সন্তানের বিবেক-বুদ্ধির গঠনে করনীয়। সন্তান গঠনে মায়ের ভূমিকা-২৭

বিবেক গঠ্ন হলো সন্তানকে শরীয়ত, সংস্কৃতি ও আধুনিক উপকারী জ্ঞানসহ চিন্তা ও সভ্যতার জ্ঞানে সজ্জিত করা, যেন সে চিন্তার ক্ষেত্রে পরিপক্ক ও জ্ঞানী হয়।

মূলত ঈমানী শিক্ষা (যা বুনিয়াদ), দৈহিক শিক্ষা (গঠন ও প্রস্তুতি), নৈ্তিক শিক্ষা (আত্মস্থ ও অভ্যস্ত করানো) এবং বিবেক-বুদ্ধির গঠন(সচেতনতা সৃষ্টি ও জ্ঞান শিক্ষা), মানসিক গঠন( ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব) ও সামাজিক গঠন(সমাজের উন্নত আদব-শিষ্টাচার ও মানবিক মৌ্লিক নীতিমালা শিক্ষা) –এই সবের সমণ্বয়ে একজন সন্তানকে উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে দিতে পারে আল্লাহতা’আলার অশেষ রহমতে।

সন্তানের বিবেক-বুদ্ধির গঠনে আমাদের কী করনীয় তার  কিছু দিক তুলে ধরবো ইন শা আ’ল্লাহ।

তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে  হবে।

১। জরুরী শিক্ষাদান করা

২। চিন্তা-চেতনা সৃষ্টি করা

৩। সুস্থ বিবেক বুদ্ধি বা মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা

 জরুরী শিক্ষাদান করা

শৈশবের প্রথম স্তরেই শিক্ষা দিতে হবে কারন এসময় মন নরম ও পরিষ্কার থাকে ও স্মরন শক্তি বেশী থাকে এবং শিক্ষা তৎপরতা কার্যকর হয়।

ইবনে খালদুন বলেছেন–সমগ্র সিলেবাসে কোর’আন শিক্ষাকে মৌ্লিক স্থান দিতে হবে। কেননা এটা হচ্ছে দ্বীনের নিদর্শন ও পরিচিতি। এর মাধ্যমে অন্তরে ঈমান মজবুত হয়।

যে শিক্ষাটুকু ব্যক্তির নিজের আত্মা বিবেক শরীর ও চরিত্র গঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট ততটুকু শিক্ষা গ্রহন ফরজে আইন ।

খলীফা উমর(রা) গভর্ণরদের কাছে চিঠি দিয়ে নির্দেশ দেন-তারা যেন নিজ সন্তানদের সাঁতার ও ঘোড় দৌড় শিক্ষা দেন এবং তাদের কাছে উত্তম উপমা ও সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করান।

ইবনে সিনা তার রাজনীতি বইতে বলেছেন-শারীরিক ও বুদ্ধির যোগ্যতা লাভ করার সাথে সাথে তাদেরকে কোর’আন শিক্ষা, অক্ষরজ্ঞান, পড়া ও লেখা শিক্ষা দিতে হবে। তারপর দ্বীনি মাসলা ও কবিতা শিক্ষা দিতে হবে।

খলীফা হিশাম বিন আব্দুল মালেক নিজ সন্তানের শিক্ষককে বলেন-তিনি যেন সন্তানকে কোর’আন, ভালো কবিতা, বক্তৃতা, যুদ্ধের ইতিহাস, নৈ্তিক চরিত্র এবং লোকদের সাথে মেলা-মেশা শিক্ষা দেন।

আজ বড় বেশী অভাব একজন ভালো শিক্ষকের, মানগত শিক্ষার এবং শিক্ষার পরিবেশের, আমাদের সন্তানদের সিলেবাস এমনভাবে তৈ্রী হয়ে আছে যে তারা বইয়ের বাইরে যেতে পারে না আবার বই থেকেও জীবন গড়ার পথ পুরুটা পায় না। তাই আপনাকে আমাকে পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে আদর মাখা হাত নিয়ে সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে। তাদের গড়ে দিতে হবে নবীর(সঃ) উপযুক্ত ধারক করে। তাই নিজে একটা সিলেবাস তৈরী করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠা্নের পাশাপাশি রুটিন মাফিক সেই শিক্ষাকে আত্মস্থ করানোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে, তবে সবচেয়ে ভালো হতো যদি সেইরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুযোগ করা যা আদর্শবাদী হিসেবে গড়ে দিবে।

https://www.youtube.com/watch?v=DWf2lOoggIQ

 

 চিন্তা-চেতনা সৃষ্টি করা

শিশুকে শেখাতে হবে যে ইসলামে দ্বীন ও দুনিয়া উভয়টিই রয়েছে। কোর’আন ও হাদীস হলো জীবন ব্যবস্থা ও আইন। ইসলামের রয়েছে সম্মানজনক ইতিহাস। আত্মা ও চিন্তার খোরাকের জন্য রয়েছে সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা। ইসলামী দাওয়াত ও সংশোধনের জন্য রয়েছে সংঘবদ্ধ জীবন-যাপনের শিক্ষা।

