সূরা মূলক- ২য় (১২- ২১ আয়াত)

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

إِنَّ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُم بِالْغَيْبِ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ

১২) যারা না দেখেও তাদের রবকে ভয় করে, নিশ্চয়ই তারা লাভ করবে ক্ষমা এবং বিরাট পুরষ্কার৷

১২নিশ্চয়, যারা্‌,  ভয় করে্‌ ,  তাদের রবকে,  অদেখা অবস্থায়, لَهُم তাদের জন্য  ক্ষমা,  এবং প্রতিদান,

বড়

মহান রাব্বুল আ’লামীন এখানে কারা ক্ষমা ও বিরাট পুরস্কার পাবে তা উল্লেখ করেছেন। যারা মহান আল্লাহকে না দেখেও ভয় পায় অর্থাৎ যাদের আল্লাহভীতি রয়েছে, তারা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ মহান রবের সিফাত সমূহ মনে রেখেই রবের আনুগত্যে অটল থাকে ও গুনাহ থেকে দূরে থাকে।

আল কুর’আনে অন্য আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি-

‘পক্ষান্তরে যে স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় করে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই  হবে তার আবাস।’-সূরা নাযিআত ৭৯ : ৪০-৪১

তাকওয়া বা আল্লাহভীতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলেছেন :

‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক সম্মানিত যিনি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সব কিছু জানেন এবং সব বিষয়ে অবহিত।’ (হুজরাত ১০)

‘হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যেন লক্ষ্য করে যে, সে আগামী দিনের জন্য কি সামগ্রীর ব্যবস্থা করে রেখেছে। আল্লাহকেই ভয় করতে থাক। আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাদের সেসব আমল সম্পর্কে অবহিত যা তোমরা কর।’ (হাশর ১৮)

‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর, তাকে যেরূপ ভয় করা উচিত। তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (আল ইমরান ১০২)

‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল ইলম সম্পন্ন লোকেরাই তাঁকে ভয় করে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহাশক্তিশালী ও ক্ষমাকারী।’ (ফাতির ২৮)

‘আল্লাহ তো তাদের সঙ্গে রয়েছেন, যারা তাকওয়া সহকারে কাজ করে এবং ইহসান অনুসারে আমল করে।’ (নাহল ১২৮)

‘আর সফলকাম হবে ওইসব লোক যারা আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম পালন, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর নাফরমানী হতে দূরে থাকে।’ (নূর ৫২)

মহান আল্লাহ শুধু আখেরাতেই পুরস্কার দিবেন তা কিন্তু বলেন নি, তাকওয়ার পুরস্কার দুনিয়াতেও ব্যক্তি লাভ করে, আর তা মহান আল্লাহই জানিয়েছেন।

হে মোমিনরা, যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো, তবে আল্লাহ তোমাদের ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ পার্থক্য করার শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়।’ (সূরা আনফাল : ২৯)।

আল্লাহ পাক আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য একটা পথ করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে দান করেন যা সে কল্পনাও করে না।’ (সূরা তালাফ : ২-৩) ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার কাজকে সহজ করে দেন।’ (সূরা তালাক : ৪)।

আতিয়া আস-সাদী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোন ব্যক্তি পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা যেসব কাজে গুণাহ নেই তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত খোদাভীরু লোকদের শ্রেণীভুক্ত হতে পারে না। (তিরমিযি ও ইবনে মাজা)

আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে আয়েশা। ছোটখাট গুণাহর ব্যাপারেও সতর্ক হও। কেননা এ জন্যও আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। (ইবনে মাজা)

ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর নির্ধারিত রিযিক পূর্ণমাত্রায় লাভ না করা পর্যন্ত কোন লোকই মারা যাবে না। সাবধান! আল্লাহকে ভয় কর এবং বৈধ পন্থায় আয় উপার্জনের চেষ্টা কর। রিযিকপ্রাপ্তিতে বিলম্ব যেন তোমাদেরকে অবৈধ পন্থা অবলম্বনে প্ররোচিত না করে। কেননা আল্লাহর কাছে যা কিছু রয়েছে তা কেবল আনুগত্যের মাধ্যমে লাভ করা যায়। (ইবনে মাজা)

