মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সৃষ্টি নৈপূন্যকে জানিঃ ৪ (নারীর গর্ভপাত অবস্থা)

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে–

হে লোকসকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হওতবে (ভেবে দেখ-) আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকেএরপর জমাট রক্ত থেকেএরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকেতোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেইএরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করিতারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌছানো হয়যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে পতিত দেখতে পাওঅতঃপর আমি যখন তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করিতখন তা সতেজ ও স্ফীত হয়ে যায় এবং সর্বপ্রকার সুদৃশ্য উদ্ভিদ উৎপন্ন করে (সূরা হজ্জ ৫)

মহান আল্লাহ জীবন ও মৃত্যু দিয়ে থাকেন। তাঁরই কাছেই আমাদের চাইতে হবে ভরসা করতে হবে। সকল ধরনের ব্যবস্থাপনা চেষ্টা করে যেতে হবে শরীয়ত ও জায়েয পদ্ধতিতে। সন্তান থাকা কল্যানকর হলে তিনিই(আল্লাহ) দিবেন, কল্যান না হলে তিনি দিবেন না। আস্থা রাখতে হবে রবের ফয়সালায়। তাকদীর ঈমানের একটি অংশ।

অনেক দম্পতির সন্তান গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। সুব’হানাল্লাহ, পৃথিবীর বুকে না এসেও গর্ভস্থিত সেই ভ্রুণ তার বাবা-মায়ের জন্য মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে এবং জান্নাতের ফয়সালা করিয়ে নিবে।

মু’আয ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! গর্ভপাত হওয়া সন্তানের (Miscarried Fetus) মাতা তাতে সওয়াব আশা করলে (ধৈর্যের মাধ্যমে) ঐ সন্তান তার নাভিরজ্জু (Umbilical Cord) দ্বারা তাকে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে।”

[সুনানে ইবনে মাজাহঃ অধ্যায় ৬ (জানাযা অধ্যায়), হাদীস ১৬৭৭। সহীহ, মিশকাত ১৭৫৪।]

ইমাম আন-নববী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর মাজমু’ ফাতওয়া (৫/২৮৭) এ বলেছেন – মৃত সন্তানের ক্ষেত্রের হাদীসগুলো গর্ভপাত (অসুস্থতা জনিত) হওয়া সন্তানের বেলাতেও প্রযোজ্য হবে। মহান আল্লাহ সর্বোত্তম জানেন।

[মাজমু’ ফাতওয়া, ইমাম নববী (৫/২৮৭), হাশিয়াত ইবনে ‘আবেদীন (২/২২৮)]

মুহাম্মদ সালিহ আল-উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ) সহ অধিকাংশ ফুক্বাহাদের মতে ভ্রুণ-এ রুহ সঞ্চার করা হয় ৪ মাস তথা ১২০ দিন পর। রুহ সঞ্চারের পর থেকেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান মৃত্যুর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের হাদীসগুলো প্রযোজ্য হবে। মহান আল্লাহ সর্বোত্তম জানেন।

[ফাতওয়া আল-লাজনাহ আল-দা’ইমাহ, ২১/৪৩৪-৪৩৮।

ফাতওয়া আল-মার’আহ আল-মুসলিমাহ, ১/৩০৩, ৩০৫।

 

     স্বাভাবিক গর্ভপাত  কি ও কেনো হয়ঃ

গর্ভধারণ করার পর প্রসবকাল পর্যন্ত চল্লিশ সপ্তাহের পরিক্রমায় জমাট পানি থেকে পূর্ণাঙ্গ শিশুর অবয়ব পর্যন্ত বিভিন্ন আকার-প্রকার ধারণ করে। এর প্রথম চতুর্থ সপ্তাহ থেকে আটাশ সপ্তাহের মধ্যে যদি কোনো কারণে গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট হয় তাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে মিসক্যারেজ, বাংলায় বলে গর্ভপাত।

২৮ সপ্তাহ থেকে ৩৭ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু হলে তাকে বলা হয় প্রিটার্ম লেবার।