তাকে জানাতে হবে—

ইসলাম চিরন্তন-যা সকল স্থান ও কালের জন্য প্রযোজ্য। স্থায়ী, সৃজনশীল ও অব্যাহত দ্বীন।

ইতিহাস থেকে বলা যে, যে সম্মান, শক্তি ও সত্যতা লাভ করেছে মুসলিম জাতি তার পিছনে ইসলামের আদর্শ ও কোর’আনের আইন ছিল অন্যতম।

যুগে যুগে এটাও সত্য যে, সত্য পথে থাকার ফলে শত্রুরা কিভাবে পরিকল্পনা করেছে সত্য পথ ধ্বংস করার জন্য এবং মহান আল্লাহতা’আলা কিভাবে মুমিন ব্যক্তিকে সাহায্য ও মর্যাদা দিয়েছেন।

চিন্তার খোরাক এর জন্য প্রয়োজন—

১।    চিন্তামূলক জ্ঞানদান করা—ইসলামই একমাত্র শাশ্বত ও চিরন্তন,এখানেই ইজ্জত-সম্মান, কোর’আনের শিক্ষা ছাড়া কোন সাহায্য নেই, নবী(সঃ) এর শরীয়ত ছাড়া কোন শক্তি অর্জন, সভ্যতাসৃষ্টি ও জাগরন সম্ভব নয়। ইসলামী সভ্যতার জ্ঞান সন্তানকে দিতে হবে।

২।    দৃষ্টান্ত স্থাপন করা—বর্তমানে উপস্থিত আদর্শময়ী ব্যক্তিত্বকে সামনে আনা ও তাঁর সংস্পর্শে দেয়া।

৩।    চিন্তামূলক অধ্যয়ন—ছোট হলেও বয়স অনুযায়ী ব্যক্তিগত লাইব্রেরী গড়ে দেয়া-যেখানে বই এর                      পাশাপাশি ইসলাম সম্পর্কিত ম্যাগাজিন ও পত্র-পত্রিকা রাখা। সেখানে সংবাদ, বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও আকর্ষনীয় বিষয়ভিত্তিক আলোচনার আয়োজন রাখা।

এছাড়া কম্পিউটারের মাধ্যমে কিভাবে ইসলামকে আরো সুন্দর ও বিজ্ঞান সম্মত দিক গুলো তুলে ধরা যায় তার একটা গাইডলাইন দেয়া।

৪। জ্ঞানী, নেক সাথী নির্বাচন করে দেয়া।

বন্ধু কেবল ভালো, বিনীত নামাজী শিক্ষিত ও প্রতিভাবান হলে চলবেনা একই সময় তার মধ্যে যোগ্যতা তাকওয়া এবং বিবেকের পরিপক্কতা থাকতে হবে। তাহলে আপনার সন্তানটিও গড়ে নেবে নিজেকে ইন শা’ আল্লাহ।

 

৩। সুস্থ বিবেক বুদ্ধি বা মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা

মানসিক গঠনের লক্ষ্য হলো সন্তানের বুদ্ধি-বিবেক সৃষ্টি্র পর তাকে সাহস, হিম্মত, বীরত্ব, পূর্ণতার অনুভূতি সৃষ্টি, অন্যের কল্যান কামনা, রাগের সময় সংযমসহ সকল মানসিক ও চারিত্রিক মর্যাদা বৈশিষ্ট্য শিক্ষা দেয়া, যেন তার ভারসাম্যপুর্ণ ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হলে অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্য উত্তম ও যথার্থ উপায়ে আঞ্জাম দিতে পারে।

সন্তান লালন-পালনকারী ও শিক্ষকের কাছে আল্লাহর দেয়া আমানত, তাই অভিভাবকের প্রয়োজন সম্মান ও মর্যাদা এবং ব্যক্তিত্ব বিধ্বংসী উপাদান থেকে সন্তানকে মুক্ত রাখা। যা থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন-

১। লজ্জার সংকোচ ২। ভয়-ভীতি ৩। ঘাটতির অনুভুতি ৪। হিংসা ৫। রাগ-ক্রোধ

 

সংকোচ—এটি লজ্জার একটি অংশ।

এক বছরের শিশু – মুখ ফিরিয়ে বা চোখ বন্ধ করে বা মুখ ঢেকে রেখে অপরিচিত লোক বা জায়গায় গেলে সংকোচের এই রকম প্রকাশ দেখা যায়। এটা দূর করলে মনে আস্থার ভাব আসবে। সদা সত্য কথা বলার জন্য এগিয়ে যাবে এবং নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় পাবে না, সাহস ও হিম্মত তৈ্রী হবে।

