চেতনায় জিলহজ্জ ও করনীয়ঃ ২০২২

চেতনায় জিলহজ্জ ও করনীয়ঃ ২০২২

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

চেতনা (ইংরেজি: Consciousness) মনের একটি ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য যাকে আরও অনেকগুলি মানসিক বৈশিষ্ট্যের সমষ্টি হিসেবে গণ্য করা হয়, যেমন আত্মমাত্রিকতা, আত্মচেতনা, অনুভূতিশীলতা, পৃথকীকরণ ক্ষমতা, এবং নিজের সত্তা ও আশেপাশের পরিবেশের মধ্যকার সম্পর্ক অনুধাবনের ক্ষমতা।

সুতরাং আমরা জিলহজ্জ মাস সম্পর্কে যে বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে উপলব্ধিতে এনে বাস্তবে ভূমিকা রাখতে হবে তা হলো মূলত এককভাবে মহান রবের আনুগত্য।

চেতনায় তাওহীদকে ধারন করাই এই জিলহজ্জ মাসের মূল স্পিরিট।

যিলহজ্জ মাস পবিত্র বা হারাম মাস সমূহের মাঝে একটি মাস।

আবার এই মাসটিই মূল হজ্জের মাস বলেই আরো গুরুত্ব বহন করে।

হজের মৌসুম শুরু হয় শাওয়াল মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে এবং শেষ হয় যিলহজের দশ তারিখে তথা ঈদের দিনে বা যিলহজের শেষ তারিখে। এটাই বিশুদ্ধ মত। হজ্জ্বের মাস সমূহ (শাওয়াল, জিলক্বদ ও জিলহজ্জ) কেননা আল্লাহ বলেন,

ٱلۡحَجُّ أَشۡهُرٞ مَّعۡلُومَٰتٞ

হজের মাসসমূহ সুনির্দিষ্ট জানা।” [সূরা বাকারাহ: ১৯৭]

হজ্জের কথা আসলেই যে ইতিহাস, যে আদর্শ চোখের সামনে চলে আসে সেটাই যিলহজ্জ মাসের চেতনা।

মহান আল্লাহর নবী ইবরাহীম আ খলিলুল্লাহর মর্যাদায় অভিসিক্ত হয়েছিলেন, এটা কত বড় মর্যাদা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।

এই মর্যাদা এমনি এমনি মহান আল্লাহ দেন নি। হযরত ইবরাহীম আ পুরু জীবনে প্রতিটি পরীক্ষার মানদন্ডে উত্তীর্ণ হয়েই মহান রবের কাছে এতোটাই মূল্যায়ন হয়েছিলেন।

 

اِذۡ قَالَ لَهٗ رَبُّهٗۤ اَسۡلِمۡ ۙ قَالَ اَسۡلَمۡتُ لِرَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ

স্মরণ করুন, যখন তার রব তাকে বলেছিলেন, ‘আত্মসমর্পণ করুন’, তিনি বলেছিলেন, আমি সৃষ্টিকুলের রব-এর কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। সূরা বাকারাঃ ১৩১

হযরত ইবরাহীম আ মহান আল্লাহর আহবানে আসলামতু লিরব্বিল আলামীন বলেছিলেন। কত সুন্দর উপস্থাপন যা বাস্তব জীবনেই দেখিয়েছিলেন।

আজ হজ্জের কার্যাবলী আমাদের স্মরন করিয়ে দেয় সেই ইতিহাস। আমরা সেই ইবরাহীম আ এর দু’আর ফসল শেষ নবী রাসূল মোহাম্মদ সা এর উম্মত।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি আমার সূচনা বলে দিচ্ছি, আমার পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর দোআ, ঈসা ‘আলাইহিস সালাম-এর সুসংবাদ এবং আমার মা স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, তার থেকে একটি আলো বের হল, যে আলোতে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/২৬২]

শেষনবী মুহাম্মাদ (সা) সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيراً- (الأحزاب ২১)-

