সমাজে আজ সন্তান গঠন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে মহান আল্লাহর বিধানের আলোকে গড়ে তোলার সঠিক ও দৃঢ় সিদ্ধান্তের আলোকে পরিকল্পিতভাবে পিতা মাতা নিজেরা বাস্তব আমলদার হয়ে পরিশ্রম করার পাশা পাশি মহান রবের কাছে দু’আর মাধ্যমে চাইলে ইন শা আল্লাহ সেই সন্তান গড়ে উঠবে যে দুনিয়াতেও সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারবে এবং আখেরাতেও সফল জান্নাত লাভ পাবে।
পরিবার ও সন্তানের জন্য দু’আ যা মহান আল্লাহ শিখিয়ে দিয়েছেন তা উল্লেখ করা হলো।
رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً ۖ إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তুমি তোমার নিকট হতে সৎ বংশধর দান কর। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবনকারী। সূরা আলে ইমরানঃ৩৮
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
“ হে আমাদের রব ! আমাদের নিজেদের স্ত্রীদের/ স্বামী ও নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম ৷সূরা ফুরকানঃ৭৪
رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي ۖ إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ
“হে আমার রব, তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যেসব নিয়ামত দান করেছো আমাকে তার শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দাও ৷ আর এমন সৎ কাজ করার তাওফীক দাও যা তুমি পছন্দ করো ৷ আমার সন্তানদেরকে সৎ বানিয়ে আমাকে সুখ দাও ৷ আমি তোমার কাছে তাওবা করছি ৷ আমি নির্দেশের অনুগত (মুসলিম) বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত ৷” সূরা আহকাফঃ১৫
رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي ۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ
“হে আমার রব! আমাকে সালাত কায়েমকারী কর এবং আমার বংশধরদের মধ্য হতেও। হে আমার প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল কর। সূরা ইবরাহীমঃ৪০
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
হে পরওয়াদিগার! যেদিন হিসেব কায়েম হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং সমস্ত মুমিনদেরকে মাফ করে দিয়ো। সূরা ইবরাহীমঃ৪১
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا ۖ إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
হে আমাদের রব!আমাদের দু’জনকে তোমার মুসলিম (নির্দেশের অনুগত)বানিয়ে দাও ৷ আমাদের বংশ থেকে এমন একটি জাতির সৃষ্টি করো যে হবে তোমার মুসলিম ৷ তোমার ইবাদাতের পদ্ধতি আমাদের বলে দাও এবং আমাদের ভুলত্রুটি মাফ করে দাও ৷ তুমি বড়ই ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী ৷সূরা আল বাকারাঃ১২৮
সন্তান গঠনে পর্যায়ক্রমিক শিক্ষাদানের ছোট একটি সিলেবাসঃ
অভিজ্ঞতার আলোকে একটি ছোট্ট সিলেবাস উল্লেখ করা হলো। এটা একটি পরামর্শভিত্তিক সিলেবাস। আপনারা নিজের মত করে এর আলোকে আরো কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে নিতে পারেন।
ইউনিসেফের একটি জড়িপের আলোকে শিশুদের ধারাবাহিক বয়সে বিভিন্ন স্বাভাবিক আচরনের পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন তুলে ধরে সাথে কিছু টিপস দেয়া হলো। সকল শিশুই এইভাবে একইরকম পরিবর্তন নাও আসতে পারে। বয়সের তারতম্যে কিছু আগে পরে হতে পারে তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত বয়সে এই পরিবর্তন আশা করা যায়।
জন্মের পর-১ মাসঃ
একটি শিশুর স্বাভাবিক আচরন যা হওয়া উচিৎঃ
- গালে বা মাথায় হাত বুলালে সেদিকে মাথা ঘোরানো
- উভয় হাত মুখের দিকে আনা
- চোষতে পারা(বুকের নিপল) এবং হাত দিয়ে ছোঁয়া
- পরিচিত গলার আওয়াজ বা শব্দ শুনলে সেদিকে ঘোরা
- সাধারনত দৈনিক ৮-১২ বার খাদ্য গ্রহনে ইচ্ছাপ্রকাশ করে।
- এই বয়সে শিশুটি বেশীরভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটায়।
- ২০ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমন্ত অবস্থায় কাটায়।
- খাওয়া দাওয়া ও পায়খানা প্রস্রাব ঠিক মত পরিচ্ছন্ন থাকলে কোন সমস্যা হয় না।
- সাদা-কালো বা এজাতীয় রঙ এর চরম বৈপরীত্য, শব্দ, গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ, তাপমাত্রায় তারতম্য এবং শারিরীক ব্যথা অনুভুতি জাগ্রত হওয়া শুরু করে।
- ক্ষুধা এবং শারিরীক ব্যাথা বা কোন সমস্যা হলে কান্নাকে বেছে নেয়।
সিলেবাস ও করনীয়ঃ
এই ক্ষেত্রে মা বা সন্তানের তদারক যিনি করবেন তাকে কিছু দু’আ শিখে নেয়া উত্তম।
- মা যখন বুকের দুধ খাওয়াবেন তখন দুধ পানের দু’আ শিশুকে শুনিয়ে বলা।
- এই সময় মা তেলাওয়াত শুনার কাজ করবেন বা নিজেই তেলাওয়াত করবেন।
- শিশুকে মাঝে মাঝেই জড়িয়ে এমনভাবে ধরুন যেন চামড়ার সাথে চামড়ার সংস্পর্শ হয়, সেই সময় মহান রবের কাছে বিভিন্ন দু’আ করা।
- ঘুমের সময় যে যিকির রয়েছে তা শব্দ করে বলা যেন শিশুর কানে যায়।
- খাবার খাওয়ার শুরুতে ও শেষ করার দু’আ সমূহ শব্দ করে বলা যেন শিশুর কানে যায়।
- পায়খানা/প্রস্রাব করানোর পূর্বে বা পরিষ্কার করার পূর্বে টয়লেট এর দু’আ সমূহ শব্দ করে শুনিয়ে বলা।
- পরিধেয় বস্ত্র পরিবর্তন করার সময় শিশুকে শুনিয়ে দু’আ পাঠ করা
- জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে রবের নাম নিয়ে বুকের দুধ খাওয়ান
- বাচ্চাকে যখন খাড়া করে ধরবেন মাথায় সাপোর্ট দিন
- প্রায়ই বাচ্চাকে মাসাজ্ করুন এবং জড়াজড়ি করে আদর করুন
- যতবার সম্ভব বাচ্চার সাথে কথা সুন্দর করে বলুন, ভালো কিছু পড়ুন।
- টিকাদান কার্ড সঠিকভাবে সঠিক সময়ে পূরন করুন।
লক্ষ্য রাখতে হবে ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াঃ
- দুর্বলভাবে স্তন চোষা বা চুষতে আপত্তি করা
- জোরে আওয়াজ বা উজ্বল আলোয় কোন প্রতিক্রিয়া না হওয়া
- অনেকক্ষণ ধরে কান্না করা
- অতিরিক্ত বমি ও পায়খানা, যার ফলে শরীরে জলের ভাগ কমে যেতে পারে
বর্জনীয় কাজঃ
বাদ্যযন্ত্র বা মিউজিক ও গান( তথাকথিত বাংলা ইংরেজী রাইমস) ছেড়ে শুনাবেন না।
মোবাইল বা টিভির সামনে মিউজিক ধরনের শব্দ থেকে দূরে রাখুন শিশুকে।
মাথার কাছে মোবাইল বা ডিভাইস যা ইন্টারনেট সম্বলিত রাখবেন না।