তাই শিশুদেরকে লোকের সাথে মেশার অভ্যাস করাতে হবে।

বন্ধু-বান্ধবকে ঘরে ডাকা যায় কিংবা পিতা-মাতাই শিশুদেরকে সাথে নিয়ে বন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ করানো। এছাড়া নম্রতার সাথে শিশুদের কাছে ডেকে অন্যদের সাথে কথা বলানো।

সংকোচ ও লজ্জার মধ্যে পার্থক্য হলো-  সংকোচ হলো অনাগ্রহ ও পিছুটান ভাব। লজ্জা হলো মর্যাদা ও সম্মানের পদ্ধতি এবং ইসলামের আদব ও শিষ্টাচার। মন্দ-গুনাহর কাজে লজ্জা-শরম শেখাতে হবে।

রাসূল(সঃ) বলেছেন-লজ্জার অধিকার আদায় করে আল্লাহর কাছে যথার্থভাবে লজ্জিত হও। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর প্রতি আমাদের লজ্জাবোধ আছে। নবী (সঃ) বলেন, লজ্জা বলতে তা বুঝায়না। আল্লাহর কাছে লজ্জাবোধের মানে হলো “ মাথা-মস্তিষ্কের চিন্তা শক্তি এবং পেটকে হেফাজত করা, মৃত্যু ও ধ্বংসের কথা স্মরন করা এবং পরকালের প্রতি আগ্রহী ব্যক্তি দুনিয়ার সৌন্দর্যকে ত্যাগ করে আখেরাতকে ইহকালের উপর অগ্রাধিকারই আল্লাহর প্রতি যথার্থ লজ্জাবোধ (তিরমিযী)

ইতিহাসের দিকে দেখি—-

খলীফা ওমার বিন আব্দুল আযীযের খেলাফতের প্রথম দিকে অনেক প্রতিনিধি দল আসতে থাকেন তাঁকে অভিনন্দন জানাতে। তখন হেজাজের প্রতিনিধি দলের ১২বছর বয়সের একটি ছেলে এগিয়ে আসলে তিনি বালকটিকে পিছনে যেতে বলেন এবং মুরুব্বীদের আগে আসতে দিতে বলেন। বালকটি জবাব দিলো-হে আমীরুল মোমেনীন আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করুন। ব্যক্তিতো দু’টো ছোট জিনিষের সমষ্টি। অন্তর ও জিহবা। আল্লাহ যদি কাউকে কথা বলার জন্য জিহবা এবং হেফাজতকারী অন্তর দেন, তাহলে সে কথা বলার অধিকারি হয়। যদি বয়সের বিষয়টাই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হতো তাহলে এই আসনে বসার জন্য উম্মাহর মধ্যে আপনার চাইতে অন্য যোগ্য লোক রয়েছে। ওমার (রা) তার কথায় আশ্চর্য হয়ে গেলেন।

একবার খলীফা মামুন লাইব্রেরীতে ঢুকে দেখেন, একটি ছোট বালকের কানে কলম। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তুমি কে? বালকটি বললো, আমি আপনার রাষ্ট্রের একজন বালক, আপনার সুখ-সম্পদের মাঝে ঘুরপাক খাই, আপনার সেবার আগ্রহী, আমার নাম হাসান বিন রাজা। মামুন বালকের সুন্দর উত্তরে অভিভূত হয়ে বললেন, শুরুতেই সুন্দর আচরন বিবেকের শ্রেষ্ঠত্বে্র পরিচায়ক।

এইভাবে সংকোচমুক্ত পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে সন্তান গঠনে –তাদের মাঝে সাহসিকতার অভ্যাস গড়ে উঠে। পূর্বসূরীরা সন্তানদের সাধারন মজলিস ও বড়দের সামনেও সন্তানদের নিয়ে কথা বলাতেন, সাধারন বিষয়ে পরামর্শ নিতেন এবং জ্ঞানী-গুণীদের আসরে শিক্ষামূলক আলোচনায় শরীক করাতেন।

 

ভয়-ভীতি

এটি সকলেরই একটি মানসিক অবস্থার নাম। স্বাভাবিক সীমা অতিক্রম না করলে শিশুদের জন্য উত্তম।

বেশী ভয় মানসিক উৎকণ্ঠা তৈ্রী করে। তখন তাকে মানসিক রোগ বিবেচনা করে চিকিৎসা করতে হয়।

শিশু মনোবিজ্ঞানীদের মতে-প্রথম বছরে আকষ্মিক শব্দ কিংবা হঠাৎ করে কিছু পড়ার শব্দের কারনে শিশুর মধ্যে ভয়-ভীতির লক্ষণ দেখা যায়। ছয় মাসে অপরিচিত দেখলে, তিন বছরে পশু-গাড়ী পানি ও ঢালু জায়গা দেখলে ভয় পায়। সাধারনত মেয়ে শিশু ছেলে শিশু থেকে বেশী ভয় পায়।

তবে বেশী ভয়ের কারন—

১। মা বা পরিবারের কেউ সন্তানকে মৃত ব্যক্তি, অন্ধকার কিংবা অপরিচিত সৃষ্টি সম্পর্কে ভয় দেখালে।

