১৯তম রুকু(১৮১-১৮৯)
আউযুবিল্লাহি মিনাস শাইতোয়ানির রজীম,
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
৩:১৮১ لَقَدۡ سَمِعَ اللّٰہُ قَوۡلَ الَّذِیۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّ اللّٰہَ فَقِیۡرٌ وَّ نَحۡنُ اَغۡنِیَآءُ ۘ سَنَکۡتُبُ مَا قَالُوۡا وَ قَتۡلَہُمُ الۡاَنۡۢبِیَآءَ بِغَیۡرِ حَقٍّ ۙ وَّ نَقُوۡلُ ذُوۡقُوۡا عَذَابَ الۡحَرِیۡقِ ﴿
১৮১. আল্লাহ শুনেছেন তাদের কথা যারা বলে, আল্লাহ অবশ্যই অভাবগ্রস্ত এবং আমরা অভাবমুক্ত। তারা যা বলেছে তা এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার বিষয় আমরা লিখে রাখব এবং বলব, তোমরা দহন যন্ত্রণা ভোগ কর।
৩:১৮২ ذٰلِکَ بِمَا قَدَّمَتۡ اَیۡدِیۡکُمۡ وَ اَنَّ اللّٰہَ لَیۡسَ بِظَلَّامٍ لِّلۡعَبِیۡدِ ﴿۱۸
১৮২. এ হচ্ছে তোমাদের কৃতকর্মের ফল এবং এটা এ কারণে যে, আল্লাহ বান্দাদের প্রতি মোটেই যালেম নন।
এ আয়াতে ইয়াহুদীদের একটি কঠিন ঔদ্ধত্যের ব্যাপারে সতর্কীকরণ ও শাস্তির বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। তা এরূপ যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কুরআনে হাকীম থেকে যাকাত ও সদকার বিধি-বিধান বর্ণনা করেন, তখন উদ্ধত ইয়াহুদীরা বলতে আরম্ভ করে যে, আল্লাহ্ তা’আলা ফকীর ও গরীব হয়ে গেছেন, আর আমরা হচ্ছি ধনী ও আমীর। সে জন্যেই তো তিনি আমাদের কাছে চাইছেন। [তাবরী] মূলত: যে ব্যক্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সমগ্র সৃষ্টির স্রষ্টা ও মালিক বলে জানে, তার মনে সাদকা ও কর্জ শব্দ ব্যবহারে কস্মিনকালেও এমন কোন সন্দেহ উদয় হতে পারে না, যেমনটি উদ্ধত ইয়াহুদীদের উক্তিতে বিদ্যমান। কাজেই কুরআনুল কারীম এই সন্দেহের উত্তর দান করেছে।
শুধুমাত্র তাদের ঔদ্ধত্য ও রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লামের প্রতি মিথ্যারোপ এবং তার প্রতি উপহাস করার একাধিক অপরাধের শাস্তি হিসাবে বলা হয়েছে, আমি তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ উক্তিসমূহ লিখে রাখব যাতে কিয়ামতের দিন তাদের বিরুদ্ধে পরিপূর্ণ প্রমাণ উপস্থাপন করে আযাবের ব্যবস্থা করা যায়। অন্যথায় আল্লাহর জন্য লেখার কোনই প্রয়োজন নেই। অতঃপর ইয়াহুদীদের এ সমস্ত ঔদ্ধত্যের আলোচনার সাথে সাথে তাদের আরও একটি অপরাধের উল্লেখ করা হয়েছে যে, এরা হলো এমন লোক, যারা নবী-রাসূলগণকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে কিংবা তাদের উপহাস করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং এরা তাদেরকে হত্যা করতেও দ্বিধা করেনি। কাজেই এমন লোকদের দ্বারা কোন নবীর প্রতি মিথ্যারোপ ও উপহাস করা মোটেই আশ্চর্যের বিষয় নয়। [মাআরিফুল কুরআন]
এখানে এ বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য যে, কুরআনের লক্ষ্য হল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মদীনাবাসী ইয়াহুদীবর্গ। আর নবীদের হত্যার ঘটনাটি হল ইয়াহইয়া ও যাকারিয়্যা আলাইহিমাস সালামের সময়ের। সুতরাং এ আয়াতে নবী হত্যার অপরাধ এ সময়ের ইয়াহুদীদের উপর আরোপ করা হল কেমন করে? তার কারণ এই যে, মদীনার ইয়াহুদীরাও তাদের পূর্ববর্তী ইয়াহুদীদের সে কাজের ব্যাপারে সম্মত এবং আনন্দিত ছিল বলে তারাও সেই হত্যাকারীদের মধ্যে পরিগণিত হয়েছে। মূলতঃ এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, কুফরের প্রতি সম্মতি জ্ঞাপনও কুফর ও মহাপাপের অন্তর্ভুক্ত। আয়াতের শেষাংশে এবং পরবর্তী আয়াতে সে উদ্ধতদের শাস্তিস্বরূপ বলা হয়েছে যে, তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করে বলা হবে, এবার আগুনে জ্বলার স্বাদ আস্বাদন কর, যা তোমাদেরই কৃতকর্মের ফলঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে এটা কোন অন্যায় আচরণ নয়’।
তোমাদের মধ্যে কে আল্লাহকে ‘করযে হাসানা’ দিতে প্রস্তুত, যাতে আল্লাহ তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে তাকে ফেরত দেবেন ?কমাবার ক্ষমতা আল্লাহর আছে, বাড়াবারও এবং তাঁরই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে ৷ সূরা বাক্বারাহ ২৪৫
কুরতুবী বলেন, القَرْضُ : اسْمٌ لِكُلِّ مَا يُلْتَمَسُ عَلَيْهِ الْجَزَاءُ কর্য অর্থ ঋণ।
যার মাধ্যমে প্রতিদান কামনা করা হয়.
