সূরা বাকারাঃ ১২তম রুকু (৯৭–১০৩)আয়াত

সূরা বাকারাঃ ১২তম রুকু (৯৭–১০৩)আয়াত

أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

২:৯৭ قُلۡ مَنۡ کَانَ عَدُوًّا لِّجِبۡرِیۡلَ فَاِنَّهٗ نَزَّلَهٗ عَلٰی قَلۡبِکَ بِاِذۡنِ اللّٰهِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡهِ وَ هُدًی وَّ بُشۡرٰی لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ

বলুন, যে কেউ জিবরীলের শক্র হবে, এজন্যে যে, তিনি আল্লাহর অনুমতিক্রমে আপনার হৃদয়ে কুরআন নাযিল করেছেন, যা পূর্ববর্তী কিতাবেরও সত্যায়ণকারী এবং যা মুমিনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও শুভ সংবাদ

২:৯৮ مَنۡ کَانَ عَدُوًّا لِّلّٰهِ وَ مَلٰٓئِکَتِهٖ وَ رُسُلِهٖ وَ جِبۡرِیۡلَ وَ مِیۡکٰىلَ فَاِنَّ اللّٰهَ عَدُوٌّ لِّلۡکٰفِرِیۡنَ

যে কেউ আল্লাহ, তার ফেরেশতাগণ, তার রাসূলগণ এবং জিবরীল ও মীকাঈলের শত্রু হবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদের শক্র।

) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘জিবরীল’ শব্দটি আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান এর মতই। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

এ আয়াত নাযিল হওয়ার একটি কারণ এই বলা হয় যে, ইয়াহুদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বলল, হে আবুল কাশেম আমরা আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করছি, যদি সেগুলোর জবাব আপনি দিতে পারেন তবে আমরা আপনার অনুসরণ করব, আপনার সত্যতার সাক্ষ্য দিব এবং আপনার উপর ঈমান আনব। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলেন যেমন ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তার সন্তানদের কাছ থেকে নিয়েছিলেন, তিনি বলেন, “আমরা যা বলছি তাতে আল্লাহই কৰ্মবিধায়ক” (সূরা ইউসুফ: ৬৬] তখন তারা বলল, আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আলামত কি বলুন। রাসূল বললেন, “তার চক্ষু ঘুমায় কিন্তু তার অন্তর ঘুমায় না”।

তারা বলল, কিভাবে একজন নারী মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয় আর কিভাবে পুরুষ সন্তানের জন্ম দেয়? রাসূল বললেন, দুই বীর্য মিলিত হওয়ার পরে যদি মহিলার বীর্য পুরুষের বীর্যের চেয়ে বেশী প্রাধান্য বিস্তারকারী হয় তবে মেয়ে সন্তান হয়। আর যদি পুরুষের বীর্য মহিলার বীর্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে তবে পুত্র সন্তান হয়। তারা বলল, আপনি সত্য বলেছেন। তারা বলল, ইসরাঈল (ইয়াকুব) কোন বস্তুকে তার নিজের উপর হারাম করেছেন সেটা আমাদের জানান। তিনি বললেন, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম বেদুইন এলাকায় বাস করতেন। তখন তার ‘ইরকুন নিসা’ নামক রোগ হয়। ফলে তিনি দেখলেন যে, উটের গোস্ত ও দুধ তার জন্য এ রোগের কারণ হয়েছে, তখন তিনি সেটা নিজের উপর নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

তারা বলল, আপনি সত্য বলেছেন। তারা বলল, আপনার কাছে কোন ফেরেশতা ওহী নিয়ে আসে তার সম্পর্কে আমাদের জানান। কেননা, প্রত্যেক নবীর কাছেই কোন না কোন ফেরেশতা তার রবের কাছ থেকে ওহী ও রিসালত নিয়ে আগমন করে থাকে। এ ব্যাপারে আপনার সঙ্গীটি কে? এটি বাকী রয়েছে। যদি এটা বলেন তো আমরা আপনার অনুসরণ করব। রাসূল বললেন, তিনি তো জিবরীল। তারা বলল, এই তো সে যে যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে আসে। সে ফেরেশতাদের মধ্যে আমাদের শক্র। আপনি যদি বলতেন যে, তিনি মীকাইল, তবে আমরা আপনার অনুসরণ করতাম। কারণ তিনি বৃষ্টি ও রহমত নিয়ে আসে। তখন আল্লাহ তা’আলা উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন। [মুসনাদে আহমাদ: ১/২৭৪, তিরমিযী: ৩১১৭]

ইয়াহুদীরা বলত যে, মীকাঈল আমাদের বন্ধু। মহান আল্লাহ বললেন, এরা সবাই আমার অতীব প্রিয় বান্দা। যে এদের সাথে বা এদের কোন একজনের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, সে হবে আল্লাহর শত্রু। হাদীসে বর্ণিত যে, (مَنْ عَادَ لِيْ وَلِيًّا فَقَدْ بَارَزَنِيْ بِالْحَرْبِ) যে আমার কোন বন্ধুর সাথে শত্রুতা পোষণ করল, সে আসলে আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। (সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ আররিক্বাক, পরিচ্ছেদঃ আত্তাওয়াযু

অর্থাৎ, আল্লাহর কোন একজন অলীর সাথে দুশমনী রাখলে, তাঁর সকল অলীদের সাথে দুশমনী রাখা হবে; এমনকি তাঁর (আল্লাহর) সাথেও দুশমনী বিবেচিত হবে। এ থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, আল্লাহর অলীদের সাথে ভালবাসা পোষণ করা ও তাঁদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা রাখা এত জরুরী এবং তাঁদের সাথে শক্রতা পোষণ করা এত বড় অন্যায় যে, মহান আল্লাহ তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আল্লাহর ওলী কে? এর জন্য দ্রষ্টব্য সূরা ইউনুসের ৬২-৬৩ নং আয়াত।

দুর্ভাগ্যবশতঃ আল্লাহর অলীদের ভালবাসার নামে লাত ও মানাত পূজার এই কার্যকলাপ বড়ই জাঁকজমকের সাথে চলছে। অথচ এটা ভালবাসা নয়, বরং এটা তাঁদের ইবাদত; যা শিরক ও বড় যুলুম। আল্লাহ তাআলা কবর-পূজার ফিতনা থেকে আমাদেরকে হেফাযত করুন! আমীন।

এখানে একটি বিশেষ বিষয়বস্তুর প্রতি সূক্ষ্ম ইংগিত করা হয়েছে ৷সেটি হচ্ছেঃ ওহে নির্বোধের দল !তোমাদের সমস্ত অসন্তুষ্টি হচ্ছে হিদায়াত ও সত্য-সহজ পথের বিরুদ্ধে ৷তোমরা লড়ছো সঠিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ৷অথচ এই সঠিক ও নির্ভুল নেতৃত্বকে সহজভাবে মেনে নিলে তা তোমাদের জন্য সাফল্যের সুসংবাদ বহন করে আনতো ৷

হযরত জীবরাইল আ সম্পর্কে–

নিঃসন্দেহে এটি একজন সন্মানিত বার্তাবাহকের বার্তা। যিনি ক্ষমতাশালী। আরশের অধিপতির কাছে উচ্চ পদমর্যাদার অধিকারী। সেখানে সবাই তাকে মানে, সবাই তাকে বিশ্বাস করে। [আত-তাকয়ির ৮১:১৯-২১]

২:৯৯ وَ لَقَدۡ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡکَ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ ۚ وَ مَا یَکۡفُرُ بِهَاۤ اِلَّا الۡفٰسِقُوۡنَ

আর অবশ্যই আমরা আপনার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করেছি ফাসিকরা ছাড়া অন্য কেউ তা অস্বীকার করে না।

২:১০০ اَوَ کُلَّمَا عٰهَدُوۡا عَهۡدًا نَّبَذَهٗ فَرِیۡقٌ مِّنۡهُمۡ ؕ بَلۡ اَکۡثَرُهُمۡ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ

এটা কি নয় যে, তারা যখনই কোন অঙ্গীকার করেছে তখনই তাদের কোন এক দল তা ছুড়ে ফেলেছে? বরং তাদের অধিকাংশই ঈমান আনে না।

২:১০১ وَ لَمَّا جَآءَهُمۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمۡ نَبَذَ فَرِیۡقٌ مِّنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ ٭ۙ کِتٰبَ اللّٰهِ وَرَآءَ ظُهُوۡرِهِمۡ کَاَنَّهُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ

.আর যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের নিকট একজন রাসূল আসলেন, তাদের কাছে যা রয়েছে তার সত্যায়নকারী হিসেবে, তখন যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের একদল আল্লাহ্‌র কিতাবকে পিছনে ছুঁড়ে ফেলল, যেন তারা জানেই না।

মহান আল্লাহ নবী করীম (সাঃ)-এর প্রতি ইঙ্গিত করে বলছেন যে, আমি রসূলকে বহু উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী দান করেছি; যা দেখে ইয়াহুদীদেরও ঈমান আনা উচিত ছিল। তাছাড়া তাদের কিতাব তাওরাতেও তার গুণাবলীর উল্লেখ এবং তার উপর ঈমান আনার অঙ্গীকার রয়েছে, কিন্তু তারা পূর্বে কি কোন অঙ্গীকারের কোনই পরোয়া করেছে যে, এই অঙ্গীকারেরও করবে? অঙ্গীকার ভঙ্গ করা তাদের একটি দলের অভ্যাসই ছিল। এমন কি আল্লাহর কিতাবকেও তারা পশ্চাতে নিক্ষেপ করল; যেন তারা তা (আল্লাহর বাণী বলে) জানেই না।