২। শিশুর প্রতি মায়ের অতিরিক্ত অনুভূতি ও উদ্বেগ।

৩। শিশুকে নিঃসঙ্গ লালন-পালন করা।

৪। জিন-ভূতের কল্পকাহিনী বলা বা বই পড়া ।

৫। ভয়ের মুভি দেখা বা দেখানো

এগুলো থেকে বাঁচার জন্য—

১। শিশুকে প্রথম থেকে আল্লাহর উপর ঈমান, ইবাদত এবং সকল ভীতিপ্রদ বিষয়ে আল্লাহর উপর নির্ভরতা শেখাতে হবে। আল্লাহ বলেছেন—

মানুষকে ছোট মনের অধিকারী করে সৃষ্টি করা হয়েছে ৷ বিপদ -মুসিবতে পড়লেই সে ঘাবড়ে যায়,আর যে -ই সচ্ছলতার মুখ দেখে অমনি সে কৃপণতা করতে শুরু করে ৷তবে যারা নামায পড়ে  (তারা এ দোষ থেকে মুক্ত) ৷ যারা নামায আদায়ের ব্যাপারে সবসময় নিষ্ঠাবান ৷

সূরা মায়ারিজ ১৯-২৩

২। শিশুকে স্বাধীনতা দিতে হবে, দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে এবং বিকাশ ও উন্নয়নের পর্যায় মোতাবেক কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

রাসূল(সঃ) বলেছেন-তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্থদের ব্যপারে জবাবদিহী করতে হবে।

৩। ভয় ভীতি না দেখানো- কল্পনার জিনিষ বা অশরীরী জিনের ভয় দেখিয়ে কান্না বা বায়না বন্ধ করার চেষ্টা না করা। এমন বই যেন না পড়ে বা মুভি যেন না দেখে যা ভীতিমূলক এবং অমূলক।

৪। শিশুকে অন্যের সাথে মেলা-মেশা করতে দেয়া।

৫। যে জিনিষটা ভয় পায় সেই বিষয়ে বেশী শিক্ষা দেয়া। যেমন পানি ভয় পেলে একটি পাত্রে পানি দিয়ে খেলতে দেয়া, অন্ধকারকে ভয় পেলে বাতি নিভিয়ে তার সাথে একটু হাসি-তামাশা করা-তাহলে ভয় কেটে যাব।

৬। তার এই ভয় পাওয়াকে নিয়ে রাগ, ঠাট্টা বা উপহাস না করা। বরং যত্ন সহকারে বুঝানোর চেষ্টা করা।

ইতিহাসকে দেখুন—সাহাবা কেরামের সন্তানেরা সাহস, দূর্লভ বীরত্বে অসাধারন ছিলেন। নবুয়্যতের পাঠশালা, মুসলিম পরিবার এবং মোমিন সমাজ ও বীরোচিত সমাজ থেকে যোগ্য শিক্ষা লাভের কারনেই এই অসাধারন ফসল পরিবারে দেখা যায়।

 

ঘাটতির অনূভুতি

শিশুদের মাঝে ঘাটতি বা কমতির অনুভূতি বিভিন্ন কারনে সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে শিশুর মনে জটিলতা বিকৃ্তি কিংবা খারাপ ও অসৎ জীবন যাপন এবং অপরাধ প্রবনতা দেখা দিতে পারে। তাই পিতা-মাতাকে সন্তানের এই সমস্যা দূর করার জন্য প্রতিরক্ষা ও আরোগ্যমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

যে কারনে ঘাটতি বা কমতির অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে—

১।  অপমান ও উপেক্ষা

২।  সীমাতিরিক্ত আদর-সোহাগ ও সাহায্য

৩। সন্তানদের মধ্যে কাউকে অগ্রাধিকার দেয়া।

৪।  শারীরিক পংগুত্ব

৫।  ইয়াতীম অবস্থায় ভালো পরিবেশ না পাওয়া

৬।   অভাব-দারিদ্র

 

১। অপমান ও উপেক্ষা-—-

দেখা যায় সন্তান একবার একটা খারাপ কাজ করে ফেললে মা-বাবা অথবা পরিবারের অন্য কেউ তাকে সে কাজের প্রতি সম্বোধন করে ডাকে। যেমন একবার মিথ্যা কথা বললে তাকে মিথ্যুক বলতে থাকা হয়…। তাকে তার ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের সামনে কিংবা বন্ধুদের ও অপরিচিত লোকের সামনে খারাপ নামে ডাকলে সে অপমান বোধ করে এবং নিজেকে তুচ্ছ হীন জ্ঞান করে। সে ভাবে সবাই তাকে খারাপ জানে ,তখন তার  পালিয়ে বেড়ানোর ইচ্ছা জাগে। সে সুষ্ঠভাবে গড়ে উঠে না।

