ইসলাম বাস্তবমুখী জীবন বিধান তার একটি চিত্র বুঝা যায়।
ইসলামী ফিকাহ্, ইসলামী আইন ও ইসলামী বিধিবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে পাঁচটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে। আরবিতে বলা হয় (মাকাসেদে শরিয়া) শরিয়তের উদ্দেশ্য।
১মঃ মানবজাতির প্রাণকে হেফাজত করা।
এজন্য হত্যা নিষিদ্ধ। একজন আরেকজনকে হত্যা করতে পারে না।
আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেন, সত্য ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করো না৷ আর যে ব্যক্তি মজলুম অবস্থায় নিহত হয়েছে তার অভিভাবককে আমি কিসাস দাবী করার অধিকার দান করেছি৷ কাজেই হত্যার ব্যাপারে তার সীমা অতিক্রম করা উচিত নয়, তাকে সাহায্য করা হবে৷সূরা বনী ইসরাইলঃ ৩৩
তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না, আল্লাহ যে প্রানকে হারাম করেছেন কেআন সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে নাএবং ব্যভিচার করে না৷এসব যে-ই করে সে তার গোনাহের শাস্তি ভোগ করবে৷ সূরা ফোরকানঃ ৬৮
আর যে ব্যক্তি জেনে বুঝে মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম৷ সেখানে চিরকাল থাকবে৷ তার ওপর আল্লাহর গযব ও তাঁর লানত এবং আল্লাহ তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন৷ সূরা নিসাঃ ৯৩
২য়ঃ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ও মানসিক স্বাস্থ্যকে রক্ষা করা।
যেই জিনিসের কারণে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়, সেগুলোকে ইসলাম হারাম করেছে। যত নেশা উদ্রেককারী উপাদান হতে পারে ইসলাম তা হারাম করেছে।
হে ঈমানদারগণ ! এ মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শরসমূহ এ সমস্তই হচ্ছে ঘৃণ্য শয়তানী কার্যকালাপ ৷ এগুলো থেকে দূরে থাকো, আশা করা যায় তোমরা সফলতা লাভ করবে৷সূরা মায়েদাঃ ৯০
শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদের বিরত রাখতে৷ তাহলে তোমরা কি এসব থেকে বিরত থাকবে ? সূরা মায়েদাঃ ৯১
৩য়ঃ স্বাস্থ্যকে হেফাজত করা, বংশকে হেফাজত করা।
যেনা করা ও ব্যভিচার করা হারাম। কারণ ব্যভিচার করলে মানুষের বংশ নষ্ট হয়ে যায়। মানুষের পরিচিতি নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য কোনো মেয়ের একই সময় একাধিক বিবাহ করা হারাম। একজন মহিলা একজন স্বামী গ্রহণ করতে পারে। একাধিক স্বামী একসঙ্গে গ্রহণ করতে পারে না। একটি নারী যদি একই সময় একাধিক স্বামী গ্রহণ করে তখন তার গর্ভে যে বাচ্চা আসবে তা কোন পিতার নির্ণয় করতে কঠিন হবে। এজন্য মহিলাদের একাধিক বিবাহ একই সময় ইসলাম হারাম করেছে।
যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ এবং খুবই জঘন্য পথ৷সূরা বনী ইসরাইলঃ৩২
ব্যভিচারিনী ও ব্যভিচারী উভয়ের প্রত্যেককে এক শত বেত্রাঘাত করো৷ আর আল্লাহর দীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি কোন মমত্ববোধ ও করুণা যেন তোমাদের মধ্যে না জাগে যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনো ৷আর তাদেরকে শাস্তি দেবার সময় মু’মিনদের একটি দল যেন উপস্থিত থাকে ৷ সূরা নূরঃ২
৪র্থঃ মানুষের ইজ্জতকে হেফাজত করা।
এজন্য অযথা কারও সমালোচনা করা, কারও গিবত করা ইসলামে হারাম। কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও বানোয়াট কথা প্রচার করা হারাম। কেউ কারও বিরুদ্ধে যদি মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করে, আদালতে এসে যদি সাক্ষী পেশ করতে না পারে, তা হলে ইসলামী আইন অনুযায়ী তাকে ৮০টি বেত দেয়া হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে এ লোক আজীবনের জন্য ফাসেক হয়ে যাবে। আদালতে তার সাক্ষী আর গ্রহণযোগ্য হবে না।
আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ লাগায়, তারপর চারজন সাক্ষী আনে না,তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং তাদের সাক্ষ কখনো গ্রহণ করো না তারা নিজেরাই ফাসেক ৷ সূরা নূর : ৪
হে ঈমানদারগণ, পুরুষরা যেন অন্য পুরুষদের বিদ্রূপ না করে৷ হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম৷ আর মহিলারাও যেন অন্য মহিলাদের বিদ্রূপ না করে৷ হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম৷ তোমরা একে অপরকে বিদ্রূপ করো না৷ এবং পরস্পরকে খারাপ নামে ডেকো না৷ ঈমান গ্রহণের পর গোনাহর কাজে প্রসিদ্ধ লাভ করা অত্যন্ত জঘন্য ব্যাপার৷ যারা এ আচরণ পরিত্যাগ করেনি তারাই জালেম৷ সূরা হুজরাতঃ ১১
হে ঈমানদাগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ৷ দোষ অন্বেষন করো না৷ আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে৷ এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে ? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়৷ আল্লাহকে ভয় করো৷ আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু৷ সূরা হুজরাতঃ ১১
৫মঃ মানুষের সম্পদের হেফাজত করা।
চুরি, রাহাজানি, ডাকাতি ইত্যাদি করা হারাম। ফিকাহর কিতাবগুলো থেকেও আমরা শিখলাম যে, শরিয়া আইনের টার্গেটের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা করা।
হে ঈমানদারগণ ! তোমরা পরস্পরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ে ফেলো না৷ লেনদেন হতে হবে পারস্পরিক রেজামন্দির ভিত্তিতে ৷আর নিজেকে হত্যা করো না।নিশ্চিত জানো, আল্লাহ তোমাদের প্রতি মেহেরবান৷ সূরা নিসাঃ ২৯