সূরা আনআমঃ ৭ম রুকু (৫৬-৬০)আয়াত সমূহ
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
৬:৫৬ قُلۡ اِنِّیۡ نُهِیۡتُ اَنۡ اَعۡبُدَ الَّذِیۡنَ تَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ ؕ قُلۡ لَّاۤ اَتَّبِعُ اَهۡوَآءَکُمۡ ۙ قَدۡ ضَلَلۡتُ اِذًا وَّ مَاۤ اَنَا مِنَ الۡمُهۡتَدِیۡنَ ﴿
৫৬. বলুন, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ডাক, তাদের ইবাদাত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। বলুন, আমি তোমাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করি না; করলে আমি বিপথগামী হব এবং সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকব না।
আমিও যদি তোমাদের মতই আল্লাহর ইবাদত করার পরিবর্তে তোমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী গায়রুল্লাহর পূজা করতে আরম্ভ করে দিই, তাহলে অবশ্যই আমিও ভ্রষ্ট হয়ে যাব। অর্থাৎ, গায়রুল্লাহর পূজা করাই হল সব থেকে বড় ভ্রষ্টতা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ এই ভ্রষ্টতাই অতি ব্যাপক। এমন কি মুসলিমদের একটি বড় সংখ্যা এতে নিমজ্জিত। আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত করুন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘আপনার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি তাঁকে এই আদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত কর ।’, সূরা আল আম্বিয়া: ২৫।
(১) নূহ আলাইহিস সালাম, (২) ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম, (৩) মূসা আলাইহিস সালাম, (৪) ঈসা আলাইহিস সালাম এবং (৫) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
এঁদের মধ্যে নূহ আলাইহিস সালাম প্রথম প্রেরিত রাসূল ও দা‘ঈ। সূরা কাফিরুনে ইরশাদ হয়েছে–
১০৯:১ قُلۡ یٰۤاَیُّهَا الۡکٰفِرُوۡنَ
১০৯:২ لَاۤ اَعۡبُدُ مَا تَعۡبُدُوۡنَ
১. বলুন, হে কাফিররা!
আমি তার ইবাদত করি না, যার ইবাদত তোমরা কর। কাফিরুনঃ১-২
সূরা কাফিরুন নাযিল হয়েছিলো যে প্রেক্ষাপট তা আমরা জানি। মক্কার কাফের কুরাইশরা তাওহীদের দাওয়াতকে বন্ধ করার জন্য তারা বিভিন্ন রকম প্রস্তাব দিয়েছিলো রাসূল সা কে, তার মাঝে একটি এইরকম ছিলো-যখন কাফেররা (নিরপেক্ষ সন্ধি) প্রস্তাব রাখল যে, এক বছর আমরা তোমার উপাস্যের ইবাদত করব এবং এক বছর তুমি আমাদের উপাস্যের ইবাদত করবে। তখনও সূরা কাফিরুন নাযিল করে মহান আল্লাহ পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন।
ইরশাদ হয়েছে-
“এদেরকে বলুন, আমাদের ত্রুটির জন্য তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না এবং তোমরা যা কিছু করে যাচ্ছে সে জন্য আমাদের জবাবদিহি করতে হবে না। বলুন, আমাদের রব একই সময় আমাদের ও তোমাদের একত্র করবেন এবং আমাদের মধ্যে ঠিকমতো ফায়সালা করবেন।” [সূরা সাবা: ২৫–২৬]
“হে নবী! বলে দিন হে লোকেরা, যদি তোমরা আমার দ্বীনের ব্যাপারে (এখানে) কোন রকম সন্দেহের মধ্যে থাকো তাহলে (শুনে রাখো), আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদের বন্দেগী করছে। আমি তাদের বন্দেগী করি না। বরং আমি শুধুমাত্র সেই আল্লাহর বন্দেগী করি যার কর্তৃত্বাধীনে রয়েছে তোমাদের মৃত্যু।” [সূরা ইউনুস: ১০৪]