হাসান ইবনে আলী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জবান মুবারক হতে এই কথা মুখস্থ করে নিয়েছি, যে জিনিস সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেয় তা পরিত্যাগ করে যা সন্দেহের ঊর্ধ্বে তা গ্রহণ কর। কেননা সততাই শান্তির বাহন এবং মিথ্যাচার সন্দেহ সংশয়ের উৎস। (তিরমিযি)

তাকওয়ার ৩টি স্তর রয়েছে। যথা,

১. প্রথমস্তর: কুফর ও শিরক থেকে মুক্ত থাকার মাধ্যমে আল্লাহর আযাব থেকে বেঁচে থাকা। এই অর্থে একজন সাধারণ মুসলমানকেও মুত্তাকী বলা যাবে, তার থেকে কোনো গুনাহ প্রকাশ পেলেও। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এই অর্থেও তাকওয়া শব্দের ব্যবহার হয়েছে।

২. দ্বিতীয়স্তর: আল্লাহ ও তার রাসূল কর্তৃক অপছন্দনীয় যাবতীয় বিষয় থেকে বেঁচে থাকা। এমনকি সগীরা গুনাহ থেকেও। এই স্তরের তাকওয়ার উপর ভিত্তি করেই কুরআন হাদিসের বিভিন্ন কল্যাণ ও মর্যাদার কথা বলা হয়েছে।

৩. তৃতীয়স্তর: অন্তরকে আল্লাহ ব্যতিত যাবতীয় বিষয় থেকে মুক্ত রাখা। এই স্তরের তাকওয়া নবী ও আওলিয়াগণের হয়ে থাকে। আর এটিই তাকওয়ার সর্বোচ্চ স্তর।

কুরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,

ذَلِكَ الْكِتَابُ لَارَيْبَ فِيهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ

‘এই সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত।’ [সূরা বাকারা, আয়াত: ২]

তাকওয়া দৃশ্যমান কোন বস্তু নয়। এটা মূলত মানুষের আভ্যন্তরীন গুণ বিশেষ।

তাকওয়ার স্থান সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা 🙂 বলেন, তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি এখানে থাকে,  একথা বলে তিনি তিনবার নিজের বুকের দিকে ইশারা করলেন। তাকওয়া যেহেতু অন্তরে থাকে তাই আল্লাহর রাসূল (সা:) অন্তর পরিষ্কার করার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, মনে রেখ, নিশ্চয়ই মানুষের শরীরে একটি গোশত পিন্ড আছে যা, ঠিকথাকলে সমস্ত দেহই ঠিক থাকে। আর তার বিকৃতি ঘটলে সমস্ত দেহেরই বিকৃতি ঘটে। সে গোশতের টুকরাটি হলো “অন্তর”। (বুখরী,মুসলিম)

বিশিষ্ট দার্শনিক ইমাম গাজ্জালী র বলেন, তাকওয়ার স্তর হচ্ছে চারটি_

* শরিয়ত যেসব বস্তু হারাম করেছে, সেসব বস্তু থেকে বিরত থাকা। যেমন মদ-সুদ, জুয়া, জেনা ব্যভিচার ইত্যাদি। এটা সাধারণ মোমিনের তাকওয়া এ শ্রেণীর মুত্তাকিকে বলা হয় মোমিন।

* হারাম বস্তু থেকে বিরত থাকার পর সন্দেহযুক্ত হালাল বস্তুগুলো থেকে দূরে থাকা। এ শ্রেণীর মুত্তাকিকে বলা কথা হয় সালেহ।

* যাবতীয় হারাম বস্তু ও সন্দেহযুক্ত হালাল বস্তুগুলো থেকে দূরে থাকার পর আল্লাহ তায়ালার ভয়ে অনেক সন্দেহবিহীন হালাল বস্তুও পরিত্যাগ করে_ এ শ্রেণীর লোককে বলা যায় মুত্তাকি।

