সূরা ক্বারিয়াহ তাফসির

সূরা ক্বারিয়াহ

সূরা ১০১, আয়াত ১১

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

১০১:১ اَلۡقَارِعَۃُ ۙ

১. ভীতিপ্রদ মহা বিপদ(১)

১০১:২ مَا الۡقَارِعَۃُ ۚ

২. ভীতিপ্রদ মহা বিপদ কী?

وَ مَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا الۡقَارِعَۃُ ؕ

৩. আর ভীতিপ্রদ মহা বিপদ সম্পর্কে আপনাকে কিসে জানাবে?

یَوۡمَ یَکُوۡنُ النَّاسُ کَالۡفَرَاشِ الۡمَبۡثُوۡثِ

৪. সেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত,

وَ تَکُوۡنُ الۡجِبَالُ کَالۡعِہۡنِ الۡمَنۡفُوۡشِ

৫. আর পর্বতসমূহ হবে ধুনিত রঙ্গিন পশমের মত।

فَاَمَّا مَنۡ ثَقُلَتۡ مَوَازِیۡنُہٗ

৬. অতঃপর যার পাল্লাসমূহ ভারী হবে,

فَہُوَ فِیۡ عِیۡشَۃٍ رَّاضِیَۃٍ ؕ

৭. সে তো থাকবে সন্তোষজনক জীবনে।

وَ اَمَّا مَنۡ خَفَّتۡ مَوَازِیۡنُہٗ ۙ

৮. আর যার পাল্লাসমূহ হালকা হবে

فَاُمُّہٗ ہَاوِیَۃٌ

৯. তার স্থান হবে ‘হাওয়িয়াহ’

وَ مَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا ہِیَہۡ

১০. আর আপনাকে কিসে জানাবে সেটা কী?

نَارٌ حَامِیَۃٌ

১১. অত্যন্ত উত্তপ্ত আগুন।

 

“কারি’আহ” এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, মহাবিপদ।কা-রিআহ “এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, ” যে ঠোকে।

কারা’আ মানে কোন জিনিসকে কোন জিনিসের ওপর এমন জোরে মারা যার ফলে তা থেকে প্রচণ্ড আওয়াজ হয়। এই শাব্দিক অর্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ও বড় রকমের মারাত্মক বিপদের ক্ষেত্রে “কারি’আহ” শব্দ বলা হয়ে থাকে। [মুজামুল ওয়াসীত]

এখানে “আল-কারি’আহ” শব্দটি কিয়ামতের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। আবার সূরা আল-হাক্কায় কিয়ামতকে এই শব্দটি দিয়েই চিহ্নিত করা হয়েছে। [আয়াত: ৪] সুতরাং আল-কারি’আহ শব্দটি কিয়ামতের একটি নাম। যেমনিভাবে  الحاقَّة (হা-ক্ক্বাহ), الطَّامَّة (মহাসংকট), الصَّاخَّة (ধ্বংস-ধ্বনি), الغَاشِيَة (সমাচ্ছন্নকারী), السَّاعَة (মহাকাল), الوَاقِعَة (সংঘটন) প্রভৃতি। القَارِعَة (ঠক্‌ঠক্‌কারী) এ জন্য বলা হয়েছে যে, কিয়ামত নিজ ভয়াবহতায় মানুষের হৃদয়কে জাগ্রত করে তুলবে এবং আল্লাহর দুশমনদেরকে আযাব সম্পর্কে অবহিত করবে। যেমন দরজায় করাঘাতকারী ঠক্‌ঠক্ শব্দ করে গৃহবাসীকে সতর্ক করে থাকে।

নাযিলের সময় – কাল

এটিও মক্কা মু’আযযমার প্রথম যুগে নাযিল হয়।

সূরায় দু’টি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

এক- ক্বিয়ামত অনুষ্ঠানের বর্ণনা (১-৫ আয়াত)।

দুই- নেকী ও বদীর ওযন এবং তার প্রতিদান ও প্রতিফল সম্পর্কে বর্ণনা (৬-১১ আয়াত)।

১০১:১ اَلۡقَارِعَۃُ ۙ

১. ভীতিপ্রদ মহা বিপদ

১০১:২ مَا الۡقَارِعَۃُ ۚ

২. ভীতিপ্রদ মহা বিপদ কী?

