সূরা আন নাস (সূরা নং ১১৪, আয়াত ৬)
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
(১) বল! আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার
مَلِكِ النَّاسِ
(২) মানুষের অধিপতির
إِلَهِ النَّاسِ
(৩) মানুষের উপাস্যের
مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ
(৪) গোপন কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হ’তে
الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ
(৫) যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তর সমূহে
مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
(৬) জ্বিনের মধ্য হ’তে ও মানুষের মধ্য হ’তে।
নামকরণ :
কুরআন মজীদের এ শেষ সূরা দু’টি আলাদ আলাদা সূরা ঠিকই এবং মূল লিপিতে এ সূরা দু’টি ভিন্ন ভিন্ন নামেই লিখিত হয়েছে , কিন্তু এদের পারস্পরিক সম্পর্ক এত গভীর এবং উভয়ের বিষয়বস্তু পরস্পরের সাথে এত বেশী নিকট সম্পর্ক রাখে যার ফলে এদের একটি যুক্ত নাম “ মুআওবিযাতাইন ” ( আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দুটি সূরা ) রাখা হয়েছে ।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পরে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস একবার করে এবং সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়ার কথা একাধিক সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়ছে। যেমন নিম্নোক্ত হাদীস সমূহ দেখুন:
১ম হাদীস:
আবদুল্লাহ ইবন খুবায়ব তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক বর্ষণমুখর রাতে গভীর অন্ধকারে আমাদের জন্য দু’আ করার উদ্দেশ্যে আমারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তালাশ করতে বের হলাম। এক স্থানে গিয়ে আমি তাঁকে পেলাম।
তখন তিনি বললেনঃ বল।
আমি কিছুই বললাম না।
তিনি আবার বললেনঃ বল।
আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি আমাকে বললেনঃ বল। আমি বললামঃ কি বলব?
তিনি বললেনঃ “সকাল-সন্ধ্যায় কুল হুয়াল্লাহু আহাদ এবং মুআওওয়াযাতায়ন (কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আউযু বিরাব্বিন নাস) তিন বার পাঠ করবে; তবে তা সব কিছুর ক্ষেত্রে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।”
[তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩৫৭৫ [আল মাদানী প্রকাশনী] হাদীসটির সনদ হাসান, তা’লীকুর রাগীব ১/২২৪, আল কালিমুত তাইয়্যিব ১৯/৭]
দ্বিতীয় হাদীস:
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ أَقْرَأَ بِالْمُعَوِّذَاتِ دُبُرَ كُلِّ صَلاَةٍ
‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে প্রত্যেক সলাতের পর মুআওয়াযাত তথা আশ্রয় প্রার্থনার সূরাগুলো পাঠ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (সূনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫২৩, সহিহ হাদিস)
ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, “উক্ত হাদীসে ‘মুআওয়াযাত তথা আশ্রয় প্রার্থনার সূরাগুলো’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, তিনটি সূরা। সূরা নাস ও ফালাকের সাথে সূরা ইখলাসকেও শামিল করা হয়েছে তাগলীব এর ভিত্তিতে কেননা, এতে আল্লাহ তাআলা গুনাগুণ বর্ণিত হয়েছে। যদিও তাতে আশ্রয় প্রার্থনার বিষয়টি স্পষ্টভাবে আসে নি।”
উল্লেখ্য যে, সুনান তিরমিযীতে মুআওয়াযাতাইন (আশ্রয় প্রার্থনার দুটি সূরা তথা সূরা নাস ও ফালাক) পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তা সনদগতভাবে দুর্বল।
তৃতীয় হাদীস:
উকবা বিন আমের রা. হবে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
قل هو الله أحد ، وقل أعوذ برب الفلق ، وقل أعوذ برب الناس ، تعوذ بهن ، فإنه لم يتعوذ بمثلهن ، اقرأ المعوذات دبر كل صلاة ” فذكرهن
“তুমি পাঠ করো, ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’, ‘কুল আঊযু বিরাব্বিল ফালাক’ এবং ‘কুল আঊযু বিরাব্বিন নাস’ এ সূরাগুলো দ্বারা (আল্লাহর নিকট) আশ্রয় প্রার্থন করো। কেননা এই সূরাগুলোর মত অন্য কিছু দ্বারা (আল্লাহর নিকট) আশ্রয় প্রার্থনা করা যায় না। তুমি মুআওয়ায়াযাত বা আশ্রয় প্রার্থনার সূরাগুলো প্রত্যেক ফরয সালাতের পাঠ করো। তারপর তিনি উক্ত তিনটি সূরা উল্লেখ করলেন।”
(সুনান আবুদ দাউদ, তিরমিয, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ, ইবনে খুযায়মা ও ইবনে হিব্বান প্রমূখ। দেখুন ফাতহুল বারী, ৯/৬২)
উপরোক্ত হাদীস সমূহের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে এবং পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালতের পর একবার করে এ তিনটি সূরা তথা সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করা মুস্তাহাব।