* উপরিউক্ত তিন শ্রেণীর তাকওয়া আয়ত্ত করার পর এমনসব হালাল বস্তু পরিত্যাগ করা, যা ইবাদতে কোনোরূপ সহায়তা করে না। এ শ্রেণীর মুত্তাকিকে বলা হয় সিদ্দিক।

তাকওয়ার রুপভেদে প্রকারঃ

নীচের সূরা আরাফ (২০১-২০২) আয়াত থেকে দুই ধরনের অবস্থা জানা যায়।

﴿إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ﴾

২০১) প্রকৃতপক্ষে যারা মুক্তাকী, তাদেরকে যদি কখনো শয়তানের প্রভাবে অসৎ চিন্তা স্পর্শও করে যায় তাহলে তারা তখনই সতর্ক হয়ে উঠে তারপর তারা নিজেদের সঠিক কর্মপদ্ধতি পরিষ্কার দেখতে পায়৷

﴿وَإِخْوَانُهُمْ يَمُدُّونَهُمْ فِي الْغَيِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُونَ﴾

২০২) আর তাদের অর্থাৎ (শয়তানের ) ভাই-বন্ধুরা তো তাদেরকে তাদের বাঁকা পথেই টেনে নিয়ে যেতে থাকে এবং তাদেরকে বিভ্রান্ত করার ব্যাপারে তারা কোন ত্রুটি করে না৷

আল্লাহ তাআলা এ দুই আয়াতে মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য ও ‘ইখওয়ানুশ শায়াতীন’-এর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। অন্য ভাষায় বলা যায়, ‘ইবাদুর রাহমান’ ও ‘ইবাদুশ শাইতান’ তথা আল্লাহর বান্দা ও শয়তানের বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন।

‘ইবাদুর রাহমান’আবার দুই মান থাকেঃ

১ম মানঃ গোনাহ ত্যাগ করা

গুনাহের পরিস্থিতি তৈরি হলে আল্লাহকে স্মরণ করা এবং গুনাহ ত্যাগ করা তাকওয়ার একটি প্রকার। এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার কাছে মুত্তাকী হিসাবে গণ্য। যেমনঃ

কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى  فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى

‘পক্ষান্তরে যে স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় করে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই  হবে তার আবাস।’-সূরা নাযিআত ৭৯ : ৪০-৪১

২য় মানঃ  গোনাহ হয়ে গেলে ফিরে আসা

আল্লাহকে স্মরণ করার দ্বিতীয়  পর্যায় হল গুনাহ হয়ে যাওয়ার পর  স্মরণ করা। মুত্তাকী বান্দার কখনো কোনো গোনাহ হয় না, তা নয়। স্খলন হতে পারে, ভুল হতে পারে, কিন্তু তার বৈশিষ্ট্য হল, গুনাহ হয়ে গেলে মনে অনুতাপ জাগে, আল্লাহর ভয় জাগে এবং এই উপলব্ধি জাগে যে, আমি আমার পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছি। আর তখন সে তার  করণীয় স্পষ্ট দেখতে পায় যে, আমাকে এই অবস্থা থেকে ফিরতে হবেই। সে ব্যাকুল হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। এটিও তাকওয়ার একটি সত্মর এবং মুত্তাকীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের গুণাবলী বর্ণনা করেছেন, সেখানে আছে-

اَلَّذِيْنَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ

 

‘এবং যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের  জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া  কে পাপ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করে ফেলে জেনে বুঝে তাতে অটল থাকে না।-সূরা আলে ইমরানঃ১৩৫

