সুস্থ্যতা একটি অন্যতম নি’আমত
দেহ ও মনের সুস্থ্যতার উপর মানুষের জীবনের কর্মকাণ্ড অনেকাংশেই নির্ভর করে। মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির কাঠামোর সুস্থ্যতা ও সুন্দর ভারসাম্য রক্ষার জন্য যা প্রয়োজন তা পবিত্র আল কুর’আন ও রাসূল স. এর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে নেয়া–
সুস্বাস্থ্য মানে শুধু নির্ধারণযোগ্য নামওয়ালা কোন রোগের অভাবই নয়, নীরোগ অটুট ভাল স্বাস্থের সঙ্গে উৎকৃষ্ট জীবনযাপনের অন্য সব উপাদান (যেমন আনন্দময় কর্মসংস্থান, মনঃসংযোগ ইত্যাদি যেগুলিকে কোয়ালিটি অফ লাইফ বা জীবন উৎকর্ষের মাত্রা দ্বারা পরিমাপের চেষ্টা হয়েছে)।
রাসূল স: বলেছেন, নিশ্চয়ই মানুষকে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কোন নিয়ামত প্রদান করা হয় নাই। আন নাসাঈ: ১০৭২২
আর এই সুস্থতা হলো শারিরীক ও মানসিক সুস্থ্যতা।
রাসূল স: বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যুষে সুস্থতা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে, বাসায় নিরাপদে থাকে, সারা দিনের খাদ্য সামগ্রী তার নিকট মজুদ থাকে, তাহলে তাকে এ পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ দেয়া হয়েছে। আত তিরমিযী: ২৩৪৬
স্বাস্থ্য ও অবসর মহান আল্লাহর নিয়ামতসমূহের মধ্যে দুটি বিশেষ নিয়ামত। অধিকাংশ লোক এ দুটি নিয়ামতের ব্যপারে ক্ষতি ও ধোঁকায় পতিত রয়েছে। মুসনাদে আহমাদ: ২৩৪০
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘দু’টি নিয়ামতের ব্যাপারে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। (অর্থাৎ এ দু’টি নিয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন না করার কারণে তারা কল্যাণবঞ্চিত) নিয়ামত দু’টি হল ‘সুস্থতা’ ও ‘অবকাশ’।’(বুখারী, হা-৬৪২১)
মানুষ যখন অসুস্থ্য হয় তখন বুঝতে পারে যে অসুস্থ্যতার পূর্বে কত ভালো ছিল এবং সুস্থতা কত বড় নি’আমত। ঠিক তেমনি অবসর সময়কেও মানুষ মূল্যবান বা প্রয়োজনীয় উপাদান মনে করে না যতক্ষন না তাকে ব্যস্থতা ঘিড়ে ফেলে।
মানুষের এই স্বভাবগত দূর্বলতাকে তুলে ধরে সচেতন হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে। সময় বড়ই মূল্যবান এবং ক্ষনস্থায়ী। দ্রুত বহমান এই সময়ের সঠিক ব্যবহার দিয়েই দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা তাঁর এতো নেয়ামত দানের উদ্দেশ্য হল, আমরা যেন এই নেয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন ও শুকরগুজারী করি। কোন নেয়ামতের সবচেয়ে বড় শুকরগুজারী হল এর সঠিক ব্যবহার করা। আর এর যথাযথ মূল্যায়ন করা যেন সময় থাকতেই ছিনিয়ে নেবার পূর্বেই তা কাজে লাগানো। আমরা সুস্থতার মাধ্যমে যদি আল্লাহ তাআলার বেশি বেশি ইবাদত করতে পারি তাহলে সেটাই হবে তার সঠিক মূল্যায়ন। আর যদি নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার না করি, আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ব্যয় না করে মন্দ কাজে ব্যয় করি, তাহলে আমরা অনেক কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হব। যার কোন ক্ষতি পূরণ হবে না।
আমরা জানি যে Prevention is better than cure. রোগ প্রতিরোধ রোগ নিরাময়ের চেয়ে শ্রেয়।
আবার এটাও ঠিক যে A stitch in time saves nine অর্থাৎ সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়ের সমান।
মহান আল্লাহ আমাদের জন্য যা প্রয়োজন তার সবটুকুই দিয়েছেন এবং আরো অধিক রেখেছেন যা এখনো আমরা ভোগের মাঝে আনতে পারিনি।এতো বেশী নি’আমত দিয়ে রেখেছেন যা এখনো মানুষ বের করতে পারে নি এবং যতটুকু করেছে তাও হিসেব করে দেখাতে সক্ষম হবে না। তাই মহান আল্লাহ জানিয়েছেন-
যিনি এমন সবকিছু তোমাদের দিয়েছেন যা তোমরা চেয়েছো, যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামতসমূহ গণনা করতে চাও তাহলে তাতে সক্ষম হবে না৷ আসলে মানুষ বড়ই বে-ইনসাফ ও অকৃতজ্ঞ৷ সূরা ইবরাহীমঃ ৩৪
এতো নি’আমত দিয়ে মহান আল্লাহ আবার জানিয়ে দিয়েছেন যে এই নি’আমতের সঠিক ব্যবহার করে মানুষ মহান রবের কৃতজ্ঞ হয়েছিল কিনা।
