১৪। জাহান্নাম-২য় পর্ব

      বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

 

power point presentation

১৪।মৃত ব‍্যক্তি ও আমরা-১৪তম পর্ব জাহান্নাম-২

 

আবু হুরায়রা  (রা.)  বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জাহান্নামকে মনের প্রবৃত্তি ও কামনা-বাসনা দ্বারা ঢেকে রাখা হয়েছে। আর জান্নাতকে ঢেকে রাখা হয়েছে নিয়ম-নীতি ও বিপদ-মুছীবত দ্বারা (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৩৩)।

আবু সাঈদ খুদরী  (রা.)  বলেন, নবী করীম(সা.) বলেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন ডাক দিয়ে বলবেন, হে আদম! তখন আদম (আঃ) বলবেন, হে আমার প্রতিপালক আমি আপনার দরবারে উপস্থিত হয়েছি। তখন উঁচু কণ্ঠে চিৎকার করে বলা হবে ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ আপনাকে আদেশ করেন যে, আপনি আপনার সন্তানদের মধ্য হ’তে জাহান্নামীদের বের করে দিন। আদম (আঃ) বলবেন, হে আমার প্রতিপালক কতজন জাহান্নামী? আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, প্রতি হাজারে ৯৯৯ জন। ঐ সময় গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভ খসে পড়বে, বাচ্চারা বৃদ্ধ হয়ে যাবে এবং আপনি মানুষকে নেশাগ্রস্ত মনে করবেন অথচ তারা নেশাগ্রস্ত হবে না। কিন্তু আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তি দেখে এরূপ অবস্থা হবে। এ বক্তব্য মানুষের নিকট খুব কঠিন ও জটিল হল, এমনকি তাদের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। তখন নবী করীম(সা.) বললেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন তো ইয়াজুজ-মাজূজ থেকে নেয়া হবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে একজন। তারপর বললেন, তোমরা মানুষের মধ্যে সংখ্যায় এত কম হবে সাদা বলদের গায়ে একটি কাল লোম যেমন, অথবা বলেছেন, কাল বলদের গায়ে একটি সাদা লোম যেমন। আর অবশ্যই আমি আশা রাখি তোমরা জান্নাতীদের চার ভাগের এক ভাগ হবে। তখন আমরা আল্লাহু আকবার বললাম। তিনি আবার বললেন, জান্নাতবাসীদের তিনভাগের এক ভাগ তোমরা, আমরা বললাম, আল্লাহু আকবার। তিনি আবার বললেন, জান্নাতবাসীদের অধিক তোমরাই হবে। তখন আমরা বললাম, আল্লাহু আকবার (বুখারী হা/৪৭৪১)। আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৩৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩৮২)

জাহান্নামঃ

এ শব্দটি আল-কুরআনের ৭৭ জায়গায় এসেছে। এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেছেন,

فَادْخُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۖ فَلَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِينَ

সুতরাং তোমরা জাহান্নামের দরজাগুলিতে প্রবেশ কর সেথায় চিরস্থায়ী থাকার জন্য। দেখ অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট। (নাহলঃ ২৯)

মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ لَهَا سَبۡعَةُ أَبۡوَٰبٖ لِّكُلِّ بَابٖ مِّنۡهُمۡ جُزۡءٞ مَّقۡسُومٌ ٤٤ ﴾ [الحجر: ٤٤]

‘জাহান্নামের সাতটি দরজা (স্তর) আছে। প্রত্যেকটি দরজার জন্য ভিন্ন ভিন্ন দল নির্ধারিত হয়েছে। (সূরা আল-হিজর: ৪৪)

হাবিয়া।

জাহীম।

সাকার।

লাযা।

সাঈর।

হুতামাহ্ ।

জাহান্নাম।

বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীরা শাস্তি ভোগ করবে.আবার প্রত্যেকটি স্তরের অনেকগুলো ঘাঁটি আছে। যথা:

গাছ্ছাক: একটি হ্রদ। যা জাহান্নামীগণের রক্ত, ঘাম ও পুঁজ ইত্যাদি প্রবাহিত হয়ে সেখানে জমা হবে।

গিছলিন: এটা হচ্ছে জাহান্নামীদের মল-মুত্র জমা হওয়ার স্থান। জাহান্নামীরা যখন খুব ক্ষুধা-তৃষ্ণা অনুভব করবে তখন উপরোক্ত দু’জায়গা হতে পানাহার করতে দেয়া হবে।

‘তীনাতুল খাবাল নামক বিষ ও পুঁজে পরিপূর্ণ আরেকটি কুপের কথাও হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাউদ:  এটা তীনাতুল খবলের পাড়ে অবস্থিত একটি বিশাল পাহাড়।এক শ্রেণীর জাহান্নামীদেরকে ঐ পাহাড়ের উপর উঠায়ে সজোরে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলা হবে, পূণরায় উঠানো হবে এবং ফেলা হবে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে।

سَأُرۡهِقُهُۥ صَعُودًا ١٧ ﴾ [المدثر: ١٧] ‘‘সহসা-ই আমি তাকে সাউদ নামক পর্বতে চড়াবো। (সূরা মুদ্দাসসির: ১৭)

যুববুল হযন: এটা জাহান্নামীদের আরেকটি ঘাঁট। এখানে রিয়াকার ও অহংকারী লোকদেরকে শাস্তি দেয়া হবে।

গাই: এটা জাহান্নামের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর জায়গা। কেননা ‘গাই’য়ের ভীতিজনক হুংকার শ্রবণে জাহান্নামের অন্যান্য স্থান প্রতিদিন ‘গাই’ হতে চারশত বার আশ্রয় প্রার্থনা করে।

লাযাঃ

‘লাযা’ মানে লেলিহান আগুন। মহান আল্লাহ বলেন,

كَلَّا ۖ إِنَّهَا لَظَىٰ  نَزَّاعَةً لِّلشَّوَىٰ  تَدْعُو مَنْ أَدْبَرَ وَتَوَلَّىٰ  وَجَمَعَ فَأَوْعَىٰ

না, কখনই নয়! এটা তো লেলিহান অগ্নি। যা দেহ হতে চামড়া খসিয়ে দেবে। জাহান্নাম ঐ ব্যক্তিকে ডাকবে, যে পৃষ্ঠ-প্রদর্শন করেছিল ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। সে সম্পদ পুঞ্জীভূত এবং সংরক্ষিত করে রেখেছিল। (সূরা মাআরিজঃ ১৫-১৮)

হুত্বামাহঃ

‘হুত্বামাহ’ মানে প্রজ্বলিত আগুন। মহান আল্লাহ বলেন,

كَلَّا ۖ لَيُنبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ  وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ  نَارُ اللَّهِ الْمُوقَدَةُ  الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ (إِنَّهَا عَلَيْهِم مُّؤْصَدَةٌ  فِي عَمَدٍ مُّمَدَّدَةٍ

কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুত্বামায়। কিসে তোমাকে জানাল, হুত্বামা কি? তা হল আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি। যা হৃদয়কে গ্রাস। করবে। নিশ্চয়ই তা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে। দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে। (হুমাযাহঃ ৪-৯)

সাঈরঃ

‘সাঈর’ মানেও প্রজ্বলিত আগুন। এ নামটিও বহু জায়গায় এসেছে। তার মধ্যে এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেছেন,

إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا ۚ إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ

শয়তান তোমাদের শত্রু; সুতরাং তাকে শত্রু হিসাবেই গ্রহণ কর। সে তো তার দলবলকে এ জন্য আহবান করে যে, ওরা যেন (সাঈর) জাহান্নামবাসী হয়। (ফাত্বিরঃ ৬)

সাক্কারঃ

‘সাক্বার’ মানে ঝলসিয়ে দেওয়া, গলিয়ে দেওয়া। মহান আল্লাহ বলেছেন,

إِنَّ الْمُجْرِمِينَ فِي ضَلَالٍ وَسُعُرٍ

يَوْمَ يُسْحَبُونَ فِي النَّارِ عَلَىٰ وُجُوهِهِمْ ذُوقُوا مَسَّ سَقَرَ

প্রকৃতপক্ষে এ পাপীরা ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত আছে৷ এদের বিবেক বুদ্ধি লোপ পেয়েছে৷

যেদিন তাদেরকে উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে; (সেদিন বলা হবে) সাক্কার (জাহান্নামের) যন্ত্রণা আস্বাদন কর। (কামারঃ ৪৮)।

سَأُصْلِيهِ سَقَرَ )وَمَا أَدْرَاكَ مَا سَقَرُ() لَا تُبْقِي وَلَا تَذَرُ ) لَوَّاحَةٌ لِّلْبَشَرِ () عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ

আমি তাকে নিক্ষেপ করব সাক্কার (জাহান্নামে)। কিসে তোমাকে জানাল, সাক্বার কী? ওটা তাদেরকে (জীবিত অবস্থায় রাখবে না, আর (মৃত অবস্থায়ও) ছেড়ে দেবে না। ওটা দেহের চামড়া দগ্ধ করে দেবে। ওর তত্ত্বাবধানে রয়েছে উনিশ জন প্রহরী। (মুদ্দাসসিরঃ ২৬-৩০)।

