আয়েশা রা. হতে বর্ণিত,
জনৈকা নারী তাকে জিজ্ঞেস করলো, ঋতুবতি নারী রোজার কাজা করে অথচ সালাতের কাজা করে না। তিনি বললেন, আমাদের রোজা কাজা করার আদেশ দেয়া হয়েছে আর সালাত কাজা করার আদেশ দেয়া হয়নি। (বুখারি:৩২১/৩৩৫)
যে সকল কারনে রামাদান মাসের ফরয সাওম না রাখার অনুমতি আছে, পরবর্তীতে কাজা(অর্থাৎ একটি রোজার বিনিময়ে একটি রোজা রাখলেই আদায় হয়ে যাবে) আদায় করে নিবেন আর তা হলো–
১- অসুস্থতা:
‘আলিমগণের অধিকাংশের মতে, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন চার জন ইমাম (আবূ হানীফাহ্, মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ), একজন রোগীর জন্য রমযান মাসে সাওম ভঙ্গ করা জায়েয নয় যদি না তার রোগ তীব্র হয়।
আর তীব্র রোগের অর্থ হলো :
১.সাওমের কারণে যদি রোগ বেড়ে যায়।
২.সাওমের কারণে যদি আরোগ্য লাভে দেরি হয়।
৩.সাওমের কারণে যদি খুব বেশি কষ্ট হয় যদিও বা তার রোগ বেড়ে না যায় বা সুস্থতায় বিলম্ব না হয়।
৪.এর সাথে আলিমগণ আরও যোগ করেছেন এমন ব্যক্তিকে যার সিয়াম পালনের কারণে অসুস্থ বা রোগ হবার আশংকা আছে।
রোজার কারণে যদি অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষতি, আরোগ্য লাভ বিলম্বিত কিংবা অসুস্থতা আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে তার জন্য রোজা না রাখাই উত্তম। কারণ, আল্লাহ তায়ালা পরম দয়ালু। তিনি তার বান্দাদের কোন কষ্ট দিতে চান না। তাদের কস্টের প্রতি লক্ষ্য রেখেই আল্লাহ তাদের রোজা না রাখার অনুমতি দিয়েছেন। সুতরাং নিজ বান্দাদের যে সুযোগ তিনি দিয়েছেন তাকে গণিমত মনে করাই শ্রেয়।
২- সফর:
সফর অবস্থায় রমজান এসে গেলে অথবা রমজানের মধ্যে সে কোথাও সফরে গেলে, তার জন্য উত্তম হলো রোজা না রাখা। রোজা রাখা তার জন্য কষ্ট হোক বা না হোক। আল্লাহ যেহেতু সুযোগ দিয়েছেন, সুযোগকে কাজে লাগাবে এটিই তার জন্য উত্তম।
সফরের দূরত্ব: সফরের দূরত্ব আশি কিলোমিটার। পূর্বেকার যুগে মানুষ পায়ে হেঁটে অথবা উটের পিঠে চড়ে স্বাভাবিক গতিতে চললে দুইদিন দুইরাতে আশি কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারত। তাই আশি কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার পর একজন ব্যক্তি মুসাফির হয়ে যায়।
৩- হায়েজ-নেফাস:
নেফাস ও হায়েজবতী নারীদের উপর স্রাব চলা কালীন রোজা রাখা হারাম।
ঋতুবতী মহিলাদের উপর ঋতুচলা কালিন সময়ে রোজা রাখা নিষেধ এ বিষয়ে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত এবং মুসলমানদের ইজমা হল মহিলাদের ঋতুস্রাব রোজার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সুতরাং হায়েজ বা নিফাস অবস্থায় রোজা রাখা জায়েয নয়।
৪- দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা যা হতে ভালো হওয়ার আশা করা যায় না এবং রোজা রাখা একে বারেই অসম্ভব: এমন অসুস্থ ব্যক্তিদের রোজা রাখা জরুরি নয়। তারা প্রতিটি রোজার পরিবর্তে প্রতিদিন একজন করে মিসকিনকে খানা খাওয়াবে। তাদেরকে রোজার কাজা করতে হবে না।
৫- বার্ধক্য:
এমন বৃদ্ধ ব্যক্তি যিনি রোজা রাখতে সম্পূর্ণ অক্ষম তার জন্য রোজা রাখা ওয়াজিব নয়। সে প্রতিটি রোজার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খানা খাওয়াবে তাকে রোজার কাজা করতে হবে না। (বার্ধক্যে উপনীত ব্যক্তির চেতনা যদি একেবারেই অবশিষ্ট না থাকে তার উপর কোন কিছুই ওয়াজিব হবে না)
