أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
১০ : ১০৪ قُلۡ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنۡ كُنۡتُمۡ فِیۡ شَكٍّ مِّنۡ دِیۡنِیۡ فَلَاۤ اَعۡبُدُ الَّذِیۡنَ تَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَ لٰكِنۡ اَعۡبُدُ اللّٰهَ الَّذِیۡ یَتَوَفّٰىكُمۡ ۚۖ وَ اُمِرۡتُ اَنۡ اَكُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۰۴﴾ۙ
বলুন, হে মানুষ! তোমরা যদি আমার দ্বীনের প্রতি সংশয়যুক্ত হও তবে জেনে রাখ, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর আমি তাদের ইবাদত করি না। বরং আমি ইবাদাত করি আল্লাহর যিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং আমি মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি,
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে আদেশ করছেন যে, তুমি সকল মানুষকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দাও যে, তোমার তরীকা এবং মুশরিকদের তরীকা এক নয়, এক অপর থেকে ভিন্ন।
যদি তোমরা আমার দ্বীন সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ কর, যাতে একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত হয় এবং এটাই সত্য দ্বীন, অন্য কোন দ্বীন নয়, তাহলে মনে রেখো যে, আমি তোমাদের সেই (বাতিল) উপাস্যদের কখনই ও কোন অবস্থাতেই উপাসনা করব না, যাদের উপাসনা তোমরা কর। জীবন ও মৃত্যু তাঁরই হাতে। ফলে তিনি যখন ইচ্ছা তোমাদেরকে ধ্বংস করতে পারেন। কারণ মানুষের প্রাণ তাঁরই হাতে আছে।
لَاۤ اَعۡبُدُ مَا تَعۡبُدُوۡنَ
‘আমি তার ইবাদাত করি না যার ইবাদাত তোমরা কর
وَ لَاۤ اَنۡتُمۡ عٰبِدُوۡنَ مَاۤ اَعۡبُدُ ۚ
এবং তোমরাও তাঁর ইবাদতকারী নও, যাঁর ইবাদত আমি করি। সূরা কাফিরুনঃ২-৩
وَ لَاۤ اَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدۡتُّمۡ ۙ﴿
এবং আমি ইবাদতকারী নই তার, যার ইবাদত তোমরা করে থাক।
وَ لَاۤ اَنۡتُمۡ عٰبِدُوۡنَ مَاۤ اَعۡبُدُ ؕ﴿۵﴾
এবং তোমরা তাঁর ইবাদতকারী নও, যাঁর ইবাদত আমি করি।
তোমাদের দ্বীন (শিরক) তোমাদের জন্য এবং আমার দ্বীন (ইসলাম) আমার জন্য। সূরা কাফিরুনঃ৪-৬
একই বাক্য একবার বর্তমানকালের জন্যে এবং একবার ভবিষ্যৎকালের জন্যে উল্লেখ করা হয়েছে। [ফাতহুল বারী] অর্থাৎ আমি এক্ষণে কার্যত তোমাদের উপাস্যদের ইবাদত করি না এবং তোমরা আমার উপাস্যের ইবাদত কর না এবং ভবিষ্যতেও এরূপ হতে পারে না। ইমাম তাবারীও এ মতটি বর্ণনা করেছেন। ইবনে কাসীর এখানে অন্য একটি তাফসীর অবলম্বন করেছেন।
এই আয়াতে মুমিন হওয়ার জন্য আদেশপ্রাপ্ত হওয়ার কথা উল্লেখ হয়েছে, আবার সূরা যুমার-১২ নং আয়াতে মুসলিম হওয়ার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে।
وَ اُمِرۡتُ لِاَنۡ اَكُوۡنَ اَوَّلَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ ﴿۱۲
আরও আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি, আমি যেন প্রথম মুসলিম হই। সূরা যুমারঃ১২
মুমিন ও মুসলিমের মাঝে পার্থক্য আছে কি?
