সূরা মূলক-১ম (১-১১ আয়াত)

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে।

কুর’আনের যে সকল সূরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত আমলের মাঝে নিয়েছিলেন, সূরা মূলক তার মাঝে একটি।

মূলক শব্দ যা প্রথম আয়াতে এসেছে, সেখান থেকেই সূরার নাম হয়েছে।

এ সূরাটি কোন সময় নাযিল হয়েছিলো তা কোন নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে জানা যায় না। তবে বিষয়বস্তু ও বর্ণনভংগী থেকে সুষ্পষ্ট বুঝা যায় যে, সূরাটি মক্কী জীবনের প্রথম দিকে অবতীর্ণ সূরা সমূহের অন্যতম।

সূরা সম্পর্কে ফযিলতঃ

এই সূরাকে হাদিসে ‘মানিআ’ বা প্রতিরোধকারী নামকরণ করা হয়েছে। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৪৯৮, আবুস শাইখ: তাবাকাতুল ইসফাহানীয়্যিন: ২৬৪]

 অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলার কিতাবে একটি সূরা আছে, যার আয়াত তো মাত্র তিরিশটি কিন্তু কেয়ামতের দিন এই সূরা এক এক ব্যক্তির পক্ষে সুপারিশ করবে এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে দাখিল করবে; সেটা সূরা মুলক। [আবু দাউদ; ১৪:০০, তিরমিযী: ২৮৯১, নাসায়ী: আল কুবরা, ৭১০, ইবনে মাজহঃ ৩৭৮৬, মুসনাদে আহমাদ: ২/২৯৯, ৩২১]

অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আলিফ লাম তানযীল’ (সূরা আস-সাজদাহ) এবং ‘তাবারাকাল্লাযী বি ইয়াদিহিল মুলক’ (সূরা আল-মুলক) সূরাদ্বয় না পড়ে ঘুমাতেন না”। [তিরমিযী: ২৮৯৭, দারেমী: ৩৪১১, মুস্তাদরাকে হাকিমঃ ২/৪৪৬, (৩৫৪৫)]

একটি বর্ণনা শায়খ আলবানী (রাহঃ) তাঁর ‘সিলসিলাহ স্বাহীহাহ’ নামক গ্রন্থে নকল করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, سُوْرَةُ تَبَارَكَ هِيَ المَانِعَةُ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ অর্থাৎ, তাবারাকা সূরাটি কবরের আযাব থেকে মানুষকে বাঁচাবে।) (ঐ ১১৪০নং, ৩/১৩১) অর্থাৎ, তার পাঠকারীর ব্যাপারে আশা করা যায় যে, সে কবরের আযাব থেকে পরিত্রাণ পাবে। তবে শর্ত হল তাকে শরীয়তের যাবতীয় বিধি-বিধান এবং ফরয কাজগুলোর প্রতি যত্ন নিতে হবে।

বিষয় বস্তুঃ

সামগ্রিক ভাবে সুরাটিকে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়,

১ম অংশঃ ১-৪ আয়াত। আল্লাহর শক্তি এবং ক্ষমতার বর্ণনা।

২য় অংশঃ ৫-১৫ আয়াত। জান্নাত এবং জাহান্নামের বর্ণনা। এই অংশে আকাশ হলো জাহান্নামের একটি প্রিভিউ আর জমিন হলো জান্নাতের একটি প্রিভিউ।

৩য় অংশঃ ১৬-২২ আয়াত। আসন্ন হুমকি। যে কোন সময় বিপদে পড়ার আশঙ্কা।

৪র্থ অংশঃ ২৩-২৪ আয়াত। এই অংশে শুধু দুটি আয়াত। এখানে বর্ণনা করা হয়েছে যে তিনি তোমাদের লালন পালন করেছেন, তোমাদের যৌবনের শক্তি সামর্থ্য দিয়েছেন, দেখার এবং শ্রবণ করার শক্তি দিয়েছেন, আরও দিয়েছেন অন্তর। আর বিনিময়ে তোমরা কেমন অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়। তারপর তোমাদের বার্ধক্য এসে পড়ে এবং পরিশেষে তার কাছে ফিরে যাও। এই সব কিছু হলো মানুষের ক্ষুদ্র জীবন সম্পর্কে। সংক্ষেপে বলতে গেলে এই অংশ হলো সংক্ষিপ্ত এই জীবন সম্পর্কে এবং কিভাবে এটা কাজে লাগানো যায়।

৫ম অংশঃ ২৫-২৭ আয়াত। কুফফারদের প্রশ্ন যে, কখন জান্নাত জাহান্নাম দেখা যাবে?

৬ষ্ঠ অংশঃ ২৮-৩০ আয়াত। মানুষ দুর্বল, ক্ষমতাহীন।

প্রথম অংশে আল্লাহ বলছেন তিনি শক্তিশালী, আর শেষ অংশে বলছেন আমরা মানুষরা দুর্বল।

দ্বিতীয় অংশে – আল্লাহ জান্নাত জাহান্নামের বর্ণনা দিয়েছেন, আর ৫ম অংশে মানুষ জিজ্ঞেস করছে কখন এটা আসবে?

তৃতীয় অংশে বলা হয়েছে অবিলম্বে তুমি বিপদে পড়তে পারো, আর চতুর্থ অংশে বলা হয়েছে এই বিপদ থেকে বাঁচার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় খুবই সীমিত। মিল খুঁজে পান? (সংগৃহিত -নু’মান আলী খান এর তাফসির থেকে নেয়া)

আয়াত সমূহের ব্যাখ্যাঃ

(তাফহীমুল কুর’আন, তাফসিরে যাকারিয়া ও আর্টিকল যা নেট থেকে সংগৃহিত)

 

৬৭:১ تَبٰرَکَ الَّذِیۡ بِیَدِہِ الۡمُلۡکُ ۫ وَ ہُوَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرُۨ ۙ

১. বরকতময় তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর হাতে; আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।

 

تَبَارَكَ শব্দটি بَرَكة থেকে এসেছে। এর শাব্দিক অর্থ হল বর্ধনশীল ও বেশী হওয়া। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, সৃষ্টিকুলের গুণাবলীর বহু ঊর্ধ্বে ও উচ্চে।

أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

জেনে রাখো, সৃষ্টি তারই এবং নির্দেশও তাঁরই।  আল্লাহ বড়ই বরকতের অধিকারী তিনি সমগ্র বিশ্ব জাহানের মালিক ও প্রতিপালক ৷  আরাফঃ ৫৪

تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَىٰ عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا

বড়ই বরকত সম্পন্ন তিনি যিনি এ ফুরকান যাতে সে সারা বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হয়৷তারঁ বান্দার ওপর নাযিল করেছেন। ফুরকানঃ১

تَبَارَكَ الَّذِي إِن شَاءَ جَعَلَ لَكَ خَيْرًا مِّن ذَٰلِكَ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَيَجْعَل لَّكَ قُصُورًا

বড়ই বরকত সম্পন্ন তিনি যিনি চাইলে তাঁর নির্ধারিত জিনিস থেকে অনেক বেশী ও উৎকৃষ্টতর জিনিস তোমাকে দিতে পারেন, (একটি নয়) অনেকগুলো বাগান যেগুলো পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বড় বড় প্রাসাদ৷ ফুরকানঃ ৯

মূলে تَبَارَكَ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে৷ এর পূর্ণ অর্থ এক শব্দে তো দূরের কথা এক বাক্যে বর্ণনা করাও কঠিন৷ এর শব্দমূল রয়েছে ب – ر – ك অক্ষরত্রয়৷ এ থেকে بَرَكَة ও بُرُوك দু’টি ধাতু নিষ্পন্ন হয়৷

بَرَكَة এর মধ্যে রয়েছে বৃদ্ধি, সমৃদ্ধি, বিপুলতা, প্রাচুর্যের ধারণা৷

আর بُرُوك এর মধ্যে স্থায়িত্ব, দৃঢ়তা, অটলতা ও অনিবার্যতার ধারণা রয়েছে৷ তারপর এ ধাতু থেকে যখন تَبَارَكَ এর ক্রিয়াপদ তৈরী করা হয় তখন تفاعل এর বৈশিষ্ট্য হিসেবে এর মধ্যে বাড়াবাড়ি , অতিরঞ্জন ও পূর্ণতার প্রকাশের অর্থ শামিল হয়ে যায়৷ تَفَاعل এর স্বীগা (আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী) অনেক ও আধিক্য বুঝাতে ব্যবহার হয়।

এ অবস্থায় এর অর্থ দাঁড়ায় চরম প্রাচুর্য , বর্ধমান প্রাচুর্য ও চূড়ান্ত পর্যায়ের স্থায়িত্ব৷ এ শব্দটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপে কোন জিনিসের প্রাচুর্য বা তার দৃঢ়তা ও স্থায়িত্বের অবস্থা বর্ণনা করার জন্য বলা হয়ে থাকে৷ যেমন কখনো এর অর্থ হয় উচ্চতায় অনেক বেশী এগিয়ে যাওয়া৷ বলা হয়, تباركت النخلة অর্থাৎ অমুক খেজুর গাছটি অনেক উঁচু হয়ে গেছে৷

কখনো মর্যাদায় ও শ্রেষ্ঠত্বে বেশী অগ্রসর হবার ক্ষেত্রে এ শব্দটি বলা হয়৷ কখনো একে ব্যবহার করা হয় দয়া ও সমৃদ্ধি পৌঁছানো এবং শুভ ও কল্যাণের ক্ষেত্রে অগ্রসরতার জন্য৷

কখনো এ থেকে পবিত্রতার পূর্ণতা ও চূড়ান্ত বিশুদ্ধতার অর্থ গ্রহণ করা হয়৷ এর স্থায়িত্ব ও অনিবার্যতার অর্থের অবস্থাও একই৷ পরিবেশ ও পরিস্থিতি এবং পূর্বাপর বক্তব্যই বলে দেয় কোথায় একে কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে৷ এখানে সামনের দিকে যে বিষয়বস্তু বর্ণনা করা হয়েছে তাকে দৃষ্টি সমক্ষে রাখলে বুঝা যায় , এ ক্ষেত্রে আল্লাহর জন্য تَبَارَكَ শব্দটি এক অর্থে নয় বরং বহু অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে৷ যেমন :

এক : মহা অনুগ্রহকারী ও সর্বজ্ঞ৷ কারণ , তিনি নিজের বান্দাকে ফুরকানের মহান নিয়ামত দান করে সারা দুনিয়াকে জানিয়ে দেবার ব্যবস্থা করেছেন৷

দুই : বড়ই মর্যাদাশালী ও সম্মানীয় ৷ কারণ , পৃথিবী ও আকাশে তাঁরই রাজত্ব চলছে৷

তিন : বড়ই পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন ৷ কারণ , তাঁর সত্তা সকল প্রকার শির্কের গন্ধমুক্ত৷ তাঁর সমজাতীয় কেউ নেই৷ ফলে আল্লাহর সত্তার সার্বভৌমত্বে তাঁর কোন নজির ও সমকক্ষ নেই৷ তাঁর কোন ধ্বংস ও পরিবর্তন নেই৷ কাজেই তাঁর স্থলভিষিক্তের জন্য কোন পুত্রের প্রয়োজন নেই৷

চার : বড়ই উন্নত ও শ্রেষ্ঠ ৷ কারণ , সমগ্র রাজত্ব তাঁরই কতৃর্ত্বাধীন৷ তাঁর ক্ষমতায় অংশীদার হবার যোগ্যতা ও মর্যাদা কারো নেই৷

পাঁচ : শক্তির পূর্ণতার দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ৷ কারণ, তিনি বিশ্ব-জাহানের প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টিকারী ও তার ক্ষমতা নির্ধারণকারী৷

ফুরকানঃ ৯ আয়াতে  আবার সেই একই تَبَارَكَ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এবং পরবর্তী বিষয়বস্তু থেকে একথা জানা যাচ্ছে যে , এখানে এর মানে হচ্ছে “বিপুল সম্পদ ও উপকরণাদির অধিকারী ,” “সীমাহীন শক্তিধর” এবং “কারো কোন কল্যাণ করতে চাইলে করতে পারেন না , এর অনেক উর্ধ্বে৷”

 

الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَ الۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَ ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفُوۡرُ

২. যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য—কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম? তিনি পর্যক্রমশালী, ক্ষমাশীল।

