নতুন বাগানের পরিচর্যায় ভারসাম্য
প্রতিটি মুমিনের জীবন হয় পরিকল্পিত ও ভারসাম্যপুর্ণ। মা হওয়ার পর শুরু হয়ে গেলো নতুন একটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার খাতা। আপনার নতুন আরেকটি ফাইল যোগ হলো, যার উপর নির্ভর করছে আপনার আমলনামার গ্রেড ও ভবিষ্যতের সদকায়ে জারিয়া গড়ে তোলার স্বার্থকতা। তাই প্রতিটি পদক্ষেপেই সচেতন ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। অনেকে শিশুর কোন গুনাহ নেই মনে করে শরীয়তের অপছন্দনীয় দিকগুলোতে ছোট্ট পবিত্র সন্তানটিকে জড়িয়ে ফেলেন। মনে রাখতে হবে শিশুটির গুনাহ না হলেও গুনাহের কাজকে সামনে নিয়ে আসার উদ্যোক্তা হিসেবে বাবা মার আমলনামায় সেটা লিখা হয়ে যাবে। আবার গুনাহের কাজ থেকে শিশুটিকে রক্ষা না করার জন্য আটকে যেতে পারেন হাসরের মাঠে। তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে।
ছোট শিশুটিকে আমরা অনেক সময় বেশী আদর করতে যেয়ে সব সময় কোলে রেখে ঘুম পাড়াই বা অভ্যাসে পরিনত করি যেন বিছানায় সে শুয়ে থাকতে চায় না।
সব কিছুই মধ্যমানের হওয়াটা ভালো।
শিশুটিকে বিছানায় নিজে নিজে হাত-পা ছুড়ে খেলতে দিলে ভালো-তাতে শিশুটির শারিরীক ব্যায়াম হয় এবং ক্ষিদা পেয়ে খেতেও চাবে। অপরদিকে ছোট শিশুটির পাশে বসে আপনি আপনার পড়াশুনা বা হাতের অনেক কাজই করতে পারবেন।
ঘুম পাড়ানো গান গেয়ে অনেকেই দুলিয়ে ঘুম পাড়ান—বোনেরা এইক্ষেত্রে আমরা যদি কোর’আন তেলাওয়াত শুনিয়ে ঘুম পাড়ানোর অভ্যাস করি তাহলে শয়তানের ষড়যন্ত্র থেকে হেফাযত থাকবে অথবা ইসলামিক গান আপনি শিশুটিকে শুনাতে পারেন।
ছোট শিশুটির গোসল খাওয়া সব কিছুই আপনার নিজের হাতে করার চেষ্টা করুন। তাতে সন্তানের সাথে বন্ধন বাড়বে।
অনেকে ছোট শিশুটিকে আলাদা বিছানায়(বেবী কড) রাতে ঘুমাতে রাখেন। এটা ইউরোপ আমেরিকাতে দেখা যায়। তবে মায়ের নিজের শরীরের সাথে রাখা উত্তম। এতে মায়ের শরীরের তাপমাত্রায় শিশুটির শরীর ঠাণ্ডা লাগা থেকে অনেক নিরাপদ থাকে এবং বন্ধন বাড়ে।
https://plus.google.com/u/0/communities/107688493486375169797
আপনার ছোট শিশুটি একটু একটু কথা বলতে চাইবে দাঁড়াতে ও হাঁটতে চাইবে।
এই সময় অনেকে না না রকম ছড়া ও কথা শেখাতে চান। এই সময় প্রথমে আল্লাহতা’আলার নাম শেখানো বা কলেমা শেখানো দরকার। দাঁড়ানো ও হাঁটার সময় বিসমিল্লাহ শিশুটিকে শুনিয়ে বলা। আসলে শিশুটিকে শুরু থেকেই ইসলামের বিধি নিয়মগুলো বাস্তবের সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে শিখানো দরকার। এই কাজটি মা কাছে থেকেই করতে পারেন।
ছোট শিশুটি যেন আপনাকে জোড়ে কথা বলা বলতে বা অস্থির আচরন করতে না দেখে, তাহলে সেও সুন্দর ধীর ভাবে কথা বলতে শিখবে। এইক্ষেত্রে বাবা ও কাছের অন্য সদস্যদেরও খেয়াল রাখতে হবে যেন অপ্রত্যাশিত আচরন না করা হয়।
আসলে পরিবারের প্রতিটা বড় সদস্যদেরই এই ব্যপারে সচেতন হওয়া দরকার।
ছোট শিশুটির সাথে আপনি খেলা করুন কিছু সময়-আর এই খেলার মাধ্যমে সৃজনশীলতা শেখান।
কোর’আন তেলাওয়াত শুনান
বিভিন্ন খেলা আঁকার মাধ্যমে মননশীলতা তৈরী করান।
আদব কায়দা শেখান—-যেমন ঘরে পিতা বা বড় কেউ বা কোন অতিথি আসলে বা বিদায় নেয়ার সময় সালাম দেয়া। বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করা ইত্যাদি।
