মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সৃষ্টি নৈপূন্যকে জানিঃ ৩ (নারীর ঋতুস্রাবের পূর্বে বিষন্নতা Pre-menstrual Syndrom) )

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

নারী বা পুরুষ যে কেউ জীবনে বিষন্নতায় আসতে পারেন, তবে মুমিন নিজেকে বিষন্নতায় ছেড়ে দেয় না। সে শারীরিকি ও মানসিক যেকোন অবস্থায় বাস্তব ভিত্তিক উপায় উপাদান দিয়ে সুস্থ  থাকার জন্য রবের কাছেই নিবেদন করে ও পূর্ণ ভরসা রাখে। এই বিষন্নতা শারীরিক কারনে ও হতে পারে।

আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল যাতনা, রোগ ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এ সবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাওসমূহ ক্ষমা করে দেন। (সহিহ বুখারী খন্ড ৭, অধ্যায় ৭০, হাদিস ৫৪৬)

আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। সূরা বনী ইসরাঈল:৮২

দয়াময় বলেছেন: “জেনে রেখো, একমাত্র আল্লাহর যিকিরই (মানুষের) অন্তরসমূহকে প্রশান্ত করে” ( সূরা রা’দ: ২৮)

“যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট।” —(সূরা আত-তালাক: ৩)

আসমা বিনতে উমাইস রা. বর্ণনা করেন যে, রাসুল স.বলেছেন, আমি কি তোমাকে কিছু কালেমা বা এমন কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দেবো না, যখন তুমি দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা ও মর্মপীড়ায় পতিত হবে, তখন তা পাঠ করবে, আল্লাহু, আল্লাহু রাব্বী, লা উশরিকু বিহি শাঈয়ান। আল্লাহ, আল্লাহই আমার প্রভু, যাঁর সাথে আমি কাউকে বা কোন কিছুকে শরীক করিনা।  আবু দাউদ: ১৫২৫, আত তিরমিযী: ৩৮৮২

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করো। সূরা আল বাকারা: ৪৫

আমাদের প্রিয় নবী স.এর জীবনেও এই নির্দেশের বাস্তব নমুনা দেখতে পাই। হুযায়ফা রা. বর্ননা করেছেন, রাসূল স. যখন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতেন তখন সালাতে মশগুল হয়ে যেতেন। আবু দাউদ: ১৩১৯

একটি ছোট সূরা ‘সূরা আলাম নাশরাহ’। এ সূরায় আল্লাহ তাআলার ওয়াদা-

فَاِنَّ مَعَ الْعُسْرِ یُسْرًا  اِنَّ مَعَ الْعُسْرِ یُسْرًا.

কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে। -সূরা আলাম নাশরাহ (৯৪) : ৫-৬

মুমিনের বিষয় বড়ই আশ্চর্যজনক। তার সবকিছুই তার জন্য কল্যাণকর; মুমিন ছাড়া আর কারও এই বৈশিষ্ট্য নেই। সে যখন আনন্দদায়ক কিছু লাভ করে তখন শোকর করে, আর শোকর তার জন্য কল্যাণের বিষয়। যখন কষ্টদায়ক কোনো কিছুর সম্মুখীন হয়, তখন সে ছবর করে, আর ছবরও তার জন্য কল্যাণের বিষয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৯৯

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী বিপদাক্রান্ত হতে থাকে; সে কখনো শরীর, কখনো সম্পদ ও কখনো সন্তান-সন্ততির বিপদে আক্রান্ত হয়। (এসব বিপদে মুমিন ধৈর্য ধারণ করে, ফলে আল্লাহ তাআলা তার গুনাহ মাফ করতে থাকেন।) একপর্যায়ে সে গুনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৮৫৯)

নারীর শারিরীক পরিবর্তনে  হরমোনের কারনে যে মানসিক পরিবর্তন আসে,তা মুমিনা মহান রবের শিক্ষায় নিজেকে আলোকিত করে স্বাভাবিক থাকতে পারে। যদি খুব বেশী হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা যায় তখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের শরনাপন্ন হতে হবে।

একজন মেয়ে যখন সাবালিকা হওয়ার সময়ে চলে আসে তখন এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন।  হরমোনের কারনে শারিরীক ও মানসিক পরিবর্তনের বিষয়টি জানা থাকলে একজন নারী সেলফ সাইকোথেরাপী দিয়ে সুস্থ থাকতে পারে।  অভিভাবকদের এই সময় সহযোগীতা করা অত্যন্ত জরুরী ব্যবস্থাপত্র।