তিনি পৃথিবীতে মানুষের জীবন ও মৃত্যুর এ ধারাবাহিকতা চালু করেছেন তাকে পরীক্ষা করার জন্য, কোন মানুষটির কাজ বেশী ভাল তা দেখার জন্য৷ এ সংক্ষিপ্ত বাক্যটিতে বেশ কিছু সত্যের প্রতি ইংগিত দেয়া হয়েছে৷

প্রথম হলো, মৃত্যু এবং জীবন তাঁরই দেয়া৷ আর কেউ জীবনও দান করতে পারে না, মৃত্যুও ন৷

দ্বিতীয় হলো, মানুষ একটি সৃষ্টি, তাকে ভাল এবং মন্দ উভয় প্রকার কাজ করার শক্তি দেয়া হয়েছে৷ তার জীবন বা মৃত্যু কোনটিই উদ্দেশ্যহীন নয়, সৃষ্টা তাকে এখানে সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষার জন্য৷ জীবন তার জন্য পরীক্ষার সময় বা অবকাশ মাত্র ৷ মৃত্যুর অর্থ হলো, তার পরীক্ষার সময় ফুরিয়ে গেছে৷

 তৃতীয় হলো, এ পরীক্ষার জন্য স্রষ্টা সবাইকে কাজের সুযোগ দিয়েছেন৷ সে ভাল মানুষ না খারাপ মানুষ, এ পৃথিবীতে কাজের মাধ্যমে সে যাতে তার প্রকাশ ঘটাতে পারে সে জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেককে কাজের সুযোগ দিয়েছেন৷

 চতুর্থ হলো, কার কাজ ভাল এবং কার কাজ খারাপ প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টিকর্তাই তার ফায়সালা করবেন৷ কাজের ভাল -মন্দ বিচার করার মানদণ্ড নির্ধারণ করা পরীক্ষার্থীর কাজ নয়, বরং পরীক্ষা গ্রহণকারীর কাজ৷ তাই যারাই পরীক্ষায় সফল হতে চাইবে , তাদেরকে জানতে হবে পরীক্ষা গ্রহণকারীর দৃষ্টিতে ভাল কাজ কি?

পঞ্চম বিষয়টি পরীক্ষা কথাটির মধ্যেই নিহিত৷ তা হলো, যার কাজ যেমন হবে তাকে সে অনুপাতেই প্রতিফল দেয়া হবে৷ কারণ ফলাফলই যদি না থাকে তাহলে পরীক্ষা নেয়ার আদৌ কোন অর্থ হয় না৷

আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা কি মনে কর আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি। তোমরা আমার নিকট প্রর্ত্যাবর্তন করবে না। সত্যিকার বাদশা আল্লাহ মহান হোন। তিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই; যিনি মহান আরশের অধিপতি।”[সূরা মুমিনূন, আয়াত: ১১৫, ১১৬]

আল্লাহ তাআলা বলেন: “আসমান-জমিন এবং এ দুইটির মাঝে যা কিছু আছে সে সব আমি তামাশা করে সৃষ্টি করিনি।”[সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ১৬]

আল্লাহ আরও বলেন: “আমি আসমান-জমিন আর এ দুটির মাঝে যা আছে সে সব তামাশা করে সৃষ্টি করিনি। আমি ও দুটিকে যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।”[সূরা দুখান, আয়াত: ৩৮, ৩৯]

তিনি আরও বলেন: “হা-মীম। এই কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। নভোমন্ডল, ভূ-মন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু আমি যথাযথভাবেই এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্যেই সৃষ্টি করেছি। কাফেরদেরকে যে বিষয়ে সাবধান করা হয়েছে তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।”[সূরা আহকাফ, আয়াত: ১-৩]

এ পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর প্রভাব ফুটে উঠে। যেমন-‘আল-রহমান’, ‘আল-গফুর’, ‘আল-হাকিম’, ‘আল-তাওয়াব’, ‘আল-রহীম’ ইত্যাদি আল্লাহর গুণবাচক নাম।

সবচেয়ে যে মহান উদ্দেশ্য ও মহা পরীক্ষার জন্য মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে সেটা হচ্ছে- তাওহীদ বা নিরংকুশভাবে এক আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ প্রদান করা। আল্লাহ নিজেই মানুষ সৃষ্টির এ উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন।  “আমি জিন্ন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এ কারণে যে, তারা আমারই ‘ইবাদাত করবে।”[সূরা যারিয়াত, আয়াত: ৫৬]

ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন:

অর্থাৎ আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদেরকে আমার ইবাদতের নির্দেশ প্রদান করার জন্য; তাদের প্রতি আমার মুখাপেক্ষিতার কারণে নয়। আলি বিন আবু তালহা ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, “একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য” অর্থাৎ যাতে তারা ইচ্ছাই বা অনিচ্ছায় আমার ইবাদতের স্বীকৃতি দেয়। এটি ইবনে জারীরের নির্বাচিত তাফসির। ইবনে জুরাইয বলেন: যাতে তারা আমাকে চিনে। আল-রাবি বিন আনাস বলেন: “একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য” অর্থাৎ ইবাদতের জন্য। সমাপ্ত [তাফসিরে ইবনে কাছির (৪/২৩৯)]

আল্লাহর পছন্দের বান্দাহদেরকে পরীক্ষা করার বিষয়ে  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আল্লাহ তাআলা যখন কোনো সম্প্রদায়কে পছন্দ করেন, তখন তাদেরকে বিপদ দেন ও পরীক্ষা করেন”[ সুনান ইবনে মাজাহ:৪০২১, হাসান] । যেসব কারণে আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষা করেন সেগুলো হলো:

এক. পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা জেনে নিতে চান কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী। কুরআনে এসেছে, আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি। ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী।  [সূরা আনকাবুত- ০২]।

দুই. আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষার মাধ্যমে মর্যাদার তারতম্য নির্ধারিত করেন। এ বিষয়ে কুরআনে এসেছে,  আর তিনি সে সত্তা, যিনি তোমাদেরকে জমিনের খলিফা বানিয়েছেন এবং তোমাদের কতককে কতকের উপর মর্যাদা দিয়েছেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে যা প্রদান করেছেন, তাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন। নিশ্চয় তোমার রব দ্রুত শাস্তিদানকারী এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (আনআম-১৬৫)