আল্লাহ পাক রাতের বেলা তাঁর হাত প্রসারিত করেন যেন দিনের অপরাধী তাঁর দিকে ফিরে আসে। আবার দিনের বেলা তাঁর হাত প্রসারিত করেন যেন রাতের অপরাধী তাঁর দিকে ফিরে আসে। এবং এভাবে সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়া- অর্থাৎ কিয়ামতের আগ পর্যন্ত আল্লাহ পাক তাঁর গোনাহগার বান্দাদের জন্য তাঁর দয়া ও করুণা প্রসারিত রাখেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৫৯

আমি আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে কেউ যখন কোনো গুনাহ করে ফেলে এরপর (তার বোধোদয় হয় এবং সে ) উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, এরপর নামায পড়ে, এরপর আল্লাহর কাছে মাফ চায়, আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। এরপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৪০৬

 

وَأَسِرُّوا قَوْلَكُمْ أَوِ اجْهَرُوا بِهِ ۖ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ

১৩) তোমরা নীচু স্বরে চুপে চুপে কথা বলো কিংবা উচ্চাস্বরে কথা বলো (আল্লাহর কাছে দু”টো সমান) তিনি তো মনের অবস্থা পর্যন্ত জানেন৷  

أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ

১৪) যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই কি জানবেন না? অথচ তিনি সুক্ষ্মদর্শী ও সব বিষয় ভালভাবে অবগত৷

সৃষ্টি কর্তাই জানবেন সৃষ্টির ভিতরে বাইরে ভালো বা ত্রূটি সবকিছুই।

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মনের গোপন কথাও জানেন। ’ -সূরা ইমরান: ১১৯

আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আপনি বলে দিন, তোমরা বেশী জান, না আল্লাহ বেশী জানেন? (সূরা বাকারাঃ ১৪০)

নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু শোনেন, সব কিছু দেখেন।’ (সুরা : মুজাদালা, আয়াত : ১)

ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা।’ (সুরা : কাহ্ফ, আয়াত : ২৬)

‘হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা যখন পরস্পরে গোপন কথা বল, তখন গুণাহ, বাড়াবাড়ি ও রাসূলের নাফরমানির কথাবার্তা নয়, বরং সৎ কর্মশীলতা ও আল্লাহকে ভয় করে চলার (তাকওয়ার) কথাবার্তা বল এবং সেই আল্লাহকে ভয় করতে থাক যার দরবারে তোমাদেরকে হাশরের দিন উপস্থিত হতে হবে।’ (মুজাদালা ৯)

‘যেসব কাজ পূণ্য ও ভয়মূলক তাতে একে অপরকে সাহায্য কর, আর যা গুণাহ ও সীমা লংঘনের কাজ তাতে কারো একবিন্দু সাহায্য ও সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় কর, কেননা তাঁর দণ্ড অত্যন্ত কঠিন।’ (মায়েদা-২)

সৃষ্টি নিজের সম্পর্কে বেখবর বা অজ্ঞ থাকতে পারে৷ কিন্তু স্রষ্টা তার সম্পর্কে বেখবর থাকতে পারেন না৷ তোমাদের প্রতিটি শিরা -উপশিরা তিনিই সৃষ্টি করেছেন৷ তোমাদের হৃদপিষ্ড ও মস্তিষ্কের প্রতিটি স্নায়ূতন্ত্রীও তাঁর সৃষ্টি৷ তোমাদের প্রতিটি নিশ্বাস-প্রশ্বাস তিনি চালু রেখেছেন বলেই তা চালু আছে৷ তোমাদের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ তাঁর ব্যবস্থাপনার অধিনে কাজ করছে৷ তাই তোমাদের কোন বিষয় তাঁর আগোচারে কি করে থাকতে পারে?