‘যারা আল্লাহ ও শেষদিবসের (অর্থাৎ আখেরাতে মুক্তির) আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করে, তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের (মুহাম্মাদের) মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে’ (আহযাবঃ ২১)।

ইবরাহীম আ যেভাবে মহান আল্লাহর নির্দেশে অনুগত ছিলেন, কোনো শক্তি মহান রবের আনুগত্য থেকে একটুও বিচলিত কর্রতে পারেনি, এমনকি একটুও দ্বিধা সংকোচে প্রশ্নও উঠে আসে নি, কেনো এটা করতে হবে? পুরু পরিবারের সদস্যরা একই শিক্ষায় উজ্জীবিত ছিলেন। আমরা দেখি—

মা হাযেরার মক্কায় মরুভূমিতে একাকী শিশু সন্তান সহ রেখে আসা, মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও ভরসার অদম্য দৃষ্টান্তে বলেছিলেন এই মুমিনা রমনী—

ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম নির্দেশ পেলেন যে, স্ত্রী হাজেরা ও শিশুকে এখানে রেখে নিজে সিরিয়ায় ফিরে যান। আল্লাহর বন্ধু নির্দেশ পাওয়া মাত্রই তা পালন করতে তৎপর হলেন এবং সিরিয়ার দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন। আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক আমি চলে যাচ্ছি – স্ত্রীকে একটুকু কথা বলে যাওয়ার দেরীও তিনি সহ্য করতে পারলেন না। হাজেরা তাকে চলে যেতে দেখে বললেন, আপনি কি আল্লাহর কোন নির্দেশ পেয়েছেন? ইবারাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, ‘হ্যাঁ। আল্লাহর নির্দেশের কথা জানতে পেরে হাজেরা বললেন, যান, যে প্রভূ আপনাকে চলে যেতে বলেছেন, তিনি আমাদের ধ্বংস হতে দেবেন না। [বুখারী ৩৩৬৪]

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন–

  • যারা সত্য-সঠিক পথ অবলস্বন করে আল্লাহ তাদেরকে সঠিক পথে চলার ক্ষেত্রে উন্নতি দান করেন এবং স্থায়িত্বলাভকারী সৎকাজগুলোই তোমার রবের প্রতিদান ও পরিণামের দিক দিয়ে ভালো।                       সূরা মরিয়ম: ৭৬

এরপর বৃদ্ধ বয়সে সন্তানকে আল্লাহর কাছে থেকে চেয়ে পাওয়ার পরও মহান আল্লাহর স্বপ্নে দেখানো নির্দেশনাকে বাস্তবে রুপ দিতেও কোন প্রকার আবেগকেও প্রশ্রয় দেন নি, না শয়তানের প্রচেষ্টাকে বিফল করে দিয়েছেন।

ইরশাদ হয়েছে কুর’আনে —

হে আমার পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবাই করছি (আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য কুরবানী করছি)। তাহলে, তুমি কি মনে কর! ধৈর্যশীল ছেলেটি সাথে সাথেই জবাব দিল, ‘সে বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন। সূরা আস সাফফাতঃ ১০২

সে সবচেয়ে উত্তম জবাব দিল, এটাই ছিল তার পিতার প্রতি এবং মানব কুলের প্রভুর প্রতি বাধ্যতার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

অতঃপর যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং ইবরাহীম তার পুত্রকে উপুড় করে শায়িত করলেন, —      সূরা আস সাফফাতঃ ১০২-১০৩

এখানে বলা হয়েছে, যখন তারা উভয়ে নিজেদেরকে সমর্পণ করল -এর অর্থ হচ্ছে তারা দুজনে যখন নিজেদেরকে আল্লাহর আদেশের কাছে সমর্পণ করল।