وَ مَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا الۡقَارِعَۃُ ؕ

৩. আর ভীতিপ্রদ মহা বিপদ সম্পর্কে আপনাকে কিসে জানাবে?

এই দিনের ভয়ংকর অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে- ‘তুমি কি জানো ক্বারিআহ কি? এর মাধ্যমে দ্রুত শ্রোতার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এবং একে জোরে করাঘাতকারী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা ক্বিয়ামতের দিনের ভয়ংকর কম্পন ও প্রচন্ড শব্দ প্রাণীজগতের কানে ও হৃদয়ে তীব্র আঘাত করবে ও ভয়ে হৃৎকম্পন শুরু হবে। যেমন আল্লাহ বলেন,

وَيَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلاَّ مَنْ شَاءَ اللهُ وَكُلٌّ أَتَوْهُ دَاخِرِينَ-

আর কি হবে সেদিন যেদিন সিংঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং ভীত বিহবল হয়ে পড়বে আকাশ ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা সবাই, তারা ছাড়া যাদেরকে আল্লাহ এ ভীতি বিহবলতা থেকে রক্ষা করতে চাইবেন – আর সবাই তার সামনে হাজির হবে কানচেপে ধরে৷(নমলঃ৮৭)

সেদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে৷ আর তৎক্ষণাত আসমান ও যমীনে যারা আছে তারা সব মরে পড়ে যাবে৷ তবে আল্লাহ যাদের জীবিত রাখতে চান তারা ছাড়া৷ অতপর আরেকবার শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে তখন হঠাৎ সবাই জীবিত হয়ে দেখতে থাকবে। যুমারঃ ৬৮)।

শুধু দুইবার শিংগায় ফুৎকারের উল্লেখ আছে৷ এ ছাড়া সূরা আন নামলে এ দু’টি ফুৎকারের অতিরিক্ত আরো একবার শিংগায় ফুৎকারের উল্লেখও আছে যা শুনে আসমান ও যমীনের সমস্ত সৃষ্টি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যাবে (আয়াত ৮৭) ৷ এ কারণে হাদীসসমূহে তিনবার শিংগায় ফুৎকারের ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে ৷ এক, “নাফখাতুল ফাযা” অর্থাৎ ভীত সন্ত্রস্তকারী শিংগা৷

দুই , ” নাফখাতুস সা’ক অর্থাৎ মৃত্যু ঘটানোর শিংগা ৷

তিন, “নাফখাতুল কিয়াম লি রাব্বিল আলামীন” অর্থাৎ যে শিংগায় ফুৎকার দেয়ার সাথে সমস্ত মানুষ জীবিত হয়ে উঠবে এবং নিজের রবের সামনে হাজির হওয়ার জন্য নিজ নিজ কবর থেকে বেরিয়ে আসবে৷

 

یَوۡمَ یَکُوۡنُ النَّاسُ کَالۡفَرَاشِ الۡمَبۡثُوۡثِ

৪. সেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত,

وَ تَکُوۡنُ الۡجِبَالُ کَالۡعِہۡنِ الۡمَنۡفُوۡشِ

৫. আর পর্বতসমূহ হবে ধুনিত রঙ্গিন পশমের মত।

এর মাধ্যমে ক্বিয়ামতের দিনের ভয়ংকর অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে।

الفَرَاش বলতে ঐসব পতংগকে বুঝানো হয়েছে, যেগুলিকে উন্মুক্ত ও জ্বলন্ত আগুনের চারপাশে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। একই মর্মে অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

خُشَّعاً أَبْصَارُهُمْ يَخْرُجُوْنَ مِنَ الْأَجْدَاثِ كَأَنَّهُمْ جَرَادٌ مُّنْتَشِرٌ

‘তারা সেদিন ভীত-নমিত নেত্রে বের হবে কবর থেকে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপাল সদৃশ’ (ক্বামার ৫৪/৭)।

শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) মানুষকে আগুনে ঝাঁপ দেওয়া পতঙ্গদল (الْفَرَاشِ) এবং নিজেকে তাদের মুক্তিদাতা হিসাবে বর্ণনা করে বলেন, ‘আমার উদাহরণ হ’ল সেই ব্যক্তির ন্যায় যে আগুন জ্বালালো। অতঃপর পতঙ্গসমূহ দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল। আর ঐ ব্যক্তি তাদের বাধা দিতে লাগল। কিন্তু পতঙ্গদল তাকে পরাস্ত করে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকল। হে লোকসকল! আমিও তেমনি (آخُذُ بِحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ) তোমাদের কোমর ধরে আগুন থেকে পিছনে টানছি। আর তোমরা তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছ। আমি তোমাদের বারবার ডাকছি, هَلُمَّ عَنِ النَّارِ هَلُمَّ عَنِ النَّارِ ‘আগুন ছেড়ে আমার দিকে এস’! কিন্তু তোমরা আমাকে পরাজিত করে আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছ’। বুখারী হা/৬৪৮৩, মুসলিম হা/২২৮৪; মিশকাত হা/১৪৯।

(৫) وَتَكُوْنُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوْش ‘এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙিন পশমের মত’।

 

পূর্বের আয়াতের ন্যায় অত্র আয়াতের মাধ্যমে ক্বিয়ামতের দিনের ভীতিকর অবস্থা বুঝানো হয়েছে। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে,

وَسُيِّرَتِ الْجِبَالُ فَكَانَتْ سَرَاباً- ‘সেদিন পর্বতমালা চালিত হয়ে মরীচিকা হয়ে যাবে’ (নাবা ৭৮/২০)।

আরও বলা হয়েছে, وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا ، فَكَانَتْ هَبَاَءً مُّنْبَثًّا

‘যেদিন পর্বতমালা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে’। ‘অতঃপর তা হয়ে যাবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণা সদৃশ’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৫-৬)।

এটা ঐদিন ঘটবে, যেদিন আসমান থরথর করে কাঁপবে। আর পাহাড়গুলো উড়ে বেড়াবে।” (সূরা তূর ঃ ৯-১০)

যেদিন তোমরা তা দেখতে পাবে, অবস্থা এমন হবে যে, প্রত্যেক মা তার দুধের বাচ্চাকে ভুলে যাবে, প্রত্যেক গর্ভবতী গর্ভ পড়ে যাবে, মানুষকে তোমরা মাতাল দেখবে, অথচ তারা নেশাগ্রস্ত হবে না; বরং আল্লাহর আযাবই এমন কঠিন হবে।” (সূরা হাজ্জ ঃ ২)

কাফেররা এটা বিশ্বাস করতে চাইত না। তাই আল্লাহ বলেন,

وَيَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنْسِفُهَا رَبِّيْ نَسْفاً، فَيَذَرُهَا قَاعاً صَفْصَفاً-

‘তারা তোমাকে পাহাড় সম্পর্কে প্রশ্ন করে। তুমি বল, আমার পালনকর্তা পাহাড়সমূহকে সমূলে উৎপাটিত করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন’। ‘অতঃপর পৃথিবীকে সম্পূর্ণ সমতল করে ছাড়বেন’ (ত্বোয়াহা ২০/১০৫-১০৬)।

“যখন সূর্যকে গুটিয়ে ফেলা হবে। যখন তারাগুলো ছড়িয়ে পড়বে। যখন পাহাড়গুলোকে চলমান করা হবে। যখন দশ মাসের গাভীন উটকে তার নিজের অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হবে। যখন সব বন্য পশুকে এক সাথেজমা করা হবে। যখন সমুদ্রগুলোয় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে।যখন রূহকে (দেহের সাথে) জুড়ে দেওয়া হবে। যখন জ্যান্ত কবর দেওয়া মেয়েকে জিজ্ঞেস করা হবে ঃ কোন দোষে তাকে মারা হয়েছিল?যখন আমলনামা খুলে দেওয়া হবে। যখন আসমানের পর্দা সরিয়ে দেওয়া হবে। যখন দোযখের আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। যখন বেহেশতকে কাছে আনা হবে। যখন প্রত্যেক ব্যক্তি জানতে পারবে, সে কি নিয়ে হাজির হয়েছে।” (সূরা তাকভির ঃ ১-১৪)।

الْعِهْنِ অর্থ الصوف المصبوغ ‘রং করা পশম’। الْمَنْفُوْش অর্থ ‘ঐ পশম যা হাত দিয়ে ধুনা হয়। অতঃপর তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে উড়তে থাকে’ (কুরতুবী)। এর মাধ্যমে ক্বিয়ামতের দিনের ভয়ংকর অবস্থার বাণীচিত্র অংকন করা হয়েছে।

