সম্মানিত মাস মুহাররম-১

 

 

ভূমিকা

 

সমস্ত প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি আমাদের  সুন্দর একটি জীবন বিধান ইসলামকে পরিপূর্ণরুপে দিয়েছেন। আর তা দেখি আল কুর’আনের  প্রতিটি দিক নির্দেশনায়। জীবনের জন্য একটি সুস্থ্য-সুন্দর,পবিত্র ও ভারসাম্যতার চমৎকৃত  রুপরেখা। আর এই রুপরেখাকে কিভাবে কার্যকর ও বাস্তবায়ন করা যায় তা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ স. দেখিয়ে গিয়েছেন। সেই ধারা এখনও আমরা সহিহ হাদীস থেকে জেনে বাস্তবায়ন করতে পারি।

 দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

আর হে নবী! লোকদের স্মরণ করিয়ে দাও সেই সময়ের কথা, যখন তোমাদের রব বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরদের বের করেছিলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের ওপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলেছিল, নিশ্চয়ই তুমি আমাদের রব, আমরা এর সাক্ষ্য দিচ্ছি। এটা আমি এ জন্য করেছিলাম যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা না বলে বসো, আমরা তো একথা জানতাম না।   সূরা আল আরাফ:১৭২

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:

মহান আল্লাহ‌ সবাইকে একত্র করেন। (এক এক ধরনের বা এক এক যুগের) লোকদেরকে আলাদা আলাদা দলে সংগঠিত করেন। তাদেরকে মানবিক আকৃতি ও বাকশক্তি দান করেন। তারপর তাদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। তাদেরকে নিজেদের ওপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করেন: আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলে: অবশ্যই তুমি আমাদের রব। তখন আল্লাহ‌ বলেনঃ কিয়ামতের দিন যাতে তোমরা না বলতে পারো আমরা তো একথা জানতাম না, তাই আমি তোমাদের ওপর পৃথিবী ও আকাশ এবং তোমাদের পিতা আদমকে সাক্ষী করছি। ভালভাবে জেনে রাখো, আমি ছাড়া ইবাদাত লাভের যোগ্য আর কেউ নেই এবং আমি ছাড়া আর কোন রব নেই। তোমরা আমার সাথে আর কাউকে শরীক করো না। আমি তোমাদের কাছে আমার নবী পাঠাবো। আমার সাথে তোমরা যেসব অঙ্গীকার করছো তারা সেসব তোমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে। আর তোমাদের প্রতি আমার কিতাব নাযিল করবো। এ কথায় সমস্ত মানুষ বলে ওঠে:আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই আমাদের রব, তুমিই আমাদের মাবুদ, তুমি ছাড়া আমাদের আর কোন রব ও মাবুদ নেই।

মানুষের আত্মা বিনা বাধায় এবং কোন কষ্ট ছাড়াই আল্লাহর দিকে তেমনি করে রুজু হয় যেমন করে সৃষ্টি প্রকৃতিগতভাবে তাঁর নির্মাতার দিকে রুজু হয়। আল কুর’আনে এসেছে,

হে মানুষ! তুমিতো ক্রমাণ্বয়ে এক তীব্র আকর্ষনে তোমার রবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছো, পরে তাঁর সাথে সাক্ষাত করবে।  সূরা ইনশিকাক: ৬

মানুষের প্রকৃতির মধ্যে আল্লাহ প্রদত্ত সত্য সঠিক পথ বাছাই করার শক্তি নিহিত থাকা সত্বেও অনেক সময় সে পথ হারিয়ে ফেলে,কারন অনেক সময় স্বভাব প্রকৃতিতে এমন কিছু রোগ-ব্যাধি,সত্য-বিমুখতা বা এমন বক্রতা আক্রমন করে বসে যার কারনে সে  সঠিক পথ পরিহার করে,আল্লাহর দেখানো হেদায়েতের পথকে এড়িয়ে চলতে চায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আল্লাহর সাথে পুরোপুরি সম্পর্ক মুক্ত হতে পারে না।

ধর্মীয় আকীদা-বিশ্বাসের কাজই হলো যে,তা মানুষকে তার স্বভাব প্রকৃতির দিকে এগিয়ে দেয় এবং তার প্রকৃতির মধ্যে আল্লাহ সম্পর্কে যে চেতনা আছে তার দিকেই এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। আর ধর্ম-বিমুখতার কারনে তার মানব প্রকৃতির সহজাত বৃত্তিগুলি যখন অজ্ঞানতার অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যায় তখন ধর্ম এগিয়ে এসে আত্মার সহজাত বিশ্বাসকে নানা প্রকার বন্ধন থেকে মুক্ত করে তাকে আল্লাহর দিকে রুজু করে দেয়। মহান আল্লাহ বলেছেন,

 দাড়াঁয়ে যাও সেই প্রকৃতির  উপর,যার উপর আল্লাহতায়ালা  মানুষকে  সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর বানানো কাঠামো পরিবর্তন করা যেতে পারে না। এটিই পুরোপুরি সঠিক ও যথার্থ দ্বীন। সূরা রুম:৩০

মহান আল্লাহ ওয়াদা করেছেন,

আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে ও সৎকাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন, তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে মজবুত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন, যাকে আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের (বর্তমান) ভয়-ভীতির অবস্থাকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা শুধু আমার বন্দেগী করুক এবং আমার সাথে কাউকে যেন শরীক না করে। আর যারা এরপর কুফরী করবে তারাই হবে মহা অপরাধী। সূরা নূর:৫৫

পবিত্র এই মুহররম মাস মনে করিয়ে দেয় সত্যের পথে টিকে থাকার জন্য যারাই চেষ্টা চালিয়েছে মহান আল্লাহ তাদের সাহায্য করেছেন, রক্ষা করেছেন ও সফলতা দান করেছেন। আর সত্যিকার ঈমানদারেরা তখন মহান রবের কৃতজ্ঞতায় আরো বেশী ইবাদাতে মশগুল হয়ে যেতেন। মহান আল্লাহ বলেন,

আমার আয়াতের প্রতি তো তারাই ঈমান আনে যাদেরকে এ আয়াত শুনিয়ে যখন উপদেশ দেয়া হয় তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং নিজেদের রবের প্রশংসা সহকারে তার মহিমা ঘোষণা করে এবং অহংকার করে না। সূরা আস সাজদাহ:১৫

তোমাদের আগে অনেক যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে। পৃথিবীতে ঘোরাফেরা করে দেখে নাও যারা (আল্লাহর বিধান ও হিদায়াতকে) মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে।এটি মানব জাতির জন্য একটি সুস্পষ্ট সতর্কবাণী এবং যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশ। মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।  সূরা আলে ইমরান: ১৩৭-১৩৯

মহররম মাসের ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরাও সত্যের ধারক হয়ে সমাজে শান্তি আনার চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ আমাদের চেষ্টা কবুল করুন ও আমাদের অক্ষমতাকে মাফ করে দিন। আমীন।