 তিন. পরীক্ষার মাধ্যমে কারা মুমিন এবং কারা  মুনাফিক তা বের করা সম্ভব। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, আর কিছু লোক আছে যারা বলে, ‘আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি’, অতঃপর যখন আল্লাহর ব্যাপারে তাদের কষ্ট দেয়া হয়, তখন তারা মানুষের নিপীড়নকে আল্লাহর আজাবের মতো গণ্য করে। আর যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে কোনো বিজয় আসে, তখন অবশ্যই তারা বলে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে ছিলাম’। সৃষ্টিকুলের অন্তরসমূহে যা কিছু আছে আল্লাহ কি তা সম্পর্কে সম্যক অবগত নন? আর আল্লাহ অবশ্যই জানেন, কারা ঈমান এনেছে এবং তিনি মুনাফিকদেরকেও জানেন। (আনকাবুত- ১০-১১)।

চার. কারা ভালো আর কারা খারাপ তা বের করার জন্য পরীক্ষা করে থাকেন। এ বিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে,  আল্লাহ এমন নন যে, তিনি মুমিনদেরকে (এমন অবস্থায়) ছেড়ে দেবেন যার উপর তোমরা আছ। যতণ না তিনি পৃথক করবেন অপবিত্রকে পবিত্র থেকে। (আল ইমরান -১৭৯)।

পাঁচ. পরীক্ষার অন্যতম কারণ হলো মুজাহিদদের মধ্যে ধৈর্যশীলদেরকে বাছাই করা। কুরআনে এসেছে, যদি তোমাদেরকে কোনো আঘাত স্পর্শ করে থাকে তবে তার অনুরূপ আঘাত উক্ত কওমকেও স্পর্শ করেছে। আর এইসব দিন আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন করি এবং যাতে আল্লাহ ঈমানদারদেরকে জেনে নেন এবং তোমাদের মধ্য থেকে শহীদদেরকে গ্রহণ করেন। আর আল্লাহ জালিমদেরকে ভালোবাসেন না। (মুহাম্মাদ-৩১)।

 ছয়. শাহাদাতের মর্যাদা দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাহদের পরীক্ষা করে থাকেন : কুরআনে এসেছে, যদি তোমাদেরকে কোনো আঘাত স্পর্শ করে থাকে তবে তার অনুরূপ আঘাত উক্ত কওমকেও স্পর্শ করেছে। আর এইসব দিন আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন করি এবং যাতে আল্লাহ ঈমানদারদেরকে জেনে নেন এবং তোমাদের মধ্য থেকে শহীদদেরকে গ্রহণ করেন। আর আল্লাহ জালিমদেরকে ভালোবাসেন না। (আলে ইমরান-১৪০)।

সাত. যুগ যুগ ধরে হক প্রতিষ্ঠা এবং বাতিল ধ্বংস করার জন্য ইমানদানদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছে । আল্লাহ তায়ালা বলেন, যাতে তিনি সত্যকে সত্য প্রমাণিত করেন এবং বাতিলকে বাতিল করেন, যদিও অপরাধীরা তা অপছন্দ করে। (আনফাল-৮)।

তাই প্রত্যেক ইমানদার বান্দাহকে যে কোনো পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, অর্থ: নাকি তোমরা ভেবেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনো তোমাদের নিকট তাদের মতো কিছু আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। তাদেরকে স্পর্শ করেছিল কষ্ট ও দুর্দশা এবং তারা কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথি মুমিনগণ বলছিল, ‘কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে’? জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী। (বাকারা-২১৪)।

 

الَّذِیۡ خَلَقَ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ طِبَاقًا ؕ مَا تَرٰی فِیۡ خَلۡقِ الرَّحۡمٰنِ مِنۡ تَفٰوُتٍ ؕ فَارۡجِعِ الۡبَصَرَ ۙ ہَلۡ تَرٰی مِنۡ فُطُوۡرٍ

ثُمَّ ارۡجِعِ الۡبَصَرَ کَرَّتَیۡنِ یَنۡقَلِبۡ اِلَیۡکَ الۡبَصَرُ خَاسِئًا وَّ ہُوَ حَسِیۡرٌ

৩. যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাত আসমান। রহমানের সৃষ্টিতে আপনি কোন খুঁত দেখতে পাবেন না; আপনি আবার তাকিয়ে দেখুন, কোন ত্রুটি দেখতে পান কি?

৪. তারপর আপনি দ্বিতীয়বার দৃষ্টি ফেরান, সে দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে আপনার দিকে ফিরে আসবে।

 

আল্লাহই আকাশসমূহ স্থাপন করেছেন এমন কোন স্তম্ভ ছাড়াই যা তোমরা দেখতে পাও৷রাদঃ২

তিনিই পৃথিবীতে তোমাদের জন্য সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করলেন ৷ তারপর ওপরের দিকে লক্ষ করলেন এবং সাত আকাশ বিন্যস্ত করলেন তিনি সব জিনিসের জ্ঞান রাখেন ৷বাকারাঃ২৯

আর আমি তোমাদের ওপর সৃষ্টি করেছি সপ্তপথ” (সূরা আল মুমিনূন, ১৭)

“আর আমি নির্মাণ করেছি তোমাদের ওপর মজবুত সপ্ত আকাশ” (সূরা নাবা ১২)

সম্ভবত পৃথিবীর বাইরে যতগুলো জগত আছে সবগুলোকেই আল্লাহ সাতটি সুদৃঢ় স্তরে বিভক্ত করে রেখেছেন অথবা এই বিশ্ব-জাহানের যে স্তরে পৃথিবীর অবস্থিতি সেটি সাতটি স্তর সমন্বিত ৷

রাসূল স এর মেরাজের রাতে ধাপে ধাপে ৭ম আসমান পার হওয়াও আমাদের  উপরিউক্ত আয়াতের বিষয় বুঝা যায়।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:::

আসমানের এই স্তরসমূহ অকল্পনীয় স্থান জুড়ে আছে।

১. মহাশূন্যের যে ক্ষেত্র সৌরজগত দ্বারা গঠিত, এটা প্রথম আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রথম আসমান স্তরের পুরুত্ব আনুমানিক ৬.৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার।

২. ‘মিল্কিওয়ে’ বা আকাশগঙ্গার চারপাশে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। আমাদের ছায়াপথের এই বিস্তৃত ক্ষেত্র, এটা দ্বিতীয় আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে। দ্বিতীয় স্তর তথা আমাদের ছায়াপথের ব্যাস হল ১৩০ হাজার আলোকবর্ষ।

