দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে—-
অনেক ইখতেলাফ আছে যে, কেউ বলেছেন সালাতে সুতরা ওয়াজিব তবে সকল হাদীস নিয়ে যা বুঝা যায় সুতরা একটি অনেক শক্ত ধরনের (recomended not obligatory) সুন্নাহ।
জামা’আতে সালাত আদায়ে ইমামের সামনের সুতরাই সকলের সুতরা।
একাকী সালাত আদায়ে সামনে সুতরা রেখে সালাত আদায় করা এবং সুতরার কাছাকাছি দাড়ানো।
সুতরা থাকার ফলে এর দ্বারাও সালাতে একাগ্রতা অর্জন হয়। দৃষ্টি প্রসারিত হয় না, শয়তান থেকে হেফাজত এবং মানুষের চলাচল থেকেও নিরাপদ থাকা যায়। ঐ সকল জিনিস দ্বারা সালাতে অন্যমস্কতার সৃষ্টি হয়, সাওয়াব কমে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
”তোমাদের কেউ যখন সালাত পড়বে, সামনে সুতরা নিয়ে নেবে এবং তার নিকটবর্তী হয়ে দাঁড়াবে।(আবু দাউদ : ১৬৯৫/৪৪৬, সহিহ আল-জামে : ৬৫১)
সুতরার নিকটবর্তী হয়ে দাড়ানোতে অনেক উপকার নিহিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
যখন তোমাদের কেউ সুতরার সামনে সালাত পড়বে, সুতরার নিকটবর্তী হয়ে দাড়াবে। আবু দাউদ : ১৬৯৫/৪৪৬, সহিহ আল-জামে : ৬৫১)
যাতে শয়তান তার সালাত নষ্ট না করতে পারে। সুতরার নিকটবর্তী হওয়ার সুন্নত তরিকা হলো, সুতরা এবং তার মাঝখানে তিন হাত ব্যবধান রাখা। সুতরা এবং সেজদার জায়গার মাঝখানে একটি বকরি যাওয়ার মত ফাক রাখা। (বোখারি -ফতহুল বারি : ১/৫৭৪, ৫৭৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও নির্দেশ দিয়েছেন, কেউ যেন সুতরার সামনে দিয়ে যেতে কাউকে সুযোগ না দেয়। তিনি বলেন, ”যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে, সালাতের সম্মুখ দিয়ে কাউকে যাওয়ার সুযোগ দিবে না। যথাসাধ্য তাকে প্রতিরোধ করবে। যদি সে অস্বীকার করে তবে তাকে হত্যা করবে। কারণ, তার সাথে শয়তান। ( সহিহ মুসলিম : ১/২৬০, সহিহ আল-জামে : ৭৫৫)
ইমাম নববি রহ. বলেন, ”সুতরার রহস্য হলো, এর ভেতর দৃষ্টি সীমাবদ্ধ রাখা, যাতায়াত বাধাগ্রস্থ করা, শয়তানের চলাচল রুদ্ধ করা। যাতে তার গমনাগমন বন্ধ হয়, সালাত নষ্ট করার সুযোগ না পায়। (সহিহ মুসলিম এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ : ৪/২১৬)
এখানে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন ব্যক্তির দাঁড়ানোর স্থান ও সেজদাহর স্থানের মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে কোনভাবেই অন্যকে যেতে দিবে না।
সুতরার উচ্চতা হবে সাধারণভাবে কমপক্ষে পৌনে একহাত সমপরিমাণ।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
“তোমাদের কারও সম্মুখে হাওদার পিছনের কাঠ পরিমাণ কোনও কিছু থাকলে সেটির বহিরে দিয়ে কোন কিছুর যাতায়াত তার কোন ক্ষতি করবে না।” ইবনে নুমায়র (রহঃ) বলেন, তার বাইরে দিয়ে ‘কোনও ব্যক্তির’ যাতায়াত ক্ষতি করবে না।
(সহীহ মুসলিম: ৯৯৫, অধ্যায়ঃ ৪/ কিতাবুস সলাত ( كتاب الصلاة) ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
▪ ইমাম নওবী রহ. বলেন: ‘(উটের পিঠে রাখা) হাওদার পিছনের কাঠ’ হল, বাহুর হাড় সমপরিমাণ। যা নিম্ন পক্ষে প্রায় পৌনে এক হাত উঁচু। আর সুতরা হিসেবে যে কোন কিছু সামনে রাখা যেতে পারে।” (শরহে সহীহ মুসলিম ৪/২১৬)
যদি অতটুকু উঁচু কোন কিছু না পাওয়া যায় তাহলে এর চেয়ে কম উচ্চতা সম্পন্ন কোন জিনস রাখবে। যেমন, কোন জামা-কাপড়, মাথার টুপি, ইট, পাথর ইত্যাদি। তাও না পেলে মরুভূমি বা মাঠে নামায পড়লে একটা দাগ দিয়ে নিবে। দাগ দেয়ার হাদিসটিকে ইবনে হাজার প্রমুখ হাসান বলেছেন। যদিও শাইখ আলবানী যঈফ বলেছেন। তবে সুতরা ছাড়া সালাত আদায় করলেও সালাত শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।
কতটুকু দূরত্বে সুতরা রাখা উচিৎ?
মুসল্লির দাঁড়ানোর স্থান থেকে প্রায় তিন হাত দূরত্বে অথবা সেজদার স্থান থেকে এতটুকু দূরত্বে সুতরা রাখা উচিৎ যেন, সেজদার স্থান ও সুতরার মাঝখান দিয়ে একটা ছাগল অতিক্রম করতে পারে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
▪ আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. যখন কা‘বা শরীফে প্রবেশ করতেন তখন সামনের দিকে চলতে থাকতেন এবং দরজা পেছনে রাখতেন। এভাবে এগিয়ে গিয়ে যেখানে حَتَّى يَكُونَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجِدَارِ الَّذِي قِبَلَ وَجْهِهِ قَرِيبًا مِنْ ثَلاَثَةِ أَذْرُعٍ তাঁর ও দেওয়ালের মাঝে প্রায় তিন হাত পরিমাণ ব্যবধান থাকতো, সেখানে তিনি সালাত আদায় করতেন।” (সহীহ বুখারী: ৫০৬ অধ্যায়ঃ ৮/ সলাত (كتاب الصلاة) তাওহীদ পাবলিকেশন)