কদরের রাতে কি করবো কেনো করবো?

জীবনের সময় ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে। আমাদের জীবনকাল আর কতটুকু! তার মাঝে হেসে খেলে বেহুদা সময় পার করে কত সময় নষ্ট করে ফেলছি তাই না! গত রমাদানে অনেকেই ছিলেন যারা এই রমাদানে নেই। এইভাবে একসময় সেই নাই এর তালিকায় আপনার আমার যে কারোর নাম চলে আসবে। তাই এই রমাদানেই মহান রবের কাছ থেকে পুরু প্রাপ্তি নেয়ার জন্য সচেতন হই। সারা বছরইতো নিজেদের দুনিয়ার আরাম আয়েশ ভোগ বিলাস আনন্দ পাওয়ার পিছনে ছুটে চলেছি। হোক না এই মাসের শেষ দশদিন একান্তই নিজের সাথে মহান রবের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য মুক্ত করে নেয়া। মহান প্রতিপালক সব দিলেন আর ৩৬৫ দিনের মাত্র দশটি রাতকে আমরা কি ইবাদাতের জন্য মুক্ত করে নিতে পারি না?
আর এই রাতগুলোর মাঝে কদর রাতকে পেয়ে গেলে আপনি আমি কি পাচ্ছি তা কি জানেন?
১। এই রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।
আল্লাহ বলেন:
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
“শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।”(সূরা কাদর: ৩)
২। এই রাত বরকতপূর্ণ রাত।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ
“নিশ্চয় আমি ইহা (কুরআন)কে অবর্তীণ করেছি একটি বরকতময় রাতে।”(সূরা দুখান: ৩) (আর এ রাত হল শবে কদর।)
৩। এই রাত সম্মানিত কারন কুর’আন নাযিল হয়েছে।
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
“আমি একে (কুরআন) অবর্তীণ করেছি শবে কদরে।”(সূরা কাদর: ১)
৪। এই রাতে জিবরাইল আ. সহ ফেরেশতারা দুনিয়াতে অবতীর্ণ হন
৫। এই রাতে ভাগ্য নীতিমালা ফেরেশতাদের কাছে অর্পন করা হয়।
৬। এই রাত পুরুপুরি শান্তি ও নিরাপদ
আল্লাহ বলেন- ‘ফেরেশতারা ও রূহ (জিব্রাইল আ:) এ রাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হয়, সে রাত পুরাপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার-ফজর উদয় হওয়া পর্যন্তু।’ (সূরা আল-কদর : ৪-৫)
৭। এই রাত পূর্বের সকল সগিরা গোনাহ মাফ পাওয়ার সুযোগ
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় শবে কদরে রাত জাগরণ করে নফল নামায ও ইবাদত বন্দেগী করবে তার পূর্বের সকল (ছোট) গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে।” সহীহ বুখারী
ইবাদত হচ্ছে, প্রত্যেক এমন আন্তরিক ও বাহ্যিক কথা ও কাজ যা, আল্লাহ পছন্দ করেন এবং তাতে সন্তুষ্ট থাকেন। [মাজমুউ ফাতাওয়া,১০/১৪৯]
রাসূল সা: বলেন- ‘যে ব্যক্তি এ রাত থেকে বঞ্চিত হবে সে সমগ্র কল্যাণ ও বরকত হতে বঞ্চিত হবে। এর কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক আর কেউ বঞ্চিত হয় না।’ (মিশকাত)
শবে কদর (আরবি: لیلة القدر‎‎) আরবিতে লাইলাতুল কদর। এর অর্থ অতিশয় মহিমান্বিত ও সম্মানিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুন’ অর্থ হলো রাত্রি এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো—ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। এ রাতে মুসলমানদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়। তাই এই রাত অত্যন্ত পুণ্যময় ও মহাসম্মানিত হিসেবে পরিচিত।
কদর সম্পর্কে আরো জানার জন্য নীচের লেকচারগুলো শুনার আহবান রইলো।

তাহলে এবার আপনিই ভেবে দেখুন এই রাতটিকে পাওয়ার জন্য কি করা প্রয়োজন!