قَرَضَ يَقْرِضُ قَرْضًا অর্থ কেটে ফেলা। সেখান থেকে مِقْرَاضٌ অর্থ কাঁচি।
কর্য দেওয়া অর্থ নিজের মাল থেকে কিছু অংশ কেটে দেওয়া। কর্য ভাল ও মন্দ দু’অর্থে আসে। নেকীর উদ্দেশ্যে কর্য দিলে সেটা হয় কর্যে হাসানাহ(القرض الحسن)। আর অন্যায় উদ্দেশ্যে দিলে সেটা হয় মন্দ ঋণ (القرض السئ)। যেমন আল্লাহ বলেন,وَلاَ تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنْفِقُونَ- ‘তোমরা খরচ করার সময় মন্দ সংকল্প করো না’ (বাক্বারাহ ২/২৬৭)।
কালবী বলেন, قَرْضاً حَسَناً অর্থ : صَدَقَةً مُحْتَسِبًا مِنْ قَلْبِهِ بِلاَ مَنٍّ وَلاَ أَذًى ‘কোনরূপ খোঁটা ও কষ্টদান ছাড়াই কেবল ছওয়াবের আশায় ছাদাক্বা দেওয়া’।
আলোচ্য আয়াতে বর্ণিত ‘কর্যে হাসানাহ’ অর্থ ওমর (রাঃ) ও অন্য সালাফগণ বলেন, الْإِنْفَاقُ فِي سَبِيلِ اللهِ ‘আল্লাহর পথে ব্যয় করা’। ইবনু কাছীর,
যেমন আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللهِ وَلاَ تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ-
‘আর তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। তোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)
‘করযে হাসানা’ এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে ”ভালো ঋণ”৷ এর অর্থ হচ্ছেঃ এমন ঋণ যা কেবলমাত্র সৎকর্ম অনুষ্ঠানের প্রেরণায় চালিত হয়ে নিস্বার্থভাবে কাউকে দেয়া হয়৷ অনুরূপভাবে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করলে আল্লাহ তাকে নিজের জন্য ঋণ বলে গণ্য করেন৷ এ ক্ষেত্রে তিনি কেবল আসলটি নয় বরং তার ওপর কয়েকগুণ বেশী দেয়ার ওয়াদা করেন৷ তবে এ জন্য শর্ত আরোপ করে বলেন যে, সেটি ‘করযে হাসানা’ অর্থাৎ এমন ঋণ হতে হবে আদায়ের পেছনে কোন হীন স্বার্থ বুদ্ধি থাকবে না বরং নিছক আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে এ ঋণ দিতে হবে এবং তা এমন কাজে ব্যয় করতে হবে যা আল্লাহ পছন্দ করেন৷
﴿مَّن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ وَلَهُ أَجْرٌ كَرِيمٌ﴾
এমন কেউ কি আছে যে আল্লাহকে ঋণ দিতে পারে? উত্তম ঋণ যাতে আল্লাহ তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে ফেরত দেন৷ আর সেদিন তার জন্য রয়েছে সর্বোত্তম প্রতিদান। হাদীদঃ১১
এটা আল্লাহ তা’আলার চরম উদরতা ও দানশীলতা যে, মানুষ যদি তাঁরই দেয়া সম্পদ তাঁর পথে ব্যয় করে তাহলে তিনি তা নিজের জন্য ঋণ হিসেবে গ্রহণ করেন৷ অবশ্য শর্ত এই যে, তা “কর্জে হাসানা” (উত্তম ঋণ) হতে হবে৷ অর্থাৎ খাঁটি নিয়তে কোন ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে ছাড়াই তা দিতে হবে৷ তার মধ্যে কোন প্রকার প্রদর্শনীর মনোবৃত্তি খ্যাতি ও নামধামের আকাংখা থাকবে না, তা দিয়ে কাউকে খোঁটা দেয়া যাবে না, দাতা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দেবে এবং এছাড়া অন্য কারো প্রতিদান বা সন্তুষ্টি লক্ষ হবে না৷ এ ধরনের ঋণের জন্য আল্লাহর দুটি প্রতিশ্রুতি আছে৷
একটি হচ্ছে, তিনি তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে ফেরত দেবেন৷
অপরটি হচ্ছে, এজন্য তিনি নিজের পক্ষ থেকে সর্বোত্তম পুরস্কার দান করবেন৷ হাদীসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে যে, এ আয়াত যখন নাযিল হয় এবং নবীর (সা) পবিত্র মুখ থেকে লোকজন তা শুনতে পায় তখন হযরত আবদ দাহদাহ আনসারী জিজ্ঞেস করেনঃ হে আল্লাহর রসূল, আল্লাহ কি আমাদের কাছে ঋণ চান? জবাবে নবী (সা) বলেনঃ হে আবুদ দাহদাহ, হাঁ’৷ তখন তিনি বললেনঃ আপনার হাত আমাকে একটু দেখান৷ নবী (সা) তার দিকে নিজে হাত বাড়িয়ে দিলেন৷ আবুদ দাহদাহ নবীর (সা) হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললেনঃ “আমি আমার রবকে আমার বাগান ঋণ দিলাম”হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেনঃ সেই বাগানে ৬ শত খেজুর গাছ ছিল৷ বাগানের মধ্যেই ছিল আবুদ দাহদাহের বাড়ী৷ তার ছেলে মেয়েরা সেখানেই থাকতো৷ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এসব কথাবার্তা বলে তিনি সোজা বাড়ীতে গিয়ে হাজির হলেন এবং স্ত্রীকে ডেকে বললেনঃ “দাহদাহর মা, বেরিয়ে এসো৷ আমি এ বাগান আমার রবকে ঋণ হিসেবে দিয়ে দিয়েছি৷ স্ত্রী বললোঃ “দাহদাহর বাপ, তুমি অতিশয় লাভজনক কারবার করেছো” এবং সেই মুহূর্তেই সব আসবাবপত্র ও ছেলেমেয়েকে সাথে নিয়ে বাগান ছেড়ে চলে গেলেন” (ইবনে আবী হাতেম) ৷ এ ঘটনা থেকে অনুমান করা যায় সে সময় প্রকৃত মু’মিনের কর্ম পদ্ধতি কেমন ছিল৷ এ থেকে একথাও বুঝা যায় যে, যে কর্জে হাসানাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে ফেরত দেয়ার এবং তাছাড়াও আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে সম্মানজনক পুরস্কার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা কেমন৷
যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের ন্যায়। যা থেকে সাতটি শিষ জন্মে। প্রত্যেকটি শিষে একশ’টি দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণ বর্ধিত করে দেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ প্রশস্ত দাতা ও সর্বজ্ঞ’ (বাক্বারাহ ২/২৬১)।
কুশায়রী বলেন, কর্যে হাসানাহ হওয়ার জন্য ১০টি শর্ত রয়েছে। যেমন,
(১) সৎ উদ্দেশ্য ও খুশী মনে হওয়া
(২) স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া। যেখানে কোনরূপ রিয়া ও শ্রুতি থাকবে না (৩) হালাল মাল হওয়া (৪) নিকৃষ্ট দানের সংকল্প না করা এবং উত্তম দান করা
(৫) সুস্থ অবস্থায় দান করা। যখন মালের প্রতি লোভ ও সচ্ছল জীবনের প্রতি আকাংখা থাকে। চরম অসুস্থ ও মৃত্যুকালে নয়।বুখারী হা/১৪১৯; মুসলিম হা/১০৩২; মিশকাত হা/১৮৬৭।
(৬) গোপনে হওয়া (বাক্বারাহ-274।
যারা তাদের সম্পদ দিন-রাত প্রকাশ্যে, গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে — তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে রাখা আছে। তাদের কোনো ভয় নেই, তারা কোনো আফসোস করবে না। [আল-বাক্বারাহ ২৭৪]
(৭) খোঁটা না দেওয়া (বাক্বারাহ ২/২৬৪)।
(৮) অধিক দানকে তুচ্ছ জ্ঞান করা। কেননা আখেরাতের পুরস্কারের তুলনায় দুনিয়ার পুরাটাই তুচ্ছ।
(৯) প্রিয় বস্ত্ত দান করা (আলে ইমরান ৩/৯২)।
আল্লাহ বলেন,لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللهَ بِهِ عَلِيمٌ- ‘তোমরা কখনোই কল্যাণ লাভ করবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্ত্ত থেকে দান করবে। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, আল্লাহ তা সবই জানেন’ (আলে ইমরান ৩/৯২)।
(১০) দান অধিক ও মূল্যবান হওয়া।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,الرِّقَابِ أَفْضَلُ قَالَ: أَغْلاَهَا ثَمَنًا، وَأَنْفَسُهَا عِنْدَ أَهْلِهَا
‘শ্রেষ্ঠ দাসমুক্তি হ’ল যা তার মালিকের নিকট অধিক মূল্যবান ও সর্বাধিক সুঠাম’।বুখারী হা/২৫১৮; কুরতুবী, তাফসীর সূরা হাদীদ ১১ আয়াত।
‘ তোমরা ছালাত কায়েম কর ও যাকাত আদায় কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। বস্ত্ততঃ তোমরা তোমাদের জন্য অগ্রিম যা প্রেরণ করবে, তার বিনিময় আল্লাহর নিকট পুরোপুরি পাবে। আর সেটাই শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম পুরস্কার। তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (মুয্যাম্মিল ৭৩/২০)।
তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা পাওয়ার চেষ্টা করো এবং এমন এক বাগান পাওয়ার জন্য ছুটে যাও, যেই বাগান সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবীর আকৃতির মতো বিশাল, যা তৈরী করা হয়েছে আল্লাহর প্রতি সবসময় সাবধানীদের জন্য। যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে, আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে। আর যারা ভালো কাজ করে, আল্লাহ অবশ্যই তাদের ভালবাসেন। [আলে ইমরান- ১৩৩-১৩৪]
সুরাহ আল-বাক্বারাহ’তে ধারাবাহিকভাবে প্রায় দশটি আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে দান করার জন্য উদ্বুদ্ধ করলেন। এই আয়াত সেই ধারাবাহিক আয়াতগুলোর শেষ আয়াত। আমরা প্রথম থেকে সবগুলো আয়াত যদি পড়ি, তাহলে আমরা পুরো ছবিটি দেখতে পাবো—
[২৬১] যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ খরচ করে, তাদের উপমা হলো একটি শস্য বীজের মতো, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মে, প্রতিটি শীষে থাকে একশটি শস্য বীজ। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। আল্লাহর ভাণ্ডার অনেক প্রশস্ত, তিনি সবচেয়ে ভালো জানেন।
[২৬২] যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ খরচ করে, তারপরে দানের কথা মনে করিয়ে খোটা দেয় না বা কোনো কষ্টও দেয় না, তারাই তাদের রবের কাছে প্রতিদান পাবে, তাদের কোনো ভয় নেই, তারা কোনো দুঃখও করবে না।
[২৬৩] দান করে তারপর কষ্ট দেওয়ার থেকে সুন্দর কথা বলা এবং ক্ষমা করা উত্তম। আল্লাহ ধনী-অভাবহীন এবং একইসাথে অত্যন্ত সহনশীল।
[২৬৪] বিশ্বাসীরা শোনো, দানের কথা মনে করিয়ে খোটা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বরবাদ করে দিয়ো না, সেই লোকের মতো, যে কিনা দান করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস রাখে না। ওর উদাহরণ হলো একটা বড় পাথরের মতো, যার উপরে কিছুটা মাটির আস্তর জমে, কিন্তু তারপর ভারি বৃষ্টি এসে সব মাটি ধুয়ে আবার খালি পাথর রেখে যায়। সে যা অর্জন করলো, তার কিছুই তার আর কাজে লাগলো না। আল্লাহ অবিশ্বাসী লোকদের পথ দেখান না।
২৬৫] আর যে আল্লাহকে খুশি করার আশায় এবং নিজের বিশ্বাসকে মজবুত রাখার জন্য তার সম্পদ খরচ করে, তার উপমা হলো উঁচু ভূমিতে গাছে ঘেরা এক ঘন সবুজ বাগানের মতো, যেখানে ভারি বৃষ্টি হলে দ্বিগুণ ফলন হয়। আর ভারি বৃষ্টি যদি না-ও হয়, হাল্কা ঝিরঝির বৃষ্টিই তার জন্য যথেষ্ট। তোমরা যা কিছুই করো, আল্লাহ তার সব দেখেন।