নাযিল হওয়ার সময় ও প্রেক্ষাপটঃ
মক্কা মু’আয্যমায় এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে এ সূরা দু’টি নাযিল হয়েছিল।
তখন ইসলামী দাওয়াতের সূচনা পর্বেই মনে হচ্ছিল , রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেন ভীমরুলের চাকে হাত দিয়ে ফেলেছেন। তাঁর দাওয়াত যতই বিস্তার লাভ করতে থেকেছে কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের বিরোধিতাও ততোই বেড়ে যেতে থেকেছে। যতদিন তাদের আশা ছিল কোনরকম দেয়া-নেয়া করে অথবা ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে তাঁকে ইসলামী দাওয়াতের কাজ থেকে বিরত রাখতে পারা যাবে , ততদিন তো বিদ্বেষ ও শত্রুতার তীব্রতার কিছুটা কমতি ছিল। কিন্তু নবী করীম (সা) যখন দীনের ব্যাপারে তাদের সাথে কোন প্রকার আপোষ রফা করার প্রশ্নে তাদেরকে সম্পূর্ণ নিরাশ করে দিলেন এবং সূরা আল কাফেরুনে তাদেরকে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলে দিলেন — যাদের বন্দেগী তোমরা করছো আমি তার বন্দেগী করবো না এবং আমি যার বন্দেগী করছি তোমরা তার বন্দেগী করো না , কাজেই আমার পথ আলাদা এবং তোমাদের পথ ও আলাদা — তখন কাফেরদের শত্রুতা চরমে পৌঁছে গিয়েছিল।
বিশেষ করে যেসব পরিবারের ব্যক্তিবর্গ ( পুরুষ-নারী , ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে) ইসলাম গ্রহণ করেছিল তাদের মনে তো নবী করীমের (সা) বিরুদ্ধে সবসময় তুষের আগুন জ্বলছিল। ঘরে ঘরে তাঁকে অভিশাপ দেয়া হচ্ছিল। কোন দিন রাতের আঁধারে লুকিয়ে তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। যাতে বনী হাশেমদের কেউ হত্যাকরীর সন্ধান পেয়ে আবার প্রতিশোধ নিতে না পারে এ জন্য এ ধরনের পরামর্শ চলছিল। তাঁকে যাদু – টোনা করা হচ্ছিল। এভাবে তাঁকে মেরে ফেলার বা কঠিন রোগে আক্রান্ত করার অথবা পাগল করে দেয়ার অভিপ্রায় ছিল। জিন ও মানুষদের মধ্যকার শয়তান সব দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। তারা চাচ্ছিল জিন মানুষের মনে তাঁর এবং তিনি যে দীন তথা জীবন বিধান কুরআন এনেছেন তার বিরুদ্ধে কোন না কোন সংশয় সৃষ্টি করতে। এর ফলে লোকেরা তাঁর প্রতি বিরূপ ধারণা করে দূরে সরে যাবে বলে তারা মনে করছিল।
অনেক লোকেরা মনে হিংসার আগুন জ্বলছিল। কারণ তারা নিজেদের ছাড়া বা নিজেদের গোত্রের লোকদের ছাড়া আর কারো প্রদীপের আলো জ্বলতে দেখতে পারতো না। উদাহরণ স্বরূপ , আবু জেহেল যে কারণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধিতায় সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল সেটি ছিল তার নিজের ভাষায় : “ আমাদের ও বনী আবদে মান্নাফের ( তথা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবার ) মধ্যে ছিল পারস্পরিক প্রতিযোগিতা । তারা মানুষকে আহার করিয়েছে , আমরা ও আহার করিয়েছি । তারা লোকদেরকে সওয়ারী দিয়েছে , আমরা ও দিয়েছি। তারা দান করেছে , আমরাও দান করেছি। এমন কি তারা ও আমরা মান মর্যাদার দৌঁড়ে সামনে সমান হয়ে গেছি। এখন তারা বলছে কি , আমাদের মধ্যে একজন নবী আছে , তার কাছে আকাশ থেকে অহী আসে। আচ্ছ , এখন কি এ ক্ষেত্রে আমরা তাদের সাথে কেমন করে মোকাবেলা করতে পারি ? আল্লাহর কসম , আমরা কখনো তাকে মেনে নেবো না এবং তার সত্যতার স্বীকৃতি দেবো না। ” ( ইবনে হিশাম , প্রথম খণ্ড , ৩৩৭-৩৩৮ পৃষ্ঠা )
হযরত মূসার ( আ) ঠিক সেই সময়ের কথার মতো যখন ফেরাউন ভরা দরবারে তাঁকে হত্যা করার সংকল্প প্রকাশ করেছিল। হযরত মূসা তখন বলেছিলেন :
“ আমি নিজের ও তোমাদের রবের আশ্রয় নিয়েছি এমন ধরনের প্রত্যেক দাম্ভিকের মোকাবেলায় যে হিসেবের দিনের প্রতি ঈমান রাখে না। ” ( আল মু’মিন , ২৭)
“ আর তোমরা আমার ওপর আক্রমণ করবে এ জন্য আমি নিজের ও তোমাদের রবের আশ্রয় নিয়েছি। ” ( আদ দুখান, ২০)
উভয় স্থানেই আল্লাহর এ মহান মর্যাদা সম্পন্ন পয়গম্বরদের নিতান্ত সহায় সম্বলহীন অবস্থায় বিপুল উপায় উপকরণ ও ক্ষমতা- প্রতিপত্তির অধিকারীদের সাথে মোকাবেলা করতে হয়েছিল।
উভয় স্থানেই শক্তিশালী দুশমনদের সামনে তাঁরা নিজেদের সত্যের দাওয়াত নিয়ে অবিচল দৃঢ়তার সাথে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। অথচ দুশমনদের মোকাবেলা করার মতো কোন বস্তুগত শক্তি তাদের ছিল না।
