আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
প্রথমেই জেনে নেই অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে এই ভাইরাস সম্পর্কে।
নতুন এই রোগটিকে প্রথমদিকে নানা নামে ডাকা হচ্ছিল, যেমন: ‘চায়না ভাইরাস’, ‘করোনাভাইরাস’, ‘২০১৯ এনকভ’, ‘নতুন ভাইরাস’, ‘রহস্য ভাইরাস’ ইত্যাদি।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা ‘করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
Human corona virus- causes common cold
SARS-CoV( Severe Acute respiratory syndrome corona virus) out break in 2003-2004 Guangdong,China,bat/animal, fatality 9-12%
MERS-CoV(Middle East respiratory Syndrom corona virus) outbreak in 2012, Saudi Arabia, bat/camal,Fatality 35%
SARS-CoV2(COVID-19 corona virus Disease 19)-Dec 2019, Wuhan,China-Worldwide, fatalaity approx.3% Data collect from associate prof of Medicine,UIC
ভাইরাস বাঁচার জন্য সকল সময়েই হোস্টের প্রয়োজন হয়।
মানুষসহ অন্য প্রানী আক্রান্ত হতে পারে
মানুষ থেকে মানুষ অথবা অন্য প্রানী থেকে মানুষে আসতে পারে।
যখন মানুষের দেহে নতুনভাবে আসে সেটা মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
কিভাবে ছড়ায়ঃ
একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষঃ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে
প্রত্যক্ষ বা সরাসরি- হাতের স্পর্শে, হাঁচি কাশি যা কাছের ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে, তবে যেহেতু ভাইরাসটি ভারী তাই সেটা দূরে বাতাসে ছড়াতে পারে না, নীচে মাটিতে বা কোন কিছুর উপর পড়ে যায়
পরোক্ষভাবে- রোগী দিয়ে আক্রান্ত জায়গা স্পর্শ করলে যেমন দরজা, আটেনসিলস(চামচ গ্লাস) এর পর সেই হাতে নিজের চোখ, নাক, মুখে স্পর্শ করলে।
একটি কাশিতে সাধারনত গড়ে ৩০০০ ড্রপলেট বের হয় যা ৫০ মাইল পার ঘন্টা ছুটে যেতে পারে।
একটি হাচিঁতে সাধারনত গড়ে ৪০০০ ড্রপলেট বের হয় যা ২০০ মাইল পার ঘন্টা ছুটে যেতে পারে।
হিউম্যান করোনা ভাইরাস কমন কোল্ড অর্থাৎ সাধারন ঠান্ডা লাগা বলতে যা বুঝি তা করে থাকে।
কোভিড-১৯ সার্স কোভ-২ ধারনা করা হচ্ছে বাঁদুর থেকে অন্য প্রানী ও মানুষে ছড়াচ্ছে।
চায়না-ডিসেম্বর-২০১৯ প্রথম সনাক্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত ১০০ দেশ বা বেশী ছড়িয়ে গিয়েছে।
কাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছেঃ
বৃদ্ধঃ > ৬০বছর বিশেষভাবে > ৮০ বছর
হার্ট, ফুসফুস ও কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগী (মাল্টি অর্গান রোগ)
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা( immunity )কম আছে যাদের যেমন ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি
(chronic) অনেকদিন ধরে ইনফেকশন আক্রান্ত এমনকি ফ্লও (Flu)
এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষন কি কিঃ
ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে লক্ষন দেখা যায়।
জ্বর, কাঁশি, শ্বাস নিতে কষ্ট, ক্লান্ত অনুভব হওয়া, মাংসপেশী ব্যাথা লাগা।