এর একটি অর্থ হলো সূক্ষ্ম ও অনুভবযোগ্য নয় এমন পন্থায় কর্ম সম্পাদনকারী এবং আরেকটি অর্থ হলো গোপন তত্ত্বসমূহ সম্পর্কে জ্ঞানের অধিকারী৷

 

هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُولًا فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا مِن رِّزْقِهِ ۖ وَإِلَيْهِ النُّشُورُ

১৫) তিনিই তো সেই মহান সত্তা যিনি ভূপৃষ্ঠকে তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন৷ তোমরা এর বুকের ওপর চলাফেরা করো এবং আল্লাহর দেয়া রিযিক খাও৷ আবার জীবিত হয়ে তোমাদেরকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে৷

কে তিনি যিনি আকাশ সমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের জন্য আকশ থেকে পানি বর্ষণ করছেন তারপর তার সাহায্যে সদৃশ্য বাগান উৎপাদন করেছেন যার গাছপালাও উৎপন্ন করাও তোমাদের আয়াত্বধীন ছিল না? আল্লাহর সাথে কি (এসব কাজে অংশীদার) অন্য ইলাহও আছে? (না,) বরং এরাই সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে এগিয়ে চলছে৷নমলঃ ৬০

আর তিনি কে, যিনি পৃথিবীকে করেছেন অবস্থান লাভের উপযোগী এবং তার মধ্যে প্রবাহিত করেছেন নদ নদী এবং তার মধ্যেই গড়ে দিয়েছেন (পর্বত মালার) পেরেক, আর পানির দুটি ভান্ডারের মাঝখানে অন্তরাল সৃষ্টি করে দিয়েছেন৷আল্লাহর সাথে (এসব কাজের শরিক) অন্য কোন ইলাহ আছে কি? না, বরং এদের অধিকাংশই অজ্ঞ৷ নমল-৬১

পৃথিবী যে অজস্র ধরনের বিচিত্র সৃষ্টির আবাসস্থল ও অবস্থান স্থল হয়েছে এটাও কোন সহজ ব্যাপার নয়৷ যে বৈজ্ঞানিক সমতা ও সামঞ্জস্যশীলতার মাধ্যমে এ গ্রহটিকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে তার বিস্তারিত বিষয়াবলী সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করলে মানুষ বিস্ময়াভিভূত না হয়ে পারে না৷

সে অনুভব করতে থাকে, এমন ভারসাম্য ও সামঞ্জস্যশীলতা একজন জ্ঞানী, সর্বজ্ঞ ও পূর্ণ শক্তি সম্পন্ন সত্তার ব্যবস্থাপনা ছাড়া প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে না৷ এ ভূ-গোলকটি মহাশূন্যে ঝুলছে৷ কারো উপর ভর দিয়ে অবস্থান করছে না৷ কিন্তু এ সত্ত্বেও এর মধ্যে কোন কম্পন ও অস্থিরতা নেই৷

পৃথিবীর কোথাও মাঝে মধ্যে সীমিত পর্যায়ে ভূমিকম্প হলে তার যে ভয়াবহ চিত্র আমাদের সামনে আসে তাতে গোটা পৃথিবী যদি কোন কম্পন বা দোদুল্যমানতার শিকার হতো তাহলে এখনো মানব বসতি সম্ভবপর হতো না৷ এ গ্রহটি নিয়মিতভাবে সূর্যের সামনে আসে আবার পেছন ফেরে৷ এর ফলে দিনরাতের পার্থক্য সৃষ্টি হয়৷

যদি এর একটি দিক সব সময় সূর্যের দিকে ফেরানো থাকতো এবং অন্য দিকটা সব সময় থাকতো আড়ালে তাহলে এখানে কোন প্রাণী বসবাস করতে পারতো না৷ কারণ একদিকের সার্বক্ষণিক শৈত্য ও আলোকহীনতা উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্মলাভের উপযোগী হতো না এবং অন্যদিকের ভয়াবহ দাবদাহ প্রচণ্ড উত্তাপ তাকে পানিহীন, উদ্ভিদহীন ও প্রাণীহীন করে দিতো৷

