দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
সূরা মাউন-
( ১০৭ নং সূরা, আয়াতঃ৭টি)
এই সূরাকে সূরা দ্বীন, সূরা আরাআইতা ও সূরা এতীমও বলা হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর)
وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ শেষ আয়াতে মাউন শব্দকে নাম হিসেবে নেয়া হয়েছে।
কোথায় অবতীর্ণঃ
ইবরেন মারদুইয়া ইবনে আব্বাস (রা), ইবনে যুবাইরের (রা) ও আতা ও জাবের উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে তাঁরা এ সূরাকে মক্কী হিসেবে গণ্য করেছেন।
কিন্তু আবু হাইয়ান বাহরুল মুহীত গ্রন্থে ইবনে আব্বাস , কাতাদাহ ও যাহহাকের এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে , এটি মাদানী সূরা । যে বিষয়কে সামনে রেখে মাদানী বলা হচ্ছে–
এ সূরায় এমন সব নামাযীদেরকে ধ্বংসের বার্তা শুনানো হয়েছে যারা নিজেদের নামাযে গাফলতি করে এবং লোক দেখানো নামায পড়ে। এ ধরনের মুনাফিক মাদীনায় পাওয়া যেতো। কারণ ইসলাম ও ইসলামের অনুসারীরা সেখানে এমন পর্যায়ের শক্তি অর্জন করেছিল যার ফলে বহু লোককে পরিস্থিতির তাগিদে ঈমান আনতে হয়েছিল এবং তাদের বাধ্য হয়ে মসজিদে আসতে হতো। তারা নামাযের জামায়াতে শরীক হতো এবং লোক দেখানো নামায পড়তো । এভাবে তারা মুসলমাদের মধ্যে গণ্য হতে চাইতো ।
বিপরীতপক্ষে মক্কায় লোক দেখাবার জন্য নামায পড়ার মতো কোন পরিবেশই ছিল না। সেখানে তো ঈমানদারদের জন্য জামায়াতের সাথে নামায পড়ার ব্যবস্থা করা দূরূহ ছিল। গোপনে লুকিয়ে লুকিয়ে নামায পড়তে হতো। কেউ প্রকাশ্যে নামায পড়লে ভয়ানক সাহসিকাতর পরিচয় দিতো । তার প্রাণনাশের সম্ভবনা থাকতো। সেখানে যে ধরনের মুনাফিক পাওয়া যেতে তারা লোক দেখানো ঈমান আনা বা লোক দেখানো নামায পড়ার দলভুক্ত ছিল না। বরং তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্য নবী হবার ব্যাপারটি জেনে নিয়েছিল এবং মেনে নিয়েছিল। কিন্তু তাদের কেউ কেউ নিজের শাসন ক্ষমতা , প্রভাব প্রতিপত্তি ও নেতৃত্ব বহাল রাখার জন্য ইসলাম গ্রহণ করতে পিছপাও হচিছল। আবার কেউ কেউ নিজেদের চোখের সামনে মুসলমানদেরকে যেসব বিপদ – মুসিবতের মধ্যে ঘেরাও দেখছিল ইসলাম গ্রহণ করে নিজেরাও তার মধ্যে ঘেরাও হবার বিপদ কিনে নিতে প্রস্তুত ছিল না।
বিষয় বস্তুঃ
আখেরাতের প্রতি ঈমান না আনলে মানুষের মধ্যে কোন ধরনের নৈতিকতা জন্ম নেয় তা বর্ণনা করাই এর মূল বিষয়বস্তু।
২ ও ৩ আয়াতে এমনসব কাফেরদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যারা প্রকাশ্যে আখেরাতকে মিথ্যা বলে।
আর শেষ চার আয়াতে যেসব মুনাফিক আপাতদৃষ্টিতে মুসলমান মনে হয় কিন্তু যাদের মনে আখেরাত এবং তার শাস্তি ও পুরস্কার ও পাপ পূন্যের কোন ধারণা নেই , তাদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে।
আখেরাত বিশ্বাস ছাড়া মানুষের মধ্যে একটি মজবুত শক্তিশালী ও পবিত্র – পরিচ্ছন্ন চরিত্র গড়ে তোলা কোন ক্রমেই সম্ভবপর নয় , এ সত্যটি মানুষের হৃদয়পটে অংকিত করে দেয়াই হচ্ছে সামগ্রিকভাবে উভয় ধরনের দলের কার্যধারা বর্ণনা করার মূল উদ্দেশ্য।
১০৭:১ اَرَءَیۡتَ الَّذِیۡ یُکَذِّبُ بِالدِّیۡنِ
আপনি কি দেখেছেন তাকে, যে দ্বীনকে অস্বীকার করে?
أرَأيتَ শব্দ দ্বারা নবী (সাঃ)-কে সম্বোধন করা হয়েছে। আর এতে প্রশ্নসূচক বাক্য দ্বারা বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। ‘তুমি কি দেখেছ’ অর্থাৎ, ‘তুমি কি চিনেছ তাকে—।’ আর الدِّين থেকে উদ্দেশ্য আখেরাতে হিসাব ও প্রতিদান। এ আয়াতে “আদ-দীন” শব্দটির অর্থ আখেরাতে কর্মফল দান এবং বিচার। অধিকাংশ মুফাসসিররা এমতটিই গ্রহণ করেছেন। [ইবন কাসীর, কুরতুবী, মুয়াস্সার]
আসল বাক্য হল যে, ‘তুমি কি চিনেছ তাকে, যে (পরকালের) কর্মফলকে মিথ্যা মনে করে? তার এ মনে করা ঠিক অথবা ভুল?’
সাধারণত প্রত্যেক জ্ঞান – বুদ্ধি ও বিচার – বিবেচনা সম্পন্ন লোকদেরকেই এ সম্বোধন করা হয়ে থাকে৷ আর দেখা মানে চোখ দিয়ে দেখাও হয়৷ কারণ সামনের দিকে লোকদের যে অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে তা প্রত্যেক প্রত্যক্ষকারী স্বচক্ষে দেখে নিতে পারে৷ আবার এর মানে জানা , বুঝা ও চিন্তা ভাবনা করাও হতে পারে৷ যেমন আমরা বলি , ” আচ্ছা , ব্যাপারটা আমাকে দেখতে হবে৷ ” অর্থাৎ আমাকে জানতে হবে৷ অথবা আমরা বলি , ” এ দিকটাও তো একবার দেখো ৷” এর অর্থ হয় , ” এ দিকটা সম্পর্কে একটু চিন্তা করো ৷ ” কাজেই ” আরাআইতা ” শব্দটিকে দ্বিতীয় অর্থে ব্যবহার করলে আয়াতের অর্থ হবে , ” তুমি কি জানো সে কেমন লোক যে শাস্তি ও পুরস্কারকে মিথ্যা বলে ? ” অথবা ” তুমি কি ভেবে দেখেছো সেই ব্যক্তির অবস্থা যে কর্মফলকে মিথ্যা বলে ?