আবার অনেক পিতা অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে থাকেন। এতেও সন্তানের ভিতরে ভিতরে জেদ গড়ে উঠে এবং সেও একসময় গালি দিতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।

সন্তানের সংশোধনের যথার্থ উপায় হলো—

কোমল ও নরমভাবে তার দোষ ধরিয়ে দেয়া।

আল্লাহতা’আলা ও রাসূলের কথা উদাহরন হিসেবে বলা।

যুক্তি দিয়ে বুঝানো যে, তার এই ত্রুটিতে কেউ খুশি হবে না।

অব্যাহতভাবে অপমান ও কঠোরতা প্রদর্শন করা ঠিক নয়।

যদি তিরস্কার করতে হয় তবে কারো সামনে না করা।

এরপর প্রয়োজন হলে শাস্তির ব্যবস্থা করা।

রাসূল(সঃ) বলেছেন-নিশ্চয়ই আলাহ বিনম্র, তিনি সকল বিষয়ে নমনীয়তাকে ভালোবাসেন।–বোখারীও মুসলিম

রাসূল(সঃ) বলেছেন বলেছেন-যে ব্যক্তি নমনীয়তা থেকে বঞ্চিত, সে সকল কল্যান থেকে বঞ্চিত।–মুসলিম

তাই সন্তানের সংশোধনের সর্বোত্তম উপায় হলো কোমল ও নরমভাবে তাকে সংশোধন করা।

https://www.youtube.com/watch?v=3n-

https://www.youtube.com/watch?v=jx2YyANtE_g

 

২। সীমাতিরিক্ত আদর-সোহাগ ও সাহায্য-এর ফলে তার মধ্যে স্বভাবতই লজ্জা জাগে, বীরত্ব লোপ পায়, আত্মবিশ্বাস দূর্বল হয়, পিছুটান ভাব দেখা যায়।

দেখা যায়-মা সন্তানকে এক নিমেষের জন্য চোখের আড়ালে যেতে দেন না-এটা ঠিক নয়।

সন্তান ঘরের আসবাব-পত্র ভাঙলে, টেবিলে উঠলে কিংবা দেয়ালে দাগ দিলে বুঝিয়ে সংশোধন  করে না।

দীর্ঘদিন পর সন্তান লাভ, মেয়ে সন্তানের অনেক পর ছেলে সন্তান লাভ, অসুখ থেকে আরোগ্য লাভ ইত্যাদি কারনে আদর-কদরের মাত্রাতিরিক্ত করে ফেলেন। তাই করনীয়—

  • মাতা-পিতার মনে তকদীরের বিশ্বাসকে বদ্ধমূল করে নিতে হবে-

আল্লাহতা’আলা বলেছেন

তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র ও কন্যা উভয়টিই দেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন ৷ তিনি সব কিছু জানেন এবং সবকিছু করতে সক্ষম ৷ সূরা শুরা-৫০

পৃথিবীতে এবং তোমাদের নিজেদের ওপর যেসব মুসিবত আসে তার একটিও এমন নয় যে, তাকে আমি সৃষ্টি করার পূর্বে একটি গ্রন্থে লিখে রাখিনি ৷ এমনটি করা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ কাজ ৷ (এ সবই এজন্য) যাতে যে ক্ষতিই তোমাদের হয়ে থাকুক তাতে তোমরা মনক্ষুন্ন না হও ৷ আর আল্লাহ তোমাদের যা দান করেছেন ৷ সেজন্য গর্বিত না হও ৷ যারা নিজেরা নিজেদের বড় মনে করে এবং অহংকার করে, নিজেরাও কৃপণতা করে এবং মানুষকেও কৃপণতা করতে উৎসাহ দেয় আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না ৷-হাদীদ ২২-২৪

আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো ৷ এ অবস্থায় যারা সবর করে এবং যখনই কোন বিপদ আসে বলেঃ “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে, তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও ৷তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের ওপর বিপুল অনুগ্রহ বর্ষিত হবে, তাঁর রহমত তাদেরকে ছায়াদান করবে এবং এই ধরনের লোকরাই হয় সত্যানুসারী ৷  সূরা বাকারা -১৫৫-১৫৭

  • এছাড়া ক্রমান্বয়ে সন্তানকে আদব শিক্ষা দিতে হবে-

উপদেশ নসীহত দিয়ে কাজ হলে বয়কট করা পিতা-মাতার জন্য জায়েয নেই। আর যদি বয়কটে কাজ হয় তবে মার দেয়া জায়েয নেই, এরপর ও যদি না হয় তবে হালকা মার দিতে পারেন।

  • শৈশব থেকে প্রাচুর্যের মধ্যে গড়ে না তোলা, আত্মবিশ্বাস জন্মানো, দায়িত্ম পালনের যোগ্যতা ও হিম্মত সৃষ্টি করা।