অন্য সূরায় আল্লাহ আরও বলেন, “হে নবী! যদি এরা এখন আপনার কথা না মানে তাহলে বলে দিন, তোমরা যা কিছু করছে তা থেকে আমি দায়মুক্ত”। [সূরা আশ-শু’আরা: ২১৬]
বর্তমানে শিরক এমনভাবে ঢুকানো হচ্ছে যা ভয়াবহ। যেমন ঃ নব বর্ষে, শহীদ মিনার
আরবী هَوٰى শব্দটি هَوِىَ ক্রিয়ার ধাতু। আভিধানিক অর্থ হ’ল, কোন কিছুকে ভালবাসা, কাম্য বস্ত্ত পাওয়ার প্রবল বাসনা। আল-মুগরাব ফী তারতীবিল মু‘রাব ২/৩৯২।
বাংলা অভিধানে هَوٰى (হাওয়া)-এর প্রতিশব্দ খেয়ালখুশি, নিয়ম ছাড়া ব্যাপার, স্বেচ্ছাচারিতা, খামখেয়ালি, অযৌক্তিক ইচ্ছা, কামনা, বাসনা, প্রবৃত্তি, কুপ্রবৃত্তি, ভোগের পথ ইত্যাদি। বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান।
পরিভাষায় هَوى বা খেয়ালখুশি : উপভোগ্য জিনিসের প্রতি শরী‘আতের কোন অনুমোদন ছাড়াই মনের যে ঝোঁক তৈরী হয় তাকে هَوى বা খেয়ালখুশি বলে।জুরজানী, আত-তা‘রীফাত, পৃঃ ৩২০।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, কাঙ্ক্ষিত জিনিসের প্রতি মনের ঝোঁককে هوى বা খেয়ালখুশি বলে। এই ঝোঁক মানুষের মাঝে তার অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই সৃষ্ট হয়েছে। কেননা তার যদি খাদ্য, পানীয় ও বিবাহ-শাদীর প্রতি ঝোঁক ও আকর্ষণ না থাকত, তাহ’লে সে খানা-পিনা, বিয়ে-শাদী কোনটাই করত না। সুতরাং প্রবৃত্তি মনের চাহিদার প্রতি মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। যেমন করে ক্রোধ অপ্রীতিকর জিনিষ থেকে তাকে বিরত রাখে। রাওযাতুল মুহিববীন, পৃঃ ৪৬৯।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَلاَ تَتَّبِعْ أَهْوَاء الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِآيَاتِنَا وَالَّذِيْنَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ بِالآخِرَةِ وَهُمْ بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُوْنَ ‘হে রাসূল! তুমি ঐ সকল লোকের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবে না যারা আমার আয়াত সমূহকে অস্বীকার করে, যারা পরকালে অবিশ্বাস করে এবং তারা অন্য কিছুকে তাদের মালিকের সমকক্ষ মনে করে’ (আন‘আম ৬/১৫০)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, وَلاَ تَتَّبِعُواْ أَهْوَاءَ قَوْمٍ قَدْ ضَلُّواْ مِنْ قَبْلُ وَأَضَلُّواْ كَثِيْراً وَضَلُّواْ عَن سَوَاء السَّبِيْلِ ‘তোমরা সেসব জাতির খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না, যারা আগেভাগেই পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে এবং তারা অনেক লোককে পথহারা করে দিয়েছে আর তারা নিজেরাও সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে’ (মায়েদাহ ৫/৭৭)।
অন্যত্র তিনি বলেন, فَاحْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللهُ وَلاَ تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنَ الْحَقِّ ‘সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা যেসব বিধি-বিধান নাযিল করেছেন তুমি তার ভিত্তিতে বিচার-ফায়ছালা কর এবং এ বিচারের সময় তোমার নিকট যে সত্য দ্বীন এসেছে তা থেকে সরে গিয়ে তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবে না’ (মায়েদাহ ৫/৪৮)।