এ ভূ-মণ্ডলের পাঁচশো মাইল উপর পর্যন্ত বাতাসের একটি পুরুস্তর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে৷ উল্কা পতনের ভয়াবহ প্রভাব থেকে তা পৃথিবীকে রক্ষা করে৷ অন্যথায় প্রতিদিন কোটি কোটি উল্কাপিণ্ড সেকেণ্ডে ৩০ মাইল বেগে পৃথিবী পৃষ্ঠে আঘাত হানতো৷ ফলে এখানে যে ধ্বংসলীলা চলতো তাতে মানুষ, পশু-পাখি, গাছ-পালা কিছুই জীবিত থাকতো না৷ এ বাতাসই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, সমুদ্র থেকে মেঘ উঠিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করে এবং মানুষ, পশু ও উদ্ভিদের জীবনে প্রয়োজনীয় গ্যাসের যোগান দেয়৷ এ বাতাস না হলে এ পৃথিবী কোন বসতির উপযোগী অবস্থানস্থলে পরিণত হতে পারতো না৷ এ ভূ-মণ্ডলের ভূ-ত্বকের কাছাকাছি বিভিন্ন জায়গায় খনিজ ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ বিপুল পরিমাণে স্তুপীকৃত করা হয়েছে৷ উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের জীবনের জন্য এগুলো একান্ত অপরিহার্য৷ যেখানে এ জিনিসগুলো থাকে না সেখানকার ভূমি জীবন ধারণের উপযোগী হয় না৷ এ গ্রহটিতে সাগর, নদী , হ্রদ, ঝরনা ও ভূগর্ভস্থ স্রোতধারার আকারে বিপুল পরিমাণ পানির ভাণ্ডার গড়ে তোলা হয়েছে৷

পাহাড়ের উপরও এর বিরাট ভাণ্ডার ঘনীভূত করে এবং পরে তা গলিয়ে প্রবাহিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এ ধরনের ব্যবস্থাপনা ছাড়া এখানে জীবনের কোন সম্ভাবনা ছিল না৷ আবার এ পানি, বাতাস এবং পৃথিবীতে অন্যান্য যেসব জিনিস পাওয়া যায় সেগুলোকে একত্র করে রাখার জন্য এ গ্রহটিতে অত্যন্ত উপযোগী মাধ্যাকর্ষণ (Gravitation) সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে৷ এ মাধ্যাকর্ষণ যদি কম হতো, তাহলে বাতাস ও পানি উভয়কে এখানে আটকে রাখা সম্ভব হতো না এবং তাপমাত্রা এত বেশী বেড়ে যেতো যে, জীবনের টিকে থাকা এখানে কঠিন হয়ে উঠতো৷

এ মাধ্যাকর্ষণ যদি বেশী হতো তাহলে বাতাস অনেক বেশী ঘন যেতো, তার চাপ অনেক বেশী বেড়ে যেতো এবং জলীয়বাষ্প সৃষ্টি হওয়া কঠিন হয়ে পড়তো ফলে বৃষ্টি হতো না, ঠাণ্ডা বেড়ে যেতো, ভূ-পৃষ্টের খুব কম এলাকাই বাসযোগ্য হতো বরং ভারীত্বের আকর্ষণ অনেক বেশী হলে মানুষ ও পশুর শারীরিক দৈর্ঘ্য-প্রস্থ কম হতো কিন্তু তাদের ওজন এত বেড়ে যেতো যে তাদের পক্ষে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে যেতো৷ তাছাড়া এ গ্রহটিকে সূর্য থেকে জনবসতির সবচেয়ে উপযোগী একটি বিশেষ দূরত্বে রাখা হয়েছে৷ যদি এর দূরত্ব বেশী হতো, তাহলে সূর্য থেকে সে কম উত্তাপ লাভ করতো, শীত অনেক বেশী হতো, এবং অন্যান্য অনেক জিনিস মিলেমিশে পৃথিবী নামের এ গ্রহটি আর মানুষের মতো সৃষ্টির বসবাসের উপযোগী থাকতো না৷

 

أَأَمِنتُم مَّن فِي السَّمَاءِ أَن يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ

১৬) যিনি আসমানে আছেন  তিনি তোমাদের মাটির মধ্যে ধসিয়ে দেবেন এবং অকস্মাৎ ভুপৃষ্ঠ জোরে ঝাঁকুনি খেতে থাকবে, এ ব্যাপারে কি তোমরা নির্ভয় হয়ে গিয়েছো? 

