আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
গীবত করার পর কিভাবে তাওবা করতে হবেঃ
গীবত থেকে বাঁচা ও অনুতপ্ত হওয়া–
(ব্যক্তি আলাপ আলোচনাতে অন্য কারো সম্পর্কে আলাপ না করে নিজের সম্পর্কে বা কোন কল্যানমূলক কাজের আলাপ বা কুর’আন হাদীসের শিক্ষা নিয়ে আলাপ করার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলে গীবত থেকে নিজেকে রক্ষা করা সহজ হবে ইন শা আল্লাহ।)
এটি অত্যন্ত জরুরী যে, কোন ব্যক্তি যদি একটি গুনাহ করে, তার সে গুনাহর জন্য দ্রুত তওবা করা উচিত ৷ আল্লাহ তা’আলার অধিকারসমূহের বিষয়ে ‘তওবা’-র তিনটি শর্ত রয়েছে:
১.একজন লোক অবশ্যই সাথে সাথে ঐ গুনাহর কাজটি ছেড়ে দিবে ৷
২. সে এ কাজটি করার জন্য দুঃখিত ও লজ্জিত হবে।
এবং ৩. সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে গুনাহর কাজটি আর না করার জন্য ৷
মানুষের অধিকারসমূহের বিষয়ে তওবার ক্ষেত্রে উপরোক্ত তিনটি শর্ত ছাড়াও আরেকটি শর্ত পূরণ করতে হয় ৷ সেটা হচেছ:
৪. কারো উপর কোন নির্যাতন বা জুলুম হলে, তা ফিরিয়ে নেয়া বা তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা বা তা থেকে মুক্ত হওয়া ৷
সুতরাং, যে ব্যক্তি গীবত করে, তার জন্য উপরোক্ত চারটি শর্ত পূরণ করে তওবা করা অবশ্য কর্তব্য ৷ কেননা গীবত অন্যের অধিকারকে সন্বন্ধযুক্ত করে ৷ তাই ঐ ব্যক্তির উচিত যার সম্পর্কে গীবত করা হয়েছে, তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা ৷
এ ব্যাপারে শাফি’ঈ আলেমগণের দু’টি মত রয়েছে:
প্রথম মতে, ঐ ব্যক্তি গীবত করার সময়ে কি বলেছিলেন তা জানানো একটি শর্ত ৷ কেননা, এ ক্ষেত্রে তিনি ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কি বলেছিলেন তা না জানিয়ে যদি দোষ থেকে মুক্ত হতে চান, তবে তার ক্ষমা প্রার্থনা বৈধ হবে না, ঠিক যেমন করে কোন লোকের টাকা আত্মসাৎ করলে, তা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হয় ৷
দ্বিতীয় মতানুসারে, ঐ ব্যক্তিকে জানানো জরুরী নয় যে, গীবতকারী কি বলেছিল, কেননা এটি এমন একটি বিষয় যে সে তা সহ্য করতে পারবে না এবং ক্ষমাও করতে পারবেনা ৷ সুতরাং, তার জানাটা (সে কি বলেছিল) এক্ষেত্রে শর্ত নয়, যেটা টাকা আত্মসাৎ এর উদাহরণের বিপরীত ৷
প্রথম মতটিই জোরালো, যেহেতু লোকদের কোন কোন গীবত ক্ষমা করার ব্যাপারে যোগ্যতা রয়েছে কিন্তু অন্য ব্যাপারে নেই ৷
এবং যে ব্যক্তির ব্যাপারে গীবত করা হয়েছে, সে যদি মৃত বা অনুপস্থিত থাকে – তবে আলেমগণ বলেন : দোষী ব্যক্তিটি সে লোকটির জন্য বেশী বেশী দোয়া করবে এবং অনেক বেশী নেক আমল করবে ৷
যার সম্পর্কে গীবত করা হয়েছে, সে ব্যক্তির জন্য গীবতকারীকে পাপ থেকে মুক্ত করা পছন্দনীয় – কিন্তু তিনি সেটা করতে বাধ্য নন ৷ যেহেতু, এটা হচেছ একজন ব্যক্তির অধিকার লংঘনের ক্ষতিপূরণ, তাই সেটা হচ্ছে তার ইচ্ছাধীন ৷ যাহোক, এটি খুব দৃঢ়ভাবে সুপারিশকৃত যে, তিনি যেন গীবতকারীকে দোষমুক্ত করেন যাতে করে, তার মুসলিম ভাইটি সে গুনাহের ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারেন এবং যাতে তিনি আল্লাহ তা’আলার ক্ষমা ও ভালবাসা অর্জন করে সফলকাম হন ৷ মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন :
“এবং যারা ক্রোধ-দমনকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালবাসেন ৷” (সূরা আলে-ইমরান, ৩:১৩৪)
দোষী ব্যক্তিকে ক্ষমা করার জন্য তিনি যে পন্থা অবলম্বন করতে পারেন, তা হচ্ছে এই যে, তিনি নিজেকে মনে করিয়ে দিতে পারেন: “এ বিষয়টি ইতোমধ্যে ঘটে গেছে, এটা দূর করার কোন উপায় নেই ৷ সুতরাং, তার পুরস্কার পাওয়ার সুযোগকে ব্যাহত করাটা এবং তাকে পাপ থেকে মুক্ত না করাটা আমার জন্য ঠিক নয় ৷”
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন :
“অবশ্য যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে দেয়, সেটা তো হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ ৷” (সূরা শূরা ৪২:৪৩)
এবং তিনি বলেন: “ক্ষমা প্রদর্শন কর ৷” (সূরা আরাফ, ৭:১৯৯)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
“এবং আল্লাহ তাঁর বান্দার সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ বান্দা তার মুসলিম ভাইকে সাহায্য করতে থাকে ৷” (সহীহ মুসলিম)