তিনি নবী করীম (সা)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, فَلِذَلِكَ فَادْعُ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ ‘(হে নবী!) তুমি মানুষকে এ দ্বীনের দিকে ডাকতে থাক এবং এর উপরেই অবিচল থাকো, যেভাবে তোমাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর ওদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবে না’ (শূরা ৪২/১৫)।
তিনি বলেন, وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطاً ‘তুমি এমন কোন ব্যক্তির আনুগত্য করবে না যার হৃদয়-মনকে আমরা আমাদের স্মরণ থেকে উদাসীন করে দিয়েছি, আর সে তার প্রবৃত্তির দাসত্ব করতে শুরু করেছে এবং তার কাজকর্ম সীমালংঘনমূলক’ (কাহফ ১৮/২৮)।
এসব আয়াতে মহান আল্লাহ কাফির-মুশরিকদের সাথে খেয়ালখুশির সম্পর্ক যোগ করেছেন। কেননা তাদের খেয়ালখুশি সত্য হ’তে বিচ্যুত। পক্ষান্তরে মুমিনদের খেয়ালখুশি তেমন নয়। কাফিরদের কামনা-বাসনা পুরোটাই বাতিল তথা অন্যায়ের উপর কেন্দ্রীভূত। অপরদিকে মুমিনদের কামনা-বাসনা উন্নত হ’তে হ’তে এক সময় তা আল্লাহ তা‘আলার হুকুম মাফিক হয়ে যায় এবং নবী করীম (ছাঃ) আনীত দ্বীন বা জীবন বিধানের অনুগামী হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তার মন যখন কোন দিকে ঝোঁকে তখন তা সুন্নাত ও আনুগত্য বলে গণ্য হয়, ন্যূনপক্ষে তা মুবাহ হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, أَفَمَنْ كَانَ عَلَى بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّهِ كَمَنْ زُيِّنَ لَهُ سُوْءُ عَمَلِهِ وَاتَّبَعُوْا أَهْوَاءَهُمْ ‘যে ব্যক্তি তার মালিকের কাছ থেকে আসা সুস্পষ্ট সমুজ্জ্বল নিদর্শনের উপর রয়েছে তার সাথে এমন লোকদের তুলনা কীভাবে হবে যাদের চোখের সামনে তাদের মন্দ কাজগুলো শোভনীয় করে রাখা হয়েছে এবং তারা নিজেদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৪)।
৬:৫৭ قُلۡ اِنِّیۡ عَلٰی بَیِّنَۃٍ مِّنۡ رَّبِّیۡ وَ کَذَّبۡتُمۡ بِهٖ ؕ مَا عِنۡدِیۡ مَا تَسۡتَعۡجِلُوۡنَ بِهٖ ؕ اِنِ الۡحُکۡمُ اِلَّا لِلّٰهِ ؕ یَقُصُّ الۡحَقَّ وَ هُوَ خَیۡرُ الۡفٰصِلِیۡنَ ﴿۵۷﴾
৫৭. বলুন, নিশ্চয় আমি আমার রব- এর পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত; অথচ তোমরা এতে মিথ্যারোপ করেছ। তোমরা যা খুব তাড়াতাড়ি পেতে চাও তা আমার কাছে নেই। হুকুম কেবল আল্লাহর কাছেই, তিনি সত্য বর্ণনা করেন এবং ফয়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই শ্ৰেষ্ঠ।
উদ্দেশ্য সেই শরীয়ত যা অহীর মাধ্যমে তাঁর (নবী করীম (সাঃ)-এর) উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। যাতে তাওহীদকেই মূল ও প্রথম স্থান দান করা হয়েছে
সারা বিশ্বজাহানে আল্লাহরই নির্দেশ চলে এবং সমস্ত ব্যাপার তাঁরই হাতে। এই জন্য তোমরা যে চাও, সত্বর আল্লাহর আযাব তোমাদের উপর আসুক, যাতে তোমরা আমার সত্য অথবা মিথ্যা হওয়ার ব্যাপারটা জানতে পার, তো এটাও আল্লাহর এখতিয়ারাধীন। তিনি চাইলে সত্বর শাস্তি প্রেরণ করে তোমাদেরকে সতর্ক কিংবা ধ্বংস করে দেবেন এবং তিনি চাইলে সেই পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দেবেন, যে পর্যন্ত অবকাশ দেওয়া তাঁর হিকমতের দাবী হবে।