৬- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলা:
রোজার কারণে যদি তাদের নিজেদের অথবা সন্তানদের ক্ষতির আশংকা হয় তাহলে তাদের জন্য রোজা রাখা ওয়াজিব নয়। তবে তারা যে ক’দিন রোজা রাখেতে পারেনি সে ক’দিনের কাজা করবে। আর যদি কোন নারী শুধু সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কায় রোজা হতে বিরত থাকে তবে তাকে কাজা করার সাথে সাথে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খানা খাওয়াতে হবে।প্রমাণ, আল্লাহ তায়ালা বলেন,
আর যারা রোজা রাখতে অক্ষম তারা একজন মিসকিনকে খানা খাওয়াবে। শায়খ সালেহ বিন ফাওযান আল ফাওযান
ইমাম বুখারী বলেছেন :
“আর বৃদ্ধ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যিনি সাওম পালনে সক্ষম নন, যেমন আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৃদ্ধ হওয়ার পর একবছর বা দুইবছর প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে রুটি ও গোশত খাইয়েছেন এবং সাওম ভঙ্গ করেছেন।”
বিস্তারিত জানার জন্য নীচের উত্তর পড়ার অনুরোধ রইলো।
প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
প্রথমত :
যে রমযান (মাস) পেল কিন্তু সিয়াম পালনে সক্ষম নয় অত্যন্ত বৃদ্ধ হওয়ার জন্য (অতি বার্ধক্যের কারণে) অথবা সে এমন রোগী যার সুস্থতা লাভের আশা করা যায় না, তার উপর সিয়াম পালন ফরয নয়, অক্ষমতার জন্য। সে সাওম ভঙ্গ করবে এবং প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে খাওয়াবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে যেমনটি ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যাতে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারো। নির্দিষ্ট কিছু দিনে। আর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ বা সফরে আছে, সে যাতে অন্য দিনগুলোতে তা আদায় করে নেয়, আর (তোমাদের মধ্যে) যারা (তাতেও) অপারগ, তারা যেন ফিদয়াহ হিসেবে মিসকীনকে খাবার খাওয়ায়, আর যে নফল কল্যাণ হিসেবে তা (ফিদয়াহ) বেশি করে আদায় করে, তবে তা তার জন্য উত্তম। আর তোমরা যদি সাওম রাখ তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তা তোমরা জানতে।”[আল বাকারাহ : ১৮৩-১৮৪]
আর আল-বুখারী (৪৫০৫) ইবনু ‘আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন :
“এটি মানসূখ (রহিত) নয়, বরং তা অতি বৃদ্ধ পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা সাওম পালন করতে পারবে না, তারা প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াবেন।”
ইবনু ক্বুদামাহ “আল-মুগনী”-তে (৪/৩৯৬) বলেছেন :
“অতি বৃদ্ধ পুরুষ ও নারীর জন্য সাওম পালন যদি কঠিন ও অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়, তবে তাঁরা সাওম ভঙ্গ করতে পারেন আর সেক্ষেত্রে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াবেন… তবে তিনি যদি (মিসকীন) খাওয়াতেও অক্ষম হন, তবে তার উপর কিছু (কোনো দায়িত্ব) বর্তায় না। কেননা,
﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ ﴾ [البقرة: ٢٨٦]
