জীবনের পথ চলায় জেনে না জেনে বা আবেগে অনেক সময়ই আমাদের ছোট বড় অনেক ধরনের ভুল হয়ে থাকে। ইমান যাদের জাগ্রত আছে, সেই ভুল নিজের অন্তরে দহন করতে থাকে। ঘুড়ে ফিরে তাকে বারে বারে বলে যায়, ফিরে এসো জান্নাতের পথে, সময় চলে যায়। আমরা অনেকেই চাই নিজেদের আবার সুন্দর করে নিয়ে, নতুন করে পবিত্র জীবনের ছোঁয়ায় পথ চলি। ভুলগুলোকে ভুলে যেয়ে আবার নতুন করে সাজিয়ে নেই প্রতিটি পদক্ষেপ জান্নাতের পানে।
এটা কখনোই অসম্ভব নয়। আমরা যেকোন সময় চাইলেই অতীতের পাপ বা ভুলগুলোকে পরিষ্কার করে পূন্যে পরিনত করতে পারি, সুন্দর করে নিতে পারি আবার জীবনের পথ চলাকে। যত বড় গুনাহ হউক না কেনো, নিজেকে মহান রবের কাছে ইস্তেগফার ও তাওবার মাধ্যমে নিয়ে আসতে পারি প্রিয় বান্দা হবার পথে।
জীবনের সকল অবস্থায় বেশী বেশী তাওবা ও ইস্তেগফার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে যখনই কোন অসুখ বা বিপদ এসে যায় বা ব্যক্তি জীবনে বা সামাজিক জীবনেও কোন কিছুর খুব বেশী প্রয়োজন, তখন আরো বেশী করে তাওবাহ ইস্তেগফার করা প্রয়োজন। মহান আল্লাহ জানিয়েছেন-
আর তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাওবা কর। সূরা হুদ : ৩
তিনি আরো বলেন:
হে ঈমানদারগন! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর, বিশুদ্ধ তাওবা। সূরা আত-তাহরীম : ৮
কুর’আনের শিক্ষা হলো প্রথমে ইস্তেগফার করতে হবে এরপর তাওবা করতে হবে এবং সেটা হতে হবে বিশুদ্ধ। অন্তরে অনুশোচনা নিয়ে একমাত্র মহান রবের কাছেই আত্মসমর্পন করে দিতে হবে নিজের নফসকে।
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুলুল্লাহ সা. -কে বলতে শুনেছি : আমি দিনের মধ্যে সত্তর বারেরও বেশী আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তেগফার) করি ও তাওবা করি। সহিহ বুখারী
হাদীসে সত্তর সংখ্যাটি আধিক্য বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সংখ্যা বুঝাতে নয়।
তওবা শব্দের আভিধানিক অর্থ – ফিরে আসা। ইস্তেগফার অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা।
পরিভাষায় তওবা হল : যে সকল কথা ও কাজ মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তা থেকে ফিরে এসে ঐ সকল কথা ও কাজে লেগে যাওয়া, যা দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় ও তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা যায়।
এক কথায় পাপ-কর্ম থেকে ফিরে এসে সৎকাজে প্রবৃত্ত হওয়া।
তওবাতুন নাসূহ বা পরিশুদ্ধ তওবা প্রতিটি গোনাহগারের উপর ফরয। সকল গোনাহের জন্যও তওবা জরুরী -যেগুলো করতে আল্লাহ নিষেধ করেন, যেগুলো পরিহার ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে না।
পাপ বা অপরাধ দু ধরনের হয়ে থাকে :
১। যে সকল পাপ শুধুমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হক বা অধিকার সম্পর্কিত। যেমন শিরক করা, নামাজ আদায় না করা, মদ্যপান করা, সুদের লেনদেন করা ইত্যাদি।
২। যে সকল পাপ বা অপরাধ মানুষের অধিকার সম্পর্কিত। যে পাপ করলে কোন না কোন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন, জুলুম-অত্যাচার, চুরি-ডাকাতি, ঘুষ খাওয়া, অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্নসাৎ ইত্যাদি।
এখানে পর্দা না করাটা একটি বড় ধরনের গুনাহ যা একদিকে মহান রবের আনুগত্যহীনতার গুনাহ ও অপরদিকে মানুষের হক নষ্ট করার গুনাহ কারন বেপর্দার জন্য অন্যের চরিত্র ও পরিবারে অশান্তি এসে থাকতে পারে।
প্রথম প্রকার পাপ থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার সাথে পাঁচটি শর্তের উপস্থিতি জরুরী।
শর্ত পাঁচটি হল :
১। ইখলাস (অকপটতা),