এই লক্ষন গুলো দেখা গেলে মাস্ক ব্যবহার করে ভাইরাস ছড়ানোটা রোধ করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে হাসপাতালে বা ডাক্তার এনে পরীক্ষা করিয়ে নেয়া।
বাসায় পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা রুমে অবস্থান করাটাই শ্রেয়।
সাধারনত যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্ষে এসে থাকেন অথবা বিদেশ থেকে এসে থাকলে ভাইরাস আছে কিনা পরীক্ষা করাটা প্রয়োজন। সকলেরই পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয় না,কারন সাধারন ফ্ল (flu) তেও এই লক্ষন দেখা যায়, যা বাড়ীতে থেকে সুস্থ হয়ে যায় আল্লাহর সাহায্যে।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির যা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে—
নাক, গলা, মল-মূত্র ।
কোন চিকিৎসাই এখন পর্যন্ত বের হয় নাই। তবে মহান আল্লাহ সকল রোগের চিকিৎসা দিয়েছেন। আমরা প্রথমেই মহান রবের বিধানের দিকে যাই ও তাঁর উপর তাওয়াক্কুল করে তাওবা ইস্তিগফার বাড়িয়ে দেই ও দু’আ করি।
নু’আয়ম মুজমির (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। অতঃপর তিনি উযূ করে বললেনঃ ‘আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে যে, উযূর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমন্ডল উজ্জ্বল থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।’ (মুসলিম ২/১২, হাঃ ২৪৬, আহমাদ ৯২০৬) (আ প্র ১৩৩, ই ফা ১৩৮)
আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। সূরা বনী ইসরাঈল:৮২
রাসূল স. বলেছেন- তোমাদের জন্যে অবশ্যই দুটো ঔষধ রয়েছে, একটি হচ্ছে কুর’আন আর অপরটি মধু। ইবনে মাজাহ: ৩৪৫২
নবী(সঃ) বলেছেন-তোমরা নিজেদের জন্য এই কালো বীজ (কালিজিরা) ব্যবহার বাধ্যতামুলক করে নাও। কেননা এর মধ্যে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের নিরাময় রয়েছে। আস-সাম অর্থ মৃত্যু –তিরমিযী-আবওয়াবুত তিব্ব-১৯৯১
মদীনার উঁচু এলাকার আজওয়া খেজুরে রোগ মুক্তির উপাদান রয়েছে। সহিহ মুসলিম:৫১৭০
যে ব্যক্তি প্রত্যহ সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, তাকে ঐদিন কোনো বিষ বা যাদু ক্ষতি করতে পারবে না। সহিহ বুখারী: ৫০৪২ ও মুসলিম: ৫১৬৮
“ভালো কাজ তথা সদকা-খয়রাত সদকাকারীকে সমূহ বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে”। সহীহুত-তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ৮৮৯
কিভাবে নিজেকে হেফাজত করা যাবে ও জীবানু ছড়ানো বন্ধ করা যাবেঃ থ্রি সি’স ক্লিন, কভার,কন্টেইন ক্লিন 3 C’S CLEAN,COVER, CONTAIN CLEAN
- সাবান পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০সেকেন্ড হাত ধোয়া,
- সাবান পানি না থাকলে সেনিটাইজার বা এলকোহল যা কমপক্ষে ৬০% থাকতে হবে।
- নাক, চোখ ও মুখে হাত না দেয়া অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় ও বাইরে থাকা অবস্থায়
- পরিস্কার ও ইনফেকশন মুক্ত করা স্থানগুলো যা খুব ঘন ঘন স্পর্শ করা হয়
- কাঁশি হাঁচি লাগা টিস্যু ঢেকে বদ্ধ ময়লা ফেলার স্থানে ফেলা প্রয়োজন যা দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়