“আল্লাহ কারও উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না।” [আল-বাকারাহ: ২৮৬]
আর সে রোগী যার সুস্থতার আশা করা যায় না সেও সাওম ভঙ্গ করবে এবং প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে খাওয়াবে। কারণ সে বৃদ্ধ লোকের পর্যায়ভুক্ত।”
আর “আল-মূসূ‘আহ আল-ফিক্বহিয়্যাহ”-তে (৫/১১৭) আছে :
“হানাফী, শাফি‘ঈ ও হাম্বলী (ফিক্বহী মাযহাবের) ‘আলিমগণ এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, ফিদয়াহ তখনই আদায় করা যাবে, যখন বার্ধক্যের বা এমন রোগ যার সুস্থতার আশা করা যায় না। এর কারণে সাওম ভঙ্গ করা দিনগুলোর কাযা আদায়ের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাবে। এর দলীল আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖ﴾ [البقرة: ١٨٤]
“আর যারা তাতে (সিয়াম পালনে) অক্ষম, তারা ফিদয়াহ হিসেবে মিসকীন খাওয়াবে।” [আল-বাকারাহ: ১৮৪] এর অর্থ যাদের উপর সিয়াম পালন কষ্টসাধ্য।”
শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন “ফাত্ওয়া আস-সিয়াম”- এ (পৃঃ ১১১) বলেছেন :
“আমাদের জানা উচিত যে রোগী দুই প্রকার :
প্রথম প্রকার :
এমন রোগী যার সুস্থতার আশা করা যায়। যেমন-হঠাৎ হওয়া রোগ যার থেকে সুস্থতা আশা করা যায়। তার হুকুম হল যেমনটি আল্লাহ-তা‘আলা বলেছেন :
“আর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ বা সফরে আছে, সে যাতে অন্য দিনগুলোতে তা আদায় করে নেয়।” [আল-বাকারাহ: ১৮৪]
সে (এরূপ রোগী) শুধু সুস্থতার আশা করবে, এরপর সাওম পালন করে ফেলবে। যদি এমন হয় যে তার রোগ থেকেই গেল এবং সুস্থ হওয়ার আগেই সে মারা গেল, তবে তার উপর কিছু বর্তায় না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর অন্য দিনগুলোতে কাযা ওয়াজিব করেছিলেন এবং তা পাওয়ার আগেই সে মারা গেছে। এক্ষেত্রে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে রমযান আসার আগেই শা‘বান মাসে মারা গেল, তার পক্ষ থেকে কাযা করতে হবে না।
দ্বিতীয় প্রকার :
এমন রোগ যা স্থায়ী। যেমন-ক্যান্সারের রোগ-আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই-কিডনীর রোগ, ডায়াবেটিস বা এ ধরণের স্থায়ী রোগ (যা অসহনীয়) যা থেকে রোগী সুস্থতা আশা করে না, সে রোগী রমযান মাসে সাওম ভঙ্গ করবে এবং এবং প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীন খাওয়াবে ঠিক যেমন বৃদ্ধ পুরুষ ও নারী, যারা সিয়াম পালনে সক্ষম নয়, তারা সাওম ভঙ্গ করে এবং প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীন খাওয়ায়। কুরআন থেকে এর দলীল হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী :
﴿وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖ﴾ [البقرة: ١٨٤]
“আর যারা তাতে (সিয়াম পালনে ) অক্ষম, তারা যেন ফিদয়াহ হিসেবে মিসকীন খাওয়ায়।” [আল-বাকারাহ: ১৮৪]
দ্বিতীয়ত :
আর ইত্ব‘আম-এর (খাওয়ানোর) পদ্ধতি হল প্রত্যেক মিসকীনকে অর্ধেক সা‘ (প্রায় ১.৫[2] কিলোগ্রাম) খাবার যেমন-চাল বা ইত্যাদি দেওয়া অথবা খাবার বানিয়ে মিসকীনদের ডেকে খাওয়ানো।
শাইখ ইবনু বাযকে একজন অতি বৃদ্ধা নারী সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল যিনি সাওম পালনে সক্ষম নন, তিনি কী করবেন?