২:১০২ وَ اتَّبَعُوۡا مَا تَتۡلُوا الشَّیٰطِیۡنُ عَلٰی مُلۡکِ سُلَیۡمٰنَ ۚ وَ مَا کَفَرَ سُلَیۡمٰنُ وَ لٰکِنَّ الشَّیٰطِیۡنَ کَفَرُوۡا یُعَلِّمُوۡنَ النَّاسَ السِّحۡرَ ٭ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ عَلَی الۡمَلَکَیۡنِ بِبَابِلَ هَارُوۡتَ وَ مَارُوۡتَ ؕ وَ مَا یُعَلِّمٰنِ مِنۡ اَحَدٍ حَتّٰی یَقُوۡلَاۤ اِنَّمَا نَحۡنُ فِتۡنَۃٌ فَلَا تَکۡفُرۡ ؕ فَیَتَعَلَّمُوۡنَ مِنۡهُمَا مَا یُفَرِّقُوۡنَ بِهٖ بَیۡنَ الۡمَرۡءِ وَ زَوۡجِهٖ ؕ وَ مَا هُمۡ بِضَآرِّیۡنَ بِهٖ مِنۡ اَحَدٍ اِلَّا بِاِذۡنِ اللّٰهِ ؕ وَ یَتَعَلَّمُوۡنَ مَا یَضُرُّهُمۡ وَ لَا یَنۡفَعُهُمۡ ؕ وَ لَقَدۡ عَلِمُوۡا لَمَنِ اشۡتَرٰىهُ مَا لَهٗ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنۡ خَلَاقٍ ۟ؕ وَ لَبِئۡسَ مَا شَرَوۡا بِهٖۤ اَنۡفُسَهُمۡ ؕ لَوۡ کَانُوۡا یَعۡلَمُوۡنَ

আর সুলাইমানের রাজত্বে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত তারা তা অনুসরণ করেছে। আর সুলাইমান কুফরী করেননি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা মানুষকে শিক্ষা দিত জাদু ও (সে বিষয় শিক্ষা দিত) যা বাবিল শহরে হারূত ও মারূত ফিরিশতাদ্বয়ের উপর নাযিল হয়েছিল। তারা উভয়েই এই কথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, ‘আমরা নিছক একটি পরীক্ষা; কাজেই তুমি কুফরী করো না’।। তা সত্বেও তারা ফিরিশতাদ্বয়ের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত যা দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতো(২)। অথচ তারা আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত তা দ্বারা কারো ক্ষতি করতে পারত না। আর তারা তা-ই শিখত যা তাদের ক্ষতি করত এবং কোন উপকারে আসত না। আর তারা নিশ্চিত জানে যে, যে কেউ তা খরিদ করে, (অর্থাৎ জাদুর আশ্রয় নেয়) তার জন্য আখেরাতে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা নিজেদের বিকিয়ে দিচ্ছে, তা খুবই মন্দ, যদি তারা জানত!

২:১০৩ وَ لَوۡ اَنَّهُمۡ اٰمَنُوۡا وَ اتَّقَوۡا لَمَثُوۡبَۃٌ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ خَیۡرٌ ؕ لَوۡ کَانُوۡا یَعۡلَمُوۡنَ

আর যদি তারা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আল্লাহর কাছ থেকে প্রাপ্ত সওয়াব নিশ্চিতভাবে (তাদের জন্য) অধিক কল্যাণকর হত, যদি তারা জানত!

জাদু এমন এক বিষয়কে বলা হয়, যার উপকরণ নিতান্ত গোপন ও সূক্ষ্ম হয়ে থাকে। জাদু এমন সব গোপনীয় কাজের মাধ্যমে অর্জিত হয়, যা দৃষ্টির অগোচরে থাকে। জাদুর মধ্যে মন্ত্রপাঠ, ঝাড়ফুঁক, বাণী উচ্চারণ, ঔষধপত্র ও ধুম্ৰজাল – এসব কিছুর সমাহার থাকে। জাদুর বাস্তবতা রয়েছে। ফলে মানুষ কখনো এর মাধ্যমে অসুস্থ হয়ে পড়ে, কখনো নিহতও হয় এবং এর দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছিন্নতাও সৃষ্টি করা যায়। তবে এর প্রতিক্রিয়া তাকদীরের নির্ধারিত হুকুম ও আল্লাহর অনুমতিক্রমেই হয়ে থাকে। এটা পুরোপুরি শয়তানী কাজ! এ প্রকার কাজ শির্কের অন্তর্ভুক্ত। দুটি কারণে জাদু শির্কের অন্তর্ভুক্ত।

(এক) এতে শয়তানদের ব্যবহার করা হয়। তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা হয় এবং তাদের পছন্দনীয় কাজের মাধ্যমে তাদের নৈকট্য অর্জন করা হয়।

(দুই) এতে গায়েবী ইলম ও তাতে আল্লাহর সাথে শরীক হবার দাবী করা হয়। আবার কখনো কখনো জাদুকরকে বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। এ সবগুলোই মূলতঃ ভ্রষ্টতা ও কুফরী। তাই কুরআনুল করীমে জাদুকে সরাসরি কুফরী-কর্ম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাদু ও মু’জিযার পার্থক্যঃ নবীগণের মু’জিযা দ্বারা যেমন অস্বাভাবিক ও অলৌকিক ঘটনাবলী প্রকাশ পায়, জাদুর মাধ্যমেও তেমনি প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। ফলে মূর্খ লোকেরা বিভ্রান্তিতে পতিত হয়ে জাদুকরদেরকেও সম্মানিত ও মাননীয় মনে করতে থাকে। এ কারণে এতদুভয়ের পার্থক্য বর্ণনা করা দরকার। মু’জিযা প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াই সরাসরি আল্লাহর কাজ আর জাদু অদৃশ্য প্রাকৃতিক কারণের প্রভাব। এ পার্থক্যটিই মু’জিযা ও জাদুর স্বরূপ বুঝার পক্ষে যথেষ্ট। কিন্তু তা সত্বেও এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যায় যে, সাধারণ লোক এই পার্থক্যটি কিভাবে বুঝবে? কারণ, বাহ্যিক রূপ উভয়েরই এক। এ প্রশ্নের উত্তর এই যে, মু’জিযা ও কারামত এমন ব্যক্তিবর্গের দ্বারা প্রকাশ পায়, যাদের আল্লাহভীতি, পবিত্রতা, চরিত্র ও কাজকর্ম সবার দৃষ্টির সামনে থাকে। পক্ষান্তরে জাদু তারাই প্রদর্শন করে, যারা নোংরা, অপবিত্র এবং আল্লাহর যিকর থেকে দূরে থাকে। এসব বিষয় চোখে দেখে প্রত্যেকেই মু’জিযা ও জাদুর পার্থক্য বুঝতে পারে।

নবীগণের উপর জাদু ক্রিয়া করে কি না?

এ প্রশ্নের উত্তর হবে ইতিবাচক। কারণ, পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, জাদু প্রকৃতপক্ষে প্রাকৃতিক কারণের প্রভাব। নবীগণ প্রাকৃতিক কারণের প্রভাবে প্রভাবান্বিত হন। এটা নবুওয়াতের মর্যাদার পরিপন্থী নয়। সবাই জানেন, বাহ্যিক কারণ দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে নবীগণ ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হন, রোগাক্রান্ত হন এবং আরোগ্য লাভ করেন। তেমনিভাবে জাদুর অদৃশ্য কারণ দ্বারাও তারা প্রভাবান্বিত হতে পারেন। সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে যে, ইয়াহুদীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর জাদু করেছিল এবং সে জাদুর কিছু প্রতিক্রিয়াও প্রকাশ পেয়েছিল। ওহীর মাধ্যমে তা জানা সম্ভব হয়েছিল এবং জাদুর প্রভাব দূরও করা হয়েছিল [দেখুন, বুখারী ৩২৬৮, মুসলিম: ২১৮৯]

শয়তানরা বলতে জ্বীন জাতি ও মানবজাতি উভয়ের অন্তরভুক্ত শয়তান হতে পারে ৷ এখানে উভয়ের কথাই বলা হয়েছে ৷ বনী ইসরাঈলদের মধ্যে যখন নৈতিক ও বস্তুগত পতন সূচিত হলো , গোলামি,মূর্খতা, অজ্ঞতা, দারিদ্র্য,লাঞ্ছিনা ও হীনতা যখন যাদু-টোনা, তাবিজ –তুমার , টোটকা ইত্যাদির প্রতি তারা আকৃষ্ট হতে থাকলো বেশী করে ৷ তারা এমন সব পন্থার অনুসন্ধান করতে লাগলো যাতে কোন প্রকার পরিশ্রম ও সংগ্রাম –সাধন ছাড়াই নিছক ঝাড়-ফুঁক তন্ত্রমন্ত্রের জোরে বাজীমাত করা যায় ৷ তখন শয়তানরা তাদেরকে প্ররোচনা দিতে লাগলো ৷ তাদেরকে বুঝাতে থাকলো যে, সুলাইমান আলাইহিস সালামের বিশাল রাজত্ব এবং তাঁর বিস্ময়কর ক্ষমতা তো আসলে কিছু মন্ত্র-তন্ত্র ও কয়েকটা আঁচড়, নকশা তথা তাবীজের ফল ৷ শয়তানরা তাদেরকে সেগুলো শিখিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিল ৷ বনী ইসরাঈলরা অপ্রত্যাশিত মহামূল্যবান সম্পদ মনে করে এর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ৷ ফলে আল্লাহর কিতাবের প্রতি তাদের কোন আগ্রহ ও আকর্ষণ থাকলো না এবং কোন সত্যের আহবায়কের আওয়াজ তাদের হৃদতন্ত্রীতে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলো না ৷

. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন বক্তব্য পেশ করা হয়েছে ৷ কিন্ত এখানে আমি যা কিছু বুঝেছি তা হচ্ছে এই যে, সমগ্র বনী ইসরাঈল জাতি যে সময় ব্যাবিলনে বন্দী ও গোলামির জীবন যাপন করছিল, আল্লাহ তখন তাদের পরীক্ষার উদ্দেশ্যে দু’জন ফেরেশতাকে মানুষের বেশে তাদের কাছে হয়তো পাঠিয়ে থাকবেন ৷ লূত জাতির কাছে যেমন ফেরেশতারা গিয়েছিলেন সুদর্শন বালকের বেশ ধারণ করে তেমনি বনী ইসরাঈলদের কাছে তারা হয়তো পীর ও ফকীরের ছদ্মবেশে হাযির হয়ে থাকবে ৷সেখানে একদিকে তারা নিজেদের যাদুর দোকান সাজিয়ে বসে থাকতেন আর অন্যদিকে লোকদেরকে এই মর্মে সতর্ক করে দিতেনঃদেখো, আমরা তোমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ ৷ কাজেই নিজেদের পরকাল নষ্ট করো না ৷ কিন্তু তাদের এই সতর্কবানী ও সুস্পষ্ট ঘোষণা সত্ত্বেও লোকেরা তাদের দেয়া ঝাড়-ফুঁক ও তাবীজ-তুমারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ৷