২। পাপ কাজটি পরিহার করা।
৩। কৃত পাপটিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।
৪। ভবিষ্যতে আর এ পাপ করব না বলে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।
৫। তওবা কবুল হওয়ার সময়সীমার মধ্যে তওবা করা।
অর্থাৎ তওবা করতে হবে মৃত্যু শুরু হওয়ার পূর্বে(মৃত্যুর ফেরেশতা দেখার পূর্বে) এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় শুরু হওয়ার আগে। তিরমিযী: ৩৫৩৭, ইবনু মাজাহ: ৪২৫৩
দ্বিতীয় প্রকার পাপ থেকে তাওবা করার শর্ত হল মোট ছয়টি:
১। ইখলাস (অকপটতা),
২। পাপ কাজটি পরিহার করা।
৩। কৃত পাপটিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।
৪। ভবিষ্যতে আর এ পাপ করব না বলে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।
৫। পাপের কারণে যে মানুষটির অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে বা যে লোকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার পাওনা পরিশোধ করা বা যথাযথ ক্ষতিপুরণ দিয়ে তার সাথে মিটমাট করে নেয়া অথবা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে দাবী ছাড়িয়ে নেয়া।
৬। তওবা কবুল হওয়ার সময়সীমার মধ্যে তওবা করা। শাইখ উছাইমীনের “লিকাউল বাব আল-মাফতুহ” ৫৩/৭৩
যে ব্যক্তি জীবনের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে তার তওবাও শুদ্ধ হবে। তার এ নিরাশার কারণ কোন রোগ হোক যেমন- ক্যান্সার। অথবা হত্যার শাস্তি তথা শিরোচ্ছেদের মুখোমুখি হওয়া এবং জল্লাদ তলোয়ার নিয়ে তার মাথার উপরে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে হোক। অথবা বিবাহিত ব্যক্তির ব্যভিচারের শাস্তি তথা ‘পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড’ কার্যকর করার জন্য পাথর স্তূপ করার কারণে হোক। এদের সবার তওবা শুদ্ধ হবে। কেননা মৃত্যুর গড়গড়া শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তওবা কবুল করেন। আল্লাহ তাআলার বাণী:
“অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদের তওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ।” সূরা নিসা: ১৭
“অনতিবিলম্বে তওবা করে” এ কথার অর্থ হলো- মৃত্যুর আগে তওবা করে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
“আর এমন লোকদের জন্য তওবা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে আমি এখন তওবা করছি।” সূরা নিসা: ১৮
আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার তওবাহ সে পর্যন্ত কবুল করবেন, যে পর্যন্ত তার প্রাণ কণ্ঠাগত না হয়।
তিরমিযী: ৩৫৩৭, ইবনু মাজাহ: ৪২৫৩
“কিন্তু যারা তাওবা করেছে, নিজেদের সংশোধন করেছে এবং বর্ণনা করেছে তারা হলো সেই লোক যাদের তাওবা আমি কবুল করবো এবং আমিই একমাত্র তাওবা কবুলকারী, দয়ালু।” সূরা আল বাকারা: ১৬০
এই উম্মতের প্রতি আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতসমূহের মধ্য থেকে একটি নেয়ামত এই যে, তিনি তওবার দরজা বন্ধ করেন নি। বরং জীবনের প্রতি মুহূর্তেই তওবার প্রতি মানুষকে উৎসাহ দিয়েছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে অন্তর্দৃষ্টি দান করেছেন তাকে সর্বদা সন্দেহাতীতভাবে তাওবার প্রতি গুরুত্ববহ থাকতে আদেশ করেছেন।
অনেকেই প্রশ্ন করেন আমার অতীতের গুনাহগুলোর কি হবে? এখন আমি বুঝতে পেরেছি যে, জীবনের অনেক মূল্যবান সময় পার করে ফেলেছি যা অনেক গুনাহ ছিল বা আল্লাহর দেয়া আদেশগুলোর আনুগত্য করা হয় নাই,তাহলে আমার কি হবে? এখন তাওবা করলেই কি আমার সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে? ইত্যাদি বিভিন্ন রকম মনের অবস্থায় প্রশ্ন করে থাকেন।