﴿ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ﴾
তারপর অবশ্যই সেদিন তোমাদের এই নিয়ামতগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷ সূরা তাকাসুরঃ৮
হাদীসে শরীফে এসেছে- কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে নিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে তা হল, আমি কি তোমাকে একটি সুস্থ দেহ দেইনি? তোমাকে কি ঠান্ডা পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত করিনি? অর্থাৎ এই নিয়ামত প্রহণ করে তোমার দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছ? এই প্রশ্নের উত্তর সকলকে দিতে হবে। তাই সুস্থতার এই মহা নেয়ামতকে নষ্ট না করে কাজে লাগানো উচিত।
হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ ( রা) রেওয়ায়াত করেছেন , রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের এখানে এলেন ৷ আমার তাঁকে তাজা খেজুর খাওয়ালাম এবং ঠাণ্ডা পানি পান করালাম৷ তিনি বললেন :”এগুলো এমন সব নিয়ামতের অন্তর্ভূক্ত যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷”
( মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ, ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির, ইবনে মারদুইয়া, আবদ ইবনে হুমাইদ ও বাইহাকী ফিশ্ শু’ আব )৷
হযরত আবু হুরাইরাহ ( রা) থেকে বর্নিত ৷ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবু বকর (রা)ও হযরত উমরকে ( রা) বললেন, চলো আবুল হাইসাম ইবনুত তাইহান আনসারীর ওখানে যাই৷ কাজেই তাদেরকে নিয়ে তিনি ইবনুত তাইহানের খেজুর বাগানে গেলেন৷ তিনি এক কাঁদি খেজুর এনে মেহমানদের সামনে রাখলেন৷ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন ; তুমি নিজে খেজুর ছিঁড়ে আনলে না কেন? তিনি বললেন আমি চাচ্ছিলাম আপনারা নিজেরা বেছে বেছে খেজুর খাবেন৷ কাজেই তারা খেজুর খেলেন এবং ঠাণ্ডা পানি পান করলেন ৷ খাওয়া দাওয়া শেষ করে রসূলুল্লাহ ( সা) বলেন ” সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ সমর্পিত , কিয়ামতের দিন যেসব নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এই ঠাণ্ডা ছায়া , ঠাণ্ডা খেজুর ও ঠাণ্ডা পানি — এগুলো তার অন্তরভুক্ত৷ ” মুসলিম , ইবনে মাজাহ , আবু দাউদ , তিরমিযী ,
আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে আমি ইচ্ছে করলেই সুস্থ্য থাকতে পারি না যদি না আমাদের প্রতিপালক দয়া করেন।অর্থ শক্তি জ্ঞান কোন কিছু দিয়েই আমি নিজের অবস্থাকে সুস্থ করতে পারি না যদি না আমাদের রব সেই সুযোগ করে না দেন।
তাই যখন ব্যক্তি সুস্থ থাকে সেই সময়ে অন্য কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখে উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে মহান আল্লাহ কত সুস্থ্য রেখেছেন তাকে।এই অবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার শিক্ষা হাদীস থেকেই জানা যায়।
যে ব্যক্তি কোন ব্যাধিগ্রস্ত বা বিপদগ্রস্ত লোককে দেখে বলে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি তোমাকে এই ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছেন, তা থেকে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং তাঁর বহু সংখ্যক সৃষ্টির উপর আমাকে মর্যাদা দান করেছেন, সে কখনো উক্ত ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে না। আত তিরমিযী: ৩৩৬৬
ব্যক্তির জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য যে সুন্দর টিপস দেয়া হয়েছে তা আমরা হাদীস থেকেই জানতে পারি–
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “পাঁচটি অবস্থার সন্মূখীন হওয়ার পূর্বেই তার যথাযথ মূল্যায়ন কর
(১) বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পূর্বে যৌবনকে
(২)অসুস্থতার পূর্বে সূস্থতাকে
(৩) দারিদ্রতার পূর্বে স্বচ্ছলতাকে
(৪) ব্যস্ততার পূর্বে অবসরকে এবং
(৫) মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে মূল্যায়ন কর । (হাকেম, হা-৭৮৪৬)