মা সন্তানের প্রথম স্কুল | সন্তান গঠনে মায়ের ভূমিকা-১

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহ তা’আলার নামে

%e0%a6%9b%e0%a6%ac%e0%a6%bf-%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%b2%e0%a6%97-%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%97%e0%a6%a0%e0%a6%a8-%e0%a7%a8

 

আদর্শ পরিবেশের মাঝে শিশু বেচেঁ থাকলে

সে আদর্শ মানুষ হতে শেখে।

আদর্শ শিক্ষা সম্বলিত পরিবারের মাঝে শিশু বেচেঁ থাকলে
সে আদর্শ শিক্ষা অর্জন করতে শেখে।

সমালোচনার পরিবেশে শিশু বেচেঁ থাকলে
সে কেবল নিন্দা করতে শেখে।

শত্রুতার মাঝে শিশু বেচেঁ থাকলে
সে কেবল হানাহানি করতে শেখে।

বিদ্রুপের মাঝে শিশু বেচেঁ থাকলে
সে কেবল লাজুক হতে শেখে।

কলংকের মাঝে শিশু বেচেঁ থাকলে
সে কেবল অপরাধবোধ শেখে।

প্রশংসার মাঝে শিশু বেচেঁ থাকলে
সে মূল্যায়ন করতে শেখে।

নিরপেক্ষতার মাঝে শিশু বেচেঁ থাকলে
সে ন্যায়পরায়নতা শেখে।

নিরাপত্তার মাঝে শিশু বেচেঁ থাকলে
সে বিশ্বাসী হতে শেখে।

অনুমোদনের মাঝে শিশু বেচেঁ থাকলে
সে নিজেকে ভালবাসতে শেখে।

স্বীকৃতি আর বন্ধুদের মাঝে শিশু বেচেঁ থাকলে
সে শিশু পৃথিবীতে ভালবাসা খুঁজে পেতে শেখে।

(সংগৃহিত)


আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন অথবা দান করেন পুত্র কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি বন্ধ্যা করে দেন। তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। আশ-শূরা: ৪৯-৫০

আর আল্লাহই তোমাদের জন্য তোমাদের সমজাতীয় স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, তিনিই এ স্ত্রীদের থেকে তোমাদের পুত্র-পৌত্রাদি দান করেছেন এবং ভালো ভালো জিনিস তোমাদের খেতে দিয়েছেন ৷ তারপর কি এরা (সবকিছু দেখার ও জানার পরও) বাতিলকে মেনে নেবে এবং আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করে ? সূরা আন নহল: ৭২

প্রত্যেক শিশুই ফিতরাত তথা আল্লাহর তাওহীদবাদ ও একত্ববাদের স্বীকৃতি দিয়ে পৃথিবীতে আসে। কিন্তু পরবর্তীতে তার পিতা-মাতা ইয়াহুদী, খ্রীষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানায়। বুখারী ও মুসলিম শরীফ

ইমাম গাজালি রহ. বলেছেন: ‘সন্তান মাতা-পিতার কাছে আমানত। সন্তানের হৃদয় নকশা- ইমেইজমুক্ত এক সরল-স্বচ্ছ মুক্তা, যা যেকোনো নকশা- ইমেইজ ধারণ করতে প্রস্তুত। তাকে যে দিকেই হেলানো হবে সে সে দিকেই ঝুঁকে পড়বে। যা কিছু উত্তম ও ভালো তা যদি তাকে শেখানো হয়, তাকে যদি এগুলোর প্রতি অভ্যস্ত করে নেয়া হয় তবে সেভাবেই সে বড় হবে। ফলে তার মাতা-পিতা দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্যবান হবে। তার উস্তাদ ও আদব-কায়দার শিক্ষকগণও তৃপ্তি অনুভব করবে। এর বিপরীতে তাকে যদি খারাপ বিষয়ে অভ্যস্ত করা হয়, জন্তু জানোয়ারের মতো তাকে লাগামহীন করে দেওয়া হয়, তাহলে সে ভাগ্যবিড়ম্বিত হবে, অতঃপর নিক্ষিপ্ত হবে ধ্বংসের গহ্বরে। আর এর দায়ভার বর্তাবে তাদের ঘারে যারা ছিল তার কর্ণধার, যাদের দায়িত্ব ছিল তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার।

হে মুমিনগন! তোমরা নিজদিগকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে রক্ষা কর আগুন থেকে যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সূরা আত তাহরীম: ৬

মানুষ যখন মারা যায়, তখন তা আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল চলতে থাকে। সাদাকায়ে জারিয়া অথবা এমন ইলম যা দ্বারা কল্যান লাভ করা যায় অথবা নেককার সন্তান, যে তার জন্য দু’আ করে। মুসলিম শরীফ