(৬) فَأَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُهُ ‘অতঃপর যার ওযনের পাল্লা ভারি হবে’।

 

مَوَازِيْنُهُ অর্থ موازين حسناته ‘নেকীর পাল্লা সমূহ’। একবচনে مِيْزَانٌ অর্থ وَزْنٌ আরবরা শব্দটিকে حَذَاءٌ ‘সমান সমান’ বা ‘সম্মুখ’ অর্থে ব্যবহার করে।

মূলে ‘মাওয়াযীন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। শব্দটি বহুবচন। এর কারণ হয়ত মীযানগুলো কয়েকটি হবে; অথবা যে আমলগুলো ওজন করা হবে, সেগুলো বিভিন্ন প্রকারের হবে। [কুরতুবী] তাছাড়া বান্দার আমলের ওজন হওয়া যেমন সত্য তেমনি আমলকারীর ওজন হওয়াও সত্য। অনুরূপভাবে আমলনামারও ওজন করা হবে। [শরহুত তাহাবীয়া লিবনি আবিল ইযয: ৪১৯] এক্ষেত্রে একথা স্মর্তব্য যে, কেয়ামতে মানুষের আমল ওজন করা হবে-গণনা হবে না।

আমলের ওজন ইখলাস তথা আন্তরিকতা ও সুন্নতের সাথে সামঞ্জস্যের কারণে বেড়ে যায়। যার আমল আন্তরিকতাপূর্ণ ও সুন্নতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সংখ্যায় কম হলেও তার আমলের ওজন বেশী হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সংখ্যায় তো সালাত, সাওম, দান-সদকা, হজ-ওমরা অনেক করে, কিন্তু আন্তরিকতা ও সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্য কম, তার আমলের ওজন কম হবে। মানুষ আমলের যে পুঁজি নিয়ে আল্লাহর আদালতে আসবে তা ভারী না হালকা, অথবা মানুষের নেকী তার পাপের চেয়ে ওজনে বেশী না কম-এরি ভিত্তিতে সেখানে ফায়সালা অনুষ্ঠিত হবে। [দেখুন: মাজমু ফাতাওয়া শাইখিল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ: ১০/৭৩৫–৭৩৬]

এ বিষয়টি কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখিত হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছেঃ “আর ওজন হবে সেদিন সত্য। তারপর যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে। আর যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।” [সূরা আল-আরাফ: ৮–৯]

আবার কোথাও বলা হয়েছে,

“হে নবী! বলে দিন, আমি কি তোমাদের জানাবো নিজেদের আমলের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী ব্যর্থ কারা? তারাই ব্যর্থ যাদের দুনিয়ার জীবনে সমস্ত আমল নষ্ট হয়ে গেছে। কিয়ামতের দিন আমি তাদের কোন ওজন দেবো না।” [সূরা আল-কাহাফ: ১০৪–১০৫]

অন্যত্র বলা হয়েছে, “কিয়ামতের দিন আমি যথাযথ ওজন করার দাড়িপাল্লা রেখে দেবো। তারপর কারো ওপর অণু পরিমাণও যুলুম হবে না। যার সরিষার দানার পরিমাণও কোন কাজ থাকবে তাও আমি সামনে আনবো এবং হিসেব করার জন্য আমি যথেষ্ট।” [সূরা আল-আম্বিয়া: ৪৭]

এই আয়াতগুলো থেকে জানা যায়, কুফরী করা বৃহত্তম অসৎকাজ। গুনাহের পাল্লা তাতে অনিবার্যভাবে ভারী হয়ে যায়। ফলে আর কাফেরের এমন কোন নেকী হবে না নেকীর পাল্লায় যার কোন ওজন ধরা পড়ে এবং তার ফলে পাল্লা ঝুঁকে পড়তে পারে; কারণ তার ঈমান নেই। [সা’দী, সূরা কাহফ: আয়াত-১০৫]