ফেরেশতাদের মানুষের আকার ধারণ করে মানুষের মধ্যে কাজ করার ব্যাপারটায় অবাক হবার কিছুই নেই ৷ তারা আল্লাহর সাম্রাজ্যের কর্মচারী ৷ নিজেদের দায়িত্ব পালনের জন্য যে সময় যে আকৃতি ধারণ করার প্রয়োজন হয় তারা তাই করেন ৷ এখনই এ মুহূর্তে আমাদের চারদিকে কতজন ফেরেশতা মানুষের আকার ধরে এসে কাজ করে যাচ্ছেন তার কতটুকু খবরই বা আমরা রাখি ৷ তবে ফেরেশতাদের এমন একটা কাজ শেখাবার দায়িত্ব নেয়া, যা মূলত খারাপ , এর অর্থ কি? এটা বুঝার জন্য এ ক্ষেত্রে এমন একটি পুলিশের দৃষ্টান্ত পেশ করা যেতে পারে যে পুলিশের পোশাক ছেড়ে সাধারণ নাগরিকের পোশাক পরে কোন ঘুষখোর প্রশাসকের কাছে হাযির হয় তার ঘুষখোরীর প্রমাণ সংগ্রহের জন্য ৷ একটি নোটের গায়ে বিশেষ চিহ্ন দিয়ে সে ঘুষ হিসেবে প্রশাসককে দেয়, যাতে ঘুষ নেয়ার সময় হাতেনাতে তাকে ধরতে পারে এবং তার পক্ষে নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করার কোন অবকাশই না থাকে ৷

কিছু মুফাসসিরগণ {وَمَا أُنْزِلَ} এর ما কে নেতিবাচক বলেছেন। অর্থাৎ, হারূত-মারূতের উপর কোন কিছু অবতীর্ণ হওয়ার কথা খন্ডন করেছেন। কিন্তু কুরআনের বাগধারা এর সমর্থন করে না। এই জন্যই ইবনে জারীর প্রভৃতি মুফাসসিরগণ এই মতের খন্ডন করেছেন। (ইবনে কাসীর) অনুরূপ হারূত-মারূতের ব্যাপারে তফসীরের কিতাবগুলো ইস্রাঈলী বর্ণনায় ভর্তি। কিন্তু কোন সহীহ মারফূ’ (মহানবী (সাঃ)-এর জবানী) বর্ণনা এ ব্যাপারে প্রমাণিত নেই। মহান আল্লাহ কোন বিশদ বিবরণ ছাড়াই সংক্ষিপ্তাকারে এই ঘটনা বর্ণনা করেছেন। আমাদের এরই উপরে এবং এই পর্যন্তই বিশ্বাস রাখা উচিত। (তাফসীর ইবনে কাসীর) কুরআনের শব্দাবলী থেকে এটা অবশ্যই জানা যায় যে, আল্লাহ তাআলা বাবেল শহরে হারূত ও মারূত ফিরিশতাদ্বয়ের উপর যাদুবিদ্যা অবতীর্ণ করেছিলেন। আর এর উদ্দেশ্য (আর আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত) মনে হয় এই ছিল যে, যাতে তাঁরা মানুষদেরকে অবহিত করেন যে, নবীদের হাতে প্রকাশিত মু’জিযা যাদু নয়, বরং তা ভিন্ন জিনিস এবং যাদু হল এই যার জ্ঞান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদেরকে দান করা হয়েছে। (সেই যুগে যাদুর ব্যাপক প্রচলন ছিল, যার কারণে লোকেরা নবীদেরকে — নাউযু বিল্লাহ — যাদুকর ও ভেলকিবাজ মনে করত) এই বিভ্রান্তি থেকে মানুষদেরকে রক্ষা করার জন্য এবং পরীক্ষাস্বরূপ মহান আল্লাহ ফিরিশতাদ্বয়কে নাযিল করেন।

দ্বিতীয় উদ্দেশ্য সম্ভবতঃ বানী-ইস্রাঈলদের চারিত্রিক অধঃপতনের প্রতি ইঙ্গিত করা যে, তারা কিভাবে যাদু শেখার জন্য ঐ ফিরিশতাদ্বয়ের পিছনে পড়েছিল এবং এ কথা পরিষ্কার করে বলে দেওয়া সত্ত্বেও যে, যাদু কুফরী, আমরা পরীক্ষার জন্য এসেছি – তারা যাদুবিদ্যা অর্জনের জন্য একেবারে ঝাপিয়ে পড়েছিল। আর এতে তাদের লক্ষ্য ছিল, পরের সুখী সংসার ধ্বংস করা এবং স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঘৃণার প্রাচীর খাড়া করা। অর্থাৎ, এই ছিল তাদের অধঃপতন, বিশৃঙ্খলা এবং ফাসাদমূলক কর্মকান্ডের শিকলের একটি গুরুত্বপূর্ণ কড়া। আর এই ধরনের কাল্পনিক জিনিস এবং চারিত্রিক অধঃপতন যে কোনও জাতির ধ্বংসের নিদর্শন। আল্লাহ আমাদেরকে পানাহ দিন। আমীন।

অর্থাৎ, আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য কেবল পরীক্ষাস্বরূপ। (ফাতহুল ক্বাদীর)

হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাতটি ধ্বংসকারী জিনিস থেকে দূরে থাকো। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! সে জিনিসগুলো কি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর সাথে কোনো কিছু শরীক করা, যাদু বিদ্যা শেখা ও তার চর্চা করা, যে জীবনকে হত্যা করা আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন, তাকে অবৈধভাবে হত্যা করা, সূদী লেনদেন করা, ইয়াতীমের ধন আত্মসাৎ করা, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া, পবিত্র চরিত্রের অধিকারী মুমিন নারীর ওপর অপবাদ দেয়া। (বুখারী, মুসলিম)

এটা ঠিক এই ধরনের যে, কোন বাতিলকে খন্ডন করার জন্য সেই বাতিল মতবাদের জ্ঞান কোন শিক্ষকের কাছ থেকে অর্জন করা। শিক্ষক ছাত্রকে এই প্রত্যয়ের ভিত্তিতে বাতিল মতবাদের জ্ঞান শিক্ষা দেন যে, সে তার খন্ডন করবে। কিন্তু জ্ঞানার্জনের পর সে নিজেই যদি সেই বাতিল মতবাদের বিশ্বাসী হয়ে যায় অথবা তার (জ্ঞানের) যদি অপপ্রয়োগ করে, তাহলে এতে শিক্ষকের কোন দোষ থাকে না।

এই যাদুও সেই অবধি কারো ক্ষতি করতে পারে না, যতক্ষণ না তাতে আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুমতি থাকে। এই জন্যই যাদু শিক্ষার লাভই বা কি? আর এই কারণেই ইসলাম যাদুবিদ্যা শিক্ষা করাকে কুফরী গণ্য করেছে। সর্বপ্রকার কল্যাণ লাভ এবং অকল্যাণ থেকে মুক্তির জন্য কেবল আল্লাহর দিকেই রুজু করতে হয়। কেননা, তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা এবং সারা জাহানের প্রতিটি কাজ তাঁরই ইচ্ছায় সম্পাদিত হয়।

কু’রআনে বহুবার আল্লাহ আমাদেরকে বলেছেন, শুধুমাত্র তাঁর উপর ভরসা করতে হবে, শুধুমাত্র তাঁর কাছেই চাইতে হবে—

আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করলে কেউ তোমাদের পরাস্ত করতে পারবে না। আর তিনি যদি তোমাদেরকে একা ছেড়ে দেন, তাহলে কে আছে, যে তোমাকে সাহায্য করবে? যাদের ঈমান আছে তাদের উচিত শুধুমাত্র আল্লাহরই উপর ভরসা করা। [আলি-ইমরান ৩:১৬০]

…যে আল্লাহর উপর পুরোপুরি ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। [আত-তালাক্ব ৬৫:৩]

পূর্ব এবং পশ্চিমের রাব্ব তিনি। তিনি ছাড়া উপাসনার যোগ্য আর কেউ নেই। সুতরাং শুধুমাত্র তাকেই রক্ষাকারী হিসেবে নাও। [আল-মুজাম্মিল ৮৩:৯]

কি দিয়ে যাদু করেছে যদি পাওয়া যায়, অথবা কোন সন্দেহজনক তাবিজ পাওয়া যায়। তাহলে ভেতর থেকে তাবিজের কাগজটা বের করবেন। (সতর্কতা হিসেবে যাদুর কোন জিনিশ খালি হাতে ধরা উচিত না)

এরপর একটা পাত্রে পানি নিবেন, তারপর “সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯” একবার, এরপর সুরা ইখলাস ফালাক নাস ৩বার পড়বেন, এবং পানিতে ফুঁ দিবেন। তারপর যাদুর জিনিশগুলো পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখবেন । তাবিজ হলে, কাগজ, ঠোঙা, সুতা সব ডুবাবেন। তারপর কাগজটা নষ্ট করে দিবেন। তাহলে ইনশাআল্লাহ যাদু ধ্বংস হয়ে যাবে।

যদি যাদুর জিনিশগুলো খুঁজে না পাওয়া যায়, তবে বাড়িতেই কোথাও পুঁতে রাখা আছে এরকম জানা যায়। তাহলে উপরের আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে তিনদিন পুরো বাড়িতে ছিটিয়ে দিলে ইনশাআল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে।

 

