কুর’আন তিলাওয়াতের সাজদাহ

 তিলাওয়াতের সাজদাহ:

কুরআন মাজীদের সিজদার আয়াত তিলাঅত করলে অথবা শুনলে তকবীর দিয়ে একটি সিজদাহ করা এবং তকবীর দিয়ে মাথা তোলা মুস্তাহাব। এই সিজদার পর কোন তাশাহহুদ বা সালাম নেই। তকবীরের ব্যাপারে মুসলিম বিন য়্যাসার, আবূ কিলাবাহ্‌ ও ইবনে সীরীন কর্তৃক আষার বর্ণিত হয়েছে। (ইবনে আবী শাইবা, আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, বায়হাকী, তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ২৬৯পৃ:)

বর্ণিত আছে, আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু সিজদায় মাথা উঠাতে ও নামাতে তাকবির বলতেন। তিনি বলতেন,  “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে এরূপ করেছেন।”মুসলিম

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :

رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يكبر في كل رفع وخفض وقيام وقعود-رواه أحمدوالنسائيوالترمذي وصححه

“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রত্যেকবার মাথা উঠাতে ও নামাতে, বসতে ও দাঁড়াতে তাকবির বলতে দেখেছি।” আহমদ, নাসারী, তিরমিযী, তিরমিযী একে সহীহ বলেছেন।

এ হাদিস নামাযের সিজদা ও নামাযের বাইরে কুরআন তিলাওয়াতের সিজদা উভয়কেই শামিল করে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সর্ব ক্ষেত্রে তার বিধান ও সন্তুষ্টি মোতাবেক আমল করার তওফিক দান করুন। আমীন

(মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন)

এই সিজদাহ করার বড় ফযীলত ও মাহাত্ম রয়েছে।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “আদম সন্তান যখন সিজদার আয়াত পাঠ করে সিজদাহ করে, তখন শয়তান দূরে সরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে, ‘হায় ধ্বংস আমার! ও সিজদাহ করতে আদেশ পেয়ে সিজদাহ করে, ফলে ওর জন্য রয়েছে জান্নাত। আর আমি সিজদার আদেশ পেয়ে তা অমান্য করেছি, ফলে আমার জন্য রয়েছে জাহান্নাম।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, সহীহ ৮৯৫নং, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান)

তিলাওয়াতের সিজদা কুরআন তেলাওয়াতকারী ও শ্রোতার জন্য সুন্নত। একদা হযরত উমার (রাঃ) জুমআর দিন মিম্বরের উপরে সূরা নাহল পাঠ করলেন। সিজদার আয়াত এলে তিনি মিম্বর থেকে নেমে সিজদাহ করলেন এবং লোকেরাও তাঁর সাথে সিজদাহ করল। অতঃপর পরবর্তী জুমআতেও তিনি ঐ সূরা পাঠ করলেন। যখন সিজদার আয়াত এল, তখন তিনি বললেন, ‘হে লোক সকল! আমরা (তিলাওয়াতের সিজদাহ করতে) আদিষ্ট নই। সুতরাং যে সিজদাহ করবে, সে ঠিক করবে। আর যে করবে না, তার কোন গুনাহ হবে না।’

অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের উপর (তিলাওয়াতের) সিজদাহ ফরয করেন নি। আমরা চাইলে তা করতে পারি।’ (বুখারী ১০৭৭)

যায়দ বিন সাবেত (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাঃ)-এর কাছে সূরা নাজম পাঠ করলাম। তিনি সিজদাহ করলেন না।’ (বুখারী ১০৭৩, মুসলিম,  মিশকাত ১০২৬নং)

সিজদার সময় হলে, তাকবীর দিয়ে আল্লাহু আকবার বলে সিজদা প্রদান করবে।

পাঠ করবেঃ (سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى সুবহানা রাব্বীয়্যাল আ‘লা)

এছাড়া আরো পড়া যায়—

 (سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবি হামদিকা, আল্লাহুম্মাগ ফিরলী)

 (اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ فَصَوَّرَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ

আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু, ওয়া বিকা আমানতু ওয়া লাকা আসলামতু, সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহু, ফাছাউওয়ারাহু, ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাছারাহু ফাতাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালেক্বীন।)