রাসূল(সঃ) বলেছেন তোমরা প্রাচুর্য ও ভোগ-বিলাস থেকে দূরে থাকো। আল্লাহর নেক বান্দাহগন প্রাচুর্য ও ভোগ-বিলাসের মধ্যে ডুবে থাকে না।–মুসনাদে আহমাদ

       ৩।সন্তানদের মধ্যে কাউকে অগ্রাধিকার দেয়া—

অনেক পিতা-মাতা ইচ্ছে বা অনিচ্ছায় এটা করে থাকেন। চাই সেটা কোন কিছু দান করা হোক, লেন-দেন হোক এবং ভালবাসা যাই হোক না কেন। ফলে সন্তানের মাঝে হিংসা ও ঘৃণা সৃষ্টি হয়, ভয় ও লজ্জা দেখা দেয়, কান্না কাটি করে, আক্রমন ও বেয়াদবী করে এবং ঝগড়া সৃষ্টি হয়–যা রাত্রি ভয়, স্নায়ুর অসুখ এবং মনে কমতি ও ঘাটতির অনুভুতি সৃষ্টি করে। তাই মানবতার প্রধান শিক্ষক মহানবী(সঃ) মাতা-পিতাকে আল্লাহভীতি ও সন্তানের মাঝে সাম্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা্র নির্দেশ দেন।

নোমান বিন বাশীর থেকে বর্ণিত। বাশীর নিজ ছেলে নোমানকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ(সঃ)এর কাছে এসে বললেন-আমি আমার এই ছেলেকে দান করেছি। রাসূল(সঃ) বলেন-তুমি তোমার অন্য সকল সন্তানকে অনুরুপ দান করেছো? বাশীর বলেন, না। রাসূল(সঃ) বলেন, তাহলে এই দান প্রত্যাহার কর।—বোখারী ও মুসলিম

অনেক কারনেই ভালবাসার কমতি করেন যা অন্যায়। কারো কম বুদ্ধি/ কম সুন্দর/অনাকাংখিত হলে শারীরিক সমস্যা থাকলে ইত্যাদি। তবে পিতা-মাতাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহীর অনুভূতি নিয়েই সন্তানদের সাথে সমান ব্যবহার করতে হবে। অনেকে ছেলে সন্তানকে মেয়ে সন্তানের তুলনায় অনেক সুবিধা দিয়ে থাকেন যা অন্যায়।

শারীরিক পংগুত্ব/ ইয়াতীম অবস্থায় ভালো পরিবেশ না পাওয়া/  অভাব-দারিদ্র—এই সব অবস্থাগুলো ইসলামের শিক্ষায় আচরন করলে সকল ঘাটতি বা ভারসাম্যহীন পরিবেশ থেকে সন্তানকে মুক্ত রেখে পরিবারকে সুন্দর করা যায়।

রাসূল(সঃ) বলেছেন-তোমার ভাইএর প্রতি বিদ্বেষ পোষন ও প্রকাশ করোনা, তাহলে আল্লাহ তাকে দয়া করবেন এবং তোমাকে পরীক্ষায় নিমজ্জিত করবেন।–তিরমিযী

আমি ও ইয়াতীমের দায়িত্ব পালনকারী জান্নাতে একসাথে থাকবো। একথা বলে তিনি নিজের তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের প্রতি ইঙ্গিত দেন।–তিরমিযী

হে ঈমানদারগণ, পুরুষরা যেন অন্য পুরুষদের বিদ্রূপ না করে ৷ হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম ৷ আর মহিলারাও যেন অন্য মহিলাদের বিদ্রূপ না করে ৷ হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম ৷ তোমরা একে অপরকে বিদ্রূপ করো না ৷ এবং পরস্পরকে খারাপ নামে ডেকো না ৷ ঈমান গ্রহণের পর গোনাহর কাজে প্রসিদ্ধ লাভ করা অত্যন্ত জঘন্য ব্যাপার ৷ যারা এ আচরণ পরিত্যাগ করেনি তারাই জালেম ৷সুরা হুজুরাত-১১

নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আকৃতি ও দেহ দেখেন না বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।–মুসলিম

https://www.youtube.com/watch?v=_57ZTxPRKHQ

৪। হিংসা

এই বিষয়টি শুধু সন্তান নয় আমাদের মা-বাবাদের জন্য অনেক বেশী জরুরী।

হিংসা হলো অন্যের নেয়ামত দূর হবার কামনা করা। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক বিষয়।সময় থাকতে এটা দূর করতে না পারলে শিশুর জন্য এটা ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াবে।

বিভিন্ন কারনে হিংসা জাগ্রত হতে পারে শিশুর মনে। যেমন—

  • কোন কারনে শিশু আশংকা করে যে পরিবারে তার সুবিধা বা আবেগ লোপ পায় বিশেষ করে পরিবারে নতুন কোন সন্তান জন্মের পর।
  • সন্তানের মাঝে কাউকে মেধাবী ও কাউকে বোকা বললে।
  • এক সন্তানের তুলনায় অন্য সন্তানকে প্রাধান্য দিলে।
  • আদরের সন্তানকে অন্যায় করলে ক্ষমার নীতি দেখানো এবং অন্য সন্তানের বেলায় শাস্তি দেয়া
  • ধনী সমাজ বা পরিবেশে গরীব ও অভাবী সন্তানের অবস্থান …।