فِي جَنَّاتٍ يَتَسَاءَلُونَ (40) عَنِ الْمُجْرِمِينَ (41) مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ (42) قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ (43) وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ (44) وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ الْخَائِضِينَ (45) وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّينِ (46) حَتَّىٰ أَتَانَا الْيَقِينُ (47) فَمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ (48

তারা থাকবে জান্নাতে এবং তারা জিজ্ঞাসাবাদ করবে— অপরাধীদের সম্পর্কে, তোমাদেরকে কিসে সাক্কার (জাহান্নাম)এ নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা নামাযীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। আমরা অভাবগ্রস্তদেরকে অন্নদান করতাম না এবং আমরা সমালোচনাকারীদের সাথে সমালোচনায় নিমগ্ন থাকতাম। আমরা কর্মফল দিবসকে মিথ্যা মনে করতাম। পরিশেষে আমাদের নিকট মৃত্যু আগমন করল। ফলে সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোন কাজে আসবে না। মুদ্দাসসিরঃ ৪০-৪৮)

জাহীমঃ

‘জাহীম’ মানে কঠিন অগ্নিদাহ। এ নামটিও বহু জায়গায় এসেছে। তার মধ্যে দুই জায়গায় মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ

আর যারা অবিশ্বাস করে এবং আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করে, তারাই (জাহীম) জাহান্নামের অধিবাসী। (মায়েদাহঃ ৮৬)

وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ الْمِسْكِينِخُذُوهُ فَغُلُّوهُ ثُمَّ الْجَحِيمَ صَلُّوهُ ثُمَّ فِي سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُونَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوهُ إِنَّهُ كَانَ لَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ هَاهُنَا حَمِيمٌ وَلَا طَعَامٌ إِلَّا مِنْ غِسْلِينٍ لَّا يَأْكُلُهُ إِلَّا الْخَاطِئُونَ

(আদেশ দেয়া হবে) পাকড়াও করো ওকে আর ওর গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও৷ তারপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করো। এবং সত্তর হাত লম্বা শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলো৷ সে মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করতো না। এবং দুস্থ মানুষের খাদ্য দিতে উৎসাহিত করতো না। তাই আজকে এখানে তার সমব্যথী কোন বন্ধু নেই৷ আর কোন খাদ্যও নেই ক্ষত নিসৃত পূঁজ-রক্ত ছাড়া৷ যা পাপীরা ছাড়া আর কেউ খাবে না৷সুরা হাক্কাহঃ৩০-৩৭

হাবিয়াহঃ ‘হাবিয়াহ’ মানে গভীর গর্ত, পাতাল। মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ  وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ  نَارٌ حَامِيَةٌ

কিন্তু যার পাল্লা হাল্কা হবে, তার স্থান হবে হাবিয়াহ। কিসে তোমাকে জানাল, তা কি? তা অতি উত্তপ্ত অগ্নি। (কারিআহঃ ৮-১১)

অনেকে ‘অইল’ বা ‘ওয়াইল’কেও জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম গণ্য করেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন

فَوَيْلٌ يَوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِينَ  (অইল) দুর্ভোগ সেদিন মিথ্যাশ্রয়ীদের। (তুরঃ ১১)

وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِينَ  (অইল) ধংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। (মুত্বাফফিফীনঃ ১)

‘গাই’ জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম। মহান আল্লাহ বলেছেন,

فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ ۖ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا

অর্থাৎ, তাদের পর এল অপদার্থ পরবর্তিগণ, তারা নামায নষ্ট করল ও প্রবৃত্তিপরায়ণ হল; সুতরাং তারা অচিরেই অমঙ্গল প্রত্যক্ষ করবে। (মরিয়ামঃ ৫৯)

প্রকাশ থাকে যে, গাই’ অর্থ ধ্বংস, অমঙ্গল, অশুভ পরিণামও করা হয়েছে। যেমন অইল’-এর অর্থ দুর্ভোগ বা ধ্বংস করা হয়ে থাকে।

জাহান্নামের দরজা সমূহ

জাহান্নামের দরজা মোট সাতটি যা আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন, ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সকলেরই প্রতিশ্রুত স্থান, উহার সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণী আছে’ {সূরা হিজির: ৪৩-৪৪}।

অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে কাছীর (রহ.) তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেন, জাহান্নামের প্রত্যেক দরজায় শয়তান ইবলীসের অনুসারীদের কিছু অংশের প্রবেশের কথা লিখা আছে, তারা সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, পালানোর কোন পথ থাকবে না। তাফসীর ইবনে কাছীর, দারুল আন্দালুস ছাপা, বৈরূত, ৪/১৬৪।

প্রত্যেক জাহান্নামী তাদের আমল অনুযায়ী জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং তার নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে। আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘জাহান্নামের সাতটি দরজা আছে যা পর্যায়ক্রমে একটি অপরটির উপর অবস্থিত, সর্বপ্রথম প্রথমটি, অতঃপর দ্বিতীয়টি, অতঃপর তৃতীয়টি পূর্ণ হবে, অনরূপভাবে সবগুলো দরজাই পূর্ণ হবে’।তাফসীর ইবনে কাছীর, দারুল আন্দালুস ছাপা, বৈরূত, ৪/১৬৪।

এখানে দরজা বলতে স্তরকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, জাহান্নামের সাতটি স্তর রয়েছে যা একটি অপরটির উপর অবস্থিত এবং তা পর্যায়ক্রমে পূর্ণ হবে।

যখন কাফিরদেরকে জাহান্নামের নিকটে নিয়ে আসা হবে তখন তার দরজা সমূহ খুলে দেয়া হবে, অতঃপর তারা চিরস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য সেখানে প্রবেশ করবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘কাফিরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, যখন তারা জাহান্নামের নিকটে উপস্থিত হবে তখন ইহার প্রবেশদ্বারগুলি খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের নিকটে কি তোমাদের মধ্য হতে রাসূল আসেনি যারা তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের আয়াত তেলাওয়াত করত এবং এই দিনের সাক্ষাত সম্বন্ধে তোমাদেরকে সতর্ক করত? তখন তারা বলবে অবশ্যই এসেছিল। বস্তুত কাফিরদের প্রতি শাস্তির কথা আজ বাস্তবায়িত হয়েছে’ সূরা যুমার: ৭১।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে লক্ষ করে বলবেন, ‘জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য। কত নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাসস্থল।’ সূরা যুমার: ৭২।

জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপের পর তার দরজাসমূহ এমনভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে যা হতে বের হওয়ার কোন অবকাশ থাকবে না।

অবশ্য কিয়ামতের পূর্বে সে দরজাসমূহ খোলা ও বন্ধ করা হয়। যেমন নবী (ﷺ) বলেছেন, “মাহে রমযানের আগমন ঘটলে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়।” (বুখারী ও মুসলিম)

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর যারা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছে, তারাই হতভাগ্য। তারা পরিবেষ্টিত হবে অবরুদ্ধ অগ্নিতে’ সূরা বালাদ: ১৯-২০।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে, যে অর্থ জমায় ও তা বার বার গননা করে, সে ধারণা করে যে, তার অর্থ তাকে অমর করে রাখবে, কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়, তুমি কি জান হুতামা কি? ইহা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত হুতাশন, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে, নিশ্চয়ই ইহা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে’ {সূরা হুমাযাহ্: ১-৯}।

জাহান্নাম কাকে আহবান করবে?

এরশাদ হচ্ছে:

﴿تَدۡعُواْ مَنۡ أَدۡبَرَ وَتَوَلَّىٰ ١٧ وَجَمَعَ فَأَوۡعَىٰٓ ١٨ ﴾ [المعارج: ١٧، ١٨]

জাহান্নাম সেই ব্যক্তিকে আহবান করবে, যে সত্য ও সুন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো এবং তা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলো। আর যে ধন-সম্পদ (আল্লাহর পথে ব্যয় না করে) জমা করতো এবং তা আকঁড়ে ধরে থাকতো।’’ (সূরা মা‘আরিজ: ১৭-১৮)।

তাফসীরে ইবনে কাসীরে এ আয়াতের ব্যাখায় বলা হয়েছে: বন্য প্রাণী যেমনিভাবে তার খাদ্য অনুসন্ধান করে নেয় ঠিক তেমনিভাবে জাহান্নাম হাশরের ময়দান থেকে দুষ্ট লোকদেরকে এক এক করে খুঁজে নেবে।

অন্য হাদীসে আছে- সেদিন জাহান্নামের সত্তর হাজার লাগাম থাকবে এবং প্রতিটি লাগাম ৭০ হাজার করে ফেরেশতা ধরে রাখবে। (মুসলিমঃ ২৮৪২)

 জাহান্নামের পানীয় :

জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুনের তীব্রতায় তার অধিবাসীদের পিপাসায় বুক ফেটে যাবার উপক্রম হবে। তৃষ্ণার্ত পাপীরা পানির জন্য হাহাকার করবে। বুকফাটা আর্তনাদ করবে একফোঁটা পানির জন্য। সেদিন তাদের গগণবিদারী চিৎকার শুনার কেউ থাকবে না। এমন কঠিন মুহূর্তে তাদেরকে দেওয়া হবে রক্ত, পূঁজ মিশ্রিত, দুর্গন্ধযুক্ত উত্তপ্ত পানি। প্রচন্ড পিপাসায় তারা উক্ত পানীয় পান করবে। কিন্তু তা তাদের তৃষ্ণা মেটাবে না। বরং আযাবের আরেক অধ্যায়ের সূচনা হবে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে জাহান্নামীদের প্রদত্ত পাঁচ প্রকার পানীয়ের বিবরণ পাওয়া যায়। ড.ওমর ইবনু সুলায়মান আল-আশকার, আল-জান্নাতু ওয়ান্নার, ১৬৯ পৃঃ।পানীয়গুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হ’ল।

১. حَمِيْمٌ مَاءٌ (উত্তপ্ত পানি) :

কাফেরদেরকে জাহান্নামে ফুটন্ত পানীয় পান করতে দেওয়া হবে। এতে তার নাড়ি-ভুঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে। তাদেরকে যখন খাদ্য হিসাবে যাক্কূম গাছের তিক্ত কাঁটাযুক্ত ফল দেওয়া হবে, তখন তা গলায় বিঁধে গেলে তারা পানি চাইবে। তখন তাদেরকে গরম পানি দেয়া হবে এবং তারা তা তৃষ্ণার্ত উটের ন্যায় পান করতে থাকবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী

,ثُمَّ إِنَّكُمْ أَيُّهَا الضَّالُّوْنَ الْمُكَذِّبُوْنَ، لَآكِلُوْنَ مِنْ شَجَرٍ مِّنْ زَقُّوْمٍ، فَمَالِئُوْنَ مِنْهَا الْبُطُوْنَ، فَشَارِبُوْنَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيْمِ، فَشَارِبُوْنَ شُرْبَ الْهِيْمِ، هَذَا نُزُلُهُمْ يَوْمَ الدِّيْنِ.

‘অতঃপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যাবাদীরা! তোমরা অবশ্যই যাক্কূম বৃক্ষ হ’তে আহার করবে এবং তা দিয়ে তোমাদের পেট পূর্ণ করবে। তারপর তোমরা পান করবে টগবগে ফুটন্ত পানি। তা পান করবে তৃষ্ণার্ত উষ্ট্রের ন্যায়। ক্বিয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৫১-৫৬)।

এ মর্মে তিনি আরো বলেন,

فَإِنَّهُمْ لَآكِلُوْنَ مِنْهَا فَمَالِئُوْنَ مِنْهَا الْبُطُوْنَ، ثُمَّ إِنَّ لَهُمْ عَلَيْهَا لَشَوْبًا مِّنْ حَمِيْمٍ.

‘তা থেকে তারা অবশ্যই আহার করবে এবং তাদের পেট পূর্ণ করবে। অতঃপর তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ’ (ছাফফাত ৩৭/৬৬-৬৭)।

জাহান্নাম অস্বীকারকারীদের শাস্তির বিবরণ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

هَذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِيْ يُكَذِّبُ بِهَا الْمُجْرِمُوْنَ، يَطُوْفُوْنَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيْمٍ آنٍ.

‘এটা সেই জাহান্নাম, যাকে অপরাধীরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করত। তারা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে’ (আর-রহমান ৫৫/৪৩-৪৪)। পৃথিবীর মানুষদের নিকটে আল্লাহ তা‘আলা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন

,كَمَنْ هُوَ خَالِدٌ فِي النَّارِ وَسُقُوْا مَاءً حَمِيْمًا فَقَطَّعَ أَمْعَاءَهُمْ ‘(মুত্তাক্বীরা কি তাদের মত) যারা জাহান্নামের স্থায়ী বাসিন্দা হবে এবং যাদের পান করতে দেওয়া হবে উত্তপ্ত পানি, যা তাদের নাড়ি-ভুঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলবে?’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৫)।

২. غَسَّاقٌ مَاءٌ (দুর্গন্ধযুক্ত পানি) :

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, এটি জাহান্নামীদের গলিত রস বিশেষ। আল-জান্নাতু ওয়ান্নার, পৃঃ ১৬৮

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘সুতরাং তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পুঁজ’ (ছোয়াদ:৫৭)।

আভিধানিকরা এর কয়েকটি অর্থ বর্ণনা করেছেন৷ এর একটি অর্থ হচ্ছে , শরীর থেকে বের হয়ে আসা রক্ত , পুঁজ ইত্যাদি জাতীয় নোংরা তরল পদার্থ এবং চোখের পানিও এ অন্তরভুক্ত ৷ দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে , অত্যন্ত ও চরম ঠাণ্ডা জিনিস ৷ তৃতীয় অর্থ হচ্ছে , চরম দুর্গন্দযুক্ত পচা জিনিস৷ কিন্তু প্রথম অর্থেই এ শব্দাটির সাধারণ ব্যবহার হয় , যদিও বাকি দু’টি অর্থও আভিধানিক দিক দিয়ে নির্ভুল ৷

৩. وَغِسْلِيْنٌ مَاءٌ صَدِيْدٌ (ক্ষতস্থান হ’তে নির্গত পুঁজ ও রক্ত):

জাহান্নামীদের শরীরের পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত মাংসকে বা ফোঁড়া থেকে নির্গত পুঁজ ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিকে غِسْلِيْن বলা হয়। আল-জান্নাতু ওয়ান্নার, পৃঃ ১৬৮।

আর صَدِيد বলা হয় ফোঁড়া বা ক্ষতস্থান থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত দূষিত রস বা পুঁজকে।ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, আল-মু‘জামুল ওয়াফী,

উপরোক্ত দুর্গন্ধযুক্ত অপবিত্র পানি, পুঁজ হবে জাহান্নামীদের পানীয়। যা তারা অতি কষ্টে গলাধঃকরণ করবে। মহান আল্লাহ বলেন,

مِنْ وَّرَائِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَى مِنْ مَاءٍ صَدِيْدٍ، يَتَجَرَّعُهُ وَلاَ يَكَادُ يُسِيْغُهُ وَيَأْتِيْهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ وَمِنْ وَّرَائِهِ عَذَابٌ غَلِيْظٌ.

‘তাদের প্রত্যেকের পরিণাম জাহান্নাম এবং সকলকে পান করানো হবে অপবিত্র দুর্গন্ধযুক্ত গলিত পুঁজ। যা সে অতি কষ্টে গলাধঃকরণ করবে, আর তা তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। তার নিকটে মৃত্যুযন্ত্রণা আসবে চতুর্দিক থেকে। কিন্তু তার মৃত্যু হবে না এবং এরপর সে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে থাকবে’ (ইবরাহীম ১৪/১৬-১৭)। অন্যত্র তিনি বলেন,

فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ هَاهُنَا حَمِيْمٌ، وَلاَ طَعَامٌ إِلاَّ مِنْ غِسْلِيْنٍ، لاَ يَأْكُلُهُ إِلاَّ الْخَاطِئُوْنَ.

‘অতএব সেখানে সেদিন তার কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না এবং কোন খাদ্য থাকবে না রক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ ব্যতীত। যা শুধুমাত্র অপরাধীরাই ভক্ষণ করবে’ (হা-ক্কাহ ৬৯/৩৫-৩৭)।

 

৪. الْمُهْلِ  مَاءُ (তৈলাক্ত গরম পানি) :

উত্তপ্ত তৈলাক্ত পানীয়কে الْمُهْلِ مَاءُ বলে। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, الْمُهْلُ হ’ল উত্তপ্ত তেলের সর্বশেষ অংশ। তাফসীরে ত্বাবারী ২২/৪৬ পৃঃ

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, কদর্যপূর্ণ গরম তৈলাক্ত পানীয়কে الْمُهْلُ বলা হয়। তাফসীরে কুরতুবী তাফসীরে ইবনু কাছীর ৫/১৫৪ পৃঃ।

যাহহাক (রহঃ) বলেন, অতি গাঢ় কৃষ্ণ পানীয়কে الْمُهْلُ বলে। বাহরুল ঊলূম ২/৩৪৫ পৃঃ।

এটা জাহান্নামীদের পানীয় হিসাবে প্রদান করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَإِنْ يَسْتَغِيْثُوْا يُغَاثُوْا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوْهَ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءَتْ مُرْتَفَقًا.

‘তারা পানি চাইলে তাদেরকে বিগলিত গরম তৈলাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় প্রদান করা হবে। যা তাদের মুখমন্ডল বিদগ্ধ করবে। এটা নিকৃষ্ট পানীয় আর জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট আবাসস্থল’! (কাহাফ ১৮/২৯)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,

إنَّ شَجَرَتَ الزَّقُّوْمِ، طَعَامُ الْأَثِيْمِ، كَالْمُهْلِ يَغْلِيْ فِي الْبُطُوْنِ، كَغَلْيِ الْحَمِيْمِ.