মহান আল্লাহ আমাদের এই (দুনিয়া) পরীক্ষার হলে ছেড়ে দিয়ে সব প্রশ্ন উত্তরসহ (কুর’আন ও সুন্নাহ) টেবিলে সামনে দিয়ে রেখেছেন এবং অনুমতি দিয়েছেন যেন পড়ে, দেখে দেখে উত্তর লিখি এবং সকলেই গোল্ডেন জিপি এ পাই। সেখানে পড়ে জানা যাবে কতসুন্দর করে মহান রব সবার মনের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রেখেছেন।
১. তওবা গুনাহ মুছে দেয়:
আল্লাহর রাসূল সা. বলেন:
“গোনাহ থেকে তওবাকারীর কোন গোনাহই থাকে না।” ইবন মাজাহ: ৪২৫০।
২. গুনাহকে নেকীতে রূপান্তরকারী :
আল্লাহ বলেন,
“কিন্তু যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও আমলে সালিহা করে, এদের সকল পাপরাশি নেকীতে রূপান্তর করে দেন আল্লাহ তা‘আলা।
আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” সূরা ফোরকান: ৬৯।
৩. তওবাকারীর হৃদয়কে পরিচ্ছন্ন করে দেয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“বান্দা যখন কোন গোনাহর কাজ করে তখন তার অন্তরে এক ধরনের কালো দাগ পড়ে যায়। যদি ইস্তেগফার করে তাহলে এই দাগ
দূরীভূত করে তার অন্তর সূচালু, ধারালো ও পরিশীলিত হবে। আর এই দাগের কথা কুরআনেই আছে, খবরদার! তাদের অন্তরে দাগ
রয়েছে যা তারা কামাই করেছে।” জামে তিরমিযি: ৩৩৩৪।
৪. তওবা সুখী সুন্দর জীবনের গ্যারান্টি
মহান আল্লাহ বলেন:
আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অনন্তর তারই প্রতি মনোনিবেশ কর।
তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং তিনি অধিক আমলকারীকে বেশি করে
দেবেন। সূরা হুদ: ৩
৫. তওবা রিযিক ও শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যম:
আল্লাহ তা‘আলা নূহ আলাইহিস সালামের ভাষায় বিধৃত করেন:
“তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র ধারায় বৃষ্টির নহর ছেড়ে দিবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।” সূরা নূহ: ১০-১২
৬. তওবা দুনিয়া-আখিরাতের সফলতা অর্জনের মাধ্যম
“যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও আমলে সালিহ করে, আশা করা যায় তারা সফলকাম হবে।” সূরা কাসাস-৬৭।
“পক্ষান্তরে যারা তওবা করবে, ঈমান আনবে ও আমলে সালিহ করবে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, কোন প্রকার যুলম করা হবে না।” সূরা মরিয়াম: ৬০
৭। মহান আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যম
“মহান আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।” সূরা আল বাকারা: ২২২
মহান আল্লাহ কত্তো মহান যে, কেউ অন্যায় করে ক্ষমা চাইলে ও মহান রবের দিকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেই তাকে সাদরে গ্রহন করে একটি নিশ্চিন্ত সুন্দর জীবনের উপায় উপাদানসহ দুনিয়ার ও আখেরাতের সফলতার অংগীকার করেছেন, সুবহানাল্লাহী ওয়া বিহামদিহী। মহান আল্লাহ ভালোবাসার ফল্গুধারা দিয়ে আশ্রয় দিয়ে থাকেন তাঁরই রহমতের ছায়ায়।
যে যেই অবস্থানে থেকে যতটুকু ভুল করে ফেলেছি, যত বড়ই হোক না কেনো, সব ভুলে দূরে ফেলে দিয়ে নতুন করে এখনই নিজেকে সঁপে দেই মহান রবের দরবারে। মুনাফিকী নীতি দিয়ে নয়, নিজেকে প্রবঞ্চিত রীতি দিয়ে নয়, খালেসভাবে মহান প্রতিপালকের সার্বক্ষনিক দাসে পরিণত হতে পরিচ্ছন্ন করে নেই নিজের আমল আখলাক। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
লক্ষ্য করলে বুঝা যায় কিভাবে একটি একটি করে দিন চলে গিয়ে, এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের মূল ঠিকানার দিকে? একেকদিন একেকটা ইস্যু করে সময় কত দ্রুত চলে যাচ্ছে! সময়ের কাজ কিন্তু বয়ে যাওয়া এবং মুমিনদের কাজ হলো সময়কে অর্থবহ করা, একটু ফিরে দেখিতো অর্থবহ সময়ের ব্যবহার হচ্ছে কিনা?