[২৬৬] তোমাদের মধ্যে কেউ কি চাইবে যে, তার একটি গাছে ঘেরা ঘন সবুজ বাগান থাকুক, আঙুর এবং খেজুরে ভরা, যার ভেতর দিয়ে ঝর্ণা ধারা বয়ে যায়, যেখানে সব ধরনের ফল-ফসল হয়, আর সে একসময় বয়সের ভারে নুয়ে পড়ুক এবং তার সন্তানগুলোও হোক দুর্বল? তারপর এক আগুনের ঘূর্ণি এসে সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিক? এভাবেই আল্লাহ তোমাদেরকে তার বাণী পরিষ্কার করে দেন, যেন তোমরা চিন্তাভাবনা করো।
[২৬৭] বিশ্বাসীরা শোনো, তোমরা যা কিছু অর্জন করেছ, আর যা কিছু আমি তোমাদেরকে পৃথিবী থেকে দিয়েছি, তার মধ্যে থেকে ভালোগুলো আল্লাহর পথে খরচ করো। খারাপ জিনিসগুলো দেওয়ার নিয়ত করবে না, যেগুলো যদি কেউ তোমাদেরকে দিত, তাহলে তোমরা ঘৃণায় চোখ বুজে তা নিতে। আর জেনে রেখো, আল্লাহ সকল চাহিদার ঊর্ধ্বে, তিনি অত্যন্ত প্রশংসিত।
[২৬৮] শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায়, আর তোমাদেরকে অশ্লীল কাজ করতে তাগাদা দেয়। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং প্রাচুর্যের নিশ্চয়তা দেন। আল্লাহ তো সবকিছু ঘিরে আছেন, তিনি সব জানেন।
[২৬৯] তিনি যাকে চান, তাকে প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয়েছে, সে বিরাট কল্যাণ পেয়ে গেছে। আর চিন্তাশীল মানুষরা ছাড়া কেউ শিক্ষা নেবে না।
[২৭০] তোমরা যা কিছুই খরচ করো, বা যেটাই মানত করো, আল্লাহ অবশ্যই তা জানেন। আর যালিমদের সাহায্য করার কেউ নেই।
[২৭১] তোমরা যদি তোমাদের দানের কথা প্রকাশ করে দাও, তাহলে তাতেও কল্যাণ আছে। আর যদি তা গোপন রাখো এবং তা অভাবীদের দাও, তাহলে সেটা তোমাদের জন্য আরও বেশি ভালো হবে। তোমাদের গুনাহগুলোর কিছু মাফ করার উপায় হয়ে যাবে। আর তোমাদের সব কাজের ব্যাপারে আল্লাহ খবর রাখেন।
[২৭২] ওরা সঠিক পথে চলল কি না, তা তোমার দায়িত্ব নয়। বরং আল্লাহ যাকে চান, তাকে সঠিক পথে নিয়ে আসেন। তোমরা ভালো যা কিছুই খরচ করো না কেন, সেটা তোমাদের স্বার্থেই হবে, কারণ তোমরা শুধুমাত্র আল্লাহকে পাওয়ার উদ্দেশ্যেই তা খরচ করো। আর ভালো যা কিছুই তোমরা খরচ করবে, সেটার পুরো প্রতিদান তোমাদেরকে দেওয়া হবে। তোমাদের উপর একটুও অন্যায় করা হবে না।
[২৭৩] তোমাদের দান সেই অভাবীরা পাবে, যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে নিবেদিত যে, তারা জীবিকার খোঁজে বের হতে পারে না। তারা মানুষের কাছে হাত পাতেন না দেখে অজ্ঞরা মনে করে যে, তাদের কোনো অভাব নেই। কিন্তু তুমি তাদের লক্ষণগুলোর দিকে খেয়াল করলে বুঝতে পারবে। তারা কখনও নাছোড়বান্দার মতো চায় না। আর তোমরা ভালো যা কিছুই দান করবে, আল্লাহ অবশ্যই সে ব্যাপারে সব জানেন। [২৭৪] যারা তাদের সম্পদ গোপনে এবং প্রকাশ্যে রাতের বেলায় এবং দিনের বেলায় আল্লাহর পথে খরচ করে — তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে। তাদের কোনো ভয় নেই, তারা কোনো আফসোস করবে না।
এই আয়াতগুলো থেকে আমরা বেশ কিছু শিক্ষা নিতে পারি—
১) দান করে দানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে কষ্ট দিলে তা বরবাদ হয়ে যায়।
২) দান করার সময় আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে খুশি করার আশা থাকলে, বা লোক দেখানো দান হয়ে গেলে তা বরবাদ হয়ে যায়।
৩) মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্য প্রকাশ্যে দান করা যেতে পারে। তবে গোপনে দান করা বেশি ভালো।
৪) সম্মানিত মানুষরা অভাবের সময় অন্যের কাছে হাত পাতেন না। আমাদেরকে বুঝতে হবে কাদের সাহায্য দরকার এবং নিজে থেকে এগিয়ে যেতে হবে সাহায্য করার জন্য।
৫) ঠিকভাবে দান করলে তার সাতশ গুণ বেশি পুরস্কার আল্লাহ দেবেন। শুধু তাই না, যাকে ইচ্ছা আরও বাড়িয়ে দেবেন।
৬) যারা নিয়মিত দান করে, তাদের কোনো ভয় নেই, তারা কোনো আফসোস করবে না।
৩:১৮৩ اَلَّذِیۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّ اللّٰہَ عَہِدَ اِلَیۡنَاۤ اَلَّا نُؤۡمِنَ لِرَسُوۡلٍ حَتّٰی یَاۡتِیَنَا بِقُرۡبَانٍ تَاۡکُلُہُ النَّارُ ؕ قُلۡ قَدۡ جَآءَکُمۡ رُسُلٌ مِّنۡ قَبۡلِیۡ بِالۡبَیِّنٰتِ وَ بِالَّذِیۡ قُلۡتُمۡ فَلِمَ قَتَلۡتُمُوۡہُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ
১৮৩. যারা বলে, আল্লাহ্ আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন কোন রাসূলের প্রতি ঈমান না আনি যতক্ষন পর্যন্ত সে আমাদের কাছে এমন কুরবানী উপস্থিত না করবে যা আগুন খেয়ে ফেলবে। তাদেরকে বলুন, ‘আমার আগে অনেক রাসূল স্পষ্ট নিদর্শনসহ এবং তোমরা যা বলছ তা সহ তোমাদের কাছে এসেছিলেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে কেন তাদেরকে হত্যা করেছিলে?