আসলে পৃথিবীতে মানুষের পদযাত্রা বিভিন্নমুখী হলেও মূলত বিশ্বাসের দুটি অবস্থার উপর নির্ভর করেই এই পদযাত্রা হয়ে থাকে, আর তা হলো
১।আখেরাতে বিশ্বাসী ও
২।আখেরাতে অবিশ্বাসী
আখেরাতে যারা বিশ্বাসী তাদের অবস্থা হলো-
একঃ দুনিয়ার প্রতিটি জিনিসের যেমন পৃথক পৃথক একটি আয়ুষ্কাল রয়েছে, যা উর্ত্তীর্ণ হবার পর তার মধ্যে স্বভাবতই বিপর্যয় ও বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়, তেমনি এ বিশ্বজগতেরও একটি নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল রয়েছে, যা উর্ত্তীর্ণ হবার পর এ গোটা বিশ্বকারখানাই চুরমার হয়ে যাবে এবং অন্য এক জগত এর স্থলাভিষিক্ত হবে, যার প্রাকৃতিক বিধান এর প্রাকৃতিক বিধান থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন হবে।
দুইঃ এ বিশ্বজগত চুর্ণবিচূর্ণ হবার পর আল্লাহ্ তায়ালা একটি বিচারালয় প্রতিষ্ঠা করবেন, সেখানে প্রত্যেক জিনিসেরই হিসেব গ্রহন করা হবে। মানুষ সেদিন এক নতুন দৈহিক জীবন লাভ করবে। সে আপন রবের সামনে হাযির
হবে। তার পূর্বেকার জীবনে কৃত সমস্ত ক্রিয়াকর্ম সঠিকভাবেই যাচাই ও ওজন করা হবে। সত্য ও ইনসাফের সাথে তার মামলার বিচার করা হবে। সে ভালো কাজের জন্যে পুরষ্কার এবং মন্দ কাজের জন্যে শাস্তিলাভ করবে।
তিনঃ মানুষের পার্থিব জীবন মূলত তার পারলৌকিক জীবনের ভুমিকা মাত্র। এ জীবন ক্ষনস্থাহী, সে জীবন চিরস্থাহী। এটি অসম্পুর্ন আর সেটি পূর্ণাঙ্গ। এ ক্ষনস্থায়ী জীবনে সমস্থ কাজের পুরোপুরি ফল প্রকাশিত হয়না। প্রতিটি অঙ্কুরই তার স্বাভাবিক বিকাশের সাথে এ অসম্পূর্ণ দুনিয়ায় ফলদান করতে পারেনা। এ অসম্পুর্ণতা সেই দ্বিতীয় জীবনে পূর্ণতা লাভ করবে। পরস্তু যা কিছু এখানে নিস্ফল ও অনর্থক রয়ে গেছে, তার প্রকৃত ফলাফল ও সার্থকতা সেখানে আত্নপ্রকাশ করবে। সুতরাং এ দুনিয়ার জীবনে আপন ক্রিয়াকর্মের যেসব অসম্পূর্ণ এবং কখনো কখনো প্রতারণাপুর্ণ ফলাফল প্রকাশিত হয়, মানুষের কেবল সে সবের প্রতিই লক্ষ্য রাখা উচিত নয়। বরং ফলাফলের এ পরিপুর্ণ ধারার প্রতি লক্ষ রেখেই তার ক্রিয়াকর্মের মূল্যমান নির্ধারণ করা উচিত।
মানুষের দৃষ্টিতে কোন নৈতিক কাজের কোন নির্দিষ্ট নৈতিক মূল্যবান থাকতে না। বরং এ দুনিয়ায় প্রকাশিত ভালো-মন্দ ফলাফলের ওপরই এর প্রতিটি কাজের ভালো-মন্দ নির্ভরশীল হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যাক্তি পরকালের প্রতি বিশ্বাসী, সে কোন নৈতিক কাজের এ দুনিয়ায় প্রকাশিত ফালফালের প্রতিই শুধু দৃষ্টিপাত করবে না, বরং এর পরবর্তী জীবনে প্রকাশিতব্য ফলাফলের প্রতিও সে লক্ষ্য রাখবে এবং সেই ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতেই সে কাজের উপকারিতা বা অপকারিতা নির্ণয় করবে। সে যেমন বিষের ধ্বংসকারিতা ও আগুনের দাহিকা শক্তিকে বিশ্বাস করবে। তেমনি বিশ্বাস ভঙ্গ ও মিথ্যাচারের ধ্বংসকারিতা ও দাহিকা শক্তিতেও বিশ্বাসী হবে। সে যেমন বিষের ধ্বংসকারিতা ও আগুনের দাহিকা শক্তিকে বিশ্বাস করবে। তেমনি বিশ্বাস ভঙ্গ ও মিথ্যাচারের ধ্বংসকারিতা ও দাহিকা শক্তিতেও বিশ্বাসী হবে। সে যেমন খাদ্য ও পানীয়কে উপকারী মনে করবে, তেমনি ন্যায়প্রায়নতা, বিশ্বস্ততা ও পবিত্রতাকেও উপকারী জ্ঞান করবে। সে তার প্রতিটি কাজের একটি সুনির্দিষ্ট ও সুনিশ্চিত ফলাফলে সে ফালাফল এ জীবনে আদৌ প্রকাশিত না হতে পারে কিংবা বিপরীত রুপেও প্রকাশ পেতে পারে-বিশ্বাসী হবে। তার কাছে নৈতিক ক্রিয়াকর্মের নির্ধারিত নৈতিক মূল্যমান থাকবে এবং পার্থিব উপকার বা অপকারের ফলে সে মূল্যমানে এতটুকু পরিবর্তন সূচিত হবে না। তার নৈতিক ব্যবস্থায় সততা, ন্যায়পরায়নতা, ওয়াদা পালন অবশ্যই পুণ্য ও সুকৃতিরূপে তার ফলে এ দুনিয়ায় শুধু অপকারই হতে পারে কিংবা আদৌ উপকার না হতে পারে-গণ্য হবে। পক্ষান্তরে মিথ্যাচার, যুলুম-পিরন, ওয়াদা ভঙ্গ অবশ্যই পাপ ও দুষ্কৃতি রূপে-তার ফলে দুনিয়ায় শুধু উপকারই হতে পারে এবং একবিন্দুও অপকার না হতে পারে-স্বীকৃত হবে।