৩. ছায়াপথসমূহের ‘Local Cluster’ মহাকাশীয় ক্ষেত্র, এটি তৃতীয় আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে। তৃতীয় স্তরের বিস্তার ২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

৪. ছায়াপথসমূহের সমন্বয়ে গঠিত মহাবিশ্বের কেন্দ্রীয় চৌম্বক ক্ষেত্র, এটা চতুর্থ আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে। চতুর্থ স্তরের ব্যাস ১০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

৫. অতি দূর থেকে আগত আলোকতরঙ্গের উৎসসমূহের প্রতিনিধিত্বকার

ী মহাজাগতিক বলয় পঞ্চম আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে। পঞ্চম স্তরটি ১ বিলিয়ন আলোকবর্ষের দূরত্বে।

৬. মহাবিশ্বের প্রসারমান ক্ষেত্র ষষ্ঠ আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে। ষষ্ঠ স্তরটি অবস্থিত ২০ বিলিয়ন আলোকবর্ষের দূরত্বে।

৭. মহাবিশ্বের প্রান্তহীন অসীমত্বের নির্দেশক সর্ববহিরস্থ ক্ষেত্র সপ্তম আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে। একথা বলা বাহুল্য যে, সপ্তম স্তরটি বিস্তৃত হয়ে আছে অসীম দূরত্ব পর্যন্ত।

যদি আরাক দলে ব্যাখ্যা দেখেন,

  1. ট্রাপোস্ফিয়ার,
  2. স্ট্রাটোস্ফিয়ার,

3. ওযনোস্ফিয়ার

4. মেসোস্ফিয়ার

5. থার্মোস্ফিয়ার,

6.আয়নোস্ফিয়ার,

7. এক্সোস্ফিযার।

“আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান এবং তাদের মত পৃথিবীও, তাদের মধ্যে নেমে আসে তার নির্দেশ; যাতে তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।” [সূরা আত-তালাকঃ ১২]

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাত আসমান ও এর ভিতরে যা আছে এবং এর মাঝখানে যা আছে তা সবই কুরসীর মধ্যে যেন বিস্তীর্ণ যমীনের মধ্যে একটি আংটি আর কুরসী হলো মহান আরশের মধ্যে তদ্রুপ একটি আংটি স্বরূপ যা এক বিস্তীর্ণ যমীনে পড়ে আছে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আর আরশ তার পরিমাণ তো মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ নির্ধারণ করে বলতে পারবে না। [তাবারী]

 

وَ لَقَدۡ زَیَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنۡیَا بِمَصَابِیۡحَ وَ جَعَلۡنٰہَا رُجُوۡمًا لِّلشَّیٰطِیۡنِ وَ اَعۡتَدۡنَا لَہُمۡ عَذَابَ السَّعِیۡرِ

৫. আর অবশ্যই আমরা নিকটবর্তী আসমানকে সুশোভিত করেছি প্ৰদীপমালা দ্বারা এবং সেগুলোকে করেছি শায়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।

এখানে নক্ষত্র সৃষ্টির দু’টি উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে।

প্রথমতঃ আসমানের সৌন্দর্যবর্ধন। কেননা, তা প্রদীপের মত দীপ্তিমান সুন্দর দেখা যায়।

দ্বিতীয়তঃ শয়তানদল যখন আসমানের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন একে উল্কারূপে তাদের উপর নিক্ষেপ করা হয়।

এর তৃতীয় উদ্দেশ্য যেটাকে অন্যত্র বর্ণনা করা হয়েছে তা হল, তার দ্বারা সমুদ্রে ও স্থলে পথ ও দিক নির্ণয় করা হয়।

কুর’আনের অন্যত্র—

আমি দুনিয়ার আকাশকে তারকারাজির সৌন্দর্য দ্বারা সুসজ্জিত করেছি এবং প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান থেকে তাকে সুরক্ষিত রেখেছি। এ শয়তানরা উর্ধ জগতের কথা শুনতে পারে না, সবদিক থেকে আঘাতপ্রাপ্ত ও তাড়িত হয় এবং তাদের জন্য রয়েছে অবিরাম শাস্তি৷ তবুও যদি তাদের কেউ তার মধ্য থেকে কিছু হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয় তাহলে একটি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা তার পেছনে ধাওয়া করে৷আস সাফফাতঃ৬-১০

আসমানে আমি গ্রহ-নক্ষত্র (বুরুজ) সৃষ্টি করেছি এবং ওকে করেছি সুশোভিত, দর্শকদের জন্য। আর প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান থেকে সেগুলোকে সুরক্ষিত করে দিয়েছি। কিন্তু কেউ চুরি করে (খবর) শুনতে চাইলে উজ্জ্বল অগ্নিশিখা (শিহাবুম মুবিন) তার পশ্চাদ্ধাবণ করে।(সুরা হিজর ১৫ : ১৬-১৮)

আর নিশ্চয় আমরা আকাশ স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমরা সেটাকে পেলাম যে, তা কঠোর প্রহরী এবং জ্বলন্ত শিখা (শুহুব) দ্বারা পরিপূর্ণ। আমরা (আগে) সংবাদ শোনার জন্য আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে বসতাম, কিন্তু এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে তার উপর নিক্ষেপের জন্য সে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডকে (শিহাবার রাসাদা) লুকিয়ে থাকতে দেখে।(সুরা জিন ৭২ : ৮-৯)

উল্কাপাত নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা

রাতের আকাশে অনেক সময় নক্ষত্রের মতো ছোট আলোর ঝলকানি পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে দেখা যায়। ওই বস্তুগুলোকে উল্কা বলা হয়। অনেকের কাছে তা ‘তারা খসা’ বা ‘ছুটন্ত নক্ষত্র’ হিসেবে পরিচিত। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ‘উল্কা হলো মহাকাশে পরিভ্রমণকারী কিছু কঠিন পদার্থ, যা আকারে ধূমকেতুর চেয়ে ছোট; কিন্তু অণুর চেয়ে বড়।’