এই আয়াতে ইয়াহুদীদের আর একটি কথাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হচ্ছে; তারা বলতো যে, মহান আল্লাহ আমাদের নিকট থেকে এই প্রতিজ্ঞা নিয়েছেন যে, তোমরা কেবল সেই রসূলকেই বিশ্বাস করবে, যাঁর দু’আর ফলে আসমান থেকে আগুন এসে কুরবানী ও সাদাকাকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ, হে মুহাম্মাদ! তোমার দ্বারা যেহেতু এই মু’জিযা সংঘটিত হয়নি, তাই আল্লাহর নির্দেশের ভিত্তিতে তোমার রিসালাতের উপর ঈমান আনা আমাদের জন্য জরুরী নয়। অথচ পূর্বের নবীদের মধ্যে এমন নবীও এসেছেন, যাঁর দু’আয় আসমান থেকে আগুন এসে ঈমানদারদের সাদাকা ও কুরবানী জ্বালিয়ে দিত। এর দ্বারা প্রথমতঃ প্রমাণিত হত যে, আল্লাহর রাস্তায় পেশ করা সাদাকা ও কুরবানী আল্লাহর নিকট কবুল হয়েছে। আর দ্বিতীয়তঃ প্রমাণ হত যে, নবী সত্য। তবে ইয়াহুদীরা এই নবী ও রসূলদেরকে মিথ্যুকই ভেবেছে। তাই মহান আল্লাহ বললেন, ‘‘যদি তোমরা তোমাদের দাবীতে সত্যবাদী হও, তাহলে তোমরা এমন নবীদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন কেন করলে এবং তাঁদেরকে হত্যাই বা কেন করলে, যাঁরা তোমাদের চাহিদা অনুযায়ী নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছিলেন।’’
বাইবেলর বিভিন্ন স্থানে একথা বলা হয়েছে, আল্লাহর কাছে কোন কুরবানী গৃহীত হবার আলামত এই ছিল যে, গায়েব থেকে একটি আগুন এসে তাকে পুড়িয়ে ছাই করে দিতো৷ (বিচারকর্তৃগণ ৬: ২০-২১, ১৩:১৯-২০) এ ছাড়াও বাইবেলে এ আলোচনাও এসেছে যে, কোন কোন সময় কোন নবী পোড়া জিনিস কুরবানী করতেন এবং অদৃশ্য থেকে একটি আগুণ এসে তা খেয়ে ফেলতো৷ (লেবীয় পুস্তক ৯: ২৪ এবং ২-বংশাবলী ৯: ১-২) কিন্তু বাইবেলের কোথাও এ ধরনের কুবরানীকে নবুওয়াতের অপরিহার্য আলামত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি বা একথাও বলা হয়নি যে, যে ব্যক্তিকে এ মুজিযাটি দেয়া হয়নি সে নবী হতে পারে না৷ এটা ছিল নিছক ইহুদীদের একটি মনগড়া বাহানাবাজী৷ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত অস্বীকার করার জন্য তারা এ বাহানাবাজীর আশ্রয় নিয়েছিল৷ কিন্তু এদের সত্য বিরোধিতার এর চাইতেও বড় প্রমাণ রয়েছে৷ বনী ইসরাঈলদের মধ্যেও এমন কোন কোন নবী ছিলেন যারা এ অগ্নিদগ্ধ কুরবানীর মুজিযা দেখিয়েছিলেন; কিন্তু এরপরও এ পেশাগত অপরাধী লোকেরা তাদেরকে হত্যা করতে দ্বিধা করেনি৷
দৃষ্টান্ত স্বরূপ হযরত ইলিয়াসের কথা বলা যায়৷ বাইবেলে তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ তিনি বা’ল পূজারীদেরকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, সাধারণ লোকদের সমাবেশে তোমরা একটি গরু কুরবানী করবে এবং আমিও একটি গরু কুরবানী করবো, অদৃশ্য আগুণ যার কুরবানী খেয়ে ফেলবে সে-ই সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে প্রমাণিত হবে৷ কাজেই একটি বিপুল জনসমাবেশে এ মোকাবিলাটি হয়৷ অদৃশ্য আগুণ হযরত ইলিয়াসের কুরবানী খেয়ে ফেলে৷কিন্তু এরপরও ইসরাঈলী বাদশাহর বা’ল পূজারী বেগম হযরত ইলিয়াসের শত্রু হয়ে যায়৷ স্ত্রৈণ বাদশাহ নিজের বেগমের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হয়৷ ফলে বাধ্য হয়ে তাঁকে দেশ ত্যাগ করে সাইনা উপদ্বীপের পার্বত্য অঞ্চলে আশ্রয় নিতে হয়৷ (১-রাজাবলী ১৮ ও ১৯) এ জন্য বলা হয়েছে : ওহে সত্যের দুশমনরা! তোমরা কোন মুখে অগ্নিদগ্ধ কুরবানীর মুজিযা দেখতে চাচ্ছো? যেসব পয়গম্বর ও মুজিযা দেখিয়েছিলেন,তোমরা কি তাদেরকে হত্যা করতে বিরত হয়েছিলে?