কাজেই পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে উদাসীন হওয়া কিংবা তার প্রতি অবিশ্বাস করার অর্থ কেবল এটুকু নয় যে, মানুষ একটি অতি প্রাকৃতিক মতবাদের প্রতি উদাসীন রয়েছে কিংবা তার প্রতি সে অস্বীকৃতি জানিয়ে দিয়েছে। বরং তার অর্থ এই যে, মানুষ তার দায়িত্বশীল ও জিম্মাদারসুলভ মর্যাদা সম্পর্কেই উদাসীন হয়ে পড়েছে। নিজেকে সে স্বাধীন, স্বেচ্ছাচারী ও দায়িত্বহীন প্রানী মনে করে নিয়েছে। দুনিয়ার বাহ্যিক জীবন এবং তার অসম্পূর্ণ, বরং কখনো প্রতারনাদায়ক ফলাফল দেখে সে সন্তুষ্ট হয়ে গেছে। জীবনের চুরান্ত লাভ-লোকসানের প্রতি উদাসীন হয়ে প্রাথমিক, সাময়িক ও অনির্ভরযোগ্য লাভ-ক্ষতির ওপর সে ভরসা করে বসেছে। এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে সে নিজের ক্রিয়াকর্মের জন্যে সম্পূর্ণ পরিবর্তনশীল ও প্রতারনাদায়ক নৈতিক মূল্যমান নির্ধারণ করে নিয়েছে। সে এক নির্ভুল, সুদৃঢ় ও নৈতিক বিধান থেকে বঞ্চিত হয়ে গেছে, যা শুদু দায়িত্বানুভুতি ও চূড়ান্ত ফলাফলের প্রতি অবিচল দৃষ্টি ও নির্দিষ্ট নৈতিক মূল্যমানের দ্বারাই অর্জিত হতে পারে। এভাবে সে দুনিয়ার অসম্পূর্ণ ও অপূর্ণাঙ্গ বাহ্যদৃশ্য দ্বারা প্রতারিত হয়ে নিজের গোটা জীবন এমন এক দুর্বল ও ভ্রান্ত নৈতিক বিধানের অধীন যাপন করেছে, যেখানে প্রকৃত ক্ষতি লাভে পরিণত হয়েছে, আর প্রকৃত ক্ষতি লাভে পরিণত হয়েছে, আর প্রকৃত লাভ-ক্ষতি আখ্যা পেয়েছে। সেখানে প্রকৃত সুন্দর অসুন্দর হয়ে গেছে আর প্রকৃত অসুন্দর সুন্দর আখ্যা পেয়েছে অনুরূপভাবে যথার্থ পাপ পুণ্য হয়ে গেছে আর যথার্থ পুণ্য পাপে পরিণত হয়েছে।
বস্তুত পরকালের প্রতি ঈমান না আনার এ ফলাফলগুলোই কুরআন মজীদ অত্যন্ত বিস্তৃতরূপে বর্ণনা করেছে। এ ব্যাপারে কুরআনী আয়াত পর্যালোচনা করলেই দেখা যাবে যে, পরকাল না মানার ফলে মানুষের নৈতিক ও কর্মজীবনে যেসব বিকৃতির উদ্ভব হয়, তা এক করে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
আমরা কি তোমাদের বলবো যে, আমলের দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোক কারা? এ হচ্ছে তারা, জাদের চেষ্টা-সাধনা দুনিয়ার জীবনে ভ্রষ্টপথে চালিত হয়েছে; কিন্তু তারা মনে করছিলো যে, তারা খুব ভালো কাজ করছে। এসব লোকেরাই আপন প্রভুর নিদর্শনদি এবং তার সাক্ষাতকারকে অস্বীকার করেছে। এ জন্যেই তাদের আমল পণ্ড হয়ে গেছে।” –( সূরা আল কাহাফঃ ১০৪-১০৫ )
“যারা দুনিয়ার বুকে না-হকভাবে অহংকার করে, আমি তাদেকে আপন নিদর্শন থেকে বিমুখ করে দেবো। তার কোন নিদর্শন দেখতে পলেও তার প্রতি ঈমান আনবে না, কখনো সরল পথ দেখতে পেলেও টা অবলম্বন করবে না, অবশ্য ভ্রান্ত পথ দেখতে পেলে সেদিকে ধাবিত হবে। এর কারণ এই যে, তারা আমার নিদর্শনাদিকে অবিশ্বাস করেছে এবং সেগুলোর প্রতি উদাসীন হয়ে আছে। যারা আমার নিদর্শন এবং পরকালের সাক্ষাতকারকে অবিশ্বাস করবে, তাদের সমস্ত ক্রিয়াকাণ্ড নিষ্ফল হয়ে যাবে। তারা যেমন আমল করেছে, তেমনি প্রতিফলই কি পাবেনা?” –( সূরা আল আরাফঃ ১৪৬-১৪৭ )
“সেসব অসদাচারী লোকদের জন্যে ধ্বংস অবধারিত, যারা অন্যদের কাছে থেকে নেয়ার সময় তো পুরোপুরি মেপে নেয়, কিন্তু অনদেরকে মেপে দেয়ার সময় কম দিয়ে থাকে। তারা কি মনে রাখে না যে, তারা এক বিরাট দিনে পুনরুত্থিত হবে?” –( সূরা আল মুতাফাফিফিনঃ ১-৫ )
“কখনো নয়, তোমরা তো শীঘ্র পাওয়ার যোগ্য ফলাফলকেই পসন্দ করো আর পরকালের ফালাফলকে বর্জন করো।”-( সূরা কিয়ামাহঃ ২০-২১ )
“তোমরা কি মনে করে নিয়েছে যে, আমরা তোমাদের নিরর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে না?” –( সুরা-মু’মিনুন-১১৫ )
এবার আসি এই সূরাতে মহান আল্লাহ আখেরাতে অবিশ্বাসীদের চরিত্রের কোন দিক তুলে ধরেছেন তা জানতে-
১০৭:২ فَذٰلِکَ الَّذِیۡ یَدُعُّ الۡیَتِیۡمَ
সে তো সে-ই, যে ইয়াতীমকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়।
এখানে يَدُعُّ বলা হয়েছে। এর অর্থ, রূঢ়ভাবে তাড়ানো, কঠোরভাবে দূর করে দেয়া। এতিমদের প্রতি অসদাচরণ করা, তাদের প্রতি দয়া না করে কঠোরভাবে ধিক্কার ও যুলুম করা, তাদেরকে খাদ্য দান না করা এবং তাদের হক আদায় না করাই এখানে উদ্দেশ্য। [মুয়াস্সার, ইবন কাসীর, তাবারী] জাহিলিয়াতের যুগে এতিম ও নারীদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হত। আর বলা হত, যারা তীর-বর্শা নিক্ষেপ করে এবং তরবারী দিয়ে যুদ্ধ করে তারাই শুধু সম্পত্তি পাবে। কিন্তু পরবর্তীতে ইসলাম এ ধরনের প্রথা বাতিল করে দিয়েছে। [কুরতুবী]
এই আয়াতের কয়েকটি অর্থ হয়৷
এক , সে এতিমের হক মেরে খায় এবং তার বাপের পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে বেদখল করে তাকে সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়৷
দুই , এতিম যদি তার কাছে সাহায্য চাইতে আসে তাহলে দয়া করার পরিবর্তে সে তাকে ধিক্কার দেয়৷ তারপরও যদি সে নিজের অসহায় ও কষ্টকর অবস্থার জন্য অনুগ্রহ লাভের আশায় দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় ৷
তিন , সে এতিমের ওপর জুলুম করে৷ যেমন তার ঘরেই যদি তার কোন আত্মীয় কথায় গালমন্দ ও লাথি ঝাঁটা খাওয়া ছাড়া তার ভাগ্যে আর কিছুই জোটে না৷