তাই হিংসা যেন সৃষ্টি না হয় সেজন্য ইসলাম সন্তানকে ভালোবাসা, আদর-স্নেহ,সহযোগীতা ও আবেগ-অনুভূতি দিয়ে গড়েতোলার উপর গুরুত্ব দিয়েছে। যেমন-

–সন্তানকে বুঝতে দিতে হবে যে সে আদরের সন্তান।

রাসূল(সঃ) হাসান, হোসাইনের সাথে হাস্যরস করতেন। তারা তাঁর হাত ও হাঁটুর মধ্যে হাটতো এবং তাঁর সাথে ছিলো তাদের নিবিড় সম্পর্ক। তিনি তাদের পিঠে আরোহন করিয়ে বলতেন-তোমাদের উটটি কতোইনা উত্তম এবং তোমাদের কতোইনা উত্তম সহোদর।–তিরমিযী

—নবজাতকের আগমনে বড় সন্তানটির আদর একটুও কমেনি।

সন্তানের সাথে ইনসাফপূর্ণ আচরন করা।

সব সন্তানের মেধা একরকম হয় না। তাই মা-বাবার জিহবাকে সংযত রাখতে হবে যেন সন্তানকে কোন কটু কথা না বলা হয় অন্য সন্তানের তুলনায়।

সন্তানকে বুঝাতে হবে আদর দিয়ে ।

রাসুল(সঃ) বলেছেন- তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাকো। আগুন যেভাবে কাঠকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসা নেক আমলকে খেয়ে ফেলে। আবু দাউদ

আজকাল আরেকটি জিনিষ দেখা যায় –পড়া-শুনা নিয়ে অনেক পিতা-মাতাই সন্তানের মাঝে হিংসার বীজ বপন করে দেন। তাতে সন্তান এইভাবে বড় হলে বড় হয়েও এই স্বভাব থেকে বের হতে পারে না।

যেমন-স্কুলের খাতা বা নোট অন্য বন্ধু নিতে চাইলে সন্তানটি দিতে চাইলেও অভিভাবকরা শিখিয়ে দেন যে খাতা দিবে না তাতে ও ভালো নাম্বার পেয়ে যাবে।

অথচ এর মাধ্যমে নিজের সন্তানের জীবনের কত বড় ক্ষতি করছেন তা পিতা-মাতা বুঝতে পারছেন না। স্কুলের রেজাল্ট ভালো হওয়াটা যেমন প্রয়োজন তেমনি মনষ্যত্ববোধ জাগানো আরো বেশী জরুরী। প্রতিটা বছরেই দিনে দিনে সন্তান অনেক সামাজিকতা শিখে থাকে স্কুলের পরিবেশ থেকে, জীবনের ছোট ছোট কষ্ট ও জটিল অবস্থায় ধৈর্য্য ধারন করা, মেজাজের ভারসাম্য রক্ষা করা শেখান যায় যদি মা-বাবা বিশেষ করে মা এসব ব্যপারগুলো সেইভাবে উপস্থাপন করতে পারেন সন্তানের কাছে।

আরেকটি জিনিষ যা পিতা-মাতা সন্তানের মনে হিংসা আনায় তা হলো—দেখা যায় নিজেদের কোন আত্মীয় ধনী অবস্থা আছে, তখন বাবা-মা ই হিংসামূলক আচরন বা কথা বার্তা বলে সন্তানের মনে ঢুকিয়ে দেন, অথবা সন্তান যখন সেই আত্মিয়ের ব্যপারে হিংসামূলক কথা বলে বা আচরনে প্রকাশ পায় তখন বাবা-মা তাকে সংশোধন করে না বলে পরবর্তীতে তা মারাত্মক রুপ নেয়।

দুনিয়ার জীবন বড়ই ক্ষনস্থায়ী, এখানে যার জন্য যতটুকু বরাদ্য রিযিক(সব ধরনের নি’আমত) তা সে পাবে ইনশা’আল্লাহ, তাতে নিজের আমল নষ্ট তথা আখেরাতের জীবন ক্ষতিগ্রস্থ করার মত আচরন করে নিজের দুনিয়ার জীবনটাও বিষোধগার বানানোতে নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই না।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।

https://www.youtube.com/watch?v=sPwXkEN1X0w

https://www.youtube.com/watch?v=lWR5Ca4gDXI

৫। রাগ-ক্রোধ

রাগ আল্লাহরই দেয়া সুপ্ত আবেগ যা মানুষকে উপকারী হিসেবে ব্যবহার করার জন্য দিয়েছেন। এটা না থাকলে মানুষ আল্লাহর নিষিদ্ধ সীমানা লঙ্ঘন, তার দ্বীনের অপমান এবং নিজ দেশের উপর আক্রমন প্রতিহত করার জন্য উত্তেজিত ও উৎসাহিত হতো না।

