অব্দুল্লাহ ইবন আমের রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহণকারী উভয়কে লানত করেছেন। [ইবনে মাযাহ : হাদীস নং ২৩১৩]
আব্দুল্লাহ ইবনু মোহাম্মদ আবু হুমায়দ সাঈদী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযাদ গোত্রের ইবনু উতরিয়া নামক এক ব্যক্তিকে সাদকা সংগ্রহের কাজে নিয়োগ করেছিলেন। তিনি ফিরে এসে বলেন, এগুলো আপনাদের (অর্থাৎ সাদকার মাল) আর এগুলো আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে। এটি ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তার বাবার ঘরে কিংবা তার মায়ের ঘরে কেন বসে থাকলো না? তখন সে দেখত তাকে কেউ হাদিয়া দেয় কি না ? যার হাতে আমার প্রাণ সেই সত্তার কসম, সাদকার মাল থেকে সামান্য পরিমাণও যে আত্মসাৎ করবে সে তা কাধে করে কিয়ামতের দিন হাযির হবে। কোন ব্যক্তি মুসলমানদের সম্পদ (যা তার কাছে রয়েছে) আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা কসম খায় সে আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় মিলিত হবে যে আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন। যারা দুনিয়ার কোন সুবিধার বিনিময়ে নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে তাদের পরিণাম ভাল হবে না। কৃষকগণ জমি চাষের সময় অন্যের জমি আত্মসাতের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বাড়ি তৈরির সময় সরকারি জমিতে বা প্রতিবেশীর জমি আত্মসাৎ করতে পারেন। বিশ্বের সর্বত্রই জমি সংক্রান্ত বিরোধ বিদ্যমান। আয়েশা রা. এর জীবদ্ধশায় কয়েকজন বিবাদ করছিল। তখন তিনি বললেন, হে আবু সালমা! জমি-জমার ঝামেলা হতে দূরে থাক। কেননা রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ অন্যের জমি জুলুম করে আত্মসাৎ করেছে, কিয়ামতের দিন সাত তবক যমীনের হার তার গলায় পরানো হবে। [বুখারী শরীফ : হাদীস নং ২৯৬৮]
জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদদাতা, গ্রহীতা এবং এর লেখক ও সাক্ষীদ্বয়কে অভিশাপ দিয়েছেন।’ মুসলিম:৭৫৯৭
সামুরা বিন জুনদুব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘রাতে আমি দেখলাম, দু’জন লোক এসে আমার কাছে এলো। তারা আমাকে এক পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে গেল। আমরা চলছিলাম, সহসা এক রক্ত নদীর পাড়ে গিয়ে উপস্থিত হলাম যার মাঝে দন্ডায়মান এক ব্যক্তি। নদীর মাঝখানে এক ব্যক্তিকে দেখা গেল। সামনে তার পাথর। মাঝের লোকটি নদী পেরুনোর জন্য যেই সামনে অগ্রসর হয়, পাথর হাতে দাঁড়ানো ব্যক্তি অমনি তার মুখে পাথর মেরে তাকে পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে দেয়। এভাবে যখনই সে নদী পেরিয়ে আসতে চায়, লোকটি তখনই তার মুখে পাথর মেরে পেছনে ঠেলে দেয়। আমি বললাম, ব্যাপার কী ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বললেন, আমি যাকে নদীর মধ্যখানে দেখেছি সে সুদখোর।’ বুখারি:২০৮৫, ফাতহুল বারি ৪/৩১৩
সমাজে আজ সুদের বিষয়টি এতোই হালকা করে দেখা হয় যার ফলে একটু সহজভাবে সুদের লোভে পড়ে যায় ব্যক্তি। আবার অনেকে নিজে সুদ না খেলেও অন্যকে সুদ নিতে কাগজে কলমে সাক্ষ্মী হয়ে থাকেন। বড়ই চিন্তার বিষয়। নিজের জাহান্নাম কার জন্য খরিদ করছেন একটু দুনিয়াতে থাকা অবস্থাতেই ভেবে নিন!!
আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘ধ্বংসকারী সাতটি জিনিস থেকে বেঁচে থাক। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, সেগুলো কী কী? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, শিরক করা, যাদু করা, অনুমোদিত কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, এতিমের মাল ভক্ষণ করা, জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা এবং সতী সরলা মুমিনা নারীকে ব্যাভিচারের অপবাদ দেয়া।’ বুখারি:২০১৫, মুসলিম:৮৯
ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘সুদের অর্থ দিয়ে যা-ই বৃদ্ধি করুক না কেন কিন্তু অল্পই তার শেষ পরিণাম।’ইবনে মাজা : ২২৭৯। আলবানি সহি জামে সগিরে ৫/১২০ বলেছেন, এটি সহি হাদিস।
সালমান বিন আমর তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে বিদায় হজে আমি বলতে শুনেছি, তিনি বলেন- ‘মনে রেখ জাহিলি যুগের সকল সুদ ভিত্তিহীন। তোমাদের জন্য শুধুই মূলধন। তোমরা জুলুম করবেও না এবং সইবেও না।’ আবু দাউদ : ৩৩৩৪
আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘সুদের তিয়াত্তরটি স্তর রয়েছে। সর্বনিম্নটি হলো নিজের মায়ের সঙ্গে জেনা করার সমতুল্য। আর অপর ভাইয়ের সম্মান নষ্ট করা সবচে’ নিকৃষ্ট সুদ। মুস্তাদরাকে হাকেম : ২/৩৭
ফেরেশতা কর্তৃক গোসল করার সৌভাগ্যধন্য হানযালা তনয় আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘জেনে বুঝে এক দিরহাম পরিমাণ সুদ খাওয়া ছত্রিশবার জেনা করার চেয়েও বড় অপরাধ।মুসনাদে আহমদ : ৫/২২৫
ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘যখন কোনো জনপদে সুদ ও ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ে তখন তারা নিজেদের ওপর আল্লাহর আজাব বৈধ করে নেয়। মুস্তাদরাকে হাকেম : ২/৩৭
আবু সাইদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন বেলাল রা. কিছু ‘বারনি’ খেজুর নিয়ে এলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা দেখে বললেন, কোত্থেকে নিয়ে এলে এসব ? বেলাল রা. উত্তর দিলেন, আমার কাছে কিছু খারাপ খেজুর ছিল। সেগুলো দুই সা’ দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর জন্য এর এক সা’ কিনেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হায়! একি করেছ ? এটাতো খাঁটি সুদ। তুমি আর এমন করেবে না। যখন কিনতে চাইবে, আলাদাভাবে আগে সেটা বিক্রি করবে। তারপর সেই মূল্য দিয়ে এটা কিনবে।বুখারি : ২২০২, মুসলিম : ১৫৯৪
আবু সাইদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবদ্দশায় ‘জামা’ খেজুর খেতাম। আর জামা হলো বিভিন্ন মানের মিশ্রিত খেজুর। আমরা সেসবের এক সা’ কিনতাম দুই সা’র বিনিময়ে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে যখন এ সংবাদ পৌঁছল তিনি বললেন, দুই সা’ খেজুরের বিনিময়ে এক সা’ খেজুর কেনা যাবে না, দুই সা’ গমের বিনিময়ে এক সা’ গম কেনা যাবে না এবং দুই দিরহামের বিনিময়ে এক দিরহাম কেনা যাবে না। মুসলিম : ১৫৯৫