রাসূল(সঃ) বলেছেন—মানুষ তার বন্ধুর ধ্যান-ধারনার অনুসারী হয়ে থাকে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকেই লক্ষ্য রাখবে সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে।–আত-তিরমিযী—যুহদ-২৩১৯
আপনারা সবাই আমার সাথে একমত হবেন যে ছেলে-মেয়েরা খুব বেশী বন্ধু-বান্ধবমুখী হয়ে যাচ্ছে আজকাল। এটা অনেকটা আমাদের পরিবারের পরিবেশও দায়ী। আমরা সন্তানকে সুন্দর পরিবেশ দিলে সন্তানরা পরিবারে থাকা বেশী আনন্দ অনুভব করবে। তবে বন্ধুত্ব অবশ্যই থাকতে হবে। সেই বন্ধু হবে দীনের পথে বা আখেরাতের পথের জান্নাতে যাওয়ার সহায়ক বন্ধু। আর সেই জন্য সন্তানের মাঝে আপনাকে সেই বুঝ দিতে হবে বন্ধুত্ব করতে হলে কাকে বেছে নিবে। সবার সাথে মিশতে হবে তবে সবার চিন্তা ধারাকে অনুসরন করা যাবে না। মাঝে মাঝে আপনাকে যাচাই করতে হবে সেই বন্ধুটি কেমন যার সাথে আপনার ছেলে বা মেয়েটি বেশী সময় ব্যয় করছে। অনেক সময় আপনি ইচ্ছে করলে তাদের সবার জন্য আপনার বাসায় একটি ছোট্ট পার্টি দিন এবং তাতে ওদের দিয়ে একটু কোর’আনের আলোচনা বা বিষয় ভিত্তিক আলোচনা বা সাধারন প্রতিযোগীতা করান ও মজার খাবার ও খেলাধুলার সুযোগ করে দিন।
এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার ছেলে বা মেয়েকে বুঝাতে হবে যেন ছেলে মেয়েতে কোন বন্ধুত্ব শুরু না হয়ে যায় তাতে প্রগতির নামে বেপর্দা ভাবে চলার ও অশালীন কিছু হয়ে যাবার সম্ভাবনা দেখা যাবে। তাই ইসলামের পর্দার বিধান আপনার ছেলে-মেয়েকে শিক্ষা দিন। অনেক মা বাবারা ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বকে ভাল মনে করেন এবং এদের মধ্যে যোগাযোগটাকে সহজ করে দেন। কিন্তু দেখা যায় পরে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। তাই ইসলামের নিয়মের বাইরে চলার পরিনতি সন্তানকে এখনই বুঝিয়ে দিন।
আবার অনেক মা-বাবারা ব্যস্ত থাকায় সন্তানের অবসর সময় কিভাবে কাটছে খোঁজই নিতে পারেন না, ফলে অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় খারাপ বন্ধুদের সহযোগীতায় ড্রাগে আসক্ত, সিগারেট বা প্রেম এ জাতীয় জীবন ধ্বংসকারী কাজে লিপ্ত হয়ে যায়।
তাই আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে সন্তানের দায়িত্ব পালন না করলে মহান আল্লাহর কাছে আমাদের অবশ্যই জবাবদিহীতে আটকে যেতে হবে এবং এই সন্তানেরাও হাসরের ভয়ানক সময়ে আমাদের আটকে দেবে জান্নাতে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে এই বলে যে– দুনিয়ার জীবনে আমার বাবা-মা আমাকে শিক্ষা দেয় নাই বা আমাকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে নাই—–। আর সন্তান ভালোভাবে গড়ে না উঠলে সেই পরিবারতো দুনিয়াতেই ভয়ানক অশান্তির হয়ে যায়।
আল্লাহ আমাদের পরিবারগুলোকে শান্তিময় করে দিন-আমীন
https://www.youtube.com/watch?v=YU87qBdkMVU
কন্যা সন্তানের বেলায় আরেকটু যত্নশীল হতে হবে।
রাসূল(সঃ) বলেছেন—
যে ব্যক্তি দু’টি কন্যা সন্তান লালন-পালন করবে, আমি এবং সে একত্রে এভাবে পাশাপাশি বেহেশতে প্রবেশ করব। এই বলে তিনি নিজের হাতের দু’টি আংগুল একত্র করে ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন।–তিরমিযী—আবওয়াবুল বিরর ওয়াস-সিলাহ-১৮৬৩
যে ব্যক্তি তার কন্যা সন্তানদের কারনে কোনরুপ পরীক্ষার সম্মুখীন হয় ( বিপদগ্রস্ত হয় ) , সে তাদের ব্যপারে ধৈর্য্য ধারন করলে তারা তার জন্য দোযখ থেকে আবরন ( প্রতিবন্ধক) হবে।–তিরমিযী—আবওয়াবুল বিরর ওয়াস-সিলাহ-১৮৬৩
এখানে লালন-পালন করাটা হতে হবে মহান আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী ও রাসূলের (সঃ) দেখানো পদ্ধতিতে।
আমরা অনেকেই মেয়ে সন্তান ছোট থাকা অবস্থায় তেমন একটা খেয়াল রাখি না। কিন্তু দেখা যায় অনেকের ছোটবেলার তিক্ত ঘটনা যা একটি মেয়েকে মানসিকভাবে যন্ত্রনা দিয়ে থাকে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মানসিক ভারসাম্য থাকে না।
তাই আজ কিছু দিক তুলে ধরলাম যা আপনার আমার প্রত্যেকের সাবধান হওয়া প্রয়োজন।
- চারিত্রিক দিক আমরা অনেকের সম্পর্কে জানি না। তাই গাড়ীর চালকের সাথে একা কোথাও যেতে না দেয়া (যা ইসলামে শরিয়ত সম্মত নহে)।
- বাসায় একা বড় কাজের ছেলের সাথে রেখে না যাওয়া।
- গৃহ শিক্ষকের বা ধর্মীয় শিক্ষকের কাছে একা ঘরে পড়তে না দেয়া।
- পুরুষ আত্মীয় (মাহরাম ছাড়া)বা অনাত্মীয়ের সাথে একা ঘরে বা বাইরে ছেড়ে না দেয়া।এমনকি নিজ চাচা, মামাদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকা ভালো।
- ছুটিতে একা কোন আত্মিয়ের বাসায় রাত যাপন করতে না দেয়া (দায়িত্বশীল অভিভাবক ছাড়া)
- নিজের বাবা-ভাইদের সামনেও সতর ও শালীনতা রক্ষার শিক্ষা দেয়া।
- অনেক সময় মাহরাম আত্মীয় দ্বারাও অনেক অবুঝ মেয়ে সন্তান শারীরিক অপমানিত হয় যা অনেকসময় সেই মেয়েটি কাঊকে বলতেও পারে না আবার মানসিক কষ্টে ভুগতে থাকে-তাই এই ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার।
- স্কুলে কোন পুরুষ শিক্ষকের রুমে বা বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হলে সাথে একজন বান্ধবী নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দেয়া।
আজকের আমাদের সমাজে যে নৈতিক অবক্ষয় চলছে তাতে সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই ইসলামের শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি আমল করার বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
আল্লাহ আমাদের পরিবার ও সমাজকে হেফাজত করুন-আমীন
https://www.youtube.com/watch?v=0vRY_frjdfU
https://www.youtube.com/watch?v=g7eFzUFqD6k