এবং সে তাকে শুইয়ে দিল- এর অর্থ হচ্ছে তিনি, তাকে (ছেলেকে) মাটির দিকে মুখ করে রাখলেন। এখানে বলা হলো যে, তিনি তাকে পেছন থেকে যবেহ করতে চাইলেন, যেন তিনি যবেহ করার সময় তার মুখটা দেখতে না পান। এটা ছিল ইবনে আববাস রা. ও মুজাহিদ রহ. এর মত।

তারা উভয়ে নিজেদের সমর্পণ করল এর অর্থ হচ্ছে ইব্রাহীম আ. বললেন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এবং আল্লাহু আকবার আর ছেলেটি বলল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ – কেননা সে মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছিল।

আল্লাহ বললেন,

তখন আমরা তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করে দেখালে। নিশ্চয় আমি এইভাবে সৎকর্মপরায়ণদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। সূরা আস সাফফাতঃ ১০৪-১০৫

এর অর্থ হচ্ছে উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে, তোমাকে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তোমার প্রভু তোমাকে যে আদেশ করেছেন, তা পালন করার ব্যাপারে তোমার ইচ্ছা ও আনুগত্য প্রমাণিত হয়েছে। তাই আল্লাহ বলেন,

নিশ্চয় এটা ছিল স্পষ্ট পরীক্ষা; আর আমরা তাকে মুক্ত করলাম এক বড় যবেহ এর বিনিময়ে। সূরা আস সাফফাতঃ ১০৬-১০৭

অর্থাৎ এটা যে একটা পরীক্ষা ছিল তা পুরোপুরি স্পষ্ট। নিঃসন্দেহে এখানে মূল উদ্দেশ্য যবেহ ছিল না, বরং উদ্দেশ্য ছিল পিতা-পুত্রের আনুগত্য ও তাক্বওয়ার পরীক্ষা নেওয়া। সে পরীক্ষায় উভয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন পিতার পূর্ণ প্রস্ত্ততি এবং পুত্রের স্বতঃস্ফুর্ত সম্মতি ও আনুগত্যের মাধ্যমে।

যবেহযোগ্য মহান জন্তু’ একটি দুম্বা ছিল, যা আল্লাহ তাআলা জান্নাত থেকে জিবরীল মারফত পাঠিয়েছিলেন। (ইবনে কাসীর) ইসমাঈল (আঃ)-এর পরিবর্তে সেই দুম্বাটি যবেহ করা হয়েছিল এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর উক্ত সুন্নতকে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ ও ঈদুল আযহার সব থেকে পছন্দনীয় আমল বলে স্বীকৃতি দেওয়া হল। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন—

 

﴿قُلْ إِنَّنِي هَدَانِي رَبِّي إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ دِينًا قِيَمًا مِّلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۚ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾

﴿قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

﴿لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ

হে মুহাম্মাদ ! বলো, আমার রব নিশ্চিতভাবেই আমাকে সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন ৷ একদম সঠিক নির্ভুল দীন, যার মধ্যে কোন বত্রুতা নেই, ইবরাহীমের পদ্ধতি, যাকে সে একাগ্রচিত্তে একমুখী হয়ে গ্রহণ করেছিল এবং সে মুশরিকদের অন্তরভুক্ত ছিল না৷

“বল, আমার সালাত, আমার কুরবাণী, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম”।  সূরা আনআম: ১৬১-১৬৩

মহান আল্লাহ জানিয়েছেন-

আল্লাহর পথে জিহাদ করো যেমন জিহাদ করলে তার হক আদায় হয়। তিনি নিজের কাজের জন্য তোমাদেরকে বাছাই করে নিয়েছেন এবং দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা আরোপ করেননি। তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাতের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও। আল্লাহ আগেও তোমাদের নাম রেখেছিলেন মুসলিম এবং এর (কুরআন) মধ্যেও (তোমাদের নাম এটিই) যাতে রসূল তোমাদের ওপর সাক্ষী হন এবং তোমরা সাক্ষী হও লোকদের ওপর। কাজেই নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাও। তিনি তোমাদের অভিভাবক, বড়ই ভালো অভিভাবক তিনি, বড়ই ভালো সাহায্যকারী তিনি।  সূরা আল হাজ্জ: ৭৮

সুতরাং যিলহজ্জ মাসের মূল চেতনাই হলো মহান রবের দরবারে নিজেকে সর্বক্ষনের জন্যই সমর্পন করে দেয়া।

ইবাদতের মৌসুমগুলো আমরা কিভাবে গ্রহণ করব?