৩:১৮৪ فَاِنۡ کَذَّبُوۡکَ فَقَدۡ کُذِّبَ رُسُلٌ مِّنۡ قَبۡلِکَ جَآءُوۡ بِالۡبَیِّنٰتِ وَ الزُّبُرِ وَ الۡکِتٰبِ الۡمُنِیۡرِ
১৮৪. তারা যদি আপনার প্রতি মিথ্যারোপ করে, আপনার আগে যে সব রাসূল স্পষ্ট নিদর্শন, আসমানী সহীফা এবং দীপ্তিমান কিতাবসহ এসেছিলেন তাদের প্রতিও তো মিথ্যারোপ করা হয়েছিল।
নবী করীম (সাঃ)-কে সান্ত্বনা দেওয়া হচ্ছে যে, তুমি ইয়াহুদীদের অসার কাট-হুজ্জতির কারণে দুঃখিত হবে না। কারণ, এই ধরনের আচরণ তারা যে কেবল তোমার সাথেই করছে তা নয়, বরং তোমার পূর্বে আগত নবীদের সাথেও এই ধরনের আচরণ করা হয়েছে।
৩:১৮৫ کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ ؕ وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ
১৮৫. জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কেবলমাত্র কেয়ামতের দিনই তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় দেয়া হবে। অতঃপর যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলকাম।আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছু নয়।
৩:১৮৬ لَتُبۡلَوُنَّ فِیۡۤ اَمۡوَالِکُمۡ وَ اَنۡفُسِکُمۡ ۟ وَ لَتَسۡمَعُنَّ مِنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ وَ مِنَ الَّذِیۡنَ اَشۡرَکُوۡۤا اَذًی کَثِیۡرًا ؕ وَ اِنۡ تَصۡبِرُوۡا وَ تَتَّقُوۡا فَاِنَّ ذٰلِکَ مِنۡ عَزۡمِ الۡاُمُوۡرِ
১৮৬. তোমাদেরকে অবশ্যই তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবনে পরীক্ষা করা হবে। তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের এবং মুশরিকদের কাছ থেকে তোমরা অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে। যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে নিশ্চয়ই তা হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ।
এ আয়াতে মুসলিমদেরকে বাতলে দেয়া হয়েছে যে, দ্বীনের জন্য জান-মালের কুরবানী দিতে হবে এবং কাফের, মুশরিক ও আহলে কিতাবদের কটুক্তি এবং কষ্ট দানের কারণে ঘাবড়ে যাওয়া উচিত নয়। এ সমস্তই হলো তাদের জন্য পরীক্ষা। এতে ধৈর্য ধারণ করা এবং নিজেদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য তাকওয়ার পরাকাষ্ঠা সাধনে নিয়োজিত থাকাই হল তাদের কর্তব্য।
আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো ৷ এ অবস্থায় যারা সবর করে এবং যখনই কোন বিপদ আসে বলেঃ “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে, তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও ৷তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের ওপর বিপুল অনুগ্রহ বর্ষিত হবে, তাঁর রহমত তাদেরকে ছায়াদান করবে এবং এই ধরণের লোকরাই হয় সত্যানুসারী ৷সূরা বাকারাঃ ১৫৫-১৫৭
উসামা ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গাধায় চড়ে আমাকে পেছনে বসিয়ে সা’দ ইবনে উবাদাকে দেখতে গিয়েছিলেন।
পথিমধ্যে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুলের বৈঠকখানার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনো সে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান জানালেন। এমতাবস্থায় সে তার নাকে কাপড় দিয়ে বলল, আমাদেরকে আমাদের বৈঠকখানায় কষ্ট দিও না। যে তোমার কাছে যায় তাকে তোমার কথা শোনাও। এতে মুসলিম, মুশরিক ও ইয়াহুদীদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে যায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক কষ্টে তাদের ঝগড়া থামিয়ে সা’দ ইবনে উবাদার কাছে গিয়ে ঘটনাটা জানালেন। সা’দ ইবনে উবাদা বললেন, আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন। আল্লাহর শপথ করে বলছি, আল্লাহ আপনাকে সত্যদ্বীনসহ পাঠিয়েছেন। কিন্তু এ লোকগুলো আপনার আসার পূর্বেই ঐ লোকটাকে নেতা বানাতে চেয়েছিল। আপনার আগমনের পর সে কিছু না পাওয়াতে তার মানসিক অবস্থা খারাপ হওয়াতে সে এসব কথা বলছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ক্ষমা করে দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীরা কাফেরদেরকে এমনিতেও ক্ষমা করে দিতেন। এভাবে তাদের কষ্ট সহ্য করে তিনি বদর যুদ্ধ পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর আবদুল্লাহ ইবনে উবাই প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করে। [বুখারীঃ ৪৫৬৬]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, কাব ইবনে আশরাফ ইয়াহুদী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বদনামী করে বেড়াত এবং কবিতার মাধ্যমে কাফেরদেরকে রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্বেষী করে তুলত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় সেখানে বিভিন্ন ধরনের লোক পেলেন। তাদের সাথে তিনি একটি সন্ধিতে আসার চেষ্টা করলেন। কিন্তু মুশরিক ও ইয়াহুদীরা তাঁকে এবং সাহাবাদেরকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দিতে আরম্ভ করল। তখন এ আয়াত নাযিল করে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ধৈর্য ধারনের নির্দেশ দিলেন। [আবু দাউদঃ ৩০০০]
