সন্তানেরা যখন বয়ঃসন্ধিক্ষনে আসে অর্থাৎ যখন সাবালক বা সাবালিকা হতে যাচ্ছে বা হয়েছে, তখন এই বয়সটাতেও হরমোনের পরিবর্তন আসে—এই সময় তাই ছেলে-মেয়েদের একটু পরিবর্তন আসে শারিরীক মানসিক ও আচরনে। এই সময়টা আবার একেক জনের একেক বয়সে হতে পারে । কারো আগে বা পরে। সাধারনত ১১থেকে ১৩ বছরে দেখা যায়। এই সময়টা মায়েরা যদি একটু নজর রাখেন তাহলেই বুঝতে পারবেন সন্তান এই সময়টা পার করছে। এটা খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণ যে এই সময় বাবা-মা কে সাবধানে সচেতনার সাথে ও বুদ্ধি খাটিয়ে সন্তানকে লালন করতে হবে। এই সময় যদি সে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ পরিবারে পায় যা তাকে স্বাচ্ছন্দ এনে দেয় তাহলে ইন শা ’আল্লাহ বাইরের খারাপ অবস্থা থেকে নিজেকে সংযত রাখতে পারবে। রবীন্দ্রনাথের গল্পে যেমন বলা ১৩-১৪ বছরের বালাই নাই—।
রাসূল(সঃ) এর জীবনের এই সময়টা দেখুন। তিনি এই সময়ে ভাল অভিভাবকত্ব নিয়ে বড় হয়েছেন। এই সময় বয়স উপযোগী কাজে তিনি ব্যস্ত ছিলেন। সামাজিক হিলফুল ফুজুলে শরীক হয়েছিলেন, ব্যবসার কাজে চাচার সাথে থেকেছেন। মাঝে মাঝে সামাজিক অবস্থা নিয়ে ভাবতেন। সৃষ্টি রহস্য নিয়েও ভাবতেন।
এই সময়টা বুঝার উপায়—-
বেশ অস্থিরচিত্ত থাকে।
অল্পতে রাগ হয়ে যাওয়া।
গলার স্বর পরিবর্তন হওয়া।
ভালো ও সহজ কোন কথা সে জটিল ভাবে বুঝছে।
সে নিজেকে অসহায় ভাবে মাঝে মাঝে।
মুখে একটু একটু ব্রন উঠা (অনেকের না হতে পারে)
একটু গোফ উঠা শুরু।
মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধি বুঝা ।
একটু নিজেকে আলাদা করে রাখার চেষ্টা।
অনেক কথা বলতে চায় কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না।
সময় অসময়ে মন খারাপ থাকা বা ভালো না লাগা।
পছন্দের খুব ঘন ঘন পরিবর্তন হওয়া।
এই রকম আরো অনেক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে—যা মা কেই বুঝতে হবে এবং এই সময় সন্তানকে খুব কাছে টেনে বুঝাতে হবে যে এটা সহজ ও স্বাভাবিক । এই সময় মা ও বাবা কে সন্তানের কাছে রেখে সময় দেয়া প্রয়োজন। তাহলে অনেক প্রশ্ন করে করে ওরা নিজেদের মনের অস্থিরতাকে শান্ত করতে পারবে এবং এক সময় সে এই অবস্থা সহজ করে স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসতে পারবে। অনেক বাবা-মা না বুঝে এই সময় সন্তানকে বকা-ঝকা করে বা জোর করে কাজ আদায় করাতে চান বা নিজেরা যা চান তা করতে চাপাচাপি করেন অবস্থা না বুঝে, ফলে সন্তান নিজের অবস্থায় আরো অসহায় ও মানসিকভাবে খুব কঠিন চাপে পড়ে যায়। এই সময় বাইরের কোন বন্ধুরুপ শয়তান হাত বাড়ালেই তার জীবন হয়ে যাবে ভয়ংকর। তাই আমাদের সবার সচেতনতা ও সহযোগীতায় বড় হতে পারে আপনার ও আমার সন্তানটি সুন্দর করে। আল্লাহ আমাদের সহায় হঊন।