যিনি ইমান ইনেছেন তিনিই মুমিন এবং যিনি ইসলাম গ্রহন করেছেন তিনিই মুসলিম।
দ্বীনের স্তর হচ্ছে তিনটি :
(১) ঈমান, যা ছয়টি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহর উপরে বিশ্বাস, ফেরেশতাগণ, আসমানী কিতাবসমূহ, নবী ও রাসূলগণ, ক্বিয়ামত দিবস এবং তাক্বদীরের ভালো-মন্দের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।
(২) ইসলাম, যা পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। কালেমা শাহাদত, ছালাত, যাকাত, ছিয়াম ও হজ্জ।
(৩) ইহসান, যা একনিষ্ঠচিত্তে ও পূর্ণ ইখলাছের সাথে আল্লাহর ইবাদত করাকে বুঝায়। অর্থাৎ এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করা যেন বান্দা আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছে অথবা আল্লাহ স্বীয় বান্দাকে দেখছেন।
পূর্ণ ঈমানের সাথে সকল প্রকার সৎকর্ম ইসলাম ও ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। আর সেগুলি পূর্ণ ইখলাছের সাথে সম্পাদন করা ইহসানের অন্তর্ভুক্ত। এটিই হ’ল দ্বীনের সর্বোচ্চ স্তর। উল্লিখিত তিনটি বিষয় হাদীছে জিব্রীলে বর্ণিত হয়েছে (বুখারী হা/৫০, মুসলিম হা/৯; মিশকাত হা/২)।
ঈমানের শাব্দিক অর্থ হলো- স্বীকার করা, সত্যায়ন করা।
আর ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ করা, আনুগত্য করা, মেনে নেয়া ইত্যাদি।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইবনে রজব হাম্বালী, ইমাম ইবনে কাছীর, শায়খ ইবনে বায, শায়খ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহর নির্দেশাবলীর সামনে আনুগত্যের মাথা নতকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে মুসলিম বলা হয়। এই দিক দিয়ে প্রত্যেক মুমিনই মুসলিম। তাই প্রথমে তাদের জন্য মুমিন শব্দ ব্যবহার করা হয় এবং পরে আবার তাদেরই জন্য মুসলিম শব্দ ব্যবহার করা হয়। এ থেকে প্রমাণ করা হয়েছে যে, লক্ষ্যার্থে উভয় শব্দের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, যদিও অনেকে পার্থক্য করে থাকেন। কুরআনে কোথাও মুমিন আবার কোথাও মুসলিম শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সেটা কিন্তু আরবী অভিধানে যে অর্থগুলো বলা হয়েছে সে দিক থেকে। কাজেই আভিধানিক প্রয়োগের তুলনায় শরী‘আতের পরিভাষাই বেশি প্রযোজ্য।
কখনো কখনো ঈমান ও ইসলাম শব্দদ্বয় একই সঙ্গে ব্যবহৃত হয়, আবার কখনো কখনো একে অপর থেকে পৃথকভাবেও ব্যবহৃত হয়। যখন ঈমান ও ইসলাম শব্দদ্বয় একই সঙ্গে ব্যবহৃত হয়, তখন কিন্তু এরা পৃথক পৃথক অর্থে ব্যবহৃত হয়। তখন অভ্যন্তরীণ আমলকে ঈমান বলা হয়, আর বাহ্যিক আমলকে ইসলাম বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে শারঈ পরিভাষার দিক দিয়ে উভয় শব্দের মধ্যে পার্থক্য শুধু ততটুকুই, যতটুক হাদীছে জিবরীল দ্বারা প্রমাণিত (ছহীহ বুখারী, হা/৫০; ছহীহ মুসলিম, হা/৯)।
সুতরাং এখানে ঈমান ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে। ইসলাম বলতে বুঝানো হয়েছে, বাহ্যিক আমল অর্থাৎ মুখের স্বীকারোক্তি ও দৈহিক আমলকে। আর ঈমান বলতে বুঝানো হয়েছে, অভ্যন্তরীণ আমল যথা অন্তরের বিশ্বাসকে। যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: ‘বেদুঈনরা বলে, ‘আমারা ঈমান আনলাম’। বলুন, ‘তোমরা ঈমান আননি, বরং তোমারা বল, ‘আমরা আত্মসমর্পণ করেছি’ (অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করেছি)। কারণ ঈমান এখনো তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। আর যদি তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর তবে তিনি তোমাদের আমলসমূহের ছওয়াব সামান্য পরিমাণও লাঘব করবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আল-হুজুরাত : ১৪)।