- অসুস্থ হলে বাসায় অবস্থান করা , বাইরে বের না হওয়া ডাক্তারের কাছে যাওয়া ছাড়া।
- যারা অসুস্থ তাদের সাথে খুব কাছে না যাওয়া।
হাত ধুবেন কিভাবেঃ
খুব সহজ উপায় হচ্ছে বিসমিল্লাহ, সুবহানাআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার প্রতিটি একবার বলতে এক সেকেণ্ড লাগে, আপনি ২০ বার বলুন। কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড বুঝার জন্য এই পদ্ধতি নিতে পারেন।
সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সঠিক পদ্ধতি জেনে নেওয়া জরুরি।
হাতের ওপর-নিচে ঘষা : প্রথমে হাত ভিজিয়ে সাবান লাগিয়ে দুটি হাতের ওপর-নিচ ভালোভাবে ঘষুন। কমপক্ষে পাঁচ সেকেন্ড ধরে এ কাজটি করুন।
আঙুল ভালোভাবে পরিষ্কার : এরপর দুই হাতের আঙুলের মাঝখানে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। এ কাজটি করতেও কমপক্ষে পাঁচ সেকেন্ড সময় ব্যয় করুন।
নখ পরিষ্কার : এবার নখের জীবাণু দূর করার জন্য হাতের তালু দিয়ে কমপক্ষে ২.৫ সেকেন্ড ধরে ঘষুন। এভাবে দুই হাতের জন্য পাঁচ সেকেন্ড সময় লাগান।
বৃদ্ধাঙুল ধোয়া : ধোয়ার সময় হাতের সবচেয়ে অবহেলিত অংশই হলো বৃদ্ধাঙুল। তাই ধোয়ার সময় দুই হাতের তালু দিয়ে এই দুই আঙুল ভালোভাবে ঘষে নিন। এতে সর্বমোট পাঁচ সেকেন্ড সময় ব্যয় করুন। পরে পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
সাবান নাকি হ্যান্ডওয়াশ : হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করার জন্য সাবান নাকি হ্যান্ডওয়াশ কোনটি ভালো? এ ক্ষেত্রে অবশ্য সাবান-পানিকেই এগিয়ে রাখেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, ভ্রমণের সময় শতকরা ৬০ ভাগ অ্যালকোহল সমৃদ্ধ হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার একটি ভালো পরিকল্পনা হতে পারে। কেননা এ সময় পানি দিয়ে হাত সঠিকভাবে ধোয়া সম্ভব হয় না।
হাঁচি কাঁশির সময় করনীয়ঃ
টিস্যু ব্যবহার করা ও নির্ধারিত বাস্কেটে ফেলা
হাতে নয় ড্রেসের হাতায় নাক মুখ ঢাকা
মাস্ক ব্যবহার করা যেনো অন্যের উপর না যায়
হাত ধুয়ে ফেলা বা সেনিটাইজার ব্যবহার করা
বিশেষভাবে পরিবহন,স্থান বা জিনিষ স্পর্শে হাত ধুয়ে ফেলা বা সেনিটাইজার ব্যবহার করা। তবে মহামারি আকার দেখা দিলে এইগুলো থেকে দূরে থাকা।
১. গণপরিবহন ২. কর্মক্ষেত্র ৩. জনসমাগমস্থল ৫. লিফট ৬. টাকা-পয়সা ৭. শুভেচ্ছা বিনিময়
https://onedrive.live.com/view.aspx?resid=FF0AF6B5548E78B4!1950&ithint=file%2cpptx&authkey=!AHM0aOxtajFV7Gw
মহান আল্লাহ মানবজাতির কল্যানে অনেক জ্ঞান ও চিকিৎসাপত্র দিয়ে রেখেছেন। কুর’আন ও হাদীসের আলোকে জীবন যাত্রা অনুসরন করলে, অনেক রোগ থেকে নিজেদের স্বাভাবিকভাবেই হেফাজত রাখা যায় মহান রবের হুকুমে।
আজ মুসলিম জাতির মাঝেও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ভয়ে আছন্ন,যেনো মৃত্যু আসার আগেই মারা যাচ্ছে! মহান রবের একটি ক্ষুদ্র সৃষ্টি এই ভাইরাস, তাকে ভয় পাচ্ছে অথচ যিনি সৃষ্টিকর্তা যাঁর নিয়ামত দিয়ে জীবন যাপন করছি,তাঁকে ভয় করছে না। রবের সামনে ফিরে যেতে হবে, রব সকল কিছু দেখছেন, তাতে কোন সম্বিত ফিরছে না। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকেই অন্তর্চক্ষু খুলে দিয়ে হেদায়েতের পথে চলার তাওফিক দিন।
