শাস্তি দেয়ার ব্যপারে ইসলামের দৃষ্টিকোন কিছুটা আলোচনা করবো। কারন অনেক পিতা মাতাই সন্তানকে এমন শাসন করেন যা অকল্যান ডেকে আনে।
ইসলামী শরীয়ত মানুষের মৌ্লিক প্রয়োজনগুলোর হেফাজতের চেষ্টা করে। ইজতেহাদকারী ইমাম ও ফেকাহবিদদের মতে তা হলো-
১। দ্বীন ২। জান ৩।মাল ৪।ইজ্জত-সম্মান ৫। বিবেক-বুদ্ধির হেফাজত
ইসলামের শিক্ষাই হলো এইগুলোর হেফাজত করা। তাই এইগুলোর উপর কোন আঘাত আসলে তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
এই শাস্তি দু প্রকার।
১। দণ্ডবিধি ও ২। অনির্ধারিত শাস্তি
আমি অনির্ধারিত শাস্তি যা আল্লাহ কিংবা মানুষের হকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা তুলে ধরবো ইন শা’ আল্লাহ।
এটা এমন সব গুনাহ বা অপরাধের শাস্তি যার বিপরীতে দণ্ড কিংবা কাফফারা নির্দিষ্ট নেই। যেমন ভয় তিরস্কার ও সংশোধনমূলক শাস্তি।
বাসা ও বিদ্যালয়ে যে শাস্তি প্রয়োগ করা হয় তা একটু ভিন্নধর্মী।
সন্তানের ব্যপারে যা করা যাতে পারে তা হলো—
১। নম্র ও দয়ালু ব্যবহার—সন্তান স্নেহ ও যত্নের আধার। নবী(সঃ) সুন্দর উদাহরন দেখিয়েছেন।
নমনীয়তা গ্রহন কর এবং কঠোরতা ও অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাক।–বুখারী শরীফ
তোমরা সহজতর পদ্ধতি অবলম্বন কর। কঠোরতা নয়, শিক্ষা দাও, ভাগিয়ে দিও না।–মুসলিম শরীফ
২। শাস্তিদানের সময় ত্রুটিকারী শিশুর স্বভাব বিবেচনায় রাখতে হবে—বুদ্ধিমত্তা, নমনিয়তা ও সাড়াদানের ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মন-মেজাজও বিভিন্ন ধরনের হয়। এইগুলো অনেক সময় উত্তরাধিকার,পরিবেশ ও গঠন প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। ইবনে খালদুন তাঁর ‘আল মোকদ্দমা’ বইতে লিখেছেন –অতিমাত্রায় কঠোরতা সন্তানকে ভীরু ও কাপুরুষ বানায় এবং জীবনে দায়-দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বেড়াতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় বরং অলসতা, মিথ্যা ও ধোঁকাবাজীর দিকেও ঠেলে দেয়।
তাই অত্যন্ত হেকমতের সাথে সন্তানকে শাস্তি দিতে হবে এবং সবপ্রচেষ্টার পরই শাস্তি দেয়া যেতে পারে।
https://www.youtube.com/watch?v=9mcd3NEjtSQ
https://www.youtube.com/watch?v=Jg48AtwcG38
বাসা ও বিদ্যালয়ে যে শাস্তি প্রয়োগ করা হয় তা একটু ভিন্নধর্মী
৩। ক্রমাণ্বয়ে হালকা থেকে কঠোর পর্যায় গমন—অর্থাৎ সমস্যা সমাধানের আরো কিছু ধাপ আছে। সেগুলো অতিক্রম করা দরকার। কিছু ছোট ক্ষতির আশংকায় ডাক্তার যদি রোগীর আসল রোগের চিকিৎসা না করেন তবে জীবনের ঝুঁকি চলে আসতে পারে , তেমনি সন্তান গঠন করার ক্ষেত্রে উপযোগী সংশোধন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। তাই সন্তানের বয়স, সংস্কৃতি ও পরিবেশকে বিবেচনায় রাখতে হবে।
মারের কিছু শর্ত আছে—-
১। সংশোধনের সকল উপায় প্রয়োগের পর যদি ভালো না হয়।
২। কঠোর রাগের মাথায় মার দেয়া যাবে না। এতে সন্তানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩। মাথা,মুখ,বুক ও পেটে মারা যাবে না।
৪। প্রথমবার হালকা মার দিতে হবে যেন বেশী কষ্ট না পায়। হাতে-পায়ে হালকা মার দেয়া যেতে পারে। ছোটদের জন্য ১-৩ টিবেত দিয়ে মারা এবং একটু বড়দের জন্য বেশী হলে ১০টি। কারন রাসূল(সঃ) বলেছেন-আল্লাহর দণ্ডবিধি ছাড়া কাউকে ১০টির বেশী বেত্রাঘাত করা যাবে না।(ইবনুল তাইমিয়া, আল মুগনী কিতাব)
৫। ১০বছর বয়সের আগে মার দেয়া যাবে না। নবী(সঃ) বলেছেন—সন্তানকে সাত বছর বয়সে নামায শিক্ষা দাও এবং ১০ বছর বয়সে সে জন্য প্রয়োজনে মার দাও এবং বিছানা আলাদা করে দাও।