. ফরয সালাত যত্নের সাথে দির্ঘায়িত করে পড়া
.ওয়াক্তের সুন্নাত সালাত সুন্দর করে আদায় করা
• নফল নামাজ পড়া (কিয়ামুল লাইল ও তাহাজ্জুদ সালাত আদায়)
• কোরআন তিলাওয়াত
• যিকির: তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ইত্যাদি।
• বেশী করে তওবা ও ইসতিগফার
• দু’আ করা ( অন্তর দিয়ে চোখের পানি ফেলে)
. বেশী বেশী দান করা
হায়েজ/নিফাস অবস্থায় একজন নারী নামাজ ছাড়া বাকী সবই করতে পারেন। প্রসঙ্গত জানা থাকা প্রয়োজন যে তাওবাহ শুধুমাত্র আস্তাগফিরুল্লাহ বললেই হয়ে যায় না।
সত্যিকার তাওবাহ করার শর্তসমূহ:
১। ইখলাসের (একনিষ্ঠতা) সাথে তাওবাহ করা।
২। কৃত গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
৩। গুনাহের কাজ চিরতরে ত্যাগ করা।
৪। সেই গুনাহের কাজে আবার ফিরে না যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা।
৫। সময় শেষ হওয়ার আগে তাওবাহ করা (মৃত্যুকালে রূহ কবযের আগে, সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবার আগে)।
৬। কারো হক থাকলে তা ফিরিয়ে দেয়া ও ক্ষমা চাওয়া।
রাসূল সা. বলেছেন: কোন মুমিন যখন কোন গুনাহের কাজ করে, তখন তার ক্বলবের উপর একটি কালো দাগ বসে যায়। তারপর সে যদি তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে তার ক্বলবটি পরিষ্কার হয়ে যায়।
আর যদি গুনাহ করা অব্যাহত রাখে তবে ক্রমশঃ দাগটি বাড়তে বাড়তে তার সমস্ত ক্বলব আচ্ছন্ন করে ফেলে। আল জামে আত তিরমিযী
রাসূল সা. আরো বলেছেন: হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো। কেননা নিশ্চয়ই আমি দিনে একশ’বার আল্লাহর কাছে তাওবা করি। সহীহ মুসলিম
মহান আল্লাহ তা’লা বলেছেন:
হে নবী! বলুন, হে আমার বান্দাহগণ, যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমুদয় গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু। অতএব তোমরা তোমাদের মালিকের দিকে ফিরে এসো এবং তাঁর কাছেই আত্মসমর্পন করো, তোমাদের উপর আল্লাহর আযাব আসার আগেই, অতঃপর তোমাদের আর কোন রকম সাহায্য করা হবে না। সূরা আয যুমার: ৫৩-৫৪
আল্লাহ আমাদের অন্তরের চাওয়া পাওয়া দেখেন, জানেন, বুঝেন। তিনি একমাত্র অন্তর্যামী। যিনি আমাদের সব দিতে পারেন। তাঁর ক্ষমা, দয়া, করুণা, রহমত, বরকত দিয়েই আমরা শান্তি, সুস্থতা, বিপদ থেকে উদ্ধার, রিযিকে বরকতলাভ করে থাকি।
হেদায়ায়েতের আলো এবং মৃত্যু পর্যন্ত সীরাতুল মুস্তাকীমের পথে কায়েম রাখা তিনিই করে দিতে পারেন।
একমাত্র মহান রাহীম ও রাহমানই আমাদের জান্নাতের উত্তরাধীকার বানিয়ে দিতে পারেন।
মহান আল্লাহর কাছে তাই আমরা মন খুলে চোখের পানি ফেলে চলুন না আবার তওবা করে মুমিন হওয়ার অংগীকার করি যেন সব গুনাহ থেকে নিজেদের পবিত্র করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি এবং হাজার মাসের সওয়াব নিজেদের আমলনামায় যোগ করে নিতে পারি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন।
https://www.youtube.com/watch?v=q5OWNQNx9Jo
https://www.youtube.com/watch?v=hscbIqNzMPA
https://www.youtube.com/watch?v=cy-w2jcfws0
https://www.youtube.com/watch?v=W0xIJNVOx6Y
https://www.youtube.com/watch?v=rp2GV1ZCfuw