‘নিশ্চয়ই যাক্কূম বৃক্ষ হবে পাপীদের খাদ্য, যা গলিত তাম্রের মত, তা তার পেটে ফুটতে থাকবে ফুটন্ত পানির মত’ (দুখান ৪৪/৪৩-৪৬)।

 

৫. طِيْنَةُ الْخَبَالِ (শরীর থেকে নির্গত ঘাম) :

জাহান্নামীদের শরীর থেকে নির্গত ঘাম অথবা শরীরের ফোঁড়া থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজকে طِيْنَةُ الْخَبَالِ বলা হয়। আদ-দুররুল মানছুর ৩/১৭৫ ও ৭/২৪২ পৃঃ; তাফসীর ইবনু কাছীর ৩/১৮৭ পৃঃ; তাফসীরে খাযেন ১/২০৯ পৃঃ।

পৃথিবীতে যারা মদ কিংবা নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করত এবং যারা অহংকারে স্ফীত হয়ে দুনিয়ায় চলাচল করত, তাদেরকে জাহান্নামে শরীর থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম বা বিষাক্ত পুঁজ পান করতে দেওয়া হবে। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ إِنَّ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ عَهْدًا لِمَنْ يَشْرَبُ الْمُسْكِرَ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ طِيْنَةِ الْخَبَالِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا طِيْنَةُ الْخَبَالِ قَالَ عَرَقُ أَهْلِ النَّارِ أَوْ عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ.

‘প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্ত্তই হারাম। আর আল্লাহ তা‘আলা অঙ্গীকার করেছেন, যে ব্যক্তি নেশাযুক্ত পানীয় পান করবে জাহান্নামে তাকে ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ পান করানো হবে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ কি? তিনি বললেন, তা হ’ল জাহান্নামীদের ঘাম বা পুঁজ’। মুসলিম হা/৫৩৩৫; মিশকাত হা/৩৬৩৯।

অন্য হাদীছে এসেছে আমর ইবনু শু‘আয়ব তাঁর পিতা থেকে তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,

يُحْشَرُ الْمُتَكَبِّرُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَمْثَالَ الذَّرِّ فِىْ صُوَرِ الرِّجَالِ يَغْشَاهُمُ الذُّلُّ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ فَيُسَاقُوْنَ إِلَى سِجْنٍ فِىْ جَهَنَّمَ يُسَمَّى بُوْلَسَ تَعْلُوْهُمْ نَارُ الأَنْيَارِ يُسْقَوْنَ مِنْ عُصَارَةِ أَهْلِ النَّارِ طِيْنَةِ الْخَبَالِ.

‘ক্বিয়ামতের দিন অহংকারীরা মানুষরূপী ছোট্ট পিপীলিকা সদৃশ হবে। লাঞ্ছনা ও অপমান তাদেরকে চতুর্দিক থেকে পরিবেষ্টন করে রাখবে। জাহান্নামের ‘বুলস’ নামক কারাগারে তাদেরকে তাড়া করে নিয়ে যাওয়া হবে। জাহান্নামে তাদের জন্য লেলিহান অগ্নি প্রজ্বলিত করা হবে এবং সেখানে তাদের ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ অর্থাৎ শরীর থেকে নির্গত বিষাক্ত ঘাম বা দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ জাতীয় পানীয় পান করতে দেওয়া হবে’। আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৫৭; তিরমিযী হা/২৪৯২; মিশকাত হা/৫১১২; ছহীহুল জামে‘ হা/৮০৪০।

উল্লেখ্য যে, পৃথিবীতে যারা তথাকথিত অভিজাত ছিল, যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সন্দেহ পোষণ করত এবং যারা তাদের প্রতিপালক আল্লাহ সম্পর্কে বিভিন্ন কূট-কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করত ও অযথা তর্ক-বিতর্ক করত, ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে জাহান্নামের মাঝখানে নিয়ে মাথার উপর ফুটন্ত উত্তপ্ত পানি বর্ষণ করা হবে। এতে তাদের চর্বি, চামড়া, নাড়ি-ভুঁড়ি, কলিজা সহ সব কিছুই জ্বলে যাবে। অতঃপর তা পশ্চাৎদেশ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়বে। তারপর পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে। এভাবেই চলতে থাকবে শাস্তি। আল্লাহ বলেন, خُذُوْهُ فَاعْتِلُوْهُ إِلَى سَوَاءِ الْجَحِيْمِ، ثُمَّ صُبُّوْا فَوْقَ رَأْسِهِ مِنْ عَذَابِ الْحَمِيْمِ، ذُقْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيْزُ الْكَرِيْمُ، إِنَّ هَذَا مَا كُنْتُمْ بِهِ تَمْتَرُوْنَ.

‘তাকে ধর এবং টেনে-হেচড়ে জাহান্নামের মাঝখানে নিয়ে যাও। অতঃপর তার মাথার উপর ফুটন্ত উত্তপ্ত পানি ঢেলে শাস্তি দাও এবং (বলা হবে) স্বাদ গ্রহণ কর, তুমিতো ছিলে মর্যাদাবান অভিজাত। এটা তো সেটাই যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ পোষণ করতে’ (দুখান ৪৪/৪৭-৫০)।

অন্য আয়াতে তিনি বলেন,

هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوْا فِيْ رَبِّهِمْ فَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِنْ نَارٍ يُصَبُّ مِنْ فَوْقِ رُءُوْسِهِمُ الْحَمِيْمُ، يُصْهَرُ بِهِ مَا فِيْ بُطُوْنِهِمْ وَالْجُلُوْدُ، وَلَهُمْ مَقَامِعُ مِنْ حَدِيْدٍ، كُلَّمَا أَرَادُوْا أَنْ يَخْرُجُوْا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيْدُوْا فِيْهَا وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ.

‘এরা দু’টি বিবদমান পক্ষ। তারা তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করে। আর যারা কুফরী করে তাদের জন্য প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে আগুনের পোশাক; তাদের মাথার উপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি। যা দ্বারা তাদের পেটে যা আছে তা এবং তাদের চামড়া বিগলিত করা হবে। আর তাদের জন্য লৌহ নির্মিত হাতুড়ী সমূহ থাকবে। যখনই তারা তাতে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে সেখান থেকে বের হ’তে চাইবে, তখনই আবার ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং (বলা হবে) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদন কর’ (হজ্জ ২২/১৯-২২)। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

إِنَّ الْحَمِيْمَ لَيُصَبُّ عَلَى رُءُوْسِهِمْ فَيَنْفُذُ الْجُمْجُمَةَ حَتَّى يَخْلُصَ إِلَى جَوْفِهِ فَيَسْلُتَ مَا فِىْ جَوْفِهِ حَتَّى يَمْرُقَ مِنْ قَدَمَيْهِ وَهُوَ الصَّهْرُ ثُمَّ يُعَادُ كَمَا كَانَ.

‘ফুটন্ত উত্তপ্ত পানি কাফেরদের মাথায় ঢালা হবে, যা তাদের মাথা ছিদ্র করে পেটে গিয়ে পৌঁছবে এবং পেটে যা কিছু আছে তা বের করে ফেলবে এবং তার পেট থেকে বের হয়ে পায়ে এসে পড়বে। আর এটাই الصَّهْرُ শব্দের ব্যাখ্যা। অতঃপর পুনরায় সে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে’ (এভাবেই চলতে থাকবে শাস্তি)। মুসনাদে আহমাদ হা/৮৮৫১;

জাহান্নামীদের খাদ্য :

জাহান্নাম গহবরে আগুনের লেলিহান শিখা পাপী মানুষকে উপর-নীচ, ডান-বাম সকল দিক থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে। সেখানে পার্থিব আগুনের ৭০ গুণ উত্তাপ সম্পন্ন এই মহা হুতাশনে জাহান্নামের অধিবাসীরা দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকবে। সেখানে তাদের কোন সাহায্যকারী বন্ধু থাকবে না। থাকবে না শান্তিদায়ক কোন উপাদান। সেখানে শুধু থাকবে চূড়ান্ত দুঃখ, ধিক্কার, অপমান, অনুতাপ আর লজ্জা। এ রকম জটিল ও কঠিন মুহূর্তে তারা চরম তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে হাহাকার করবে। কিন্তু কোথাও কোন ঠান্ডা পানীয় ও উত্তম আহারের ব্যবস্থা থাকবে না। থাকবে না পরিতৃপ্ত হওয়ার মত কোন খাদ্য। থাকবে শুধু রক্ত, দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ, কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের ফল, সর্বাধিক কদর্যপূর্ণ নোংরা এবং গলায় আটকে যাওয়া খাবার প্রভৃতি। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে জাহান্নামীদের মোট চার ধরনের খাবারের কথা বর্ণিত হয়েছে। যা নিম্নে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হ’ল-

১. زَقُّوم (তেতো ফলবিশিষ্ট এক প্রকারের কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ :

দুর্গন্ধযুক্ত তেতো কাঁটাযুক্ত এক প্রকার ভারী খাবারকে زَقُّوم বলে। যা খাদ্য হিসাবে জাহান্নামীদের দেওয়া হবে। তা জাহান্নামের নিম্নদেশ থেকে উদ্গত হবে। এর গুচ্ছ হবে শয়তানের মস্তকের ন্যায়। কাফেররা সেখানে এটা ভক্ষণ করবে এবং তাদের উদর পূর্ণ করবে। এটি এমন একটি বৃক্ষ যা দুনিয়ায় পাওয়া যায় না। মহান আল্লাহ জাহান্নামের বিভিন্ন শাস্তির মত এটাকেও সৃষ্টি করবেন। তাফসীরে ত্বানত্বাবী, পৃঃ ৪০৬৬।

এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, أَذَلِكَ خَيْرٌ نُزُلًا أَمْ شَجَرَةُ الزَّقُّوْمِ، إِنَّا جَعَلْنَاهَا فِتْنَةً لِلظَّالِمِيْنَ، إِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِيْ أَصْلِ الْجَحِيْمِ، طَلْعُهَا كَأَنَّهُ رُءُوْسُ الشَّيَاطِيْنِ، فَإِنَّهُمْ لَآكِلُوْنَ مِنْهَا فَمَالِئُوْنَ مِنْهَا الْبُطُوْنَ. ‘আপ্যায়নের জন্য কি এটাই শ্রেষ্ঠ, নাকি যাক্কূম বৃক্ষ? এটাকে আমরা অত্যাচারীদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ তৈরী করেছি। এ বৃক্ষ উদ্গত হয় জাহান্নামের তলদেশ থেকে। তার গুচ্ছ যেন শয়তানের মস্তকের ন্যায়। অবশ্যই তারা এটা হ’তে ভক্ষণ করবে এবং তাদের পেট পূর্ণ করবে’ (ছাফফাত ৩৭/৬২-৬৬)

উল্লেখ্য যে, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাক্কূম গাছের কথা বলে মানুষদের জাহান্নাম সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করতেন, তখন আবূ জাহল তার সাথীদের উদ্দেশ্য করে বলত যে, তোমরা শুন! আগুনে নাকি গাছ হবে? অথচ আগুন গাছকে খেয়ে ফেলে। এটা কোন ধরনের কথা? তখন আল্লাহ إِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِيْ أَصْلِ الْجَحِيْمِ আয়াতটি নাযিল করে তাদেরকে কঠোরভাবে জওয়াব দেন। মূলতঃ যাক্কূম গাছ আগুন থেকেই তৈরী এবং আগুনই তার খাদ্য’।তাফসীর ইবনু কাছীর ৭/২০ পৃঃ ‘উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য’।

নিশ্চয়ই যাক্কুম গাছ হবে পাপিষ্ঠের খাদ্য, গলিত তামার মত তা পেটের ভিতর ফুটতে থাকবে, গরম পানি ফুটার মত। (আমি বলব,) ওকে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে। অতঃপর ওর মাথায় ফুটন্ত পানি ঢেলে দিয়ে শাস্তি দাও (এবং বল,) আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, সম্ভ্রান্ত। এটা তো সেই (শাস্তি) যার সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করতে। (দুখানঃ ৪৩-৫০)

ثُمَّ إِنَّكُمْ أَيُّهَا الضَّالُّونَ الْمُكَذِّبُونَ (51) لَآكِلُونَ مِن شَجَرٍ مِّن زَقُّومٍ (52) فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ (53) فَشَارِبُونَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيمِ (54) فَشَارِبُونَ شُرْبَ الْهِيمِ (55) هَٰذَا نُزُلُهُمْ يَوْمَ الدِّينِ (56)

অর্থাৎ, অতঃপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যাজ্ঞানকারীরা! তোমরা অবশ্যই আহার করবে যাকুম বৃক্ষ হতে এবং ওটা দ্বারা তোমরা উদর পূর্ণ করবে। তারপর তোমরা পান করবে ফুটন্ত পানি পান করবে পিপাসার্ত উটের ন্যায়। কিয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আতিথ্য। (ওয়াক্বিআহঃ ৫১-৫৬)

وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلَّا فِتْنَةً لِّلنَّاسِ وَالشَّجَرَةَ الْمَلْعُونَةَ فِي الْقُرْآنِ ۚ وَنُخَوِّفُهُمْ فَمَا يَزِيدُهُمْ إِلَّا طُغْيَانًا كَبِيرًا

আমি যে দৃশ্য তোমাকে দেখিয়েছি তা এবং কুরআনে উল্লিখিত অভিশপ্ত বৃক্ষ শুধু মানুষের পরীক্ষার জন্যই। আমি তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করি, কিন্তু এটা তাদের তীব্র অবাধ্যতাই বৃদ্ধি করে। (বানী ইসরাঈলঃ ৬০)

সাহাবা ও তাবেঈনগণ এই দৃশ্যের ব্যাখ্যা করেছেন, চাক্ষুষ দর্শন। এ থেকে মিরাজের ঘটনাকে বুঝানো হয়েছে। এ ঘটনা অনেক দুর্বল ঈমানের লোকদের জন্য ফিতনার কারণ হয়েছে এবং তারা মুর্তাদ্দ হয়ে গেছে। আর ‘বৃক্ষ’ বলতে যাক্কুম গাছ, যা মিরাজের রাতে রসূল (ﷺ) জাহান্নামে দেখেছেন। (مَلْعُونَةَ) (অভিশপ্ত) বলতে, ভক্ষণকারী। অর্থাৎ, সেই গাছ যা অভিশপ্ত জাহান্নামীরা ভক্ষণ করবে।

زقوم শব্দটিتزقم থেকে উৎপত্তি যার অর্থ ও দুর্গন্ধময় ও ঘৃণিত বস্তু গিলে খাওয়া। যাক্কুম’ বৃক্ষের ফল খাওয়াও জাহান্নামীদের জন্য বড় কঠিন হবে। কারণ তা বড় দুর্গন্ধময়, তেতো এবং অতি ঘৃণ্য হবে। অনেকে বলেন যে, এটা পৃথিবীর একটি গাছ এবং তা আরবে পরিচিত। কুত্বরব বলেন, এটি এক প্রকার তেঁতো গাছ, যা তিহামা নামক এলাকায় পাওয়া যায়। আর অনেকে বলেন যে, এটা পৃথিবীর কোন গাছ নয়, পৃথিবীর মানুষের নিকট তা অপরিচিত। (ফাতহুল কাদীর) আরবী-উর্দু অভিধানে ‘যাক্কুম’-এর অর্থ গুহার (কাটাদার বিষাক্ত গাছ) করা হয়েছে। (আহসানুল বায়ান)

মহানবী (ﷺ) বলেন, “ঐ যাক্কুমের সামান্য পরিমাণ যদি জাহান্নাম হতে পৃথিবীতে আসে তবে পৃথিবীর খাদ্য ও পানীয় তার বিষাক্ততায় বিনষ্ট হয়ে যাবে।” (তিরমিযীঃ ২৫৮৫)

২.  ضَرِيعٌ (সর্বাধিক কদর্যপূর্ণ কাঁটাযুক্ত শুষ্ক নোংরা খাবার) : মূলত ضَرِيع আগুনের একটি বৃক্ষের নাম এবং জাহান্নামের পাথর। এতে বিষাক্ত কণ্টক বিশিষ্ট ফল ধরে থাকবে। এটা হবে দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য ও অত্যন্ত নিকৃষ্ট আহার্য। এটা ভক্ষণে দেহ পরিপুষ্টও হবে না, ক্ষুধাও নিবৃত হবে না এবং অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না। তাফসীর ইবনু কাছীর ৮/৩৮৫ পৃঃ;  আদ-দুররুল মানছুর ৮/৪৯১ পৃঃ।

আল্লামা ত্বানতাবী (রহঃ) বলেন, এটি জাহান্নামীদেরর প্রদত্ত আযাবের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে একটি স্তরের আযাব। তাদের মধ্যে কেউ যাক্কূম, কেউ গিসলীন আবার কেউ যরী‘ ভোগ করবে।তাফসীরে ত্বানত্বাবী পৃঃ ৪৪৯৩।

ইমাম বুখারী (রহঃ) মুজাহিদের সূত্রে বলেন, এটি একপ্রকার কাঁটাযুক্ত গুল্ম। তা যখন সবুজ থাকে তখন তাকে ضَرِيع বলা হয়, আর যখন শুকিয়ে যায় তখন হিজাযবাসীরা একেই ضَرِيع বলে। এটা এক প্রকার বিষাক্ত আগাছা। তাফসীরে ইবনু কাছীর ৮/৩৮৫ পৃঃ; বুখারী ২/৭৩৬ পৃঃ, অনুচ্ছেদ-৮৮।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন

,لَيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلاَّ مِنْ ضَرِيْعٍ، لاَ يُسْمِنُ وَلاَ يُغْنِيْ مِنْ جُوْعٍ.