আল্লাহর নির্দিষ্ট দন্ডবিধি জারি না করার জন্য যখন একজন সুপারিশ করতে আসলো, তখন তাঁর চেহারা মোবারকে রাগের লক্ষণ ফুটে উঠলো।তখন তিনি বললেন-“তোমাদের আগে তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে যাদের সম্ভ্রান্ত লোকেরা চুরি করলে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হতো, আর দুর্বল লোকেরা চুরি করলে তাদের উপর কত দন্ড-বিধি জারি করা হতো। আল্লাহর কসম, যদি ফাতেমা বিনতে মোহাম্মদও চুরি করে, তাহলে আমি তার হাত কেটে দেবো।–বুখারী

রাসূল(সঃ) প্রশ্ন করেন—তোমরা কুস্তি বীর বলতে কী বোঝ ? তাঁরা বলেন, যে কুস্তিতে অন্যকে পরাজিত করে সেই বীর। নবী(সঃ) বলেন,না। সেই সত্যিকারের বীর যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে।–বোখারী ও মুসলিম

দৌড়ে চলো তোমাদের রবের ক্ষমার পথে এবং সেই পথে যা পৃথিবী ও আকাশের সমান প্রশস্ত জান্নাতের দিকে চলে গেছে, যা এমন সব আল্লাহভীরু লোকদের জন্য তৈরী করা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ –ক্রটি মাফ করে দেয় ৷ এ ধরনের সৎলোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন ৷(আল ইমরান-১৩৩-১৩৪)

মন্দ রাগ ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব , বিবেক ও ভারসাম্য নষ্ট করে, সমাজের শান্তি ও ঐক্য নষ্ট করে দেয়। একটি শিশু পরিবার থেকেই দেখে এবং শেখে রাগ করার ও রাগ প্রকাশের ধরন।

পরিবারে স্বামীও স্ত্রীতে ঝগড়া এর একপর্যায়ে আক্রমনাত্মক কথা ও অশ্লীল গালি গালাজ বা বংশীয় উদাহরন দিয়ে কষ্ট দেয়া এমনকি অনেক শিক্ষিত পরিবারেও হাতা হাতি পর্যন্ত দেখা যায়-যা একটি কঁচি শিশুর মনে ছায়া ফেলে। সে ভালো মন্দ কিছুই বোঝে না ,শুধু বোঝে বাবা-মা এইরকম করে তাহলে আমিও রাগ হলে করবো। দেখা যায় সেই শিশুটির রাগের প্রকাশ এইভাবেই করতে চায়।

আরেকভাবে সন্তান শিখে –তা হলো মিডিয়াতে সিরিয়াল নাটক ছবি দেখে-যা সে নিজের জীবনের সাথে মিলাতে চায়।তাই অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সন্তান রাগ হলে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঘরে অনেকক্ষন থাকে , এমনকি ঘুমের ঔষধ খেয়ে ফেলে যা পরিবারের জন্য দুঃখজনক।

তাই মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে। ছোটবেলা থেকেই মন্দ রাগ থেকে বেঁচে থাকার উপায় শেখাতে হবে এবং দেখাতে হবে।

১। রাগ সৃষ্টির পেছনে যে সকল উপাদান দায়ী সেগুলোকে আগে নিয়ন্ত্রন করতে হবে।

তারপর—

২। অবস্থার পরিবর্তন করা—রাসূল(সঃ) বলেন, তোমাদের কেউ রাগ করলে, দাঁড়ানো থাকলে বসে পড়বে। যদি তাতে রাগ চলে যায় ভালো, না হয় শুয়ে পড়বে।–মোসনাদে আহমাদ

৩। অজু করা—রাগের সৃষ্টি শয়তান থেকে, আর শয়তানের সৃষ্টি আগুন থেকে। আগুন পানি দিয়ে নেভানো। তোমাদের কেউ রাগ করলে সে যেন অজু করে।–আবু দাউদ

৪। চুপ করে থাকা—তোমাদের কারো রাগ দেখা দিলে সে যেন চুপ করে থাকে–মোসনাদে আহমাদ

৫। শয়তান থেকে পানাহ চাওয়া—নবী(সঃ) বলেন-আমি এমন একটি বাক্য জানি যা বললে ব্যক্তির রাগ চলে যাবে। আর তা হলো, আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইতোয়ানির রাজীম।–বোখার ও মুসলিম

আমাদের পিতা-মাতাদের প্রথম আদর্শ হিসেবে শেখাতে হবে। স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে সম্মানমূলক, ভালোবাসা ও ভদ্রতা আচরন সন্তানকে সহজভাবে মানুষ হতে সাহায্য করে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।

 

https://www.youtube.com/watch?v=DHX0NShsywM

https://www.youtube.com/watch?v=Ej8qvhydHHk