يَقُصُّ এর উৎপত্তি হল قَصَصٌ থেকে। অর্থাৎ, يَقُصُّ قَصَصَ الْحَقِّ (সত্য কথা বর্ণনা করেন অথবা বলেন)। কিংবা قَصَّ أَثَرَهُ (কারো পিছনে অনুসরণ করা) থেকে। অর্থাৎ, يَتَّبِعُ الْحَقَّ فِيْمَا يَحْكُمُ بِهِ (নিজের ফায়সালার ব্যাপারে তিনি সত্যের অনুসরণ করেন। অর্থাৎ, সত্য ফায়সালা করেন)। (ফাতহুল ক্বাদীর)
এখানে আল্লাহর আযাবের প্রতি ইংগিত করা হয়েছে৷ বিরোধীরা বলছিল, যদি তুমি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নবী হয়ে থাকো তাহলে আমরা যেখানে প্রকাশ্যে তোমাকে মিথ্যুক বলছি এবং তোমরা দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করছি সেখানে আল্লাহর আযাব আমাদের ওপর আপতিত হচ্ছে না কেন? তোমার আল্লাহর পক্ষ থেকে নিযুক্ত হবার বিষয়টি একথা দাবী করে যে, কেউ তোমাকে মিথ্যুক বলার ও অবমাননা করার সাথে সাথেই মাটির বুক বিদীর্ণ হয়ে যাবে এবং সে তার মধ্যে চাপা পড়ে যাবে অথবা সাথে সাথেই বজ্রপাত হবে এবং সে বজ্রাঘাতে সে পুড়ে ভষ্ম হয়ে যাবে৷ বিপদ আসছে এবং তাদেরকে হেয় ও অপদস্থ করা হচ্ছে অথবা যারা তাদেরকে গালিগালাজ করছে এবং তাদের গায়ে পাথর ছুঁড়ে মারছে তারা আরামে ও নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করছে৷
নূহ আ ঠিক এটাই বলেছিলেন—
‘‘হে আমার কওম! একটু ভেবে দেখ। যদি আমি আমার রবের পক্ষ হতে স্পষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি, আর তিনি যদি তাঁর পক্ষ হতে আমাকে রহমত দান করে থাকেন। তারপরেও যদি তা তোমাদের চোখে না পড়ে তাহলে,আমি কি ইহা তোমাদের উপর তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাপিয়ে দিতে পারি?’’ সূরা হুদ: ২৭-২৮।
৬:৫৮ قُلۡ لَّوۡ اَنَّ عِنۡدِیۡ مَا تَسۡتَعۡجِلُوۡنَ بِهٖ لَقُضِیَ الۡاَمۡرُ بَیۡنِیۡ وَ بَیۡنَکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ اَعۡلَمُ بِالظّٰلِمِیۡنَ
৫৮. বলুন, তোমরা যা খুব তাড়াতাড়ি পেতে চাও তা যদি আমার কাছে থাকত, তবে আমার ও তোমাদের মধ্যে তো ফয়সালা হয়েই যেত। আর আল্লাহ যালিমদের ব্যাপারে অধিক অবগত।
অর্থাৎ, আমার চাওয়ার কারণে যদি আল্লাহ তাআলা সত্বর আযাব প্রেরণ করতেন অথবা তিনি যদি এ জিনিসকে আমার এখতিয়ারাধীন করে দিতেন, তাহলে তোমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী আযাব প্রেরণ করে সত্বর ফায়সালা করে দেওয়া হত। কিন্তু এ ব্যাপারটা যেহেতু সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল, তাই তিনি না আমাকে এর এখতিয়ার দিয়েছেন, আর না এটা সম্ভব যে, তিনি আমার চাওয়া অনুযায়ী সত্বর আযাব প্রেরণ করবেন।
একটি জরুরী বিশ্লেষণঃ হাদীসে আছে যে, তায়েফবাসীর নিকটে নিপীড়িত হওয়ার পর পাহাড়ের ফিরিশতা আল্লাহর নির্দেশে নবী করীম (সাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন যে, আপনি নির্দেশ দিলে আমি সমস্ত জনপদকে উভয় পাহাড়ের মধ্যস্থলে পিষে দেব। তিনি (সাঃ) বললেন, না। বরং আমি আশা করি আল্লাহ তাআলা এদেরই বংশ থেকে আল্লাহর ইবাদতকারী সৃষ্টি করবেন; যারা তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না।’’ (বুখারীঃ সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়, মুসলিমঃ জিহাদ অধ্যায়)