তাছাড়া এ বাক্যের মধ্যে এ অর্থও নিহিত রয়েছে যে, সেই ব্যক্তি মাঝে মাঝে কখনো কখনো এ ধরনের জুলুম করে না বরং এটা তার অভ্যাস ও চিরাচরিত রীতি সে যে এটা একটা খারাপ কাজ করছে , এ অনুভূতিও তার থাকে না৷ বরং বড়ই নিশ্চিন্তে সে এ নীতি অবলম্বন করে যেতে থাকে৷ সে মনে করে , এতিম একটা অক্ষম ও অসহায় জীব৷ কাজেই তার হক মেরে নিলে , তার ওপর জুলুম – নির্যাতন চালালে অথবা সে সাহায্য চাইতে এলে তাকে ধাক্কা মেরে বের করে দিলে কোন ক্ষতি নেই৷
কাজী আবুল হাসান আল মাওয়ারদী তাঁর ” আলামূন নুবুওয়াহ ” কিতাবে একটি অদ্ভুত ঘটনা বর্ণনা করেছেন ৷ ঘটনাটি হচ্ছে : আবু জেহেল ছিল একটি এতিম ছেলের অভিভাবক৷ ছেলেটি একদিন তার কাছে এলো ৷ তার গায়ে একটুকরা কাপড়ও ছিল না৷ সে কাকুতি মিনতি করে তার বাপের পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তাকে কিছু দিতে বললো৷ কিন্তু জালেম আবু জেহেল তার কথায় কানই দিল না৷ সে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর শেষে নিরাশ হয়ে ফিরে গেলো ৷ কুরাইশ সরদাররা দুষ্টুমি করে বললো , ” যা মুহাম্মাদের ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) কাছে চলে যা৷ সেখানে গিয়ে তার কাছে নালিশ কর৷ সে আবু জেহেলের কাছে সুপারিশ করে তোর সম্পদ তোকে দেবার ব্যব্স্থা করবে ৷ ” ছেলেটি জানতো না আবু জেহেলের সাথে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কি সম্পর্ক এবং এ শয়তানরা তাকে কেন এ পরামর্শ দিচ্ছে৷ সে সোজা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছে গেলো এবং নিজের অবস্থা তাঁর কাছে বর্ণনা করলো৷ তার ঘটনা শুনে নবী ( সা) তখনই দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাকে সংগে নিয়ে নিজের নিকৃষ্টতম শত্রু আবু জেহেলের কাছে চলে গেলেন৷ তাঁকে দেখে আবু জেহেল তাঁকে অভ্যর্থনা জানালো৷ তারপর যখন তিনি বললেন , এ ছেলেটির হক একে ফিরিয়ে দাও তখন সে সংগে সংগেই তাঁর কথা মেনে নিল এবং তার ধন – সম্পদ এনে তার সামনে রেখে দিল ৷ ঘটনার পরিণতি কি হয় এবং পানি কোন দিকে গড়ায় তা দেখার জন্য কুরাইশ সরদাররা ওঁৎ পেতে বসেছিল৷ তারা আশা করছিল দু’ জনের মধ্যে বেশ একটা মজার কলহ জমে উঠবে৷ কিন্তু এ অবস্থা দেখে তারা অবাক হয়ে গেলো৷ তারা আবু জেহেলের কাছে এসে তাকে ধিক্কার দিতে লাগলো৷ তাকে বলতে লাগলো , তুমিও নিজের ধর্ম ত্যাগ করেছে৷ আবু জেহেল জবাব দিল , আল্লাহর কসম ! আমি নিজের ধর্ম ত্যাগ করিনি৷ কিন্তু আমি অনুভব করলাম , মুহাম্মাদের ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) ডাইনে ও বাঁয়ে এক একটি অস্ত্র রয়েছে৷ আমি তার ইচ্ছার সামান্যতম বিরুদ্ধাচরণ করলে সেগুলো সোজা আমার শরীরের মধ্যে ঢুকে যাবে৷ এ ঘটনাটি থেকে শুধু এতটুকুই জানা যায় না যে ,সে যুগে আরবের সবচেয়ে বেশী উন্নত ও মর্যাদা গোত্রের বড় বড় সরদাররা পর্যন্ত এতিম ও সহায় – সম্বলহীন লোকদের সাথে কেমন ব্যবহার করতো বরং এই সংগে একথাও জানা যায় যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কত উন্নত নৈতিক প্রভাব কতটুকু কার্যকর হয়েছিল৷নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে জবরদস্ত নৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে কুরাইশরা তাঁকে যাদুকর বলতো এ ঘটনাটি তারই মূর্ত প্রকাশ ৷
১০৭:৩ وَ لَا یَحُضُّ عَلٰی طَعَامِ الۡمِسۡکِیۡنِ
আর সে উদ্বুদ্ধ করে না মিসকীনদের খাদ্য দানে।
মিসকিন বলা ঐ সকল অভাবী লোকদেরকে যাদের উপার্জন তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। সব সময় অভাব-অনটনে ডুবে থাকে এবং আর্থিক সঙ্কটে বহু কষ্টে জীবন যাবন করে।
এখানে মিসকীনদের খাদ্য দান শুধু নয় বরং অন্যকেও উৎসাহিত করা যেনো মিসকীনকে খাদ্য দেন করেন। অনেকে আছেন যার হয়তো সামর্থ্য নেই খাওয়াবার কিন্তু সে অন্য যার সামর্থ্য আছে তাকে জানাবে ও কল্যান কাজের ভূমিকা রাখতে আহবান করবে।
হে লোকেরা, তোমরা সালাম সম্প্রসারণ কর, খাদ্য খাওয়াও, রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখ এবং মানুষ যখন (রাতে) ঘুমিয়ে থাকে, তখন তোমরা (তাহাজ্জুদের) নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (তিরমিযী ২৪৮৫, ইবনে মাজাহ ১৩৩৪, ৩২৫১, হাকিম ৪২৮৩, সহীহ তারগীব ৬১০ নং)
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা বেশী বেশী ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান কর, তাহ’লে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।তিরমিযী হা/১৯৮৪;