অজ্ঞতা ও অসহযোগীতা এই অবস্থাকে জটিল করে ফেলতে পারে।

 

মেয়েদের মাসিক ও বিষণ্ণতা

উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। এই উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা প্রকট আকার ধারণ করলে দুশ্চিন্তা ও ভীতির সম্মুখীন হয় যা মারাত্মক আকার ধারণ করলে বিষণ্ণতায় পরিণীত হয়। এই বিষণ্ণতা নিয়ন্ত্রণকরা বেশ কঠিন। এটি দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হতে পারে ও প্রাত্যহিক জীবনে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে ।
নানা ধরনের উদ্বেগ ব্যাধি (anxiety disorder) হয়ে থাকে।যেমন-বিচ্ছেদ উদ্বিগ্নতা ব্যাধি (separation anxiety disorder)   সামাজিক উদ্বেগ(social anxiety)। বিষণ্ণতাও এই উদ্বেগ ব্যাধির (anxiety disorder) –একটা উপসর্গ। এই বিষণ্ণতা নানা কারণে হতে পারে। এর প্রতিকার আমাদের সহানুভূতি ও ভালবাসা।
অবশ্য  অনেক ক্ষেত্রে ওষুধের  প্রয়োজনীয়তা হয়। তবে আজকের বিষণ্ণতার বিষয় অন্য রকমের। 

মেয়েদের  শারীরিক কারণে যে বিষণ্ণতা

আজকের আলোচ্য বিষয় মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কারণে যে বিষণ্ণতা অর্থাৎ মানসিক সমস্যা হয়।বিষণ্ণতা এক প্রকার মানসিক সমস্যা,যার কারণে একজন ব্যক্তি স্থায়ীভাবে দুঃখভারাক্রান্ত ও অনাগ্রহ বোধ করে থাকে। এই সমস্যাকে মেজর ডিপ্রেশন (major depression), মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার (major depressive disorder) ও ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনও (clinical depression) বলা হয়।বিষণ্ণতা অনুভূতি, চিন্তাভাবনা এবং আচরণের উপর প্রভাব ফেলে।বিষণ্ণতার কারণে দৈনন্দিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।এমন কি জীবন অর্থহীন মনে হতে পারে। বিষণ্ণতা কোনো সাধারণ মানসিক দুর্বলতা নয়।কিছু ক্ষেত্রে-এর নিরাময়ের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা নেওয়ারও প্রয়োজন হয়। তবে সঠিক সময় এই সমস্যার লক্ষণ ও উপসর্গ নির্ণয় ও যত্ন কাউন্সিলিং করলে এই বিষণ্ণতার অবস্থার উন্নতি ঘটে।

অনেক গুলো শারীরিক কারণের মাঝে সাধারণত মূল দুই প্রকার শারীরিক কারণে মেয়েদের বিষণ্ণতা দেখা দেয়।

১) মেয়েদের মাসিক ও বিষণ্ণতা

২) প্রসব পরবর্তীকালীন বিষন্নতা ।

মেয়েদের মাসিক ও বিষণ্ণতা

বয়স সন্ধিকালে তথা যৌবন আগমনের শুরুতে একজন সুস্থ নারীর মাসিক বা ঋতুস্রাব হওয়াটা স্বাভাবিক। সাধারনত ১২-১৬ বছরের মধ্যে মাসিক শুরু হয়ে যায়। কোন কোন মেয়েদের ৯ বছর বয়সে, আবার কারো কারো ১৬ বা তার অধিক বয়সে প্রথম মাসিক হয়। ১৩ বছরের পর থেকে প্রতি মাসে (২৮ দিনের চক্রে) একটি ডিম্বাণু পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় এবং নানান রকম শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ঘটতে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে এই পরিণত ডিম্বাণুটির নিষেকনা ঘটলে মৃত ডিম্বাণু রক্তক্ষরণের সাথে নির্গত হয়ে যায় শরীর হতে, আর সেই বিশেষ প্রক্রিয়াটিকেই মাসিক বা পিরিয়ড বলা হয়। জন্মের পর একজন মেয়ে শিশুর ডিম্বাশয়ে প্রায় ৩ থেকে ৫ লক্ষ ডিম্বাণু থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অধিকাংশ ডিম্বাণুই নষ্ট হয়ে যায়। একজন নারীর সারা জীবনে প্রায় ৫০০ ডিম্বাণু পূর্ণতা লাভ করে এবং নিয়মিত পিরিয়ড হওয়া সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ এবং আমাদের শরীরের অন্তর্বর্তী প্রক্রিয়াগুলিকে পরিষ্কার রাখার উপায়।

