সন্তান গঠনে পর্যায়ক্রমিক শিক্ষাদানের ছোট একটি সিলেবাসঃ জন্মের পর ১-২ বছর

সন্তান গঠনে পর্যায়ক্রমিক শিক্ষাদানের ছোট একটি সিলেবাসঃ

অভিজ্ঞতার আলোকে একটি ছোট্ট সিলেবাস উল্লেখ করা হলো। এটা একটি পরামর্শভিত্তিক সিলেবাস। আপনারা নিজের মত করে এর আলোকে   আরো কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে নিতে পারেন।

ইউনিসেফের একটি জড়িপের আলোকে শিশুদের ধারাবাহিক বয়সে বিভিন্ন স্বাভাবিক আচরনের পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন তুলে ধরে সাথে কিছু টিপস দেয়া হলো। সকল শিশুই এইভাবে একইরকম পরিবর্তন নাও আসতে পারে। বয়সের তারতম্যে কিছু আগে পরে হতে পারে তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত বয়সে এই পরিবর্তন আশা করা যায়।

জন্মের ১-২ বছরঃ

 

   একটি শিশুর স্বাভাবিক আচরন যা হওয়া উচিৎঃ

 

  • দু-একটি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারে।
  • সর্বোচ্চ ১০-২০ মিনিট পর্যন্ত হাটতে পারে। ঊঁচুতে চড়া এবং দৌড়োনো
  • পেনসিল বা কলম হাতের মুঠোয় নিয়ে কাগজে এলোমেলো দাগ দিতে ভালবাসে।
  • নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়। কমান্ড বুঝতে শিখে।
  • সুরের প্রতি ভালবাসা জন্ম নেয়।
  • গোসলের প্রতি হয় আগ্রহ বাড়ে না হয় কমে।
  • কিছু কিছু কথা শুনে সেগুলো বলার চেষ্টা করে।
  • প্রিয়জনদের ডাকতে চায় বা পারে।
  • সাধারণ গল্প বা গানে মজা পাওয়া
  • অন্যদের ব্যবহার নকল করা,নিজে নিজে খাওয়া শুরু করা
  • আয়নায় প্রতিচ্ছবি দেখে খুব আনন্দিত হয়, নানা রকমের মুখভঙ্গী করে।
  • বলে হালকা লাথি দিতে পারে।
  • একটার উপর আরেকটা জিনিস রাখতে সক্ষম হয়।
  • পরিবেশভেদে শিশুর শব্দভান্ডার ২০০ বা ততাধিক অর্থপূর্ণ শব্দে উন্নিত হয়।
  • tense বা কালের ব্যবহারে শুদ্ধতা আনার চেষ্টা করে।
  • রাগ, ক্ষোভ, হতাশা জাতীয় অনুভুতি বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হওয়া শুরু করে যা ৩ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
  • নবজাতক শিশুর প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
  • স্ট্রেঞ্জার এঞ্জাইটি কমা শুরু করে।

 

লক্ষ্য রাখতে হবে ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াঃ

দাঁড়াতে চায় কিন্তু পারে না।

কথা বলতে বা শুনতে আগ্রহী নয়।

কমাণ্ড বুঝে না,ক্ষিধের অভাব

অন্যদের প্রতি প্রতিক্রিয়ার অভাব

হাঁটার সময় ভারসাম্য ঠিক রাখতে অসুবিধা

অস্বাভাবিকভাবে কোন অংগের অতিরিক্ত নাড়া চাড়া যেমন- হাত বা মাথা

একই কথা একই সময় বার বার বলা

 

সিলেবাস ও করনীয়ঃ 

  • মা বাবার সান্নিধ্যেই বেশী সময় রাখা।
  • নির্দিষ্ট সময়ে যেমন সকাল ও বিকালে যিকিরগুলো নিজে করা ও শিশুকে একটি একটি করে শেখানোর প্রচেষ্টা চালানো।
  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে কুর’আন তেলাওয়াত শুনানো।
  • আযান এর জবাব ও সালাত আদায়ের সময় সাথে নিয়ে করা।
  • সুর দিয়ে তেলাওয়াত করতে উদ্বুদ্ধ করা।
  • আদর দিয়ে সুন্দর করে ডাক দেয়া ও তাকেও অভ্যস্থ করা যেন জবাব প্রতিক্রিয়া যেন সুন্দর হয়।
  • নিজে সুন্দর করে গল্প বলুন বা সুন্দর ঘটনা বলুন।
  • কনষ্ট্রাক্টিভ খেলায় শিশুকে যুক্ত করুন। ছবি আঁকার মাধ্যমে কিছু শেখানো।
  • বাচ্চার সাথে পড়ুন, শিশুকে বই দিন পড়ার জন্য(ভাববে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে অন্যদের মত)
  • বাচ্চাকে বিপজ্জনক জিনিষ এড়িয়ে যেতে শেখান
  • বাচ্চার সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলুন, বাচ্চাদের মত করে কথা বলবেন না
  • বুকের দুধ খাওয়ানো চালু রাখুন এবং নিশ্চিত করুন যেন বাচ্চা যথেষ্ট খাবার পায় এবং বাড়ীর অন্য খাবারও বাচ্চাকে খেতে উৎসাহ দিন, জোর করে নয় বুঝিয়ে গল্পের ছলে।
  • সাধারণ কিছু নিয়ম এবং যুক্তিসংগত কিছু প্রত্যাশা বলে বুঝতে দিন
  • বাচ্চার করা কাজের জন্য প্রশংসা করুন
  • পরিবারের কিছু নিয়ম আছে সেটা সকলেই পালন করে বুঝতে দিন।

 

বর্জনীয় কাজঃ  

সাজ গোজের ও আয়নার সামনে থাকা বেশী উৎসাহিত করা

রাগ বা অভিমান করার দিকে খুব বেশী নজর দেয়া

ভালো কাজের পর কোন প্রতিক্রিয়া না দেখানো

খারাপ কাজ করে ফেললে অতিরিক্ত বকা বা প্রতিক্রিয়া দেখানো

ভুল করে ফেললে নির্লিপ্ত থাকা বা কিছু না বলা

শিশুর অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া বা মেনে নেয়া

অন্যের সামনেই শিশুর ভুলগুলো তুলে ধরা

অন্যের সামনে শিশুর যা নেই তা বলে প্রশংসা করা