যারা কুফরী করেছে তাদের আমলের উপমা এ রকম, যেমন শুকনা মরুভূমিতে মরীচিকা। পিপাসায় কাতর লোক ওটাকেই পানি মনে করেছিলো। কিন্তু যখন সে সেখানে পৌছলো, তখন সেখানে কিছুই পেলো না; বরং সেখানে সে আল্লাহকেই তার সামনে পেলে, যিনি তার হিসাব পুরোপুরি চুকিয়ে দেন। আর হিসাব করতে আল্লাহর দেরি হয় না।  অথবা এর উপমা এমন, যেমন এক গভীর সমুদ্রের মধ্যে অন্ধকার, উপরে একটি ঢেউ ছেয়ে আছে, তার উপর আরও একটা ঢেউ এবং এর উপর মেঘ। অন্ধকারের উপর অন্ধকার ছেয়ে আছে। কেউ যখন তার হাত বের করে তখন তাও দেখতে পায় না। যাকে আল্লাহ নূর না তার জন্য আর কোন নূর নেই।” (সূরা নূর ঃ ৩৯-৪০)

“তখন যার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে সে বলবে, দেখো দেখো আমার আমলনামা পড়ে গেছে। আমি মনে করতাম যে, আমার হিসাব অবশ্যই আমাকে পেতে হবে। ফলে সে তার পছন্দনীয় আরামে থাকবে। উুঁচুমানের বেহেশতে। যার ফলগুলোর গুচ্ছ ঝুঁকে থাকবে। (তাদেরকে বলা হবে) যা তোমরা অততি দিনগুলোতে করেছো তার বদলায় তোমরা মজা করে খাও ও পান করো। আর যার আমলনামা তার বাঁ হাতে দেওয়া হবে সে বলবে, হায়! আমার আমলনামা যদি দেওয়াই না হতো! আমার হিসাব কী তা যদি আমি না-ই জানতাম! আমার হিসাব ঐ মৃত্যু (যা দুনিযায় এসেছিলো) তা-ই যদি আমার শেষ হতো! (আজ) আমার মাল আমার কোন কাজে আসলো না। আমার সব ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে। (তখন হুকুম হবে) ওকে ধরে এবং ওর গলায় বেড়ি লাগাও। এরপরে ওকে দোযাখে ফেলে দাও। তারপর ওকে সত্তর হাত লম্বা শিকল দিয়ে বাধো।” (সূরা হাক্কাহ্ ঃ ১৯-৩২)

(৭) فَهُوَ فِيْ عِيْشَةٍ رَّاضِيَةٍ ‘সে (জান্নাতে) সুখী জীবন যাপন করবে’।

عِيْشَةٍ رَّاضِيَةٍ অর্থ حياة مرضية

‘সন্তোষভাজন জীবন’ যাতে আল্লাহ ও বান্দা উভয়ে সন্তুষ্ট। عَيْشٌ অর্থ আরাম, জীবন। عِيْشَةٍ অর্থ জীবন যাপন। رَاضِيَةٍ কর্তৃকারক (اسم فاعل) হ’লেও তা কর্মকারক (اسم مفعول) অর্থে এসেছে।

 

ক্বিয়ামতের দৃশ্য বর্ণনার পর এক্ষণে আল্লাহ দুনিয়াতে আমলকারীদের পরকালীন পুরস্কার সম্পর্কে বর্ণনা করছেন। যাদের আমল আল্লাহর নিকটে কবুল হবে, তাদের ওযনের পাল্লা ভারি হবে। তারা জান্নাত লাভে ধন্য হবে এবং সেখানে সুখে-শান্তিতে থাকবে।

“এই ধন-দৌলত ও সন্তান-সন্তুতি দুনিয়ার জীবনের সাময়িক সাজসজ্জা মাত্র। আসলে তো টিকে থাকার মতো নেক আমলই আপনার রবের নিকট পরিণামের দিক দিযে ভালো এবং এ বিষয়েই ভালো কিছু আশা করা যায়।” (সূরা কাহাফ ঃ ৪৬)।

হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছো! আল্লাহর কাছে তাওবা করো, খাঁটি তাওবা। হয়তো আল্লাহ তোমাদের গুনাহসমূহ বিলোপ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন বেহেশতে প্রবেশ করাবেন, যার নিচে জরনাধারা বহমান রয়েছে। ঐ দিন আল্লাহ তাঁর নবী ও যারা তার সাথে ঈমান এনেছে তাদেরকে অপমানিত করবেন না। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডান পাশে দৌড়াতে থাকবে এবং তারা বলতে থাকবে, “হে আমাদের রব! আমাদের নূর আমাদের জন্য পুরা করে দাও এবং আমাদেরকে মাফ করে দাও। নিশ্চয়ই তুমি প্রতিটি জিনিসের উপর ক্ষমতা রাখো।” (সূরা তাহরীম ঃ ৮)

(৮) وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهُ ‘আর যার ওযনের পাল্লা হালকা হবে’।

 

এই ওযন কিভাবে হবে, সেটি গায়েবী বিষয়। যা মানুষের বোধগম্য নয়। কেননা এবিষয়ে কুরআন বা হাদীছে কিছু বলা হয়নি। উল্লেখ্য, যাদের নেকী ও বদীর ওযন সমান সমান হবে, তারা জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে আ‘রাফ নামক স্থানে বন্দী থাকবে’ (আ‘রাফ ৭/৪৬-৪৮)।

আর যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে। আগুন তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়। [সূরা আল-মুমিনুন: ১০৩–১০৪]

এরা হ’ল মুনাফিক। যারা মুসলমানদের সাথে বসবাস করত। পুলছেরাত পার হওয়ার সময় মুমিন নর-নারীগণ তাদের ঈমানের জ্যোতিতে দ্রুত পার হয়ে যাবে চোখের পলকে। জাহান্নামের আগুন তাদের স্পর্শ করবে না। কিন্তু মুনাফিকরা তাদের মুনাফেকীর অন্ধকারে আটকে যাবে।

আল্লাহ বলেন,

‘সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও নারীরা মুমিনদের ডেকে বলবে, তোমরা আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা কর, যাতে তোমাদের নূর থেকে আমরা কিছু নিতে পারি। তখন তাদের বলা হবে, পিছনে ফিরে যাও এবং সেখানে নূর তালাশ কর। অতঃপর উভয় দলের মাঝে একটি প্রাচীর দাঁড় করানো হবে যাতে একটি দরজা থাকবে। যার ভিতর অংশে থাকবে রহমত ও বাহির অংশে আযাব’। ‘তারা মুমিনদের ডেকে বলবে, আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? জবাবে মুমিনরা বলবে,হ্যাঁ। কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। তোমরা প্রতীক্ষা করেছিলে, সন্দেহ করেছিলে এবং মিথ্যা আশা তোমাদের প্রতারিত করেছিল। অবশেষে আল্লাহর হুকুম (মৃত্যু) এসে গিয়েছিল। বস্ত্ততঃ প্রতারক (শয়তান) তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছিল’। এইসব লোকের শেষ পরিণতি হবে জাহান্নাম।

যেমন পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আজ তোমাদের নিকট থেকে কোন মুক্তিপণ নেওয়া হবে না এবং কাফিরদের নিকট থেকেও নয়। জাহান্নামই তোমাদের আবাসস্থল। এটাই তোমাদের সাথী। আর এটা কতই না নিকৃষ্ট ঠিকানা’ (হাদীদ ৫৭/১৩-১৫)। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন!

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি একবার দোযখের কথা স্মরণ করে কাঁদতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কে তোমাকে কাঁদাল? আয়েশা রা. বললেন, আমি দোযখের ভয়ে কাঁদছি। আপনি কি কেয়ামতের দিন আপনার পরিবারের কথা স্মরণ রাখবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বললেন, তিনটি স্থানে কেউ কাউকে স্মরণ রাখতে পারবে না-

এক. মীযানের (আমল পরিমাপক যন্ত্র) নিকট যতক্ষণ না জানতে পারবে যে, তার নেকীর পাল্লা ভারী হয়েছে না হালকা,

দুই. আমলনামা পেশ করার সময়, যখন বলা হবে আস তোমার আমলনামা পাঠ কর, যতক্ষণ না জানতে পারবে যে, তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হচ্ছে না পিঠের পিছন থেকে বাম হাতে।

তিন. পুলসিরাতের উপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় যখন তা জাহান্নামের উপর স্থাপন করা হবে।’- সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৭২২

