আরো অনেক প্রাকৃতিক উপাদান মহান আল্লাহ দিয়েছেন যা মানুষের কল্যানের জন্য, রাসূল স. এর হাদীস থেকেও জানা যায়। সেখান থেকে কিছু হাদীসের উল্লেখ করা হলো, যা ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
১। খেজুর ভক্ষন— খেজুরের আরবি নাম হচ্ছে, নাখল, রুতাব, বালহ, তামর। সমগ্র কুর’আনে ২০ বার খেজুর কথাটি বর্ননা করা হয়েছে।
রাসূল স. বলেছেন, এমন একটি বৃক্ষ আছে, যা মুসলমানদের ন্যায় বরকতপূর্ণ ও কল্যানময়। সেটি হলো খেজুর বৃক্ষ। সহিহ আল বুখারী: ৫০৪১
মদীনার উঁচু এলাকার আজওয়া খেজুরে রোগ মুক্তির উপাদান রয়েছে। সহিহ মুসলিম:৫১৭০
যে ব্যক্তি প্রত্যহ সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, তাকে ঐদিন কোনো বিষ বা যাদু ক্ষতি করতে পারবে না। সহিহ বুখারী: ৫০৪২ ও মুসলিম: ৫১৬৮
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সঃ) এর কতিপয় সাহাবা বলেন, ছত্রাক হল জমীনের বসন্ত রোগ। রাসূল (সঃ) বলেন ছত্রাক হল মান্নের অন্তর্ভুক্ত এবং এর পানি চক্ষু্রোগের প্রতিষেধক। আজওয়া হল বেহেশতের খেজুরের অন্তর্ভুক্ত এবং এটা বিষের প্রতিষেধক। তিরমিযী-আবওয়াতবুত-তিব্ব-২০২০
শুধু আজওয়া খেজুর নয় অন্যান্য খেজুরের কথাও এসেছে। মূলত খেজুরের মধ্যে যে উপাদান মহান আল্লাহ দিয়েছেন তা মানুষের শারিরীক সুস্থ্যতার জন্য অনেক সহায়ক। গবেষনায় দেখা গেছে খেজুরে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল আছে।
খেজুর ব্যথা বেদনা দূর করতে, শরীরের ওজন বাড়াতে, ক্যান্সার ও হৃদপিণ্ডের অসুখের চিকিৎসায় বেশ উপকারী। সন্তান সম্ভাবনা মেয়েদের জন্য খেজুর অত্যন্ত উপকারী।
গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকায় খেজুর থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেজুর এমন একটি খাবার যাতে রয়েছে অভাবনীয় কার্যকরি ক্ষমতা।
► খেজুরে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান যা গর্ভের সন্তানের স্বাভাবিক বেড়ে উঠাতে অত্যন্ত সহায়ক। হজমে অত্যন্ত সহায়ক। সেজন্য ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটি অত্যন্ত নিরাপদ। এমনকি ডায়াবেটিক আক্রান্ত মায়েদের ক্ষেত্রেও।
► খেজুরে রয়েছে পলিফেনোলিক এ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এটি প্রাকৃতিক এ্যান্টাসিড হিসাবে কাজ করে। এছাড়াও এতে রয়েছে সহজে দ্রুত রক্তপাত প্রবণতা রোধ করার ক্ষমতা, যা গর্ভবতী মাকে অনেকটাই সুরক্ষিত রাখে।
► খেজুরের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১২ কেরোটিন বা এ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা গর্ভবতী মায়েদের দেহে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার যেমন কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, প্যানক্রায়েটিক ক্যান্সারের এ্যান্টিবডিক হিসেবে কাজ করে।
► খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ যা হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ সঠিক রাখতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা শিশুর হাড় ও মাংসপেশী গঠনে সহায়ক।
► গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ যেমন কোষ্ঠকাঠিন্যতা, রুক্ষ্মতা এবং পানি শূন্যতা দুর করতে খেজুর খুবই কার্যকরি।
খেজুর গর্ভবতী মায়েদের প্রসূতিকালীন ব্যাথা সংক্ষিপ্ত করতে সহায়তা করে
২০১১ সালের “Journal of Obstetnics and Gynocology” নামক পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে গবেষণার এই মত প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯ মাসের গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন ৬টি করে খেজুর খাওয়ালে খেজুর না খাওয়া মায়েদের তুলনায় তাদের প্রসূতিকালীন ব্যাথা অনেক কম সময় থাকে। তাদের এই গবেষণা ৭০% গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এই ফলাফল প্রযোজ্য হয়।
খেজুরে প্রায় ৬০-৭০% চিনি আছে, যা শিশুদের কান্না থামাতে কার্যকর।
হযরত আয়েশা রা. বলেন, নবী স.এর খেদমতে নবজাতক শিশুদের আনা হলে তিনি তাদের বরকতের জন্য দু’আ করতেন এবং খেজুর চিবিয়ে তাদের মুখে পুরে দিতেন। সহিহ মুসলিম: ৫৪৩৬
এই হাদীসের উপর গবেষনা করে যুক্তরাজ্যের বেশ কটি হাসপাতাল জানান, চিনি বা গুড় শিশুদের ব্যথা দূর করে, তাদের কান্নার সময় কমিয়ে দেয়।
The analgesic effects(pain killing effects) of sucrose in full term infants, a randomized controlled trial—গবেষনায় প্রমানিত হয় যে, ১২% চিনির দ্রবন শিশুদের খাওয়ানোর পর যদি তাদের আংগুল থেকে যে কোন পরীক্ষার জন্য রক্ত নেয়া হয় বা মুসলমানি করানো হয় তাহলে অন্য সময়ে তাদের যে কান্না হতো তা শীঘ্রই থেমে যায়। এটা British Medical Journa1995প্রকাশিত হয়।