এখানে ঈমানকে অন্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এই আয়াত থেকে বুঝা যায়, ইসলামের থেকে ঈমান মর্যাদার দিক দিয়ে অনেক ঊর্ধ্বে। কেননা ইসলাম কখনো কখনো মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকে, আবার কখনো কখনো মুনাফিক্বদেরও বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকে। আর যখন ঈমান ও ইসলাম একে অপর থেকে পৃথকভাবে ব্যবহৃত হয়, তখন কিন্তু এরা একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। তাই কেউ যদি বলে, ‘আমি মুমিন’ অথবা ‘আমি মুসলিম’ এখানে দু’য়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এই দিক দিয়ে প্রত্যেক মুমিনই মুসলিম এবং প্রত্যেক মুসলিমই হল মুমিন। আর যাঁরা মুমিন ও মুসলিমের মধ্যে পার্থক্য করেন, তাঁরা বলেন যে, এ কথা ঠিকই যে, এখানে কুরআন একই দলের জন্য মুমিন ও মুসলিম শব্দ ব্যবহার করেছে, তবে এর মধ্যে যে পার্থক্য আছে। সেই দিক দিয়ে প্রত্যেক মুমিন হল মুসলিম, কিন্তু প্রত্যেক মুসলিম মুমিন নাও হতে পারে। তাই বলা যেতে পারে, যদি ঈমান ও ইসলাম শব্দদ্বয় একই বাক্যে আসে, তাহলে ‘ইসলাম’ অর্থ হবে প্রকাশ্য আমল। আর ‘ঈমান’ অর্থ হবে আভ্যন্তরীণ বিশ্বাস। অথবা অভ্যন্তরীণ জিনিসগুলোর প্রতি বিশ্বাস রাখার নাম হল ঈমান এবং বিধি-বিধান ও ফরয কার্যাদি পালন করার নাম হল ইসলাম। যাই হোক এটা একটি ইলমী মতভেদ। আর প্রত্যেক দলের কাছে স্ব স্ব মতের পক্ষে দলীলও আছে। (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ৭/১৩-১৫, ৭/৪২১-৪২৪ ও ৪৭২-৪৭৪; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ র্দাব ইবনে বায, ৪/১৯৭; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল ইবনে উছাইমীন, ১/৪৭-৪৯, ৪/৯২ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৪৮৭৯৩)।
১০ : ১০৫ وَ اَنۡ اَقِمۡ وَجۡهَكَ لِلدِّیۡنِ حَنِیۡفًا ۚ وَ لَا تَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡمُشۡرِكِیۡنَ ﴿۱۰۵﴾
(আর আল্লাহ আমাকে এও আদেশ করেছেন যে), তুমি নিজেকে ধর্মের উপর একনিষ্ঠভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখ এবং কখনই অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
অর্থাৎ “নিজের চেহারাকে স্থির করে নিন।” এর অর্থ, আপনি এদিক ওদিক, সামনে, পেছনে, ডানে, বাঁয়ে মুড়ে যাবেন না। একেবারে বরাবর সোজা পথে দৃষ্টি রেখে চলুন, যেপথ আপনাকে দেখানো হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে – অর্থাৎ সব দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে শুধুমাত্র একদিকে মুখ করে থাকুন। কাজেই দাবী হচ্ছে, এ দ্বীন, আল্লাহর বন্দেগীর এ পদ্ধতি এবং জীবন যাপন প্রণালীর ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত-বন্দেগী, দাসত্ব, আনুগত্য করতে ও হুকুম মেনে চলতে হবে। এমন একনিষ্ঠভাবে করতে হবে যে, অন্য কোন পদ্ধতির দিকে সামান্যতম ঝুঁকে পড়াও যাবে না। অন্য আয়াতেও সে নির্দেশ এসেছে, যেমন,
“কাজেই আপনি একনিষ্ঠ হয়ে নিজ চেহারাকে দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত রাখুন। আল্লাহর ফিতরাত (স্বাভাবিক রীতি বা দ্বীন ইসলাম), এর উপর (চলার যোগ্য করে) তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন; আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না [সূরা আর-রুম: ৩০]
যারা আল্লাহর সত্তা, তাঁর গুণাবলী, অধিকার ও ক্ষমতা-ইখতিয়ারে কোনভাবে অন্য কাউকে শরীক করে কখনো তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আমি তোমাদের উপর দাজ্জালের চেয়েও যা বেশী ভয় করছি তা কি বলে দিবনা? আমরা বললামঃ হ্যাঁ, তিনি বললেনঃ ‘শির্কে খফী’। আর তা হলোঃ কোন মানুষ অপরের সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোন নেক আমল করা। [মুসনাদে আহমাদ ৩/৩০]
قُلۡ اِنِّیۡۤ اُمِرۡتُ اَنۡ اَعۡبُدَ اللّٰهَ مُخۡلِصًا لَّهُ الدِّیۡنَ ﴿ۙ۱۱﴾