জাহেলি যুগে উল্কাপাতকে অশুভ লক্ষণ মনে করা হতো। সহিহ মুসলিম শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) সাহাবিদের এক মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ আকাশে তারকা খসে পড়ে। তিনি সাহাবিদের জিজ্ঞেস করেন, জাহেলি যুগে তারকা খসে পড়া নিয়ে তোমাদের কী ধরনের বিশ্বাস ছিল? সাহাবিরা জবাব দিলেন, আমরা মনে করতাম বিশ্বে কোনো ধরনের অঘটন ঘটবে কিংবা কোনো মহান ব্যক্তি মারা যাবেন বা জন্মগ্রহণ করবেন। এ কথা শুনে মহানবী (সা.) বলেন, ‘এটা ভ্রান্ত ধারণা। কারো জন্ম বা মৃত্যুর সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। এসব জ্বলন্ত অঙ্গার শয়তানদের বিতাড়িত করার জন্য নিক্ষেপ করা হয়।’

উল্কাপাত বিষয়ে এক দল বিজ্ঞান গবেষকের অভিমত হলো, মহাকাশে নানা ধরনের ছোট ছোট বস্তু ভেসে বেড়ায়। এসব বস্তু যখন কোনো গ্রহ-নক্ষত্রের কাছাকাছি চলে আসে তখন এদের আকর্ষণে বস্তুগুলো এদের দিকে চলে আসে। পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা এসব বস্তু যখন বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে তখন বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে এদের সংঘর্ষে এরা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একসময় তাতে আগুন ধরে যায়। রাতের আকাশের এই জ্বলন্তু বস্তুগুলোই উল্কা নামে পরিচিত।

আরেক দল গবেষক মনে করেন, সূর্যের খরতাপে সেসব বাষ্প মাটি থেকে ওপরে ওঠে, তার মধ্যে কিছু আগ্নেয় পদার্থও বিদ্যমান থাকে। ওপরে পৌঁছার পর এগুলো সূর্যের তাপ বা অন্য কোনো কারণে অতিরিক্ত উত্তাপের শিকার হয়। এর ফলে এগুলো প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে। দর্শকরা তা দেখে মনে করে কোনো তারকা খসে পড়েছে

উল্কাপাত বিষয়ে কোরআনের ব্যাখ্যা হলো, এটি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা, যা ফেরেশতাদের মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তিতে লিপ্ত শয়তানদের ওপর নিক্ষিপ্ত হয়। আলোচ্য আয়াত থেকে বিষয়টি জানা যায়।

এ ছাড়া সুরা জিনের মধ্যে জিন জাতির ভাষায় বর্ণিত হয়েছে, ‘আগে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শোনার জন্য বসতাম। কিন্তু এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে পূর্ব প্রস্তুত জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ডের সম্মুখীন হয়।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ৯)

আসলে উল্কাপাত নিয়ে বিজ্ঞানের গবেষণা চলমান।

সীমিত অর্থে ‘নাজম’ (বহুবচন ‘নুজুম’) বিশেষ্যটি দ্বারা সুবিশাল জ্যোতিষ্ককে বোঝানো যেতে পারে যার মহাকাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথ আছে, যেগুলো জ্বলছে এবং যেগুলোর নিজস্ব আলো আছে। যেমনঃ সূর্য। আর ‘كوكب’ (কাওকাব) বিশেষ্য (বহুচন ‘কাওয়াকিব’) দ্বারা কঠিন জ্যোতিষ্ককে বোঝায় যেগুলো জ্বলন্ত নয় (বা নিজস্ব আলো নেই)। যেমনঃ সৌরজগতের গ্রহগুলো। এগুলো আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষা।

وَ لِلَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِرَبِّہِمۡ عَذَابُ جَہَنَّمَ ؕ وَ بِئۡسَ الۡمَصِیۡرُ

৬. আর যারা তাদের রবকে অস্বীকার করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি; এবং তা কত মন্দ ফিরে যাওয়ার স্থান!

কুফরের আসল মানে হচ্ছে গোপন করা,লুকানো ৷ এ থেকেই অস্বীকারের অর্থ বের হয়েছে ৷ ঈমানের বিপরীত পক্ষে এ শব্দটি বলা হয় ৷ ঈমান অর্থ মেনে নেয়া, কবুল করা, স্বীকার করা৷ এর বিপরীতে ‘কুফর’- এর অর্থ না মানা , প্রত্যাখ্যান করা, অস্বীকার করা ৷ কুরআনের বর্ণনার প্রেক্ষিতে কুফরীর মনোভাব ও আচরণ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে ৷

এক:আল্লাহকে একেবারেই না মানা ৷ অথবা তাঁর সার্বভৌম কতৃত্ব ও ক্ষমতা স্বীকার না করা এবং তাঁকে নিজের ও সমগ্র বিশ্ব-জাহানের মালিক ও মাবুদ বলে না মানা ৷

দুই:আল্লাহকে মেনে নেয়া কিন্তু তাঁর বিধান ও হিদায়াতসমূহকে জ্ঞান ও আইনের একমাত্র উৎস হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করা ৷

তিন:নীতিগতভাবে একথা মেনে নেয়া যে, তাকে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলতে হবে কিন্তু আল্লাহ তাঁর বিধান ও বাণীসমূহ যেসব নবী-রসূলের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন তাদেরকে অস্বীকার করা ৷

চার:নবীদের মধ্যে পার্থক্য করা এবং নিজের পছন্দ ও মানসিক প্রবণতা বা গোত্রীয় ও দলীয়প্রীতির কারণে তাদের মধ্য থেকে কাউকে মেনে নেয়া এবং কাউকে না মানা ৷

পাঁচ: নবী ও রসূলগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে আকীদা-বিশ্বাস , নৈতিক চরিত্র ও জীবন যাপনের বিধান সম্বলিত যেসব শিক্ষা বিবৃত করেছেন সেগুলো অথবা সেগুলোর কোন কোনটি গ্রহণ করা ৷

ছয়:এসব কিছুকে মতবাদ হিসেবে মেনে নেয়ার পর কার্যত জেনে বুঝে আল্লাহর বিধানের নাফরমানী করা এবং এই নাফরমানীর ওপর জোর দিতে থাকা ৷ আর এই সংগে দুনিয়ার জীবনে আনুগত্যের পরিবর্তে নাফরমানীর ওপর নিজের কর্মনীতির ভিত্তি স্থাপন করা ৷