এই হাদীস উল্লিখিত আয়াত ও তার ব্যাখ্যার প্রতিকূল নয়, যদিও বাহ্যতঃ তাই মনে হয়। কারণ, আয়াতে আযাব চাওয়া হলে আযাব দেওয়ার কথা প্রকাশ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে হাদীসে মুশরিকদের চাওয়া ছাড়াই কেবল তাদের কষ্ট দেওয়ার ফলে তাদের উপর আযাব প্রেরণ করার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করা হয়েছে; যা তিনি (সাঃ) পছন্দ করেননি।
৬:৫৯ وَ عِنۡدَهٗ مَفَاتِحُ الۡغَیۡبِ لَا یَعۡلَمُهَاۤ اِلَّا هُوَ ؕ وَ یَعۡلَمُ مَا فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ ؕ وَ مَا تَسۡقُطُ مِنۡ وَّرَقَۃٍ اِلَّا یَعۡلَمُهَا وَ لَا حَبَّۃٍ فِیۡ ظُلُمٰتِ الۡاَرۡضِ وَ لَا رَطۡبٍ وَّ لَا یَابِسٍ اِلَّا فِیۡ کِتٰبٍ مُّبِیۡنٍ
৫৯. আর গায়েবের চাবি তাঁরই কাছে রয়েছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারসমূহে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত রয়েছেন, তাঁর অজানায় একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না বা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।
আলোচ্য ৫৯ থেকে ৬১ নং আয়াতসমূহে তাওহীদের মৌলিক দিকের পথনির্দেশ রয়েছে। সারা বিশ্বে যত ধৰ্ম প্রচলিত রয়েছে, তন্মধ্যে দ্বীন ইসলামের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য ও প্রধান স্তম্ভ হচ্ছে একত্ববাদে বিশ্বাস। শুধু আল্লাহর সত্তাকে এক ও অদ্বিতীয় জানার নামই একত্ববাদ নয়, বরং পূর্ণত্বের যত গুণ আছে সবগুলোতেই তাকে একক ও অদ্বিতীয় মনে করা, তাকে ছাড়া কোন সৃষ্ট বস্তুকে এসব গুণে অংশীদার ও সমতুল্য মনে না করা এবং তিনি ব্যতীত আর কারো ইবাদাত না করাকে একত্ববাদ বলা হয়। আল্লাহ্ তা’আলার গুণাবলীর মধ্যে হচ্ছে জীবন, শক্তি-সামর্থ্য, শ্রবণ, দর্শন, বাসনা, ইচ্ছা, সৃষ্টি, অন্নদান, দয়া, ক্ষমা ইত্যাদি। তিনি এসব গুণে এমন পরিপূর্ণ যে, কোন সৃষ্টজীব কোন গুণে তার সমতুল্য হতে পারে না।
এসব গুণের মধ্যেও দুটি গুণ সব চাইতে বিখ্যাত।
(এক) জ্ঞান এবং (দুই) শক্তি-সামর্থ্য। তার জ্ঞান বিদ্যমান-অবিদ্যমান, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য, ছোট-বড়, অণু-পরমাণু সবকিছুতেই পরিব্যাপ্ত এবং তার শক্তি-সামর্থ্যও সবকিছুতেই পরিবেষ্টিত। [দেখুন, আশ-শির্ক ফিল কাদীম ওয়াল হাদীস; ৪৫৮-৪৯০ ও ৮৮৭-৯৮৯] যে ব্যক্তি এ আল্লাহর জ্ঞান ও শক্তি এ দুটি গুণের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে এবং চিন্তায় উপস্থিত রাখে, তার পক্ষে গোনাহ ও অপরাধ করা কিছুতেই সম্ভবপর নয়। বলাবাহুল্য, কথায় কাজে, উঠায়বসায় এমনকি প্রতি পদক্ষেপে যদি কারো চিন্তায় এ কথা উপস্থিত থাকে যে, একজন সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান তাকে দেখছেন এবং তার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ও মনের ইচ্ছাকল্পনা পর্যন্ত জানেন তবে এ উপস্থিতি কখনো তাকে সর্ব শক্তিমানের অবাধ্যতার দিকে পা বাড়াতে দিবে না।
مفاتح শব্দটি বহুবচন। এর একবচনে مفتاح ও مفتح উভয়টিই হতে পারে। مفتح এর অর্থ ভাণ্ডার এবং مفتاح এর অর্থ চাবি- আয়াতে উভয় অর্থ হওয়ারই অবকাশ আছে। তাই কোন কোন তাফসীরবিদ ও অনুবাদক مفاتح এর অনুবাদ করেছেন ভাণ্ডার, আবার কেউ কেউ অনুবাদ করেছেন চাবি। উভয় অনুবাদের সারকথা এক। কেননা, ‘চাবির মালিক’ বলেও ‘ভাণ্ডারের মালিক’ বোঝানো যায়। [ফাতহুল কাদীর]