অস্তমিত সূর্যের ম্লান হয়ে যাওয়া একসময়ের দীপ্ত আলোর দৃশ্য দেখে মনে পড়ে যায় নিজ জীবনের পড়ন্ত বেলার কথা, মহান রবের দরবারে বেশী বেশী তাওবা ও ইস্তেগফার করে নিজেদের পবিত্র ও সুন্দর খালেস মুমিন হবার প্রত্যয় নেই। মহান আল্লাহ আমাদের সহায়।
তাওবা কিভাবে করবো
অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে যে কোন সময়ই নিজের গুনাহের ফলে অনুশোচনায় ব্যথিত হওয়া যে, নিজের উপর যুলুম করে ফেলেছেন, ভবিষ্যতে আর এই কাজ করবেন না ও মহান আল্লাহর আনুগত্যে অটল থাকবেন এই অংগীকার নিয়ে মহান আল্লাহর কাছেই ক্ষমা চাওয়া দিয়েই তাওবা করা হয়ে যায়।
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা রাত্রিবেলা তাঁর হস্ত প্রসারিত করেন যাতে দিবাভাগের গোনাহগুলোর তওবা কবুল করতে পারেন। ওদিকে দিনের বেলায় হস্ত প্রসারিত করেন যাতে রাতের গোনাহ তওবা গ্রহণ করতে পারেন।
সহীহ মুসলিম: ২৭৪৭।
আমাদের সমাজে প্রচলিত মৌলভী ডেকে এনে তাওবা পড়ানোর পদ্ধতি সঠিক নয়। তাওবা নিজে নিজেই করবে আত্মোপলব্ধির সাথে। কেউ কাউকে তাওবা করে দিতে পারেন না। পূর্বে উল্লেখিত শর্তসমূহ মেনে চলে অনুতপ্ত হয়ে যে কোন সময়ই তাওবাতুন নাসূহা(উত্তম তাওবা) করতে পারেন।
তবে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য বিশেষভাবে যে নফল সালাত আদায় করা হয়, তাকে ‘সালাতুত তাওবাহ’ বলা হয়।
আবুবকর রা. হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহসা.-কে বলতে শুনেছি যে, কোন লোক যদি গোনাহ করে। অতঃপর উঠে দাঁড়ায় ও পবিত্রতা অর্জন করে এবং দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে। অতঃপর আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।
আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী, তিরমিযী, হাদীছ হাসান; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৫৯; মিশকাত হা/১৩২৪ ‘ঐচ্ছিক ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৩৯; আলে ইমরান ৩/১৩৫।
উক্ত সালাত দুই বা চার রাক‘আত ফরয কিংবা নফল পূর্ণ ওযূ ও সুন্দর রুকূ-সিজদা সহকারে হ’তে হবে। আহমাদ হা/২৭৫৮৬; সহীহাহ হা/৩৩৯৮; সহীহ আত-তারগীব হা/২৩০।
আপনি বলে দিন, (আল্লাহ বলেন) হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহ তায়ালার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ (অতীতের) সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু।” সূরা আয্ যুমার: ৫৩
তওবার জন্য নিম্নের দো‘আটি বিশেষভাবে সিজদায় ও শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে পাঠ করা যায়।
আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহে।
অনুবাদ : ‘আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি সেই আল্লাহর নিকটে যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্ব চরাচরের ধারক এবং তাঁর দিকেই আমি ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি’।
তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৩৫৩ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা’ অনুচ্ছেদ-৪।
সর্বোত্তম ইস্তেগফার হলো সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার—-
আল্লা-হুম্মা আন্তা রাব্বি লা— ইলাহ ইল্লা আন্ত্, খালাক্ক্ তানি- ওয়া আনা- ‘আব্দুক্, ওয়া আনা- ‘আলা- আহদিকা ওয়া ওয়াঅ’দিকা মাসতাত্বোত্, আউ-যুবিকা মিন্ শার্ রি মা- সোনাত্, আবু-উলাকা বিনঅমাতিকা আলাই, ওয়া আবু-উ বিযাম্বি, ফাগফিরলি- ফাইন্নাহু লা- ইয়াগফিরুয্ যুনুবা ইল্লা আন্ত্
হে আল্লাহ! তুমি আমার রব, তুমি ছাড়া আর কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ, আর আমি তোমার বান্দা, আমি তোমার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের উপর যথাসাধ্য প্রতিষ্ঠিত আছি, আমি যা করছি তাঁর অনিষ্ট হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, আমার উপর তোমার যে নি‘আমত রয়েছে আমি তা স্বীকার করছি, এবং আমি আমার অপরাধও স্বীকার করছি, তাই তুমি আমাকে ক্ষমা কর, নিশ্চয়ই তুমি ব্যতীত অন্য কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না। (সহীহুল বুখারী)
রাব্ বিগ্ ফিরলি
হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা কর।
আল্লা-হুম্মাগ্ ফিরলি-, ওয়ার্ হামনি- ওয়াহদিনি- ওয়া‘আ-ফিনি- ওয়ারযুক্বনি-
হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, আমাকে দয়া কর, আমাকে হিদায়াত দাও, আমাকে নিরাপত্তা দাও, আমাকে জীবিকা দাও। (সহীহ মুসলিম)