যেহেতু মা বেশী সময় সন্তানের কাছে অবস্থানের সুযোগ পান,তাই এই সুযোগটাকে পরিকল্পিতভাবে কার্যকরি করার দিকে সচেতন থাকতে হবে। অনেক মা ঘরে সন্তানের সাথে অবস্থান করেও যেন দূরে থাকেন কারন নিজে হয়তো টিভি, ফোন বা রান্না বান্না, গল্প আড্ডা বা সামাজিক মিডিয়াতে বসে থাকা ইত্যাদিতে ব্যস্থ থেকে সন্তানকে দিয়ে দেন গৃহপরিচারিকার কাছে গল্প বা খেলার জন্য। এটা না করে মা যদি সন্তানের সাথে খেলা ও গল্পের মাধ্যমে সংগ দেন তা হবে উত্তম। এর মাধ্যমে মা ও সন্তানের মাঝে সম্পর্ক নিবিড়, সুন্দর হয় ও কিছু শেখানোর সুযোগ থাকে।
একজন মা সন্তানের পাশে অবস্থান করে একদিকে যেমন তার সুখ দুঃখের সাথী হতে পারে, সন্তানের মানসিক অবস্থা বুঝাও মায়ের জন্য সহজ হয়। সন্তান নির্ভরতার জায়গাটা মা কে দিয়েই পূরন করে শান্তি পায়, আর তাই সন্তান সব কথা অকপটে মা কেই বলে থাকে। আর তখন মাকেও সব কথা শুনার আগ্রহ পোষন করতে হবে এবং ধৈর্য্য ধারন করে হিকমা দিয়ে বুঝাতে পারবে সন্তানকে এবং অনেক আদব কায়দা এর মাধ্যমে শেখাতে সক্ষম হবে। পূর্বের শিক্ষার পাশাপাশি আরো কিছু দিক খেয়াল রাখা দরকার,আর তা হলো-
- দায়িত্ববোধ শেখানোর জন্য মাঝে মাঝে বয়স অনুযায়ী কাজ দেয়া— যেমন-খেলনাগুলো খেলা শেষে গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব দেয়া
- নষ্ট হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা থেকে দূরে রাখা—বোনেরা আপনাকে সন্তানের মনের অনেক কাছে থাকতে হবে। সে কোথায় যায় কার সাথে বন্ধুত্ব সেই খবর আপনাকে রাখতে হবে। খারাপ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা থেকে সরিয়ে আনতে হবে। অনেক সময় একা কম্পিউটার বা লেপটপে গেইম খেলতে থাকা, বন্ধুদের নিয়ে ছাদে যাওয়া, অন্য কোন বন্ধুর সাথে বাইরে খেতে যাওয়া বা অন্য বাসায় যাওয়া, ইত্যাদি সব অবস্থায় আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। ভালো বন্ধু ও বন্ধুর বাসার ভালো পরিবেশ আছে কি না তা যাচাই করা প্রয়োজন। সবার সাথে মিশবে কিন্তু চারিত্রিক সমস্যাগ্রস্থ বন্ধুদের বাসায় যেতে না দিয়ে নিজের বাসায় আসতে দিন ও নজরে রাখুন।
অতি বন্ধুত্ব না রাখা—বেশী বন্ধুত্ব না রাখা যেন আপনার প্রতি শ্রদ্ধা বজায় থাকে এবং কথা মেনে নেয়।
একসাথে বসে এবাদত করা ও আলোচনা করা –এটা আজকের জন্য খুবই জরুরী। সন্তানকে মাঝে মাঝে হালকা আলোচনায় এই দুনিয়ার জীবন ও আখেরাতের জীবনের একটু ধারনা দিতে হবে। তাকে অন্তরে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে এই দুনিয়াতে আমরা যা কিছু করি না কেন সব আল্লাহতা’আলা দেখছেন এবং একদিন সব কাজের ও সময়ের জবাবদিহী করতে হবে। আমাদের সব ভালো কাজ করার উদ্দেশ্য আল্লাহতা’আলাকে সন্তুষ্ট করা এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহকে ভয় করা। তাহলে সন্তানকে আপনার আমার পাহারা দেয়া লাগবে না, সে নিজেই নিজেকে পাহারা দিতে চাবে ইন শা’ আল্লাহ।
হালাল রুজি থাকা এবং এর গুরুত্ব উপলব্ধিতে আনা—একদিকে নিজেদের রুজি হালাল হতে হবে, অন্যদিকে সন্তানকেও এই সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। তাহলে আপনার সীমাবদ্ধ আয়ে সন্তান বায়না করবে। অহেতুক বায়না করতেই চাবে না। নিজেও হালাল রুজির প্রতি অনুরক্ত থাকবে।
দোয়া করা—
সব সময় আমদের জিহবাকে আল্লাহর যিকিরে সিক্ত রাখা দরকার। অনেক পিতা-মাতা রাগ করে সন্তানকে বদদোয়া দেন যা মোটেও সঠিক নয়, বরং এই অবস্থায় দোয়া করা দরকার আরো বেশী করে।
রাসূল(সঃ) বলেছেন—তিনটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়, তাতে কোন সন্দেহ নেই। নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া মুসাফিরের দোয়া এবং সন্তানের উপর পিতার বদদোয়া।–(তিরমিযী-১৮৫৫ আবওয়াবুল বিরর ওয়াস-সিলাহ)
রাসূল(সঃ) বলেছেন—মুমিন ব্যক্তি কখনো দোষারোপকারী ও ভৎর্সনাকারী হতে পারে না, অভিসম্পাদকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষী হয় না।(তিরমিযী-১৯২৭ আবওয়াবুল বিরর ওয়াস-সিলাহ)
“ হে আমাদের রব ! আমাদের নিজেদের স্ত্রীদের/ স্বামী ও নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম ৷-সূরা ফুরকান-৭৪
“হে আমার রব, তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যেসব নিয়ামত দান করেছো আমাকে তার শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দাও ৷ আর এমন সৎ কাজ করার তাওফীক দাও যা তুমি পছন্দ করো ৷ আমার সন্তানদেরকে সৎ বানিয়ে আমাকে সুখ দাও ৷ আমি তোমার কাছে তাওবা করছি ৷ আমি নির্দেশের অনুগত (মুসলিম) বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত ৷” –সূরা আহকাফ (১৫)
“হে আমার রব! আমাকে সালাত কায়েমকারী কর এবং আমার বংশধরদের মধ্য হতেও। হে আমার প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল কর।–সূরা ইবরাহীম-৪০