প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে, ইবাদতের মৌসুমগুলোতে বেশী বেশী তাওবা করা। গুনাহ ও অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা। কারণ, গুনাহ মানুষকে আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত রাখে। গুনাহ ব্যক্তির অন্তর ও আল্লাহর মাঝে বাধার সৃষ্টি করে। বান্দার আরও উচিৎ শুভদিনগুলোতে কল্যাণকর কাজ ও এমন সব আমলে নিয়োজিত থাকা, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে সহায়ক হয়। যে আল্লাহর পথে চেষ্টা মুজাহাদা করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য হেদায়াতের সব পথ খুলে দেবেন। তিনি বলেন:

وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ

“আর যারা আমাদের পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমরা অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর অবশ্যই আল্লাহ সৎকর্মশালীদেরই সাথে আছেন৷      আনকাবূত: ৬৯

তিনি অন্যত্র বলেন:

﴿ ۞وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ﴾ [ال عمران: ١٣٣]

“আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে”।  আলে-ইমরান: ১৩৩

দুনিয়া ছায়ার ন্যায়; এর কোনো স্থায়িত্ব নাই। আজ আমরা আমাদের স্বীয় কর্মস্থলে অবস্থান করছি আগামীকাল অবস্থান নাও করতে পারি। আমাকে সব সময় এ চিন্তা করতে হবে, প্রতিদান ও হিসাব-নিকাশের দিবসে, আমার গন্তব্য কোথায় হবে, জান্নাত নাকি জাহান্নাম। এ জন্য তোমাকে এ দুনিয়া থেকে আমলের পুঁজি সঞ্চয় করতে হবে। তাদের মত হয়ো না যারা নিজের জন্য যা কল্যাণ সে সম্পর্কে অমনোযোগী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ نَسُواْ ٱللَّهَ فَأَنسَىٰهُمۡ أَنفُسَهُمۡۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ١٩ ﴾ [الحشر: ١٩]

“তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল ফলে আল্লাহও তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছিলেন; আর তারাই হল ফাসিক”। সূরা হাসর: ১৯

তুমি তাদের মত হও, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

﴿إِنَّهُمۡ كَانُواْ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡخَيۡرَٰتِ وَيَدۡعُونَنَا رَغَبٗا وَرَهَبٗاۖ وَكَانُواْ لَنَا خَٰشِعِينَ ٩٠﴾ [الانبياء: ٩٠]

“তারা সৎ কাজে প্রতিযোগিতা করত। আর আমাকে আশা ও ভীতিসহ ডাকত। আর তারা ছিল আমার নিকট বিনয়ী”। সূরা আম্বিয়া: ৯০

যিলহজ্জ মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা

১।  হজের মৌসুম শুরু হয় শাওয়াল মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে এবং শেষ হয় যিলহজের দশ তারিখে তথা ঈদের দিনে বা যিলহজের শেষ তারিখে। এটাই বিশুদ্ধ মত।

হজ্জ্বের মাস সমূহ (শাওয়াল, জিলক্বদ ও জিলহজ্জ) কেননা আল্লাহ বলেন,

ٱلۡحَجُّ أَشۡهُرٞ مَّعۡلُومَٰتٞ [البقرة: ١٩٧    হজের মাসসমূহ সুনির্দিষ্ট জানা।” [সূরা বাকারাহ: ১৯৭]