তা ছাড়া ৩৭ সপ্তাহ থেকে ৪০ সপ্তাহের মধ্যে যদি গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হয় তখন তা টার্ম লেবার অর্থাৎ এ সময় গর্ভস্থ শিশু পূর্ণ অবয়ব পায়।

মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত হয় আর্লি স্টেজে অর্থাৎ পাঁচ মাসের মধ্যে। এ সময় গর্ভস্থ শিশুর তেমন অবয়ব গড়ে ওঠে না। কিন্তু ২৮ সপ্তাহের পরে, যা প্রিটার্ম লেবার বলে পরিচিত। এ সময় মানবিক আকৃতির অনেকটাই হয়ে যায়। কোনো কারণে সেই শিশু যদি মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন তাকে বাঁচানো প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। কারণ আমাদের দেশে অতটা উন্নত ধরনের যন্ত্রপাতি আর্থিক সঙ্কটের কারণে আনা সম্ভব হয় না।
মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসা শিশু বাইরের শীত গরম বায়ুদূষণের প্রতিকূল অবস্থা বুঝতে পারে না। ফলে অপরিণত শিশুর শ্বাসকষ্ট হয়, ওই শিশুর পাকস্থলি, লিভার, থার্মোরেগুলেটরি সেন্টার এবং ইমিউনিটি ডেভেলাপ করে না।
এ ছাড়া লাঙ্গসের মধ্যে যে অ্যালাভিউলাস মেমব্রেন থাকে, যা দিয়ে অক্সিজেন যাতায়াত করে। একে সাহায্য করে সারফেকটেন্ট নামে এক রকম কেমিক্যাল, এর অভাবে অপরিণত শিশুর শ্বাসকষ্ট হয়। তার পরিণতিতে মৃত্যুও হতে পারে।
আমরা যেকোনো খাবার খাই না কেনো, তা হজম রেচনের পর শরীর পায় কার্বোহাইডেট, শর্করা, প্রোটিন, পানি ও মিনারেল। হজম রেচনের পরিক্রমায় শিশুর অপরিণত পাকস্থলি থাকায় খাবার ভেঙে প্রসেস করতে পারে না। এ ছাড়া শিশুর লিভার অপরিণত থাকায় সহজেই জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। যার পরিণতি হতে পারে মারাত্মক।
আমাদের ব্রেনের মধ্যে থার্মোরেগুলেটরি সেন্টার আছে যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট অর্থাৎ স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় থাকে। কিন্তু এ সময় শিশুর ক্ষেত্রে থার্মোরেগুলেটরি সেন্টার অপরিণত থাকার কারণে গরম বা ঠাণ্ডা পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। ফলে হিট বা কোল্ড স্ট্রোক হয়। পরিণামে মৃত্যুও হতে পারে।
তা ছাড়া, ওই সব শিশুর ইমিউনিটি পাওয়ার ডেভেলপ করে না। অর্থাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে না। ফলে ভাইরাস আক্রান্ত বা সংক্রমিত হয়ে অপরিণত শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। আমাদের দেশে এই সব প্রিম্যাচিওর বেবি বা অপরিণত শিশুকে বাঁচানো কষ্টসাধ্য।

গর্ভপাত কেন হয়
গর্ভস্থ শিশু, মা, বাবার বা দুইজনের শারীরিক ত্রূটির কারণে গর্ভপাত হয়।

মায়ের যদি হাইপ্রেসার, ডায়াবেটিস, হঠাৎ কোনো কারণে জ্বর হয়।

এ ছাড়া রক্ত ও জরায়ুর সংক্রমণ, রক্তে টক্সোপ্লাজমার সংক্রমণ হলেও জরায়ুতে টিউমার বা ফাইব্রয়েড থাকলে গর্ভপাত হতে পারে।

অনেক সময় বাচ্চা ধরে রাখার ক্ষমতা জরায়ুর থাকে না। ডাক্তারি পরিভাষায় বলে সারভাইবাল ইনকমপেটেন্টস।