মা সন্তানের প্রথম স্কুল

সন্তানের হৃদয়কে পুষ্ট করার অর্থ মহান আল্লাহ যে পরিচয় ও দায়িত্ব দিয়ে এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন সেই মানে উত্তীর্ণ করার জন্য ধাপে ধাপে শিক্ষা দেয়া। এর অন্যথা হলে মাতা-পিতাকে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে নিশ্চিত রূপেই। হাদিসে পুরুষকে তার পরিবার পরিজনের দায়িত্বশীল, নারীকে তার স্বামীর বাড়িতে দায়িত্বশীল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং প্রত্যেককে যার যার দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে বলে ঘোষণা এসেছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। পুরুষ তার পরিবারে দায়িত্বশীল এবং সে তার দায়িত্বকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর ঘরে দায়িত্বশীল এবং তাকে তার দায়িত্বকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। সেবক তার মনিবের সম্পদে দায়িত্বশীল এবং তাকে তার দায়িত্বকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে।

আর এই নেক সন্তান গড়ার জন্য প্রয়োজন আদর্শ পরিবেশের ও আদর্শ শিক্ষা সম্বলিত পরিবারের। আর এই দায়িত্বটা একজন মা পারেন সুন্দরভাবে পালন করতে।

আমাদের মাঝে অনেক মা-রাই ছোট বেলায় বাচচাকে অনেক কিছু করাতে উৎসাহিত করে থাকেন যেমন নাচ গানের স্কুলে দেয়া, বাচচাকে টিভিতে এড দেখিয়ে খাবার খাওয়াতে অভ্যস্ত করানো , ড্রেসের বেলায় শালীনতা রাখার কোন চিন্তা করে না ইত্যাদি আরো অনেক কিছুর আশ্রয় নিয়ে থাকেন। আমরা মনে করি এখনো ছোট আছে কিছু হবে না, পরে বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে । কিন্তু আপনারা জানেন কি?

মনস্তাত্বিকবিদরা রিসার্চ করে বের করেছেন যে বাচ্চার মেধা ও মননের ভিত তৈ্রী হয় ২-৫ বছরের মধ্যে। এই সময় হলো প্রাথমিক বিকাশ ও লালনের।

অথচ আমরা এই সময়টা বাচচার স্বাস্থ্যে্র দিকে নজর দিলেও ঐদিকটা আমরা গুরুত্ব দেই না। এই সময় হেলা করে চলে যায়।
নরম কাঁদা মাটিকে যেভাবে ইচ্ছা সাজানো যায় কিন্তু মাটি শক্ত হয়ে গেলে সহজে আর সেটাকে অন্যরুপ দেয়া যায় না।

আরবীতে একটি প্রবাদ আছে—মা সন্তানের প্রথম স্কুল।

মজার ব্যপার কি, সবাই সন্তানকে ভাল উন্নতমানের স্কুলে ভর্তি করার জন্য কত চিন্তা, সময়, শ্রম, অর্থ ব্যয় করেও মানসিক ভাবে উদ্বিগ্ন থাকেন অথচ মা নিজে একজন সন্তানের প্রথম স্কুল সেই স্কুলের মান কতটুকু তার ব্যপারে আমরা কি একটুও সময় বা চিন্তা করি? সন্তানের জীবন পথের শুরু মায়ের হাতেই। তাহলে মাকে কত সুন্দর ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী হওয়াসহ আরো কিছু গুনাবলীর অধিকারী হওয়া প্রয়োজন যা দিয়ে সন্তানকে উন্নত সুন্দর মুসলিম নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। এই গুনাবলীর বাস্তব ব্যবহার দ্বারা সে সন্তান তথা পরিবার গড়ে তুলবেন সুন্দর করে।

সন্তান গঠনের ক্ষেত্রে আমাদের অনেকগুলো মুখ সামনে রাখতে হবে যারা ভূমিকা রেখে থাকেন। আবার অনেক মুখ আছেন যারা ভূমিকা না রাখলেও প্রভাব ফেলার কাজটি করতে পারেন বা করে থাকেন। কিছু পরিবেশকে সামনে রাখতে হবে যা স্বাভাবিকভাবে সন্তানের উপর প্রভাব ফেলে থাকে। সে যাই হোক মূলত আমরা মায়ের ভূমিকা নিয়েই আলোচনায় যেতে চাই যদিও এর বেশীরভাগ অংশজুড়ে রয়েছে পিতার ভূমিকা। কোন কোন জায়গায় মা একা, কোন কোন ক্ষেত্রে পিতা একা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে উভয়েই সমান ভূমিকা রাখার দায়িত্ব পালন করেই শিশুকে লালন পালন করতে হয়। তবে একজন যোগ্যতা সম্পন্ন মা মহান আল্লাহর সাহায্যে সন্তানকে পরিকল্পিতভাবে একাই সুন্দর করেও গড়ে তুলতে পারেন।

সন্তান গঠনে যারা ভূমিকা রেখে থাকেন, যাদের দিয়ে প্রভাবাণ্বিত হয়–

  • পিতা মাতা
  • পরিবারের অন্য সদস্যরা-দাদা-দাদী, নানা-নানী, ভাই বোন
  • গৃহকর্মী, ড্রাইভার, দাড়োয়ান
  • শিক্ষক শিক্ষিকা (বাসা ও স্কুলের)
  • শিক্ষাংগনের পরিবেশ
  • প্রতিবেশী
  • শিশুর বন্ধু মহল
  • পারিপার্শ্বিক অবস্থা

Leave a Reply