২।  আল্লাহ তা‌‘আলা এর কসম করেছেন : আল্লাহ তা‌‘আলা যখন কোনো কিছুর কসম করেন তা কেবল তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদাই প্রমাণ করে। মহান সত্তা শুধু অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরই কসম করেন।

وَٱلۡفَجۡرِ ١ وَلَيَالٍ عَشۡرٖ   —–

“কসম ভোরবেলার। কসম দশ রাতের”   (সূরা ফজরঃ ১-২)

ইবনে আব্বাস রা, কাতাদা ও মুজাহিদ প্রমুখ তাফসীরবিদদের মতে এতে যিলহজের দশ দিন বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] যা সর্বোত্তম দিন বলে বিভিন্ন হাদীসে স্বীকৃত।

দশ দিনের তাফসীরে জাবের রা বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সা বলেন, “নিশ্চয় দশ হচ্ছে কোরবানীর মাসের দশদিন, বেজোড় হচ্ছে আরাফার দিন আর জোড় হচ্ছে কোরবানীর দিন।” [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৩২৭, মুস্তাদরাকে হাকিম: ৪/২২০

৩। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, এই দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট প্রিয় ও মহান কোন আমল নেই। তোমরা এই সময় তাহলীল(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর(আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ(আলহামদুলিল্লাহ) বেশী করে পাঠ কর। আহমাদ: ১৩২

৪।  আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ لِّيَشۡهَدُواْ مَنَٰفِعَ لَهُمۡ وَيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۖ ٢٨ ﴾ [الحج : ‘

যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে। সূরা হজ্জ: ২৮

এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনসমূহ বলতে কোনো দিনগুলোকে বুঝানো হয়েছে সে সম্পর্কে ইমাম বুখারি রহ. বলেন,

“ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন: ‘নির্দিষ্ট দিনসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন”।

সাহাবী ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল স. বলেছেন, যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে নেক আমল করার মত প্রিয় আল্লাহর নিকট আর কোন আমল নেই। তারা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল স. আল্লাহর পথে জিহাদ করা কি তার চেয়েও প্রিয় নয়? রাসূল স. বললেন, না আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তির কথা আলাদা যে প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হয়ে গেলো অতঃপর তার প্রাণ ও সম্পদের কিছুই ফিরে এলো না। সহিহ আল বুখারী: ২/৪৫৭

অধিকাংশ উলামাদের বর্ণনা এই নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের কথা বলা হয়েছে, কারণ সাহাবা ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা থেকে অনুরূপ জানা যায়।

আজ আমাদের সমাজে অধিকাংশ মুসলিম নর-নারী এই সুন্নাতকে অবহেলা করে যাচ্ছেন। আবার অনেকে এই সুন্নাত সম্পর্কে অবগতই নন।

রাসূল স.বলেছেন, আমার ইন্তেকালের পর যে সুন্নাতটির মৃত্যু হয়েছে তা যে জীবিত করবে সে ব্যক্তি এই সুন্নাত আমলকারীদের সওয়াবের পরিমান সওয়াব পাবে এবং তাতে আমলকারীদের সওয়াবের কোন অংশ কম হবে না।সহিহ তিরমিযী: ৭/৪৪৩

তাকবীর হলো- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহীল হামদ।

তাকবীর কখন ও কতদিন পড়তে হবে এ ব্যাপারে অনেকগুলো মত রয়েছে। সাধারণভাবে যা বুঝা যায় তা হলো যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ (আরাফার দিন ফজর থেকে) থেকে ১৩ই যিলহজ্জ পর্যন্ত যে কোন সময়ে তাকবীর পড়া যেতে পারে এবং বিশেষভাবে ফরয সালাতের পর(বিশেষ সময়ের তাকবীর) পড়া মুস্তাহাব।

অতএব রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ পালনার্থে তাহলীল, তাকবীর ও তাহমীদ সম্বলিত যৌগিক আমল ‘তাকবীরে তাশরীক’- এর গুরুত্ব অপরিসীম।