বলুন, আমি তো আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি, আল্লাহর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর ‘ইবাদাত করতে; সূরা যুমারঃ ১১ বল, ‘আমার রব ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন আর তোমরা প্রত্যেক সিজদার সময় তোমাদের চেহারা সোজা রাখবে এবং তাঁরই ইবাদাতের জন্য একনিষ্ঠ হয়ে তাঁকে ডাক। যেভাবে তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, সেভাবে তোমরা প্রথমে ফিরে আসবে। (০৭. আরাফ ২৯)
আর তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে এবং সালাত কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে। আর এটাই সঠিক দ্বীন। সূরা বাইয়্যেনাহঃ ৫
১০ : ১০৬ وَ لَا تَدۡعُ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مَا لَا یَنۡفَعُكَ وَ لَا یَضُرُّكَ ۚ فَاِنۡ فَعَلۡتَ فَاِنَّكَ اِذًا مِّنَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۱۰۶﴾
আর আপনি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকবেন না, যা আপনার উপকারও করে না, অপকারও করে না, কারণ এটা করলে তখন আপনি অবশ্যই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
যদি আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্যকে ডাক, যে কারোর উপকার-অপকার করতে পারে না, তাহলে তা যুলম (অন্যায়) হবে।
যুলম (অন্যায়) হল, وضع الشي في غير محله (কোন বস্তুকে তার নিজ স্থান থেকে সরিয়ে অন্য স্থানে রাখা।) ইবাদত একমাত্র সেই আল্লাহর হক, যিনি সমস্ত জগৎ সৃষ্টি করেছেন এবং জীবনধারণের সমস্ত উপকরণের ব্যবস্থাপনাও তিনিই করেছেন। সুতরাং সেই ইবাদতের অধিকারী ব্যতীত অন্য কারোর ইবাদত করলে, ইবাদতকে (যথাস্থানে না রেখে) বড় ভুল স্থানে রাখা হয়। এই জন্যই শিরককে বড় যুলম (মহা অন্যায়) বলা হয়েছে। এখানে যদিও সম্বোধিত নবী (সাঃ); কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সকল মানুষ ও উম্মতে মুহাম্মাদীই উদ্দিষ্ট।
জুলুম’ একটি বড় পাপ। জুলুম অতীতের নেক আমলগুলো নষ্ট করে দেয়, ভবিষ্যতের জন্য ডেকে আনে কঠিন পরিণতি। জুলুমের কারণে লোকে ঘৃণা করে, মজলুম বদদুআ করে। সর্বোপরি আল্লাহর অসন্তুষ্টি নেমে আসে জুলুমের কারণে। জুলুমের শাস্তি ও পরিণতিও সুদূরপ্রসারী। দুনিয়া ও আখেরাত, সবখানে জুলুমকারী শাস্তি পেতে থাকে।
জুলুম কেবল অন্যের প্রতি নয়, নয় কেবল বান্দার হক নষ্ট করার মাধ্যমে; জুলুম হয় নিজের প্রতিও- বিভিন্ন গোনাহ ও শরীয়তের হুকুম লঙ্ঘনের মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَ مَنْ يَّتَعَدَّ حُدُوْدَ اللهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهٗ..
কেউ আল্লাহর (স্থিরীকৃত) সীমারেখা লঙ্ঘন করলে, সে তো তার নিজের উপরই জুলুম করল। -সূরা ত্বলাক (৬৫) : ১
আল্লাহর হুকুমের সামান্য বরখেলাফও যে নিজের প্রতি জুলুম, সেই অনুভূতি জাগ্রত হয়েছিল মানবের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু, মানবজাতির পিতা হযরত আদম আ.-এর পবিত্র হৃদয়ে। তাই তিনি বলেছিলেন-
رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ اَنْفُسَنَا وَ اِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَ تَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِيْنَ.
হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজ সত্তার উপর জুলুম করে ফেলেছি। আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন ও আমাদের প্রতি রহম না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অকৃতকার্যদের অন্তভুর্ক্ত হয়ে যাব। -সূরা আরাফ (৭) : ২৩
প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটি বিষয়ও স্মরণ রাখতে পারি। অন্যের প্রতি অন্যায়-অনাচার করার যে জুলুম সেটিও কেবল অন্যের প্রতি নয়; প্রকারান্তরে নিজের প্রতিই জুলুম। এর ফলে জুলুমকারীর দুনিয়া ও আখেরাত বরবাদ হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَّ لَا تُمْسِكُوْهُنَّ ضِرَارًا لِّتَعْتَدُوْا و مَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَه.