‘নিশ্চয়ই মুমিনরা আল্লাহর প্রতি তাদের ভালবাসার খাতিরে খাদ্য দান করে ক্ষুধার্ত ইয়াতীম, মিসকীন ও কয়েদীদেরকে। যার কারণে মহান আল্লাহ তাদেরকে ক্বিয়ামতের সেই ভয়াবহ দিনের অনিষ্টতা হ’তে রক্ষা করবেন। শুধু তাই নয় তাদেরকে দান করবেন আনন্দ এবং সজীবতা। তাদের ধৈর্যশীলতার জন্য দিবেন জান্নাতের রেশমী পোশাক। জান্নাতে তারা উচ্চ আসনে হেলান দিয়ে বসবে’ (দাহর ৭৬/৮-২২)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্পষ্টভাবে বলেছেন, ঐ ব্যক্তি অবশ্যই মুমিন নয় যে নিজে পেট ভর্তি করে খায় আর তার গরীব প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে’।মিশকাত হা/৪৯৯১; ছহীহাহ হা/১৪৯
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তার রূযী সংকুচিত করেন, তখন সে বলে যে, আমার প্রভু আমাকে হেয় করেছেন। কখনোই এরূপ নয়। বরং তোমরা ইয়াতীমকে সম্মান কর না। এবং অভাবগ্রস্তকে অন্নদানে পরস্পরকে উৎসাহিত কর না’ (ফজর ৮৯/১৬-১৮)।
ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করে না এমন ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করবে। জাহান্নামের পাহারাদার আযাবের ফেরেশতার কঠিন প্রশ্নের ও সম্মুখীন হবে ঐ ব্যক্তি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে কোন অপরাধে তোমরা সাকারে (জাহান্নাম) এসেছ। জাহান্নামীরা বলবে, আমরা তো মুছল্লী ছিলাম না। আর আমরা ক্ষুধার্তকে খাওয়াতাম না’ (মুদ্দাছছির ৭৪/৪২-৪৪)।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘ঐ ব্যক্তিকে ধর এবং গলায় রশি লাগিয়ে দাও অতঃপর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে, সে তো ঈমান আনেনি মহান আল্লাহর উপরে আর সে অভাবী-ক্ষুধার্তদেরকে খাবার খাওয়ানোর ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহিত করেনি।(হাক্কাহ ৩০-৩৪)।
ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করলে মহান আল্লাহ খুশি হন।
একদা এক ব্যক্তি মহানবী (ছাঃ)-কে এসে বললেন, আমি ক্ষুধায় কাতর হয়ে গেছি। আল্লাহর নবী (ছাঃ) ত্বরিৎ তাঁর এক স্ত্রীর নিকট খবর পাঠালেন। তখন খবর আসল বাড়ীতে পানি ব্যতীত কিছুই নেই। অতঃপর তিনি অন্য স্ত্রীর নিকট খবর পাঠালেন তিনিও জানালেন আল্লাহর কসম বাড়ীতে পানি ব্যতীত কিছুই নেই। এমনকি তিনি সকল স্ত্রীর নিকটেই খবর পাঠালেন এবং সকলে একই কথা বলল। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নবী (ছাঃ) ছাহাবীদের মাঝে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন কে এই রাতে এই ক্ষুধার্তকে মেহমান হিসাবে গ্রহণ করবে? ছাহাবীদের মধ্যে একজন ছাহাবী আবু তালহা আনছারী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি এই ক্ষুধার্তকে মেহমান হিসাবে গ্রহণ করলাম। অতঃপর আবূ তালহা (রাঃ) ক্ষুধার্ত ব্যক্তিটিকে সাথে নিয়ে তার বাড়িতে গেলেন। তার স্ত্রীকে বললেন, তোমার নিকট কোন খাবার আছে কি? রাসূল (ছাঃ)-এর ক্ষুধার্ত মেহমানের আপ্যায়ন কর। তার স্ত্রী বললেন, ঘরে কেবল বাচ্চাদের স্বল্প খাবার আছে। আবূ তালহা (রাঃ) তার স্ত্রীকে বললেন, তাতেই চলবে। তুমি বাচ্চাদেরকে কোন জিনিস দ্বারা ভুলিয়ে তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দিবে আর মেহমান যখন আমাদের ঘরে প্রবেশ করবে তখন তুমি বাতি নিভিয়ে দিবে এবং তাকে বুঝাবে যে আমরাও খাবার খাচ্ছি। অতঃপর তারা পরিকল্পনা মত তাই করলেন এবং দু’জনে উপবাসে রাত কাটিয়ে দিলেন। পরদিন সকাল বেলা আবূ তালহা (রাঃ) যখন নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে গেলেন, তখন নবী করীম (ছাঃ) তাকে কাছে ডেকে বললেন, জিব্রীল (আঃ) এসে আমাকে খবর দিয়েছেন তোমরা কাল রাতে ঐ ক্ষুধার্ত মেহমানের সাথে যে আচরণ করেছ তাতে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা আশ্চর্য হয়েছেন অথবা তিনি হেসেছেন’বুখারী হা/৪৮৮৯; মিশকাত হা/৬২৫২।
