সন্তান গর্ভে আসার পূর্বে যা করনীয়। সন্তান গঠনে মায়ের ভূমিকা-৮

                ১। নিজের মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি

                ২। জীবন সাথীটির সাথে পরামর্শ করা ও সহযোগীতা কামনা

                ৩। পারিবারিক অনুকূল পরিবেশ তৈরীর জন্য জ্ঞান ও সচেতনতা রাখা

                ৪। বেশী বেশী মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করে সাহায্য চাওয়া ও তাঁরই উপর নির্ভর করা

 

একজন নারী যখন পরিবারে স্ত্রী হিসাবে আসেন, প্রকৃতিগতভাবে যদিও তিনি প্রস্তুত থাকেন তবুও কখনও কখনো তাকে প্রস্তুতি নিতে হয় মা’ হওয়ার দিনের জন্য।  সন্তান আল্লাহর দেয়া একটি বড় নি’আমত। একটি পরিবারের বন্ধনকে মজবুত করে এই সন্তানদের দ্বারা। এই সন্তানকে নিয়েই পরিবারে আনন্দের ফল্গুধারা বয়ে যেতে পারে।

একজন নারী এইক্ষেত্রে সুন্দর ভূমিকা রাখতে পারেন। সন্তান পেটে ধারন কোন অসুস্থতা নয়। একটি কথা প্রায়ই শোনা যায়, ‘আমার স্ত্রীতো অসুস্থ’ বা অমুক ভাবী, খালা অসুস্থ’। কেন, কী হয়েছে, কেন জানেন না, উনার তো বাচ্চা হবে। মেয়ে যখন বিয়ের পর বধূ হোন তখন তো মা হবে, এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। এটা তো আর ৫-১০টা রোগের মতো অসুস্থতা নয়। বাচ্চা হওয়াটা শরীরের একটা অবস্থা মাত্র। এটা কোন রোগ নয়। কাজেই প্রথম থেকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা উচিত এই ভাবনা।

তবে এই ক্ষেত্রে পরিবারের প্রত্যেকের জানা থাকা দরকার এই সময় নারীর শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারনে নারীর শরীর ও মনের পরিবর্তন আসতে পারে। তাই পরিবারের সদস্যরা বিশেষ করে স্বামীর ভূমিকা সুন্দর ও দায়িত্ববান থাকা দরকার। আর নারী এই অবস্থাকে সহজ করে নিলে আরো সহজ হয়ে যায়। অন্য সময়ের তুলনায় একটু পরিবর্তন আসবে এটাই স্বাভাবিক, তবে এই পরিবর্তন একেকজনের একেকরকম অনুভূত হতে পারে, সহনীয়তাও একেকজনের একেকরকম হতে পারে। এই অবস্থাটা অনেকের জন্য একদম সহজই থাকে আল্লাহর অশেষ রহমতে। আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহর সাহায্য দিয়ে আরো সুন্দর ভাবে এই সময়টা কাটানো যায়। কারো অবস্থার সাথে অন্যের তুলনা করা ঠিক নয়। দেখা যায় শাশুরী বা ননদ সুস্থ ছিলেন গর্ভাবস্থায়, সেইক্ষেত্রে ঘরের বউ যখন গর্ভাবস্থায় অসুস্থ্য হয়ে পড়েন, তখন এটা তুলনায় এনে মানতে নারাজ পরিবারের অনেক সদস্য ও সদস্যারা, ফলে যত্ন পাওয়ার পরিবর্তে বিভিন্ন রকম মানসিক কষ্টের আচরন পেয়ে থাকে গর্ভবতী বধূটি। এই অবস্থাটা আমাদের সমাজে যে কোন নারীর বেলায় হতে পারে। তাই এইধরনের তুলনায় আচরন না করে বাস্তব ভিত্তিক তদারক করা প্রয়োজোন।

শারিরীক সুস্থতা   আল্লাহতা’আলার দেয়া আরেকটি নি’আমত। এটার ব্যপারেও আমাদের নারীদের যত্নশীল হতে হবে। প্রয়োজনে গাইনীকোলজীষ্ট এর সাথে পরামর্শ করে নেয়া যেতে পারে।

জ্ঞানার্জন করার বেলায়  নারীরা খুব হেলা করে থাকেন। আমাদের ধারনা বা প্রচলিত অবস্থা এই যে পুরুষরাই বা শুধু আলেমরাই সব জানবেন। স্বাস্থ্যগত ব্যাপারেও কিছু জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন। আজ অনলাইনে ইউটিউবে সঠিক লিঙ্ক থেকে এই ধরনের অনেক লেকচার থেকে প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করতে পারি। নিজেদের প্রাত্যহিক ব্যপারের কিছু জ্ঞান অবশ্যই আমাদের নিজেদের জানা থাকা প্রয়োজন।  কোর’আনে নারী পুরুষভেদে সব মানুষ যারাই জ্ঞানী তাদের কথা বলা হয়েছে তারাই আল্লাহকে বেশী ভয় করেন।