জীবনে একজন নিয়মানুবর্তী মুমিন হওয়ার জন্য সন্তানকে সময়উপযোগী বিধানগুলো অভ্যাস করাতে উদ্যোগ নেয়া মা বাবার কর্তব্য। মহান আল্লাহ কুর’আন ও রাসূলের স. জীবনীতে সেই বিধানগুলো দিয়েছেন।
রাসূল(সঃ) বলেছেন—সাত বছর বয়সে বালকদের নামায শিখাও এবং দশ বছর বয়সে পদার্পণ করলে নামায পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য দৈহিক শাস্তি দাও। তিরমিযী আবওয়াবুস সালাত: ৩৮২
আমাদের সন্তানদের নামাযের ব্যপারে যত্নশীল করে গড়ে তুলতে হবে। এখনকার ছেলে মেয়েরা বেশ যুক্তিসম্পন্ন। তাদেরকে সুন্দর করে আখেরাতের গুরুত্ব বুঝিয়ে নামাযের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে হবে।
সুন্দর ও সঠিক নিয়মে নামাজ শিক্ষা দেয়া আপনার আমারই দায়িত্ব। নামাজের ভিতরে যা পড়া হয় সেগুলো বুঝিয়ে দিন।
সাত বছর হলেই তাকে সুন্দর একটি জায়নামাজ টুপি / হিজাব সন্তানকে উপহার দিয়ে বলুন নামাযের কথা।
স্কুল থেকে আসলে বা ভোরে উঠতে কষ্ট হবে বলে নামাজ পড়ার কথা অনেক বাবা-মা-ই সন্তানকে বলেন না। কিন্তু এই কষ্টটুকুর জন্য আপনি জাহান্নামের আগুনের দিকে ফেলে দিচ্ছেন সন্তানকে– তখন সন্তানের আগুনে পুড়ে যাওয়া কিভাবে সহ্য করবেন? সপ্তাহের ছুটির দিনটিকে বেছে নিন সন্তানকে ইসলামের মৌ্লিক বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য। এখনতো মহান আল্লাহর সাহায্যে প্রযুক্তির উন্নয়নে নেটে বসে ইউ টিউবে যেয়ে খুব সুন্দর প্রানবন্ত স্কলার্সদের লেকচারের মাধ্যমে রাসূলের স. জীবনীসহ বিভিন্ন নবী রাসূলদের জীবনী ও বিভিন্ন বিষয়ের দিক নির্দেশনা সহজেই পরিবারের সকলে মিলে শুনে জীবনকে ও পরিবারকে সুন্দর করার সুযোগ নিতে পারি।
পারিবারিক ভাবে একটু আনন্দঘন পরিবেশে শেখান ও উপহার দিন বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিযোগীতা করিয়ে।
ওদের হাতে তুলে দিন বিষয় ভিত্তিক বই ও সিডি। ওদের বলুন ডায়রীতে বা কম্পিউটারে পাউয়ার পয়েন্টে স্লাইড শো করে নোট করতে। তারপর তাকে বলেন সেই লেকচারটা পরিবারের সবাইকে বলতে। তাহলে সন্তানের প্রযুক্তি ব্যবহারেও ভালো কাজে আগ্রহ আসবে ইনশা’আল্লাহ। বাবাদের দিয়ে ছেলে সন্তানটিকে মসজিদে পাঠিয়ে দিন নামাজের জন্য। আর সব সময় মহান আল্লাহর কাছে তাদের নামাযী হওয়ার জন্য দোয়া করুন।
https://www.youtube.com/watch?v=hE0eMlqE-No
https://www.youtube.com/watch?v=VWaeAGSWO8g
https://www.youtube.com/watch?v=wfYVOTjNKbo