উভয় স্থানেই তাঁরা “ তোমাদের মোকাবেলায় আমরা বিশ্ব – জাহানের রবের আশ্রয় নিয়েছি ” এই বলে দুশমনদের হুমকি -ধমকি মারাত্মক বিপজ্জনক কূট কৌশল ও শত্রুতামূলক চক্রান্ত উপেক্ষা করে গেছেন। মূলত যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে , আল্লাহর শক্তি সব শক্তির সেরা , তাঁর মোকাবেলায় দুনিয়ার সব শক্তি তুচ্ছ এবং যে ব্যক্তি তাঁর আশ্রয় নিয়েছে তার সামান্যতম ক্ষতি করার ক্ষমতাও কারো নেই। একমাত্র সেই ব্যক্তিই এ ধরনের অবিচলতা , দৃঢ় সংকল্প ও উন্নত মনোবলের পরিচয় দিতে পারে এবং সে -ই একথা বলতে পারে : সত্যের বাণী ঘোষণার পথ থেকে আমি কখনই বিচ্যুত হবো না। তোমাদের যা ইচ্ছা করে যাও । আমি তার কোন পরোয়া করি না। কারণ আমি তোমাদের ও আমার নিজের এবং সারা বিশ্ব – জাহানের রবের আশ্রয় নিয়েছি।
সূরা ফালাক ও নাস পৃথকভাবেই সন্নিবিশিতঃ
সকল সাহাবী একমত হওয়ার ভিত্তিতে তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু কুরআন মজীদের যে অনুলিপি তৈরি করেছিলেন এবং ইসলামী খেলাফতের পক্ষ থেকে ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকারী পর্যায়ে পঠিয়েছিলেন তাতে এ দু’টি সূরা লিপিবদ্ধ ছিল।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুবারক যুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত সমগ্র ইসলামী দুনিয়ায় কুরআনের যে কপির ওপর সমগ্র মুসলিম উম্মাহ একমত তাতেই সূরা দু’টি লিখিত আছে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে অত্যন্ত নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য হাদীস অনুযায়ী একথা প্রমাণিত হয় যে , তিনি নামাযে এ সূরা দু’টি নিজে পড়তেন , অন্যদের পড়ার আদেশ দিতেন এবং কুরআনের সূরা হিসেবেই লোকদেরকে এ দু’টির শিক্ষা দিতেন। যেমন—-
মুসলিম , আহমাদ , তিরমিযী ও নাসাঈর বরাত দিয়ে আমরা হযরত উকবা ইবনে আমেরের (রা) একটি রেওয়ায়াত বর্ণনা করেছি। এতে রসূলুল্লাহ (সা) সূরা ফালাক ও সূরা নাস সম্পর্কে তাঁকে বলেন : আজ রাতে এ আয়াতগুলো আমার ওপর নাযিল হয়েছে। উকবা ইবনে আমরে (রা) থেকে বর্ণিত নাসায়ীর এক রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দু’টি সূরা ফজরের নামাযে পড়েন ।
ইবনে হিব্বানও এই হযরত উকবা ইবনে আমের (রা) থেকে রেওয়ায়াত করেছেন , নবী করীম (সা) তাঁকে বলেন : “ যদি সম্ভব হয় তোমার নামাযসমূহ থেকে এ সূরা দু’টির পড়া যেন বাদ না যায়। ”
মুসনাদে আহমাদ , আবু দাউদ ও নাসাঈতে উকবা ইবনে আমেরের (রা) একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে , রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন : “ লোকেরা যে সূরাগুলো পড়ে তার মধ্যে সর্বোত্তম দু’টি সূরা কি তোমাকে শেখাবো না ? তিনি আরজ করেন , অবশ্যি শিখাবেন। হে আল্লাহ রসূল ! একথায় তিনি তাকে এ আল ফালাক ও আন নাস সূরা দু’টি পড়ান। তারপর নামায দাঁড়িয়ে যায় এবং নবী করীম (সা) এ সূরা দু’টি তাতে পড়েন। নামায শেষ করে তিনি তার কাছ দিয়ে যাবার সময় বলেন : “ হে উকাব ( উকবা) ! কেমন দেখলে তুমি ?” এরপর তাকে হিদায়াত দিলেন , যখন তুমি ঘুমাতে যাও এবং যখন ঘুম থেকে জেগে উঠো তখন এ সূরা দু’টি পড়ো। মুসনাদে আহামদ , আবু দাউদ তিরমিযী ,
নাসায়ী ইবনে মারদুইয়ার এবং হাকেম উকবা ইবনে আমেরের আর একটি রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছে : একবার নবী করিম (সা) সওয়ারীর পিঠে চড়ে যাচ্ছিলেন এবং আমি তাঁর পবিত্র পায়ে হাত রেখে সাথে সাথে যাচ্ছিলাম। আমি বললাম , আমাকে কি সূরা হূদ সূরা ইউসুফ শিখিয়ে দেবেন ? বললেন : “আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য ‘ কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক – এর চাইতে বেশী বেশী উপকারী আর কোন জিনিস নেই। ”
নাসাঈ , বায়হাকী , বাগাবী ও ইবনে সা’দ আবদুল্লাহ ইবনে আবেস আল জুহানীর রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছে , নবী করিম (সা) আমাকে বলেছেন : “ইবনে আবেস , আমি কি তোমাকে জানাবো না , আশ্রয় প্রার্থীরা যতগুলো জিনিসের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কোনগুলো ?” আমি বললাম , অবশ্যি বলবেন হে আল্লাহর রসূল ! বললেন : “ কূল আউযু বিরব্বিল ফালাক ” ও “ কুল আউযু বিরব্বিন নাস ” সূরা দু’টি । ” ইবনে মারদুইয়া হযরত ইবনে সালমার রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছে : “ আল্লাহ যে সূরাগুলো সবচেয়ে বেশী পছন্দ করেন তা হচ্ছে ” , কুল আউযু বিরব্বিল ফালাক ও কুল আউযু বিরব্বিন নাস।”
কুরআন মজীদে এ দু’টি সূরা ছাড়াও এমন ৩৩০ টি আয়াত আছে যেগুলো ‘কুল’ শব্দ দিয়ে শুরু করা হয়েছে। এ আয়াতগুলোতে ‘কুল’ ( বলো ) থাকা একথাই সাক্ষ্য বহন করে যে , এগুলো অহীর কালাম এবং যেসব শব্দ সহকারে এগুলো নবী করিম (সা) — এর ওপর নাযিল হয়েছিল হুবুহু সেই শব্দগুলো সহকারে লোকদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া তাঁর জন্য ফরয করা হয়েছিল। নয়তো প্রত্যেক জায়গায় ‘কুল’ (বলো ) শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু সেই শব্দগুলোই বলতেন যেগুলো বলার হুকুম তাঁকে দেয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে তিনি এগুলো কুরআনে সংযোজিত করতেন না। বরং এ হুকুমটি পালন করার জন্য শুধু মাত্র সেই কথাগুলোই বলে দেয়া যথেষ্ট মনে করতেন যেগুলো বলার হুকুম তাঁকে দেয়া হয়েছিল।