‘তাদের জন্য বিষাক্ত কাঁটাযুক্ত গুল্ম ছাড়া কোন খাবার থাকবে না। যা তাদের পরিপুষ্টও করবে না এবং ক্ষুধাও নিবৃত করবে না’ (গা-শিয়াহ:৫-৭)।

৩.  ذَا غُصَّةٍ (গলায় আটকে যাওয়া খাবার) : এটি এমন খাবার যা কণ্ঠনালীতে আটকে থাকে এবং যেখান থেকে কোন কিছু বের হ’তে পারে না ও কোন কিছু ঢুকতেও পারে না। বরং কদর্যতা, দুর্গন্ধ ও তিক্ততার কারণে সেখানে তা আটকে থাকে। তাফসীরে ত্বানত্বাবী ৪৩৬১ পৃঃ; তাফসীর ইবনু কাছীর ৮/২৫৬ পৃঃ; তাফসীরে ত্বাবারী ২৩/৬৯১ পৃঃ।

অন্যত্র কাঁটাযুক্ত খাবার গলায় আটকে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এমনভাবে তাদের প্রতি শাস্তি অব্যাহত থাকবে। তাফসীরে কুরতুবী ১৯/৪৬ পৃঃ।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ لَدَيْنَا أَنْكَالاً وَجَحِيْمًا، وَطَعَامًا ذَا غُصَّةٍ وَعَذَابًا أَلِيْمًا. ‘আমাদের নিকটে রয়েছে শৃঙ্খল ও প্রজ্বলিত বহ্নিশিখা। আর আছে এমন খাদ্য যা গলায় আটকে যায় এবং যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তি’ (মুযযাম্মিল ৭৩/১২-১৩)।

৪. غِسْلِيْنٍ (রক্ত ও পুঁজ) : এ বিষয়ে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।

فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ هَاهُنَا حَمِيمٌ (35) وَلَا طَعَامٌ إِلَّا مِنْ غِسْلِينٍ (36) لَّا يَأْكُلُهُ إِلَّا الْخَاطِئُونَ (37)

 

অর্থাৎ, অতএব এই দিন সেখানে তার কোন সুহৃদ থাকবে না এবং কোন খাদ্য থাকবে না ক্ষতনিঃসৃত পুঁজ ব্যতীত; যা অপরাধীরা ব্যতীত কেউ খাবে । (হা-ক্বাহঃ ৩৫-৩৭)

৫। আগুনের অঙ্গারঃ

যারা আল্লাহর কালাম বেচে খায়, তারা জাহান্নামের আঙ্গার খাবে। মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۙ أُولَٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

অর্থাৎ, আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যারা তা গোপন করে ও তার বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা কেবল আগুন দিয়ে আপন পেট পূর্ণ করে। শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে (পাপ-পঙ্কিলতা থেকে) পবিত্রও করবেন না; আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (বাক্বারাহঃ ১৭৪)

যারা এতীমের মাল খায়, তারা জাহান্নামের আঙ্গার খাবে। মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَىٰ ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا ۖ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا

অর্থাৎ, নিশ্চয় যারা পিতৃহীনদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে, তারা আসলে নিজেদের উদরে অগ্নি ভক্ষণ করে। আর অচিরেই তারা জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে। (নিসাঃ ১০)।

আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেছেন যে, “যে ব্যক্তি অভাব না থাকা সত্ত্বেও যাচনা করে (খেল), সে ব্যক্তি যেন জাহান্নামের অঙ্গার খেল।” (তাবারানীর কাবীর, ইবনে খুযাইমা, বাইহাকী, সহীহ তারগীব ৭৯৩নং) ।

আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি চাঁদির পাত্রে পান করে, আসলে সে ব্যক্তি নিজ উদরে জাহান্নামের আগুন ঢক্‌ঢক্‌ করে পান করে।” (বুখারী ৫৬৩৪, মুসলিম ২০৬৫নং)

জাহান্নামীদের দেহাকৃতির বিশালতা

পাপের শাস্তি অধিকরূপে ভোগাবার জন্য জাহান্নামীদের দেহাকৃতি খুব বিশাল করা হবে। অনুমান করার জন্য হাদীসে সেই বিশালত্ব কয়েকভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ-

মহানবী (ﷺ) বলেন, “কাফেরের দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান হবে দ্রুতগামী অশ্বারোহীর তিন দিনের পথ!” (মুসলিম)

তিনি আরো বলেন, “কাফেরের চোয়ালের দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান। আর তার চামড়ার স্থূলতা হবে তিন দিনের পথ!” (ঐ)।

অন্য এক বর্ণনায় আছে, “কাফেরের চামড়ার স্থূলতা হবে বিয়াল্লিশ হাত, তার চোয়ালের দাঁত হবে উহুদের মত (প্রায় ৭ কিমি, লম্বা ৩ কিমি. চওড়া ও ৩৫০ মি. উঁচু) এবং জাহান্নামে তার বসার জায়গা হবে মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী জায়গা পরিমাণ। (অর্থাৎ ৪২৫ কিমি.।)” (তিরমিযী)

অন্য এক বর্ণনায় আছে, “কাফেরের চামড়ার সুলতা হবে সত্তর হাত, তার বাহু হবে বাইযা পাহাড়ের মত, তার জাং হবে অরেক্বান পাহাড়ের মত এবং জাহান্নামে তার বসার জায়গা হবে আমার ও রাবার মধ্যবর্তী জায়গা। পরিমাণ।” (আহমাদ, হাকেম)

জাহান্নামীদের পোষাক

জাহান্নামীদের পোষাক হবে আলকাতরার অথবা গলিত পিতলের এবং আগুনের। মহান আল্লাহ বলেন,

وَتَرَى الْمُجْرِمِينَ يَوْمَئِذٍ مُّقَرَّنِينَ فِي الْأَصْفَادِ (49) سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٍ وَتَغْشَىٰ وُجُوهَهُمُ النَّارُ (50)

অর্থাৎ, সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শিকল দ্বারা বাঁধা অবস্থায়। তাদের জামা হবে আলকাতরার (বা গলিত পিতলের) এবং অগ্নি আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমন্ডল। (ইব্রাহীমঃ ৪৯-৫০)

তিনি আরো বলেন,

فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّن نَّارٍ يُصَبُّ مِن فَوْقِ رُءُوسِهِمُ الْحَمِيمُ (19) يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ (20) وَلَهُم مَّقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ (21) كُلَّمَا أَرَادُوا أَن يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ (22)

অর্থাৎ, সুতরাং যারা অবিশ্বাস করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আগুনের পোশাক; তাদের মাথার উপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি। যার ফলে তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম বিগলিত করা হবে। আর তাদের জন্যে থাকবে লৌহনির্মিত হাতুড়িসমূহ। যখনই তারা যন্ত্রণাকাতর হয়ে জাহান্নাম হতে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে; আর (তাদেরকে বলা হবে,) আস্বাদ কর দহন-যন্ত্রণা।” (হজ্জঃ ১৯-২২)

জাহান্নামের দর্শন ও কথন

জাহান্নাম দেখবে ও কথা বলবে, রাগে গর্জন ছাড়বে। মহান আল্লাহ বলেন,

بَلْ كَذَّبُوا بِالسَّاعَةِ ۖ وَأَعْتَدْنَا لِمَن كَذَّبَ بِالسَّاعَةِ سَعِيرًا (11) إِذَا رَأَتْهُم مِّن مَّكَانٍ بَعِيدٍ سَمِعُوا لَهَا تَغَيُّظًا وَزَفِيرًا (12)

অর্থাৎ, বরং ওরা কিয়ামতকে মিথ্যা মনে করে। আর যারা কিয়ামতকে মিথ্যা মনে করে, তাদের জন্য আমি জ্বলন্ত জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছি। দূর হতে (জাহান্নাম) যখন ওদেরকে দেখবে, তখন ওরা তার ক্রুদ্ধ গর্জন ও চিৎকার শুনতে পাবে। (ফুরকানঃ ১১-১২) ।

 

وَلِلَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ (6) إِذَا أُلْقُوا فِيهَا سَمِعُوا لَهَا شَهِيقًا وَهِيَ تَفُورُ (7) تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْظِ ۖ كُلَّمَا أُلْقِيَ فِيهَا فَوْجٌ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيرٌ (8)

অর্থাৎ, আর যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি, আর তা বড় নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! যখন তারা তাতে নিক্ষিপ্ত হবে, তখন জাহান্নামের গর্জন শুনবে, আর তা উদ্বেলিত হবে। রোষে জাহান্নাম যেন ফেটে পড়বে, যখনই তাতে কোন দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তখনই তাদেরকে তার রক্ষীরা জিজ্ঞাসা করবে, ‘তোমাদের নিকট কি কোন সতর্ককারী আসেনি?’ (মুল্‌কঃ ৬-৮)

আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুনের এক মূর্তি বের হবে, যার থাকবে দুটি চোখ; যার দ্বারা সে দর্শন করবে, দু’টি কান; যার দ্বারা সে শ্রবণ করবে এবং যার জিভও থাকবে; যার দ্বারা সে কথাও বলবে। সেদিন সে বলবে, ‘তিন প্রকার লোককে শায়েস্তা করার দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে; প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারী, প্রত্যেক সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকেও আহ্বান (শির্ক) করেছে এবং যারা ছবি বা মূর্তি প্রস্তুত করেছে।” (আহমাদ, তিরমিযী, সিলসিলাহ সহীহাহ ৫১২নং)

