কি ধরনের সন্তান আপনি চান সেই পরিকল্পনা বিয়ের পূর্বেই নিতে হবে।
এখনও যারা বিয়ে করেননি অর্থাৎ বিবাহিত সংসার জীবনে যারা প্রবেশ করেন নি, এই আলোচনা তাদের জন্যও প্রয়োজন কারন কি ধরনের সন্তান আপনি চান বা কিভাবে সন্তান গঠন করবেন তার জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা নিতে হবে। সন্তান হয়ে যাওয়ার পর, সন্তান সাবালক হয়ে যাওয়ার পর দুনিয়াবী ডিগ্রীর পরিকল্পনা নিতে পারেন কিন্তু একজন সত্যিকার মানুষ, অনুগত মুসলিম গড়ে তোলার জন্য, সদকায়ে জারিয়া দুনিয়াতে রেখে যাওয়ার জন্য বিয়ের পূর্বেই পরিকল্পনা করতে হবে এবং মহান রবের কাছে বেশী বেশী করে দোয়া করতে হবে যেন সঠিক সিদ্ধান্তের পথ উন্মোচিত হয়।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, দুশ্চরিত্রা মহিলারা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষরা দুশ্চরিত্রা মহিলাদের জন্য। সচ্চরিত্রা মহিলারা সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষরা সচ্চরিত্রা মহিলাদের জন্য। লোকে যা বলে তা থেকে তারা পূত-পবিত্র। তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবিকা। সূরা আন নূর: ২৬
প্রতিটি মানুষকেই নিজেদের পরিচয়কে সামনে রেখে এবং সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে যার যার অবস্থানে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে।
আর সেই পরিচয়টি হলো- মানুষ আল্লাহর দাস ও প্রতিনিধি।
এই পরিচয়ের সঠিক বাস্তবায়ন করছি কি না তা দেখার জন্যই মহান আল্লাহ একেকজনকে বিভিন্ন এসাইনমেন্ট দিয়ে যাচাই করছেন। এই এসাইনমেন্টের বিভিন্ন নির্দেশনাও মহান আল্লাহ দিয়ে রেখেছেন। সুতরাং যার যার এসাইনমেন্ট সেই নির্দেশনার আলোকে করে জমা দিয়ে আবার যেখান থেকে এসেছি সেখানে ফিরে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
জীবনের প্রতিটি এসাইনমেন্ট যা মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলের স. জীবনের উদাহরন সামনে রেখে চলাটাই মুমিন ও মুমিনার লক্ষ্য হওয়া দরকার।
ইব্রাহীম আ. যেমন শেষ বয়সে যেয়ে এসাইনমেন্ট হস্তান্তর করার জন্যই মহান রবের কাছে একজন সুসন্তান কামনা করেছিলেন।
মানুষের মাঝে বিভিন্ন দেশে মহান আল্লাহর আনুগত্যে জীবনকে সাজানোর আহবান করে যখন ৮৬ বৎসর বয়সে উপনীত হয়ে গেলেন তখন চিন্তা হলো মৃত্যুর পর এই কাজ কে জারী রাখবে? তখন পর্যন্ত তাঁর কোন সন্তান জন্ম নেয় নি। তখন বংশীয় ধারা রক্ষার জন্য নয়, পিতা হিসেবে আনন্দ লাভের জন্য নয়, সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নয়, শুধুমাত্র মহান রবের দিকে আহবানকারীর কাজকে জারী রাখার জন্য একজন সন্তান কামনা করেছিলেন।
হে পরওয়ারদিগার! আমাকে একটি সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দাও৷ সূরা আস সাফাত: ১০০
একদা উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর কাছে এসে জনৈক ব্যক্তি নিজের সন্তানের অবাধ্যাচরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। ওমর অভিযুক্ত সন্তানকে পিতার সাথে অসদাচরণের কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। সন্তান তখন বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন, সন্তানের কি পিতার উপর কোনো হক আছে? উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। সে বলল, তাহলে তা কী? উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, পিতা তার জন্য সৎ আদর্শ নারীকে মাতা হিসেবে গ্রহণ করবে, তার জন্য একটা সুন্দর নাম রাখবে এবং তাকে কুরআন শিক্ষা দেবে। তখন সন্তান বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন, আমার পিতা ওগুলোতে একটিও করে নি। আমার মা হচ্ছেন ক্রীতদাসী। এক সময় মূর্তিপূজারী ছিলেন, আমার নাম রেখেছে জু‘লান (অর্থাৎ গোবরে পোকা) আর আমার বাবা আমাকে কুরআনের একটি বর্ণও শিক্ষা দেন নি। উমার তখন পিতার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এসেছ সন্তানের অসদাচরণের বিরুদ্ধে নালিশ করতে। আরে তুমি তো তার প্রতি আগেই অবিচার ও অসদাচরণ করেছ। আব্দুল্লাহ নাসির ওলওয়ান, তারবিয়াতুল আওলাদ ফিল ইসলাম, প্রথম খন্ড, পৃ. ৩১৮।