أَمْ أَمِنتُم مَّن فِي السَّمَاءِ أَن يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا ۖ فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ

১৭) যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের ওপর পাথর বর্ষণকারী হওয়া পাঠাবেন -এ ব্যাপরেও কি তোমরা নির্ভয় হয়ে গিয়েছো? তখন তোমরা জানতে পারবে আমার সাবধানবাণী কেমন? 

যেমন তিনি লূত সম্প্রদায় এবং হস্তীবাহিনীর (আবরাহার হাতি এবং তার সৈন্যের) উপর পাথর বর্ষণ করেছেন। পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করে তিনি তাদেরকে ধ্বংস করেছেন।

 

وَلَقَدْ كَذَّبَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيرِ

১৮) তাদের পূর্বের লোকেরাও মিথ্যা আরোপ করেছিল৷ ফলে দেখো, আমার পাকড়াও কত কঠিন হয়েছিল৷

أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ فَوْقَهُمْ صَافَّاتٍ وَيَقْبِضْنَ ۚ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلَّا الرَّحْمَٰنُ ۚ إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ بَصِيرٌ

১৯) তারা কি মাথার ওপর উড়ন্ত পাখীগুলোকে ডানা মেলতে ও গুটিয়ে নিতে দেখে না?রহমান ছাড়া আর কেউ নেই যিনি তাদেরকে ধরে রাখেন. নিশ্চয় তিনি সবকিছুর সম্যক দ্রষ্টা।

শূন্যে উড়ন্ত প্রতিটি পাখি করুণাময় আল্লাহর হিফাযতে থেকে উড়ে থাকে৷ তিনি প্রতিটি পাখিকে এমন দৈহিক কাঠামো দান করেছেন যার সাহায্য তারা উড়ে বেড়াবার যোগ্যতা লাভ করছে৷ তিনিই প্রতিটি পাখিকে উড়তে শিখিয়েছেন৷ তিনিই বাতাসকে এমন সব নিয়ম-কানুনের অধীন করে দিয়েছেন যে কারণে বাতাসের চেয়ে ভারী দেহের অধিকারী বস্তুসমূহের পক্ষেও বাতাসে ভর দিয়ে উড়া সম্ভব ৷ আর উড়তে সক্ষম প্রতিটি বস্তুকে তিনি শূণ্যে ধরে রাখেন৷ তা না হলে আল্লাহ তাঁর হিফাযত উঠিয়ে নেয়া মাত্রই তা মাটিতে পড়ে যেতো৷

অর্থাৎ গুটিকয়েক পাখির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়৷ বরং এ পৃথিবীতে যা আছে তা সবই আল্লাহর হিফাযত করার কারণে টিকে আছে৷ প্রতিটি জিনিসের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যেসব উপকরণ প্রয়োজন তা তিনিই যোগান দিচ্ছেন৷ তাঁর প্রতিটি সৃষ্টির কাছে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সামগ্রী ঠিকমত পৌছানোর ব্যবস্থা তিনিই করেন৷

“নিশ্চয়ই আমার পরওয়ারদেগারই প্রতিটি বস্তুর হেফাজতকারী।” (আল কুরআন-১১:৫৭)

“নিশ্চয় আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক।” (আল কুরআন-১৫:৯)

আল মু’মিন- নিরাপত্তাদাতা বা নিরাপদকারী। আল মুহায়মিনু- রক্ষণাবেক্ষণকারী।

لْمُهَيْمِنُ : সাক্ষী, রক্ষক, প্রভাবশালিতা ও আধিপত্য বিস্তারকারী।

আল্লাহ বলেন,

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ

তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্নশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র। [সূরা হাশর: ২৩]