(স্ত্রীদেরকে) কষ্ট দেওয়ার লক্ষ্যে এজন্য আটকে রেখ না যে, তাদের প্রতি জুলুম করতে পারবে। যে ব্যক্তি এরূপ করবে, সে স্বয়ং নিজ সত্তার প্রতিই জুলুম করল। বাকারা : ২৩১
আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে শিরককে সবচেয়ে বড় জুলুম আখ্যায়িত করেছেন। লোকমান আ. তাঁর ছেলেকে উপদেশ দিয়েছিলেন এই বলে-
يٰبُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللهِ. اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ.
হে পুত্র! আল্লাহর সাথে শিরক করো না। নিশ্চয়ই শিরক অনেক বড় জুলুম -লুকমান : ১৩
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَ لَمْ يَلْبِسُوْۤا اِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓىِٕكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَ هُمْ مُّهْتَدُوْنَ.
(প্রকৃতপক্ষে) যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে জুলুমের সাথে মিশ্রিত করেনি, নিরাপত্তা ও স্বস্তি তো কেবল তাদেরই অধিকার এবং তারাই সঠিক পথে পেঁৗছে গেছে। -সূরা আনআম (৬) : ৮২
মুফাস্সিরীনে কেরাম বলেন, এখানে ‘জুলুম’ অর্থ শিরক।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, যখন আয়াতটি নাযিল হল, সাহাবায়ে কেরামের কাছে বিষয়টি অনেক কঠিন এবং চাপের হয়ে গেল। তাঁরা বললেন-
أَيُّنَا لَمْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ؟
ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে নিজের প্রতি অবিচার করে না?
তখন নবীজী বললেন, তোমরা যেমনটা বুঝেছ, তেমনটা নয়। লোকমান আ.-তাঁর সন্তানকে বলেছেন- إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
নিশ্চয় শিরক বিরাট জুলুম। -তাফসীরে ইবনে আবী হাতেম ৪/১৩৩৩; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/২৯৪
আল্লামা তাবারী রাহ. লেখেন- ولم يلبسوا إيمانهم بظلم، أي: بشرك.-তাফসীরে তাবারী, ১১/৪৯৩
মূসা আ.-এর গোত্রের কিছু লোক যখন বাছুরের পূজা করেছিল, তিনি তাদের লক্ষ্য করে বললেন- يٰقَوْمِ اِنَّكُمْ ظَلَمْتُمْ اَنْفُسَكُمْ بِاتِّخَاذِكُمُ الْعِجْلَ.
হে আমার সম্প্রদায়! বাছুরকে উপাস্য বানিয়ে প্রকৃতপক্ষে তোমরা নিজেরা নিজেদের প্রতিই জুলুম করেছ। -সূরা বাকারা (২) : ৫৪
এছাড়াও কুরআন কারীমের আরও আয়াতে আল্লাহর সাথে শিরক করাকে জুলুম আখ্যায়িত করা হয়েছে।
১০ : ১০৭ وَ اِنۡ یَّمۡسَسۡكَ اللّٰهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَ ۚ وَ اِنۡ یُّرِدۡكَ بِخَیۡرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضۡلِهٖ ؕ یُصِیۡبُ بِهٖ مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖ ؕ وَ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۰۷﴾
১০৭. আর যদি আল্লাহ আপনাকে কোন ক্ষতির স্পর্শ করান, তবে তনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর যদি আল্লাহ আপনার মঙ্গল চান, তবে তাঁর অনুগ্রহ প্রতিহত করার কেউ নেই। তার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে তার কাছে সেটা পৌঁছান। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