নবী করীমের (সা) ওপর যাদুর প্রভাব
। হাদীস থেকে জানা যায় , রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর যাদু করা হয়েছিল। তার প্রভাবে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এ যাদুর প্রভাব দূর করার জন্য জিব্রীল আলাইহিস সালাম এসে তাঁকে এ সূরা দু’টি পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন
বিভিন্ন হাদীসে এর যে বিস্তারিত বিবরণ এসেছে সেগুলো একত্র করে এবং একসাথে গ্রথিত ও সুসংবদ্ধ করে সাজিয়ে গুছিয়ে আমরা এখানে একটি ঘটনা আকারে তুলে ধরছি।
হোদায়বিয়ার সন্ধির পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম মদীনায় ফিরে এলেন। এ সময় সপ্তম হিজরীর মহররম মাসে খয়বর থেকে ইহুদীদের একটি প্রতিনিধি দল মদীনায় এলো। তারা আনসারদের বনি যুরাইক গোত্রের বিখ্যাত যাদুকর লাবীদ ইবনে আ’সমের সাথে সাক্ষাত করলো।
তারা তাকে বললো , মুহাম্মাদ (সা) আমাদের সাথে যা কিছু করেছেন তা তো তুমি জানো। আমরা তাঁর ওপর অনেকবার যাদু করার চেষ্টা করেছি , কিন্তু সফল হতে পারেনি। এখন তোমার কাছে এসেছি। কারণ তুমি আমাদের চাইতে বড় যাদুকর। তোমার জন্য এ তিনটি আশরাফী ( স্বর্ণ মুদ্রা ) এনেছি। এগুলো গ্রহণ করো এবং মুহাম্মাদের ওপর একটি শক্ত যাদুর আঘাত হানো।
এ সময় একটি ইহুদী ছেলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কাজ করতো। তার সাথে যোগসাজশ করে তারা রসূলুল্লাহ (সা) চিরুনীর একটি টুকরা সংগ্রহ করতে সক্ষম হলো। তাতে তাঁর পবিত্র চুল আটকানো ছিল সেই চুলগুলো ও চিরুনীর দাঁতের ওপর যাদু করা হলো । কোন কোন বর্ণনায় বলা হয়েছে , লাবীদ ইবনে আসম নিজেই যাদু করেছিল। আবার কোন কোন বর্ণনায় বলা হয়েছে — তার বোন ছিল তার চেয়ে বড় যাদুকর । তাদের সাহায্যে সে যাদু করেছিল যাহোক এ দু’টির মধ্যে যে কোন একটিই সঠিক হবে।
এ ক্ষেত্রে এ যাদুকে একটি পুরুষ খেজুরের ছাড়ার আবরণের নিচে রেখে লাবীদ তাকে বনী যুরাইকের যারওয়ান বা যী -আযওয়ান নামক কূয়ার তলায় একটি পাথর চাপা দিয়ে রাখলো।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর প্রভাব পড়তে পূর্ণ এক বছর সময় লাগলো। বছরের শেষ ছয় মাসে মেজাজে কিছু পরিবর্তন অনুভূত হতে থাকলো।
শেষ চল্লিশ দিন কঠিন এবং শেষ তিন দিন কঠিনতর হয়ে গেলো। তবে এর সবচেয়ে বেশী যে প্রভাব তাঁর ওপর পড়লো তা কেবল এতটুকুই যে , দিনের পর দিন তিনি রোগা ও নিস্তেজ হয়ে যেতে লাগলেন। কোন কাজের ব্যাপারে মনে করতেন , করে ফেলেছেন অথচ তা করেননি।
নিজের স্ত্রীদের সম্পর্কে মনে করতেন , তিনি তাদের কাছে গেছেন অথচ আসলে তাদের কাছে যাননি। আবার কোন কোন সময় নিজের দৃষ্টির ব্যাপারেও তাঁর সন্দেহ হতো। মনে করতেন কোন জিনিস দেখেছেন অথচ আসলে তা দেখেননি। এসব প্রভাব তাঁর নিজের ব্যক্তিসত্তা পর্যন্তই সীমাদ্ধ ছিল। এমনকি তাঁর ওপর দিয়ে কি ঘটে যাচ্ছে তা অন্যেরা জানতেও পারেনি।
কিন্তু নবী হিসেবে তাঁর ওপর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তায় তার মধ্যে সামান্যতম ব্যাঘাতও সৃষ্টি হতে পারেনি।
কোন একটি বর্ণনায়ও একথা বলা হয়নি যে , সে সময় তিনি কুরআনের কোন আয়াত ভুলে গিয়েছিলেন । অথবা কোন আয়াত ভুল পড়েছিলেন। কিংবা নিজের মসলিসে , বক্তৃতায় ও ভাষণে তাঁর শিক্ষাবলীতে কোন পার্থক্য সূচিত হয়েছিল। অথবা এমন কোন কালাম তিনি অহী হিসেবে পেশ করেছিলেন যা আসলে তাঁর ওপর নাযিল হয়নি। কিংবা তাঁর কোন নামায তরফ হয়ে গেছে এবং সে সর্ম্পকে তিনি মনে করেছেন যে , তা পড়ে নিয়েছেন অথচ আসলে তা পড়েননি
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ যুৱাইক বংশের লাবীদ ইবনে আ’সাম নামে এক ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে যাদু করে যার পরিণামে আল্লাহ রাসূলের কাছে মনে হয় যে, কোন কাজ করেছেন অথচ তিনি সেটি করেননি। অতঃপর একদিন অথবা এক রাতে তিনি আমার কাছে ছিলেন তিনি প্রার্থনার পর প্রার্থনা করলেন অতঃপর তিনি বললেনঃ হে আয়েশা! তুমি কি জান যে, আল্লাহ তায়ালা আমার সেই বিষয় সমস্যার সমাধান করেছেন যে বিষয়ে আমি সমাধান চেয়েছিলাম? আমার কাছে দুই ব্যক্তি আসলেন তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অপরজন পায়ের কাছে বসলেন। অতঃপর তাদের একজন অপর জনকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ
লোকটির কিসের ব্যাথা?
দ্বিতীয়জন উত্তরে বললেনঃ লোকটিকে যাদু করা হয়েছে।
প্রথম ব্যক্তি বললেনঃ কে যাদু করেছে?