৩:১৮৭ وَ اِذۡ اَخَذَ اللّٰہُ مِیۡثَاقَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ لَتُبَیِّنُنَّہٗ لِلنَّاسِ وَ لَا تَکۡتُمُوۡنَہٗ ۫ فَنَبَذُوۡہُ وَرَآءَ ظُہُوۡرِہِمۡ وَ اشۡتَرَوۡا بِہٖ ثَمَنًا قَلِیۡلًا ؕ فَبِئۡسَ مَا یَشۡتَرُوۡنَ
১৮৭. স্মরণ করুন, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল আল্লাহ্ তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন: অবশ্যই তোমরা তা মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবে না। এরপরও তারা তা তাদের পেছনে ফেলে রাখে (অগ্রাহ্য করে) ও তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে; কাজেই তারা যা ক্রয় করে তা কত নিকৃষ্ট
এখানে আহলে-কিতাবদেরকে তিরস্কার করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে মহান আল্লাহ এই অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তাঁর কিতাবে (তাওরাত ও ইঞ্জীলে) যে কথাগুলো লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং শেষ নবীর যে গুণাবলী তাতে উল্লিখিত হয়েছে, সেগুলো তারা মানুষের কাছে বর্ণনা করবে ও তার কোন কিছুই গোপন করবে না। কিন্তু তারা সামান্য পার্থিব স্বার্থের কারণে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করে ফেলে। অর্থাৎ, আলেম সমাজকে জ্ঞাত ও সতর্ক করা হচ্ছে যে, তাঁদের নিকট উপকারী যে জ্ঞান রয়েছে, যে জ্ঞান দ্বারা মানুষের যাবতীয় আকীদা ও আমলের সংশোধন হওয়া সম্ভব, সে জ্ঞান যেন তাঁরা মানুষের নিকট অবশ্যই পৌঁছে দেন। পার্থিব স্বার্থ ও লাভের খাতিরে তা গোপন করা হবে অতি বড় অপরাধ। কিয়ামতের দিন এই ধরনের আলেমকে আগুনের লাগাম পরানো হবে। (এ কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।)
“যারা আমার অবতীর্ণ উজ্জল শিক্ষাবলী ও বিধানসমূহ গোপন করে , অথচ সমগ্র মানবতাকে পথের সন্ধান দেবার জন্য আমি সেগুলো আমার কিতাবে বর্ণনা করে দিয়েছি, নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো , আল্লাহ তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করেন এবং সকল অভিশাপ বর্ষণকারীরাও তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করে”। বাকারাঃ১৫৯
আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যারা তা গোপন করে এবং তার বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা কেবল আগুন দিয়ে নিজেদের পেট পূর্ণ করে। শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাআলা তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে (পাপ-পংকিলতা থেকে) পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৭৪)
আবু দাউদ ৩৬১৭. মূসা ইবন ইসমাঈল (র) ……… আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যাকে কোন ইলম বা জ্ঞান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, আর সে জানা সত্ত্বেও তা না বলে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তার মুখে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেবেন।হাদিসের মানঃ হাসান
যারা আমার অবতীর্ণ উজ্জল শিক্ষাবলী ও বিধানসমূহ গোপন করে , অথচ সমগ্র মানবতাকে পথের সন্ধান দেবার জন্য আমি সেগুলো আমার কিতাবে বর্ণনা করে দিয়েছি, নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো , আল্লাহ তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করেন এবং সকল অভিশাপ বর্ষণকারীরাও তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করে। বাকারাঃ১৫৯
৩:১৮৮ لَا تَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ یَفۡرَحُوۡنَ بِمَاۤ اَتَوۡا وَّ یُحِبُّوۡنَ اَنۡ یُّحۡمَدُوۡا بِمَا لَمۡ یَفۡعَلُوۡا فَلَا تَحۡسَبَنَّہُمۡ بِمَفَازَۃٍ مِّنَ الۡعَذَابِ ۚ وَ لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿
১৮৮. যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং নিজেরা যা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালবাসে, তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে- এরূপ আপনি কখনো মনে করবেন না। আর তাদের জন্য মর্মম্ভদ শাস্তি রয়েছে।
যেমন নিজেদের প্রশংসায় তারা একথা শুনতে চায় : তারা বড়ই মুত্তাকী-পরহেজগার, দ্বীনদার, সাধু-সজ্জন,দীনের খাদেম, শরীয়াতের সাহায্যকারী,সংস্কারক, সুখী চরিত্রের লোক৷ অথচ তারা কিছুই নয়৷ অথবা নিজেদের পক্ষে এভাবে ঢোল পিটাতে চায়: উমুক মহাত্মা অতি বড় ত্যাগী পুরুষ, জাতির বিশ্বস্ত নেতা৷ তিনি নিজের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় জাতির বিরাট খেদমত করেছেন৷ অথচ আসল ব্যাপার তার সম্পূর্ণ বিপরীত৷
মূলত এটি মুনাফিকের চরিত্রের একটি।
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কিছু মুনাফেক তার সাথে যুদ্ধে যাওয়া থেকে পিছপা হত। এতে তারা নিজেদের মধ্যে আনন্দবোধ করত। তারপর যখন রাসূল ফিরে আসতেন, তখন তার কাছে ওযর পেশ করত এবং অন্যান্যভাবে নিজেদের প্রশংসা শুনতে চাইত। তখন আল্লাহ্ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেন। [বুখারীঃ ৪৫৬৭; মুসলিমঃ ২৭৭৭]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, মারওয়ান ইবনে হাকাম তার দারওয়ানকে আব্দুল্লাহ ইবনে আববাসের কাছে পাঠিয়ে বললেনঃ যদি কোন লোক কোন কাজ না করেও প্রশংসা পেতে ভালবাসার কারণে শাস্তিযোগ্য হয়, তাহলে আমরা সবাইতো শাস্তি পাব। তখন ইবনে আব্বাস বললেনঃ তোমার আর এ আয়াতের মধ্যে কি সম্পর্ক? এ আয়াতের ঘটনা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহুদী আলেমদেরকে কোন ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার কারণে তারা সঠিক জবাব গোপন করে ভিন্ন জবাব দিয়ে রাসূলের প্রশংসা পাওয়ার চেষ্টা করল। এ প্রসঙ্গে আয়াতটি নাযিল হয়। [বুখারীঃ ৪৫৬৮; মুসলিমঃ ২৭৭৮]
