‘ ছবি ব্লগ-পরিবার গঠন-১
সন্তান মাতা-পিতার কাছে আমানত। সন্তানের হৃদয় নকশা- ইমেজমুক্ত এক সরল-স্বচ্ছ মুক্তা, যা যেকোনো নকশা- ইমেজ ধারণ করতে প্রস্তুত। তাকে যে দিকেই হেলানো হবে সে সে দিকেই ঝুঁকে পড়বে। যা কিছু উত্তম ও ভালো তা যদি তাকে শেখানো হয়, তাকে যদি এগুলোর প্রতি অভ্যস্ত করে নেয়া হয় তবে সেভাবেই সে বড় হবে। ফলে তার মাতা-পিতা দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্যবান হবে। তার উস্তাদ ও আদব-কায়দার শিক্ষকগণও তৃপ্তি অনুভব করবে। এর বিপরীতে তাকে যদি খারাপ বিষয়ে অভ্যস্ত করা হয়, জন্তু জানোয়ারের মতো তাকে লাগামহীন করে দেওয়া হয়, তাহলে সে ভাগ্যবিড়ম্বিত হবে, অতঃপর নিক্ষিপ্ত হবে ধ্বংসের গহ্বরে। আর এর দায়ভার বর্তাবে তাদের ঘাড়ে যারা ছিল তার কর্ণধার, যাদের দায়িত্ব ছিল তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার। (ইমাম গাজালি রহ.)
‘ ছবি ব্লগ-পরিবার গঠন-৪
—আদর্শ মায়ের বৈশিষ্ট্য—
- আল্লাহর খাঁটি অনুগত বান্দাহ
- প্রতিটি কাজে শিরক মুক্ত থাকা
- সময়ের মূল্যায়ন ও ভারসাম্য রেখে চলা।
- বেহুদা কাজ থেকে দূরে থাকা
- মোনাফিকীর স্বভাব থেকে দূরে থাকা
- কথা ও কাজের বাস্তব মিল রেখে চলা
- আচরনে উদ্ধত বা অহংকার না থাকা
- মেজাজের ভারসাম্য রাখা
- কোমল, মায়াবী হওয়া ও সন্তানের যত্ন নিজ হাতে করা
- সচেতন, পরিশ্রমী ও ধৈর্য্যশীল হওয়া
- পরোপকারী ও মিতব্যয়ী হওয়া
- সিদ্ধান্ত নেয়া ও সঠিক সিদ্ধান্তে অটল থাকা
- উচ্চস্বরে কথা বা হাসা পরিহার করা
- আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া
- নিজেকে আদর্শ হিসেবে উদাহরন রাখা
প্রতিটা গুনকেই বিশ্লেষন করে নিজের বাস্তব জীবনের সাথে একাত্ম করতে হবে। এই দুনিয়াতে আমরা এসেছি কিছুদিন ও কিছু কাজের আঞ্জাম দেয়ার জন্য, সময় শেষ হলেই আবার ফিরে যেতে হবে স্থায়ী জীবনের ঘরে। আপনি কি চান না সুন্দর একটা বাগানসহ বাড়ীর মালিকানা যেখানে শুধুই শান্তি- আরো অনেক কিছু -যা মহান আল্লাহতা’আলা প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাতী নারীর জন্য।
‘
ছবি ব্লগ-পরিবার গঠন-৫
আজ পরিবারের একটি অতি প্রয়োজনীয় অথচ অবহেলিত দিক তুলে ধরবো ইন শা আল্লাহ। আজকের অধিকাংশ পরিবারে বাবা-মা কর্মজীবী হওয়াতে দেখা যায়, যে শিক্ষা বা দিকনির্দেশনা পাওয়ার কথা পিতা মাতার কাছ থেকে তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সন্তানেরা। বিশেষ করে পিতারা মনে করেন মায়ের প্রধান দায়িত্ব সন্তানের সব দেখা শুনা করা আবার মা মনে করেন আমি একা সব কেনো করব? এর ফলে সিল পাটা ঘষা ঘষি চলে আর মাঝে যা থাকে তার বারোটা বাজে। সন্তানের জীবনের সুন্দর সময়গুলো মূল্যবান শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। মূলত পিতা মাতা উভয়েই সমান জবাবদিহীর কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন আখেরাতের মাঠে সন্তানের প্রতিপালনের ব্যপারে। যার যার অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন মূলত নিজের আখেরাতের পথকে বিপদমুক্ত করা। একজন যদি এই দায়িত্ব পালন না করেন তাতে অপরজনের দায়িত্ব পালনে অবহেলা না করে বরং মহান রবের ভয় ও সন্তুষ্টির আশায় নিজের দায়িত্ব এহসান সহকারে পালন করে যাওয়া যেন-
- সন্তানেরা যথাসময়ে মূল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়।
- মহান রবের দেয়া দায়িত্ব অনুভূতি বাড়ানোর প্রচেষ্টা রাখা সংগীর প্রতি।
- মহান রবের কাছে দু’আ করা
- সন্তানকে কার্যকরি সময়দান
এবার শ্রদ্ধার সাথে প্রশ্ন করছি যারা সন্তানের পিতা তাদের প্রতি আপনারা কি এইভাবে তুলে ধরেছেন যে, মহান আল্লাহ কত সুন্দর করে মূল্যায়ন করে সন্তানের প্রতি একজন পিতার শিক্ষাকে কুর’আনে তুলে ধরেছেন এবং একটি সূরার নাম দিয়েছেন সেই জ্ঞানী ব্যক্তিটির নামে। এটা আমাদের সমাজের প্রতিটি পরিবারের পিতাদের প্রতি অনেক বড় দিক নির্দেশনা মহান আল্লাহর তরফ হতে। একজন পিতা তার সন্তানকে কি শিক্ষা দিবেন কিভাবে দিবেন তা উল্লেখ রয়েছে আমাদের জীবন বিধানে-এটা কতজন পিতা জানেন এবং যারা জানেন কতটুকু অনুসরন করেন সত্যি তা বিবেককে নাড়া দিয়ে যায়!