কুরআনে কারীমের একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন- (অর্থ) যারা তাদের রবের কাছে ফিরে যাবে এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করার তা দান করে ভীত কম্পিত হৃদয়ে, তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী থাকে।-মুমিনূন : ৬০-৬১

এই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, এই আমলগুলো করে লেকেরা ভীত কম্পিত হবে কেন? তারা কি মদ পান করে কিংবা চুরি করে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বললেন, হে সিদ্দীক তনয়া, এরূপ নয় বরং এরা তারা, যারা রোযা রাখে, নামায পড়ে এবং দান খয়রাত করে। এতদসত্ত্বেও তারা শঙ্কিত  থাকে যে, সম্ভবত : (কোনো ত্রুটির কারণে) এ আমল কবুল হয়নি। এ ধরনের (লোকই  সৎকাজ দ্রুত সম্পাদন করে এবং তাতে অগ্রগামী থাকে) (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৩৯৭)

আজ কারো উপর বিন্দুমাত্র যুলুম করা হবে না এবং তোমাদেরকে এমন বদলাই দেওয়াহ হবে যেমন আমল তোমরা করছিলে।” (সূরা ইয়াসীন ঃ ৫৪)

“প্রতিটি মানুষের ভালো ও মন্দ আমি তার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছি। আর কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য একটা লেখা বের করবো, যা সে খোরা কিতাব হিসেবে পাবে। তোমার আমলনামা পড়ো। আজ তোমার হিসাব নেবার জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ঠ।” (সূরা বানী ইসরাঈল ঃ ১৩-১৪)

 

(৯) فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ ‘তার ঠিকানা হবে ‘হাভিয়াহ’।

 

هَاوِيَة জাহান্নামের একটি নাম। তাকে হাবিয়াহ এই জন্য বলা হয় যে, জাহান্নামী তার গভীর গর্তে গিয়ে পড়বে। স্থান বুঝাতে أُمّ (মা) শব্দ এ জন্য ব্যবহার করা হয়েছে যে, যেমন মানুষের জন্য ‘মা’আশ্রয়স্থল হয়, তেমনি জাহান্নামীদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম। কোন কোন আলেম বলেন, এখানে ‘উম্ম’(মা) অর্থ হল দেমাগ বা মস্তিষ্ক। যেহেতু জাহান্নামী তার মাথার উপর ভর করে হাবিয়াহ দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে। (ইবনে কাসীর)

(১০) وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ ‘তুমি কি জানো তা কি?’

(১১) نَارٌ حَامِيَةٌ ‘প্রজ্বলিত অগ্নি’।

 

অর্থাৎ যার কোন সৎকর্ম নেই অথবা থাকলেও তার চাইতে অসৎকর্মের পরিমাণ বেশী, তার ঠিকানা হবে ‘হাভিয়া’। একই মর্মে অন্যত্র আল্লাহ বলেন

, وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ، وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهُ فَأُوْلَـئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْا أَنْفُسَهُمْ بِمَا كَانُوْا بِآيَاتِنَا يَظْلِمُوْنَ-

‘আর সেদিন ওযন হবে যথার্থ। অতঃপর যাদের (নেকীর) পাল্লা ভারি হবে, তারা সফলকাম হবে’। ‘পক্ষান্তরে যাদের (নেকীর) পাল্লা হালকা হবে, তারা হবে সেইসব লোক, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে। কেননা তারা আমাদের আয়াতসমূহ অস্বীকার করত’ (আ‘রাফ ৭/৮-৯)।

আল্লাহ আরও বলেন, وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلاَ تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئاً وَإِن كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا وَكَفَى بِنَا حَاسِبِيْنَ-

‘আর আমরা ক্বিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারু প্রতি যুলুম হবে না। যদি কোন আমল সরিষাদানা পরিমাণ হয়, আমরা তা উপস্থিত করব। আর হিসাব গ্রহণের জন্য আমরাই যথেষ্ট’ (আম্বিয়া ২১/৪৭)।

(هَاوِيَةٌ) ‘হাভিয়া’ জাহান্নামের একটি নাম। সব জাহান্নামেরই দহন ক্ষমতা বেশী। কিন্তু ‘হাভিয়া’-র বেলায় ‘প্রজ্বলিত অগ্নি’ বলায় একথা নিশ্চিতভাবে এসে যায় যে, হাভিয়ার দহন ক্ষমতা চূড়ান্তভাবে বেশী। ইবনু কাছীর জাহান্নামের আটটি নামের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা- নার, জাহীম, সাক্বার, জাহান্নাম, হাভিয়াহ, হাফেরাহ, লাযা, হুত্বামাহ (ইবনু কাছীর, সূরা নাযে‘আত ১০ আয়াতের তাফসীর)।