দ্বিতীয়জন বললেনঃ লাবীদ বিন আসাম।
প্রথমজন জিজ্ঞাসা করলেনঃ কি দিয়ে যাদু করেছে?
দ্বিতীয়জন বললেনঃ চিরুনী, মাথা বা দাড়ির চুল ও পুরুষ খেজুর গাছের মোচার খোসা দ্বারা।
প্রথমজন বলেনঃ তা কোথায়? দ্বিতীয়জন বলেনঃ জারওয়ান কূপে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উক্ত কূপে সাহাবাদের কতিপয়কে নিয়ে হাজির হন। তিনি বলেনঃ হে আয়েশা কূপের পানি যেন মেহদী মিশ্রিত এবং কূপের পার্শ্বের খেজুর গাছের মাথাগুলি যেন শয়তানদের মাথা। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কেন আপনি তা বের করে ফেললেন না? তিনি বলেনঃ আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দিয়েছেন, তাই আমি অপছন্দ করি যে খারাপ বিষয়টি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিব। পরিশেষে উক্ত যাদুকে ঢেকে ফেলার আদেশ হয়। (বুখারীঃ ১০/২২২ ফাতহসহ ও মুসলিমঃ ১৪/১৭৪ নববীসহ)
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ ইয়াহুদী জাতি (আল্লাহ তাদের প্রতি লা’নত করুন) তাদের সর্বশেষ যাদুকর লাবীদ ইবনে আসামের সাথে একমত হয় যে, সে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি যাদু করবে আর তারা তাকে তিন দিনার প্রদান করবে। যার ফলে এই বদবখত নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কতিপয় চুলের উপর যাদু করে। বলা হয়ে থাকে একজন ছোট বালিকা যার নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘরে যাতায়াত ছিল তার মাধ্যমে সে উক্ত চুল অর্জন করে এবং সে চুলগুলিতে তার জন্য যাদু করতঃ গিরা দেয় আর এ যাদু রেখে দেয় জারওয়ান নামক কূপে।
হাদীসের সকল বর্ণনা অনুপাতে বুঝা যায় যে, এ যাদু স্বামী-স্ত্রী কেন্দ্রিক যাদু ছিল, যার ফলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর এমন ধারণা হতে যে, তিনি তার কোন স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হবেন; কিন্তু যখন তার নিকটবতী হতেন তখন তা আর সম্ভব হতো না। এ যাদু তার জ্ঞান, আচার-আচরণ বা তার কার্যক্রমে কোন প্রভাব বিস্তার করেনি; বরং যা উল্লেখ করা হয়েছে সে ক্ষেত্রেই ক্রিয়াশীল ছিল । এ যাদু কতদিন ক্রিয়াশীল ছিল তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন ৪০ দিন কেউ অন্যমত পোষণ করেন। (আল্লাহ তায়ালাই অধিক জ্ঞাত)। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় রবের নিকট কাকুতি মিনতি করে দু’আ করতে থাকেন। যার ফলে আল্লাহ তায়ালা তার দু’আ কবুল করে দু’জন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। এরপর যখন উভয় ফেরেশতা দ্বারা নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবস্থার রহস্যের
উদঘাটন হয়ে গেল নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন তা বের করে পুতে ফেলার নির্দেশ দেন। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে তা জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন।
হাদীসের সমস্ত বর্ণনার ভিত্তিতে ফুটে ওঠে যে, উক্ত ইয়াহুদী নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে মারাত্মক আকারের যাদুর আশ্রয় নিয়েছিল। যার উদ্দেশ্য ছিল তাকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হত্যা করা। আর সর্বজন বিদিত যে, হত্যা করারও যাদু হয়ে থাকে; কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাকে তাদের চক্রান্ত হতে রক্ষা করেন। যার ফলে তাকে সর্ব নিম্নস্তরের যাদুতে পরিণত করে দেন। আর এটিই হলো আল্লাহর হেফাযত।
মানসিক চিকিৎসা
সূরা ফালাক্ব ও নাস কুরআনের অন্যতম সেরা মু‘জেযা স্বরূপ। এর মধ্যে রয়েছে অধ্যাত্ম বিজ্ঞানের অমূল্য উৎস। যা আধুনিক পাশ্চাত্যে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এ সূরা দ্বারা একথা প্রমাণিত হয়েছে যে, মানুষের উপরে তার মানসিক প্রতিক্রিয়ার ব্যাপক প্রভাব পড়ে। যা ভাল ও মন্দ উভয় প্রকারে পরিদৃষ্ট হয়। যেমন লাবীদ বিন আছাম-এর করা জাদু রাসূল (সা)-এর উপরে ক্রিয়া করেছিল মন্দভাবে।
পক্ষান্তরে সূরা ফালাক্ব ও নাস তাঁর উপর শুভ প্রতিক্রিয়া বিস্তার করে। যাতে তিনি সুস্থ হয়ে যান। এতে প্রমাণিত হয় যে, বস্ত্তগত ঔষধ ছাড়াও মানসিক ঔষধ মানব দেহে অধিকতর দ্রুত কাজ করে। এমনকি অতি সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, যে কোন রোগের আরোগ্য ৮০ শতাংশ নির্ভর করে রোগীর মানসিক শক্তির উপর। এমনকি ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য ব্যাধিতেও বেদনার উপশম হয় রোগীর জোরালো মানসিক শক্তির উপরে। ইউরোপ-আমেরিকায় এখন রোগীকে মানসিক ঔষধ দেওয়া হচ্ছে এভাবে যে, তুমি বার বার বলো ‘আমার কোন অসুখ নেই, আমি সুস্থ’। এভাবে পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মানসিকভাবে শক্তিশালীগণ দ্রুত আরোগ্য লাভ করে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।