মানুষের সেবায় অর্থ-সম্পদ ব্যয় থেকে বিরত থাকার পরিণাম আল্লাহ বর্ণনা করেছে এক সুন্দর উপমার মাধ্যমে। এরশাদ হচ্ছে, আমি তাদেরকে ঐ রকম পরীক্ষায় ফেলেছি যেমন এক বাগানের মালিদেরকে পরীক্ষায় ফেলেছিলাম, যখন তারা কসম করেছিল যে খুব সকালে তারা অবশ্যই ফল পাড়বে। অন্যকিছু হতে পারে বলে তারা ভাবল না। তারা (রাতে) যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন আপনার রবের কাছ থেকে এক বিপদ ঐ বাগানের ওপর এসে পড়ল এবং এর অবস্থা কাটা ফসলের মত হয়ে গেল। খুব সকালে তারা একে অপরকে ডেকে বলল ‘যদি ফল পাড়তে চাও তাহলে সকাল সকাল বাগানে চল।’ তারপর তারা রওয়ানা হল এবং চুপি চুপি একে অপরকে বলতে লাগল ‘আজ বাগানে যেন কোন মিসকিন না আসতে পারে।’ কাকেও কিছু না দেবার ফয়সালা করেই তারা সকাল বেলা সেখানে তাড়াতাড়ি এমনভাবে হাজির হল যেন তারা (ফল পড়ার) ক্ষমতা রাখে। কিন্তু যখন তারা বাগান দেখল তখন বলল, আমরা নিশ্চয়ই রাস্তা ভুলে গেছি, না, আমরা মাহরূম হয়ে গেছি।…’’ (শেষ পর্যন্ত) তারা বলল, আমাদের অবস্থার জন্য আফসোস, নিশ্চয়ই আমরা বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিলাম (সূরা আল কালাম)। এ ঘটনার দিকে খেয়াল করে আমাদের জীবন পরিচালনা করা উচিত যেন পরিণামে আফসোস করতে না হয়।
১০৭:৪ فَوَیۡلٌ لِّلۡمُصَلِّیۡنَ ۙ
কাজেই দুর্ভোগ সে সালাত আদায়কারীদের,
১০৭:৫ الَّذِیۡنَ ہُمۡ عَنۡ صَلَاتِہِمۡ سَاہُوۡنَ
যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন,
১০৭:৬ الَّذِیۡنَ ہُمۡ یُرَآءُوۡنَ
যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে,
১০৭:৭ وَ یَمۡنَعُوۡنَ الۡمَاعُوۡنَ
এবং মাউন প্রদান করতে বিরত থাকে।
এখানে ” ফা ” ব্যবহার করার তাৎপর্য হচ্ছে এই যে , প্রকাশ্যে যারা আখেরাত অস্বীকার করে তাদের অবস্থা তুমি এখনই শুনলে , এখন যারা নামায পড়ে অর্থাৎ মুসলমানদের সাথে শামিল মুনাফিকদের অবস্থাটা একবার দেখো৷ তারা যেহেতু বাহ্যত মুসলামান হওয়া সত্ত্বেও আখেরাতকে মিথ্যা মনে করে , তাই দেখো তারা নিজেদের জন্য কেমন ধ্বংসের সরঞ্জাম তৈরি করছে৷
” মূসাল্লীন ” মানে নামায পাঠকারীগণ৷ কিন্তু যে আলোচনা প্রসংগে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে এবং সামনের দিকে তাদের যে গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর প্রেক্ষিতে এ শব্দটির মানে আসলে নামাযী নয় বরং নামায আদায়কারী দল অর্থাৎ মুসলমানদের দলের অন্তরভুক্ত হওয়া৷
যদি বলা হতো ” ফী সালাতিহিম ” তাহলে এর মানে হতো , নিজের নামাযে ভুলে যায়৷ কিন্তু নামায পড়তে পড়তে ভুলে যাওয়া ইসলামী শরীয়াতে নিফাক তো দূরের কথা গোনাহের পর্যায়েও পড়ে না৷ বরং এটা আদতে কোন দোষ বা পাকড়াও যোগ্য কোন অপরাধও নয়৷নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিজের নামাযের মধ্যে কখনো ভুল হয়েছে৷ তিনি এই ভুল সংশোধনের জন্য পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন৷
এর বিপরীতে এখানে বলা হচ্ছে তারা নিজেদের নামায থেকে গাফেল৷ নামায পড়া ও না পড়া উভয়টিরই তাদের দৃষ্টিতে কোন গুরুত্ব নেই৷ কখনো তারা নামায পড়ে আবার কখনো পড়ে না৷ যখন পড়ে , নামাযের আসল সময় থেকে পিছিয়ে যায় এবং সময় যখন একেবারে শেষ হয়ে আসে তখন উঠে গিয়ে চারটি ঠোকর দিয়ে আসে ৷ অথবা নামাযের জন্য ওঠে ঠিকই কিন্তু একবারে যেন উঠতে মন চায়না এমনভাবে ওঠে এবং নামায পড়ে নেয় কিন্তু মনের দিক থেকে কোন সাড়া পায় না৷ যেন কোন আপদ তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে৷ নামায পড়তে পড়তে কাপড় নিয়ে খেলা করতে থাকে৷ হাই তুলতে থাকে৷ আল্লাহর স্মরণ সামান্যতম তাদের মধ্যে থাকে না৷
সারাটা নামাযের মধ্যে তাদের এ অনুভুতি থাকেনা যে , তারা নামায পড়ছে৷ নামাযের মধ্যে কি পড়ছে তাও তাদের খেয়াল থাকে না , নামায পড়তে থাকে এবং মন অনত্র পড়ে থাকে৷ তাড়াহুড়া করে এমনভাবে নামাযটা পড়ে নেয় যাতে কিয়াম , রুকূ ও সিজদা কোনটাই ঠিক হয় না৷ কেননা কোন প্রকারে নামায পড়ার ভান করে দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করে৷ আবার এমন অনেক লোক আছে , যারা কোন জায়গায় আটকা পড়ে যাবার কারণে বেকায়দায় পড়ে নামাযটা পড়ে নেয় কিন্তু আসলে তাদের জীবনে এ ইবাদাতটার কোন মর্যাদা নেই৷ নামাযের সময় এসে গেলে এটা যে নামাযের সময় এ অনুভুতিই ও তাদের থাকে না৷ মুয়াযযিনের আওয়াজ কানে এলে তিনি কিসের আহবান জানাচ্ছেন , কাকে এবং কেন জানাচ্ছেন একথাটা একবারও তারা চিন্তা করে না৷ এটাই আখেরাতের প্রতি ঈমান না রাখার আলামত৷ কারণ ইসলামের এ তথাকথিত দাবীদাররা নামায পড়লে কোন পুরস্কার পাবে বলে মনে করে না এবং না পড়লে তাদের কপালে শাস্তি ভোগ আছে একথা বিশ্বাস করে না৷ এ কারণে তারা এ কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করে৷ এ জন্য হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) ও হযরত আতা ইবনে দীনার বলেন : আল্লাহর শোকর তিনি ” ফী সালাতিহিম সাহুন ” বলেননি বরং বলেছেন , ” আন সালাতিহিম সাহুন ৷” অর্থাৎ আমরা নামাযে ভুল করি ঠিকই কিন্তু নামায থেকে গাফেল হই না৷ এ জন্য আমরা মুনাফিকদের অন্তরভুক্ত হবো না৷