কয়েকটি বিশেষ আমলের সমন্বয়ঃ

তাকবীরে তাশরীক হলো কয়েকটি বিশেষ আমলের সমন্বিত রূপ। এতে রয়েছে ০৪ বার তাকবীর, ০১ বার তাহলীল এবং ০১ বার তাহমীদ। তাকবীরে তাশরীকের এ উপাদানগুলো ইসলামী শরীয়তে অত্যন্ত ফযিলতের।

ক) তাকবীরের ফযিলতঃ

তাকবীর হলো আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ব ও বড়ত্ব ঘোষণা করা। আল্লাহ তায়ালা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করার আদেশ প্রদান করে বলেন- আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। (সুরা মুদ্দাসসিরঃ- ০৩)

‘আল্লাহু আকবার’ আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রিয় বাক্যসমূহের মধ্যে অন্যতম। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- চারটি বাক্য আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বাধিক প্রিয়। তা হলো- সুবহান আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এবং আল্লাহু আকবার।

খ) তাহলীলের ফযিলতঃ

তাহলীল তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হলো তাওহীদের বাণী। তাহলীলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের ঘোষণা প্রচারিত হয়। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা ইসলামের শাখাসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এসেছে- ঈমানের ৭০ এর অধিক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম হলো- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা। আর সর্বনিম্ন হচ্ছে- রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। (সহীহ মুসলিমঃ ১৬২) তাওহীদের বাণী হিসাবে তাহলীল ইসলামী শরীয়তের বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

গ) তাহমীদের ফযিলত ঃ

তাহমীদ হলো আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও স্তুতি জ্ঞাপন করা। আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করলে তিনি বান্দার উপর নিয়ামতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ তায়ালা প্রশংসাজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে আলহামদুলিল্লাহ বলার অগণিত সওয়াব বর্ণিত আছে। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে- আলহামদুলিল্লাহ নেকীর পাল্লাকে পরিপূর্ণ করে। (সহীহ মুসলিমঃ ৫৫৬) অতএব তাহমীদ তথা আলহামদুলিল্লাহ বলা অত্যন্ত ফযিলতের একটি আমল।

পুরুষগণ তাকবীরে তাশরীক জোরে বলবে।

মহিলাগণ তাকবীরে তাশরীক আস্তে বলবে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাকবীরে তাশরীক যথাযথভাবে পাঠ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

তাকবীর হলো- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহীল হামদ। (অর্থ- আল্লাহ মহান..আল্লাহ মহান..আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই..আল্লাহ মহান..আল্লাহ মহান..সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।

তাকবীর দুই প্রকার:

১। সাধারণ তাকবীর: যে তাকবীর কোন সময়ের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এ তাকবীর সবসময় দেয়া সুন্নত: সকাল-সন্ধ্যায়, প্রত্যেক নামাযের আগে ও পরে, সর্বাবস্থায়।

২। বিশেষ তাকবীর: যে তাকবীর নামাযের পরের সময়ের সাথে সম্পৃক্ত।

সাধারণ তাকবীর যিলহজ্জ মাসের দশদিন ও তাশরিকের দিনগুলোর যে কোন সময়ে উচ্চারণ করা সুন্নত। এ তাকবীরের সময়কাল শুরু হয় যিলহজ্জ মাসের প্রথম থেকে (অর্থাৎ যিলক্বদ মাসের সর্বশেষ দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে) তাশরিকের সর্বশেষ দিনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত (অর্থাৎ ১৩ ই যিলহজ্জের সূর্যাস্ত যাওয়া পর্যন্ত)।

আর বিশেষ তাকবীর দেয়া শুরু হয় আরাফার দিনের ফজর থেকে তাশরিকের সর্বশেষ দিনের সূর্যাস্ত যাওয়া পর্যন্ত (এর সাথে সাধারণ তাকবীর তো থাকবেই)। ফরয নামাযের সালাম ফেরানোর পর তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়বে, এরপর ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ বলবে, এরপর তাকবীর দিবে।