 

জাহান্নামীদের শাস্তি

(ক) অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির তারতম্য :

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কোন বান্দার উপর যুলুম করবেন না, বিধায় তিনি জাহান্নামকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করেছেন এবং স্তরভেদে আযাবের তারতম্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে’ {সূরা নিসা: ১৪৫}।

তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘এবং যেদিন ক্বিয়ামত ঘটবে সেদিন বলা হবে ফিরআউন সম্প্রদায়কে নিক্ষেপ কর কঠিন শাস্তিতে’ {সূরা মু’মিন: ৪৬}।

তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘যারা কুফরী করে এবং আল্লাহর পথে বাধাদান করে, আমি তাদের শাস্তির উপর শাস্তি বৃদ্ধি করব। কারণ, তারা অশান্তি সৃষ্টি করে’ {সূরা নাহল: ৮৮}।

উল্লেখিত আয়াত সমূহ হতে প্রতীয়মাণ হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের পাপ-এর কম-বেশীর কারণে জাহান্নামের শাস্তি কম-বেশী করবেন। যার প্রমাণ এ হাদীছ, সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, জাহান্নামীদের মধ্যে কোন কোন লোক এমন হবে, জাহান্নামের আগুন তার পায়ের টাখনু পর্যন্ত পৌঁছবে। তাদের মধ্যে কারো হাঁটু পর্যন্ত আগুন পৌঁছবে, কারো কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো কারো গর্দান পর্যন্ত পৌঁছবে। মুসলিম, হা/৭৩৪৯,

রাসূলুল্লাহ (ছা.) সবচেয়ে কম শাস্তি প্রাপ্ত জাহান্নামীর কথা উল্লেখ করেছেন। হাদীছে এসেছে, নু’মান ইবনু বাশীর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (ছা.)-কে বলতে শুনেছি যে, ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির সর্বাপেক্ষা লঘু আযাব হবে, যার দু’পায়ের তলায় দু’টি প্রজ্জ্বলিত আঙ্গার রাখা হবে। এতে তার মগয টগবগ করে ফুটতে থাকবে। যেমন- ডেক বা কলসী ফুটতে থাকে। বুখারী,

অন্য হাদীছে এসেছে, নু’মান ইবনু বাশীর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, জাহান্নামীদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সহজতর শাস্তি ঐ ব্যক্তির হবে, যাকে আগুনের ফিতাসহ দু’খানা জুতা পরান হবে, এতে তার মগয এমনভাবে ফুটতে থাকবে, যেমনভাবে তামার পাত্র ফুটতে থাকে। সে ধারণা করবে, তার অপেক্ষা কঠিন আযাব কেহ ভোগ করছে না, অথচ সে হবে সর্বাপেক্ষা সহজতর শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি। মুসলিম,

আর সর্বাপেক্ষা সহজতর শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি হবেন রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর চাচা আবু ত্বালেব। এ মর্মে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, আবু সা’ঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (ছা.)-কে বলতে শুনেছেন, যখন তাঁর কাছে তাঁর চাচা আবু ত্বালিব সম্পর্কে উল্লেখ করা হল। তখন তিনি বললেন, ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা’আত সম্ভবত তাঁর উপকারে আসবে। আর তখন তাকে জাহান্নামের অগ্নিতে রাখা হবে যা পায়ের গিরা পর্যন্ত পৌঁছবে। তাতে তার মাথার মগয টগবগ করে ফুটতে থাকবে। বুখারী,

(খ) জাহান্নামীদের গাত্রচর্ম দগ্ধকরণ :

আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের তিন দিনের পথ সমপরিমাণ পোর বা মোটা চামড়াকে দুনিয়ার আগুনের চেয়ে উনসত্তর গুণ বেশী তাপ সম্পন্ন জাহান্নামের আগুন দ্বারা ভাজা-পোড়া করবেন। চামড়া পুড়ে ছাই হয়ে গেলে পুনরায় নতুন চামড়া তৈরী করে পোড়াবেন। এইভাবে অনবরত পোড়াতে থাকবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘যারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে তাদেরকে অগ্নিতে দগ্ধ করবই, যখনই তাদের চর্ম দগ্ধ হবে তখনই তার স্থলে নতুন চর্ম সৃষ্টি করব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ {সূরা নিসা: ৫৬}।

(গ) মাথায় গরম পানি ঢেলে শাস্তি প্রদান :

আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের মাথার উপর এমন গরম পানি ঢেলে শাস্তি প্রদান করবেন যার পরে অধিক গরম করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যারা কুফরী করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোষাক, আর তাদের মাথার উপর ঢালা হবে ফুটন্ত পানি, যা দ্বারা তাদের পেটে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম বিগলিত করা হবে’ {সূরা হাজ্জ: ১৯-২০}।

হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, জাহান্নামীদের মাথায় গরম পানি ঢালা হবে, এমনকি তা পেটের মধ্যে প্রবেশ করবে, ফলে পেটের ভিতরে যাকিছু আছে সমস্ত কিছু বিগলিত হয়ে পায়ের দিক দিয়ে নির্গত হবে। পুনরায় তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে (পুনরায় উহা ঢালা হবে এমনিভাবে শাস্তিও প্রক্রিয়া চলতে থাকবে)। তিরমিযী, ‘জাহান্নামের বিবরণ’

(ঘ) মুখমণ্ডল দগ্ধকরণ :

আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে মানুষকে একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা মুখমণ্ডলকে দান করেছেন সর্বাপেক্ষা বেশী মর্যাদা। যার কারণে রাসূলুল্লাহ (ছা.) মুখমণ্ডলে প্রহার করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু যারা আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না করে তাঁর নাফরমানী করবে তাদের মুখমণ্ডলের মর্যাদাকে ধুলায় ধুসরিত করে সর্বপ্রথম মুখমণ্ডলকেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘যে কেহ অসৎকর্ম নিয়ে আসবে, তাকে অধোমুখে নিক্ষেপ করা হবে অগ্নিতে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যা করতে তারই প্রতিফল তোমাদেরকে দেয়া হচ্ছে’ {সূরা নামল: ৯০}।

তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘হায়! যদি কাফিরেরা সেই সময়ের কথা জানত যখন তারা তাদের সম্মুখ ও পশ্চাৎ হতে অগ্নি প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং তাদেরকে সাহায্য করাও হবে না’ {সূরা আম্বিয়া: ৩৯}।

তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘অগ্নি তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তথায় থাকবে বীভৎস চেহারায়’ {সূরা মু’মিনুন: ১০৪}।

তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং অগ্নি আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমণ্ডল’ {সূরা ইবরাহীম: ৫০}।

তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন তার মুখমণ্ডল দ্বারা কঠিন শাস্তি ঠেকাতে চাইবে, সে কি তার মত যে নিরাপদ? সীমালংঘনকারীদেরকে বলা হবে, তোমরা যা অর্জন করতে তার শাস্তি আস্বাদন কর’ {সূরা যুমার: ২৪}।

তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘যেদিন তাদের মুখমণ্ডল অগ্নিতে উলট পালট করা হবে সে দিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রাসূলের আনুগত্য করতাম’! {সূরা আহযাব: ৬৬}।

জাহান্নামীরা আবদ্ধ থাকবে আগুনের বেষ্টনীতে

কাফিরগণ যারা জাহান্নামের চিরস্থায়ী অধিবাসী, তাদের পাপ যেমন তাদেরকে বেষ্টন করে আছে, তেমনি জাহান্নামের আগুন তাদের চারিদিক থেকে ঘিরে ধরবে। সেখান থেকে তাদের পালানোর কোনই পথ থাকবে না। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা ইহুদীদের কথার জবাবে বলেন, ‘হাঁ, যারা পাপকার্য করে এবং যাদের পাপরাশি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে তারাই অগ্নিবাসী। সেখানে তারা স্থায়ী হবে’ {সূরা বাক্বারাহ: ৮১}।

তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘তাদের শয্যা হবে জাহান্নামের এবং তাদের উপরের আচ্ছাদনও (হবে জাহান্নামের)’ {সূরা আ‘রাফ: ৪১}। অর্থাৎ জাহান্নামের আগুন জাহান্নামীদের উপর এবং নীচ হতে আচ্ছাদন করবে।

যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘সেদিন শাস্তি তাদেরকে আচ্ছাদন করবে উপর এবং পাঁয়ের নীচ হতে এবং তিনি বলবেন, তোমরা যা করতে তার স্বাদ গ্রহণ কর’ {সূরা আনকাবুত: ৫৫}।

তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘তাদের জন্য থাকবে তাদের উপর দিকে অগ্নির আচ্ছাদন এবং নীচের দিকেও আচ্ছাদন’ {সূরা যুমার: ১৬}।

অতএব জাহান্নামীগণ তাদের চতুর্দিক হতে আগুন দ্বারা বেষ্টিত থাকবে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘জাহান্নাম তো কাফিরদেরকে বেষ্টন করে আছে’ {সূরা তাওবা: ৪৯}।