আর আপনি অবশ্যই তাদেরকে জীবনের প্রতি অন্যসব লোকের চেয়ে বেশী লোভী দেখতে পাবেন, এমনকি মুশরিকদের চাইতেও। তাদের প্রত্যেকে আশা করে যদি হাজার বছর আয়ু দেয়া হত; অথচ দীর্ঘায়ু তাকে শাস্তি হতে নিষ্কৃতি দিতে পারবে না। তারা যা করে আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।বাকারাঃ৯৬

 বলুন, আমি কি তোমাদেরকে এসব বস্তু থেকে উৎকৃষ্টতর কোন কিছুর সংবাদ দেব? যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর পবিত্র স্ত্রীগণ এবং আল্লাহর নিকট থেকে সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ্‌ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। আলে ইমরানঃ১৫

أَمَّنْ هَٰذَا الَّذِي هُوَ جُندٌ لَّكُمْ يَنصُرُكُم مِّن دُونِ الرَّحْمَٰنِ ۚ إِنِ الْكَافِرُونَ إِلَّا فِي غُرُورٍ

২০) বলো তো, তোমাদের কাছে কি এমন কোন বাহিনী আছে যা রহমানের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে? বাস্তব অবস্থা হলো, এসব কাফেররা ধোঁকায় পড়ে আছে মাত্র৷ 

أَمَّنْ هَٰذَا الَّذِي يَرْزُقُكُمْ إِنْ أَمْسَكَ رِزْقَهُ ۚ بَل لَّجُّوا فِي عُتُوٍّ وَنُفُورٍ

২১) অথবা বলো,রহমান যদি তোমাদের রিযিক বন্ধ করে দেন তাহলে এমন কেউ আছে,যে তোমাদের রিযিক দিতে পারে? প্রকৃতপক্ষে এসব লোক বিদ্রোহ ও সত্য বিমুখতায় বদ্ধপরিকর৷ 

আর পৃথিবীতে কোন বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে।সূরা হুদ ১১:৬

আবার যখন তিনি তাকে পরীক্ষায় ফেলেন এবং তার রিযিক তার জন্য সংকীর্ণ করে দেন তখন সে বলে , আমার রব আমাকে হেয় করেছেন৷ফযরঃ১৬

তিনি সেই আল্লাহ, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন অতঃপর তোমাদের রিযিক দান করেছেন।’ (সূরা রূম ৪০)

তোমরা যা কর তা তো কেবল এই যে, মূর্তিপূজা কর ও মিথ্যা রচনা কর। নিশ্চিত জেন, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর তারা তোমাদেরকে রিযিক দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। সুতরাং আল্লাহর কাছে রিযিক সন্ধান কর, তাঁর ইবাদত ও তাঁর শোকরগোযারি কর। তাঁরই কাছে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।-সূরা আনকাবুত : ১৬-১৭

যদি আল্লাহ তাঁর সব বান্দাকে প্রচুর রিজিক দিতেন, তাহলে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা, সেই পরিমাণ (রিজিক) অবতীর্ণ করেন।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ২৭)

‘তারা কি তোমার পালনকর্তার অনুগ্রহ বণ্টন করে? আমিই তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি পার্থিব জীবনে এবং তাদের একজনের মর্যাদা অন্যজনের ওপর উন্নীত করেছি, যাতে তারা একে অন্যকে সেবকরূপে গ্রহণ করতে পারে।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৩২)

আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, কখনো ভয়ভীতি, কখনো অনাহার দিয়ে, কখনো তোমাদের জানমাল ও ফসলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। (এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করতে হবে) তুমি ধৈর্যশীলদের (জান্নাতের) সুসংবাদ দান করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৫)

আল্লাহর রাসূল (সা.) লোভ থেকে পানাহ চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে পানাহ চাই এমন লোভ থেকে, যা হৃদয়কে মোহাবিষ্ট করার দিকে নিয়ে যায় এবং এমন লালসা থেকেও তোমার আশ্রয় চাই, যেখানে লালসা করার মতো কিছু নেই।’ (মুসনাদ আহমাদ ২২০২১)