তাকবীরের সময়কালের এ বিধান যিনি হাজী নন তার জন্য প্রযোজ্য। আর হাজী সাহেব কোরবানীর দিন যোহরের সময় থেকে বিশেষ তাকবীর শুরু করবেন।

মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (১৩/১৭) ও বিন উছাইমীনের ‘আল-শারহুল মুমতি’ (৫/২২০-২২৪)

৫। তাওবা, ইস্তেগফার ও যিকরঃ

তাওবা অর্থ ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তন করা। অনুশোচনার সহিত তাওবা-ইস্তেগফার করে ভালো কাজে শরীক থাকার চেষ্টা করা এবং মহান আল্লাহর যিকির বা স্মরণ প্রতিটি কাজের সাথে করা। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার একটি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

‘হে মোমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর—বিশুদ্ধ তওবা; সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সে দিন আল্লাহ লজ্জা দেবেন না নবীকে এবং তার মোমিন সঙ্গীদেরকে, তাদের জ্যোতি তাদের সম্মুখে ও দক্ষিণ পার্শ্বে ধাবিত হবে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান কর এবং আমাদেরকে ক্ষমা কর, নিশ্চয় তুমি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। সূরা তাহরীম: ৮

৬। ফরয ও নফল সালাতগুলো গুরুত্বের সাথে আদায় করা:

  • আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সঙ্গে শত্রুতা রাখে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দা ফরয ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোনো ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে না। আমার বান্দা নফল ইবাদত দ্বারাই সর্বদা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই, আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। সে আমার কাছে কোনো কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দেই। আমি যে কোনো কাজ করতে চাইলে তাতে কোনো রকম দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ হরণে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকে অথচ আমি তার প্রতি কষ্টদায়ক বস্তু দিতে অপছন্দ করি।’ বুখারি, হাদিস: ৬৫০২

 

৭। হজ্জ ও উমরাঃ

আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিস থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি হজ্ব আদায় করেন, কিন্তু কোন পাপের কথা বা কাজ করেননি সে ব্যক্তি ঐদিনের মত হয়ে ফিরে আসবে যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। সহিহ বুখারী: ১৫২১ ও সহিহ মুসলিম ১৩৫০

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন: এক উমরা আরেক উমরার মাঝের গুনাহ মোচনকারী। আর মাবরুর হজ্বের প্রতিদান হচ্ছে- জান্নাত। সহিহ বুখারী: ১৭৭৩ ও সহিহ মুসলিম: ১৩৪৯

৮।  ঈদের সালাত আদায় করাঃ

এই আমলটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই। অনেকে বলেছেন ওয়াজিব। ঈদ আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, ভালো কাজ ও শরীয়তের সীমার মাঝে আনন্দ করার দিন। ঈদের সালাতে অংশগ্রহন, খুতবা শুনা ও এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করা প্রতি মুসলিমের কর্তব্য।

আবু দাউদ সাহাবা আবু উমামা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল স.বলেছেন, আরাফার দিবস, কুরবানীর দিন ও আইয়ামে তাশরীক(কুরবানী পরবর্তী তিন দিন) আমাদের ইসলামের অনুসারীদের জন্য ঈদের দিন। আর এই দিনগুলো খাওয়া-দাওয়ার দিন।সহিহ সূনানে আবু দাউদ: ২১১৪

৯।  কুরবানী করাঃ

ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির দিন জিজ্ঞেস করলেন এটা কোনো দিন? সাহাবিগণ উত্তর দিলেন এটা ইয়াওমুন্নাহার বা কুরবানির দিন। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এটা হল ইয়াওমুল হজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন। [আবু দাউদ: ১৯৪৫, আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে কুরত রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর নিকট দিবসসমূহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল কুরবানির দিন, তারপর পরবর্তী তিনদিন।আবু দাউদ: ১৭৬৫