কুরআন বহু পূর্বেই মনোচিকিৎসার পথ দেখিয়েছে। বরং পুরা কুরআনকেই আল্লাহ বিশ্বাসীদের জন্য ‘শিফা’ ও ‘রহমত’ তথা ‘আরোগ্য’ ও ‘অনুগ্রহ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন (বনু ইস্রাঈল ১৭/৮২)। সূরা ফালাক্ব ও নাস তার মধ্যে পরীক্ষিত, সহজপাঠ্য ও সুপরিচিত দু’টি অনন্য সূরা। সূরা দু’টি এদিক দিয়ে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অভ্রান্ত পথ নির্দেশক ও মানব কল্যাণের এক অফুরন্ত উৎস হিসাবে গণ্য হবে। যদি না কি মানুষ আল্লাহর উপরে দৃঢ় বিশ্বাসী হয় ও তাঁর উপরে গভীরভাবে আস্থাশীল হয়।
ব্যাখ্যাঃ
আউযু বিল্লাহ ‘ বলে সরাসরি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করার পরিবর্তে আল্লাহর তিনটি গুণের মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করে তাঁর আশ্রয় নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ।
এখানে রব্ব্, মালিক এবং ইলাহ এ তিনটি গুণের অধিকারীর নিকট আশ্রয় চাওয়া হয়েছে।
আল্লাহ রব, মালিক বা অধিপতি, মাবুদ সবই। সব কিছুই তাঁর সৃষ্টি, তার মালিকানাধীন, তাঁর বান্দা। তাই আশ্রয়প্রার্থনকারীকে এ তিনটি গুণে গুণান্বিত মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। [ইবন কাসীর]
পরের তিনটি আয়াতে জ্বিন ও মানবরূপী শয়তানের কুমন্ত্রণা হ’তে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রথম গুণ হিসাবে বলা হয়েছে رَبِّ النَّاسِ ‘মানুষের পালনকর্তা’।
সকল মানুষ আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা হিসাবে মানে। কিন্তু পালনকর্তা হিসাবে মানতে অনেকে আপত্তি করে। যেমন ফেরাঊন সরাসরি অস্বীকার করেছিল এবং নিজেকেই أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَى ‘আমি তোমাদের বড় পালনকর্তা’ বলে দাবী করেছিল (নাযে‘আত ৭৯/২৪)।
পৃথিবীতে ফেরাঊনী স্বভাবের অসংখ্য ধনী, সমাজনেতা ও রাষ্ট্রনেতা রয়েছেন, যারা পরোক্ষে অনুরূপ দাবী করতে চান। তাই আল্লাহ এখানে তাঁর ‘পালনকর্তা’ গুণটিকেই শুরুতে এনেছেন। একইভাবে সূরা ফাতিহার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করা হয়েছে رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘বিশ্ব চরাচরের পালনকর্তা’ হিসাবে।
দ্বিতীয় গুণ : مَلِكِ النَّاسِ ‘মানুষের অধিপতি’। ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পৃথিবীকে কব্জায় নিবেন আর বলবেন, أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ مُلُوكُ الأَرْضِ؟ ‘আমিই বাদশাহ। পৃথিবীর রাজা-বাদশাহরা কোথায়’?বুখারী হা/৬৫১৯, মুসলিম হা/২৭৮৭
পৃথিবীর অধিকাংশ সমাজ ও রাষ্ট্রনেতা সাধারণতঃ এই অহংকারে বুঁদ হয়ে থাকেন যে, সবার উপরে তারাই সত্য, তাদের উপরে নেই। তারা যা বলেন বা করেন, সেটাই চূড়ান্ত। আইন ও বিধানদাতা তারাই। তাদের বানোয়াট আইনে আদালতগুলিতে বিচার হচ্ছে।
বাদী ও বিবাদীর হায়াত শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বিচার শেষ হয় না। এটাই হ’ল আধুনিক যুগের উন্নত বিচার ব্যবস্থার নমুনা। মানুষের উপরে মানুষের এই মেকী প্রভুত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আল্লাহ তাঁর একাধিপত্য ও একক সার্বভৌমত্বের গুণ প্রকাশ করে বলেছেন مَلِكِ النَّاسِ ‘মানুষের অধিপতি’। এর দ্বারা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, মানুষের অধিপতি মানুষ নয়, বরং আল্লাহ। আল্লাহর দাসত্বের অধীনে সকল মানুষের অধিকার সমান।
তৃতীয় গুণ : إِلَهِ النَّاسِ ‘মানুষের উপাস্য’।
স্রেফ ধারণা ও কল্পনার বশবর্তী হয়ে কিছু ব্যক্তি ও বস্ত্তর উপরে অলৌকিক ক্ষমতা আরোপ করে মানুষ তাদের উপাসনা করে থাকে। তাদের কবর, মূর্তি, ছবি ও প্রতিকৃতিকে পূজা করে। একইভাবে নবী-অলি, ফেরেশতা, সূর্য-চন্দ্র, আগুন-পাহাড়-নদী, গাছ-পাথর এমনকি মাছ-কবুতর ও তুলসী গাছ পর্যন্ত মানুষের পূজা পাচ্ছে।
সৃষ্টির সেরা মানুষ নিজেদের হাতে গড়া বেদী, মিনার, কবর, ভাষ্কর্য ও সৌধের সামনে গিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।
জীবন্ত মানুষ যখন ক্ষুধায়-তৃষ্ণায় প্রাণ হারাচ্ছে, তখন এইসব নিষ্প্রাণ মূর্তি ও মিনারের পিছনে মানুষ অকাতরে জান-মাল, সময় ও শ্রম ব্যয় করছে। অথচ যাকে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে, যাকে পূজা দেওয়া হচ্ছে, সে না দেখতে পায়, না শুনতে পায়। সে না কোন ক্ষতি করতে পারে, না কোন উপকার করতে পারে। এরপরেও মানুষ যাচ্ছে সেখানে দলে দলে মিথ্যা ধারণা ও কল্পনার বশবর্তী হয়ে।
সেযুগের নমরূদ নিজেকে মানুষের হায়াত-মঊতের মালিক দাবী করে বলেছিল,
أَنَا أُحْيِي وَأُمِيتُ ‘আমি বাঁচাই ও আমি মারি’ (বাক্বারাহ ২/২৫৮)।
ফেরাঊন নিজেকে জনগণের ‘ইলাহ’ দাবী করে কওমের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছিল, مَا عَلِمْتُ لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرِي… ‘আমি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন উপাস্য আছে বলে আমি জানি না’ … (ক্বাছাছ ২৮/৩৮)।
সে আরও বলেছিল, مَا أُرِيْكُمْ إِلاَّ مَا أَرَى وَمَا أَهْدِيْكُمْ إِلاَّ سَبِيْلَ الرَّشَادِ ‘আমি তোমাদের জন্য যেটা কল্যাণ বুঝি, সেটাই বলি। আর আমি তোমাদের কেবল সৎপথই দেখিয়ে থাকি’ (মুমিন/গাফির ৪০/২৯)।
