হাদীসের আলোকে সাওম-১০

 

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

 “যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শিকল পরানো হয়।  সহীহ আল বুখারী: ১৭৬৪

নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ইবনে খুযাইমা এবং তিরমিযী এই হাদীসটি আরো দীর্ঘায়িত করে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের বর্ণনা মতে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

রমযানের প্রথম রাতে শয়তান এবং অবাধ্য জিনকে শিকল পরিয়ে আটক করা হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয় এবং একটি বন্ধ করা হয় না। একজন আওয়াজ দানকারী এই বলে আওয়াজ দেন, হে কল্যাণ প্রার্থী। এগিয়ে এসো, হে অকল্যাণ প্রার্থী! বিরত থাকো। প্রত্যেক রাতে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে বহু লোককে মুক্তি দেন।

বায়হাকী এক রেওয়ায়াতে বলেছেন: ‘দুষ্ট ও কট্টর জিনগুলোকে রমযানে আটক রাখা হয়।’ এ দ্বারা বুঝা যায়, সকল শয়তানকে রমযানে আটক করা হয় না। শুধু মাত্র বেশী দুষ্টু কিংবা বড় শয়তানগুলোকে রমযানে আটক করা হয়। ছোট শয়তানগুলো আগের মতোই মুক্ত থাকে। নাফরমান, দুষ্টু ও বড় শয়তানগুলোকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। তাই এ মাসে পাপী লোকদের নেককার হওয়ার সুযোগ বেশী। মাসব্যাপী জান্নাতের দরজা খোলা এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ রেখে আল্লাহ মূলতঃ মানুষের জন্য এক নেক ও রহমতের পরিবেশ সৃষ্টি করেন।

 অনেকে বলেন, তাহলে মানুষ রামাদান মাসে খারাপ কাজ করে কেন? এখানেই যার যার অন্তর যাচাই করার উত্তর চলে আসে।

মানুষ খারাপ কাজ করে কারণ:

  • জীন শয়তান ওয়াদা করেছে মানুষকে জাহান্নামে নিবেই আর তাই সে নানা ভাবে প্রলুদ্ধ করে।
  • অথবা মানুষের ভেতর নফ্‌সে আম্মারা (সব সময় খারাপ দিকে যেতে চায়) ও নফসে লাওয়ামা (দ্বিধাগ্রস্ত অন্তর) খারাপ কাজের দিকে আহবান করে
  • অথবা মানুষের মধ্যেও প্ররোচনাকারী আছে যারা খারাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করে।

আর তাই আল্লাহ তালা সুরা নাসের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার জন্য।

বলো, আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের প্রতিপালক,  মানুষের মালিক,  মানুষের প্রকৃত উপাস্যের কাছে। এমন প্ররোচনা দানকারীর অনিষ্ট থেকে  যে বারবার ফিরে আসে, যে মানুষের মনে প্ররোচনা দান করে, সে জিনের মধ্য থেকে হোক বা মানুষের মধ্য থেকে ৷সূরা আন নাস

তাহলে দেখা যাচ্ছে রামাদান মাসের চাঁদ দেখার পর শয়তান কাছে আসে না, আসে বাকী দু’টি মাধ্যম যারা খারাপ কাজ করায়। আর আমার আপনার মন যদি রাজী না হয় কেউ জোর করে খারাপ কাজ কতটুক করাতে পারবে?

তাহলে এই মন বা অন্তর (নফ্‌স) আমাদের কোন অবস্থানে আছে তা এই রামাদান মাসে সহজে বুঝা যায়। নফ্‌সে মুতমায়ীন (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে অন্তর সর্বক্ষণ প্রস্তুত) নাকি নফ্‌সে লাওয়ামা (দ্বিধাগ্রস্ত অন্তর) নাকি নফ্‌সে আম্মারা (সব সময় খারাপ দিকে যেতে চায়) এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে ট্রেনিং দেয়ার উপযুক্ত সময় হলো এই রামাদান মাস এবং এই ট্রেনিং নিয়ে বাকী এগারো মাস বাস্তব অনুশীলন করতে হবে।

এই অন্তর ঠিক রাখতে পারলে অর্থাৎ মুতমায়ীন অবস্থায় যাওয়াটা হলো রোযার স্বার্থকতা। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন:

হে প্রশান্ত আত্মা! তোমার প্রতিপালকের কাছে ফিরে এসো (তোমার ভালো পরিণতির জন্য) সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে; আমার বান্দাহদের মধ্যে শামিল হও এবং প্রবেশ করো জান্নাতে। সূরা আল ফজর: ২৭-৩০