প্রতি মাসিক চক্রের ২৮ দিনে একটি ডিম্বাণু নির্গমনের ফলের ৪৫-৫০ বছর বয়সের ভেতরই প্রায় সব ডিম্বাণু শেষ হয়ে যায়,সেই সঙ্গে এস্ট্রোজেন উৎপন্নও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মাসিক হালকা ও অনিয়মিত হতে থাকে ও এক সময় মাসিক বন্ধ হয়ে যায়।মেয়েদের নিচের পেটে অর্থাৎ তলপেটে জরায়ুর দুপাশে ও জরায়ু থেকে খানিকটা দূরে থাকে দুটো ডিম্বাশয়। আর এই ডিম্বাশয় থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুটো হরমোন নিঃসরণ হয়। একটি হলো ইসট্রোজেন; আর একটি হলো প্রজেসটেরোন। ডিম্বাশয় থেকে ডিম্ব নিঃসরণ হয়। ইসট্রোজেন এবং প্রজেসটেরোন-এর প্রভাবেই মাসে মাসে অর্থাৎ ২৮ দিন অন্তর নিয়মিতভাবে এবং চক্রাকারে যে পরিবর্তন ঘটে তারই ফলে হয় মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাব।

প্রতি চন্দ্রমাস পরপর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে তাকেই ঋতুচক্র বলে। এর তিনটি অংশ–

১) মিনস্ট্রাল ফেজ- ৪-৭ দিন স্থায়ী হয়,মিনস্ট্রাল ফেজ এই যোনি পথে রক্ত বের হয়। ৪-৭ দিন স্থায়ী রক্তপাতে ভেঙ্গে যাওয়া রক্তকনিকা ছাড়াও এর সাথে শ্বেত কনিকা,জরায়ুর মুখে মিউকাস,জরায়ুর নিঃসৃত আবরনি,ব্যাকটেরিয়া,প্লাজমিন,প্রস্টাগ্লানডিন ও অনিষিক্ত ডিম্বানু থেকে থাকে।ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের যৌথ ক্রিয়ার এই পর্বটি ঘটে। ডিম্বাশয়ের কোনো ডিম্বানু শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত না হলে জরায়ু আবার মিনস্ট্রাল ফেজে চলে যায়। আর এভাবেই পূর্ন বয়স্ক মেয়েদের ঋতুচক্র চলতে থাকে।

২) প্রলিফারেটিভ ফেজ-৮-১০ দিন স্থায়ী হয় প্রলিফারেটিভ ফেজ ৮-১০ দিন স্থায়ী হতে পারে। শুধু ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে এটি হয়। এই সময় জরায়ু নিষিক্ত ডিম্বানুকে গ্রহন করার জন্য প্রস্ততি নেয়।

৩) সেক্রেটরি ফেজ- ১০-১৪ দিন স্থায়ী হয়।সেক্রেটরি ফেজ টা সবচেয়ে দীর্ঘ। একে প্রজেস্টেরন বা লুটিয়াল ফেজ ও বলা হয়। এটিও ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন উভয় হরমোনের যৌথ কারনে হয়। এই সময় নিষিক্ত ডিম্বানুর বৃদ্ধির জন্য জরায়ু সর্বোচ্চ প্রস্ততি নিয়ে থাকে।

ফিজিওলজির সুত্র অনুসারে প্রধান কারনের মধ্যে তিনটি কারন সবচেয়ে বেশী উল্লেখ যোগ্য ।

১)  নারী হরমোনের ভারসাম্যতা জনিত কারন -প্রলিফেরাটিভ ফেজের (মাসিক শেষ হওয়ার পর ১০/১২ দিন ধরা হয় ) সময় ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টারন দুটি হরমোনের মধ্যে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় প্রজেস্টারন হরমোনের মাত্রা একক ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে মাসিক পূর্ব সিনড্রম দেখা দেয় ( বিবাহিত ও মেনোপোজের কাছা কাছি বয়সের বেলায় বেলায় ৯৬% )