আর হাদীসে এসেছে, জ্ঞান অন্বেষণে করা প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরয। – ইবনে মাজা

বিদ্যা অর্জন কর, বিদ্যা বিদ্বানকে  অন্যায় হতে ন্যায়কে পৃথক করার ক্ষমতা দেয়। তবে প্রিয় বোনেরা দেখা যায় অনেকেই বিয়ের পর অবসর সময়টা গল্প রহস্য উপন্যাস পড়ে জীবনকে কল্পনায় সাজাতে চান মিলাতে চান। আসলে আমাদের প্রয়োজন বাস্তব কল্যানমুখী জ্ঞান যা আমরা পাবো কোর’আন হাদীস ও সাহাবাদের জীবনী পড়ে। সমসাময়িক জ্ঞান বিজ্ঞানের বই পড়েও অনেক কল্যানমুখী চিন্তার দ্বা্র উন্মোচন হতে পারে। এমন জ্ঞান যা আমার সন্তান গঠনে সহায়ক হবে। বেহুদা সময় নষ্ট করা থেকে দূরে থাকা মুমিনার চরিত্রের একটি বিশেষ দিক, এই চিন্তা মাথায় রেখেই পরিকল্পিতভাবে সময়ের ব্যবহার করা প্রয়োজন।

সুষ্ঠুভাবে  সন্তান গর্ভে ধারণের কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে সন্তান গ্রহণের আগে থেকেই মা’কে সচেতনভাবে নিজের যত্ন নিতে হবে। এর জন্য বেশ কিছু ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে হয়।

১। সম্ভব হলে একজন গাইনোকলিজেষ্টের সাথে পরামর্শ করে  প্রি-চেকআপ করে নিলে সবচেয়ে ভালো হয়। এতে করে নিজের শরীরের অবস্থা, একজন নারী হিসেবে শরীর সন্তান ধারনের জন্য কতটা প্রস্তুত সে বিষয়ে ভালোভাবে জানা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। প্রয়োজনে স্বামীর বিশেষ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষাও করে নেয়া যেতে পারে। বিশেষ করে রক্তের গ্রুপ জানা থাকা জরুরী।

২।  চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যা করনীয় তা গুরুত্ব দিয়ে মানা মা ও শিশু উভয়ের সুস্থতার জন্য খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।ত

৩।  ধুমপান এর অভ্যাস থাকলে সন্তানের এবং নিজের সুস্থতার দিকে তাকিয়ে এসবকিছু ধীরে ধীরে পরিত্যাগ করা শুরু করুন। এই ক্ষেত্রে পরিবারের অন্যদের বিশেষ করে স্বামীও ধূমপানে অভ্যস্থ থাকেন, অবশ্যই ভবিষ্যত জীবনের কল্যানে হলেও পরিত্যাগ করা দরকার।

৪।  আর্থিক অবস্থার দিকটিও  মাথায় রাখুন এবং আগে থেকেই সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৫। সঙ্গীর সাথে এ বিষয়ে সম্পূর্ণ খোলাখুলিভাবে আলোচনা করুন। সন্তানের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্বামী স্ত্রী দুজনের মাঝে ভালো বোঝাপড়া অনেক বেশি দরকার।

৬। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর যে যত্ন প্রয়োজন, অনেকে সুস্থ থেকে নিজে নিজে করতে পারেন কিন্তু একজন ভালো পরহেজগার গৃহকর্মীর সন্ধান আগে থেকেই করে রাখা ভালো যেন সময়ে সাহায্য নিতে পারেন।

৭। সন্তান গর্ভে আসলে কি ধরনের পরিবর্তন মানসিক ও শারিরীকভাবে আসতে পারে, সে সম্পর্কে ন্যুনতম জ্ঞান অর্জন করা দরকার দম্পত্তিকে। তাহলে সেই পরিবর্তনের বিষয়গুলোর জন্য নারী নিজেও যেমন মানসিকভাবে শান্ত থাকতে পারবেন তেমনি স্বামী সহজভাবে নিয়ে স্ত্রীকে আস্বস্ত করতে পারবেন।

৮। পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগীতা পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বা্মীর এই জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারবেন।

মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন জানতে চাইলে নিচের লিঙ্কে যেতে পারেন।

http://www.psychologicalscience.org/index.php/news/releases/how-pregnancy-changes-a-womans-brain.html

http://health.howstuffworks.com/pregnancy-and-parenting/pregnancy/issues/understanding-psychological-changes-during-pregnancy.htm

http://womenshealth.gov/pregnancy/you-are-pregnant/body-changes-discomforts.html

http://www.healthline.com/health/pregnancy/bodily-changes-during#PhysiologicalChanges2