বর্তমানে বিভিন্ন কারনকে সামনে রেখেই অনেকে বিয়ের পর বিভিন্ন পরিকল্পনা করে থাকেন। পরিকল্পিত জীবন খুব সুন্দর হয়। তবে মনে রাখা প্রয়োজন আমরা পরিকল্পনা করতে পারি কিন্তু মহান আল্লাহ বাস্তবায়ন করার মালিক, তিনি যা চাইবেন তা হবে। বিশেষ কিছু বিষয় একান্তই মহান রবের ইচ্ছাধীন করে রেখেছেন যেমন জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে ইত্যাদি।
বিয়ের পর অনেকে এইভাবে বলে থাকেন যে, এখন আমি সন্তান নিব অথবা অসম্ভব! এখন আমি সন্তান নিবো না! ইত্যাদি। এই ধারনা বা কথাটা কিন্তু ভয়ানক অর্থ এনে দেয়, আর তা হলো, সন্তান যেন মানুষের ইচ্ছা ও ক্ষমতার মধ্যে আসা না আসা নির্ভর করে। অথচ এটা সম্পূর্ণ ও এককভাবে মহান আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত, মানুষ চাইলেই আনতে পারে না বা রোধ করতে পারে না। তাই এইভাবে কথা বলা বা সিদ্ধান্ত করে কথা বলা থেকে দূরে থাকা ঈমানেরই দাবী। তা না হলে তাকদিরের প্রতি ঈমান বা মহান আল্লাহর ক্ষমতার প্রতি ঈমান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।
ক্যারিয়ার গঠন বা আর্থিক সচ্ছলতা নেই এই কারন দেখিয়ে অনেকেই পরিবারের বিস্তার করা পছন্দ করেন না। কিন্তু মানুষের এই ধারনা থাকা প্রয়োজন মহান আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ কোন কাজে সফলতা আনতে পারবে না। ক্যারিয়ার করতে যেয়ে এমন অনেক ঘটনা দেখা যায় বড় ধরনের দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আর ডিগ্রী শেষ করতে সক্ষম হোন না। আবার সন্তান পরিবারে আসার পর আর্থিক সচ্ছলতা চলে এসেছে। আসলে এটা অনেক সময় সাপেক্ষ আলোচনা। তবে সবচেয়ে উত্তম হলো তাকওয়ার মাপকাঠিতেই পরিবার গঠনের দিকে এগুনো দরকার। মহান আল্লাহ হলেন উত্তম পরিকল্পনাকারী।
সেই পরম সত্তা তো আল্লাহ-ই যিনি সৃষ্টির পরিকল্পনাকারী, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের র্নিদেশ দানকারী এবং সেই অনুপাতে রূপদানকারী। সূরা হাসর:২৪
সারা দুনিয়ার এবং দুনিয়ার প্রতিটি বস্তু সৃষ্টির প্রাথমিক পরিকল্পনা থেকে শুরু করে তার নির্দিষ্ট আকার আকৃতিতে অস্তিত্ব লাভ করা পর্যন্ত পুরোপুরি তাঁরই তৈরী ও লালিতপালিত। কোন কিছুই আপনা থেকে অস্তিত্ব লাভ করেনি কিংবা আকস্মিকভাবে সৃষ্টি হয়ে যায়নি অথবা তার নির্মাণ ও পরিপাটি করণে অন্য কারো সামান্যতম অবদান ও নেই।
এখানে আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিকর্মকে তিনটি স্বতন্ত্র পর্যায় বা স্তরে বর্ণনা করা হয়েছে। যা ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত হয়ে থাকে।
প্রথম পর্যায়টি হলো সৃষ্টি অর্থাৎ পরিকল্পনা করা। এর উদাহরণ হলো, কোন ইঞ্জিনিয়ার কোন ইমারত নির্মাণের পূর্বে যেমন মনে মনে স্থির করে যে, অমুক বিশেষ উদ্দেশ্যে তাকে এরূপ ও এরূপ একটি ইমরাত নির্মাণ করতে হবে। সে তখন মনে মনে তার নমুনা বা ডিজাইন চিন্তা করতে থাকে। এ উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত ইমারতের বিস্তারিত ও সামগ্রিক কাঠামো কি হবে এ পর্যায়ে সে তা ঠিক করে নেয়।
দ্বিতীয় পর্যায় হলো, برء । এ শব্দটির প্রকৃত অর্থ হলো, পৃথক করা চিরে ফেলা, ফেড়ে ফেলা আলাদা করা। স্রষ্টার জন্য ‘বারী’ শব্দটি যে অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা হচ্ছে, তিনি তার পরিকল্পিত কাঠামোকে বাস্তবে রূপ দেন। অর্থাৎ যে নকশা তিনি নিজে চিন্তা করে রেখেছেন তাকে কল্পনা বা অস্তিত্বহীনতার জগত থেকে এনে অস্তিত্ব দান করেন। এর উদাহরণ হলো, ইঞ্জিনায়ার ইমারতের যে কাঠামো ও আকৃতি তাঁর চিন্তার জগতে অংকন করেছিলেন সে অনুযায়ী ঠিকমত মাপজোঁক করে মাটিতে দাগ টানেন, ভিত খনন করেন, প্রাচীর গেঁথে তোলেন এবং নির্মাণের সকল বাস্তব স্তর অতিক্রম করেন।