কুরআনের পরিভাষায় গায়েবের জ্ঞান ও অসীম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার। উদাহারণতঃ কে কখন কোথায় জন্মগ্রহণ করবে, কি কি কাজ করবে, কতটুকু বয়স পাবে, কতবার শ্বাস গ্রহণ করবে, কতবার পা ফেলবে, কোথায় মৃত্যুবরণ করবে, কোথায় সমাধিস্থ হবে এবং কে কতটুকু রিযক পাবে, কখন পাবে, বৃষ্টি কখন, কোথায়, কি পরিমাণ হবে, অনুরূপভাবে স্ত্রী লোকের গর্ভাশয়ে যে ভ্রূণ অস্তিত্ব লাভ করেছে, কিন্তু কারো জানা নেই যে, পুত্র না কন্যা, সুশ্রী না কুশ্রী, সৎস্বভাব না বদম্বভাব ইত্যাদি বিষয়সমূহ যা সৃষ্ট জীবের জ্ঞান ও দৃষ্টি সীমা থেকে উহ্য রয়েছে। সুতরাং (وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ) এর অর্থ এই দাঁড়ালো যে, গায়েবী বিষয়ের ভাণ্ডার আল্লাহরই কাছে রয়েছে। কাছে থাকার অর্থ করায়ত্ত ও মালিকানায় থাকা। উদ্দেশ্য এই যে, গায়েবী বিষয়ের ভাণ্ডারসমূহের জ্ঞান তার করায়ত্ত এবং সেগুলোকে অস্তিত্ব দান করা অর্থাৎ কখন কতটুকু অস্তিত্ব লাভ করবে- তাও তার সামর্থ্যের অন্তর্গত। কুরআনুল কারীমের অন্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ “প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার আমার কাছেই রয়েছে। কিন্তু আমি প্রত্যেক বস্তু একটি বিশেষ পরিমাণে নাযিল করি।” [সূরা আল-হিজর: ২১]
كِتَابٌ مُبِيْنٌ (সুস্পষ্ট কিতাব) বলতে ‘লাওহে মাহফূয’ বুঝানো হয়েছে। এই আয়াত থেকেও প্রতীয়মান হয় যে, ‘আলেমুল গায়ব’ (অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞাতা) কেবল মহান আল্লাহর সত্তা। গায়েবের সমস্ত ভান্ডার তাঁরই কাছে। তাই কাফের, মুশরিক এবং বিরোধিতাকারীদেরকে কখন আযাব দেওয়া হবে – এর জ্ঞানও কেবল তাঁরই আছে এবং তিনি তাঁর হিকমতের দাবী অনুযায়ী এর ফায়সালা করেন।
হাদীসেও এসেছে যে, গায়বের চাবি হল পাঁচটি। কিয়ামত কখন ঘটবে, বৃষ্টি কোথায় কখন হবে, মায়ের গর্ভাশয়ে কি বাচ্চা আছে, কাল কি ঘটবে এবং মৃত্যু কখন আসবে? এই পাঁচটি বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নেই। (বুখারীঃ তাফসীর সূরা আনআম)
আলে ইমরান ১৭৯—
তোমরা বর্তমানে যে অবস্থায় আছো আল্লাহ মুমিনদের কখনো সেই অবস্থায় থাকতে দেবেন না৷ পাক –পবিত্র লোকেদেরকে তিনি নাপাক ও অপবিত্র লোকদের থেকে আলাদা করেই ছাড়বেন৷ কিন্তু তোমাদেরকে গায়েবের খবর জানিয়ে দেয়া আল্লাহর রীতি নয়৷ গায়েবের খবর জানাবার জন্য তিনি নিজের রসূলদের মধ্য থেকে যাকে চান বাছাই করে নেন৷ কাজেই ( গায়েবের ব্যাপারে) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান রাখো ৷ যদি তোমরা ঈমান ও আল্লাহকে ভয় করার নীতি অবলম্বন করো তাহলে বিরাট প্রতিদান পাবে৷
قُلۡ لَّا یَعۡلَمُ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ الۡغَیۡبَ اِلَّا اللّٰهُ ؕ وَ مَا یَشۡعُرُوۡنَ اَیَّانَ یُبۡعَثُوۡنَ
৬৫. বলুন, আল্লাহ ব্যতীত আসমান ও যমীনে কেউই গায়েব জানে না এবং তারা উপলব্ধিও করেনা কখন উত্থিত হবে। সূরা নমলঃ৬৫