মঙ্গল বা উত্তম বস্তুকে এখানে এই জন্য ‘ফায্ল’ বা অনুগ্রহ বলেছেন যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দার সাথে যে ভাল ব্যবহার করে থাকেন, আমলের দিক থেকে যদিও বান্দা তার অধিকারী নয়; তবুও এটা তাঁর অনুগ্রহ বা দয়া যে, তিনি মানুষের আমল না দেখে তার উপর রহম ও দয়া করে থাকেন।
অন্যত্রও আল্লাহ্ তা’আলা এ কথা বলেছেন। যেমন, “আর যদি আল্লাহ আপনাকে কোন দুর্দশা দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর যদি তিনি আপনাকে কোন কল্যাণ দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি তো সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” [সূরা আল-আনআমঃ ১৭]
ইমাম বাগভী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন, ‘একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উটে সওয়ার হয়ে আমাকে পিছনে বসিয়ে নিলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেনঃ হে বৎস! আমি আরয করলামঃ আদেশ করুন, আমি হাযির আছি। তিনি বললেনঃ তুমি আল্লাহর বিধি-বিধানকে হেফাযত করবে, আল্লাহ তোমাকে হেফাযত করবেন। তুমি আল্লাহর বিধি-বিধানকে হেফাযত করো তাহলে আল্লাহকে সাহায্যের সাথে তোমার সামনে পাবে। তুমি শান্তি ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময় আল্লাহকে স্মরণ রাখলে, বিপদের সময় তিনি তোমাকে স্মরণ রাখবেন। কোন কিছু চাইতে হলে তুমি আল্লাহর কাছেই চাও এবং সাহায্য চাইতে হলে আল্লাহর কাছেই চাও।
জগতে যা কিছু হবে, ভাগ্যের লেখনী তা লিখে ফেলেছে। সমগ্র সৃষ্টজীব সম্মিলিতভাবে তোমার কোন উপকার করতে চাইলে যা তোমার তাকদিরে লিখা নেই তারা কখনো তা করতে পারবে না। পক্ষান্তরে যদি তারা সবাই মিলে তোমার এমন কোন ক্ষতি করতে চায়, যা তোমার ভাগ্যে নেই, তবে কখনোই তারা তা করতে সক্ষম হবে না। যদি তুমি বিশ্বাস সহকারে ধৈর্যধারণের মাধ্যমে আমল করতে পার তবে অবশ্যই তা করো। সক্ষম না হলে ধৈর্য ধর। কেননা, তুমি যা অপছন্দ করো তার বিপক্ষে ধৈর্য ধারণ করায় অনেক মঙ্গল রয়েছে। মনে রাখবে, আল্লাহর সাহায্য ধৈর্যের সাথে জড়িত-কষ্টের সাথে সুখ এবং অভাবের সাথে স্বাচ্ছদ্য জড়িত। [মুসনাদে আহমাদ: ১/৩০৭]
ইষ্টানিষ্টের মালিক এবং সারা জাহানে সর্বপ্রকারের কর্তৃত্বকারী কেবল আল্লাহই। তাঁর বিচার-ফায়সালাকে খন্ডাবার মত কেউ নেই। একটি হাদীসে এই বিষয়টাকে এইভাবে বর্ণনা করা হয়েছে,
اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ)) ‘‘হে আল্লাহ! তুমি যা দান কর, তা কেউ রোধ করতে পারে না। আর তুমি যা রোধ কর, তা কেউ দিতেও পারে না। আর ধনীদের ধন তোমার আযাব থেকে বাঁচতে কোন উপকারে আসবে না। (বুখারীঃ ই’তিসাম অধ্যায়, মুসলিম, সালাত ও মাসাজিদ অধ্যায়) নবী করীম (সাঃ) প্রত্যেক ফরয নামাযের পর এই দু’আটি পাঠ করতেন।
১০ : ১০৮ قُلۡ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ قَدۡ جَآءَكُمُ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّكُمۡ ۚ فَمَنِ اهۡتَدٰی فَاِنَّمَا یَهۡتَدِیۡ لِنَفۡسِهٖ ۚ وَ مَنۡ ضَلَّ فَاِنَّمَا یَضِلُّ عَلَیۡهَا ۚ وَ مَاۤ اَنَا عَلَیۡكُمۡ بِوَكِیۡلٍ ﴿۱۰۸﴾ؕ
১০৮. বলুন, হে লোকসকল! অবশ্যই তোমাদের রবের কাছ থেকে তোমাদের কাছে সত্য এসেছে। কাজেই যারা সৎপথ অবলম্বন করবে তারা তো নিজেদেরই মঙ্গলের জন্য সৎপথ অবলম্বন করবে এবং যারা পথভ্রষ্ট হবে তারা তো পথভ্রষ্ট হবে নিজেদেরই ধ্বংসের জন্য এবং আমি তোমাদের উপর কর্মবিধায়ক নই