জরায়ুর পানি কম থাকলে গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হতে পারে। তা ছাড়া প্রসবের সময় পেরিয়ে গেলে জরায়ুর পানি কমতে বা ঘন হতে থাকে। একসময় গর্ভস্থ শিশু দুর্বল হতে হতে মারা যায়।
মা ও শিশুর দুইজনের শারীরিক ত্রূটির থাকার কারণে শিশু বিকলাঙ্গ, মাথা বড় বা পেটের কোনো অংশ ডেভেলপ করে না। তখন গর্ভপাত ঘটতে পারে।
মিসক্যারেজ বা গর্ভপাতের আরো অনেক কারণ আছে। যেমন, জেনেটিক ডিফেক্ট, ক্রোমোজোমের অ্যাবনরমালিটি, হরমোনাল ডিফেক্ট ইত্যাদি। হরমোন প্রজেস্টোরন ও এইচসিজি মায়ের জরায়ুকে ইরিটেট করা থেকে শান্ত রাখে। অর্থাৎ ক্রমাগত ধাক্কা থেকে মুক্ত রাখে। ফলে বাচ্চা মাতৃগর্ভে অক্ষত থাকে। কিন্তু এই দুই হরমোনের পরিমাণ বেড়ে গেলে বা কমে গেলে, ইনব্যালান্সড হলে, বাচ্চা বেরিয়ে যেতে পারে।
আবার থাইরয়েড হরমোন কম থাকলেও বাচ্চা বেরিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া প্রোলাক্টিন নামে আরো এক রকম হরমোন রয়েছে মায়ের শরীরে। এই হরমোন বেশি থাকলেও বাচ্চা বেরিয়ে যেতে পারে।
শরীর বৃত্তীয় ত্রূটির কারণে অর্থাৎ মায়ের জরায়ুতে ত্রূটি (যথা সেপ্টেড ইউটেরাস, বাইকরনয়েট ইউটেরাস) থাকলে মাতৃত্ব আসার পর শিশু স্বাভাবিক বেড়ে উঠতে পারে না। এমতাবস্থায় গর্ভপাত হতে পারে। ম্যালেরিয়া বা নিউমোনিয়া জাতীয় সংক্রমণ থেকে গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু হতে পারে। জরায়ুতে ক্রনিক ইনফেকশনেও জরায়ুতে বাচ্চা ধরে রাখতে পারে না বা মৃত্যু হতে পারে।
অটোইউমন প্রসেস দুর্বল হলেও গর্ভপাত হতে পারে। বারবার গর্ভপাতের ফলে ইনফেকশন হয়ে বন্ধ্যাত্বও আসতে পারে। এক কথায় মা হতে হলে তিনটি জিনিস দরকার।
* ইউটেরাসকে শান্ত থাকতে হবে। * বাচ্চা থাকার মতো জায়গা ইউটেরাসে থাকতে হবে। * ইউটেরাসের মুখ বন্ধ রাখতে হবে।
আর সহজ কথায় গর্ভপাতের কারণ হলো- অস্বাভাবিক ভ্রূণ, খুঁতযুক্ত ডিম্বাণু বা শুক্রাণু, নিষেকের ফলে পরিপূর্ণ ভ্রূণ গর্ভচ্যুত হয়। ক্রোমোজোম বা জিনঘটিত কারণে যদি ভ্রূণ সঠিকভাবে গঠিত না হয় তবে, গর্ভপাত হতে পারে। প্রসূতির ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরন ও থাইরক্সিন প্রভৃতি হরমোনের অভাব থাকলে গর্ভপাত হতে পারে।

