শিষ্ঠাচার সংক্রান্ত হাদীস-৫৭ (অহংকার-৭)

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা এরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের থেকে জাহিলি যুগের কুসংস্কার ও বাপ-দাদাদের নিয়ে অহংকার করাকে দূর করে দিয়েছেন। মানুষ দু’ধরনের : একজন ঈমানদার মুত্তাকী ব্যক্তি, আর একজন দূরাচার দুর্ভাগা ব্যক্তি। সমগ্র মানুষ আদম আ. এর সন্তান, আর আদম আ. হল, মাটির তৈরি। আল্লাহর শপথ করে বলছি, এমন এক সম্প্রদায়ের আগমন ঘটবে যারা তাদের বংশের লোকদের নিয়ে অহংকার করবে। মনে রাখবে তারা জাহান্নামের কয়লা হতে একরকম কয়লা অথবা তারা আল্লাহ তা‘আলার নিকট নাকের থেকে শিন নিক্ষেপ করার নেকড়ার চেয়ে আরও অধিক নিকৃষ্ট। আবু দাউদ, ৫১১৬ আলবানি হাদিসটিকে সহীহ বলেন।

عبية الجاهلية এ শব্দের অর্থ হল, জাহিলি যুগের অহংকার, বড়াই ও কুসংস্কার। [مومن تقي و فاجر شقي] এ কথাটির অর্থ সম্পর্কে আল্লামা খাত্তাবী রহ. বলেন, মানুষ দুই ধরনের হতে পারে। এক ধরনের মানুষ হল, মুমিন মুত্তাকী সে হল, উত্তম ব্যক্তি যদিও সে তার সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানী ব্যক্তি নয়। আর একজন ব্যক্তি হল, ফাজের বদখত যদিও সে তার সমাজে সম্মানী ও প্রসিদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।

আবার কেউ কেউ বলেন, অহংকারী হয় মুমিন হবে, তাহলে তার জন্য কারো উপর অহংকার করা উচিত নয়। অথবা সে ফাজের গুনাহগার, সে এমনিতেই আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট তার অহংকার করার অধিকারই নাই। সুতরাং, অহংকার সর্বাবস্থায় রহিত। অহংকার করার কোন সুযোগই নাই।

[أنتم بنو آدم و آدم من تراب ] আর তোমরা হলে আদম সন্তান আর আদম আ. কে সৃষ্টি করা হয়েছে, মাটি থেকে। সুতরাং যার মুল হল মাটি, তার জন্য অহংকার করা কোন ক্রমেই উচিত নয়।

আবু রাইহানা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার বংশের নয়জন লোকের কথা উল্লেখ করে এবং তা দ্বারা তার উদ্দেশ্য হল, ইজ্জত সম্মান লাভ করা, তারা সবাই জাহান্নামে যাবে আর লোকটি তাদের দশম ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হবে। আহমদ ১৬৭৬১

হাফেজ ইবনে হাজার রহ. ফাতহুল বারীতে বলেন, হাদিসটির সনদ বিশুদ্ধ।

 

দো‘আ ও আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া হল, অহংকার থেকে বাঁচার জন্য সব চেয়ে উপকারী ও কার্যকর ঔষধ। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা যাদের হেফাযত করেন, তারাই অহংকার থেকে বাঁচতে পারে। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া বাঁচার কোন উপায় নাই। এ কারণে রাসূল সা. উম্মতদের দো‘আ শিখিয়ে দেন এবং তিনি নিজেও সালাতে বেশি বেশি করে আল্লাহর নিকট দো‘আ মুনাজাত করেন।

عن جبير بن مطعم أنه رأى رسول الله صلى الله عليه و سلم  يصلي صلاة، فقال: « الله أَكُبر كَبِيًرا الله أَكُبر كَبِيًرا الله أَكُبر كَبِيًرا وَالحَمْدُ لله كَثيِراً وَالحَمْدُ لله كَثِيراً وَالحَمْدُ لله كَثِيراً وَُسْبحَانَ الله بُكْرَةً وََأِصيلًا ثَلَاًثا، أَعُوذُ باِلله مِنْ الشَّيطْاَنِ الرجيم مِنْ نَفْخِهِ وَنَفْثِهِ وَهمْزِهِ قَالَ: نَفْثُهُ الشِّعر، وَنَفْخُه الْكبْر، وَْهُمزهُ المُوتَةُ»

অর্থ, যুবাইর ইবনে মুতয়েম হতে বর্ণিত তিনি রাসূল সা কে একবার সালাত আদায় করতে দেখেন, তখন তিনি রাসূল সা, কে সালাতে এ কথাগুলো বলতে শোনেন।

الله أَكْبر كَبِيًرا الله أَكبر كَبِيًرا الله أَكبر كَبِيًرا وَالحَمْدُ لله كَثيِراً وَالحَمْدُ لله كَثِيراً وَالحَمْدُ لله كَثِيراً وَسبحَانَ الله بُكْرَةً وََأِصيلًا ثَلَاًثا، أَعُوذُ باِلله مِنْ الشَّيطْاَنِ الرجيم مِنْ نَفْخِهِ وَنَفْثِهِ وَهمْزِه

অর্থ, “আল্লাহ তা‘আলা সব কিছু হতে বড়, আল্লাহ তা‘আলা সব কিছু হতে বড়, আল্লাহ তা‘আলা সব কিছু হতে বড়। আর সর্বাধিক প্রশংসা কেবলই আল্লাহর, সর্বাধিক প্রশংসা কেবলই আল্লাহর, সর্বাধিক প্রশংসা কেবলই আল্লাহর। আমি বিতাড়িত শয়তান হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, আমি আরও আশ্রয় চাচ্ছি তার অহংকার থেকে তার প্ররোচনা থেকে ও ষড়যন্ত্র থেকে”। ইবনে হাব্বান ১৭৮০