সদ্য প্রসূত শিশুর কানে আজান দেয়া ও তাহনীক করা। সন্তান গঠনে মায়ের ভূমিকা-১৭

২। কানে আজান দেয়া —

সন্তান দুনিয়াতে আসার পর গোসল দিয়ে পরিষ্কার করে তার ডান কানে আযান দেয়া, তা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। এটি পিতা-মাতার উপর এজন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যে, শিশুর কানে সর্বপ্রথম আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের আওয়াজ পৌঁছে দেয়া এবং ওত পেতে থাকা শয়তান যাতে তার কোন ক্ষতি না করতে পারে। হাদিসে এসেছে,

আবূ রাফে রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাসান ইবনে আলীর কানে আযান দিতে দেখেছি [সুনান আবূ দাউদ:৫১০৫]

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডান কানে আজান দেয়া সুন্নত। আবু রাফে রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,

ফাতেমার ঘরে হাসান ইবনে আলী ভূমিষ্ঠ হলে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামকে তার কানে আজান দিতে দেখেছি। (আবুদাউদ, তিরমিজি-সহিহ সূত্রে)

আর বাম কানে একামত দেয়ার ব্যাপারে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা বিশুদ্ধ সনদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়, তাই এর ওপর আমল করা বা একে সুন্নত জ্ঞান করা ঠিক নয়।

৩। তাহনীক করা

ইমাম নববি রহ. বলেন, সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে খেজুর দিয়ে তাহনিক করা সুন্নত। অর্থাৎ খেজুর চিবিয়ে নবজাতকের মুখের তালুতে আলতোভাবে মালিশ করা এবং তার মুখ খুলে দেয়া যাতে তার পেটে এর কিছু অংশ প্রবেশ করে। তিনি বলেন, কতক আলেম বলেছেন, খেজুর সম্ভব না হলে অন্য কোন মিষ্টি দ্রব্য দিয়ে তাহনিক করা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, সবার নিকটই তাহনিক করা মুস্তাহাব, আমার জানা মতে এ ব্যাপারে কেউ ভিন্ন মত পোষণ করেননি। (শরহে মুহাজ্জাব : ৮/৪২৪)

আনাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আবু তালহা ভূমিষ্ঠ হলে আমি তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের নিকট নিয়ে গেলাম, তিনি বলেন, তোমার সঙ্গে কি খেজুর আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম খেজুর চিবালেন, অতঃপর তা বের করে বাচ্চার মুখে দিলেন। বাচ্চাটি জিব্বা দিয়ে চুসে ও ঠোটে লেগে থাকা অংশ চেটে খেতে লাগল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এ দৃশ্য দেখে বলেন, দেখ, আনসারদের খেজুর কত প্রিয়! (মুসলিম)

আবু মুসা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আমার এক সন্তানের জন্ম হলে, আমি তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের নিকট নিয়ে গেলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তার নাম রাখেন ইবরাহিম অত:পর খেজুর দিয়ে তাহনিক করেন, তার জন্য বরকতের দোয়া করেন এবং আমার কাছে ফিরিয়ে দেন। এটা আবু মুসার বড় সন্তানের ঘটনা। (বুখারি-মুসলিম)

—আবু মুসা আশয়ারী(রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমার একটি পুত্রসন্তান জন্ম গ্রহন করল। আমি তাকে নিয়ে নবী(সঃ)-এর খেদমতে হাযির হলাম। তিনি তার নাম রাখলেন ইব্রাহীম এবং একটি খোরমা চিবিয়ে তার মুখে দিলেন, অতঃপর তার জন্য বরকতের দোয়া করলেন,তারপর তাকে আমার নিকট ফেরত দিলেন।–বুখারী কিতাবুল আকীকা-অনু-১

হাদীসে তাহনীক শব্দ ব্যবহার হয়েছে,এর অর্থ কোন কিছু মিষ্টি জাতীয় বিশেষত খোরমা চিবিয়ে নরম করে তা নবজাত শিশুর মুখে দেয়া।

খেজুরে প্রায় ৬০-৭০% চিনি আছে, যা শিশুদের কান্না থামাতে কার্যকর।

হযরত আয়েশা রা. বলেন, নবী স.এর খেদমতে নবজাতক শিশুদের আনা হলে তিনি তাদের বরকতের জন্য দু’আ করতেন এবং খেজুর চিবিয়ে তাদের মুখে পুরে দিতেন। সহিহ মুসলিম: ৫৪৩৬

এই হাদীসের উপর গবেষনা করে যুক্তরাজ্যের বেশ কটি হাসপাতাল জানান, চিনি বা গুড় শিশুদের ব্যথা দূর করে, তাদের কান্নার সময় কমিয়ে দেয়।

The analgesic effects(pain killing effects) of sucrose in full term infants, a randomized controlled trial—গবেষনায় প্রমানিত হয় যে, ১২% চিনির দ্রবন শিশুদের খাওয়ানোর পর যদি তাদের আংগুল থেকে যে কোন পরীক্ষার জন্য রক্ত নেয়া হয় বা মুসলমানি করানো হয় তাহলে অন্য সময়ে তাদের যে কান্না হতো তা শীঘ্রই থেমে যায়। এটা British Medical Journa1995প্রকাশিত হয়।

http://www.bmj.com/content/319/7222/1393

https://www.youtube.com/watch?v=G8VX7achwsg&nohtml5=False