যিনি বিদ্বেষন, বশীকরণ বা অন্য কোন যাদুটোনা দ্বারা আক্রান্ত তার চিকিৎসার উপায় কি? মুমিন ব্যক্তি যাদুটোনা থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারেন অথবা কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে যাদুটোনা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কুরআন ও হাদিসে এ সম্পর্কিত কোন দুআ-দরুদ বা যিকির-আযকার আছে কি?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যাদুটোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে: এক: যাদুকর কিভাবে যাদু করেছে সেটা আগে জানতে হবে। উদাহরণতঃ যদি জানা যায় যে, যাদুকর কিছু চুল নির্দিষ্ট কোন স্থানে অথবা চিরুনির মধ্যে অথবা অন্য কোন স্থানে রেখে দিয়েছে। যদি স্থানটি জানা যায় তাহলে সে জিনিসটি পুড়িয়ে ফেলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে যাতে যাদুর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়, যাদুকর যা করতে চেয়েছে সেটা বাতিল হয়ে যায়। দুই: যদি যাদুকরকে শনাক্ত করা যায় তাহলে তাকে বাধ্য করতে হবে যেন সে যে যাদু করেছে সেটা নষ্ট করে ফেলে। তাকে বলা হবে: তুমি যে তদবির করেছ সেটা নষ্ট কর নতুবা তোমার গর্দান যাবে। সে যাদুর তদবিরটি ধ্বংস করে ফেলার পর মুসলিম শাসক তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিবেন। কারণ বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, যাদুকরকে তওবার আহ্বান জানানো ছাড়া হত্যা করা হবে। যেমনটি করেছেন- উমর (রাঃ)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: “যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে তরবারির আঘাতে তার গর্দান ফেলে দেয়া।” যখন হাফসা (রাঃ) জানতে পারলেন যে, তাঁর এক বাঁদি যাদু করে তখন তাকে হত্যা করা হয়। তিন: যাদু নষ্ট করার ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁকের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে: এর পদ্ধতি হচ্ছে- যাদুতে আক্রান্ত রোগীর উপর অথবা কোন একটি পাত্রে আয়াতুল কুরসি অথবা সূরা আরাফ, সূরা ইউনুস, সূরা ত্বহা এর যাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়বে। এগুলোর সাথে সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়বে এবং রোগীর জন্য দোয়া করবে। বিশেষতঃ যে দুআটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে:

“আল্লাহুম্মা, রাব্বান নাস! আযহিবিল বা’স। ওয়াশফি, আনতাশ শাফি। লা শিফাআ ইল্লা শিফাউক। শিফাআন লা য়ুগাদিরু সাকামা।”

(অর্থ- হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রতিপালক! আপনি কষ্ট দূর করে দিন ও আরোগ্য দান করুন। (যেহেতু) আপনিই রোগ আরোগ্যকারী। আপনার আরোগ্য দান হচ্ছে প্রকৃত আরোগ্য দান। আপনি এমনভাবে রোগ নিরাময় করে দিন যেন তা রোগকে নির্মূল করে দেয়।)

জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে দোয়া পড়ে ঝাড়ফুঁক করেছেন সেটাও পড়া যেতে পারে। সে দুআটি হচ্ছে- “বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুযিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক।”

(অর্থ- আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। সকল কষ্টদায়ক বিষয় থেকে। প্রত্যেক আত্মা ও ঈর্ষাপরায়ণ চক্ষুর অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি।)

এই দোয়াটি তিনবার পড়ে ফুঁ দিবেন। সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার পড়ে ফুঁ দিবেন। আমরা যে দোয়াগুলো উল্লেখ করলাম এ দোয়াগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিতে হবে। এরপর যাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তি সে পানি পান করবে। আর অবশিষ্ট পানি দিয়ে প্রয়োজনমত একবার বা একাধিক বার গোসল করবে। তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় রোগী আরোগ্য লাভ করবে। আলেমগণ এ আমলগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন। শাইখ আব্দুর রহমান বিন হাসান (রহঃ) ‘ফাতহুল মাজিদ শারহু কিতাবিত তাওহিদ’ গ্রন্থের ‘নাশরা অধ্যায়ে’ এ বিষয়গুলো ও আরো কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন। চার: সাতটি কাঁচা বরই পাতা সংগ্রহ করে পাতাগুলো গুড়া করবে। এরপর গুড়াগুলো পানিতে মিশিয়ে সে পানিতে উল্লেখিত আয়াত ও দোয়াগুলো পড়ে ফুঁ দিবে। তারপর সে পানি পানি করবে; আর কিছু পানি দিয়ে গোসল করবে। যদি কোন পুরুষকে স্ত্রী-সহবাস থেকে অক্ষম করে রাখা হয় সেক্ষেত্রেও এ আমলটি উপকারী। সাতটি বরই পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখবে। তারপর সে পানিতে উল্লেখিত আয়াত ও দোয়াগুলো পড়ে ফুঁ দিবে। এরপর সে পানি পান করবে ও কিছু পানি দিয়ে গোসল করবে।

যাদুগ্রস্ত রোগী ও স্ত্রী সহবাসে অক্ষম করে দেয়া ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য বরই পাতার পানিতে যে আয়াত ও দোয়াগুলো পড়তে হবে সেগুলো নিম্নরূপ:

১- সূরা ফাতিহা পড়া।

২- আয়াতুল কুরসি তথা সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত পড়া।

اَللّٰهُ لَآ اِلٰهَ اِلَّا ھُوَۚ اَلْـحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَاْخُذُهٗ سِـنَةٌ وَّلَا نَوْمٌۭ لَهٗ مَا فِي السَّمٰوٰتِ وَمَا فِي الْاَرْضِۭ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗٓ اِلَّا بِاِذْنِهٖ ۭ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَھُمْ ۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖٓ اِلَّا بِمَا شَاۗءَۚ وَسِعَ كُرْسِـيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ ۚ وَلَا يَـــــُٔـــوْدُهٗ حِفْظُهُمَاۚ وَھُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ

(আয়াতটির অর্থ হচ্ছে-“আল্লাহ্; তিনি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়। আসমানসমূহে যা কিছু রয়েছে ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে সে সবকিছু তিনি জানেন। আর যা তিনি ইচ্ছে করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না। তাঁর ‘কুরসী’ আকাশসমূহ ও পৃথিবীকে পরিব্যাপ্ত করে আছে; আর এ দুটোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। তিনি সুউচ্চ সুমহান।)

৩- সূরা আরাফের যাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়া। সে আয়াতগুলো হচ্ছে-

قَالَ إِنْ كُنْتَ جِئْتَ بِآيَةٍ فَأْتِ بِهَا إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ (106) فَأَلْقَى عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ ثُعْبَانٌ مُبِينٌ (107) وَنَزَعَ يَدَهُ فَإِذَا هِيَ بَيْضَاءُ لِلنَّاظِرِينَ (108) قَالَ الْمَلَأُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ إِنَّ هَذَا لَسَاحِرٌ عَلِيمٌ (109) يُرِيدُ أَنْ يُخْرِجَكُمْ مِنْ أَرْضِكُمْ فَمَاذَا تَأْمُرُونَ (110) قَالُوا أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَأَرْسِلْ فِي الْمَدَائِنِ حَاشِرِينَ (111) يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ (112) وَجَاءَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوا إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِنْ كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِينَ (113) قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ لَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ (114) قَالُوا يَا مُوسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ نَحْنُ الْمُلْقِينَ (115) قَالَ أَلْقُوا فَلَمَّا أَلْقَوْا سَحَرُوا أَعْيُنَ النَّاسِ وَاسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَاءُوا بِسِحْرٍ عَظِيمٍ (116) وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ (117) فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (118) فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ (119) وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ (120)قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ (121) رَبِّ مُوسَى وَهَارُونَ (122)

(অর্থ- সে বলল, তুমি যদি কোন নিদর্শন নিয়ে এসে থাক, তাহলে তা পেশ কর যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাক। তখন তিনি নিজের লাঠিখানা নিক্ষেপ করলেন এবং তৎক্ষণাৎ তা জলজ্যান্ত এক অজগরে রূপান্তরিত হয়ে গেল। আর বের করলেন নিজের হাত এবং তা সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের চোখে ধবধবে উজ্জ্বল দেখাতে লাগল। ফেরাউনের সাঙ্গ-পাঙ্গরা বলতে লাগল, নিশ্চয় লোকটি বিজ্ঞ-যাদুকর। সে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায়। এ ব্যাপারে তোমাদের মতামত কি? তারা বলল, আপনি তাকে ও তার ভাইকে অবকাশ দান করুন এবং শহরে বন্দরে সংগ্রাহক পাঠিয়ে দিন। যাতে তারা পরাকাষ্ঠাসম্পন্ন বিজ্ঞ যাদুকরদের এনে সমবেত করে। বস্তুতঃ যাদুকররা এসে ফেরাউনের কাছে উপস্থিত হল। তারা বলল, আমাদের জন্যে কি কোন পারিশ্রমিক নির্ধারিত আছে, যদি আমরা জয়লাভ করি? সে বলল, হ্যাঁ এবং অবশ্যই তোমরা আমার নিকটবর্তী লোক হয়ে যাবে। তারা বলল, হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর অথবা আমরা নিক্ষেপ করছি। তিনি বললেন, তোমরাই নিক্ষেপ কর। যখন তারা বান নিক্ষেপ করল তখন লোকদের চোখগুলো যাদুগ্রস্ত হয়ে গেল, মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলল এবং মহাযাদু প্রদর্শন করল। তারপর আমি ওহীযোগে মূসাকে বললাম, এবার নিক্ষেপ কর তোমার লাঠিখানা। অতএব সঙ্গে সঙ্গে তা সে সমুদয়কে গিলতে লাগল, যা তারা যাদুর বলে বানিয়েছিল। এভাবে সত্য প্রকাশ হয়ে গেল এবং ভুল প্রতিপন্ন হয়ে গেল যা কিছু তারা করেছিল। সুতরাং তারা সেখানেই পরাজিত হয়ে গেল এবং অতীব লাঞ্ছিত হল। এবং যাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল। বলল, আমরা ঈমান আনছি মহা বিশ্বের প্রতিপালকের প্রতি। যিনি মূসা ও হারুনের প্রতিপালক।)[সূরা আরাফ, আয়াত: ১০৬-১২২]