ইনফেকশন : সিফিলিস, টক্সোপ্লাজমোসিস ধরনের সংক্রামক ব্যাধির কারণে বারবার গর্ভপাত ঘটে। টক্সোপ্লাজমিক রোগের জীবাণু টক্সোপ্লাজম নামক এককোষী পরজীবী প্রাণী যা অধিকাংশ সময় বিড়ালের মলের সাথে বের হয়। এ জীবাণু প্রতিকূল পরিবেশেও ছয়-সাত মাস বেঁচে থাকে। ওই সময় খাদ্য বা পানীয়ের সাথে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে টক্সোপ্লাজমা রোগের সৃষ্টি হয়। এ রোগে আক্রান্ত প্রসূতিদের বারবার গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জন্মাতে পারে অন্ধ বিকলাঙ্গ বা মৃত শিশু। অনেক সময় শিশুদের মাথায় পানি জমতে পারে তাদের বলা হয় হাইড্রোসেফালাস।

জরায়ুমুখের কার্যহীনতা
গঠিত ভ্রুণ যখন বড় হয়ে জরায়ুমুখের কাজ ভ্রুণকে ধরে রাখা। কোনো কারণে জরায়ুমুখ বড় হলে বর্ধনশীল ভ্রুণ ধরে রাখতে পারে না। ফলে গর্ভপাত হয়।
অনেক প্রসূতি ইচ্ছে করে গর্ভনাশ করেন। ফলে ভবিষ্যতে হতে পারে বন্ধ্যাত্ব। বারবার বা প্রথমবার গর্ভ নাশ করলে পরে গর্ভধারণে অসুবিধা দেখা দেয়। গর্ভ নাশ করানোর ফলে জরায়ুমুখের কার্যহীনতা বা ইনফেকশনের জন্যও গর্ভপাত হতে পারে।

অস্বাভাবিক জরায়ু
জন্মগতভাবে অস্বাভাবিক জরায়ু বা প্রজননতন্ত্র সঠিক না হলে গর্ভধারণে অসুবিধা দেখা দেয়। ভ্রুণ জরায়ুতে সঠিকভাবে স্থাপিত না হওয়ায় গর্ভপাত ঘটে।

বিভিন্ন রোগের কারণে গর্ভপাত
অপুষ্টি, ডায়াবেটিস, নেফ্রাইটিস, উচ্চরক্তচাপ, প্রভৃতি কারণে গর্ভপাত হতে পারে। আবার মায়ের শরীরে যদি কোনোভাবে সর্বদা ইরিটেট হতে থাকে তাহলেও বাচ্চা বেরিয়ে আসতে পারে।

প্রতিকার
গর্ভপাত থেকে রেহাই বা বন্ধ্যাত্বের সঠিক চিকিৎসা হলো ওষুধ, ইনজেকশন আর অপারেশন। হরমোনাল ওষুধ ও ইনজেকশন দেয়া হয়। জরুরি হলে জরায়ুতে সূক্ষ্ম অপারেশন দরকার হয়। এর চিকিৎসাব্যয় সাধারণ মানুষের আওতার মধ্যেই আছে। যেটি প্রথমেই মনে রাখা দরকার তা হলো- মাতৃত্বকালীন সময়ে মাসিকের মতো পানি বা রক্ত বা রক্তিম পানি বের হতে থাকলে, অস্বাভাবিক ব্যথা করলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। তারপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে গর্ভনষ্টের সঠিক কারণ জেনে উপযুক্ত চিকিৎসা করালে গর্ভপাত ঠেকানো সম্ভব।
গর্ভসঞ্চারের পর শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশ্রাম দরকার। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কারণে-অকারণে ওষুধ খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। হরমোনের ঘাটতি থাকলে ওষুধের মাধ্যমে তা পূরণ করা দরকার। ইনফেকশন থাকলে চিকিৎসা করা দরকার।
জন্মগতভাবে জরায়ুতে বা প্রজননতন্ত্রে ত্রুটি থাকলে অপারেশনের মাধ্যমে ঠিক করে নেয়া দরকার।
চিকিৎসাশাস্ত্রে সাড়াজাগানো বৈপ্লবিক পরিবর্তন হলো টেস্টটিউব বেবি। এই চিকিৎসায় প্রায় শতকরা ৩০ জনের জীবনে মাতৃত্ব আসে। তবে এই চিকিৎসাব্যবস্থা এখনো ব্যয়বহুল।
যেসব নারীর বন্ধ্যাত্ব নেই কিন্তু বারবার গর্ভপাত হয়, তার জন্য দরকার মনোবিজ্ঞানসম্মত এক চিকিৎসা। যাকে বলে টেন্ডার লভিং কেয়ার। সংক্ষেপে টিএলসি।
বাচ্চা না হওয়ার ভয় যাদের মনে ভর করে, যারা মনোবল হারিয়ে ফেলে হতাশাগ্রস্ত হন এবং ভঙ্গুর বিশ্বাস তার দেহকে গর্ভপাতের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। এমতাবস্থায় তাকে প্রতিদিন মনোবল জুগিয়ে মা হওয়ার স্বপ্ন দেখান, তার মধ্যে সন্তান হওয়ার বিশ্বাসকে জাগিয়ে তুলুন। এ বিশ্বাস তার দেহকে গর্ভপাত প্রবণতা থেকে মুক্ত রাখবে। আর এ ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে প্রার্থনা। পরম করুণাময়ের কাছে উপযুক্ত প্রার্থনাই কাঙ্ক্ষিত মাতৃত্বের হাসি ফোটাবে।