বিপরিত দিকে উক্ত মহিলা যদি অবিবাহিত ও বয়স ২০-৩০ এর ভিতরে থাকে তাহলে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমান বৃদ্ধি পেয়ে –প্রজেস্টারন হরমোনের পরিমান শূন্যের কোটায় নিয়ে আসে অথবা তা নিষ্ক্রিয় থাকে বিধায় বিধায় মাসিক পূর্ব সিনড্রম দেখা দিয়ে থাকে এবং সে সময় কারও কারও বেলায় সেক্রেটরি ফেইজ কে দিরঘায়িত করে , যেমন মাসিক চক্র ২১ দিনের পরিবর্তে তা ৫/৬ দিন দেরিতে হয়ে থাকে ।

২)-হাইপো-থ্যালামিক পিটিইটারি অ্যাড্রিনাল সিস্টেমের দুর্বলতার কারণে হাইপোথ্যালামিক (HPA) পিটিইটারি অ্যাড্রিনাল সিস্টেমের প্রধান কাজ হল,মস্তিস্কের সেরেবেলাম হতে নিউরোট্রান্সমিটার জনিত কারনে প্রজনন,মিজাজ বা আচরণ,যৌন আবেগ,হজম শক্তি, ইমিউনিটি শক্তি ইত্যাদি নিয়ত্রন করা -কিন্তু যদি কোন কারনে এই সিস্টেম সমুহ কাজ না করে অথবা দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় থাকে তাহলে সঠিক ভাবে নারী হরমোনের ভারসাম্যতা রক্ষা করতে পারেনা বরং মস্তিক্সের সেরেটোনিন হরমোনের ক্ষয় বৃদ্ধি করে মানসিক ও শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা প্রিম্যান্সট্রুয়েল ডিস্পরিক ডিসঅর্ডারে চলে যায় ( premenstrual phosphoric disorder (PMDD) ।

৩)ভিটামিন এবং পুস্টিহিনতা মানসিক ভারসাম্যতা:গবেষণা অনুসারে ৭৩% বেলায় ভিটামিন বি-৬’র স্বল্পতা,রক্তশূন্যতা,ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন,ক্যালসিয়াম,জিঙ্ক ইত্যাদি খনিজ)বা অনিয়ন্ত্রিত হজম শক্তি, লবণাক্ত খাবার, চা-কফি ইত্যাদি কারনেই হয়ে থাকে ।এ ছাড়া ও বংশগত (যেমন মায়ের হলে মেয়ের ও হতে পারে ),পারিবারিক সহিংসতা, ভ্যাক্টিম এবং রেপ, শারীরিক ও মানসিক আঘাত, অতিরিক্ত উদ্ধেগ , মানসিক চাপ এবং ক্লান্তি , সিজোপেনিয়া এবং বিপোলার সিন্ড্রেম,ডিসমেনোরিয়া,ওভারিয়ান সিনড্রম, থায়রয়েড জনিত সমস্যা , অনিয়ন্ত্রিত পায়খানা (IBS), মাংশপেশি জনিত বাথ ব্যাধি ইত্যাদি কারনে হতে পারে ।


মাসিক পূর্ব কিছু শারীরিক লক্ষণ ও উপসর্গ 

  • অস্থিসন্ধি অথবা মাংসপেশীতে ব্যথা
  • মাথা ব্যথা
  • অবসাদ
  • শরীরে রস জমে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া
  • পেট ফুলে যাওয়া (Abdominal bloating)
  • স্তনে ব্যথা
  • মুখে ব্রণ বা একনি বেড়ে যাওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া


মাসিক পূর্ব কিছু মানসিক লক্ষণ ও উপসর্গ

  • দুশ্চিন্তা ও উদ্বিগ্নতা
  • বিষন্নতা
  • হঠাৎ কেঁদে ফেলা
  • মেজাজ উঠা-নামা করা এবং ক্রোধান্বিত হওয়া
  • খাবারে রুচির পরিবর্তন হওয়া (Appetite Changes and food cravings)
  • নিদ্রাহীনতা বা ঘুমের সমস্যা হওয়া
  • সামাজিক কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকা (Social withdrawn)
  • অসচেতনতা