তিনি অন্যত্র বলেন, ‘আমি সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি অগ্নি, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে থাকবে। তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে; ইহা নিকৃষ্ট পানীয় ও অগ্নি কত নিকৃষ্ট আশ্রয়’ {সূরা কাহফ: ২৯}।

জাহান্নামের আগুন জাহান্নামীদের হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে

পূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, জাহান্নামীগণ দেহ অবয়বে বিশালাকৃতির অধিকারী হবে। এই বিশালাকৃতির দেহ জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে থাকবে। এমনকি হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত আগুন পৌঁছে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আমি তাকে নিক্ষেপ করব সাকার-এ, তুমি কি জান সাকার কি? উহা তাদেরকে জীবিতাবস্থায় রাখবে না ও মৃত অবস্থায় ছেড়ে দেবে না। ইহা তো গাত্রচর্ম দগ্ধ করবে’ {সূরা মুদ্দাছছির: ২৬-২৯}।

তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়, তুমি কি জান, হুতামা কি? ইহা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত হুতাশন, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে’ {সূরা হুমাযাহ: ৪-৭}।

অতএব, আগুন জাহান্নামীদের হাড্ডি, মাংস, মস্তিষ্ক সব খেয়ে ফেলবে, তবুও তারা মৃত্যুবরণ করবে না। যখনই আগুন দেহের সবকিছু খেয়ে ফেলবে তখনই পুনরায় নতুনভাবে সৃষ্টি করা হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এইভাবে অনবরত শাস্তি চলতে থাকবে। আল্লাহ আমাদের তা থেকে হেফাযত করুন। আমীন!

জাহান্নামীর কর্মাবলী

এমনিতে প্রত্যেক মহাপাপ ও অতি মহাপাপই জাহান্নামীর কাজ। তবে মহাপাপ আল্লাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমা করতে পারেন, নচেৎ শাস্তি ভোগাতে পারেন। তবে অতি মহাপাপ অমার্জনীয় অপরাধ। যে যে কাজের জন্য জাহান্নাম যেতে হবে, তার কিছু নিম্নরূপঃ

কুফরী করা, শির্ক করা, বিদআত করা, কপটতা করা, আল্লাহ বা তার রসূলের নামে মিথ্যা বলা, মিথ্যা কথা বলা, হিংসা করা, আমানতে খিয়ানত করা, যুলুম করা, ব্যভিচার করা, ধোকা দেওয়া, ফাঁকি দেওয়া, আত্মীয়তার বন্ধন ছেদন করা, জিহাদ বর্জন করা, কার্পণ্য করা, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া, আল্লাহর শাস্তি থেকে নিজেকে নিরাপদ ভাবা, বিপদে অধৈর্য হওয়া, গর্ব করা, অহংকার করা, আল্লাহর কোন ফরয ত্যাগ করা, কোন নিষিদ্ধ কর্ম করা, তার সীমা লংঘন করা, আল্লাহর মত অন্য কাউকে ভালবাসা অথবা ভয় করা, আল্লাহ ছাড়া অন্যের উপর ভরসা রাখা, লোকদেখানি কাজ করা, বাতিলের পক্ষপাতিত্ব করা, আল্লাহ, রসূল (ﷺ) বা দ্বীনের কোন বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা, সত্য প্রত্যাখ্যান করা, সত্য গোপন করা, সত্য সাক্ষ্য না দেওয়া, যাদু করা, মা-বাপের অবাধ্য হওয়া, স্বামীর অবাধ্য হওয়া, অবৈধ প্রাণ হত্যা করা, এতীমের মাল ভক্ষণ করা, সুদ খাওয়া, ঘুস খাওয়া, চুরি-ডাকাতি করা, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা, মিথ্যা কলঙ্ক রটানো, অপবাদ দেওয়া, ইত্যাদি।

মহানবী (ﷺ) বলেন, “জাহান্নামবাসী পাঁচ ব্যক্তি; (১) সেই দুর্বল শ্রেণীর ব্যক্তি, যার (পাপ ও অন্যায় থেকে দুরে থাকার মত) জ্ঞান নেই। যারা তোমাদের অনুগত, যারা পরিবার চায় না, ধন-সম্পদও চায় না। (২) খিয়ানতকারী ব্যক্তি, যে তুচ্ছ কোন জিনিসের লোভে পড়লেই তাতে খিয়ানত করে। (৩) এমন ব্যক্তি, যে সকাল-সন্ধ্যায় তোমার পরিবার ও সম্পদের ব্যাপারে ধোকা দেয়। (৪) কৃপণ ব্যক্তি এবং (৫) দুশ্চরিত্র চোয়াড়।” (মুসলিম ৭৩৮৬নং)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, কোন আমল মানুষকে বেশি জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন, “আল্লাহভীতি ও সচ্চরিত্র।” আর তাঁকে (এটাও) জিজ্ঞাসা করা হল যে, কোন আমল মানুষকে বেশি জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন, “মুখ ও যৌনাঙ্গ (অর্থাৎ, উভয় দ্বারা সংঘটিত পাপ)।” (তিরমিযী হাসান সহীহ সূত্রে)

 

জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় (আব্দুল হামিদ ফাইযী))

জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় ইসলাম গ্রহণের সাথে ঈমান ও নেক আমল। ফরয পালন, পাপ বর্জন, তাক্বওয়া অর্জন ও দুআ। মহান আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন সে দুআঃ

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

অর্থাৎ, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ইহকালে কল্যাণ দান কর এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে দোযখ-যন্ত্রণা থেকে রক্ষা কর।” (বাক্বারাহঃ ২০১)।

رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ ۖ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا (65) إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا

অর্থাৎ, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি নিবৃত্ত কর; জাহান্নামের শাস্তি তো নিশ্চিতভাবে ধ্বংসাত্মক; নিশ্চয় তা আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে অতীব নিকৃষ্ট!’ (ফুরক্বানঃ ৬৫-৬৬)

 

এ ছাড়া জাহান্নাম থেকে বাঁচার বহু উপায় হাদীসে বলা হয়েছে, যার কিছু নিম্নরূপঃ

এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে এমন আমল বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দুরে রাখবে। নবী (ﷺ) বললেন, “তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সাথে কাউকে অংশীদার করবে না, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দেবে এবং রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখবে।” (বুখারী ও মুসলিম)।

“যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর রসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।” (মুসলিম)।

“আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেবেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কামনায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে।” (বুখারী ও মুসলিম)

“যে ব্যক্তি সুর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফজরের ও আসরের নামায আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।” (মুসলিম)।

“যে ব্যক্তি যোহরের ফরয নামাযের পুর্বে চার রাকআত ও পরে চার রাকআত সুন্নত পড়তে যত্নবান হবে, আল্লাহ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন।” (আবু দাউদ, তিরিমিযী)।

“রোযা (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য) ঢালস্বরূপ।” (বুখারী, মুসলিম)

“যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (অর্থাৎ, জিহাদকালীন বা প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনকল্পে) একদিন রোযা রাখবে, আল্লাহ ঐ একদিন রোযার বিনিময়ে তার চেহারাকে জাহান্নাম হতে সত্তর বছর (পরিমাণ পথ) দূরে রাখবেন।” (বুখারী ও মুসলিম)।

“সেই ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে; যতক্ষণ না দুধ স্তনে ফিরে না গেছে। (অর্থাৎ, দুধ স্তনে ফিরে যাওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি তার জাহান্নামে প্রবেশ করাও অসম্ভব।) আর একই বান্দার উপর আল্লাহর পথের ধূলা ও জাহান্নামের পঁয়া একত্র জমা হবে। না।” (তিরমিযী, হাসান সহীহ)

“দুই প্রকার চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। আল্লাহর ভয়ে যে চক্ষু ক্রন্দন করে। আর যে চক্ষু আল্লাহর পথে প্রহরায় রত থাকে।” (তিরমিযী, হাসান)

 

“জাহান্নামের (আগুন) প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জন্য হারাম হবে, যে মানুষের নিকটবর্তী, নম্র, সহজ ও সরল।” (তিরমিযী, হাসান সূত্রে)।

“তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়। আর যে ব্যক্তি এরও সামর্থ্য রাখে না, সে যেন ভাল কথা বলে বাঁচে। যাকে এই কন্যা সন্তান দিয়ে কোন পরীক্ষায় ফেলা হয়, তারপর যদি সে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে, তাহলে এ কন্যারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে অন্তরাল হবে।” (বুখারী, মুসলিম)।

“যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভায়ের সম্ভ্রম রক্ষা করবে, কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের আগুন থেকে তার চেহারাকে রক্ষা করবেন।” (তিরমিযী- হাসান)

“যে পছন্দ করে যে, তাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক, তার মরণ যেন এমন অবস্থায় হয় যে, সে আল্লাহ ও তার রসুলের প্রতি ঈমান রাখে এবং অন্যের প্রতি এমন ব্যবহার দেখায়, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।” (মুসলিম)

            জাযাকুমুল্লাহি খাইরান