আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণীঃ ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। মুখে স্বীকার এবং কাজে পরিণত করাই হচ্ছে ঈমান এবং তা বৃদ্ধি পায় ও হ্রাস পায়।
সহিহ আল বুখারীঃ১ (ঈমান অধ্যায়)
এখানে লক্ষ্যনীয় যে ঈমানের সংজ্ঞা বলা হয়েছে মুখে স্বীকার ও কাজে পরিনত করাই ঈমান। আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো এই ঈমান বাড়ে বা কমে।
সমাজে অনেকেই বলেন যে, আমার ঈমান ঠিক আছে- একই রকম। এই হাদীসের আলোকে কখনোই একই রকম থাকার কথা নয়। হয় ঈমান বাড়তে থাকবে আর না হয় কমতে থাকবে। তাই সচেতন হওয়া প্রয়োজন নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে!
মহান আল্লাহ কুর’আন কারীমে জানিয়েছেন—
‘‘যাতে তারা তাদের ঈমানের সঙ্গে ঈমান মজবুত করে নেয়- (সূরাহ্ ফাত্হঃ৪)।
আমরা তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম- (সূরা কাহাফঃ১৩)।
এবং যারা সৎপথে চলে আল্লাহ্ তাদের অধিক হিদায়াত দান করেন- (সূরা মারইয়ামঃ৭৬)।
এবং যারা সৎপথ অবলম্বন করে আল্লাহ্ তাদের হিদায়াত বাড়িয়ে দেন এবং তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দেন- (সূরা মুহাম্মাদঃ১৭)।
যাতে মু’মিনদের ঈমান বেড়ে যায়- (সূরা মুদ্দাসসিরঃ৩১)।
এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বাড়িয়ে দিল?যারা মু’মিন এ তো তাদের ঈমান বাড়িয়ে দেয়।(সূরাহ্ আত্-তাওবাহঃ১২৪)।
‘‘সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর; একথা তাদের ঈমানের দৃঢ়তা বাড়িয়ে দিল’’- (সূরা আলে-ইমরানঃ১৭৩)।
‘‘এতে তাদের ঈমান ও আনুগত্য আরও বৃদ্ধি পেল’’- (সূরা আহযাবঃ২২)।
লক্ষ্য করলে বুঝা যায় যে, ঈমানের পরিচর্যা প্রতিনিয়ত প্রয়োজন। পরিচর্যার অভাবে সেখানে মরিচা পড়ে নষ্ট করে দিতে পারে। ঈমানের পরিচর্যার বিষয় হলো—
মহান রবের যিকর(কুর’আন ও দু’আ)
ভালো কাজ করা ও সেই কাজে লিপ্ত থাকা
পরহেজগার লোকের সান্নিধ্যে থাকা
মৃত্যু ও পরবর্তী জীবনের কথা স্মরন করা
ঈমান নষ্টকারী পরিবেশ ও বিষয় থেকে দূরে থাকা
আর আল্লাহর জন্য ভালবাসা ও আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা ঈমানের অংশ। ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহ.) ‘আদী ইবনু ‘আদী (রহ.)-এর নিকট এক পত্রে লিখেছিলেন, ‘ঈমানের কতকগুলো ফার্য (ফরয), কতকগুলো হুকুম-আহকাম, বিধি-নিষেধ এবং সুন্নাত রয়েছে। যে এগুলো পরিপূর্ণরূপে আদায় করে তার ঈমান পূর্ণ হয়। আর যে এগুলো পূর্ণভাবে আদায় করে না, তার ঈমান পূর্ণ হয় না। আমি যদি বেঁচে থাকি তবে অচিরেই এগুলো তোমাদের নিকট ব্যক্ত করব, যাতে তোমরা তার উপর ‘আমল করতে পার। আর যদি আমার মৃত্যু হয় তাহলে জেনে রাখ, তোমাদের সাহচর্যে থাকার জন্য আমি আকাঙ্ক্ষিত নই।’
ইবরাহীম (‘আ.) বলেন, ‘তবে এ তো কেবল চিত্ত প্রশান্তির জন্য’- (সূরাহ্ আল-বাক্বারাহ ২/২৬)। মু‘আয (রাঃ) বলেন, ‘‘এসো আমাদের সঙ্গে বস, কিছুক্ষণ ঈমানের আলোচনা করি।’’ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, ‘ইয়াকীন হল পূর্ণ ঈমান।’ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, ‘বান্দা প্রকৃত তাকওয়ায় পৌঁছতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে, মনে যে বিষয় সন্দেহের সৃষ্টি করে, তা পরিত্যাগ না করে।’ মুজাহিদ (রাঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘‘অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনাকে এবং নূহকে একই ধর্মের আদেশ করেছি’’- (সূরাহ্ শূরা ৪২/১৩)। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, ‘‘অর্থাৎ পথ ও পন্থা’’- (সূরাহ্ আল-মায়িদাহ ৫/৪৮)।
ইবন ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি।
১. আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা।
২. সালাত কায়িম করা।
৩. যাকাত আদায় করা।
৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং
৫. রমাযানের সিয়ামব্রত পালন করা।
(৪৫১৪; মুসলিম ১/৫ হাঃ ১৬, আহমাদ ৬০২২, ৬৩০৯) (বুখারীঃ আ প্রকাশনীঃ৭, ইফাঃ৭)