৩:১৮৯ وَ لِلّٰہِ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ اللّٰہُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿
১৮৯. আর আসমান ও যমীনের সার্বভৌম মালিকানা একমাত্র আল্লাহরই; আর আল্লাহ্ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
ইসলামে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হলেন একমাত্র আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন। তাঁর এ ক্ষমতায় কোনো অংশীদার বা প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ইসলামী রাষ্ট্রে তিনিই হচ্ছেন মৌলিক আইনের উৎস এবং সকল ক্ষমতার আধার।
সার্বভৌমত্ব’ শব্দের ইংরেজী প্রতিশব্দ হল Sovereignty। এটি লাতিন শব্দ Superanus থেকে উদ্ভূত হয়েছে। Superanus শব্দটির অর্থ হল Supreme অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ। সুতরাং ব্যুৎপত্তিগত অর্থে Sovereignty বা সার্বভৌমত্ব বলতে একক, অবিভাজ্য, নিরঙ্কুশ, সর্বশ্রেষ্ঠ ও অবাধ ক্ষমতাকেই বুঝায়। আরবরীতে সার্বভৌমত্বের প্রতিশব্দ হল السيادة المطلقة হ ও। এর অর্থ হল- নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব। এ অর্থে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই হলেন সার্বভৌম সত্তা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, السَّيِّدُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى -‘‘সার্বভৌম মাত্রই আল্লাহ তা‘আলা।’
قُلْ إِنِّي عَلَىٰ بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّي وَكَذَّبْتُم بِهِ ۚ مَا عِندِي مَا تَسْتَعْجِلُونَ بِهِ ۚ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۖ يَقُصُّ الْحَقَّ ۖ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِينَ
“বলো, আমার রবের পক্ষ থেকে আমি একটি উজ্জ্বল প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছি এবং তোমরা তাকে মিথ্যা বলেছো। এখন তোমরা যে জিনিসটি তাড়াতাড়ি চাচ্ছো সেটি আমার ক্ষমতার আওতাধীন নয়। ফায়সালার সমস্ত ক্ষমতা আল্লাহর হাতে। তিনিই সত্য বিবৃত করেন এবং তিনিই সবচেয়ে ভালো ফায়সালাকারী।” [৬ আনআম: ৫৭]
অবিশ্বাসীদের পক্ষ থেকে নবীর কাছে অলৌকিক ক্ষমতা দেখানোর দাবির প্রেক্ষিতে আল্লাহ এখানে নবীর ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। ইমাম রাজী এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,
﴿إنِ الحُكْمُ إلّا لِلَّهِ﴾ عَلى أنَّهُ لا يَقْدِرُ العَبْدُ عَلى أمْرٍ مِنَ الأُمُورِ إلّا إذا قَضى اللَّهُ بِهِ،
‘ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহ’ কথাটার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর ফায়সালা ব্যতীত কোনো ব্যাপারে বান্দার কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই।
إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۚ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
“আল্লাহ ছাড়া সার্বভৌম ক্ষমতা আর কারো নেই। তাঁর হুকুম— তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারোর বন্দেগী করবে না। এটিই সরল সঠিক জীবন পদ্ধতি, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।” [ ইউসুফ: ৩৯-৪০]
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا نَأْتِي الْأَرْضَ نَنقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا ۚ وَاللَّهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهِ ۚ وَهُوَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
“এরা কি দেখে না আমি এ ভূখণ্ডের ওপর এগিয়ে চলছি এবং এর গণ্ডি চতুর্দিক থেকে সংকুচিত করে আনছি? আল্লাহ রাজত্ব করছেন, তাঁর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার কেউ নেই এবং তাঁর হিসেব নিতে একটুও দেরি হয় না।” [রাদ: ৪১]
তুমি বলো, আল্লাহ তাদের (আসহাবে কাহাফ) অবস্থানের মেয়াদ সম্পর্কে বেশি জানেন। আকাশ ও পৃথিবীর যাবতীয় প্রচ্ছন্ন অবস্থা তিনিই জানেন, তিনি কেমন চমৎকার দ্রষ্টা ও শ্রোতা! পৃথিবী ও আকাশের সকল সৃষ্টির তত্ত্বাবধানকারী তিনি ছাড়া আর কেউ নেই এবং নিজের শাসন কর্তৃত্বে তিনি কাউকে শরীক করেন না। কাহাফ: ২৬]
قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاءُ وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَاءُ ۖ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
“হে সাম্রাজ্য ও সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে চাও রাজ্যক্ষমতা দান করো। আর যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নাও।” [ আলে ইমরান: ২৬]
أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
“সাবধান! সৃষ্টি তার, কর্তৃত্বও তাঁর। আল্লাহ বরকতের অধিকারী, তিনি সমগ্র বিশ্ব জাহানের রব৷” [ আরাফ: ৫৪]