(اللَّهُمَّ اكْتُبْ لِي بِهَا عِنْدَكَ أَجْرًا وَضَعْ عَنِّي بِهَا وِزْرًا وَاجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْرًا وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ

আল্লাহুম্মাক্‌তুব লী বিহা আজরা, ওয়া যা’ আন্নী বিহা ভিযরা, ওয়াজ্‌ আলহা লী ইনদাকা যুখরা, ওয়া তাক্বাব্বালহা মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতাহা মিন আ’বদিকা দাঊদ)

অর্থঃ হে আল্লাহ্‌ এর বিনিময়ে আমার জন্য প্রতিদান লিখে দাও। আমার গুনাহ্‌ মোচন কর। আমার জন্য আপনার কাছে তাকে সঞ্চিত করে রাখ। আমার নিকট থেকে তা কবূল করে নাও যেমনটি কবূল করেছো তোমার বান্দা দাঊদ (আঃ) থেকে।

তারপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবে। তাকবির দিবে।

তিলাওয়াতের সিজদার জন্য তাহারাত বা অযু আবশ্যক কি না? এ ব্যাপারে বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেনঃ পবিত্রতা আবশ্যক। কেউ বলেছেনঃ এর কোন বাধ্যবাধকতা নেই। পবিত্রতা বা কিবলামুখী হওয়াটা শর্ত বলে জানা যায়নি।

https://islamqa.info/en/4913

 

 ইবনু ওমার (রাঃ) বিনা পবিত্রতায় সিজদা করতেন। কিন্তু আমি যেটা মনে করি, তা হচ্ছে জন্য বিনা অযুতে এই সিজদা না দেয়া।(উসাইমিন র.) ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম।

মাস’আলাঃ—–

কোন বিতর্কে না যেয়ে পবিত্র ও অযু অবস্থায় কিবলামুখী হয়ে সাজদাহ করাটাই উত্তম।

একই আয়াত বার বার এক বসাতে পড়লে, প্রথমবার সাজদাহ এর আয়াত পড়ার পর সাজদাহ করে নিবে পরের পূনঃ পূনঃ পড়াতে সাজদাহ করা লাগবে না। তবে এক বসাতে অন্য আরেকটি আয়াত আসলে সেটার জন্য সাজদাহ করতে হবে।

তবে যদি একবার পড়ার পর উঠে যেয়ে অন্য কাজ করে আবার কুর’আন পড়ার জন্য বসে এবং সেই সাজদাহ তেলাওয়াত আসলে, সাজদাহ আবার দিতে হবে।

https://islamqa.info/en/171666

মোবাইল বা রেকর্ডারে তেলাওয়াত শুনার সময় যদি সাজদাহের আয়াত তেলাওয়াত শুনা হয় সেক্ষেত্রে শ্রবনকারী সাজদাহ করার প্রয়োজন নেই কারন যিনি তেলাওয়াত করছেন তাকে তো সাজদাহ করতে দেখে নাই।

https://islamqa.info/en/73402

র্বসম্মত সাজদাহ ১৪টি জায়গায় তবে ইমাম শাফেয়ী র. ১৫টি জায়গায় বলেছেন।

কুরআন মাজীদে মোট ১৪/১৫ জায়গায় সিজদাহ করা সুন্নত। তা যথাক্রমে নিম্নরুপ:-

সূরা আ’রাফ ২০৬ নং আয়াত।

সূরা রা’দ ১৫নং আয়াত।

সূরা নাহল ৫০নং আয়াত।

সূরা ইসরা’ (বানী ইসরাঈল) ১০৯নং আয়াত।

সূরা মারয়্যাম ৫৮নং আয়াত।

সূরাহাজ্জ ১৮নং আয়াত।

সূরাহাজ্জ ৭৭নং আয়াত(এটি ইমাম শাফেঈর র. মতে)

সূরা ফুরক্বান ৬০নং আয়াত।

সূরা নামল ২৬নং আয়াত।

সূরা সাজদাহ ১৫নং আয়াত।

সূরা স্বা-দ ২৪নং আয়াত।

সূরা ফুস্‌সিলাত (হা-মিম সাজদাহ) ৩৮ নং আয়াত।

সূরা নাজম ৬২নং আয়াত।

সূরা ইনশিক্বাক্ব ২১নং আয়াত।

সূরা আলাক্ব ১৯নং আয়াত।