রমাদানে কি খাবেন আর কি খাবেন না এটা নিয়ে আজ বেশ অনেকেই সচেতনভাবে ভেবে থাকেন। এটা খুবই ভালো একটি দিক। সমাজের অনেকেই বিশেষ করে যুব সমাজের একাংশ আজ স্বাস্থ সচেতন হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। বয়োবৃ্দধদের শারীরিক অসুস্থতা দেখে তারা উপলব্ধি করছে। মহান আল্লাহ সকল যুবক যুবতিদের জীবন যাত্রার আত্মীক উন্নয়নের দিকটিও যেন সচেতন হয়ে যত্ন নেয় তার তাওফিক দান করুন।
রমাদানে যা করা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন–
অতিরিক্ত ঘুমিয়ে কাটানোসারাদিন টিভি/কম্পিউটারে/ মুবাইলে ব্যস্থ থাকা
রমাদানে যা পান করা থেকে বিরত থাকা জরুরী—-
এইগুলো ডাই ইউরেটিক্স হিসেবে কাজ করে ফলে শরীর থেকে পানি তাড়াতাড়ি বের করে দেয়,ফলে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। যদি কেউ একান্তই খেতে হয় তাহলে তারাবীহর পূর্বে এক কাপ লাল চা খেয়ে নিতে পারেন যা ঘুমকে সরিয়ে সতেজ অনুভূতি এনে দিতে পারে।
গাঢ় কালো চা কফি ক্যাফেইন জাতীয় তরল যেমন কোকা কোলা
রমাদানে যে সকল খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন–
১। উচ্চ তাপে তেলে ভাজা খাবারঃ যেমনঃ পিঁয়াজু,বেগুনী,যেকোন ফ্রাই
এইক্ষেত্রে খাবারের চর্বির পরিমান বেড়ে যায় ও অতিরিক্ত বা অপ্র্যোজনীয় ক্যালরী বাড়ে। যেমন-আলু ফ্রেঞ্চ ফ্রাই করলে ৭১০ ক্যাল +৩৪ গ্রাম চর্বি অথচ বেকড আলুতে থাকে ২২০ক্যাল+ ১গ্রাম চর্বি
আবার এই ভাজা খাবারের ক্ষতিকর দিক হলো—-বুক জ্বলা, অস্বস্থি লাগা, পেট এ গ্যাস অনুভব করা, অনেকের এসিডিটি থেকে পিঠেও ব্যাথা অনুভব করা। এছাড়া এই জাতীয় খাবার ইরিটেবল বাউল সিনড্রোম রোগ এর কারন হতে পারে।
২। সাদা জাতীয় খাবারঃ সাদা চাল, সাদা চিনি, সাদা রুটি
এইগুলো সব প্রসেস করা যা শূন্য ক্যালরী ও নিউট্রিশন ঘাটতি থাকে। যা খাওয়া যেতে পারে লাল আটা, চাল, গুড়
৩। মিষ্টি জাতীয় খাবারঃ চিনি বা এই ধরনের খাবার মূলত ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়।
৪। তৈলাক্ত ও অধিক মসলাযুক্ত খাবার যা ক্ষতি করে থাকে সারাদিন না খেয়ে থাকার পর এটা খেলে। যেমন বুক জ্বলা, অস্বস্থি লাগা।
আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতের পূর্বে তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না পাওয়া যেত তবে শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুর না পাওয়া যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন।’ বর্ণনায় : আহমদ
এ হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ইফতারির আদব হল: মাগরিবের সালাতের পূর্বে ইফতার করা। তাজা খেজুর বা শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করা। খেজুর দিয়ে ইফতার করার উপকারিতা হল, খেজুর সহজপাচ্য। দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকার কারণে খাওয়ার পর যে সমস্যা হওয়ার কথা খেজুর খেলে তা হয় না। উপরন্তু খেজুর হালকা খাবারের একটি। পানি, খেজুর এগুলো দ্বারা ইফতার করলে অলসতা সৃষ্টি হয় না।
ইফতারে যা খাওয়া যেতে পারেঃ
প্রথমেই পরিকল্পনা রাখেন ইফতার হবে হালকা এবং যা আসরের আগেই প্রস্তুত করে রাখা যায়,পুষ্টি সমৃদ্ধ
আসর থেকে মাগরিব নিজে সহ আপনার সহযোগীদেরও মুক্ত করে দিন ইবাদাতের জন্য।
খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু কারন এটাই সুন্নাহ। এর সাথে সাদা পানি একগ্লাস খেয়ে নিন।
এরপর মাগরিব সালাত আদায় করে নিতে পারেন, অথবা হালকা খাবার খেয়ে নিতে পারেন। যেমন-
চিড়া+দই+কলা অথবা কোন ফলের জুস (টক দই, ডাব,তরমুজ,বাংগী,মাল্টা,বেল,লেবু যা হালকা চিনি মিশ্রিত ও সাথে লবন দিতে পারেন)
ঝাল খাবারে রাখতে পারেন, অল্প ছোলা, কাঁচা ছোলা(টমেটু+আদা কুঁচি+বিট লবন)
ফল দিয়ে সালাদের মত বানিয়ে নিতে পারেন-পেয়ারা,আপেল,আংগুর,বিভিন্ন ধরনের বাদাম।
সব্জী দিয়ে খিচুড়ি,বা রাইস সব্জী ও চিকেন দিয়ে করে নিতে পারেন
হালিম বানিয়ে নিতে পারেন। কম ঝাল দিয়ে খেসারী ডাল ছাড়া।
সব্জী দিয়ে নুডলস+ একটি ডিম সেদ্ধ
সব্জী চিকেন দিয়ে রুটি দিয়ে শর্মা/ বার্গার বাসায় বানিয়ে রাখা।
ফল দিয়ে ফালুদা,কাষ্টার্ড
আবার একবারে ভাত সব্জী মাছ দিয়ে ডিনারের কাজ সেরে নিতে পারেন মাগরিবের সালাতের পরই।
ইফতারের পর থেকে রাতে শু’আর পূর্ব পর্যন্ত কমপক্ষে ৩লিটার পানি পান করুন।
সেহরীতেও খেজুর দিয়ে শুরু করুন।
সব্জী ও গোস্ত/মাস/ডিম খেতে পারেন, সাথে দুধ কলা বা পাঁকা আম দিয়ে পরিমিত ভাত খেয়ে নিতে পারেন।
মনে রাখা প্রয়োজন অতিভোজন দিনের ক্ষুধা বাড়িয়ে দিবে, বরং পরিমিত খাবার এক পেট খালি রেখে খাওয়াই সুন্নাহ। সেহরী খেতে হবে শেষ সময়েই।
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের জন্যঃ রোজার সময় যেহেতু দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকতে হয়, তাই কারো কারো পানি স্বল্পতা হতে পারে। যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের জন্য সমস্যার ব্যাপার। তারা ইফতার ও সেহরিতে প্রচুর পরিমাণ পানি, ডাবের পানি, ফলের রস, সরবত, শাকসবজি, সালাদ, ইসবগুলের ভুসি খেলে আরাম করে রোজা রাখতে সমস্যা হবে না। গরু বা খাসির গোশত, ইলিশ ও চিংড়ি মাছ এবং যেসব খাবার খেলে মল শক্ত হয়ে যায় তা না খাওয়াই ভাল তবে এ ধরণের অসুখ যাদের আছে তাহারা অবশ্যই আঁশ জাতীয় সবজি প্রতিদিন খেতে পারলে রোজার পরে মিল্ক অফ ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় ঔষধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তাও দূর হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।