৬। প্রথমবার ভুলের জন্য তওবা করার সুযোগ দেয়া দরকার এবং মধ্যস্থতাকারীদের সুপারিশ গ্রহন করে আবার যেন এইরকম অন্যায় না করে তার প্রতিশ্রুতি নেয়া দরকার। এটা মার কিংবা লোকদের সামনে অপমান হতে উত্তম।
৭। সন্তান বালেগ হলে অন্যায় থেকে ফেরানোর জন্য প্রয়োজনে অধিক সময় মার দিতে হতে পারে।
৮।সন্তান গঠনকারী নিজের হাতে মার দিবে, অন্যকে দিয়ে দিবে না।
তবে মনে রাখতে হবে শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্য কষ্ট দেয়া নয় বা সন্তানকে অত্যাচার করা নয় বা নিজের রাগকে হালকা করার জন্য নয় বরং সব সময় মনে রাখতে হবে সন্তানকে ভালোবাবাসী বলে তাকে ভালো পথে রাখার জন্যই সব প্রচেষ্টার পর যতটুকু অন্যায় সেই অনুযায়ী শাস্তি দেয়া যেন সেই অন্যায় থেকে ফিরে আসে। সব সময় সন্তানেত হেদায়েতের জন্য দোয়া করতে হবে মহান আল্লাহতা’আলার কাছে । মহান আল্লাহতা’আলাকে সব সময় ভয় করে কাজ করতে হবে।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল(সঃ)-কে দু’টি বিষয়ের কোন একটি গ্রহনের এখতিয়ার দেয়া হলে এবং তা গোনাহের কাজ না হলে যেটি সহজতর তিনি সেটি গ্রহন করতেন। যদি গোনাহের কাজ হতো তবে তিনি তা থেকে সবার চেয়ে বেশী দূরে অবস্থান করতেন। রাসূল(সঃ) কোন ব্যপারে নিজ স্বার্থে কখনো প্রতিশোধ গ্রহন করেননি। তবে আল্লাহর কোন নিষেধাজ্ঞা প্রকাশ্য লংঘন হলে তিনি তখন আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রতিশোধ নিতেন।–বুখারী-কিতাবুল আদাব—৫৬৮৬
https://www.youtube.com/watch?v=I9Z0lGEKcDg
https://www.youtube.com/watch?v=etAc2xdHgaw
https://www.youtube.com/watch?v=JuUgL4x5EII
আমরা অভিভাবকরা অনেক সময় আমাদের ছোটবেলার গল্প করি সন্তানদের সাথে। এটা ভালো যে,অতীতের অবস্থাকে বুঝা ও সেই অবস্থায় পিতা মাতা কেমন করে নিজেদের সত্যের পথে পরিচালিত করে আজ এই পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। কিন্তু এই গল্পের উদ্দেশ্য যেন সন্তানকে মানসিক চাপ দেয়ার কারন না হয় যে, আমরা এতো কষ্ট করে বড় হয়েছি তোমাদেরও কষ্ট করতে হবে। সময়ের সাথে মানুষের যোগ্যতা, সামর্থ, অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাই বর্তমান অবস্থাটা অবশ্যই সামনে রাখতে হবে।
এখন সন্তানেরা অনেক মেধা সম্পন্ন, প্রযুক্তির উন্নয়নে পড়াশুনারও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এই অবস্থাটাও সামনে রেখে শরীয়তকে প্রাধান্য দিয়ে সন্তানকে পরামর্শ ও গাইড লাইন দিতে হবে।
পূর্বে পিতা হুকুম দিতেন আর সন্তান ভালো বা মন্দ কোনটাই যাচাই না করে মেনে নিতেন। কিন্তু এখন সন্তানদের প্রয়োজন তুলে ধরে বলতে হয়, কোন একটি কাজ করার কথা। এটা সহজভাবে নেয়া প্রয়োজন। অনেক সময় তাদের বুদ্ধি আরো উন্নত হয়ে থাকে।
পূর্বে রান্না খাওয়াই ছিল পরিবারের মায়ের একটি বিরাট কাজ, কিন্তু এখন সহজভাবে মেন্যু করে ফেলা যায়, পারস্পরিক সহযোগীতার মনোভাব আসাতে অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে।
আমাদের মা দের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন কুর’আনের আলোকে নিজেদের পরিবর্তন হয়, শরিয়তের দাবী ঠিক রেখে যেন প্রযুক্তির ব্যবহার হয়।
এমন যেন না হয় যে আমাদের পরিবর্তনের আলোকে কুর’আনকে মানা ও প্রযুক্তির ব্যবহার করার দাবীতে শরিয়তকে ঠিক করা।
আল্লাহ আমাদের ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে পরিবার গঠনের জন্য পরিশ্রমী হওয়ার ও কামীয়াব হওয়ার সুযোগ করে দিন।