৪- সূরা ইউনুসের যাদুবিষয়ক আয়াতগুলো পড়া। সেগুলো হচ্ছে-

وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُونِي بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ (79) فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُمْ مُوسَى أَلْقُوا مَا أَنْتُمْ مُلْقُونَ (80) فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَى مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ (81) وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ

(অর্থ- আর ফেরাউন বলল, আমার কাছে নিয়ে এস সুদক্ষ যাদুকরদিগকে। তারপর যখন যাদুকররা এল, মূসা তাদেরকে বললেন:নিক্ষেপ কর, তোমরা যা কিছু নিক্ষেপ করে থাক। অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করল, মূসা বললেন, যা কিছু তোমরা এনেছ তা সবই যাদু-এবার আল্লাহ এসব ভণ্ডুল করে দিচ্ছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ দুস্কর্মীদের কর্মকে সুষ্ঠুতা দান করেন না। আল্লাহ সত্যকে সত্যে পরিণত করেন স্বীয় নির্দেশে যদিও পাপীদের তা মনঃপুত নয়।)[সূরা ইউনুস, আয়াত: ৭৯-৮২]

৫- সূরা ত্বহা এর আয়াতগুলো পড়া। সেগুলো হচ্ছে-

قَالُوا يَا مُوسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَلْقَى (65) قَالَ بَلْ أَلْقُوا فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَى (66) فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُوسَى (67) قُلْنَا لَا تَخَفْ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعْلَى (68) وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَى (69)

(অর্থ-তারাবললঃহেমূসা, হয়তুমিনিক্ষেপকর, নাহয়আমরাপ্রথমেনিক্ষেপকরি। মূসাবললেনঃবরংতোমরাইনিক্ষেপকর।তাদেরযাদুরপ্রভাবেহঠাৎতাঁরমনেহল, যেনতাদেররশিগুলোওলাঠিগুলোছুটাছুটিকরছে। অতঃপরমূসামনেমনেকিছুটাভীতিঅনুভবকরলেন। আমিবললামঃভয়করোনা, তুমিবিজয়ীহবে। তোমারডানহাতেযাআছেতুমিতানিক্ষেপকর।এটাতারাকরেছেযাকিছুসেগুলোকেগ্রাসকরেফেলবে।তারাযাকরেছেতাতোকেবলযাদুকরেরকলাকৌশল।যাদুকরযেখানেইথাকুক, সফলহবেনা।)[সূরা ত্বহা, আয়াত: ৬৫-৬৯]

৬- সূরা কাফিরুন পড়া।

৭- সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস ৩ বার করে পড়া।

৮- কিছু দোয়া দরুদ পড়া। যেমন

“আল্লাহুম্মা, রাব্বান নাস! আযহিবিল বা’স। ওয়াশফি, আনতাশ শাফি। লা শিফাআ ইল্লা শিফাউক। শিফাআন লা য়ুগাদিরু সাকামা।” [৩ বার]

এর সাথে যদি এ দোয়াটিও পড়াও ভাল “বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুযিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক।”[৩ বার] পূর্বোক্ত আয়াত ও দোয়াগুলো যদি সরাসরি যাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তির উপরে পড়ে তার মাথা ও বুকে ফুঁক দেয় তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাময় হবে।

সূত্র: শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বাযের বিবিধ ফতোয়া ও প্রবন্ধ সংকলন সমগ্র (৮/১৪৪)

 

প্রশ্ন

এক লোক আমার বাসায় কাজ করে। আমার পিতা তাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, সে বদনজরে আক্রান্ত। তিনি তার জন্য একটি পাথর নিয়ে এসে বললেন: পাথরটি তোমার পকেটে রাখ; যাতে করে এটি তোমাকে বদনজর থেকে রক্ষা করে। কিছুদিন পর তার জন্য একটি কাগজ নিয়ে আসলেন সে কাগজে লেখা ছিল: ا, ب, ع, د (আরবী বর্ণ)। কাগজটির নীচে লেখা ছিল: الله الحامي (আল্লাহ্‌ই রক্ষাকারী)। আরও কিছু অবোধগম্য লেখা, নকশা ও আঁকিবুকি ছিল। আমরা এ কাগজটি থেকে মুক্ত হতে চাই। যেহেতু এটি শরিয়ত অনুমোদিত নয়। কিন্তু আমরা জানি না এর ক্ষতির শিকার না হয়ে কিভাবে এর থেকে মুক্ত হতে পারি। আমরা আপনাদের কাছ থেকে কিছু উপদেশ বাণী ও কল্যাণকর কথা আশা করি।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

বদনজর লাগা সত্য; যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়েছেন। এর থেকে বাঁচতে হবে শরিয়ত অনুমোদিত রুকিয়া (ঝাড়ফুঁক) এবং প্রাত্যহিক দোয়াদুরুদের মাধ্যমে; কবিরাজ ও যাদুকরেরা যে কবচ দেয় ও তাবিজ লেখে সেগুলো দিয়ে নয়। বদনজরের স্বরূপ ও বাঁচার উপায় জানতে দেখুন: 20954 নং ও 11359 নং প্রশ্নোত্তর।

দুই:

বদনযর কিংবা যাদু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পাথর বা তাবিজ সাথে রাখা নিষিদ্ধ তাবিজ লটকানোর মধ্যে পড়বে। উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, “একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একদল লোক উপস্থিত হল। তিনি দলটির নয়জনকে বাইআত করান। একজনকে বাইআত করাননি। তারা (সাহাবীরা) বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আপনি নয়জনকে বাইআত করিয়েছেন; একে করাননি কেন? তিনি বললেন: তার সাথে কবচ রয়েছে। তখন লোকটি হাত ঢুকিয়ে কবচটি ছিঁড়ে ফেলল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বাইআত করালেন। আর বললেন: যে ব্যক্তি কবচ লটকালো সে শির্ক করল।”[মুসনাদে আহমেদ (১৬৯৬৯), শাইখ আলবানী ‘আস-সিলসিলাতুস সাহিহা’ গ্রন্থে (৪৯২) হাদীসটিকে সহিহ বলেছেন]

উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি কবচ ঝুলাবে আল্লাহ্‌যেন তার উদ্দেশ্য পূর্ণ না করেন। যে ব্যক্তি ودعة(পাথর) লটকাবে আল্লাহ্‌যেন তাকে স্বস্তিতে না রাখেন।”[ইমাম আহমাদ (১৭৪৪০); আরনাউত হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]

ودعة: শব্দটি ودع শব্দের একবচনের রূপ। অর্থ- সমুদ্র থেকে সংগৃহীত পাথর যা বদনযরকে প্রতিহত করার জন্য তারা ঝুলাত।

খাত্তাবী (রহঃ) বলেন: “تَمِيْمَة (কবচ) সম্পর্কে বলা হয় এটি এক ধরণের পুঁতি যা তারা বিপদাপদকে প্রতিহত করার জন্য লটকাতো”।

বাগাভী বলেন: تَمَائِم শব্দটি تَمِيْمَة শব্দের বহুবচন। অর্থ- এক ধরণের পুঁতি যা বেদুইনরা তাদের সন্তানদের গলায় ঝুলিয়ে দিত; বদনযর থেকে বাঁচানোর বিশ্বাস থেকে; শরিয়ত সেটাকে বাতিল ঘোষণা করেছে”।[আত-তারিফাত আল-ইতিকাদিয়্যা (পৃষ্ঠা-১২১)]

আলেমগণের দুটো অভিমতের মধ্যে বিশুদ্ধ অভিমত হচ্ছে তাবিজ-কবচ লটকানো হারাম; এমনকি সেটা যদি কুরআন দিয়ে হয় তবুও। দেখুন: 10543 নং প্রশ্নোত্তর। আর পক্ষান্তরে, যে তাবিজে এমন বর্ণ ও অপরিচিত শব্দাবলী রয়েছে সে সব তাবিজ হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন মতভেদ নাই। সেগুলো যাদু হওয়া বা জ্বিনকে ব্যবহার করা থেকে নিরাপদ নয়।

তিন:

কোন তাবীয-কবচ ও যাদুকর্ম পাওয়া গেলে সেটা থেকে মুক্তি লাভের উপায় হল যদি এতে গিঁট থাকে তাহলে সেগুলো খুলে ফেলা। এর অংশগুলোর একটি থেকে অপরটিকে বিচ্ছিন্ন করা। এরপর পুড়িয়ে বা অন্য কোনভাবে সেগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা। যেহেতু যায়েদ বিন আরকাম (রাঃ) এর হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, “এক ইহুদী লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসত এবং তিনি তাকে নিরাপদ মনে করতেন। সেই লোক তাঁকে যাদু করার জন্য সুতাতে গিঁট দিয়ে সেটা জনৈক আনসারী সাহাবীর কূপে রেখে দেয়। ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছুদিন অসুস্থ থাকেন। আয়েশা (রাঃ) এর হাদিস অনুযায়ী: ছয়মাস। এরপর দুইজন ফেরেশতা তাঁকে দেখতে এল। তাদের একজন তাঁর মাথার কাছে বসল। অপরজন তাঁর পায়ের কাছে বসল। তাদের দুইজনের একজন বলল: তুমি কি জান তাঁর অসুখটা কী? সে বলল: অমুক লোকটি যে তাঁর কাছে আসত সেই লোক তাঁর জন্য সুতায় গিঁট মেরে (যাদু করে) অমুক আনসারীর কূপে ফেলে দিয়েছে। তিনি যদি সেই গিঁটের সুতাটি উঠানোর জন্য লোক পাঠান সে দেখতে পাবে যে, কূপের পানি হলুদ হয়ে গেছে। এরপর তাঁর কাছে জিব্রাইল (আঃ) আসলেন এবং সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস নাযিল করলেন। তিনি বললেন: জনৈক ইহুদী লোক আপনাকে যাদু করেছে। ঐ যাদুকর্মটি অমুক লোকের কূপে আছে। বর্ণনাকারী বলেন: তখন তিনি আলী (রাঃ) কে পাঠালেন। তিনি গিয়ে দেখলেন কূপের পানি হলুদ হয়ে গেছে। তিনি সুতাটি উঠালেন এবং সেটি নিয়ে হাযির হলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে একটি করে আয়াত পড়ে গিঁটগুলো খোলার আদেশ দেন। তিনি আয়াত পড়ে পড়ে গিঁট খুলতে লাগলেন। যখনই কোন একটি গিঁট খোলা হত তখনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছুটা হালকা বোধ করতেন। এভাবে তিনি সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠেন।”[আলবানী ‘সিলসিলাতুস সাহিহা’ গ্রন্থে (৬/৬১৫) হাদিসটি বর্ণনা করেন এবং হাদিসটিকে হাকেম (৪/৪৬০), নাসাঈ (২/১৭২), আহমাদ (৪/৩৬৭) ও তাবারানীর হাদিস হিসেবে উল্লেখ করেন।]

শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন: “যাদুকর (কবিরাজ) যে তদবির করেছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। উদাহরণতঃ যদি জানা যায় যে, সে কিছু চুল কোন এক স্থানে রেখেছে কিংবা চিরুনীতে রেখেছে কিংবা অন্য কোথাও রেখেছে; যদি জানা যায় যে, সে অমুক স্থানে রেখেছে তাহলে ঐ জিনিসটি সে স্থান থেকে সরিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে ও ধ্বংস করে ফেলতে হবে। এর ফলে যাদুর ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যাবে এবং যাদুকর যা করতে চেয়েছে সেটা ভণ্ডুল হয়ে যাবে।”মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া মাকালাতিস্‌ শাইখ বিন বায (৮/১৪৪)]

আপনার বাবার কাছে যে কাগজটি আছে সেটা মুক্ত হতে হবে ঐ কাগজটি ছিঁড়ে পুড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে। এর সাথে আপনার বাবাকে তাবিজ ঝুলানো ও তাবিজের সাথে সম্পৃক্ত থাকার গুনাহ থেকে তওবা করার উপদেশ দিতে হবে। আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

 

তাবিয লটকানো কি জায়েয? আমি বিলাল ফিলিপসের ‘কিতাবুত তাওহীদ’ ও অন্য কিছু বই পড়েছি। তবে, আমি মুয়াত্তাতে কিছু হাদিস পেয়েছি; যে হাদিসগুলো কিছু তাবিযকে জায়েয করে। অনুরূপভাবে কিতাবুত তাওহীদেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোন কোন সলফে সালেহীন কিছু তাবিয ব্যবহারের অনুমতি দিতেন। এ হাদিসগুলো মুয়াত্তার ৫০ তম খণ্ডে রয়েছে। হাদিস নম্বর হচ্ছে ৪, ১১ ও ১৪। আশা করি জবাব দিবেন। আমাকে এ হাদিসগুলোর সঠিকতার ব্যাপারে এবং এ বিষয়ে আরও বেশি তথ্য অবগত করবেন। আপনাকে ধন্যবাদ।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

প্রশ্নকারী ভাই যে হাদিসগুলোর সঠিকতার ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন আমরা সে হাদিসগুলো পাইনি। যেহেতু আমরা হাদিসগুলো জানতে পারিনি। কারণ তিনি উল্লেখ করেছেন যে, মুয়াত্তার ৫০ তম খণ্ডে! কিন্তু মুয়াত্তা এক খণ্ডের কিতাব।

তবে আমরা এ বিষয়ে যে হাদিসগুলো রয়েছে সাধ্যানুযায়ী সে হাদিসগুলো উল্লেখ করব এবং এ হাদিসগুলোর উপর আলেমদের আরোপকৃত হুকুম উল্লেখ করব। হতে পারে এগুলোর মধ্যে প্রশ্নকারী ভাইয়ের উদ্দিষ্ট হাদিসগুলো থাকতে পারে।

১। আব্দুল্লাহ্‌ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দশটি স্বভাবকে অপছন্দ করতেন; তবে হারাম হিসেবে নয়: খালুক (হলুদ রঙের বিশেষ সুগন্ধি), শুভ্র কেশের পরিবর্তন, লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরা, স্বর্ণের আংটি পরা, পাশা খেলা, অনুপযুক্ত স্থানে সৌন্দর্য্যের প্রদর্শন, মুআওয়িযাত (সূরা নাস, সূরা ফালাক…) ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে ঝাড়ফুঁক করা, তাবিয লটকানো, নির্দিষ্ট স্থানের পরিবর্তে অন্যত্র বীর্যপাত করা এবং বাচ্চা নষ্ট করা।”[সুনানে নাসাঈ (৫০৮৮০) ও সুনানে আবু দাউদ (৪২২২)]

“খালুক”: এক প্রকার হলুদ রঙের সুগন্ধি।

“নির্দিষ্ট স্থানের পরিবর্তে অন্যত্র বীর্যপাত করা”: অর্থাৎ বীর্য স্ত্রীর যৌনাঙ্গে না ফেলে অন্যত্র ফেলা।

“বাচ্চা নষ্ট করা”: অর্থাৎ দুগ্ধদাত্রী স্ত্রীর সাথে সহবাস করা। কারণ স্ত্রী গর্ভবতী হয়ে গেলে তার দুধ থাকবে না। অর্থাৎ তিনি দুগ্ধদাত্রী স্ত্রীর সাথে সহবাস করাকে অপছন্দ করেছেন; হারাম করেননি।

শাইখ আলবানী ‘যায়িফুন নাসাঈ’ গ্রন্থে (৩০৭৫) হাদিসটিকে যয়ীফ (দুর্বল) বলেছেন

২। আব্দুল্লাহ্‌ বিন মাসউদের স্ত্রী যয়নব (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: নিশ্চয় ঝাড়ফুঁক, তাবিয ও কবচ শির্ক। ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর স্ত্রী বললেন: আপনি কেন এ কথা বলছেন? আল্লাহ্‌র শপথ! আমার চোখ থেকে কেতর ও পানি বের হত। তখন আমি অমুক ইহুদীর কাছে যেতাম। সে আমাকে ঝাড়ফুঁক করলে আমার চোখ শান্ত হয়ে যেত। তখন ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন: সেটা ছিল শয়তানের কাজ। শয়তান তার হাত দিয়ে চোখে খোঁচা দিত। যখন ঝাড়ফুঁক করা হত তখন শয়তান চোখ থেকে সরে যেত। বরং তোমার এইটুকু বলাই যথেষ্ট যেভাবে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন:أَذْهِبْ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا (ওহে মানুষের প্রভু! আপনি রোগ দূর করে দিন। আরোগ্য করুন। আপনিই তো আরোগ্যকারী। আপনার আরোগ্য ছাড়া কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দিন যাতে করে কোন রোগই না থাকে।)[সুনানে আবু দাউদ (৩৮৮৩), সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৫৩০)] শাইখ আলবানী এ হাদিসটিকে ‘আস-সিলসিলাতুস সহিহা’ গ্রন্থে (৩৩১) ও (২৯৭২) সহিহ বলেছেন।

৩। উকবা বিন আমের আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: “যে ব্যক্তি কবচ ঝুলাবে আল্লাহ্‌ যেন তার উদ্দেশ্য পূর্ণ না করেন এবং যে ব্যক্তি ودعة (পাথর) লটকাবে আল্লাহ্‌ যেন তাকে স্বস্তিতে না রাখেন।”[মুসনাদে আহমাদ (১৬৯৫১)] আলবানী ‘যয়ীফুল জামে’ গ্রন্থে (৫৭০৩) এ হাদিসটিকে দুর্বল।

৪। উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, “একবার রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একদল লোক উপস্থিত হল। তিনি দলটির নয়জনকে বাইআত করালেন। একজনকে বাইআত করাননি। তারা (সাহাবীরা) বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আপনি নয়জনকে বাইআত করিয়েছেন; একে করাননি কেন? তিনি বললেন: তার সাথে কবচ রয়েছে। তখন লোকটি হাত ঢুকিয়ে কবচটি ছিঁড়ে ফেলল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বাইআত করালেন। আর বললেন: যে ব্যক্তি কবচ লটকালো সে শির্ক করল।”[মুসনাদে আহমাদ (১৬৯৬৯)] আলবানী ‘আস-সিলসিলাতুস সাহিহা’ গ্রন্থে (৪৯২) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।

দুই:

আরবী التمائم শব্দটি تَمِيْمَة শব্দের বহুবচন। تَمِيْمَة (তাবিয-কবচ) হল: অনিষ্ট দূর করা (বিশেষতঃ বদনজর) কিংবা কল্যাণ আনয়ন করার উদ্দেশ্যে পুতি, হাড্ডি ইত্যাদি যা কিছু বাচ্চাদের গলায় কিংবা বড় মানুষের গলায় ঝুলানো হয় কিংবা বাসার উপরে বা গাড়ীতে রাখা হয়।

তাবিয-কবচের প্রকারভেদ ও প্রত্যেক প্রকারের হুকুম সম্পর্কে আলেমদের বক্তব্য নিম্নরূপ এবং এর মধ্যে কিছু দৃষ্টি আকর্ষণী ও কিছু পারিপার্শ্বিক তথ্যও রয়েছে:

১। শাইখ সুলাইমান বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রহঃ) বলেছেন: জেনে রাখুন, আলেম সাহাবীগণ, আলেম তাবেয়ীনগণ ও তাঁদের পরবর্তী আলেমগণ কুরআন, আল্লাহ্‌র নাম ও সিফাতসমূহের তাবিয লটকানো জায়েয হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ করেছেন। একদল বলেছেন: তা জায়েয। এটি আব্দুল্লাহ্‌ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবীর অভিমত এবং আয়েশা (রাঃ) থেকে যা বর্ণিত হয়েছে সেটার প্রত্যক্ষ ভাব। আবু জাফর আল-বাকেরও এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন এবং ইমাম আহমাদ থেকেও এ ধরণের একটি অভিমত বর্ণিত আছে। তাঁরা সকলে উল্লেখিত হাদিসকে শির্কী তাবিয-কবচ অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন। আর যে সব তাবিয-কবচে কুরআন, আল্লাহ্‌র নাম ও গুণাবলী রয়েছে সে সবের বিধান এগুলো দিয়ে রুকিয়া করার মত। আমি বলব: এটি ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) এর মনোনীত অভিমতের প্রত্যক্ষ ভাব।

