অতিমাত্রায় কঠোরতা সন্তানকে ভীরু ও কাপুরুষ বানায় এবং জীবনে দায়-দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বেড়াতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় বরং অলসতা, মিথ্যা ও ধোঁকাবাজীর দিকেও ঠেলে দেয়।

তাই অত্যন্ত হেকমতের সাথে সন্তানকে শাস্তি দিতে হবে এবং সবপ্রচেষ্টার পরই শাস্তি দেয়া যেতে পারে।

৩। ক্রমাণ্বয়ে হালকা থেকে কঠোর পর্যায় গমন—অর্থাৎ সমস্যা সমাধানের আরো কিছু ধাপ আছে।

মারের কিছু শর্ত আছে—-

১। সংশোধনের সকল উপায় প্রয়োগের পর যদি ভালো না হয়।

২। কঠোর রাগের মাথায় মার দেয়া যাবে না। এতে সন্তানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৩। মাথা,মুখ,বুক ও পেটে মারা যাবে না।

৪। প্রথমবার হালকা মার দিতে হবে যেন বেশী কষ্ট না পায়। হাতে-পায়ে হালকা মার দেয়া যেতে পারে। ছোটদের জন্য ১-৩ টিবেত দিয়ে মারা এবং একটু বড়দের জন্য বেশী হলে ১০টি। কারন রাসূল(সঃ) বলেছেন-

আল্লাহর দণ্ডবিধি ছাড়া কাউকে ১০টির বেশী বেত্রাঘাত করা যাবে না।(ইবনুল তাইমিয়া, আল মুগনী কিতাব)

৫। ১০বছর বয়সের আগে মার দেয়া যাবে না।

নবী(সঃ) বলেছেন—সন্তানকে সাত বছর বয়সে নামায শিক্ষা দাও এবং ১০ বছর বয়সে সে জন্য প্রয়োজনে মার দাও এবং বিছানা আলাদা করে দাও।

৬। প্রথমবার ভুলের জন্য তওবা করার সুযোগ দেয়া দরকার এবং মধ্যস্থতাকারীদের সুপারিশ গ্রহন করে আবার যেন এইরকম অন্যায় না করে তার প্রতিশ্রুতি নেয়া দরকার। এটা মার কিংবা লোকদের সামনে অপমান হতে উত্তম।

৭। সন্তান বালেগ হলে অন্যায় থেকে ফেরানোর জন্য প্রয়োজনে অধিক সময় মার দিতে হতে পারে।

৮।সন্তান গঠনকারী নিজের হাতে মার দিবে, অন্যকে দিয়ে দিবে না।

তবে মনে রাখতে হবে শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্য কষ্ট দেয়া নয় বা সন্তানকে অত্যাচার করা নয় বা নিজের রাগকে হালকা করার জন্য নয় বরং সব সময় মনে রাখতে হবে সন্তানকে ভালোবাবাসী বলে তাকে ভালো পথে রাখার জন্যই সব প্রচেষ্টার পর যতটুকু অন্যায় সেই অনুযায়ী শাস্তি দেয়া যেন সেই অন্যায় থেকে ফিরে আসে। সব সময় সন্তানেত হেদায়েতের জন্য দোয়া করতে হবে মহান আল্লাহতা’আলার কাছে । মহান আল্লাহতা’আলাকে সব সময় ভয় করে কাজ করতে হবে।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল(সঃ)-কে দু’টি বিষয়ের কোন একটি গ্রহনের এখতিয়ার দেয়া হলে এবং তা গোনাহের কাজ না হলে যেটি সহজতর তিনি সেটি গ্রহন করতেন। যদি গোনাহের কাজ হতো তবে তিনি তা থেকে সবার চেয়ে বেশী দূরে অবস্থান করতেন। রাসূল(সঃ) কোন ব্যপারে নিজ স্বার্থে কখনো প্রতিশোধ গ্রহন করেননি। তবে আল্লাহর  কোন নিষেধাজ্ঞা প্রকাশ্য লংঘন হলে তিনি তখন আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রতিশোধ নিতেন।–বুখারী-কিতাবুল আদাব—৫৬৮৬

 

পরিবারের জন্য দু’আঃ সবচেয়ে বড় করনীয়- মহান রবের দরবারে আকুতি জানিয়ে দু’আ করা, তাহাজ্জুদে সাজদাবনত হয়ে কেঁদে কেঁদে চাওয়া। দান সাদাকা বাড়িয়ে দেয়া।

পরিবার ও সন্তানের জন্য দু’আ যা মহান আল্লাহ শিখিয়ে দিয়েছেন তা উল্লেখ করা হলো।

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন৷  সূরা বনী ইসরাইল   আয়াতঃ ২৪

رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً ۖ إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ

হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তুমি তোমার নিকট হতে সৎ বংশধর দান কর। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবনকারী। সূরা আলে ইমরানঃ৩৮

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

“ হে আমাদের রব ! আমাদের নিজেদের স্ত্রীদের/ স্বামী ও নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম ৷সূরা ফুরকানঃ৭৪

رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي ۖ إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

“হে আমার রব, তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যেসব নিয়ামত দান করেছো আমাকে তার শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দাও ৷ আর এমন সৎ কাজ করার তাওফীক দাও যা তুমি পছন্দ করো ৷ আমার সন্তানদেরকে সৎ বানিয়ে আমাকে সুখ দাও ৷ আমি তোমার কাছে তাওবা করছি ৷ আমি নির্দেশের অনুগত (মুসলিম) বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত ৷”  সূরা আহকাফঃ১৫

رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي ۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ

“হে আমার রব! আমাকে সালাত কায়েমকারী কর এবং আমার বংশধরদের মধ্য হতেও। হে আমার প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল কর। সূরা ইবরাহীমঃ৪০

رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ

হে পরওয়াদিগার! যেদিন হিসেব কায়েম হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং সমস্ত মুমিনদেরকে মাফ করে দিয়ো। সূরা ইবরাহীমঃ৪১

رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا ۖ إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

হে আমাদের রব!আমাদের দু’জনকে তোমার মুসলিম (নির্দেশের অনুগত)বানিয়ে দাও ৷ আমাদের বংশ থেকে এমন একটি জাতির সৃষ্টি করো যে হবে তোমার মুসলিম ৷ তোমার ইবাদাতের পদ্ধতি আমাদের বলে দাও এবং আমাদের ভুলত্রুটি মাফ করে দাও ৷ তুমি বড়ই ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী ৷সূরা আল বাকারাঃ১২৮

পুরুষরা নারীদের কর্তা, কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এজন্য যে, পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, কাজেই পূণ্যশীলা স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর আড়ালে আল্লাহর হেফাযতে তারা হেফাযত কর। আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ শ্ৰেষ্ঠ, মহান।নিসাঃ৩৪

নারীদের দুর্বলতার কারণে তাদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে তুলনামূলকভাবে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ নারীরা বল প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে পারে না। কিন্তু তথাপি এই সমতার অর্থ এই নয় যে, পুরুষ ও নারীর মধ্যে মর্যাদার কোন পার্থক্য থাকবে না; বরং দুটি ন্যায়সঙ্গত ও তাৎপর্যের প্রেক্ষিতেই পুরুষদেরকে নারীদের পরিচালক নিযুক্ত করা হয়েছে।

প্রথমতঃ পুরুষকে তার জ্ঞানৈশ্বর্য ও পরিপূর্ণ কর্মক্ষমতার কারণে নারী জাতির উপর মর্যাদা দেয়া হয়েছে, যা অর্জন করা নারী জাতির পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। দৈবাৎ কিংবা ব্যক্তিবিশেষের কথা স্বতন্ত্র।

দ্বিতীয়তঃ নারীর যাবতীয় প্রয়োজনের নিশ্চয়তা পুরুষরা নিজের উপার্জন কিংবা স্বীয় সম্পদের দ্বারা বিধান করে থাকে। মোটকথা: ইসলাম পুরুষকে নারীর নেতা বানিয়েছে। নারীর উপর কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তাকে তার স্বামীর যা আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন তার আনুগত্য করা। আর সে আনুগত্য হচ্ছে, সে স্বামীর পরিবারের প্রতি দয়াবান থাকবে, স্বামীর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। স্বামীর পক্ষ থেকে খরচ ও কষ্ট করার কারণে আল্লাহ স্বামীকে স্ত্রীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। [তাবারী]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সবচেয়ে উত্তম নারী হল ঐ স্ত্রী যার দিকে তুমি তাকালে তোমাকে সে খুশী করে। তাকে নির্দেশ দিলে আনুগত্য করে। তুমি তার থেকে অনুপস্থিত থাকলে সে তার নিজেকে এবং তোমার সম্পদকে হেফাযত করে। [মুসনাদে আহমাদঃ ২/২৫১, ৪৩২, ৪৩৮, মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ২/১৬১]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্‌ ব্যতীত যদি অন্য কাউকে আমি সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে তার স্বামীকে সিজদা করার অনুমতি দিতাম। [তিরমিযীঃ ১১৫৯]

এক সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের কারো উপর তার স্ত্রীর কি হক আছে? রাসূল বললেনঃ তুমি খেতে পেলে তাকেও খেতে দেবে, তুমি পরিধান করলে তাকেও পরিধেয় বস্ত্র দেবে, তার চেহারায় মারবে না এবং তাকে কুৎসিৎও বানাবে না, তাকে পরিত্যাগ করলেও ঘরের মধ্যেই রাখবে। [আবু দাউদঃ ২১৪২]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তার স্ত্রীকে চাকর-বাকরদের মত না মারে, পরে সে দিনের শেষে তার সাথে আবার সহবাস করল। [বুখারীঃ ৫২০৪]

http://sistersforuminislam.com/category/articles/ideal-mother/

 

পরিবারে একজন নারী- 1