সংগৃহিতলিখেছেন ডা: নাদিরা বেগম : প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন। সহকারী অধ্যাপক, জালালাবাদ রাগিব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল, সিলেট।
গর্ভস্থ অপরিণত ভ্রƒণ পুরোপরি বিকাশপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বেই গর্ভধারণ প্রক্রিয়ার সমাপ্তি, ঘটা এবং ভ্রƒণের মৃত্যু ঘটা হচ্ছে গর্ভনাশ বা মিসক্যারিয়েজ। এর অন্য নাম হলো অ্যাবরশন। দুঃখজনক হলেও সত্যি ২০% গর্ভধারণ অ্যাবরশনে পরিণত হয়। রক্তপাত মিসক্যারিয়েজের পূর্ব লক্ষণ। অনেক সময় মহিলারা বুঝতেও পারেন না যে তারা গর্ভধারণ করেছেন এবং  রক্তক্ষরণকে মাসিকজনিত স্বাভাবিক রক্তরক্ষণ ভেবে ভূল করেন। এই অ্যাবরশন মারাত্মক হতে পারে। কেননা এক্ষেত্রে ভ্রƒণ নয় বরং মাতৃদেহ থেকে রক্তক্ষরণ হয়। ৫০% ক্ষেত্রে এটি কোন ওষুধ কিংবা বিশ্রাম ছাড়াই সেরে যায়। তবে এ ধরনের গর্ভধারণের ১০% এর পরিণত হলো অ্যাবরশন। বেশিরভাগ মহিলা জীবনেমাত্র একবারই মিসক্যারি করেন। তবে আবার ও মিসক্যারির সম্ভাবনা ১৫% যা সব সময় থেকে যায়। এ কারণে একবার গর্ভপাত হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব পরবর্তী সন্তান নেয়া উচিত। দুবার কিংবা তারও বেশি মিসক্যারি করাকে রিপিটেড মিসক্যারি বলে। অনেক কারণেই এটি হতে পারে।
অধ্যাপক ডা. সুলতান জাহান,সাবেক চেয়ারম্যান গার্হনি ও অবস,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

 

গর্ভধারনের পর অনেকেই বলে থাকেন আমি এখন সন্তান চাই না। আসলে সন্তান কেউ চেয়ে বা না চেয়ে হয় না। মহান আল্লাহর হুকুমেই সেটা হয়ে থাকে। রব যদি চান তবেই পূর্ণ শিশু হতে পারে অথবা না হতে পারে।

কিন্তু অনেকে দুনিয়ার আরাম আয়েশ বা শরীয়তে কোন কারন ছাড়া গর্ভস্থ বাচ্চা নষ্ট করতে চান, চলুন এবার জানি সেই ব্যপারে ইসলাম কি বলে।

 

যারা সন্তান গর্ভে আসার পর নষ্ট করতে চান তাদের যা জানা প্রয়োজন——

https://islamqa.info/en/answers/42321/ruling-on-aborting-a-pregnancy-in-the-early-stages

Praise be to Allaah.The Council of Senior Scholars issued the following statement:

1 – It is not permissible to abort a pregnancy at any stage unless there is a legitimate reason, and within very precise limits.