কুরআন মজীদের অন্যত্র মুনাফিকদের এ অবস্থাটি এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে :
“তারা যখনই নামাযে আসে অবসাদগ্রস্তের মতো আসে এবং যখনই ( আল্লাহর পথে) খরচ করে অনিচ্ছাকৃতভাবে করে৷” ( তাওবা ৫৪ )
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
” এটা মুনাফিকের নামায , এটা মুনাফিকের নামায , এটা মুনাফিকের নামায৷ সে আসরের সময় বসে সূর্য দেখতে থাকে ৷ এমনকি সেটা শয়তানের দু’টো শিংয়ের মাঝখানে পৌঁছে যায়৷ ( অর্থাৎ সূর্যাস্তের সময় নিকটবর্তী হয়) তখন সে উঠে চারটে ঠোকর মেরে নেয়৷ তাতে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করা হয়৷” (বুখারী , মুসলিম , মুসনাদে আহমাদ )
হযরত সা’দ ইবেন আবী ওয়াক্কাস (রা) থেকে তাঁর পুত্র মুসআব ইবনে সা’দ রেওয়ায়াত করেন, যারা নামাযের ব্যাপারে গাফলতি করে তাদের সম্পর্কে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম৷ তিনি বলেছিলেন , যারা গড়িমসি করতে করতে নামাযের সময় শেষ হয় এমন অবস্থায় নামায পড়ে তারাই হচ্ছে এসব লোক৷ ( ইবনে জারীর , আবু ইয়ালা , ইবনুল মুনযির , ইবনে আবী হাতেম , তাবারানী ফিল আওসাত , ইবনে মারদুইয়া ও বাইহাকী ফিস সুনান৷ এ রেওয়ায়াতটি হযরত সা’দের নিজের উক্তি হিসেবেও উল্লেখিত হয়েছে৷ সে ক্ষেত্রে এর সনদ বেশী শক্তিশালী ৷
আবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী হিসেবে এ রেয়ায়াতটির সনদ বাইহাকী ও হাকেমের দৃষ্টিতে দুর্বল ) হযরত মুস’আবের দ্বিতীয় রেয়ায়াতটি হচ্ছে , তিনি নিজের মহান পিতাকে জিজ্ঞেস করেন , এ আয়াটি নিয়ে কি আপনি চিন্তা – ভাবনা করেছেন ? এর অর্থ কি নামায ত্যাগ করা ? অথবা এর অর্থ নামায পড়তে পড়তে মানুষের চিন্তা অন্য কোনদিকে চলে যাওয়া ? আমাদের মধ্যে কে এমন আছে নামাযের মধ্যে যার চিন্তা অন্য দিকে যায় না ? তিনি জবাব দেন , না এর মানে হচ্ছে মানুষের সময়টা নষ্ট করে দেয়া এবং গড়িমসি করে সময় শেষ হয় হয় এমন অবস্থায় তা পড়া৷ ( ইবনে জারীর , ইবনে আবী শাইবা , আবু ইয়া’লা , ইবনুল মুনযির , ইবনে মারদুইয়া ও বাইহাকী ফিস সুনান )
এ প্রসংগে মনে রাখতে হবে , নামাযের মধ্যে অন্য চিন্তা এসে যাওয়া এক কথা এবং নামাযের প্রতি কখনো দৃষ্টি না দেয়া এবং নামায পড়তে পড়তে সবসময় অন্য বিষয় চিন্তা করতে থাকা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা৷
প্রথম অবস্থাটি মানবিক দুর্বলতার স্বাভাবিক দাবি৷ ইচ্ছা ও সংকল্প ছাড়াই অন্যান্য চিন্তা এসে যায় এবং মু’মিন যখনই অনুভব করে , তার মন নামায থেকে অন্যদিকে চলে গেছে তখনই সে চেষ্টা করে আবার নামারয মনোনিবেশ করে ৷
দ্বিতীয় অবস্থাটি নামাযে গাফলতি করার পর্যায়ভুক্ত৷ কেননা এ অবস্থায় মানুষ শুধুমাত্র নামাযের ব্যায়াম করে৷ আল্লাহকে স্মরণ করার কোন ইচ্ছা তার মনে জাগে না৷ নামায শুরু করা থেকে নিয়ে সালাম ফেরা পর্যন্ত একটা মুহূর্তও তার মন আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট হয় না৷ যেসব চিন্তা মাথায় পুরে সে নামাযে প্রবেশ করে তার মধ্যেই সবসময় ডুবে থাকে৷
ইবনে আব্বাস (রা) বলেন : ” এখানে মোনফিকদের কথা বলা হয়েছে , যারা লোক দেখানো নামায পড়তো৷ অন্য লোক সামনে থাকলে নামায পড়তো এবং অন্য লোক না থাকলে পড়তো না৷ ” অন্য একটি রেওয়ায়াতে তাঁর বক্তব্য হচ্ছে , ” একাকী থাকলে পড়তো না৷ আর সর্ব সমক্ষে পড়ে নিতো৷ ” ( ইবনে জারীর , ইবনুল মুনযির , ইবনে আবী হাতেম , ইবনে মারদুইয়া ও বায়হাকী ফিশ শু’আব ) কুরআন মজীদেও মুনাফিকদের অবস্থা বর্ণনা করে বলা হয়েছে :
” আর যখন তারা নামাযের জন্য ওঠে অবসাতগ্রস্তের ন্যায় ওঠে৷ লোকদের দেখায় এবং আল্লাহকে স্মরণ করে খুব কমই৷ ” ( আন নিসা ১৪২ )
আল্লাহ বলেন, ‘তাদের কেবল একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ (সুরা : বাইয়িনাহ, আয়াত : ৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) রিয়াকে ছোট শিরক (আল্লাহর অংশীদার নির্ধারণ) বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক নিয়ে যতটা ভয় পাচ্ছি, অন্য কোনো ব্যাপারে এতটা ভীত নই।’ তাঁরা (সাহাবি) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, ছোট শিরক কী? তিনি বলেন, রিয়া বা প্রদর্শনপ্রিয়তা। আল্লাহ কিয়ামতের দিন বান্দার আমলের প্রতিদান প্রদানের সময় বলবেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে যাদের দেখাতে তাদের কাছে যাও। দেখো তাদের কাছে তোমাদের কোনো প্রতিদান আছে কি না?’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২৫২৮)