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি দাবী করে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগামী কাল কি হবে তা জানেন, সে আল্লাহর প্রতি মহা মিথ্যা আরোপ করে। কারণ আল্লাহ তো বলেন, হে নবী! আপনি বলে দিন আল্লাহ ছাড়া আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীদের মধ্যে আর কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না।” [বুখারীঃ ৩০৬২, মুসলিমঃ ২৮৭, মুসনাদে আহমাদঃ ৬/৪৯]
৬:৬০ وَ هُوَ الَّذِیۡ یَتَوَفّٰىکُمۡ بِالَّیۡلِ وَ یَعۡلَمُ مَا جَرَحۡتُمۡ بِالنَّهَارِ ثُمَّ یَبۡعَثُکُمۡ فِیۡهِ لِیُقۡضٰۤی اَجَلٌ مُّسَمًّی ۚ ثُمَّ اِلَیۡهِ مَرۡجِعُکُمۡ ثُمَّ یُنَبِّئُکُمۡ بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ
৬০. তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিনে তোমরা যা কামাই কর তা তিনি জানেন। তারপর দিনে তোমাদেরকে তিনি আবার জীবিত করেন, যাতে নির্ধারিত সময় পূর্ণ করা হয়। তারপর তার দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তারপর তোমরা যা করতে সে সম্বন্ধে তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন।
এখানে সুষুপ্তি বা সুনিদ্রাকে মৃত্যু বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই জন্যই এ (ঘুম)-কে ছোট মৃত্যু এবং প্রকৃত মরণকে বড় মৃত্যু বলা হয়। ( মৃত্যুর আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুনঃ আল-ইমরানের ৫৫নং আয়াতের টীকা।)
দিনে আত্মাকে ফিরিয়ে দিয়ে জীবিত করে। রাত ও দিনের এবং ছোট মৃত্যুর কবল থেকে পুনরায় জেগে ওঠার এই ধারাবাহিকতা মানুষের বড় মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। পুনরায় কিয়ামতের দিন জীবিত হয়ে সকলকে আল্লাহর কাছেই উপস্থিত হতে হবে।
مُتَوَفِّيكَ শব্দের ধাতু توفى এবং মূলধাতু وفى অভিধানে এর অর্থ পুরোপুরি লওয়া আরবী ভাষার সব অভিধান গ্রন্থেই এ অর্থ রয়েছে। মৃত্যুর সময় মানুষ নির্ধারিত আয়ুপূর্ণ করে ফেলে এবং আল্লাহ প্রদত্ত আত্মা পুরোপুরি নিয়ে নেয়া হয়। এ কারণে শব্দটি মৃত্যু অর্থেও ব্যবহৃত হয়। মানুষের দৈনন্দিন নিদ্রা মৃত্যুর একটি হাল্কা নমুনা। কুরআনে এ অর্থেও توفى শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে- (اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنْفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا) অর্থাৎ “আল্লাহ মৃত্যুর সময় প্রাণ নিয়ে নেন। আর যাদের মৃত্যু আসে না, তাদের প্রাণও নিদ্রার সময় নিয়ে নেন।” [সূরা আয-যুমারঃ ৪২]
আয়াতে প্রাণীর দু’টি মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। একটি নিদ্রাকালীন মৃত্যু। অন্যটি মৃত্যুকালীন মৃত্যু। নিদ্রায় তার দেহে অনুভূতি থাকে। কিন্তু মৃত্যুতে সেটা থাকেনা। উভয় অবস্থায় তার প্রাণ আল্লাহর কাছে চলে যায়। অতঃপর তিনি যাকে চান তার দেহে রূহ ফিরিয়ে দেন, যাকে চান সেটা রেখে দেন। যা ক্বিয়ামতের আগ পর্যন্ত তার দেহে ফেরৎ দেওয়া হয় না।