আজ পিতারা বাইরের কর্মজগত থেকে ফিরে এসে ক্লান্ত দেহে নিজেই খেয়ে দেয়ে বিভিন্ন ডিভাইস নিয়ে বসে যান এবং পাশেই সন্তানকে তথাকথিত রাইমস মিউজিক বা গেমস বা কার্টুন মুভি বিভিন্ন নাজায়েজ মিশ্রিত শিক্ষার নামে তুলে দিয়ে নিজেকে খুব গর্বিত পিতা ভাবছেন। একবারও কি মনে হয় না আজকের রাত যদি শেষ রাত হয় তাহলে সন্তানকে আপনি কি তুলে দিয়ে গেলেন? দায়িত্বের কতটুকু পালন করলেন?
মহান আল্লাহ আমাদের সময় থাকতে সচেতন হয়ে মহান রবের অনুগত জীবনের সাফল্যের দিকে চলার তাওফিক দান করুন।
মহান আল্লাহ বলেছেন–
“আর স্মরণ কর, যখন লোকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল…।”
প্রথম উপদেশ: “হে প্রিয় বৎস আল্লাহর সাথে শিরক করো না, নিশ্চয় শিরক হল বড় যুলুম।”
দ্বিতীয় উপদেশ: “আর আমি মানুষকে তার মাতাপিতার ব্যাপারে [সদাচরণের] নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে, তাকে গর্ভে
ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর।
প্রত্যাবর্তন-তো আমার কাছেই।”
তৃতীয় উপদেশ: “আর যদি তারা তোমাকে আমার সাথে শিরক করতে জোর চেষ্টা করে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তখন তাদের
আনুগত্য করবে না। এবং দুনিয়ায় তাদের সাথে করবে সদ্ভাবে। আর আমার অনুসরণ কর তার পথ, যে আমার অভিমুখী হয়।
তারপর আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব, যা তোমরা করতে।
চতুর্থ উপদেশ: “হে আমার প্রিয় বৎস! নিশ্চয় তা [পাপ-পুণ্য] যদি সরিষা দানার পরিমাণও হয়, অত:পর তা থাকে পাথরের মধ্যে কিংবা আসমান সমূহে বা জমিনের মধ্যে, আল্লাহ তাও নিয়ে আসবেন; নিশ্চয় আল্লাহ সুক্ষ্মদর্শী
সর্বজ্ঞ।”
পঞ্চম উপদেশ: “হে আমার প্রিয় বৎস সালাত কায়েম কর”,
ষষ্ঠ উপদেশ: “তুমি ভালো কাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজ হতে মানুষকে নিষেধ কর। বিনম্র ভাষায় তাদের দাওয়াত দাও, যাদের তুমি দাওয়াত দেবে তাদের সাথে কোন প্রকার কঠোরতা করো না।
সপ্তম উপদেশ: “যে তোমাকে কষ্ট দেয় তার উপর তুমি ধৈর্য ধারণ কর।”
অষ্টম উপদেশ: “আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।”
নবম উপদেশ: “অহংকার ও হঠকারিতা প্রদর্শন করে জমিনে হাটা চলা করবে না।“নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” যারা নিজেকে বড় মনে করে এবং অন্যদের উপর বড়াই করে, মহান আল্লাহ
তা‘আলা তাদের পছন্দ করে না।
দশম উপদেশ: নমনীয় হয়ে হাটা চলা করা।
একাদশ উপদেশ: নরম সূরে কথা বলা। তোমার আওয়াজ নিচু কর। নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল, গাধার আওয়াজ।