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি শরিককারীদের শরিক থেকে অমুখাপেক্ষী। যে ব্যক্তি কোনো আমল করল এবং তাতে আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করল, আমি তাকে ও যাকে সে শরিক করল তাকে প্রত্যাখ্যান করি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৫২৮)
নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করতে চায়। অথচ তিনিও তাদের সাথে প্রতারণা করতে সক্ষম। যখন তারা ছালাতে দাঁড়ায় তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায় যে তারা ছালাত আদায় করছে, কিন্তু আল্লাহকে তারা কমই স্মরণ করে।’ (সুরা নেসা : আয়াত ১৪২)
জরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে শুনানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কেয়ামতের দিন) শুনিয়ে দেবেন। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কেয়ামতের দিন) দেখিয়ে দেবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
রিয়া বা প্রদর্শনপ্রিয়তা থেকে আত্মরক্ষার জন্য আধ্যাত্মিক সাধকরা কয়েকটি প্রচেষ্টার কথা বলেছেন। তা হলো—
১. ইবাদতের সময় আল্লাহর অস্তিত্বের স্মরণ করা। এটা চিন্তা করা যে আল্লাহ আমার মনের খবর জানেন; আমি কেন করছি, কী করছি সব তিনি দেখছেন। হাদিসে যেমন বর্ণিত হয়েছে, ‘তুমি আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে কোরো যেন তুমি তাঁকে দেখছ। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে তিনি তোমাকে দেখছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১)
২. রিয়ার ভয়াবহতার কথা স্মরণ করা। প্রদর্শন আল্লাহর ক্রোধের কারণ, তা সব সময় মনে রাখা।
৩. রিয়ামুক্ত আমলের পুরস্কারের কথা স্মরণ করা এবং তা অর্জনের প্রত্যয় গ্রহণ করা।
৪. আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা যাওয়া, যেন তিনি অনুগ্রহ করে আমলটি কবুল করে নেন।
৫. রিয়ামুক্ত আমলের তাওফিক চেয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
কোন কোন হাদীসে ماعون এর তাফসীর ব্যবহার্য জিনিস, যেমন: বালতি, পাত্র ইত্যাদি করা হয়েছে। [আবু দাউদ: ১৬৫৭] [আদওয়াউল বায়ান, মুয়াস্সার, ফাতহুল কাদীর]
মূলত মাউন ছোট ও সামান্য পরিমাণ জিনিসকে বলা হয়৷ এমন ধরনের জিনিস যা লোকদের কোন কাজে লাগে বা এর থেকে তারা ফয়দা অর্জন করতে পারে৷ এ অর্থে যাকাতও মাউন৷ কারণ বিপুল পরিমাণ সম্পদের মধ্য থেকে সামান্য পরিমাণ সম্পদ যাকাত হিসেবে গরীবদের সাহায্য করার জন্য দেয়া হয়৷ আর এই সংগে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) এবং তাঁর সমমনা লোকেরা অন্যান্য যেসব নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলোও মাউন৷ অধিকাংশ তাফসীরকারের মতে , সাধারণত প্রতিবেশীরা একজন আর একজনের কাছ থেকে দৈনন্দিন যেসব জিনিস চেয়ে নিয়ে থাকে সেগুলোই মাউনের অন্তরভুক্ত ৷ এ জিনিসগুলো অন্যের কাছ থেকে চেয়ে নেয়া কোন অপমানজনক বিষয় নয়৷ কারণ ধনী – গরীব সবার এ জিনিসগুলো কোন না কোন সময় দরকার হয়৷ অবশ্যি এ ধরনের জিনিস অন্যকে দেবার ব্যাপারে কার্পণ্য করা হীন মনোবৃত্তির পরিচায়ক৷ সাধারণত এ পর্যায়ের জিনিসগুলো অপরিবর্তিত থেকে যায় এবং প্রতিবেশীরা নিজেরদের কাজে সেগুলো ব্যবহার করে , কাজ শেষ হয়ে গেলে অবিকৃত অবস্থায়ই তা ফেরত দেয়৷ কারো বাড়িতে মেহমান এলে প্রতিবেশীরা কাছে খাটিয়া বা বিছানা – বালিশ চাওয়াও এ মাউনের অন্তরভুক্ত৷ অথবা নিজের প্রতিবেশীর চুলায় একটু রান্নাবান্না করে নেয়ার অনুমতি চাওয়া কিংবা কেউ কিছুদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছে এবং নিজের কোন মূলবান জিনিস অন্যের কাছে হেফাজত সহকারে রাখতে চাওয়াও মাউনের পর্যায়ভুক্ত৷ কাজেই এখানে আয়াতে মূল বক্তব্য হচ্ছে , আখেরাত অস্বীকৃতি মানুষকে এতবেশী সংকীর্ণমনা করে দেয় যে , সে অন্যের জন্যে সামান্যতম ত্যাগ স্বীকার করতেও রাজি হয় না৷
ইসলাম মানুষের মানবীয় গুনাবলীকেই প্রাধান্য দিয়ে রেখেছে। একজন খুব বেশী সালাত ও তাসবিহ করাতে অভ্যস্থ কিন্তু সূরার প্রথম দুটি গুন নেই বা মানুষের কল্যানে কোন কাজ করে না সেক্ষেত্রে তার আখেরাতের বিশ্বাসের ব্যাপারটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।
মহান আল্লাহ সঠিকভাবে দ্বিনকে বুঝার ও আমল করার সুযোগ করে দিন।
(তাফহিমুল কুর’আন ও আহসানুল বয়ান সহায়ক গ্রন্থ)