হাদীসের আলোকে সালাতঃ১৩

আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

”তোমাদের কারো সালাতে তন্দ্রাভাব হলে ঘুমিয়ে নাও। যাতে যা বল তা বুঝতে পার।” (সহিহ মুসলিম : ৫৬০)

”যখন তোমাদের কারো সালাতে তন্দ্রাচ্ছন্নভাব হবে শুয়ে পড়বে। যাতে ঘুম চলে যায়। কারণ, তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় এস্তেগফার করার সময় হয়তো নিজেকে অভিসম্পাত করে বসবে।” ( সহিহ বোখারি : ২০৯)

এই অবস্থাটা আমাদের অনেকেরই হয়ে থাকে, সালাত আদায় করতে হবে তাই করে নেই এই মনোভাব দিয়ে এটা হয়। তাই সালাতকে মহান রবের সাথে কথা বলা ও আনন্দের ও প্রতিক্ষিত একটি ক্ষন হিসেবে মনে করলে আর সমস্যা হবে না।

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

”তোমাদের কারো বাথরুমের প্রয়োজন মুহূর্তে সালাতের সময় হয়ে গেলে আগে বাথরুম সেরে নিবে।” (আবু দাউদ : ৮৮, সহিহ আল-জামে : ২৯৯)

বরং সালাতের মাঝখানেও পেশাব-পায়খানার বেগ হলে, সালাত ছেড়ে আগে প্রয়োজন সেরে নিবে। অত:পর অজু করে সালাত পড়বে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

”খানার উপস্থিতে কোনো সালাত নেই, তদ্রুপ বাথরুম চেপে রেখেও কোন সালাত নেই।'( সহিহ মুসলিম : ৫৬০)

কারণ, এর দ্বারা সালাতের একাগ্রতা দূরীভূত হয়ে যায়।  বাতকর্ম চেপে রাখাও এর অর্ন্তভুক্ত।

 

 

বোখারি রহ. মুআইকিব রা. হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদার জায়গা হতে ধুলো বালি হটানো ব্যক্তিকে বলেছেন,

”যদি তোমার একান্ত প্রয়োজন হয়, তাহলে একবার।” (ফতহুল বারি : ৩/৭৯)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,

”সালাত রত অবস্থায় সেজদার জায়গা মুছবে না। একান্ত প্রয়োজন হলে একবার।”

رواه أبو داود رقم (৯৪৬) وهو في صحيح الجامع رقم (৭৪৫২).

এর কারণ হলো সালাতের একাগ্রতা বজায় রাখা, যাতে এর ভেতর অন্য কোনো কাজ প্রাধান্য না পায়। বরং সবচে’ উত্তম হলো সালাতের পূর্বেই সেজদার স্থান পরিস্কার করে নেয়া।

সালাতের ভেতর কপাল কিংবা নাক মোছাও এর অর্ন্তভুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটির উপর, পানির উপর সেজদা করেছেন। সালাত শেষে তার লক্ষণও দেখা গেছে। তিনি প্রত্যেকবার উঠাবসায় মাটি-পানি কিছুই পরিস্কার করেননি। সালাতের একাগ্রতা এসব জিনিস ভুলিয়ে দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেন-ই ”সালাতের কঠিন ব্যস্ততা রয়েছে।” (বোখারি : ফতহুল বারি : ৩/৭২)

এইক্ষেত্রে নারীরা দেখা যায় সালাতে মাথার কাপড় বা হিজাব ঠিক করতে ব্যস্থ হয়ে যান যা সঠিক নয়। সালাত শুরুর আগেই যথাযথ পোষাক পড়ে নিবে যেন সালাতে একাগ্রতা বিঘ্ন না ঘটে।

 

 

আবু যর রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

” (নামাজি) বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত এদিক সেদিক না তাকায়, আল্লাহ তার প্রতি মনোনিবেশন করে থাকেন। যখন এদিক সেদিক তাকায় আল্লাহ দৃষ্টি হটিয়ে নেন।” (আবু দাউদ : ৯০৯, হাদিসটি সহিহ)

সালাতের ভেতর ইলতেফাত তথা এদিক সেদিক তাকানো দু’ধরণের : অন্তরের ইলতেফাত, চোখের ইলতেফাত। উভয় ইলতেফাত নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এলতেফাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি বলেন,

”এ হলো কেড়ে নেয়া, এর মাধ্যমে শয়তান বান্দার সালাতের সাওয়াব কেড়ে নেয়।”