অপর একদল আলেম বলেন: তা জায়েয নয়। এটি ইবনে মাসউদ (রাঃ) ও ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর উক্তি এবং হুযাইফা (রাঃ), উকবা বিন আমের (রাঃ) ও ইবনে আকিম (রাঃ) এর উক্তির প্রত্যক্ষ ভাব। একদল তাবেয়ীও এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর ছাত্রগণ। এটি ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণিত অন্য একটি অভিমত। ইমাম আহমাদের অনেক ছাত্র এ অভিমতটি গ্রহণ করেছেন এবং তার মাযহাবের উত্তরসূরী আলেমগণ এ অভিমতের পক্ষে দৃঢ়তা জ্ঞাপন করেছেন। তাঁরা এ হাদিস দিয়ে এবং এ অর্থবোধক অন্যান্য হাদিস দিয়ে প্রমাণ পেশ করেছেন। কেননা এ হাদিসের বাহ্যিক মর্ম সামগ্রিক; এতে কুরআন দিয়ে প্রদেয় তাবিয-কবচ ও অন্য কিছু দিয়ে প্রদেয় তাবিয-কবচের মধ্যে পার্থক্য করা হয়নি; ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রে যেভাবে পার্থক্য করা হয়েছে। এ অভিমতের পক্ষে এভাবেও সমর্থন মিলে যে, যে সকল সাহাবায়ে কেরাম হাদিসটি বর্ণনা করেছেন তারা সকলে এ হাদিস থেকে সামগ্রিকতা বুঝেছেন; যেমনটি ইতিপূর্বে ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর অভিমত আলোচিত হয়েছে।

 

আবু দাউদ (রহঃ) ঈসা বিন হামযা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: একবার আমি আব্দুল্লাহ্‌ বিন আকিম (রাঃ) এর নিকট প্রবেশ করলাম। তখন তিনি হুমরা (রোগে) আক্রান্ত ছিলেন। আমি বললাম: আপনি কি তাবিয লটকাবেন না? তিনি বললেন: আমি এর থেকে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন কিছু লটকালো তাকে সে জিনিসের সাথে সম্পৃক্ত করে দেয়া হয়….”

এই হচ্ছে কুরআন ও আল্লাহ্‌র নাম-সিফাত দিয়ে তাবিয লটকানোর ব্যাপারে আলেমদের মতভেদ। সুতরাং তাঁদের পরবর্তীতে শয়তানদের নাম দিয়ে ঝাড়ফুঁক করা ও শয়তানের নামগুলো গলায় লটকানোর যে বিদাত চালু হয়েছে; বরং শয়তানদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া, তাদের কাছে আশ্রয় চাওয়া, তাদের জন্য জবাই করা এবং অনিষ্ট দূর করা ও কল্যাণ আনয়নের জন্য তাদের কাছে প্রার্থনা করা ইত্যাদি যা কিছু নিরেট শির্ক এবং আল্লাহ্‌ যাদেরকে রক্ষা করেছেন তারা ছাড়া অসংখ্য মানুষের উপর এগুলোই প্রবল সে সবের ব্যাপারে আপনার কী ধারণা হতে পারে? সুতরাং আপনি একটু গভীর চিন্তাভাবনা করে দেখুন এ বিষয়ে ও এ কিতাবের অন্যান্য বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেছেন, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণ কিসের উপরে ছিলেন, তাদের পরবর্তীতে আলেমগণ কী বলেছেন; এরপর আপনি পরবর্তী যামানার লোকেরা যা কিছু ঘটিয়েছে সেগুলোর দিকে একটু নজর দিন তাহলে আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, বর্তমানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনিত ধর্ম প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসারীহীন। আল্লাহুল মুস্তাআন (আল্লাহ্‌ই সহায়)।[তাইসিরুল আযিযিল হামিদ (১৩৬-১৩৮)]

 

২। শাইখ হাফেয হাকামী বলেন: “যদি এটি (তাবিয-কবচ) কুরআনের আয়াত দিয়ে হয়, অনুরূপভাবে সহিহ সুন্নাহ দিয়ে হয় তাহলে এটি জায়েয হওয়ার ব্যাপারে পূর্বসুরি সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাদের পরবর্তী আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সালাফদের কেউ কেউ এটাকে জায়েয বলেছেন। এ ধরণের অভিমত আয়েশা (রাঃ), আবু জাফর মুহাম্মদ বিন আলী ও অন্যান্য সাহাবী থেকে বর্ণিত আছে। আর তাঁদের কেউ কেউ এগুলো থেকে নিষেধ করেছেন, অপছন্দ করেছেন এবং এটাকে জায়েয মনে করেননি। তাদের মধ্যে রয়েছেন আব্দুল্লাহ্‌ বিন আকীম (রাঃ), আব্দুল্লাহ্‌ বিন আমর (রাঃ), উকবা বিন আমের (রাঃ), আব্দুল্লাহ্‌ বিন মাসউদ (রাঃ) এবং তাঁর ছাত্রবর্গ যেমন আসওয়াদ, আলকামা এবং তাদের পরবর্তী ইব্রাহিম নাখায়ী ও অন্যান্য আলেমগণ।

নিঃসন্দেহে তাবিয থেকে বারণ করা গর্হিত আকিদার পথ রূদ্ধ করার ক্ষেত্রে অধিক উপযুক্ত; বিশেষতঃ আমাদের এ যামানায়। কারণ অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীগণ তাঁদের সে পবিত্র যামানাতেই এটাকে অপছন্দ করেছেন; অথচ তাদের অন্তরে ঈমান ছিল পাহাড়ের মত মজবুত। সুতরাং আমাদের এ ফিতনার যামানায় এটাকে অপছন্দ করা অধিক উপযুক্ত ও অধিক যুক্তিযুক্ত। কিভাবে নয়; এ যামানার লোকেরা এ রুখসতকে ব্যবহার করে নিরেট হারাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে এবং ঐ হারামে পৌঁছার জন্য এটাকে তারা একটি মাধ্যমে হিসেবে গ্রহণ করেছে! যেমন তারা তাবিজের মধ্যে একটি আয়াত, একটি সূরা, বিসমিল্লাহ্‌ বা এ জাতীয় কিছু একটা লিখে এরপর এর নীচে শয়তানী নকশাগুলো আঁকে; যারা তাদের বইগুলো পড়েছে তারা ছাড়া অন্যেরা এসব বুঝতে পারে না। যেমন তারা এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অন্তরকে আল্লাহ্‌র উপরে নির্ভরশীল হওয়ার পরিবর্তে তারা যে তাবিয লিখেছে এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে থাকার দিকে ধাবিত করে। বরং তাদের অধিকাংশই মিথ্যা কথা বলে তাদেরকে ভয় দেখায়; অথচ তাদের কিছুই হয়নি। তারা যাকে ফাঁদে ফেলে তার সম্পদ হস্তগত করতে চায় যখন বুঝতে পারে যে, সে তার দ্বারা প্রভাবিত তখন তার কাছে এসে বলে যে, তোমার পরিবারে বা তোমার সম্পদে বা তোমার নিজের এমন এমন ঘটবে। কিংবা বলে যে, তোমার সাথে জ্বিন আছে কিংবা এ জাতীয় অন্য কিছু এবং এর সাথে শয়তানী ওয়াসওয়াসার প্রাথিমক কিছু আলামত ও কিছু বিষয় উল্লেখ করে। এমনভাবে বলে যেন সে তার ব্যাপারে সম্যক অবগত ও তার প্রতি খুবই সহমর্মী, তার কল্যাণ করতে আগ্রহী। যখন এই নির্বোধ ও মূর্খ লোকটির অন্তর সে যা উল্লেখ করেছে তা শুনে ভীত হয়ে উঠে তখন সে তার প্রভু থেকে বিমুখ হয়ে পুরোপুরিভাবে এই মিথ্যুকের দিকে মনোনিবেশ করে, তার কাছে আশ্রয় চায়, আল্লাহ্‌র বদলে তার উপরে নির্ভর করে এবং তাকে বলে: আপনি যে সমস্যার কথা উল্লেখ করলেন সেটা থেকে মুক্তির উপায় কী? এটি প্রতিরোধ করার কৌশল কী? যেন এই ব্যক্তির হাতেই কল্যাণ ও অকল্যাণ। এ পর্যায়ে এসে এ ব্যক্তির ব্যাপারে এই মিথ্যুকের আশা পূর্ণ হয় এবং তার কাছ থেকে কিছু পাওয়ার লোভ আরও বেড়ে যায়। তখন সে বলে: ‘তুমি যদি আমাকে এত এত অর্থ দাও তাহলে আমি তোমার জন্য একটি পর্দা লিখে দিব। এই পর্দার দৈর্ঘ্য এত হবে, প্রস্থ এত হবে; এভাবে সে পর্দার বর্ণনা দেয় এবং রঙ রূপ দিয়ে সে তার কথা উপস্থাপন করে। এই পর্দাটি তুমি অমুক অমুক রোগ থেকে বাঁচার জন্য টানাবে।’ আপনি কি মনে করেন, এই বিশ্বাসের সাথে এই কর্মটি ছোট শির্ক? না; কক্ষণো নয়। বরং এটি গাইরুল্লাহ্‌কে উপাস্য বানানো, গাইরুল্লাহ্‌র উপরে নির্ভর করা, তার কাছে আশ্রয় চাওয়া, মাখলুকের কর্মের প্রতি ঝুঁকে পড়া এবং তাদেরকে তাদের ধর্ম থেকে বিচ্যুত করা। শয়তান কি এ কৌশলগুলো তার দোস্ত মানুষ শয়তানদের মাধ্যম ছাড়া করতে সক্ষম হত? আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “বলুন, রাতে ও দিনে কে তোমাদেরকে রহমানের হাত থেকে বাঁচাতে পারে? কিন্তু তারা নিজেদের রবের উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।”[সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৪২]