মহান আল্লাহ বলেছেন, আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন ও কুরবানী করুন।সূরা আল কাউসার: ০২

সাহাবী ইবনে ওমর রা. বলেছেন, রাসুলে করীম স. দশ বছর মদীনায় ছিলেন, প্রতি বছরই কুরবানী করেছেন।আহমাদ ও তিরমিযী

১০। আইয়্যামে তাশরিকঃ যিকর করা

১১। দান সদাকা বাড়িয়ে দেয়া

বিদায় হজ্জের আহবান দিয়েই শেষ করতে চাই—-

মহানবী স: হিজরী দশ সালে হজ্জ পালন করেন। এটাই ছিল তাঁর জীবনের শেষ হজ্জ। ইসলামের ইতিহাসে এটি বিদায় হজ্জ হিসাবে খ্যাত। সেইবার ৯ই জিলহজ্জ, শুক্রবার দুপুরের পর আরাফাত ময়দানে সমবেত লাখো সাহাবীর উদ্দেশ্যে মহানবী স: এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।

দুটো ভাষণই অসাধারণ গুরুত্বের অধিকারী। আন্তর্জাতিক মেনিফেস্টো হিসেবে এই দুটি ভাষণে রাসূল স. যা বর্ণনা করেছেন তা সাধারন মানবীয় চিন্তা ও কল্পনার অতীত।

১মটি – ৯ই যিলহজ্জ, আরাফাতের পাহাড়ের ওপর থেকে।

২য়টি- ১০ই যিলহজ্জ, মিনায়।

ভাষনের সর্বশেষ কথাটি আবার স্মরন করি—

হে লোকসকল! আমার পর আর কোন নবী নেই, আর তোমাদের পর আর কোন উম্মত ও নেই।

আমি তোমাদের নিকট দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা এ দুটোকে আঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা গুমরাহ হবে না। সে দুটো হল আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত।

তোমরা দ্বীনের ব্যপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকবে কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা দ্বীনের ব্যপারে এই বাড়াবাড়ির দরুন ধ্বংস হয়েছে।

এই ভূমিতে আবার শয়তানের পূজা হবে- এ বিষয়ে শয়তান নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে তোমরা তার অনুসরণে লিপ্ত হয়ে পড়বে। এতে সে সন্তুষ্ট হবে। সুতরাং তোমাদের দ্বীনের বিষয়ে শয়তান থেকে সাবধান থেকো।

শোন, তোমরা যারা উপস্থিত আছ, যারা উপস্থিত নেই তাদের কাছে আমার পয়গাম পৌঁছে দিও। অনেক সময় দেখা যায়, যার কাছে পৌঁছানো হয় সে পৌঁছানেওয়ালার তুলনায় অধিক সংরক্ষনকারী হয়।

তোমাদেরকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তখন তোমরা কি বলবে?

সমবেত সকলে সমস্বরে উত্তর দিলেন: আমরা সাক্ষ্য দেব, আপনি নিশ্চয় আপনার উপর অর্পিত আমানত আদায় করেছেন, রিসালতের দায়িত্ব যথাযথ আঞ্জাম দিয়েছেন এবং সকলকে নসীহত করেছেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশের দিকে পবিত্র শাহাদাত অংগুলী তুলে আবার নিচে মানুষের দিকে নামালেন।

হে আল্লাহ্ ! তুমি সাক্ষী থাক। হে আল্লাহ্ ! তুমি সাক্ষী থাক।

আসুন আমরা জিলহজ্জ মাসের চেতনায় উদবুদ্ধ হয়ে নিজেদের সঁপে দেই পরিপূর্ণভাবে মহান রবের দরবারে।

 

Power point Presentatipon

চেতনায় জিলহজ্জ ও করনীয়ঃ ২০২২