 মাসিক পূর্ব বিষণ্ণতায় ও মানসিক কষ্ট

মাসিক শুরু হওয়ার ১০ থেকে ১৫ দিন পূর্বে যে মানসিক এবং আচরণগত সমস্যা দেখা দেয় , তাকেই মাসিক পূর্ব বিষণ্ণতা লক্ষণ বা Pre-menstrual- syndrome-কে সংক্ষেপে PMS বলা হয়।এই সময়ে মেয়েদের আচরণে বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখা যায়।মেয়েরা বাস্তব জগতের চেয়ে কাল্পনিক জগতে বেশি বসত করে। মেজাজে স্বাভাবিক থাকে না। নিজেদের মানসিক আচরণে এই নরম আবার কোনো কারণ ছাড়াই রাগান্বিত হয়ে ওঠে। কখনও উৎফুল্ল আবার কখনও বিষণ্ণ কোন যুক্তি কাজ করে না।কিন্তু এই বিষয়টি খুব সহানুভুতিসহ গুরুত্ব দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন।আমাদের মধ্যে একটা প্রবনতা দেখা যায় যে,মানসিক কোন কষ্ট বা বিষণ্ণতাকে কোন সমস্যা বা রোগ হিসাবে না দেখা। পরিবারের কারো সামান্য ঠাণ্ডা জ্বর বা সর্দি কাশি নিয়ে আমরা যতটা উদ্বেগে থাকি।

মানসিক রোগ বা বিষণ্ণতাকে একটা বাতিক বা পাগলামি হিসাবে ধরে নিয়ে তার কোন প্রতিকারের প্রয়াস করি না।মাসিক পূর্ব বিষণ্ণতাকে মনের খামখেয়াল অথবা অবসর বিনোদন  শুধু নয় এমনও মনে করি প্রেমে পড়েছে অথবা নেশা জাতীয় কিছু খেয়েছে! অনেক ক্ষেত্রে তার এই আচরণকে বিদঘুটে ব্যাপার ভেবে মারধর করতেও বাকি রাখি না। অথচ এই সময় মেয়েটির প্রতি এই বিশেষ মাধুর্যে পূর্ণ,সহায়ক,সাহায্যকারী ও সহানুভূতিমূলক ব্যবহার সহানুভূতিশীল হওয়া অতীব জরুরী।এখন সময় এসেছে আমাদের গতানুগতিক মানসিকতা বদলাবার । এ সম্পর্কিত আরও বিস্তারিত জানা জরুরী। শুধু নারীর জন্য নয়,বাবা ,ভাই ও পুরুষ সঙ্গীটিরও জানতে হবে।

নারীর মাসিকের সাইকেলের সময় বিশেষ করে মাসিকের আগের কিছুদিন প্রিমেন্সট্রুয়াল সিন্ড্রম বা পি এম এস এর প্রভাব দেখা যায়। মাসিকের ৫ থেকে ১১ দিন আগে থেকে শুরু হয়ে অনেক সময় এর প্রভাব পরের বার মাসিক শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত চলতে থাকে। এর কারণ আসলে এখনও অজানা। তবে অনেক গবেষক ধারণা করেন, মাসিক চক্রের সময়ের হরমোন মাত্রার পরিবর্তনের কারণে এরকম হয়ে থাকে। এস্ট্রোজেন এবং প্রযেস্টেরনের মাত্রাও বেড়ে যায় এসময়। হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে যখন তখন মেজাজ খারাপ হওয়া, উদ্বিগ্নতা, বিরক্তি তৈরী হতে পারে। এই সময়ে মেয়েদের মধ্যে ডিপ্রেশন বা অবসণ্নতা দেখা যায়। সে তার সব কথা খুলে বলতে পারে না। তার মনে এক ধরনের ভয় ও শঙ্কা কাজ করে। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সে আলাদা থাকতে পছন্দ করে। আবেগপ্রবণ এ সময় প্রকট আকার ধারন করতে পারে ।

তাই মাকে ও পরিবারের সকল সদস্যকে বন্ধু হতে হবে। তাকে সময় নিয়ে মেয়ের সমস্যা শুনতে হবে। অভিভাবকদের লক্ষ রাখতে হবে মেয়েটি. শরীরে আসা পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। কী ধরনের অনুভূতি ছিল সেসব বিষয় আলোচনা করতে হবে, কীভাবে সমস্যা থেকে উত্তরণ হয়েছিল তাও তাকে বলতে হবে। মাসিক কোন লজ্জার ব্যপার নয় মেয়েদের অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়।সুতরাং লজ্জা মনে করে রাখঢাক না এই মাসিক পূর্ব বিষণ্ণতা লক্ষণ বা Pre-menstrual- syndrome-অর্থাৎ PMS-কে আমাদের বিবেচনায় আনা অতিব প্রয়োজন। সময় মত ব্যবস্থা না নিলে এই রোগ পরবর্তীতে মারাত্মক হতে পারে।

Collected   (ডাঃ শুভাগতা সেন)

 

 

শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ

 

 

রোগ ও রোগী-ইসলাম কি বলে!-২১