 

এসব ছাড়াও এই তাবিযের নকশার সাথে কুরআনের কিছু অংশ লেখা হয় এবং অপবিত্র অবস্থায়ও সেটা ব্যক্তির সাথে লটকানো থাকে। চাই ব্যক্তি লঘু অপবিত্র হোক কিংবা গুরু অপবিত্র হোক; এটি সবসময় তার সাথে থাকে। কোন প্রকার অপবিত্রতা থেকে সে এটাকে পবিত্র রাখে না। আল্লাহ্‌র শপথ; ইসলামের দাবীদার এই জিন্দীকরা (ধর্মত্যাগীরা) আল্লাহ্‌র কিতাবের যেভাবে অমর্যাদা করে আল্লাহ্‌র কিতাবের শত্রুরাও এইভাবে অমর্যাদা করে না। আল্লাহ্‌র শপথ; কুরআন নাযিল হয়েছে তেলাওয়াত করা, এর উপর আমল করা, কুরআনের নির্দেশনাবলী পালন করা, নিষেধাজ্ঞাসমূহ থেকে বিরত থাকা, এর সংবাদসমূহে বিশ্বাস করা, এর সীমারেখাগুলোতে থেমে যাওয়া, এর উপমাসমূহ থেকে উপদেশ গ্রহণ করা, এর ঘটনাসমূহ থেকে নসিহত গ্রহণ করা এবং এটি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এ ঈমান আনার জন্য। অথচ এ লোকেরা এ সকল আমলকে বাদ দিয়েছে, তাদের পিছনে ছুড়ে মেরেছে। কুরআনের লিপি ছাড়া কুরআনের আর কিছু তারা সংরক্ষণ করেনি; যাতে এটা করে তারা ভুরিভোজন ও উপার্জন করতে পারে; অন্য সব উপকরণের মত। যার মাধ্যমে তারা হারাম উপার্জন পর্যন্ত পৌঁছতে পারে; হালাল উপার্জন নয়। যদি কোন বাদশাহ বা আমীর তার অধঃস্থন কারো কাছে এই মর্মে পত্র পাঠাত যে, তুমি এটা এটা কর, এটা এটা বর্জন কর, তোমার অধীনে যারা আছে তাদেরকে এ এ নির্দেশ দাও এবং এটা এটা থেকে বারণ কর ইত্যাদি; তারা যদি এ পত্রটি না পড়ে, এর নির্দেশ ও নিষেধাবলী নিয়ে চিন্তাভাবনা না করে এবং যাদের কাছে এর পয়গাম পৌঁছানোর কথা ছিল তাদের কাছে না পৌঁছিয়ে গলায় লটকায় কিংবা বাহুতে লটকায় এবং পত্রের মধ্যে যা লেখা আছে সেটার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে তাহলে নিশ্চিত বাদশা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিবে। সুতরাং আসমান ও জমিনের পরাক্রমশালীর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কিতাবটির সাথে কী আচরণ হওয়া উচিত; আসমান ও জমিনের পরিপূর্ণ গুণ যার জন্য, আদি ও অন্তে প্রশংসা যার জন্য, সকল সিদ্ধান্তের মালিক যিনি! সুতরাং তাঁর ইবাদত করুন। তাঁর উপর নির্ভর করুন। তিনিই আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আমি তাঁর উপরই নির্ভর করছি। তিনি মহান আরশের প্রভু। আর যদি এ তাবিযগুলো কুরআন-সুন্নাহ ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে হয় তাহলে নিঃসন্দেহে এগুলো শির্ক। বরং ইসলাম পালনকারীদের বৈশিষ্ট্য থেকে দূরত্বের বিবেচনায় এগুলো আযলাম (ভাগ্য নির্ধারক বাটিসমূহ)-এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যদি এ তাবিযগুলো কুরআন-সুন্নাহ ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে হয়; যেমন- ইহুদীদের, প্রতিকৃতি পূজারীদের, জ্যোতিষীদের, ফেরেশতাদের কিংবা জ্বিন বশকারীদের নকশা দিয়ে হয় কিংবা পুতি, তাগা বা লোহার খোলশের হয় তাহলে এগুলো শির্ক; অর্থাৎ এগুলো লটকানো নিঃসন্দেহে শির্ক। যেহেতু এগুলো বৈধ উপকরণ কিংবা জানাশুনা কোন ঔষধ বা চিকিৎসা নয়। বরং তারা এসব তাবিজ-কবচের ব্যাপারে এমন একটি বিশ্বাস করছে যে, এগুলো অমুক অমুক ব্যথা থেকে সত্ত্বাগতভাবে নিজেই প্রতিরক্ষা করে; এগুলোর বিশেষ বিশেষত্বের কারণে যাতে তারা বিশ্বাস করে। ঠিক যেমন মূর্তিপূজারীরা তাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে বিশ্বাস করে। বরং এটি জাহেলী যামানার ঐসব আযলাম (বাটি)-এর মত যে বাটিগুলোকে তারা সবসময় সাথে রাখত এবং যখনই কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাইত তখনই এ বাটিগুলো দিয়ে তারা ভাগ্য নির্ধারণ করত। এমন তিনটি বাটি ছিল। একটির উপরে লেখা ছিল: কর। অন্য একটির উপরে লেখা ছিল: করো না। তৃতীয়টির উপরে লেখা ছিল: বিস্মৃতি ঘটেছে। যদি লটারীতে এই বাটিটি উঠত যার উপরে লেখা ছিল ‘কর’ তখন ব্যক্তি উদ্দিষ্ট কর্মে অগ্রসর হত। যদি এই বাটিটি উঠত যার উপরে লেখা ছিল ‘করো না’ তখন ব্যক্তি উদ্দিষ্ট কর্মটি বাদ দিতেন। আর যদি ‘বিস্মৃতি ঘটেছে’ লেখা বাটিটি উঠত তখন ব্যক্তি পুনরায় লটারী করত। আলহামদু লিল্লাহ্‌; আল্লাহ্‌ আমাদেরকে এগুলোর পরিবর্তে অন্য একটি উত্তম বদলা দিয়েছেন; সেটা হচ্ছে- ইস্তিখারার নামায ও দোয়া।

মূল কথা: কুরআন-সুন্নাহ ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে যে সব তাবিয সেগুলো নষ্ট বিশ্বাস ও শরিয়তের বিরোধিতার ক্ষেত্রে এবং ইসলামের অনুসারীদের বৈশিষ্ট্য থেকে দূরত্বের ক্ষেত্রে আযলাম (ভাগ্য বাটিগুলো)-র সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা নিরেট তাওহীদ এসব থেকে বহু দূরে। ইসলামের অনুসারীদের অন্তরে ঈমান এত মহান যে, এসব প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। তারা এত মহান মর্যাদা ও এত মজবুত একীনের অধিকারী যে, তারা গাইরুল্লাহ্‌র উপরে নির্ভর করতে পারে না এবং গাইরুল্লাহ্‌র প্রতি আস্থা রাখতে পারে না। আল্লাহ্‌ই তাওফিকের মালিক।”[মাআরিজুল কাবুল (২/৫১০-৫১২)]

আমাদের শাইখগণ তাবিয নিষিদ্ধ হওয়ার মতটি গ্রহণ করেছেন; এমনকি সে তাবিয কুরআন দিয়ে হলেও।

 

৩। স্থায়ী কমিটির আলোমগণ বলেছেন:

“যদি তাবিয-কবচ কুরআন ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে হয় তাহলে এমন তাবিয পরিধান করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে আলেমগণ একমত। তবে যদি কুরআন দিয়ে হয় সেক্ষেত্রে তারা মতভেদ করেছেন। কেউ কেউ তাবিয পরাকে জায়েয বলেছেন; আর কেউ কেউ হারাম বলেছেন। হাদিসগুলোর সামগ্রকিতার দলিল এবং হারামের পথ রূদ্ধ করার দিক বিবেচনা থেকে তাবিয পরা হারাম হওয়ার অভিমতটি অগ্রগণ্য।”

শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুল্লাহ্‌ বিন গুদইয়ান, শাইখ আব্দুল্লাহ্‌ বিন কূয়ূদ।[ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা (১/২১২)]

৪। শাইখ আলবানী (রহঃ) বলেন: “এখনও এই ভ্রষ্টতা বেদুঈন, কৃষক ও কিছু শহরবাসীদের মধ্যে বিদ্যমান। অনুরূপ ভ্রষ্টতা হল পুতি; কিছু কিছু ড্রাইভার তাদের গাড়ীর সামনের গ্লাসের সাথে যে পুতিগুলো লটকিয়ে রাখে। কেউ কেউ পুরোনো কোন একটি জুতা তার গাড়ীর সামনের অংশে কিংবা পিছনের অংশে টানিয়ে রাখে। আবার অন্য কেউ কেউ ঘোড়ার জুতা বাড়ীর সম্মুখভাগে কিংবা দোকানের সম্মুখভাগে লটকিয়ে রাখে। তারা দাবী করেন যে, এ সবকিছু বদনজর রোধ করার জন্য করা হয়। তাওহীদের ব্যাপারে অজ্ঞতার কারণে এ ধরণের আরও অনেক কিছুর সয়লাব হয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে শির্ক ও পৌত্তলিকতা; অথচ রাসূলগণকে প্রেরণ করা হয়েছে এবং কিতাবসমূহ নাযিল করা হয়েছে এগুলোকে প্রতিহত ও উৎখাত করার জন্য। আল্লাহ্‌র কাছেই মুসলমানদের অজ্ঞতা ও দ্বীন থেকে তাদের দূরে সরে যাওয়ার অভিযোগ পেশ করছি।”[সিলসিলাতুল আহাদিছিস সাহিহা (১/৮৯০, হাদিস নং ৪৯২)]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

তাফসিরে যাকারিয়া,আহসানুল বায়ান ও তাফহিমুল কুর’আন