আরেকটি জিনিষ বলতে চাই তা হলো –অনেক মায়েরা খুব মজা করেই বলেন , ‘আমার বাচচাটাকে টিভি ছেড়ে বা ভিসিডি ছেড়ে এড দেখাতে দেখাতে খাবার খাইয়ে দেই অথবা কাজের যে পরিচারিকা থাকে তাকে দিয়ে খাইয়ে দেই’। ফলে শিশুটি অভ্যস্ত হয়ে যায় এইভাবেই। আপনি কি ভেবে দেখেছেন এই যে অশ্লিল ও বাদ্যযন্ত্রের ষড়যন্ত্রের মধ্যে কতসুন্দর ভাবে আপনাকে শয়তান ফেলে দিয়েছে। এই জবাবদিহী আল্লাহর কাছে আপনাকেই করতে হবে। সন্তানটি কিন্তু জন্ম থেকে অভ্যস্ত হয়ে আসেনি, আপনি পিতা মাতাই শিখাচ্ছেন।
মিউজিকে একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে দেখবেন তাকে কুর’আন বা মিউজিক ছাড়া কিছু শুনতে চাইবে না বা ভালো লাগবে না। তাই ছোট ছোট শিশুদের তেলাওয়াত শুনিয়ে অন্তরকে ভালো লাগান। তাহলে একসময় নিজে থেকেই মিউজিক কোথাও শুনলেও ভালো লাগবে না।
মহান আল্লাহ বলেছেন—
হে মু’মিনগন! তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরন করো না। কেউ শয়তানের পদাংক অনুসরন করলে শয়তানতো অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়।–সূরা নূর ২১
আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে মহান আল্লাহর দেয়া এই দুনিয়ার পরীক্ষায় আপনাকে আমাকে পাশ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জ্ঞান প্রজ্ঞা ও হিকমাত দান করুন।
https://www.youtube.com/watch?v=XE0PiAEw-kE
https://www.youtube.com/watch?v=EYULu0gVrWQ
ছোট শিশুটি এখন হাঁটতে দৌড়াতে শিখেছে, সুন্দর সুন্দর আধো আধো বাক্য বলতেও চায়। সবাই এই শিশুটিকে আদর করতে চায়। তথাকথিত Rhymes দিয়ে সন্তানের মাথাটা ভরে না দিয়ে, মহান আল্লাহর কালিমা ও সুন্দর সুন্দর আয়াত সুর করে শিখানোর চেষ্টা করুন, অথবা সুন্দর সুন্দর ইসলামক সংগীত যা আল্লাহর কথা মনে করিয়ে দেয় তা শুনান।
এই সময় শিশুটির শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের দিকে খুব যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। শিশুর মাঝে creativity বাড়ানোর জন্য পরিকল্পিত ভাবে খেলনা দিন।
এই সময় অনেক খেলনা দিয়ে সে খেলা করে। শিশুটিকে কাছে থেকে খেলার মাধ্যমে অনেক আদব-কায়দা শেখাতে পারেন।
অনেক বুদ্ধির খেলা দিয়ে তাকে আনন্দ ও জ্ঞানমূলক তথ্য তাকে দিতে পারেন।
এইভাবে সে অস্থিরতার খেলা বা ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে দূরে থাকতে শিখবে।
অনেক মায়েরা নিজে টিভি দেখার জন্য বা গল্পে ব্যস্থ থাকা বা নিজের পড়া শুনার জন্য, সন্তানকে ব্যস্ত রাখতে কাজের পরিচারিকার কাছে ছেড়ে দেন-ফলে ভালো পরিচারিকা না হলে, সন্তানটি অনেক বাজে জিনিষ রপ্ত করে তাদের কাছ থেকে। আপনার বাসার সেই পরিচারিকাটি পরিবারের সদস্য হিসাবে ভালো কিছু শেখার অধিকার রাখে। তাকে যদি আপনি কিছু গাইড লাইন দিয়ে দেন বাচচাটার সাথে খেলার মাধ্যমে আজ কি শেখাবে এবং পরে সেটা হলো কিনা তা খেয়াল করেন, তাহলে এইভাবে আপনার সন্তান ও সেই পরিচারিকাটিও অনেক কিছু শিখতে পারলো।
এই সময় ছোট ছোট দোয়া কালাম শেখানোর উপযুক্ত সময়। নিজেই বের করে নিন সন্তানটিকে এই সপ্তাহে কি শেখাবেন।
বোনেরা সব কিছুই যদি আমরা সময়ের সাথে পরিকল্পনা নিয়ে করি তবে ইন শা আল্লাহ মাসের শেষে দেখতে পাবেন আপনার সন্তানটি অনেক ভালো কিছু শিখে যাচ্ছে।
শিশুটি কোন কিছু নষ্ট করলে উত্তেজিত হয়ে রাগারাগি না করে ঠাণ্ডা মাথায় বুঝিয়ে দেয়া প্রয়োজন
অথবা নেক ক্ষেত্রে বুঝতে চায় না, সে সময়ের জন্য শিশুটিকে অন্যদিকে ভাল কাজ করায় ব্যস্ত রাখার জন্য তাৎক্ষনিক বুদ্ধিকে কাজে লাগান।
মহান আল্লাহতা’আলা আমাদের ধৈর্য্যের গুন বাড়িয়ে দিন।
https://www.youtube.com/watch?v=BkL1uDuta2U