আমাদের সমাজের আজকের সন্তানেরা যারা বিপথগামী হয়েছে বা হচ্ছে তাদের অধিকাংশই এই উত্তরটাই দিবে। আল্লাহ আমাদের ভুল থেকে সাবধান হওয়ার তাওফিক দান করুন। পরবর্তী প্রজন্ম যেন এইভুল না করে সেই জন্য এখনই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
প্রতিটি নর নারীকেই গড়ে উঠতে হবে, যত্ন করতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে যেন সেই পরিচয়ের কোন অবমাননা না হয়। সঠিকভাবে পরিচর্যা করে নিজেকে উত্তীর্ণ করে নিতে হবে মহান রবের সন্তুষ্ট বান্দা হিসেবে।
তাই যুবক যুবতীরা নিজেদেরকে মহান আল্লাহর অনুগত বান্দা হয়ে গড়ে উঠার প্রচেষ্টায় নিজের পরিশ্রম, সময়, মেধাকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। বিপরীত লিংগকে আকর্ষন করার জন্য মহান আল্লাহর পথ থেকে যে সরে যায়, বুঝতে হবে এর দ্বা্রা ভালো এসাইনমেন্ট পাওয়া অনিশ্চিত। নিজে ঈমানদার,পবিত্র চরিত্র ও পরহেজগার হলে মহান আল্লাহই তার জন্য সঙ্গী মিলিয়ে দিবেন যেমন আদম আ.এর জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
রাসূল স. বলেছেন, বিয়ে করা আমার আদর্শ ও স্থায়ী নীতি, যে লোক আমার এ সুন্নাত অনুযায়ী আমল করবে না, সে আমাদের দলভূক্ত নয়। ইবনে মাজাহ
হযরত ইবনে আব্বাস রা. নবী স.এর বানী বলেছেন, কুমারিত্ব ও অবিবাহিত নিঃসংগ জীবন যাপনের কোন নিয়ম ইসলামে নেই। মুসনাদে আহমাদ
বিয়ের প্রয়োজনীয়তা ও ধরন নিয়ে আলোচনা অনেক বিশাল, এখানে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই নিয়ে এসেছি।
কোন যুবক যদি দ্বীনদারী ও চরিত্রের দিক থেকে পছন্দনীয় হয়, অর্থাৎ সে আল্লাহকে ভয় করে চলে ফরয ইবাদত সমূহ যথাযথ আদায় করে যাবতীয় হারাম থেকে বেঁচে চলে এবং আচরণ ও চরিত্রের দিক থেকে উত্তম হয়, তবে সেই সর্বাধিক উপযুক্ত পাত্র।
এ সম্পর্কে রাসূল সা. বলেছেন, “তোমাদের নিকট যদি এমন পাত্র বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আসে যার দ্বীনদারী ও চরিত্র তোমাদের নিকট পছন্দসই, তবে তার সাথে তোমাদের কন্যাদের বিবাহ দিয়ে দাও। যদি তোমরা এরূপ না কর (দ্বীনদার ও চরিত্রবান পাত্রকে প্রত্যাখ্যান কর এবং তাদের সাথে কন্যাদের বিবাহ না দাও) তবে এর কারণে পৃথিবীতে অনেক বড় ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। (তিরমিযী)
ইসলাম মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের অধিকারী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা অধিক সন্তানের অধিকারী ও স্বামীদের অধিক ভালোবাসে এ ধরনের মেয়েদের বিবাহ কর, কারণ, কিয়ামতের দিন আমি আমার উম্মত বেশি হওয়ার কারণে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব।”
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “পুরো দুনিয়া ভোগের সামগ্রী, আর সবচে’ উপভোগ্য সম্পদ হল নেককার নারী।” সহিহ মুসলিম
বুখারি ও মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “চারটি গুণ দেখে নারীদের বিবাহ করা হয়- সম্পদ, বংশ মর্যাদা, সৌন্দর্য ও দীনদারি। তবে ধার্মিকতার দিক প্রাধান্য দিয়েই তুমি কামিয়াব হও নয়তো তোমার হাত ধুলি ধুসরিত হবে।” সহিহ মুসলিম : ১০/৩০৫
এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে, নারীকেও তার জীবন সাথী নির্বাচন করতে গিয়ে এই বিষয়গুলো প্রাধান্য দিতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “চারটি বস্তু শুভ লক্ষণ। যথা :
- নেককার নারী
- প্রশস্ত ঘর
- সৎ প্রতিবেশী
- সহজ প্রকৃতির আনুগত্যশীল-পোষ্য বাহন
পক্ষান্তরে অপর চারটি বস্তু কুলক্ষণা। তার মধ্যে একজন বদকার নারী।”
হাকেম, সহিহ আল-জামে : ৮৮৭