আল্লাহর মোকাবিলায় এসব বিভিন্ন ধরনের চিন্তা ও কাজ মূলত বিদ্রোহাত্মক ৷ এর মধ্য থেকে প্রতিটি চিন্তা ও কর্মকে কুরআন কুফরী হিসেবে চিহ্নত করেছে ৷ এ ছাড়াও কুরআনের কোন কোন জায়গায় ‘কুফর’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে আল্লাহর দান, অনুগ্রহ ও নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হওয়ার অর্থে ৷ সেখানে শোকর বা কৃতজ্ঞতার বিপরীতে এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে ৷ ‘শোকর’ –এর অর্থ হচ্ছে , যিনি অনুগ্রহ করেছেন তাঁর প্রতি অনুগৃহীত থাকা , তাঁর অনুগ্রহকে যথাযথ মূল্য ও মর্যাদা দান করা, তাঁর প্রদত্ত অনুগ্রহকে তাঁর সন্তুষ্টি ও নির্দেশ অনুসারে ব্যবহার করা এবং অনুগৃহীত ব্যক্তির মন অনুগ্রহকারীর প্রতি বিশ্বস্ততার আবেগে পরিপূর্ণ থাকা৷ এর বিপরীত পক্ষে কুফর বা অনুগ্রহের প্রতি অকৃজ্ঞতা হচ্ছেঃ অনুগ্রহকারীর অনুগ্রহ স্বীকার না করা এবং এই অনুগ্রহকে নিজের যোগ্যতা বা অন্য কারোর দান বা সুপারিশের ফল মনে করা অথবা অনুগ্রহকারীর অনুগ্রহ প্রদান করা সত্তেও তার সথে বিশ্বাসঘাতকতামূলক আচরণ করা৷ এই ধরনের কুফরীকে আমরা নিজেদের ভাষায় সাধারণত কৃতঘ্নতা, অকৃতজ্ঞতা, নিমকহারামী ও বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকি ৷

اِذَاۤ اُلۡقُوۡا فِیۡہَا سَمِعُوۡا لَہَا شَہِیۡقًا وَّ ہِیَ تَفُوۡرُ

৭. যখন তাদেরকে সেখানে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা জাহান্নামের বিকট শব্দ শুনবে(১), আর তা হবে উদ্বেলিত।

মূল ইবারতে شهيق শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যা গাধার ডাকের মত আওয়াজ বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়৷ ফাতহুল কাদীর, কুরতুবী] এ বাক্যের অর্থ এও হতে পারে যে, এটা খোদ জাহান্নামের শব্দ৷ আবার এও হতে পারে যে, জাহান্নাম থেকে এ শব্দ আসতে থাকবে, ইতিমধ্যেই যেসব লোককে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছে তারা জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকবে৷

“হতভাগ্যরা জাহান্নামে যাবে (যেখানে অত্যধিক গরমে ও পিপাসায়) তারা হাঁপাতে ও আর্তচীৎকার করতে থাকবে”৷সূরা হুদঃ১০৬

আগুন যখন দূর থেকে এদের দেখবে তখন এরা তার ক্রুদ্ধ ও উত্তেজিত চিৎকার শুনতে পাবে৷ফুরকানঃ১২

تَکَادُ تَمَیَّزُ مِنَ الۡغَیۡظِ ؕ کُلَّمَاۤ اُلۡقِیَ فِیۡہَا فَوۡجٌ سَاَلَہُمۡ خَزَنَتُہَاۤ اَلَمۡ یَاۡتِکُمۡ نَذِیۡرٌ

৮. রোষে জাহান্নাম যেন ফেটে পড়বে, যখনই তাতে কোন দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তাদেরকে রক্ষীরা জিজ্ঞেস করবে, তোমাদের কাছে কি কোন সতর্ককারী আসেনি?

কুরআন মজীদে এ বিষয়টি বার বার স্মারণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, মহান আল্লাহ একটি পরীক্ষার জন্য মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন৷ পরীক্ষাটি নেয়ার পদ্ধতি এমন নয় যে, মানুষকে সে সম্পর্কে অজ্ঞ ও অনবহিত রেখে সঠিক পথে সে চলে কিনা তা দেখা হচ্ছে৷ বরং তাকে সঠিক পথ চিনিয়ে দেয়ার জন্য যে সম্ভাব্য সর্বাধিক যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা ছিল মহান আল্লাহ তা পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন করেছেন৷

সে ব্যবস্থা অনুযায়ী নবী-রাসূল পাঠানো হয়েছে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাবসমূহ নাযিল করা হয়েছে৷ মানুষ আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামকে এবং তাঁরা যেসব কিতাব এনেছেন সেগুলোকে মেনে নিয়ে সঠিক পথে চলবে, না তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজের প্রবৃত্তি ও মনগড়া ধ্যাণ-ধারণার পেছনে ছুটবে, এখন তাদের সমস্ত পরীক্ষা এ একটি মাত্র বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ৷ নবুওয়াত মহান আল্লাহর একটি প্রমাণ৷ এভাবে তিনি মানুষের সামনে তাঁর প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করেছেন৷ এটা মানা বা না মানার ওপরে মানুষে ভবিষ্যত নির্ভর করছে৷নবী-রাসূলদের আগমনের পর কোন ব্যক্তি প্রকৃত অবস্থা না জানার ওজর পেশ করতে পারে না৷ তাকে না জানিয়ে অলক্ষেই এতো বড় পরীক্ষা নেয়ার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং এখন বিনা অপরাধেই শাস্তি দেয়া হচ্ছে, এ ওজর তার ধোপে টিকবে না৷

“প্রথমে সব মানুষ একই পথের অনুসারী ছিল ৷ (তারপর এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকেনি, তাদের মধ্যে মতভেদের সূচনা হয়) তখন আল্লাহ নবী পাঠান ৷ তারা ছিলেন সত্য সঠিক পথের অনুসারীদের জন্য সুসংবাদদাতা এবং অসত্য ও বেঠিক পথ অবলন্বনের পরিণতির ব্যাপারে ভীতিপ্রদর্শনকারী ৷ আর তাদের সাথে সত্য কিতাব পাঠান, যাতে সত্য সম্পর্কে তাদের মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল তার মীমাংসা করা যায় ৷ মতভেদ তারাই করেছিল যাদেরকে সত্যের জ্ঞান দান করা হয়েছিল ৷ তারা সুস্পষ্ট পথনির্দেশ লাভ করার পরও কেবলমাত্র পরস্পরের ওপর বাড়াবাড়ি করতে চাচ্ছিল বলেই সত্য পরিহার করে বিভিন্ন পথ উদ্ভাবন করে ৷

