স্বাস্থ্য/Health ভিডিও-২ (ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য পরামর্শ)

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য রমাদানে করনীয়ঃ

♦রমজানে রোজা পালনে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ডায়াবেটিস রোগী কারা?

রমজান শুরু হওয়ার পূর্বের তিন মাসের মধ্যে রক্তের শর্করা অতিরিক্ত কমে গেলে, প্রায়ই রক্তের শর্করা কমে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে, রক্তের শর্করা অতিরিক্ত কমে যাওয়ার বিষয়টা রোগী নিজে বুঝতে না পারলে, রক্তের শর্করা অনেক বেশী থাকলে এবং রমজান শুরু হওয়ার পূর্বের তিন মাসের মধ্যে রক্তের অম্লত্ব বেড়ে যাওয়ার অতীত ঘটনা থাকলে রোজা পালন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া রমজান শুরু হওয়ার পূর্বের তিন মাসের মধ্যে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে গেলে কিংবা গর্ভাবস্থা হলে রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত কায়িক শ্রম যারা করেন যেমন শ্রমিক, রিকশাচালক, গৃহকর্মী, কিডনী রোগী- যাদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়, অসুস্থ এবং বৃদ্ধ রোগীর ডায়াবেটিস জটিলতা অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলে, শারীরিক অসুস্থতা- জ্বর, ডায়রিয়া ইত্যাদি থাকলেও রোজা পালন ঝুঁকিপূর্ণ।

ঝুঁকিপূর্ণ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রমজানে রোজা পালন না করাই উত্তম। কেউ যদি রোজা রাখতে চায় তাকে অবশ্যই চিকিৎসকের অনুমতি নিতে হবে।

রমজান শুরু হওয়ার পূর্বে করণীয়:

চিকিৎসক কর্তৃক রক্তের শর্করা, রক্তচাপ ও রক্তের চর্বির পরিমাণ পরিমাপ করে তা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে হবে। রমজানের খাবারের পরিমাণ ও সময়সূচী এবং ওষুধ ও ইনসুলিনের পরিমাণ চিকিৎসকের কাছ থেকে ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।

রমজানে করণীয়:

ডায়াবেটিস রোগীর রমজানে খাওয়া দাওয়ার বিষয়ে কিছু নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক। রমজানে সাধারণত তিনবার খাওয়া হয়। তা হলো ইফতার, রাতের খাবার ও সেহেরী।

ইফতার: পাণিশুন্যতা রোধ এবং শরীরে বিভিন্ন ক্রিয়ার জন্য শরবত একটি অপরিহার্য পানীয়। বিকল্প চিনি দিয়ে ইসুবগুল, তোকমা, লিচু, কাঁচা আম কদবেল তেঁতুলের শরবত খাওয়া যেতে পারে। অথবা একটি কচি ডাব খাওয়া যেতে পারে। ইফতারের খাবারের পরিমাণ পরিমাণ হবে সকালের নাস্তার সমপরিমাণ। ইফতারে ডায়াবেটিস রোগীরা সাধারণত যেভাবে ইফতার নিতে পারে তা হলো:

ক. ছোলা ভাজা – ১/২ কাপ,

খ. পেঁয়াজু -২ টা,

গ. বেগুনি – ২ টা,

ঘ. মুড়ি দেড় কাপ,

ঙ. খেজুর ১টা,

চ. শসা, গাজর ইত্যাদি ইচ্ছামতো,

ছ. পানি পরিমাণ পর্যাপ্ত।

সন্ধ্যারাতে যা খাওয়া যেতে পারে:

ক. ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সন্ধ্যার খাবার একেবারেই বাদ দেওয়া উচিত নয়।

খ.অন্যান্য সময়ের রাতের খাবারের সমপরিমাণ হবে এ খাবার।

গ.সন্ধ্যারাতে ভাত খাওয়া যাবে। তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ বরাদ্দ অনুযায়ী খাবাারের পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ঘ. সন্ধ্যারাতে হালকা মসলায় রান্না করা যে কোনো ছোট-বড় মাছ এবং সবজি থাকলে ভালো হয়।

সেহেরী খাওয়ার নিয়ম: ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সেহরীর কিছু পূর্বে খাওয়া সেহেরী খাওয়ার উপযুক্ত সময়। এতে করে দিন শেষে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি কমবে।

ক.সেহরীতে রুটি অথবা ভাত পছন্দ অনুযায়ী গ্রহণ করা যাবে।

খ. সেহেরীতে খেতে হবে অন্যান্য দিনের দুপুরের খাবারের সমপরিমাণ খাবার।

গ.মাংসের পরিবর্তে ডিমও খাওয়া যেতে পারে।

ঘ.সেহরীতে এক কাপ দুধ খাওয়া যাবে।

লেখক: ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, বারডেম হাসপাতাল।

২————–

রমজানে ডায়াবেটিক খাবার

   সেহরীর খাবার সেহেরীর শেষ সময়ে অল্প কিছুক্ষণ আগে খাওয়া।

   ইফতারের সময় অধিক পরিমাণে মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করা।