2 – If the pregnancy is in the first stage, which is a period of forty days, and aborting it serves a legitimate purpose or will ward off harm, then it is permissible to abort it. But aborting it at this stage for fear of the difficulty of raising children or of being unable to bear the costs of maintaining and educating them, or for fear for their future or because the couple feel that they have enough children – this is not permissible.

3 – It is not permissible to abort a pregnancy when it is an ‘alaqah (clot) or mudghah (chewed lump of flesh) (which are the second and third periods of forty days each) until a trustworthy medical committee has decided that continuing the pregnancy poses a threat to the mother’s wellbeing, in that there is the fear that she will die if the pregnancy continues. It is permissible to abort it once all means of warding off that danger have been exhausted.

4 – After the third stage, and after four months have passed, it is not permissible to abort the pregnancy unless a group of trustworthy medical specialists decide that keeping the foetus in his mother’s womb will cause her death, and that should only be done after all means of keeping the foetus alive have been exhausted. A concession is made allowing abortion in this case so as to ward off the greater of two evils and to serve the greater of two interests.

Source: Al-Fataawa Al-Jaami’ah, 3/1056

Praise be to Allaah.Firstly:

We have already stated in the answer to question no. 42321 the ruling on abortion. Please refer to this information.

Secondly:

With regard to the rulings following an abortion, they vary according to the time of the abortion, and fall into four categories, as follows:

1 – If the pregnancy is aborted within the first two stages (the nutfah (drop) stage which results from the mixing of the “two waters” which is the first forty days after the embryo attaches itself in the womb, and the ‘alaqah (clot) stage where it turns into solid blood during the second forty days), which add up to a total of eighty days, then in this case if it is aborted as a nutfah or ‘alaqah, there are no rulings to be followed, and there is no scholarly dispute on this point. The woman should continue to fast and pray as if she had not had an abortion, but she has to do wudoo’ for each prayer if she has any bleeding, as in the case of a woman suffering from istihaadah (non-menstrual vaginal bleeding).

2 – If the pregnancy is aborted in the third stage, the mudghah (chewed piece of flesh) stage, when the embryo looks like a piece of meat with the limbs and features beginning to appear, which lasts for forty days from the eighty-first to the one hundred and twentieth day, then there are two scenarios:

(i)This embryo does not have any human features and the midwives or other attendants did not testify that this was the beginning of a human being. In this case the ruling on abortion of this mudghah is the same as the ruling on abortion in the first two stages, and there are no rulings to be followed.

(ii)The embryo has complete human features or some human features  such as a hand or foot, etc, or there are features but they are indistinct, or the midwives or other attendants testified that this was the beginning of a human being. In this case the rulings on nifaas are to be followed, and this signals the end of ‘iddah (waiting period following divorce or death of the husband, if applicable).

3 – If the pregnancy is aborted in the fourth stage, i.e., after the soul has been breathed into the foetus, which is after the beginning of the fifth month or after one hundred and twenty days of pregnancy have passed. Here there are two scenarios:

(i)If the foetus did not cry after birth, then the rulings mentioned with regard to the second stage of the mudghah are to be followed, but in addition the foetus should be washed, shrouded and the funeral prayer offered for him; he should be given a name and the ‘aqeeqah offered for him.

(ii)If the foetus cried after birth, then the rulings concerning a full-term baby apply, as mentioned above; in addition the child may take possession of wealth bequeathed or inherited; he may inherit or be inherited from, etc.

Fataawa al-Lajnah al-Daa’imah, 21/434-438.

Source: Islam Q&A