হক বা সত্য হল কুরআন ও দ্বীন ইসলাম। যাতে আল্লাহর একত্ত্ববাদ ও মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর রিসালাতের উপর ঈমান অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তার ফল সে নিজেই ভোগ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে।
তার ক্ষতি ও শাস্তি তার নিজের উপরেই বর্তাবে, কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। সুতরাং কেউ হিদায়াতের পথ অনুসরণ করলে তাতে আল্লাহর শক্তিতে কোন বৃদ্ধিলাভ হবে না এবং যদি কেউ কুফরী ও ভ্রষ্টতাকে বেছে নেয়, তবে তাতে আল্লাহর সার্বভৌমতত্ত্ব ও শক্তিতে কোন পার্থক্য পড়বে না। সুতরাং ঈমান ও হিদায়াতের জন্য অনুপ্রাণিত করা এবং কুফরী ও ভ্রষ্টতা থেকে বিরত থাকার জন্য তাকীদ ও ভীতি-প্রদর্শন করা, উভয়েরই উদ্দেশ্য হল, মানুষের মঙ্গল কামনা করা। আল্লাহর নিজস্ব কোন উদ্দেশ্য বা স্বার্থ নেই।
অর্থাৎ, আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি যে, আমি তোমাদেরকে সর্বাবস্থাতে মুসলিম বানিয়ে ছাড়ব। বরং আমি তো শুধু সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী, দ্বীনপ্রচারক ও তার আহবায়ক। আমার কাজ হল শুধু মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দেওয়া, অবাধ্যদেরকে আল্লাহর আযাব ও তাঁর পাকড়াও থেকে ভীতি-প্রদর্শন করা এবং আল্লাহর বাণীর দাওয়াত ও তবলীগ করা। এই দাওয়াত মেনে কেউ ঈমান আনলে ভাল। আর কেউ না মানলে, আমার দায়িতত্ত্ব এ নয় যে, আমি তাকে জোর করে তা মানাবো। ইরশাদ হয়েছে–
যারা সৎপথ অবলম্বন করবে, তারা তো নিজেদেরই মঙ্গলের জন্যই সৎপথ অবলম্বন করবে এবং যারা পথভ্রষ্ট হবে, তারা নিজেদেরই ধ্বংসের জন্যই হবে এবং কেউ অন্য কারো ভার বহন করবে না আর আমি রসূল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দিই না। বনী ইসরাইলঃ ১৫
কুরআনের অন্যত্রও আল্লাহ তা’আলা তা বলেছেন, যেমন, “যে সৎকাজ করে সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং কেউ মন্দ কাজ করলে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। আপনার রব তাঁর বান্দাদের প্রতি মোটেই যুলুমকারী নন।” [সূরা ফুসসিলাত: ৪৬; সূরা আল-জাসিয়াহ: ১৫]
আরও বলেন, “যে কুফরী করে কুফরীর শাস্তি তারই প্রাপ্য; আর যারা সৎকাজ করে তারা নিজেদেরই জন্য রচনা করে সুখশয্যা।” [সূরা আর-রূম: ৪৪] আরও বলেন,
“অবশ্যই তোমাদের রব এর কাছ থেকে তোমাদের কাছে চাক্ষুষ প্রমাণাদি এসেছে। অতঃপর কেউ চক্ষুষ্মান হলে সেটা দ্বারা সে নিজেই লাভবান হবে, আর কেউ অন্ধ সাজলে তাতে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর আমি তোমাদের উপর সংরক্ষক নই।” [সূরা আল-আনআম: ১০৪]
আরও বলেন, “যে সৎপথ অবলম্বন করে সে তা করে নিজেরই কল্যাণের জন্য এবং যে বিপথগামী হয় সে তো বিপথগামী হয় নিজেরই ধ্বংসের জন্য আর আপনি তাদের তত্ত্বাবধায়ক নন।” [সুরা আয-যুমার: ৪১]
প্রত্যেক ব্যক্তির একটি স্বতন্ত্র নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। নিজের ব্যক্তিগত পর্যায়ে আল্লাহর সামনে এ জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে। এ ব্যক্তিগত দায়িত্বের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি তার সাথে শরীক নেই।