 

এখানে أُمُّهُ বলে ‘আশ্রয়স্থল’ বুঝানো হয়েছে। যেমন মা তার সন্তানের আশ্রয়স্থল হয়ে থাকেন। هَوَى يَهْوِى هَوِيًّا অর্থ, উপর থেকে নীচে নিক্ষেপ করা’। সেখান থেকে صفت হয়েছে هَاوِيَةٌ। অর্থ المهواة التى لا يدرك قعرها ‘নিক্ষেপস্থল, যা এমন গভীর, যার তলদেশের নাগাল পাওয়া যায় না’ (তানতাভী)। এখানে হাভিয়াকে أُمُّهُ বা ‘তার মা’ বলে উপমা দিয়ে পাপীকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে (ক্বাসেমী)। কেননা তাদেরকে অধোমুখী করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। যেমন আল্লাহ বলেন,يَوْمَ يُسْحَبُوْنَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوْهِهِمْ ذُوْقُوْا مَسَّ سَقَرَ-

‘যেদিন তাদেরকে উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে (এবং বলা হবে,) জাহান্নামের স্বাদ আস্বাদন কর’ (ক্বামার ৫৪/৪৮)।

مَا هِيَهْ মূলে ছিল مَا هِيَ তবে আয়াত শেষে ওয়াকফের বিরতি বুঝানোর জন্য হা সাকিন (هْ) বৃদ্ধি করা হয়েছে (কুরতুবী)।

نَارٌ حَامِيَةٌ অর্থ حارة بلغة النهاية فى الحرارة ‘এমন প্রজ্বলিত অগ্নি, যা দহন ক্ষমতার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে’ (তানতাভী)।

 

জাহান্নামের পরিচয় :

(১) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বুখারী, মুসলিম, আহমাদ প্রভৃতির বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِيْنَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ

‘জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের চাইতে ৭০ গুণ বেশী দাহিকা শক্তি সম্পন্ন। বুখারী হা/৩২৬৫, মুসলিম হা/২৮৪৩; মিশকাত হা/৫৬৬৫।

(২) মুসনাদে আহমাদের অন্য বর্ণনায় এসেছে ১০০ গুণ বেশী।আহমাদ হা/৮৯১০,সনদ ছহীহ; আলবানী ছহীহুল জামে‘ হা/৭০০৬।

(৩) নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে যে,

إِنَّ أَهْوَنَ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا مَنْ لَهُ نَعْلاَنِ وَشِرَاكَانِ مِنْ نَارِ يَغْلِىْ مِنْهُمَا دِمَاغُهُ كَمَا يَغْلِى الْمِرْجَلُ ‘

জাহান্নামে সবচেয়ে হালকা আযাব হবে ঐ ব্যক্তির, যার দু’পায়ে আগুনের জুতা ও ফিতা পরিহিত থাকবে। যাতে তার মাথার মগজ টগবগ করে ফুটবে। যেমন উত্তপ্ত কড়াইয়ের পানি টগবগ করে ফুটে থাকে’।মুসলিম হা/২১৩, বুখারী হা/৬৫৬১, হাকেম ১/২৮৭ ‘জুম‘আ’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৫৬৬৭

(৪) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,يُؤْتَى جَهَنَّمُ يَوْمَئِذٍ لَهَا سَبْعُوْنَ اَلْفَ زِمَامٍ مَعَ كُلِّ زِمَامٍ سَبْعُوْنَ اَلْفَ مَلَكٍ تَجُرُّوْنَهَا.

‘ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামকে এমন অবস্থায় টেনে নিয়ে যাওয়া হবে যে, তার সত্তর হাজার লাগাম হবে এবং প্রতিটি লাগামের সাথে সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবে। তাঁরা জাহান্নামকে টেনে বিচারের মাঠে উপস্থিত করবে। মুসলিম হা/২৮৪২; মিশকাত হা/৫৬৬৬।