তৃতীয় পর্যায় হলো, ’তাসবীর’এর অর্থ রূপদান করা। এখানে এর অর্থ হলো, কোন বস্তুকে চূড়ান্ত, পূর্ণাঙ্গ আকৃতি ও রূপ দান করা।
এই তিনটি পর্যায়ে আল্লাহ তা’আলার কাজ ও মানুষের কাজের মধ্যে আদৌ কোন মিল বা তুলনা হয় না। মানুষের কোন পরিকল্পনাই এমন নয় যা পূর্বের কোন নমুনা থেকে গৃহীত নয়। কিন্তু আল্লাহ তা’আলার প্রতিটি পরিকল্পনাই অনুপম এবং তাঁর নিজের আবিষ্কার। মানুষ যা তৈরী করে তা আল্লাহ তা’আলার সৃষ্ট উপাদানসমূহের একটিকে আরেকটির সাথে জুড়ে করে।
অস্তিত্ব নেই এমন কোন জিনিসকে মানুষ অস্তিত্ব দান করে না, বরং যা আছে তাকেই বিভিন্ন পন্থায় জোড়া দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তা’আলা সমস্ত বস্তুকে অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন এবং যে উপাদান দিয়ে তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সে উপাদানও তাঁর নিজের সৃষ্টি। অনুরূপ আকার-আকৃতি দানের ব্যাপারেও মানুষ আবিষ্কর্তা নয়, বরং প্রকৃত আকার-আকৃতি দানকারী ও চিত্র অংকনকারী মহান আল্লাহ। আল্লাহ বলেছেন,
আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন অথবা দান করেন পুত্র কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি বন্ধ্যা করে দেন। তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। আশ-শূরা:৪৯-৫০
মহান আল্লাহ কাউকে সন্তান সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন আবার কাউকে কোনটাই না দিয়েও পরীক্ষা করে থাকেন, কাউকে সন্তান দিয়ে কিন্তু সম্পদ ছাড়া বা সম্পদ দিয়ে কিন্তু সন্তানহারা করে পরীক্ষা করে থাকেন।
আমরা ধৈর্য্য সম্পর্কে জানতে যেয়ে এটা জেনেছি যে, মহান আল্লাহ বান্দাহকে ভালোবাসেন বলেই, আরো বেশী মহান রবের দিকে যেন, বান্দা এগুতে চায় সেই কারনেও এই ধরনের পরীক্ষা এসে থাকে। আর মহান আল্লাহকেতো যাচাই করে নিতে হবে কে ঈমানদার সত্যবাদী এবং কে মুনাফিক ও মিথ্যাবাদী।
মহান আল্লাহ বলেছেন-
যখন এদের কাউকে কন্যা সন্তান জন্মের সুখবর দেয়া হয় তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায় এবং সে ভিতরে ভিতরে গুমরে মরতে থাকে। লোকদের থেকে লুকিয়ে ফিরতে থাকে, কারণ এ দুঃসংবাদের পর সে লোকদের মুখ দেখাবে কেমন করে। ভাবতে থাকে, অবমাননার সাথে মেয়েকে রেখে দেবে, না তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে? -দেখো, কেমন খারাপ কথা যা এরা আল্লাহর ওপর আরোপ করে। সূরা আন নহল:৫৮-৫৯
জাহেলী আচরন আজ আমাদের মাঝেও বিরাজ করছে বিভিন্ন পরিবেশে, আমরা তা দেখতে পাই।
সমাজে এমন বাস্তব উদাহরন দেখা যায় যে, অনেকে বিয়ের পর পরই সন্তান গর্ভে চলে আসায় অস্থির হয়ে সন্তানকে গর্ভে নষ্ট করে ফেলেন, পরে দেখা যায় নিজেদের পরিকল্পনামতো সন্তান নিতে চাইলেও আর সন্তান গর্ভে আসে না বা আসলেও স্বাভাবিকভাবেই ২-৩ মাসের ভ্রুণ নষ্ট হয়ে যায়। এইরকমও জানা যায় যে, জীবনে তাদের আর কোন সন্তান আসেনি। আবার এমন উদাহরন আছে যে, কয়েকবার চেষ্টা করার পরও ভ্রুন জীবিত রয়ে গিয়েছে। সুবহানাল্লাহ। এই ধরনের বাব মার মন কত ছোট ও নিকৃষ্ট চিন্তা করা যায়! আল্লাহর ভয় ও সহজ মানুষের যে মন থাকা দরকার তা দিয়ে একটি পরিবার সুন্দর ও সুখের হতে পারে।
তাই মহান আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকলে, তাতে অবশ্যই কল্যান নিয়ে আসবে। আল্লাহ আমাদের মহান রবের উপর ভরসা কিভাবে করতে হয় তা বুঝার ও মানার তাওফিক দান করুন।