সূরা আবাসা-২ সংক্ষিপ্ত তাফসীর

  • সূরা আবাসা পবিত্র কুর’আনের ৮০তম সূরা। মোট আয়াত ৪২ ও রুকু-১।
  • আবাসা শব্দের অর্থ ভ্রুঁ কুচকালেন।
  • এই সুরাটি রাসূল স.এর মক্কী জীবনে নবুয়তের প্রথমদিকে নাযিল হয়েছিল।

এই সময় রাসূল স. মক্কার বিশিষ্ট কাফের সরদার উতবা, শাইখ ,আবু জেহেল, উমাইয়া ও আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করছিলেন।

এমন সময় আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম রা. সেখানে এসে হাযির হলেন। তিনি ছিলেন হযরত খাদীজা রা.এর ফুফাত ভাই, যিনি প্রথম দিকের ঈমান আনয়নকারীদের মধ্যে একজন এবং অভিজাত বংশের কিন্তু অন্ধ। তিনি এসেছিলেন আল্লাহ প্রদত্ত শিক্ষা থেকে কিছু জানার জন্য। যেহেতু তিনি অন্ধ তাই বুঝতে পারেননি যে রাসূল স. বিশেষ ব্যক্তিদের কাছে দীনের দাওয়াত দানে ব্যস্থ আছেন। তাই তিনি যখন প্রশ্ন করলেন রাসূল স. ভ্রু কুঁচকালেন এবং দাওয়াতী কাজে বিঘ্ন যেন না হয় তিনি মুখ ফিরিয়ে আবার কথায় ব্যস্থ হয়ে গেলেন কারন তিনি খুব মনে প্রানে চাইছিলেন যে এই নেতাদের কেউ অন্তত ইসলাম গ্রহন করে ইসলামের শক্তিকে বাড়িয়ে দিক এবং নেতাদের কারনে সমাজে অন্যরা আরো উৎসাহিত হবে। তাই নিজ আত্মীয় ও কাছের বলেই অন্য সময়ে তাকে সেই বিষয়ে জ্ঞান দেয়া যাবে ভেবেই সেই মুহুর্তে অন্ধ সাহাবার দিক থেকে ফিরে নেতাদের দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন কিন্তু মহান আল্লাহ এই সূরাটি নাযিল করে শিখিয়ে দিয়েছেন দাওয়াতের লক্ষ্যনীয় কি হবে ও কেমন হবে।

  • এই সূরার বিষয় বস্তু হলো দাওয়াতদানকারীর করনীয় ও কাফেরদের দাওয়াত অস্বীকার করার কারনে তাদের প্রতি মহান রবের ক্রোধ ও তাদের পরিনতি সম্পর্কেও উপস্থাপন হয়েছে।
  • এই সূরার আলোকে দাওয়াতদানকারীর বৈশিষ্ট সমূহ হলো-

১। প্রথমেই আসে ইনসাফপূর্ণ নীতি গ্রহন।

২। দাওয়াতের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর বান্দাদের জীবন ও কার্যক্রম সংশোধনের চেষ্টা করা।

৩। দীনের দাওয়াতের ব্যপারে প্রত্যেককেই সমান গুরুত্ব সহকারে শামিল করতে হবে-হোক সে দূর্বল,গরিব বা প্রভাব প্রতিপত্তিহীন।

৪। কে ঈমান আনলে বেশী উপকার হবে আর কে আনলে হবে না, তা দেখার বিষয় দাওয়াতদানকারীর নয়।

৫। কে হেদায়েত গ্রহন করে নিজেকে সংশোধনের জন্য প্রস্তুত আছে, সে বিষয়টি প্রাধান্য দিতে হবে।

৬। যারা সত্যের পথে আসতেই চান না, তাদের পিছনে লেগে থেকে সময় শ্রম ও মেধাকে নষ্ট না করে যারা চান হকের পথে আসতে সেই দিকে পরিশ্রম করাটাই দাওয়াতের নীতি। কারন যারা দীনকে বুঝেও, সত্যকে জেনেও সজ্ঞানে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চান,তাদের ব্যপারে মহান রবের কাছে জবাবদিহী করতে হবে না।

৭। দীনকে কার মাধ্যমে প্রসারিত করবেন, তা একমাত্র মহান রবই জানেন।

কুর’আন আল্লাহর বানী যা উন্নত নির্ভুল এবং উপদেশে পরিপূর্ণ। ইসলাম কোন কিছুর মুখাপেক্ষী নয়। কারো ভালো লাগুক আর নাই লাগুক,অনুসরন করুক আর নাই করুক, মহান আল্লাহর বানী প্রতিষ্ঠিত হবেই। তবে এখানে মহান আল্লাহ যাচাই করে নিচ্ছেন কারা অনুগত জীবনে অভ্যস্ত হয়ে মহান রবের দেয়া দায়িত্ব পালন করার চেষ্টায় রত আছেন! মহান আল্লাহ বলেছেন-

বলুনঃ আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে সে দায়ী এবং তোমাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে তোমরা দায়ী। তোমরা যদি তাঁর আনুগত্য কর, তবে সৎ পথ পাবে। রসূলের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টরূপে পৌছে দেয়া।

তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য। নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও।

তোমরা কাফেরদেরকে পৃথিবীতে পরাক্রমশালী মনে করো না। তাদের ঠিকানা অগ্নি। কতই না নিকৃষ্ট এই প্রত্যাবর্তনস্থল। সূরা আন নূরঃ ৫৪-৫৭