হাদীসের আলোকে সাওম-১২

যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রামাদানের রোযা রাখল, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় ক্বদরের রাতে (ইবাদাতে) দাঁড়াল, তার আগেকার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।  সহীহ আল বুখারী: ১৮৭১

এখানে ঈমান সহকারে বলতে বুঝায় যে এই রাতের মর্যাদা ও তাতে আমল করা শরীয়ত সম্মত হওয়ার ব্যাপারে বিশ্বাস স্থাপন করা।

প্রতিদানের আশায় বলতে বুঝায় মহান আল্লাহ তা’লার জন্য নিয়্যাতের ব্যাপারে ইখলাস বা একনিষ্ঠতা পোষণ করা।

 

নবী সা. রামাদানের শেষ দশদিনে ই’তেকাফে বসতেন যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁকে উঠিয়ে নিলেন। তারপর তাঁর পত্নীগনও (শেষ দশকে) ই’তেকাফ করতেন। সহীহ আল বুখারী: ১৮৮৪

জীবনের কত রাত আমরা কতভাবে জেগে কাটাতে সক্ষম হই। এমন যদি হয় যে কোন বড় একটি কোম্পানী বা অফিসের বস যদি এই কথা বলেন যে আগামী তিন দিনের কোন এক রাতে কোটি টাকার চেক, কোম্পানীর লাভের ফান্ড থেকে ১০ জনকে দেয়া হবে তবে ঐ তিন রাত এই কোম্পানীর বা অফিসের রুমে সারারাত কাজ করতে হবে। তাহলে দেখবেন কতজন হুমড়ি খেয়ে লেগে যাবে এই রাতগুলো জাগ্রত থেকে কাজ করার জন্য। মানুষের চরিত্রের এই দিকটি হলো যে, সে এই মুহূর্তে যে লাভটা দেখতে পায় সেটার ব্যাপারে সে খুব পরিশ্রমী হয়ে যায়। অথচ আমরা ঈমানদারদের দাবীই হলো আমার রব যা বলছেন তা এই মুহূর্তে লাভ করার চেয়েও শতভাগ নিশ্চিত যে আমি সেটা পাবোই বরং দুনিয়ার অনেক কিছুই যেমন ঐ কোম্পানীর দেয়া পুরস্কার অনিশ্চিত হতে পারে।

অনেকে নতুন বছরকে বরন করার জন্য সারা রাত জেগে কত মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে ফেলেন। বন্ধুদের নিয়ে,আত্মীয়-স্বজন নিয়ে সারা রাত বেহুদা গল্প করে লুডু /তাস খেলে পার করে দেন। নাটক সিনেমা, মুভি দেখেও অনেকে অনেক রাত পার করে দেন, আবার অনেকে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে বসে রাতের মূল্যবান অংশ পার করে দেন অনেক শরীয়ত বিরোধী কাজ দ্বারা।

অথচ প্রতিরাতে এই বিশ্বের যিনি শাসক, আমার যিনি পালন কর্তা, যাঁর হাতে আমার জীবন, রিযিক, সুখ-শান্তি, পরিণতি ফয়সালা সেই মহান রব রাতের শেষ প্রহরে প্রথম আসমানে এসে আহবান করেন দেয়ার জন্য।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূল সা. বলেছেন, মহান ও কল্যাণময় আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতের শেষ-তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে অবতরন করে বলতে থাকেন, কে আছো যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছো, যে নিজের অভাব-অনটন দূর করার জন্য আমার কাছে প্রার্থনা করবে? আমি তাকে তা প্রদান করবো এবং কে আছো, যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব

সহীহ আল বুখারী: ১১৪৫।

আয়িশা(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ (রমযানের শেষ) দশদিন শুরু হলে রাসূলুল্লাহ(সঃ) নিজে সারারাত জাগতেন, পরিবারের লোকদেরকেও জাগিয়ে দিতেন এবং পরনের কাপড় মযবুত করে বাঁধতেন(অর্থাৎ ইবাদতের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহন করতেন)।   বুখারী ও মুসলিম

এই ক্বদরের রাত তো বেশী গুরুত্বপূর্ণ এবং বছরে একবারই আসে। মহান আল্লাহ দেখতে চান আমরা কারা এই ক্বদরকে পেতে পেরেশান তথা মহান আল্লাহর কথার গুরুত্ব দিচ্ছি। তাই নির্দিষ্ট একটি রাতকে না বলে শেষ দশ রাতে খোঁজ করতে বলেছেন। মহান আল্লাহই ভালো জানেন ক্বদরের রাত কোনটি তা কেন নির্দিষ্ট করে বলে দেননি।

একজন মুসলিমের উচিত গোটা রামাদান জুড়েই আনুগত্য ও ইবাদাতের কাজে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করা এবং শেষ দশকে আরো বেশী তৎপর হওয়া।

আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীর ক্ষেত্রে রামাদানের শেষ দশ দিনে যে রকম চেষ্টা-সাধনা করতেন, অন্য কোন সময়ে তা করতেন না। সহীহ মুসলিম

পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে তাদের বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে এই রাতে ইবাদাতের পরিকল্পনা দিয়ে দেই বা করতে বলি। ঘুম তাড়ানোর জন্য ইবাদাতের ফাঁকে সবাই একসাথে কোরআনের আলোচনায় শরীক হতে পারি কিছু সময়ের জন্য। আবার নিজেরা একান্তে ইবাদাতে মশগুল হয়ে যাই।

ইতেকাফে বসার সুযোগ করে নিয়ে মসজিদে বসে যেতে পারলে সেটা উত্তম।