এ তিনটি গুনের কাছে আশ্রয় চাওয়ার মানে হচ্ছে :
আমি এমন এক আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি, যিনি সমস্ত মানুষের রব বাদাশাহ ও মাবুদ হবার কারণে তাদের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব রাখেন , যিনি নিজের বান্দাদের হেফাজন করার পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন এবং যথার্থই এমন অনিষ্টের হাত থেকে মানুষের রক্ষা করতে পারেন , যার হাত থেকে নিজে বাঁচার এবং অন্যদের বাঁচাবার জন্য আমি তাঁর শরণাপন্ন হচ্ছি৷ শুধু এতটুকু নয় বরং যেহেতু তিনিই রব , বাদশাহ ও ইলাহ ,তিনি ছাড়া আর কেউ নেই যার কাছে আমি পানাহ চাইতে পারি এবং প্রকৃতপক্ষে যিনি পানাহ দেবার ক্ষমতা রাখেন৷
(৪-৬) مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ، الَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ، مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
‘গোপন শয়তানের কুমন্ত্রণার অনিষ্টকারিতা হ’তে’। ‘যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে’। ‘জ্বিনের মধ্য হ’তে ও মানুষের মধ্য হ’তে’।
বর্ণিত তিনটি আয়াতে শয়তানের কুমন্ত্রণার অনিষ্টকারিতা হ’তে বাঁচার জন্য মানুষকে আল্লাহর আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। কেননা শয়তান মানুষের নিত্য সঙ্গী এবং সে কাউকে ভয় পায় না আল্লাহ ব্যতীত। বান্দা যখনই আল্লাহর নাম নেয়, তখনই সে পিছিয়ে যায়। এমনকি আযান শুনলে সে বায়ু নিঃসরণ করতে করতে দৌড়ে পালায়…। মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৫৫ ‘
শয়তান মানুষের রগ-রেশায় চলাফেরা করে। মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৮; বুখারী হা/২০৩৫;
একে আটকানোর ক্ষমতা মানুষের নেই। অথচ এর প্ররোচনাতেই মানুষ সমস্ত পাপ করে। তাই একে দমন করার একমাত্র কৌশল হিসাবে মানুষকে আল্লাহর আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
الْوَسْوَاسِ মাছদার যা اسم فاعل অর্থে এসেছে الْمُوَسْوِسُ ‘কুমন্ত্রণাদাতা’ অর্থাৎ শয়তান। কুরতুবী বলেন, আসলে ছিল من شر ذى الوسواس কিন্তু ذى মুযাফকে বিলুপ্ত করে مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ করা হয়েছে। الْوَسْوَسَةُ অর্থ الصوت الخفى ‘নীরব খটকা’ যা মনের মধ্যে উত্থিত হয় (তানতাভী)। অথবা حديث النفس ‘মনের মধ্যেকার কল্পকথা’ (কুরতুবী)।
خَنَسَ يَخْنُسُ خَنْسًا وَخَنُوْسًا وَخِنَاسًا অর্থ পিছে আসা, লুকিয়ে যাওয়া। সেখান থেকে خَنَّاسٌ অর্থ ‘গোপন শয়তান’। কেননা আল্লাহর নাম শুনলে শয়তান পিছিয়ে যায় ও লুকিয়ে যায়। আবার যেমনি বান্দা বেখেয়াল হয়ে যায়, অমনি সামনে চলে আসে ও কুমন্ত্রণা দেয়। আকাশের মিটিমিটি নক্ষত্রকে এজন্য الْخُنَّس বলা হয়েছে (তাকভীর ৮১/১৫)। কেননা এগুলো এই দেখা যায়, এই মিলিয়ে যায়। শয়তান অনুরূপ আল্লাহর নাম স্মরণ করলেই পালায়। আবার আল্লাহকে ভুললেই সামনে চলে আসে। এই লুকোচুরি স্বভাবের জন্য শয়তানকে অত্র আয়াতে ‘খান্নাস’ বলা হয়েছে। আর এটা হ’ল শয়তানের প্রথম বৈশিষ্ট্য।
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই একজন শয়তান সঙ্গী নিয়োগ করা হয়েছে। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার সাথেও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে আল্লাহ আমাকে তার উপর নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেছেন। ফলে তার থেকে আমি নিরাপদ হয়েছি এবং সে আমাকে শুধুমাত্র ভাল কাজের কথাই বলে।” [মুসলিম: ২৮১৪]।
(৫) اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ ‘যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে’- এটা হ’ল শয়তানের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلاَّ وَقَدْ وُكِّلَ بِهِ قَرِيْنُهُ مِنَ الْجِنِّ قَالُوْا وَإِيَّاكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ وَإِيَّاىَ إِلاَّ أَنَّ اللهَ أَعَانَنِىْ عَلَيْهِ فَأَسْلَمَ فَلاَ يَأْمُرُنِىْ إِلاَّ بِخَيْرٍ- ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সঙ্গী হিসাবে শয়তানকে নিযুক্ত করা হয়নি। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনিও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমিও। তবে আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছেন। সেজন্য সে অনুগত হয়ে গেছে। ফলে সে আমাকে নির্দেশ করে না ভাল ব্যতীত’। মুসলিম হা/২৮১৪ ‘ক্বিয়ামতের বর্ণনা’ অধ্যায়;
একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদে ই‘তেকাফে ছিলেন। স্ত্রী ছাফিয়া কোন প্রয়োজনে সেখানে গিয়েছিলেন। অতঃপর কথা শেষ হ’লে তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাসূল (ছাঃ) তার সাথে কিছু দূর হেঁটে আসেন। এ সময় দু’জন আনছার ছাহাবী তাঁদের দেখে দ্রুত সরে যান। তখন রাসূল (ছাঃ) তাদের ডেকে বললেন, থামো। ইনি হ’লেন ছাফিয়া বিনতে হুয়াই।
তখন দু’জন বিস্ময়ে বলে উঠলো, সুবহানাল্লাহ ইয়া রাসূলাল্লাহ !
