হজ্জ ও ওমরাহ সংক্রান্ত হাদীসঃ১৪

আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

জাবের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল (যুলহজ্জের) দশ দিন।’’ (বাযযার, সহীহুল জামে’ ১১৩৩)

আব্দুল্লাহ বিন ক্বুরত (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তাবারাকা অতাআলার নিকট সবচেয়ে বড় (মর্যাদাপূর্ণ) দিন হল কুরবানীর দিন, অতঃপর মিনায় অবস্থানের দিন (যুলহজ্জের ১১ তারীখ)।’’ (আবূ দাঊদ ১৭৬৬)

 

বারেক বিন শিহাব হতে বর্ণিত, ইয়াহুদীদের এক ব্যক্তি উমারের নিকট এসে বলল, ‘হে আমীরুল মুমেনীন! আপনাদের কিতাবের এক আয়াত যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, ঐ আয়াত যদি ইয়াহুদী সম্প্রদায় আমাদের উপর অবতীর্ণ হত, তাহলে (যে দিনে অবতীর্ণ হয়েছে) ঐ দিনটাকে আমরা ঈদ বলে গণ্য করতাম।’ তিনি বললেন, ‘কোন্ আয়াত?’ বলল, ‘‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীনরূপে মনোনীত করলাম’’ (এই আয়াত)। উমার (রাঃ) বললেন, ‘ঐ দিনটিকে আমরা জেনেছি এবং সেই স্থানটিকেও চিনেছি; যে স্থানে ঐ আয়াত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ হয়, যখন তিনি জুমআর দিন আরাফার ময়দানে দণ্ডায়মান ছিলেন। (বুখারী ৪৫, মুসলিম ৭৭১২)

 

 

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

‘এ দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোন আমল নেই। তাই তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পড়।’ [মুসনাদ আহমাদ : ১৩২;

ইবন রজব রহিমাহুল্লাহ বলেন, উপরোক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায়, নেক আমলের মৌসুম হিসেবে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক হল সর্বোত্তম, এ দিবসগুলোয় সম্পাদিত নেক আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। হাদীসের কোনো কোনো বর্ণনায় أَحَبُّ (‘আহাব্বু’ তথা সর্বাধিক প্রিয়) শব্দ এসেছে আবার কোনো কোনো বর্ণনায় أَفْضَلُ (‘আফযালু’ তথা সর্বোত্তম) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। অতএব এ সময়ে নেক আমল করা বছরের অন্য যে কোনো সময়ে নেক আমল করার থেকে বেশি মর্যাদা ও ফযীলতপূর্ণ। এজন্য উম্মতের অগ্রবর্তী পুণ্যবান মুসলিমগণ এ সময়গুলোতে অধিকহারে ইবাদতে মনোনিবেশ করতেন

হযরত আবু হুরায়রা রা. রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, পৃথিবীর দিন ও রাত্রির মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার নিকট তার ইবাদতের জন্য সবচেয়ে প্রিয় হল যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন, এই গুলির তুলনায় ইবাদতের জন্য প্রিয় আর কোন দিন নেই। এই দিন গুলির এক একটি রোযা এক বৎসর রোযা রাখার সমতুল্য, আর ঐ রাতগুলির এক একটির ইবাদত শবে কদরের ইবাদতের সমতুল্য। সুনানে আত তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত-১২৮ পৃ (ফাযাইলুল আওকাত লিল বাইহাকী-৩৪৬, শুআবুল ঈমান, ৩/৩৫৫)

 

রমজানের শেষ দশক অধিক ফযীলতপূর্ণ নাকি যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন বেশী ফযীলতপূর্ণ ?

জবাব: আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ. এক্ষেত্রে সুন্দর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, রমজানের শেষ দশকের রাতগুলো সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ। কারণ, তাতে লাইলাতুল কদর রয়েছে। অপর দিকে, যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের দিবস সমূহ অধিকতর ফযীলতপূর্ণ। কারণ, এদিনগুলোতে হজ্জের তালবীয়াহ এর দিন, কুরবানীর দিন রয়েছে।{ যাদুল মাআদ – ইবনে কায়্যিম রহ.। }