— কাজেই যারা নবীদের ওপর ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ নিজের ইচ্ছাক্রমে সেই সত্যের পথ দিয়েছেন,যে ব্যাপারে লোকেরা মতবিরোধ করেছিল ৷ আল্লাহ যাকে চান সত্য সঠিক পথ দেখিয়ে দেন ৷”  বাকারাঃ২১৩

হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের কাছে তোমাদেরই মধ্য থেকে কি রসূলেরা আসেনি, যারা তোমাদেরকে আমার আয়াত শোনাতো এবং এ দিনটির পরিণাম সম্পর্কে তোমাদেরকে সর্তক করতো ? তারা বলবে , হাঁ, আমরা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ দিচ্ছি৷ আজ দুনিয়ায় জীবন এদেরকে প্রতারণা জালে আবদ্ধ করে রেখেছে কিন্তু সেদিন এরা কাফের ছিল বলে নিজেরাই বিরুদ্ধে সাক্ষ দেবে৷সূরা আন’আমঃ১৩০

যে ব্যক্তিই সৎপথ অবলম্বন করে, তার সৎপথ অবলম্বন তার নিজের জন্যই কল্যাণকর হয়৷ আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্ট হয়, তার পথভ্রষ্টতার ধ্বংসকারিতা তার ওপরই বর্তায়৷  কোনো বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না৷আর আমি (হক ও বাতিলের পার্থক্য বুঝাবার জন্য) একজন পয়গম্বর না পাঠিয়ে দেয়া পর্যন্ত কাউকে আযাব দেই না৷বনী ইসরাইলঃ১৫

 

قَالُوۡا بَلٰی قَدۡ جَآءَنَا نَذِیۡرٌ ۬ۙ فَکَذَّبۡنَا وَ قُلۡنَا مَا نَزَّلَ اللّٰہُ مِنۡ شَیۡءٍ ۚۖ اِنۡ اَنۡتُمۡ اِلَّا فِیۡ ضَلٰلٍ کَبِیۡرٍ

৯. তারা বলবে, হ্যাঁ, অবশ্যই আমাদের কাছে সতর্ককারী এসেছিল, তখন আমরা মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলাম, আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি, তোমরা তো মহাবিভ্রান্তিতে রয়েছ।

তারা বলবে, “তোমাদের রসূলগণ কি তোমাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আসেননি ?” “তারা বলবে হ্যাঁ৷” জাহান্নামের কর্মকর্তারা বলবেঃ “তাহলে তোমরাই দোয়া করো৷ তবে কাফেরদের দোয়া ব্যর্থই হয়ে থাকে৷সূরা মুমিনঃ৫০

 

وَ قَالُوۡا لَوۡ کُنَّا نَسۡمَعُ اَوۡ نَعۡقِلُ مَا کُنَّا فِیۡۤ اَصۡحٰبِ السَّعِیۡرِ

১০. আর তারা বলবে, যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম, তাহলে আমরা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হতাম না।(১)

فَاعْتَرَفُوا بِذَنبِهِمْ فَسُحْقًا لِّأَصْحَابِ السَّعِيرِ

১১।এভাবে তারা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করবে ৷ এ দোযখবাসীদের ওপর আল্লাহর লানত৷ 

অর্থাৎ আমরা যদি সত্যানুসন্ধিৎসু হয়ে নবীগণের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতাম অথবা নবীগণ আমাদের সামনে যা পেশ করেছেন তা আসলে কি বুদ্ধি-বিবেক খাটিয়ে তা বুঝার চেষ্টা করতাম। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ তাদের অপরাধের ব্যাপারে নিজেদের উপর দোষ স্বীকার করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে চুড়ান্ত ফয়সালা করা হবে না।” [আবু দাউদ ৪৩৪৭, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৯৩]

এখানে শোনার কাজেকে বুঝার কাজের আগে উল্লেখ করা হয়েছে৷ তার কারণ হলো, প্রথমে নবীর শিক্ষা আগ্রহ ও মনযোগ সহকারে শোনা (কিংবা তা যদি লিখিত আকারে থাকে তাহলে সত্যানুসন্ধিৎসু হয়ে তা পড়ে দেখা) হিদায়াত লাভ করার পূর্ব শর্ত ৷ চিন্তা-ভাবনা করে তাৎপর্য উপলদ্ধি করার পর্যায় আসে এর পরে৷ নবীর দিকনির্দেশনা ছাড়া নিজের বিবেক -বুদ্ধি খাটিয়ে সরাসরি সঠিক পথ লাভ করা যায় না৷

আল্লাহ তা’আলা বলেন-

– ‘সেদিন তাদের মুখমণ্ডল আগুনে উলটপালট করা হবে, তারা বলতে থাকবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহ এবং (আল্লাহর) রাসূলের অনুসরণ করতাম। ‘তারা বলবে, হে আমাদের

প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতাও বড় লোকদের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। ‘হে আমাদের প্রতিপালক!তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং তাদেরকে দাও মহা

অভিসম্পাত।[সূরা আহযাব : ৬৬-৬৮]

আর সেদিন অপরাধী নিজের দুই হাত কামড়িয়ে বলবে, ‘হায় আমার আফসোস! যদি আমি রাসূলের পথ ধরতাম। হায়! আমার দুর্ভোগ! আমার আফসোস! যদি আমি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম’। অবশ্যই সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল আমার নিকট উপদেশ বাণী (কুরআন) পৌঁছার পর; আর শয়তান হল মানুষের জন্যে মহাপ্রতারক। আর রসূল বলবে, ‘হে আমার রব, অবশ্যই আমার জাতির লোকেরা এই কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছিল। ফুরকান, ২৫/২৭-৩০

রাসূল সা.ইরশাদ করেন, বিলাসিতা এবং সুখ-শান্তির ভিতর জাহান্নাম আর দুঃখ-বেদনার ভিতর জান্নাত লুকিয়ে রাখা হয়েছে। [মুসলিম]

 

সূরা মূলক- ২য় (১২- ২১ আয়াত)

 

সূরা মূলক- ৩য় (২২- ৩০ আয়াত)