জবাবে রাসূল (সা) বললেন,
إِنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِىْ مِنِ ابْنِ آدَمَ مَجْرَى الدَّمِ وَإِنِّىْ خَشِيْتُ أَنْ يَّقْذِفَ فِى قُلُوْبِكُمَا شَيْئًا-
‘নিশ্চয় শয়তান বনু আদমের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করে যা দিয়ে রক্ত চলাচল করে। আমি ভয় করেছিলাম যে আমাদের দেখে তোমাদের অন্তরে কোন কিছুর উদয় হ’তে পারে’।বুখারী হা/২০৩৫; ইবনু মাজাহ হা/১৭৭৯।
আর যদি শয়তানের পক্ষ থেকে তোমরা কোন উস্কানী অনুভব করো তাহলে আল্লাহর পানাহ চাও৷’ (হা – মীম সাজদাহ ,৩৬ )
” বলো , হে আমার বর ! আমি শয়তারদের উস্কানী থেকে তোমার পানাহ চাচ্ছি৷” ( আল মু’মিনূন ,৯৭ )
” যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের অবস্থা এমন হয় যে, কখনো শয়তানের প্রভাবে কোন অসৎ চিন্তা তাদেরকে স্পর্শ করলেও সঙ্গে সঙ্গেই সজাগ হয়ে যায় এবং তারপর (সঠিক পথ) তাদের সৃষ্টি সমক্ষে পরিস্কার ভেসে উঠতে থাকে৷ ” ( আল আরাফ , ২০১ )৷
আর এ জন্যই যারা শয়তানের এই শেষ অস্ত্রের আঘাতও ব্যর্থ করে দিয়ে সফলকাম হয়ে বেরিয়ে আসে তাদের সম্পর্ক মহান আল্লাহ বলেন :
“অতি সৌভাগ্যবান ব্যক্তিরা ছাড়া আর কেউ এ জিনিস লাভ করতে পারে না৷ ” ( হা – মীম সাজদাহ , ৩৫)
এ প্রসংগে আর একটি কথাও সামনে রাখতে হবে৷ সেটি হচ্ছে মানুষের মনে কেবল জিন ও মানুষ দলভুক্ত শয়তানরাই বাইর থেকে প্ররোচনা দেয় না বরং ভেতর থেকে মানুষের নিজের নফসও প্ররোচনা দেয়৷ তার নিজের ভ্রান্ত মতবাদ তার বুদ্ধিবৃত্তিকে বিপথে পরিচালিত করে৷
তার নিজের অবৈধ স্বার্থ – লালসা, তার ইচ্ছা , সংকল্প , বিশ্লেষণ ও মীমাংসা করার ক্ষমতাকে অসৎপথে চালিত করে ৷ আর বাইরের শয়তানরাই শুধু নয়, মানুষের ভেতরের তার নিজের নফসের শয়তানও তাকে ভুল পথে চালায়৷
একথাটিকেই কুরাআনের এক জায়গায় বলা হয়েছে এভাবে ” আর আমি তাদের নফস থেকে উদ্ভুদ প্ররোচনাসমূহ জানি৷ ” (কাফঃ১৬)
এ কারণেই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর এক বহুল প্রচারিত ভাষণে বলেন : ” আমরা নফসের অনিষ্টকারিতা থেকে আল্লাহর পানাহ চাচ্ছি৷ ”
(৬) مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ ‘জ্বিন ও ইনসানের মধ্য হতে।
এখানে শয়তানকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। জ্বিন শয়তান যা মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় এবং মানুষ শয়তান, যা প্রকাশ্যে মানুষকে কু-পরামর্শ দেয় ও পথভ্রষ্ট করে।
আল্লাহ বলেন,
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْإِنْسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًا وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُوْنَ
‘আর এমনিভাবে আমরা প্রত্যেক নবীর জন্য বহু শয়তানকে শত্রুরূপে নিযুক্ত করেছি মানুষের মধ্য থেকে ও জিনদের মধ্য থেকে। তারা একে অপরকে মনোমুগ্ধকর কথা দিয়ে প্ররোচিত করে থাকে। যাতে তারা ধোঁকায় পতিত হয়। যদি তোমার প্রভু চাইতেন, তাহ’লে তারা এগুলি করতে পারত না। অতএব তুমি এদেরকে ও এদের মিথ্যা রটনাগুলিকে দূরে নিক্ষেপ কর’ (আন‘আম ৬/১১২)। নবীদের যখন এই অবস্থা তখন সাধারণ মানুষের অবস্থা কেমন হবে, তা সহজেই বোধগম্য।
তবে মনের মধ্যে শয়তানী চিন্তা উদয় হলেই বান্দা গোনাহগার হিসাবে বিবেচিত হবে না, যতক্ষণ না সে মুখে বলবে বা লিখবে অথবা কাজে পরিণত করবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা) এরশাদ করেন,
إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِىْ مَا وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُوْرُهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ بِهِ أَوْ تَتَكَلَّمْ-
‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমার উম্মতের ঐসব বিষয় ক্ষমা করেছেন, যেসব বিষয় তাদের অন্তরে উদয় হয়। যতক্ষণ না তারা সে অনুযায়ী কাজ করে অথবা কথা বলে’।বুখারী হা/২৫২৮, মুসলিম হা/১২৭,
সংগ্রহেঃ
তাফসিরে যাকারিয়া,আহসানুল বায়ান, তাফহিমুল কুর’আন