 ডায়াবেটিক রোগীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যেন তারা পানি শূণ্যতায় না ভোগেন। ফলমূল, শাকসবজি, ডাল ও টক দই তালিকাভূক্ত করতে পারেন। ডাবের পানি পান করতে পারেন। ভাজা পোড়া খাবার যেমন পিঁয়াজু, বেগুনী, পুরি, পরোটা কাবাব অল্প পরিমাণে খেতে পারেন।

  খাদ্যের ক্যালরি ঠিক রেখে খাওয়ার পরিমাণ এবং ধরণ ঠিক করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ খাওয়া প্রয়োজন।

   রমজানের পূর্বে যে পরিমাণ ক্যালরি যুক্ত খাবার খেতের রমজানে ক্যালরির পরিমাণ ঠিক রেখে খাবার সময় এবং ধরণ বদলাতে হবে। ইফতারের সময় অতি ভোজন এবং শেষ রাতে অল্প আহার পরিহার করতে হবে।

ইফতার    পানিশূণ্যতা রোধ এবং শরীরে বিপাকক্রিয়ার জন্য শরবত একটি অপরিহার্য পানীয়। বিকল্প চিনি নিয়ে ইসবগুলো, তোকমা, লেবু, কাঁচা আমা বে তেতুল শরবত করে খাওয়া যেতে পারে।

 ডাব ছাড়া অন্য মিষ্টি ফলের রসনা খাওয়াই শ্রেয়।

 টক ও মিষ্টি উভয় ধরনের ফল দিয়ে সালাদ করে খেলে যেমন উপাদেয় হবে, তেমনি এতে খনিজ লবন ও ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হবে।

  কাঁচা ছোলার সঙ্গে আদাকুচি, টমেটোকুচি, পুদিনাপাতা ও লবন মিশিয়ে খেলে বেশ সুস্বাদু হয়। কাঁচা ছোলা রক্তের কোলেষ্টেরল কমাতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

   পানিশূণ্যতার দিকে লক্ষ রেখে প্রচুর পানি খাবেন।

সন্ধ্যারাত

 ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সন্ধ্যারাতের খাবার একেবারেই বাদ দেয়া উচিত নয়।

 অন্যান্য সময়ের রাতের খাবারের সমপরিমান হবে, সন্ধ্যারাতের খাবার।

 সন্ধ্যারাতে ভাত খাওয়া যাবে। তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ বরাদ্দ খাবারের পরিমানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 সন্ধ্যারাতে হালকা মসলায় রান্না করা যে কোন ছোট-বড় মাছ এবং সবজি থাকলে ভালো হয়।

সেহেরীর

 সেহেরীতে রুটি, ভাত রুচি অনুযায়ী গ্রহন করা যাবে।

 সেহেরীতে খেতে হবে অন্যান্য দিনের দুপুরের খাবারের সমপরিমান।

  মাংসের পরিবর্তে ডিম ও খাওয়া যেতে পারে।

 সেহেরীতে দুধ খেলে ডাল খাওয়া প্রয়োজন নেই।

রোজার ডায়াবেটিক রোগীর ব্যায়াম

দিনের বেলায় অধিক পরিশ্রম বা ব্যায়ম করা উচিত নয়। ইফতার বা রাতের খাবারের ১ ঘন্টা পর ব্যায়াম করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, তারাবীর নামায ব্যায়ামের সমতুল্য বলে ধরা হয় এবং তারাবী পড়লে না হাটলেও চলে।

রোজায় ডায়াবেটিক রোগীর ঔষধ

 যারা দিনে ১ বার ডায়াবেটিসের ওষুধ খান, তারা ইফতারের শুরুতে (রোজা ভাঙ্গার সময়) ঐ ওষুধ একটু কম করে খাবেন।

  যারা দিনে একাধিক বার ডায়াবেটিসের ওষুধ খান তারা সকালের মাত্রাটি ইফতারের শুরুতে এবং রাতের মাত্রাটি অর্ধেক পরিমাণে সেহেরীর আধা ঘন্টা আগে খেতে পারেন।

 যে সকল রোগী ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তাদের রমজানের পূর্বেই ইনসুলিনের ধরন ও মাত্রা ঠিক করে নেয়া উচিত। সাধারণত রমজানে দীর্ঘ মেয়াদী ইনসুলিন ইফতারের সময় বেশী এবং প্রয়োজনে শেষ রাতে অল্প মাত্রায় দেয়া উচিত।

 রমজানের কমপক্ষে তিনমাস পূর্বে ডায়াবেটিক রোগীর অবস্থা অনুসারে চিকিৎসকের পরামর্ম নিয়ে মুখে খাওয়ার ওষুধ এবং ইনসুলিন ঠিক করা উচিত।