তিনি উত্তরে বলেন: :
“তাকে প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে আধা সা‘ খাবার খাওয়াতে হবে, তা সে দেশের খাদ্য দ্রব্য থেকে যেমন- খেজুর বা চাল বা এছাড়া অন্যান্য কিছু থেকে। ওজন হিসেবে এর পরিমাণ হল প্রায় দেড় (১.৫) কিলোগ্রাম। যেমনি নবীর একদল সাহাবী ফাত্ওয়া দিয়েছেন, যাঁদের মাঝে ইবনু ‘আব্বাসও (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) আছেন। আর যদি তিনি (অতি বৃদ্ধা নারী) দরিদ্র হন অর্থাৎ খাওয়াতে সক্ষম না হন, তবে তার উপর কিছু বর্তায় না, আর এই কাফফারাহ একজন (মিসকীন)-কে বা অনেকজনকে (মিসকীনদের) দেওয়া যেতে পারে মাসের শুরুতে বা এর মাঝে বা এর শেষে। আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা।” [মাজমূ‘ ফাত্ওয়া ইবন বায (১৫/২০৩)]
Islam Q & A
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী :
«مَنْ عَمِلَ عَمَلا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ» رواه البخاري (2697) ومسلم (1718)
“যে এমন কোন কাজ করে যা আমাদের (শারী‘আত এর) অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।” (এটি বর্ণনা করেছেন আল-বুখারীঃ২৬৯৭ ও মুসলিমঃ১৭১৮
যদি কোন মুসলিমের ছুটে যাওয়া সিয়ামের সংখ্যা মনে না থাকে, তবে সে কিভাবে তার কাযা করবে?
আর সিয়াম কাযা করার ক্ষেত্রে, আপনার সিয়াম ত্যাগ করা যদি আপনার সালাত ত্যাগ করা অবস্থায় হয়, তবে আপনার উপর সে সব দিনের, যে সব দিনে আপনি সাওম ভঙ্গ করেছেন তার কাযা করা ওয়াজিব নয়, কারণ যে সালাত ত্যাগ করে, সে বড় কুফর সংঘটনকারী কাফির (যা মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়)যেমনটি পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। আর কোনো কাফির যদি ইসলাম কবুল করে, কুফর অবস্থায় সে যে ‘ইবাদাতগুলো ত্যাগ করেছিল, তা কাযা করা তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
আর যদি আপনার সিয়াম ত্যাগ সালাত আদায় করা অবস্থায় হয়ে থাকে, তবে এক্ষেত্রে শুধু দুটো সম্ভাব্য ব্যাপারই ঘটতে পারে :
প্রথমত :
আপনি রাতে সিয়ামের নিয়্যাত করেন নি, বরং সাওম ভঙ্গের ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। এক্ষেত্রে আপনার পক্ষ থেকে কাযা শুদ্ধ হবে না। কারণ আপনি কোন ‘উযর (গ্রহণযোগ্য অজুহাত) ছাড়া শারী‘আতে নির্ধারিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করণীয় ‘ইবাদাত ত্যাগ করেছেন।
দ্বিতীয়ত :
আপনি সিয়াম শুরু করার পর সেই দিনে তা ভঙ্গ করেছেন। এক্ষেত্রে আপনার উপর কাযা করা ফরয। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রমযান মাসে দিনের বেলায় (যৌন) মিলনকারী ব্যক্তিকে কাফফারাহ আদায় করার আদেশ দিলেন, তখন বললেন:
“তুমি সে দিনের পরিবর্তে একদিন সাওম পালন কর।”
[এটি বর্ণনা করেছেন আবূ-দাঊদ (২৩৯৩), ইবনু মাজাহ (১৬৭১) এবং আল-আলবানী “ইরওয়াউল গালীল”-এ (৯৪০)-একে সহীহ বলেছেন]
আর শাইখ ইবনু ‘উসাইমীনকে রমযান মাসে দিনের বেলা কোনো ‘উযর (সঙ্গতকারণ) ছাড়া সাওম ভঙ্গ করা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি উত্তরে বলেন:
“রমযান মাসে দিনের বেলা কোন ‘উযর ছাড়া সাওম ভঙ্গ করা সবচেয়ে বড় (কাবীরাহ) গুনাহসমূহের একটি, এ দ্বারা সে ব্যক্তি ফাসিক্ব হয়ে যাবে। তার উপর ওয়াজিব হবে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করা, যেদিন সাওম ভঙ্গ করেছিল সেদিনের কাযা করা, অর্থাৎ সে যদি সাওম পালন শুরু করে দিনের মাঝে কোনো ‘উযর (অযুহাত) ছাড়া সাওম ভঙ্গ করেছে তার কাযা করতে হবে। কারণ যেহেতু সে সাওম শুরু করেছে, তার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিল এবং তা ফরয এই বিশ্বাসে তাতে প্রবেশ করেছে, তাই তার উপর এর কাযা করা বাধ্যতামূলক। নাযর (মান্নতের) এর ন্যায়।
আর যদি কোন ‘উযর ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে শুরু থেকেই সাওম ত্যাগ করে, তবে অধিক শক্তিশালী মতানুসারে তাকে তার কাযা আদায় করতে হবে না, কারণ সে এর দ্বারা কোনো উপকার পাবে না। এটি এজন্য যে, তা তার থেকে কবুল করা হবে না। এক্ষেত্রে মূলনীতিটি হলো-সকল ‘ইবাদাত যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত, তা কোনো ‘উযর (গ্রহণযোগ্য কারণ) ছাড়া সেই নির্দিষ্ট সময় থেকে বিলম্বে করা হলে, তা তার থেকে কবুল করা হবে না। এর দলীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী :
«مَنْ عَمِلَ عَمَلا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ» رواه البخاري (2697) ومسلم (1718)
“যে এমন কোন কাজ করে যা আমাদের (শারী‘আত এর) অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।” [এটি বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী (২৬৯৭) ও মুসলিম (১৭১৮)]
কারণ তা আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করার মধ্যে পড়ে আর আল্লাহ তা‘আলা নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করা যুলুম (অবিচার)। আর যালিম ব্যক্তির কাছ থেকে সেই যুলুম কবুল করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ ٱللَّهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٢٢٩ ﴾ [البقرة: ٢٢٩]
“আর যারা আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করে তারা হলো জালিম।” [আল-বাকারাহ: ২২৯]
আর এটি এজন্য যে, সে যদি এই ‘ইবাদাত নির্ধারিত সময় হবার আগে অর্থাৎ তা করার সময় শুরু হবার আগেই করত, তবে তা তার কাছ থেকে কবুল হত না। একই ভাবে সে যদি তা (সেই ‘ইবাদাতের) সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরে করে, তবে তাও তার কাছ থেকে কবুল হবে না যদি না সে মা‘যূর (অপারগ বা সঙ্গত কারণ বিশিষ্ট) হয়।”
[মাজমূ ‘ফাত্ওয়া আশ-শাইখ ইবন ‘উসাইমীন (১৯/প্রশ্ন নং ৪৫)]
আর তার উপর কর্তব্য হলো সকল পাপ কাজ থেকে (আল্লাহর কাছে) সত্যিকার অর্থে তাওবাহ করা [উপরে উল্লেখিত ইবনু বাযের ফাত্ওয়ায় তাওবাহর তিনটি শর্তসহ], ফরয কাজসমূহ সময়মত অব্যাহত রাখা, খারাপ কাজ ত্যাগ করা, বেশি বেশি নফল ও নৈকট্য লাভ হয় এমন কাজ করা।
আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন।
Islam Q & A