আজ এই ভাইরাসের ভয়ে মানুষ হাত বার বার ধু্যা, মুখে মাস্ক লাগানো, অন্যের হাত স্পর্শ না করা ইত্যাদি অনেক পরামর্শ আসছে। অথচ একজন মুসলিমের জীবন যাত্রায় ৫ওয়াক্ত সালাতের পূর্বে অযু ও মুমিনকে সবসময় অযু অবস্থায় থাকার নির্দেশিকা কত কত বছর আগের চিকিৎসাপত্র দিয়ে রেখেছেন রব্বুল আ’লামীন তাঁর রাসূল স.এর মাধ্যমে। আর পর্দার বাধ্যতামূলক নীতি ও নির্দেশিকা, নারীর মুখ ঢেকে রাখা, অন্যের (গায়ের মাহরাম) হাত স্পর্শ না করা সহ আরো সকল বিধানই একজন মুমিনের জীবনকে সুস্থ সুন্দর পবিত্র করে দেয়, সমাজ ব্যবস্থাকে করে দেয় নিরাপদ সুস্থ, সুবহানা আল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আলহামদুলিল্লাহ।
পূর্বে একেক জাতি বিভিন্ন গুনাহের জন্য বিভিন্ন রকমের আযাবের সম্মুখিন হয়েছিলো ও ধ্বংস হয়েছিলো, আজ বর্তমান বিশ্বে পূর্বের জাতি যা করেছিলো সকল গুনাহের প্রচলন উপচে পড়ছে। যেকোন মহামারি জাতির জন্য সাবধানতা। মুমিনের জন্য কোন চিন্তার বিষয় নয়। আতংকের বা ভয়ের কোন ব্যপার নয়।
হজরত ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বীনের কার্যকলাপে শৈথিল্য প্রদর্শন করা হলে সেই সম্প্রদায়ের লোকদের অন্তরে ভয়-ভীতি ঢেলে দেওয়া হয়, কোনো সম্প্রদায়ে যেনা-ব্যভিচার বৃদ্ধি পেলে তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়, কোনো সম্প্রদায়ের লোক মাপে কম দিলে তাদের রিজিক সংকুচিত করে দেওয়া হয়, কোনো সম্প্রদায়ে অন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালা করা হলে সে গোত্রে রক্তপাত বৃদ্ধি পায়, কোনো সম্প্রদায়ের লোক অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে তাদের মধ্যে শত্রুতা প্রবল করে দেওয়া হয়। (মুয়াত্তা মালেক, মিশকাত : পৃ. ৪৫৯)
হজরত হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ নিবদ্ধ তাঁর শপথ! তোমরা অবশ্যই ন্যায় কাজের আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজ থেকে (মানুষকে) বিরত রাখবে। অন্যথায় আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর আযাব পাঠাবেন। অতঃপর তোমাদের পরিত্যাগ করা হবে এবং তোমাদের দোয়াও কবুল করা হবে না।’ (তিরমিযি)
৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে খলিফা ছিলেন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)। ওই সময় প্লেগ দেখা দিয়েছিল সিরিয়া ও প্যালেস্টাইনে। ইতিহাসে যা ‘আম্মাউস প্লেগ’ নামে পরিচিত। উমর (রা.) সিরিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিলেন। ‘সারগ’ নামক জায়গায় পৌঁছার পর সেনাপতি আবু উবাইদাহ (রা.) খলিফাকে জানালেন, সিরিয়ায় তো প্লেগ দেখা দিয়েছে।
উমর (রা.) প্রবীণ সাহাবীদেরকে পরামর্শের জন্য ডাকলেন। এখন কী করব? সিরিয়ায় যাবো নাকি যাবো না? সাহাবীদের মধ্য থেকে দুটো মত আসলো। একদল বললেন, ‘আপনি যে উদ্দেশে বের হয়েছেন, সে উদ্দেশে যান’। আরেকদল বললেন, ‘আপনার না যাওয়া উচিত’।