রমজানে সুগার টেস্ট এবং রোজা ভাঙ্গা

বিম্বের বড় বড় ইসলামি চিন্তাবিদ ও শাস্ত্রবিদেরা আগেই রায় দিয়েছেন যে, রোজা রেখে রক্তে সুগার পরীক্ষা করালে তাতে রোজা ভেঙ্গে যায় না। রমজান মাসে বাড়িতে গ্লুকোমিটারে মাঝে মধ্যে নিজের রক্তের সুগার নিজে মেপে দেখুন। অন্তত সপ্তাহে এক বা দুই দিন সেহেরীর দুই ঘন্টা পর এবং ইফতারির অন্তত আধা ঘন্টা আগে এবং ইফতারের ২ ঘন্টা পর সুগার মাপুন। সেহেরীর পর সুগার আট মিলিমোল বা এর কম এবং ইফতারির আগে ছয় মিলিমোল বা এক কম থাকা বাঞ্ছনীয়। এর মধ্যে দিনের যে কোন সময় খারাপ  লাগলে অবশ্যই শরীর কাঁপলে, ঘেমে উঠলে, মাথা ফাঁকা লাগলে অবশ্যই সুগার মাপুন। দিনের যে কোন সময়ে সুগার ৩ দশমিক ৩ মিলিমোল বা তার কম এবং দিনের পূর্বেহ্নেই ৩ দশমিক ৯ মিলিমোল বা তার কম হয়ে গেলে সে দিন রোজা ভেঙ্গে ফেলতে হবে। দিনের যেকোনো সময় রক্তে সুগার ১৬ মিলিমোলের বেশী হলেও রোজা ভাঙতে হবে।

উপসংহারঃ

 রমজান মাস রহমত, বরকত, মাগফিরাত এবং নামাজের মাস।

  রমজান আত্মশুদ্ধির এবং আত্মপোলব্ধির মাস।

  রমজানের সুশৃংখল জীবন যাপন এবং ইবাদত বন্দেগী ডায়াবেটিক রোগীদের ওজন এবং সুগার কমাতে সহায়তা করে।

 ডায়াবেটিক রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন। তবে ৩ মাস আগে থেকে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তুতি নিতে হবে।

 রোজার সময় নিজে ডায়াবেটিসের ঔষুধ সমন্বয় করবেন না, এতে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে।

 রোজায় দিনে এবং রাতে সুগার মাপা উচিত, ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, এতে রোজার কোন ক্ষতি হয় না।

 সেহেরীর খাবার সেহেরীর শেষ সময়ের কিছু আগে খাওয়া উচিত। ইফতারের সময় বেশী চিনিযুক্ত খাবার খাবেন না।

  রোজার সময় দিনের বেলা ব্যায়াম করা উচিত নয়।

 রোজার সময় রাতের বেলা পর্যাপ্ত পরিমানে এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।

ডাঃ অজিত কুমার পাল এমবিবিএস, এমডি, এমআরসিপিএস (গ্লাসগো) এফএসিই, এফএসিপি (ইউএসএ)

মেডিসিন, ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ,সহযোগী অধ্যাপক ময়নামতি মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা

আপেল,কমলা, জাম্বুরা, পেয়ারা, আনার,  করলা, চিরতা , নিমপাতা,  হেলেঞ্চা শাক,  শিউলী, আমলকী,  আদা , ঘৃতকুমারী  এসব খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৫ ফল

আপেল: রসালো ও সুস্বাদু ফল আপেলে ভিটামিন সি,অ্যান্টিওক্সিডেন্ট ও দ্রবণীয় ফাইবার আছে। এতে পেক্টিন থাকে যা শরীরের টক্সিন বের হয়ে যেতে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিকসের ইনসুলিন চাহিদা ৩৫% কমায়। তাই দৈনিক ১টা আপেল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

কমলা : পুষ্টিকর এই ফলটিতে পানি থাকে ৮৭% যার গ্লিসামিক ইন্ডেক্স খুবই কম। এছাড়াও এতে প্রচুর ফাইবার থাকে, চিনি কম থাকে এবং ভিটামিন সি ও থায়ামিন থাকে যা রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই প্রতিদিন ১টা কমলা খেতে পারেন।

জাম্বুরা: ডায়াবেটিস এ আক্রান্তদের জন্য জাম্বুরা একটি নিরাপদ ফল। ভিটামিন সি এ সমৃদ্ধ এই ফলে উচ্চ মাত্রার দ্রবণীয় ফাইবার থাকে যার গ্লিসামিক ইনডেক্স ২৫ এবং পানির পরিমাণ থাকে ৯১%। এছাড়াও জাম্বুরাতে নারিঞ্জেনিন নামক ফ্ল্যাভনয়েড থাকে যা শরীরের সংবেদনশীলতাকে উদ্দীপিত করে ইন্সুলিন বৃদ্ধি করে।

পেয়ারা: পেয়ারায় উচ্চ মাত্রার ভিটামিন এ, সি এবং তন্তু রয়েছে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে গ্লাইসেমিক ইনড্রেক্স কমিয়ে আনার জন্যও দায়ী এই ফলটি।

আনার: ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে আনারের লাল লাল দানাগুলো। এটা বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।

এছাড়াও,  করলা, চিরতা , নিমপাতা,  হেলেঞ্চা শাক,  শিউলী, আমলকী,  আদা , ঘৃতকুমারী  এসব খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

নেট থেকে সংগ্রহ করা-