কুরআনে ও হাদীছে উভয় অবস্থাকে ‘মউত’ বলা হয়েছে। সেজন্য ঘুমাতে যাবার সময় দো’আ পড়তে হয়, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে মরি ও বাঁচি’ (বুখারী হা/৬৩২৪; মিশকাত হা/২৩৮২)। ঘুম থেকে ওঠার সময় বলতে হয়, ‘সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে মৃত্যু দানের পর জীবিত করলেন এবং ক্বিয়ামতের দিন তাঁর দিকেই হবে আমাদের পুনরুত্থান’ (বুখারী হা/৬৩২৪; মিশকাত হা/২৩৮২)।
অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ বিছানায় যাবে, তখন… সে যেন ডানকাতে শুয়ে বলে, হে আমার প্রতিপালক! তোমার নামে আমি বিছানায় দেহ রাখছি ও তোমার নামেই সেটা আমি উঠাবো। যদি তুমি আমার আত্মাকে আটকে রাখ, তাহ’লে তুমি তাকে অনুগ্রহ কর (অন্য বর্ণনায় এসেছে ‘তুমি তাকে ক্ষমা কর’)। আর যদি ছেড়ে দাও, তাহ’লে তুমি তাকে (গুনাহ থেকে) হেফাযত কর। যেভাবে তুমি তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের হেফাযত করে থাক’ (বুখারী হা/৬৩২০, ৭৩৯৩; মুসলিম হা/২৭১৪; মিশকাত হা/২৩৮৪)।
একটিমাত্র নির্ঘুম রাতই একাগ্রতা ও মনোযোগের ক্ষেত্রে বিশাল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। মস্তিষ্কের যে অংশ আমাদের ভাষা, স্মৃতি, পরিকল্পনা, সময় জ্ঞান ইত্যাদি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে তা দীর্ঘদিনের পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পর্যাপ্ত ঘুম-বঞ্চিত মানুষের পক্ষে সর্বাবস্থায় যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে। মানুষের আবেগিয় এবং শারীরিক সুস্থতাও ঘুমের অভাবে বিপর্যস্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে ক্ষুধা এবং ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন রাসায়নিক পদার্থ এবং হরমোনসমূহ ঘুমের সময় দেহ থেকে নিঃসৃত হয়। ফলে স্থূলতার ঝুঁকি বৃদ্ধির পেছনেও কম ঘুমের বিষয়টি জড়িত।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, ‘তিনি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত মানুষকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন সেই মেয়াদকাল এসে যায়, তখন তারা তা মুহূর্তকাল দেরী বা এগিয়ে আসতে পারে না (নাহল ১৬/৬১)।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وما كان لنفس ان تموت الا باذن الله كتابا موجلا তরজমা : আল্লাহর হুকুম ব্যতীত কারো মৃত্যু হতে পারে না। কেননা, তা সুনির্ধারিত।-সূরা আলইমরান : ১৪৫
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, لو يواخذ الله الناس بظلمهم ما ترك عليها من دابة ولكن يوخرهم الى اجل مسمى فاذا جاء اجلهم لا يستأخرون ساعة ولا يستقدمون
তরজমা : আর যদি আল্লাহ মানুষকে তাদের জুলুমের কারণে শাস্তি দিতেন তবে ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী কোনো প্রাণীকেই রেহাই দিতেন না, কিন’ তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের নির্ধারিত সময় উপস্থিত হয় তখন তারা মুহূর্তকাল বিলম্ব অথবা ত্বরা করতে পারে না।-সূরা নাহল : ৬১
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, قل فادرؤا عن انفسكم الموت ان كنتم صدقين তরজমা : আপনি বলে দিন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে নিজেদেরকে মৃত্যু থেকে রক্ষা কর।-সূরা আল ইমরান : ১৬৮
সংগ্রহে-
তাফসিরে যাকারিয়া,তাফহিমুল কুর’আন,আহসানুল বায়ান