তবে অন্যত্র যে বলা হয়েছে, “ওরা নিজেদের ভার বহন করবে এবং নিজেদের বোঝার সাথে আরো কিছু বোঝা” [সূরা আল-আনকাবূত: ১৩] এবং আরও যে এসেছে, “ফলে কিয়ামতের দিন তারা বহন করবে তাদের পাপের বোঝা পূর্ণ মাত্রায় এবং তাদেরও পাপের বোঝা যাদেরকে তারা অজ্ঞতাবশত বিভ্রান্ত করেছে”। [সূরা আন-নাহল: ২৫]
১০ : ১০৯ وَ اتَّبِعۡ مَا یُوۡحٰۤی اِلَیۡكَ وَ اصۡبِرۡ حَتّٰی یَحۡكُمَ اللّٰهُ ۚۖ وَ هُوَ خَیۡرُ الۡحٰكِمِیۡنَ ﴿۱۰۹﴾
১০৯. আর আপনার প্রতি যে ওহী নাযিল হয়েছে আপনি তার অনুসরণ করুন এবং আপনি ধৈর্য ধারণ করুন যে পর্যন্ত না আল্লাহ ফয়সালা করেন, আর তিনিই সর্বোত্তম ফয়সালাপ্রদানকারী। আল্লাহ তাআলা যা প্রত্যাদেশ করেন, তা শক্তভাবে ধর, যা আদেশ করেন, তা পালন কর, যে জিনিস থেকে নিষেধ করেন, সে জিনিস থেকে বিরত থাক এবং কোন বিষয়ে শৈথিল্য করো না। আর অহী অনুযায়ী চলতে যে কষ্ট হবে, বিরোধীদের পক্ষ থেকে যে কষ্ট আসবে এবং দাওয়াত ও তবলীগের পথে যে সমস্যার সম্মুখীন হবে, সব কিছুর উপর ধৈর্য ধারণ কর এবং শক্তভাবে সব কিছুর মোকাবিলা কর।
কারণ, তাঁর জ্ঞান পরিপূর্ণ, তাঁর ক্ষমতা ও শক্তি অপরিসীম এবং তাঁর করুণাও সর্বব্যাপী। ফলে তাঁর থেকে উত্তম বিচারক ও ফায়সালাদাতা আর কে হতে পারে?
আল্লামা শানকীতী বলেন, এখানে নবী ও তার শত্রুদের মাঝে কি ফয়সালা করেছেন সেটা বর্ণনা করেননি। অন্য আয়াতে অবশ্য তা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, তিনি কাফেরদের উপর নবী ও তার অনুসারীদেরকে বিজয় দিয়েছেন। তার দ্বীনকে অপরাপর সমস্ত দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, “যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আর আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনি আপনার রবের প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী। [সূরা আন-নাসর] আরও বলেন,
“নিশ্চয় আমরা আপনাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয় যেন আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যত ক্রটিসমূহ মার্জনা করেন এবং আপনার প্রতি তার অনুগ্রহ পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন এবং আল্লাহ আপনাকে বলিষ্ঠ সাহায্য দান করেন। [সূরা আল-ফাতহঃ ১–৪]
আরও বলেন, “তারা কি দেখে না যে, আমরা এ যমীনকে চতুর্দিক থেকে সংকুচিত করে আনছি? আর আল্লাহই আদেশ করেন, তার আদেশ রদ করার কেউ নেই এবং তিনি হিসেব গ্রহণে তৎপর।” [সূরা আর-রাদ: ৪১]
অনুরূপ “তারা কি দেখছে না যে, আমরা যমীনকে চারদিক থেকে সংকুচিত করে আনছি।” [সূরা আল-আম্বিয়া: ৪৪] [আদওয়াউল বায়ান]
নির্দেশ আল্লাহর হাতেই। তিনি তাঁর সৃষ্টিকে যা ইচ্ছা তা নির্দেশ দেন। তিনিই ফয়সালা করেন। যেভাবে ইচ্ছা ফয়সালা করেন। কাউকে মর্যাদায় উপরে উঠান আবার কাউকে নীচু করেন। কাউকে জীবিত করেন, কাউকে মারেন। কাউকে ধনী করেন, কাউকে ফকীর করেন। তিনি ফয়সালা দিচ্ছেন যে, ইসলাম সম্মানিত হবে এবং সমস্ত ধর্মের উপর বিজয়ী থাকবে। [ফাতহুল কাদীর] তার নির্দেশ খণ্ডনকারী কেউ নেই। তাঁর নির্দেশের পিছু নিয়ে কেউ সেটাকে রদ করতে বা পরিবর্তন করতে পারবে না। তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। সেটা অনুসারে কাফেরদেরকে তিনি দ্রুত শাস্তি দিবেন আর মুমিনদেরকে দ্রুত সওয়াব দিবেন। [কুরতুবী]