তারপর আনসার এবং মুহাজিরদের ডাকলেন পরামর্শ দেবার জন্য। তারাও মতপার্থক্য করলেন। সবশেষে বয়স্ক কুরাইশদের ডাকলেন। তারা এবার মতানৈক্য করলেন না। সবাই মত দিলেন, ‘আপনার প্রত্যাবর্তন করা উচিত। আপনার সঙ্গীদের প্লেগের দিকে ঠেলে দিবেন না।’
উমর (রা.) তাঁদের মত গ্রহণ করলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, মদীনায় ফিরে যাবেন। খলিফাকে মদীনায় ফিরে যেতে দেখে সেনাপতি আবু উবাইদাহ (রা.) বললেন, ‘আপনি কি আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর থেকে পালানোর জন্য ফিরে যাচ্ছেন?’ আবু উবাইদাহর (রা.) কথা শুনে উমর (রা.) কষ্ট পেলেন। আবু উবাইদাহ (রা.) ছিলেন তাঁর এতো পছন্দের যে, আবু উবাইদাহ (রা.) এমন কথা বলতে পারেন উমর (রা.) সেটা ভাবেননি।
উমর (রা.) বললেন, ‘ও আবু উবাইদাহ! যদি তুমি ব্যতীত অন্য কেউ কথাটি বলতো! আর হ্যাঁ, আমরা আল্লাহর এক তাকদীর থেকে আরেক তাকদীরের দিকে ফিরে যাচ্ছি।’ আল্লাহর এক তাকদীর থেকে আরেক তাকদীরের দিকে ফিরে যাওয়ার মানে কী? উমর (রা.) সেটা আবু উবাইদাহকে রা. বুঝিয়ে বলেন, ‘তুমি বলতো, তোমার কিছু উটকে তুমি এমন কোনো উপত্যকায় নিয়ে গেলে যেখানে দু’টো মাঠ আছে। মাঠ দু’টোর মধ্যে একটি মাঠ সবুজ শ্যামল, আরেক মাঠ শুষ্ক ও ধূসর। এবার বলো, ব্যাপারটি কি এমন নয় যে, তুমি সবুজ মাঠে উট চরাও তাহলে তা আল্লাহর তাকদীর অনুযায়ী চরিয়েছো। আর যদি শুষ্ক মাঠে চরাও, তা-ও আল্লাহর তাকদীর অনুযায়ী চরিয়েছো।’
অর্থাৎ, উমর (রা.) বলতে চাচ্ছেন, হাতে সুযোগ থাকা সত্তে¡ও ভালোটা গ্রহণ করা মানে এই না যে আল্লাহর তাকদীর থেকে পালিয়ে যাওয়া। কিছুক্ষণ পর আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) আসলেন। তিনি এতক্ষণ অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি এসে রাসূল (সা.)-এর একটি হাদীস শুনালেন।
‘তোমরা যখন কোনো এলাকায় প্লেগের বিস্তারের কথা শুনো, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোনো এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে, আর তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেও না।’ (সহীহ বুখারী : ৫৭২৯)।
রাসূল (সা.)-এর হাদীসটি সমস্যার সমাধান করে দিলো। উমর (রা.) হাদীসটি শুনে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন।
রাসূল (সা.) বলেন, ‘(প্লেগ) মহামারীতে মৃত্যু হওয়া প্রত্যেক মুসলিমের জন্য শাহাদাত।’ (সহীহ বুখারী : ২৮৩০)।
রাসূল (সা.) প্লেগ সম্পর্কে বলেন, ‘এটা হচ্ছে একটা আজাব। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের উপর ইচ্ছা তাদের উপর তা প্রেরণ করেন। তবে, আল্লাহ মুমিনদের জন্য তা রহমতস্বরূপ করে দিয়েছেন। কোনো ব্যক্তি যদি প্লেগে আক্রান্ত জায়গায় সওয়াবের আশায় ধৈর্য ধরে অবস্থান করে এবং তার অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, আল্লাহ তাকদীরে যা লিখে রেখেছেন তাই হবে, তাহলে সে একজন শহীদের সওয়াব পাবে।’ (সহীহ বুখারী : ৩৪৭৪)।
তাই বর্তমান অবস্থায় আতংকগ্রস্থ না হয়ে ফিরে আসি কুর’আন হাদীসের পথে। সকল ব্যবস্থাপনা গ্রহন করি নিজেদের জীবনে। মেনে চলি সকল হাইজিন।
পাপ পংকিলতা অশ্লিলতা থেকে নিজেদের হেফাজত করে নেই। তাওবা ইস্তিগফার করে রবের কাছেই সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করি।